স্বামী পর্ব ১৫+১৬

#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৫

কিছুক্ষণ পরে যখন শ্বাস করতে পারছিলাম না তখন সোহান গলাটা ছেড়ে দিয়ে বসে পরল। শোয়া ছেড়ে উঠে গলাটা ভালো ভাবে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ধরতে লাগলাম। খুব খারাপ লাগছে পানি খাবো বলে নামার জন্য পা বাড়াবো তখনি সোহান হাত টেনে ধরল।
– কোথায় যাচ্ছ.?
– খুব কষ্ট করে বললাম পানি খাবো।
– তুমি দাঁড়াও আমি পানি ঢেলে দিচ্ছি।
– গলাটা বারবার আটকে আসছে কথা বলতেও পারছি না। সোহানকে পানি দিতে মানা করব কিন্তু গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
সোহান জগ দিয়ে পানি ঢেলে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– পানিটা খেয়ে নাও।
অনিচ্ছা স্বত্বেও সোহানের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে অর্ধেক পানি খেয়ে নিলাম। পানি খাওয়ার পরে একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে আসল। পানির গ্লাসটা টেবিলের উপরে রেখে জান্নাতের পাশে শুয়ে পরল সোহান। দুজনের মাঝখানে বেশ দূরত্ব। আমি যতটা পারছি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি যাতে জানোয়ারের শরীর স্পর্শ না লাগে। পুরো রুমে নিরবতা চলছে। দুজনে সোজা হয়ে শুয়ে আছি। কারও মুখে কোন কথা নেই। তখন রাত প্রায় আড়াইটা। সোজাভাবে শুয়ে থেকে পিঠ ব্যথা করছে তাই কাৎ হয়ে ওপাশ ফিরলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে
ঘুমে চোখ আটকে যাচ্ছে তখন হঠাৎ ফিসফিস আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। প্রচন্ড পরিমাণে ভয় পেলাম। অনেকক্ষণ উপলদ্ধি করতে লাগলাম কোথা থেকে এত রাতে কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভুত না তো.?
এপাশ ফিরে সোহানের দিকে তাকালাম। ঘুমের ভেতরে সে নাক ডাকছে। হঠাৎ ঘুমের মাঝে সে চিৎকার দিয়ে উঠে না নিলয় তুই আমার সাথে এরকমটা করতে পারিস না। সোহানের ঘুমের ভেতরে নিলয়ের নামটা শুনে অনেক বেশি চিন্তিত আমি। নিলয় ছেলেটা তো ভালো না দেখলেই শুধু হাসে। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুদৃষ্টিতে তাকায়। মানুষ দিনে যা চিন্তা করে রাতে ঘুমালে সেগুলোই বলতে থাকে ছোটবেলা থেকে এমনটাই জেনে এসেছি। তবে অনেকভাবেই গবেষণা চালিয়ে এটাই যে বাস্তব অনেক প্রমাণ পেয়েছি। অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে যখন মানুষ থাকে তখন ঘুমের ভেতরে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করে।
শরীর যখন বেশি ক্লান্ত থাকে তখন ঘুমের ভেতরে নাক ডাকে। অনেকের এটা অভ্যাস কিন্তু সচারচর সবাই নাক ডাকে না।

কিছুক্ষণবাদে সোহান লাফিয়ে উঠে বিছানার উপরে বসল। সমস্ত মুখ ঘামে ভিজে গেছে। মনে হচ্ছে খারাপ কোন স্বপ্নে দেখেছে।
– কী ব্যাপার আপনি এভাবে ঘামছেন কেন.? মনে হচ্ছে খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন.?
সোহান কোন উত্তর দিচ্ছে না। শুধু ঘেমেই যাচ্ছে। সোহানের গায়ে হাত দিলে ভুত দেখার মতো চিৎকার দিয়ে উঠে। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায়। স্বাভাবিক হওয়ার পরে বলল,
– জান্নাত তুমি এখনো জেগে আছো কেন..? ঘুমাওনি এখনো.?
– ঘুমিয়ে পরেছিলাম কিন্তু আপনার চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে গেছে।
– নিশ্চুপ সোহান।
– আচ্ছা একটা কথা বলুন তো কিছুক্ষণ আগে তো আমার গলাটা চেপে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তারপর ঘুমিয়ে পরলেন। হঠাৎ ঘুমের ভেতরে নিলয়ের নাম বলে চেঁচাচ্ছিলেন কেন.? নিলয়ের সাথে কী আপনার কোন ঝামলা হয়েছে.?
জান্নাতের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। মনে হচ্ছে এখনি কামড়ে খাবে।
সোহানের আজগুবি বিহেবের কারণে চোখদুটো নামিয়ে নিলাম।
রাগে পুরো শরীর গরম হয়ে যায়। এবার দুজনের মাঝখানে কোলবালিশ রেখে আটকে দিলাম যাতে সোহানের শরীরে স্পর্শ না লাগে।

সকালের সূর্য্যের আলো জানালার পর্দা ভেদ করে চোখে পরতেই ঘুম ভাঙল আমার। আড়মোড়া দিয়ে পাশ ফিরতে দেখি সোহান পাশে নেই। কিছু বুঝে ওঠার আগে সাথী রুমে আসল।
– ভাবি ভিতরে আসব..?
– হুম আসো।
– আজকে কলেজে যাওয়া লাগবে সেদিকে খেয়াল আছে। আটটা বেজে গেছে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।
– ঠিকাছে। তোমার ভাইয়াকে তো দেখছি না কোথাও গেছে নাকি?
– সকাল ৭ টার দিকে তো বের হলো মা জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় যাচ্ছে কিন্তু বলেনি।
– ওহ্।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসে সোহান এখনো বাসায় আসেনি। বিষয়টা খুব ভাবাচ্ছে আমাকে। যদিও বা তাকে দিয়ে আমার কিছু আসে যায় না তবুও একটু টেনশন হচ্ছে।

এদিকে সোহান লিজার ঠিকানা জোগার করে ওর বাসা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেলেও ব্যর্থ হয়। লিজা আগের ঠিকানায় নেই। বাড়িওয়ালার কাছ থেকে নতুন ঠিকানা জোগার করে খুঁজল কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূণ্য। লিজার সাথে যেদিন শেষ কথা হয়েছে সেদিন শুনেছিলাম ও প্রেগন্যান্ট! নিউজটা শোনার পরে ওর গালে ঠাস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, তুই প্রেগন্যান্ট হয়েছিস সেটা তোর নিজের দোষে আমি কী তোর সাথে শুতে চেয়েছিলাম.? তুই তো ঝড়ের রাতে নিজের ইচ্ছায় শুয়েছিলি কই তখন তো বলিসনি যে আমার সাথে বিনা প্রোটেকশনে শুয়ে যদি কোন সমস্যা হয় তার দায়ভার তোমাকে বহন করতে হবে। এমন কথা তো বলিসনি। তবে আজ কেন এসব বলছিস।

আমার কথাশুনে খুব কেঁদেছিল লিজা। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল সোহান আমার পেটে যে সন্তান সেটা তোমার জন্মের সন্তান। তখন রেগে গিয়ে বলেছিলাম একদিন ভুল করে শুয়েছিলাম এতেই তুই প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলি..? শোন লিজা তোর মতো মেয়েদের আমি ভালো করেই চিনি কতজনের সাথে শুয়ে পেট বাঁধিয়েছিস সেটা বল।
কত করে বুঝিয়েছিল বিশ্বাস করো সোহান আমি কারও সাথে শুইনি একমাত্র তোমার সাথে শুয়েছি।
পকেটে যত টাকা ছিল বের করে লিজার মুখের উপরে ছুরে দিয়ে বলেছিলাম কালকে সকালে গিয়ে বাচ্চাটা এর্বোশন করিয়ে নিবি।
যত টাকা লাগে তোকে আমি দিব দরকার হলে তোর সমস্ত খরচ বহন করব তবুও তোকে এই বাচ্চাটাকে এর্বোশন করতে হবে।
– সোহান তুমি না বলেছিলে আমাকে বিয়ে করবে..?
– হা হা হা বিয়ে করব কাকে..? তোকে! নিজের দিকে একবার তাকিয়েছিস? শোন জুতা যতই চকচক করুক না কেন সেটা পায়েই শোভা পায় হাতে না। তেমনি তুই যতই সুন্দরী হও তবুও তুই কিন্তু প্রোস্টিটিউট কথাটা মাথায় রাখবি। এই সোহান যখন বিয়ে করবে তখন কানের কাছে পিয়ানো বাজবে। আমার বউ যখন হেঁটে যাবে রাস্তার সব ছেলেরা হুমরি খেয়ে পরবে এক পলক দেখার জন্য আর পিছনে বসে বাহবা দিবে। কথাগুলো বলে লিজার ঘর থেকে বেরিয়ে আসি।

সোহান পুরনো কথাগুলো মনে করে অস্থির হয়ে ভেঙে পরে। লিজার কাঁদো কাঁদো চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলে নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা লাগে। ভাবছে সেদিন কেনো যে নিজেকে সামলিয়ে চলে আসল না! তবে তো এমন দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্ভব হতো না।
এভাবে হার মানলে চলবে না যেভাবেই হোক লিজাকে খুঁজে বের করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

সন্ধ্যার পরে দরজায় কলিং বেল বাজলে সাথী এসে দরজা খুলে দিল। ভাইয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। সোহান দরজা আটকে দিয়ে রুমে ঢুকল।
সোহান ভিতরে ঢুকলে আমি তার দিকে তাকিয়ে অনেকটা অবাক হলাম। তাকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। পুরো মুখ কালো হয়ে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো মনে হচ্ছে নিজের চুল নিজে টেনেছে।
– আপনি এখন কোথা থেকে আসলেন..? আজকে তো আমাকে কলেজে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মা গতকালকে কত করে বলে দিয়েছে প্রিন্সিপাল স্যার কল দিয়ে বলেছে আজকেই যাওয়ার জন্য তবুও আপনি আসলেন না। জানেন মা কতটা টেনশনে ছিল। আপনাকে কতবার কল করেছে তবুও ধরেননি। অবশেষে মা আমাকে নিয়ে কলেজে গেছে। আচ্ছা এত কথা বলছি আপনি কোন উত্তর দিচ্ছেন না কেন..?
সোহান কোন কথাই বলছে না। ধীরে ধীরে বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে শুয়ে পরল।

সোহানকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে আজ! কয়েকদিন ধরে ওর মতিগতি বুঝা যাচ্ছে না। মাথায় কিছু কাজ করছে না। এই মূহুর্তে কী করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না।
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_১৬

সোহান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
পাশে বসে তার দিকে তাকাচ্ছি। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর বললাম,
– আপনি খাবেন না.?
– নিশ্চুপ সোহান।
– আপনি কী শুনছেন না.?
– আবারও নিশ্চুপ সোহান।

বসা ছেড়ে উঠে সোহানের দিকে উঁকি মেরে তাকালাম। সে ঘুমিয়ে পরেছে। বুঝতে পারলাম ক্লান্ত শরীর তাই শোয়া মাত্রই ঘুম চলে এসেছে।

আধা ঘণ্টা পরে দরজায় টোকা দিলে বুঝতে পারলাম কেউ তো এসেছে!. বিছানা দিয়ে নেমে দরজাটা খুলে দিয়ে দেখি সোহানের মা।
– মা আপনি.?
– হ্যাঁ তোর সাথে কিছু কথা ছিল বাহিরে আয়।
– জি মা।
মায়ের সাথে তার রুমে ঢুকলাম।
জান্নাত আমার কাছে আয়। মায়ের এমন কথায় কিছুটা ভয় পেলাম। বিয়ে হওয়ার পরে তিনি নিজে গিয়ে কখনও তার রুমে ডাকেনি। সব সময় সাথীকে দিয়ে ডাকিয়েছেন। কিন্তু আজ সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে বিষয়টা। আমি কিছু বলার আগে তিনি বললেন,
– জান্নাত তোকে আমার পুত্রবধু হিসাবে খুবই ভালো লাগে, তোর জন্য আমি সব করতে পারব কিন্তু তার বিনিময়ে আমার একমাত্র ছেলেটাকে তোর খুশি রাখতে হবে। সোহান আমার একমাত্র ছেলে। কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি ছেলেটা ঠিকমতো খাচ্ছে না, ঘুমাচ্ছে না, খুব সকালে বেরিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা বিয়ের আগে এতটা উত্তেজিত ছিল না এখন বিয়ে করানোর পরে খুব অশান্তি ভোগ করছে। আমি বুঝতে পারছি তোদের ভেতরে বনিবনা হচ্ছে না। তুই হয়তো সোহানকে মন থেকে মেনে নিতে পারছিস না। জান্নাত তোর যা প্রয়োজন সব তুই পাবি কিন্তু তার বিনিময়ে সোহানকে তোর সুখি করতে হবে। ওর মুখে চিন্তার ছাপ দেখলে বুকের ভেতরে চিনচিন করে ব্যথা শুরু করে। আমি জানি না তোদের কী নিয়ে সমস্যা চলছে তবুও আন্দাজ করতে পারছি বড় ধরণের সমস্যা হচ্ছে।
মায়ের কথাগুলো শুনেই যাচ্ছি কিছুই বলছি না। কী আর বলার কপালে যা আছে তাই হচ্ছে। উনার ছেলে যা যা করছেন সেটা যদি আমি বলি তবে হিতে বিপরীত হবে কারণ সে তার ছেলের পক্ষেই কথা বলবে। তাই চুপচাপ শুনে যাওয়াই ভালো। শ্বাশুড়ি সব সময় নিজের সন্তানেরই সার্পোট করেন কখনও পরের ঝিয়ের সার্পোট করে না।
– জান্নাত তোকে কিছু বলছি তুই শুনতে পাচ্ছিস না।
– জি মা শুনছি।
– তাহলে চুপ করে আছিস কেন উত্তর দে.?
– কিছু বলার নেই।
– কিছু বলার নেই মানে..? সোহানের সাথে যত বড়ই সমস্যা হোক না কেন সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু কর। স্বামীকে সুখে রাখতে পারলেই সব কিছু সম্ভব। একটা মেয়েই পারে পুরুষকে ভালো করতে। নারীর জন্যই পুরুষেরা খারাপ হয় এটা মনে রাখবি। তোর সংসার তুই নিজের মতো করে আগলে রাখবি।

– দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জি মা বলে দাঁড়িয়ে রইলাম। সোহানের মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। মনে হচ্ছে খুব খুশি হয়েছে। আচ্ছা জান্নাত আমি রুমে যাই সোহান উঠলে খাবারগুলো ওভেনে দিয়ে গরম করে দিস। তরকারি ঠাণ্ডা সোহানের পছন্দ না। আরেকটা কথা সোহানের পছন্দ অপছন্দগুলো জেনে নিস কখনও ওর অপছন্দের কাজ করবি না দেখবি সংসার ভালো চলবে।
– আচ্ছা মা।

মা চলে গেলে আমি রুমে ঢুকলাম। সোহানের পাশে এক কোণে চুপ করে শুয়ে পরলাম। সোহান এখনো ঘুমুচ্ছে। দুপুরে অল্প করে খাওয়াতে খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু তাকে রেখে একা একা খাওয়াটা ভালো দেখাচ্ছে না। আধা শোয়া অবস্থায় শুয়ে আছি। রাত তখন আড়াইটা বাজে। হঠাৎ ঘুম ভাঙল আমার। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সোহানের মুখের উপরে মোবাইলের লাইটের আলো জ্বলছে। এত রাতে তিনি মোবাইলে কী করে.?
– আপনি ঘুম থেকে উঠলেন কখন.?
আমার গলার আওয়াজ শুনে তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে বলল,
– এই তো একটু আগে। তুমি উঠে গেলে কেন.?
– ঘুম ভেঙে গেছে। কিন্তু আপনি এত রাতে মোবাইলে কী করছেন.? আমাকে দেখে মোবাইলটা লুকিয়ে রাখলেন কেন.? কী আছে মোবাইলের ভেতরে.?
আমতা করে সোহান বলল,
– কী থাকবে মোবাইলে কিছুই না। জান্নাত আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে এক কাপ কফির সাথে বিস্কুট আনবে প্লিজ।
– বিষয়টাকে খুব হালকাভাবে নিলাম। আপনি বসেন আমি নিয়ে আসছি। রান্নাঘরে ঢুকে কফি বানিয়ে মগে ঢেলে পিরিচে করে বিস্কিট নিয়ে রুমে আসলাম। কফির মগটা হাতে দিয়ে বিস্কুটের পিরিচটা বিছানার পাশে রেখে রুমের লাইট জ্বালাতে যাব তখনি সোহান বাঁধ সাধালো। জান্নাত কী করছো লাইন জ্বালালে খেতে মজা নেই। তুমি এসে খাওয়া শুরু কর।
– অন্ধকারে খাওয়া যায়..?
– কোথায় অন্ধকার.? ডিম লাইনের আলোয় তো সমস্ত রুম আলোকিত হয়ে গেছে। এমন আলোয় খাওয়ার মজাই আলাদা।
সোহান কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর বিস্কুট খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে সোহান শুয়ে পরল। আমিও সোহানের পাশে শুয়ে পরলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মনে মনে ভাবলাম যেভাবেই হোক সোহানের মোবাইলটা চেক করতে হবে।

পরেরদিন সকালে,

সোহান ওয়াশরুমে ঢুকেছে। আমি নাস্তা রেডী করার জন্য নিচে যাবো তখনি সোহানের ফোনে ম্যাসেজ আসল। না চাইতেও সোহানের ফোনটা চেক করলাম। যখন কার উপর সন্দেহ হয় তখন চেক করে সন্দেহটা দূর করাই শ্রেয়। নিলয়ের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে।
সোহান তুই তো এবার পুরোই ফেঁসে গেছিস। জানিস খুব কষ্টে তোর আর লিজার ম্যাসেজগুলো পেয়েছি। তুই যখন লিজাকে ধোঁকা দিছিলি তখনই ম্যাসেজগুলোর স্ক্রিন শর্ট আমাকে সেন্ড করেছিল। ম্যাসেজটুকু পরে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। তবে সোহানের ফোনে আজকে পাসওয়ার্ড ছিল না বলে দেখার সৌভাগ্য হলো।
এরপরে নিচে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। স্ক্রিন শর্টগুলো এমন ছিল।

– হাই জান, কোথায় তুমি.?
– আমি তো অফিসে।
– আজকে বাসায় আসবে কখন.? তোমাকে খুব মিস করছি। তোমাকে না দেখে থাকতে পারি না।
– হ্যাঁ জান, আমি জানি তুমি খুব হট তোমাকে দেখলে নেশা করার দরকার পরে না।
– কিন্তু কনডম তো দরকার পরে হি হি হি।
– তোমার ভেতরে তো এখনও যাইনি তাহলে বুঝলে কীভাবে যে কনডমের দরকার পরে কিনা হা হা হা।
– ওটা না হলে তো আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবো তখন তো আর সময় পাবে না, বিয়ে করে আমাকে ঘরে তুলতে হবে।
– এখন কোন বিয়ে, বাচ্চা এসবের দরকার নেই। যদিও ভুল বশত হয়ে যাও তাহলে এর্বোশন করে নিবে। আমি কোন ঝামেলা চাই না। তবে খুব সাবধানে নিলয় জানি বুঝতে না পারে।
– বুঝতে পারবে না।
– গুড গার্ল তাই তো তোমাকে প্রথম দেখেই পাগল হয়ে গেছি।
– ডার্লিং কখন আসবে ওয়েট করতে পারছি না। এতদিনের পরিচয়ে আজকে তোমাকে কাছে পাব তাও যদি দেরি করে আসো তাহলে কেমন হয় বলো.? জলদি চলে আসো।
– ওকে জান আসতেছি।

লিজা আর সোহানের চ্যাটিংয়ের স্ক্রিন শর্টগুলো নিলয় একে একে ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছে। সবগুলো পড়ার পরে ম্যাসেজ করল শালা মনে আছে তো এক রাতের জন্য জান্নাতকে আমার চাই না হলে তোর আর লিজার ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিব। ম্যাসেজটা দেখে শরীরের সমস্ত লোম খাঁড়া হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি উপরে গিয়ে দেখি একটা ভিডিও। ক্লিক করতেই চলতে লাগল। দেখেই বুকটা ধরফর করে উঠল। লিজার সাথে সোহানের অন্তরঙ্গ দেখে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা রেখে নিচে চলে আসলাম।

ছিঃ সোহান এতটা বাজে লোক। আমি কখনও বুঝতে পারিনি ও এতটা বাজে হবে। বিয়ের আগে অন্য মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে আমাকে ঠিকিয়ে বিয়ে করেছে। তাই তো বলি তার শরীরের এত ঝাঁঝ আসে কোথা থেকে..? আমার শরীর ঘিনঘিন করছে। রাগে শরীরটা কাঁপছে।

চলবে…..
চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here