সে আমার মায়াবতী পর্ব -১৭+১৮

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৭
সকালে ঘুম ঘুম চোখে বুঝতে পারলাম কারো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ আছি, কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে।সামিয়া আপুও প্রায় রাতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। তাই আপু ভেবে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম চোখে বললাম –

— আপু তুমি কখন এলে? এত শক্ত করে কেন জড়িয়ে আছো?( ঘুম ঘুম চোখে)

কিন্তু একি আপুর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া। ঘুম উবে গিয়েছে। মস্তিস্ক ফাকা ফাকা লাগছে। উনি নিশচিন্তে আমাকে জড়িয়ে ধরে মিটমিট করে হাসছে। ইশ লোকটাকে আমি আজ এত কাছে থেকে দেখছি। একটা লোক এত মারাত্বক কিউট হয় কিভাবে। ভাবনার মাঝেই উনি আমার গালে ঠোট ছুঁয়িয়ে দিলেন। আমি বিস্ফরিত নয়নে তাকাতেই আরও শক্ত করে আমাকে কমোড় জড়িয়ে তার বুকের ওপর টেনে নিয়ে আসলেন। ফের বলতে শুরু করলেন –

— গুড মরনিং ” জান। আমার মিষ্টি পাখি। আজকের পর থেকে এভাবেই আমাকে ঘুম থেকে তুলবে।

— কি কি করছেন কি! ছাড়ুন আমায়। দে দেখুন আমার হাস- ফাস লাগছে, অসস্তি ফিল হচ্ছে, প্লিজ ছাড়ুন –

—ও সারারাত আমাকে ঘুমতে না দিয়ে এখন বুঝি ছেড়ে দিবো? আগে আমি ঘুমোবো তারপর ছাড়াছাড়ি।

হায় আল্লাহ আমার তো জড়িয়ে ধরার অভ্যাস। তাই বলে মিঃ চৌধুরীকে আমি সাড়ারাত জড়িয়ে ধরে ছিলাম? ছি ছি, ভাবতেই গাল গরম হচ্ছে। আমি আবার কিছু বলার আগে উনি আমার গালে হাত দিয়ে বললেন-

— ঈশু এটা ঠিক না কিন্তু। দেখো আমি তোমার একটা মাত্র জামাই। কিন্তু তুমি আমাকে উল্টো আদর না করে, এখন দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? ( ইনোসেন্ট ফেস করে)

— মিঃ চৌধুরী অ অনেক বেলা হয়েছে। আর আমি এসবে অভস্ত নই। আমাকে ছাড়ুন, আমি ফ্রেশ হবো।সবাই কি ভা!

—মিসেস চৌধুরী আপনি কি জানেন এই সাম্রাজ্য আর এই মানুষটা পুরো আমি?তাহলে আপাদত আমাকে টাইম দিন। নয়তো রাতে যেটা করেছি এখন তার উল্টোটা করতে বাধ্য হবো।

কি করেছে উনি? আমার সাথে? না না উনি আমাকে জোর করেছে? এসব ভাবনার মাঝেই কান্না করে দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাস করলাম –

— আপ আপনি কি করেছেন রা রাতে? ( কেঁদে উঠে)

— হেই জান লুক পাখি। বিলিভ মি তুমি যা ভাবছো কিছুই না। আমি তোমার দিকে বাজেভাবে তাকাই না পর্যন্ত, সেখানে তোমাকে ছুবো কিভাবে?

— তাহলে কি করেছেন আপনি ( চোখ মুছে)

— জান রিলেক্স। তুমি নেহাত বাচ্চা, এসবের প্রেসার নিয়ো না। আমি জাস্ট তোমার শাড়ি ঠিক করে দিয়েছি। আর জড়িয়ে ধরেছি।

শাড়ি ঠিক করেছে শুনতেই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি, ঠিক ভাবেই সেট করা। উনি হুট করেই আমাকে নিচে শুয়িয়ে দিয়ে আমার ওপর ঝুকে পড়ে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললে বাকা হেসে বলে-

—ওপেন ইউর আইস জান। আই সেইড ওপেন।

আমি পিটপিট করে চোখ খুললে ঘরির দিকে ইশারা করে বলে উঠে,

—মাত্র ৬ঃ৫০ বাজে। নতুন বউ বলে ফর্মালিটি করতে হবে হা। জামাই সেবা করলেই হবে। ঈশু আমি যে এত দিন ঘুমতে পারি নি। এখন শান্তির ঘুম দিবো। সো ডোন্ট ডিসটার্ভ।

— আ আমি ওঠি আপনি ঘুমান দেখুন সবা!

— আহ আরেকটা সাউন্ড হলে, বাসর আজকেই সারবো।বলে দিলাম। এই আরাভ কিন্তু যা বলে তাই করে ইউ নো মিসেস চৌধুরী।

বলেই গলায় মুখ গুজে শুয়ে পরলেন। আমিও একটা সময় এই লোকটার এত তাড়াতাড়ি এত পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।

সারে দশটার দিকে মিঃ চৌধুরীর ঘুম ভাংলে, আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে উঠে পরে। আমার দিকে তাকাতেই দেখে শাড়ি সরে পেটের অর্ধেক অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে, লোকটা বিরবির করে বলতে শুরু করলো-

— তুমি কি জানো? মানুষ এর মানসিক শান্তি কিসে? যখন তার পছন্দের মানুষটা তার হয়ে যায়। তুমি আমার মায়াবতি। আমার মানসিক শান্তি৷ এতটুকু আচ আসতে দিবো না আমার জানপাখির ওপর। যে গম্ভির আরাভ হাসতো না সে সারাদিন তোমার কথা ভেবে হাসে। তার কল্পনায় এক নারী জুড়ে থাকে। এতটা পাগল না করলেও পারতে। এখন এই সোন্দর্য দেখিয়ে কি আমাকে মারতে চাও। কিভাবে আমি এই পিচ্চিকে নিয়ে কন্ট্রোল থাকবো শুনি? ঘুমাও জান, তোমার রেস্ট্রের প্রয়োজন।

বলতে বলতে আমার গায়ে চাঁদর দিয়ে দিলেন। নিজে ফ্রেশ হতে গেলেন। ঘরির কাটা ১২ টার ঘরে গেলে আমি চোখ খুলে আবার সেই চিরচেনা ঘরে আবিষ্কার করলাম। হটাৎ করেই মনে পরলো আমি তো নিজের বাড়িতে নেই, আমার তো বিয়ে হয়েছে কাল। এখন সবাই কি ভাববে? তাই উঠে বসে তাড়াতাড়ি বের হতেই খেয়াল করি শাড়ি ঠিক নেই, তাই চাদর দেয়াতে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমি বুঝতে পেরেছি এটা মিঃ চৌধুরীর কাজ, হয়তো চায় না, ঘুম থেকে উঠে আমি লজ্জায় পরি৷ এখন নিচে যেতে হবে ভাবতেই হুট করে দড়জা খুলতেই চমকে উঠি৷ সামনে তাকাতেই দেখলাম মায়া আর সামিয়া আপু। আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি সব ঠিক আছে তাহলে ওরা এমন হাসছে কেন৷ এর ভিতর মায়া বলে উঠলো–

— হ্য গো নতুন বউ তোমার কি ম্যনার্স নাই? কোথায় বিয়ের পরের দিন চা নাস্তা বানাবে তা না সারারাত বড়ের আদর সোহাগ পেয়ে বেলা করে ঘুম থেকে উঠছো।( চোখ পাকিয়ে বললো)

আপুও মায়ার কান ধরে বললো-

বেশি পেকেছো তুমি মায়া। আমরা কিন্তু তোমার ভাবি হই।

— ভাবি পরে ও আগে আমার ফ্রেন্ড হয়। আর আমি তো আগেই বলেছি, জামাই নেই তাই ওকে একটু খোচাচ্ছি।

আমি লজ্জায় এদিক সেদিক তাকালে আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো-

— জানি না কি ভালো কাজ করেছি। আমার বোনটাকে যে আমি সবসময় চাইতাম নিজের কাছে রাখতে, আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে।এখন আমার আর টেনশন নেই, আমার পাগলিটা আমার সাথেই আছে। আরাভ ভাইয়াকে এর জন্য থেংস দেয়া তো লাগবেই।

— হ্যা হ্যা এসব পরে হবে মম তো বকবে এখন ওকে না নিয়ে গেলে। ও কিন্তু কালকে শুধু সুপ খেয়েছে। মম কিন্তু এবার বকবে। চলো ফ্রেশ হয়ে গোসল করে এসো। দুপুর তো হয়ে এলো।

দুপুর শুনতেই খারাপ লাগছে।এতক্ষন ঘুমিয়েছি। কে কি ভেবেছে? আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা ব্লাক জামদানি শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। আমাকে ইশারা করলো পরিয়ে দিবে। আমিও চলে গেলাম সাওয়ারে। শাড়ি ছাড়া সব পরে বের হতেই দেখি মেইড খুব সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছে।আপু আর মায়া শাড়ি গহনা নিয়ে মিঃ চৌধুরীর চয়েস সম্পর্কে আলোচনা করছে।সামনে যেতেই মায়া আর আপু মিলে চুল শুকিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।শাড়ি পড়িয়ে সোনার বালা,জুয়েলারি পরিয়ে দিলো। কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দু- জনেই প্রশংসা করলেন। তারপর নিচে যাওয়ার জন্য বের হই।আমি যত নিচে নামছি ততো অবাক হচ্ছি। কারন পুরো বাড়িটা বিশাল, এতো পুরো সামরাজ্য মনে হলো, আসলে এবার বুঝতে পারছি কেন সবাই আপুকে এত ভাগ্যবতি মনে করেছিলো। আসলেই বাড়িটা খুব সুন্দর, চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে, নিচে যেতেই দেখি, আনটি সহ আরও অনেক মহিলা। মেইডরা কাজ করছে।বাড়ি সাজানো হচ্ছে।আমি নিচে যেতেই আনটি উঠে এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, বলে উঠলেন-

— মাশাল্লাহ এটা তো পরি দাড়িয়ে আছে। আমার আম্মুটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তুমি অনেকক্ষন না খেয়ে আছো চলো আম্মু —

আমি আমতা আমতা করে বললাম –

— আসলে আনটি আমি জানি না এত টাইম কিভাবে ঘুমোলাম। সরি আসলে আন্টি!

— এই যে সেই কখন থেকে কি আন্টি আন্টি করছো শুনি?মা বলবে, তুমি আমার মেয়ে। ওই যে আমার সামিয়া আর তুবাও মেয়ে তাই আমকে মা বলতে হবে।

আমিও মুচকি হেসে বললাম –

—আম্মু, আমি তোমাকে আম্মু বলবো,

— এই তো আমার মেয়ে। এবার চলো খেতে চলো, আরাভ কিন্তু আমাকে বার বার বলেছে তোমাকে খাওয়াতে,

— সরি আম্মু, আমি আর

— আবার এসব বলছো,আর কাল তোমার খাবারেই ঘুমের মেডিসিন ছিলো পাগলি। তাই এত ঘুমিয়েছো। এবার চলো।

আমিও গেলাম খাবার টেবিলে বসার সাথে সাথে এই সেই আইটেম আমাকে দিচ্ছে, কিন্তু আমি এত খাবার খেতেও পারবো না, তাই একটু মুখে নিতেই আপু এসে আমাকে খায়িয়ে দিতে লাগলো।আর মুচকি হেসে বললো-

— জানিস খুব ভাগ্য আমাদের দুই বোনের। এত সুন্দর মনের মানুষ দের কে পেয়েছি। কত ভালোবাসে বল তো।

বিপরিতে আমিও মুচকি হাসলাম। তারপর আম্মু একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।সবাই এই সেই গিফট দিলো। সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম সবাই কি মিশুক, আমাকে রুপ নিয়ে প্রশংসায় করছে। এটা কি সত্যি। কিন্তু মা, দাদি যে বলে আমাকে ভুত ছাড়া কিছুই লাগে না। ভাবতেই বুক ভারি হয়ে এলো , আচ্ছা ওই বাড়িতে এখন নি অবস্থা। অনেক্ষন বসে বোর হলাম। আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম সেইম অবস্থা। মায়া বুঝতে পেরে আমাদের কে নিয়ে ছাদে গেল। বাড়ির সব ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। আমি কাঠগোলাপ দেখতে পেয়ে থেমে গেলাম।ছিড়তে গিয়ে থেমে গেলাম। যদি বকা খাই।
চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম এই সাইড ফাকা। আচ্ছা ওরা গেলো কই? চারিদিকে তাকাতেই দেখলাম, সব দিকেই রাস্তা আমি কোথায় খুজবো ওদের? ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে গেলাম৷ আরেক পা এগোতেই কেউ হেচকা টানে দেয়ালে চেপে ধরলেন, আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে, হালকা চেচিয়ে উঠলাম-

— আহ জানপাখি গো, আমি তোমার জামাই। কেন ভয় পাচ্ছো? এই বাড়ি কেন এই পৃথিবিতে আমি ছাড়া আমার জানকে এমন হুটহাট করে করে কেউ ধরার সাহস আছে কি?

— আপনি। আপনি সব সময় এমন করেন কেন? ( জোড়ে শ্বাস নিয়ে)

— ইশ এত সুন্দর কেন তুমি। তুমি কি জানো? এই কাজ পাগল ছেলেটা কাজ বাদ দিয়ে সারাটা সময় ধরে বউ কে চোখে হারায়। আমার পিচ্চি পরি, তুমি সম্পুর্ণা আমার।

আমি নিশপলক তাকিয়ে আছি৷ এই কি সেই লোকের মুখে শোনা হিংস্র আরাভ? নাকি অন্য কেউ?উনি হুট করেই আমার কানে সেই কাঁঠগোলাপ দিয়ে দিলেন। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছি ওনাকে, কি আছে মিঃ চৌধুরীর মাঝে যা আমাকে মোহিত করে। আমার মনের কথা, আমার পছন্দের জিনিস্টার খবর ও সে রাখে।

— আমার মায়াবতি, কাঁঠগোলাপ কি জানে সে যেমন আছে তাতেই আমি শেষ আর এখন সে এই কাঁঠগোলাপ যে তার স্পর্শে মুগ্ধ। মায়াবতি তুমি শুধু আমার। খুব শিগ্রই সে সম্পুর্নরুপে আমার হবে।

আমি ওনার কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ভাবছি,

— এই মানুষটা কি সত্যি আমার, সত্যি কি আপুর বলা কথা আজ সঠিক হচ্ছে। যে আমাকে আগলে রাখবে।
#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৮
তখনকার কথা ভাবতেই লোকটার ওপর একরাশ লজ্জা ভর করছে। উফফ লোকটার লজ্জা সরম বলতে কিছুই নেই। তখন জোড় করে চুমু খাওয়ার সময় আপু, মায়া, এসে হাজির হয়। বেহায়া লোকটা তবুও ছাড়ে নি।জোড় করে ছাড়া পেয়েও রেহাই পাই নি আপু আর মায়ার লজ্জাজনক কথার থেকে৷ আজকেই রিসেপশন হবে। সেই অনুজায়ি আমাকে আর আপুকে বিউটিশিয়ান দিয়ে সাজানো হচ্ছে।আপু আর সায়ন ভাইয়ার সেইম কাপল ড্রেস। আমার আর মিঃ চৌধুরীর সেইম কাপল
ড্রেস।আমাকে ব্লাক লেহেঙ্গার সাথে ব্লাক ডায়মন্ড জুয়েলারি
স্মোকি মেকাপ করেছে।আপুকে ব্লু লেহেঙ্গার সাথে মেচিং জুয়েলারি আর মেকাপ করেছে। আপুকে কোন অংশে কম লাগছে না। আপু আমাকে দেখে কপালে চুমু খেয়ে প্রশংসা করেছে।আয়নায় তাকিয়ে দেখি সত্যি নিজের রুপ চেঞ্জ৷ একি মিঃ চৌধুরী আমাকে চিনবে তো?নিজের ভাবনায় নিজেই হেসে দিলাম। তার মাঝেই তুবা এসে হাজির। কালকের বিষয় নিয়ে নানাভাবে লজ্জা দিচ্ছিলো। নিচে ডাক পরলে মায়া, তুবা সহ আরও মেয়েরা মিলে নিচে নিয়ে গেলো।পুরো বাড়ির লুক চেঞ্জ। কত মানুষ গিজ গিজ করছে। অবশ্য করবেই তো ওনারা হাই সোসাইটির মানুষ। তা ছাড়া মিঃ চৌধুরীর ক্ষমতায় একজন পলেটিসিয়ান তার সাথে কত মানুষ এর যোগ সুত্র রয়েছে।ভাবনার সুতো ছিড়লো কোন এক সুদর্সন পুরুষ এর চাহনি তে। আমি অবাক হয়ে ভাবছি এই সম্পুর্ন লোকটা এখন থেকে আমার। ব্লাক শেরয়ানি,ফর্সা হাতে ঘরিটা কি মানানসই লাগছে। চাপ দাড়ি তে মানুষটাকে কি সুন্দর লাগছে। ভাবনায় মত্ত থাকা অবস্থায় কেউ হাত স্পর্শ করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো-

— আমি ভাবতে পারি না জান। এই সুন্দর রমনিটা আমার। আচ্ছা ঈশু পাখি তুমি এত সুন্দর কেন? হ্যা।এই প্রেমিক পুরুষ এর মনে আগুন জ্বালিয়ে তুমি দিব্বি সেজে ঘুরে বেরাচ্ছো। এই শাস্তি তুমি পাবে। আজ রাতে ঘরে এসো। কোন ছাড়াছাড়ি নেই পাখি।

— আ আমি যাবো না ঘরে। ( চোখ খিচে বন্ধ করে)

— সময় বলে দিবে।আমার মিষ্টি পরি।

লোকটার কথায় জমে গিয়েছি। সত্যি কি উনি আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমাকে জোর করবে?
ভাবনার ভিতর আনটি এসে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন। নিজের কাজল নিয়ে আমার কানের নিচে লাগিয়ে দিলেন। দুই হাতের বালা খুলে আমার হাত ধরতেই বলে উঠলাম-

— আম্মু কি করছো? আমার এসব লাগবে না। তু!

— মা হয়ে মেয়েকে দিচ্ছি তুই কি মানা করবি মা? তুই আর সামিয়া আমার কাছে বউ মা না। আমার মেয়ে। তাই না করবি না।

— আম্মু এগুলো তুমি পরো। তোমাকে মানিয়েছে। আর এমনিতেই আমাকে এত গহনা দিয়োছো সকালে।

— আমার মা কে দিলাম সে ফিয়িয়ে দিচ্ছে? আমার খুব মন খারাপ হচ্ছে কিন্তু।

আম্মুর কথায় সবাই মুচকি হাসছে। আপুও ইশারা দিলো। আমিও হালকা হেসে হাত বারিয়ে দিতেই আম্মু বালা পরিয়ে দিলো। তারপর আপুর কাছে গিয়েও সেইম কাজটা করলো। সবাই কড়তালি দিলো। একে একে সবাই আনন্দর মাঝে আমার ভয় হতে শুরু করলো, মিঃ চৌধুরীর কথায় সত্যি কি তিনি রাতে! না আর ভাবতেও পারছি না। এর ভিতরে দেখলাম একটা মেয়ে দৌরে এসে মিঃ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো।আমি সহ বাকি সবার চোখ ও ওই দিকে। উনিও কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। কেন জানিনা খুব খারাপ লাগলো।উনি মেয়েটাকে নিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো-

— মায়াবতি?

আমি জানি উনি আমাকে এই নামে ডাকে তাই উত্তর দিলাম-

— হুম।

— ও হচ্ছে এনা। আমার ফ্রেন্ড। ইংল্যন্ড থাকা কালিন ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়। বিয়ের কথা জানতো না৷ তাই হুট করে এসেই পাগলি টা সারপ্রাইজ দিলো।

— মায়াবতী? এ আবার কেমন নাম আরাভ। আর তুমি তো কোন স্পেশাল কাউকে বিয়ে করতে চাইতে লুক আমার মতো , তাহলে ওর মাঝে কি আছে এমন?

উনি আগের কথা গুলো জোড়ে বললেই লাস্টের কথা গুলো বিরবির করে বললো।কেন যানো আমার ভালো লাগলো না মেয়েটাকে। আমিও তাই সালাম দিয়ে বললাম –

— আসসালামু ওয়ালাইকুম আপু। ভালো আছেন?

— হ্যা আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

— আলহামদুলিল্লাহ আপু ভালো আছি।

— তোমার ভালো থাকা যে বেশি দিন টিকতে দেয়া যাবে না। কারন আমি আরাভ কে ভালোবাসি ও শুধু আমার। ( মনে মনে) তো ঈসা তোমার বাড়ি থেকে কেউ আসে নি, আই মিন মা বাবা এনি ওয়ান?

আম্মু আব্বুর কথায় মনটা ছেয়ে গেলো বিষাদে। সত্যি তো আম্মু কি কখনোই আসবে না? আর চাচ্চু চাচিমাও কি আসবে না? এক দিনেই পর করে দিলো আমায়?

মনে মনে কথা বলার সময় চোখের কার্নিস বেয়ে এক ফোটা অশ্রুজল গড়িয়ে পরলো। হটাৎ নিজের গালে কারো হাতের স্পর্শ পেতে চোখ খুলতেই দেখি মিঃ চৌধুরী, উনি কিছু ইশারা করতেই সামনে তাকিয়ে দেখি, দাদি, আম্মু, চাচিমা, চাচ্চু আর রাইসা এসেছে। মনে হয় কত জনম দেখি না। আমি ভুলেই লেগাম এটা আমার সদ্য বিয়ে করা শ্বশুর বাড়ি। দৌরে গিয়ে চাচ্চু আর চাচিমা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে অভিযোগ করতে লাগলাম৷ আম্মুর কাছে যেতেই দাদি আম্মুকে টেনে নিয়ে গেলো রাইসা হা করে বাড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে আমার কানের কাছে এসে বললো

— এই সব কিছু আমার হতো। তুই সব কেড়ে নিয়েছিস। তুই কি ভেবেছিস এভাবে সুখি হবি? হবি না। এই যে রানির মতো সাজ সেজেছিস এগুলো বেশি দিন থাকবে না দেখিস।

— ছি রাইসা এত কিছু করেও তোর মনে এতটুকু অনুসোচনা নেই?

— না নেই। যতদিন তোকে আমি পথে না বসাবো আমার শান্তি নেই৷ দেখি কয়দিন তোর এই ভালো মানুষি টিকে।

বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। আমি পিছনে তাকাতেই দেখি মায়া আর তুবা দাড়িয়ে আছে।

— তোর এই জল্লাদ বোন জিবনেও ঠিক হবে না৷ (তুবা)

— হ্যা দেখো নি, কাল এত কিছু করেও লজ্জা নেই ( মায়া)

— আচ্ছা চল এবার খেতে ডাকছে সবাই। ( তুবা)

খাওয়ার জায়গায় ফ্যমিলির সবাই বসেছে। আম্মু, দাদি,চাচ্চু,চাচিমা, রাইসা,আপু,সায়ন ভাইয়া, তুবা, তুহিন ভাইয়া, মায়া, আবির ভাইয়া,আম্মু আব্বু সবাই৷ মিঃ চৌধুরীর সাথে এনা বসতে চেয়েছে তার আগেই উনি আমাকে টেনে নিয়ে খাওয়াতে শুরু করেছে।আমি লজ্জা পেলেও সবাই মিটমিটিয়ে হেসে সায় জানালো। কিন্তু এর ভিতর লেহেঙ্গার স্লিভলেসের কারনে আমার পেটে আর কমোড়ে রেশ হয়ে গিয়েছে। একে তো স্লিভলেস তার ওপর আবার ভারি ড্রেস। কাউকে কিছু বলি নি৷এখন আরও যন্ত্রনা হচ্ছে৷ কোন মতে খাওয়া শেষ করলে, সবার সাথে টুকটাক কথা বলা শেষে আমাকে আর আপুকে ঘরে দিয়ে এলো। ঘরে এলেই সেই মিঃ চৌধুরীর বলা কথা মনে পরে গেলো। তারাহুরা করে কি করবো ভাবতে ভাবতে যেভাবে আছি ওই ভাবেই শুয়ে পরলাম। কিন্তু একি ঘুম ও আসছে না। দড়জায় আওয়াজ পেয়ে চোখ বন্ধ করে মুখের ওপর ব্লেনকেট দিয়ে ঢেকে নিলাম।
উনি আমার অবস্থা দেখে ঠোট কামড়ে হেসে আমার দিকে এগিয়ে লাইট অফ করে দিলেন। আমি তবুও চোখ খিচে অফ করে রাখলাম। এর ভিতরেই ভুতের ভয়াবহ সাউন্ড পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে সামনে হাতরে হাতরে বলে উঠলাম –

— মিঃ চৌধুরী আ আমার ভয় করছে প্লিজ। আপনি কোথায়?

উনি হুট করেই আমাকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,

— হুস জান আম হেয়ার। ভয় পেয়ো না। আমি এই তো।

বলার এক পর্যায় আমার কোমড় ধরে টান দিলে আমি ব্যথায় হালকা আর্তনাদ করে উঠি। উনি আমাকে ছেড়ে লাইট অন করে আমার কাছে এসে বলতে শুরু করলেন –

— কি হয়েছে। চিৎকার করলে কেন? ভয় পেয়েছো? আর তুমি ড্রেস চেঞ্জ করো নি কেন?

— আব আমি?

— এই এক মিনিট এদিকে এসো, তোমার পেট লাল হয়ে আছে কেন? জান কাম। আমি ডাকছি তোমায়।

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি লেহেঙ্গার ওরনা সরে পেট কোমড় দেখা যাচ্ছে। তাকাতেই দেখি লাল হয়ে রেশ উঠে গিয়েছে। আমার অভ্যশ ব্যথা পেলেই কেঁদে দেই। তাই হলোও ও তাই৷ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। উনি আমাকে টেনে এই সেই বলে বেডে বসিয়ে একটা এনটেসেভটিভ এনে লাগিয়ে দেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই নিজেই বলে উঠলো-

— ঈশু জান ট্রাস্ট মি, আমি যাস্ট মলল টা দিয়ে দিবো। আর আমি তখন মজা করেছি। তোমার অনুমতি ব্যতিত আমি তোমাকে ছুঁবো না জান। আই প্রমিস। বাট এখন এটা না দিলে আরও রেস হবে। প্লিজ জান টাচ করবো না।

আমি অবাক দৃষ্টিতে ভাবছি, যেই মানুষ টা সবার সামনে নিজের মতামত অনুজায়ি কাজ করে সে আমার থেকে অনুমতি নিয়ে তার বিয়ে করা বউ কে টাচ করবে? এটা কি আমার ভ্রম? আমি কিছু বলার আগে আমাকে টানে নিজের হাতে এনটেসেভটিপ লাগিয়ে দিচ্ছেন ফুঁ দিয়ে। মনে হচ্ছে আমি একটা ছোট বাচ্চা। এক সময় ওনায় পাগলামি গুলো দেখতে দেখতে ওনার এক হাত খামছে ধরে পাড়ি জমালাম আমার ঘুমের রাজ্যে।

#চলবে____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here