স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ১৭

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
.
.
সাফিনা আহম্মেদের সাথে গল্পে মজে ছিলো ছোঁয়া । এমন সময় পরশ এসে বললো-
আজ বুয়া আমার রুম পরিষ্কার করেনি মা ।
-মিতুর মা আজ আসেনি পরশ ।
-এমন অগোছালো রুম ভালো লাগেনা আমার ।
.
ছোঁয়া মুখটা বাকিয়ে বললো-
এতো বড় ছেলে নিজের রুম নিজে গোছাতে পারেন না?
.
খানিকটা লজ্জা পেয়ে পরশ বললো-
পারি কিন্তু ইচ্ছে হয়না কাজ করতে ।
.
সাফিনা আহম্মেদ হেসে বললেন-
সমস্যা নেই আমি করে দিচ্ছি, চল ।
.
ছোঁয়া বললো-
আন্টি আপনি বসুন । আমি করে আসি ।
-না মা এসব তুমি কেনো করবে!
-ঘর গোছানো এই আর এমন কি! আপনি বসুন তো ।
.
এটাই যেনো চেয়েছিলো পরশ । তার রুমের প্রতিটা জিনিসেই ছোঁয়ার স্পর্শ কামনা করছে সে ।
.
ছোঁয়া এসে পরশের রুম গোছাতে শুরু করলো ।
দরজায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকে দেখে চলেছে পরশ । কোমরে উড়না টা বেধেছে ছোঁয়া । তাকে দেখতে পাক্কা গিন্নীর মতো লাগছে । সেই কথাটি বলতে চেয়েও বললোনা পরশ ।
এদিকে ছোঁয়া রুম গোছাতে গোছাতে ভাবছে, কিভাবে জানা যায় পরশের গফ আছে কিনা । রুপালি যে তাকে এই কাজটা দিয়েছে, তা ভুলতে পারেনা সে ।
.
বিছানাটা গুছিয়ে ছোঁয়া বললো-
এতো বড় ছেলে হয়েছেন, নিজের কাজ নিজে করতে পারেন না?
-অভ্যেস নেইতো, এখন আর ইচ্ছে করেনা ।
-বুয়া আর আন্টিকে দিয়ে আর কতো করাবেন । একটা বিয়ে করে নিলেই পারেন ।
.
ছোঁয়ার এমন কথা শুনে চমকালো পরশ । হঠাৎ এমন কথা বললো কেনো সে, ভাবতে ভাবতেই ছোঁয়া বললো-
একটা প্রশ্ন করি?
-করুন?
পরশের দিকে এগিয়ে এসে সে বললো-
ভালোবাসেন কাউকে?
.
ছোঁয়ার চোখের উপর চোখ রেখে পরশ বললো-
হ্যাঁ ভালোবাসি ।
.
সাথে সাথেই সাফিনা আহম্মেদের ডাক এলো । দুজনে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে এলে দেখা পেলো তোহার ।
পরশের উদ্দেশ্যে তোহা বললো-
আমার আমার ক্লাস ছিলোনা, ভাবলাম দেখে যাই তোদের ।
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
বেশ করেছো, বেশ করেছো । যাও তোমরা দুটিতে আড্ডা দাও ভেতরে গিয়ে ।
.
তোহা দাঁড়িয়ে ছিলো । সাফিনা আহম্মেদ হেসে আবার তাকে যেতে বললে সে বললো-
যাচ্ছি ।
.
পরশের দিকে এগিয়ে আসতেই সে ছোঁয়াকে দেখিয়ে বললো-
উনি ছোঁয়া ।
.
তোহা জড়িয়ে ধরলো ছোঁয়াকে । কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলে ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলো পরশের সাথে । ছোঁয়া একটু অবাকই হলো । অপরিচিত একটা মেয়ে প্রথম দেখাতেই এতোটা আপনজনের মতো আচরণ করলো কেনো?
.
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
কি ভাবছো ছোঁয়া? তোহার কথা তো?
-কে তোহা?
-এখন যে এসেছে ।
-ও হ্যাঁ ।
-ও এমনি । ভীষণ মিশুক একটা মেয়ে ।
-কে উনি?
-পরশের বান্ধবী । ওর সাথে কিছুদিন পর পরশের বিয়ে হবে ।
.
বড়সড় একটা ঝাটকা খেলো ছোঁয়া ।
ইশ! রুপালি জানলে বড্ড কষ্ট পাবে ।
.
.
-জানিস তোহা? আজ ছোঁয়া রুমটা গুছিয়ে দিয়েছে । এখন থেকে আমার রুমে ওর স্পর্শ অনুভব করবো ।
-তুই ওকে এসব করাতে এই বাড়িতে এনেছিস?
-মোটেও না । আমি আমার পাশেপাশে রাখতে এনেছি । তাছাড়া এমন কি কাজ করালাম? প্রিয়তমা কে দিয়ে যে কাজটা করানো উচিত সেটাই করিয়েছি । যাতে করে সে না থাকলেও তাকে অনুভব করতে পারি আমি ।
-হু।
-ও না আজ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা । এমন প্রশ্ন কেনো করেছিস বলতে পারিস?
-নাতো ।
-তুই মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের প্রশ্নের মানেও বুঝছিস না?
-এমনিতেও হতে পারে ।
-নাকি আমাকে তার পছন্দ?
-তুই দেখছি ওই মেয়ের জন্য একেবারেই পাগল হয়ে গিয়েছিস?
-জেলাস?
-আমি?
-হু ।
-বয়েই গেছে ।
.
হাসলো পরশ । তোহা বললো-
ছোঁয়া দেখতেও মাশাআল্লাহ!
-বলেছিলাম না?
-হ্যাঁ । মানাবে তোদের ।
-থ্যাংক ইউ ।
-প্রপোজ কবে করবি?
-ওকে আমি যতোটুকু বুঝেছি, এভাবে হুটহাট কিছু বললে বাসায় আসাও বন্ধ করে দিবে ।
-তবে?
-একটু সময় নিতে হবে ।
-সময় নিতে নিতে পাখি উড়াল দিলে?
-মানে?
-মানে তুই কি জানিস ছোঁয়া সিঙ্গেল কিনা?
-না ।
-ওর বয়সী মেয়েরা আজকাল সিঙ্গেল থাকবে, এটা খুব কমই আশা করা যায় ।
.
চিন্তার ভাজ পড়লো পরশের কপালে । তোহা বললো-
জানার চেষ্টা কর ।
-হু ।
-আচ্ছা পরশ, ও যদি কাউকে ভালোবাসে তাহলে তুই কি করবি?
-ওদের মাঝখানে আসবোনা আমি ।
-তুই না ওকে ভালোবাসিস?
-ভালোবাসার মানে হাসিল করা নয়, সুখে রাখা ।
-সরি । আমি একটু বেশিই সিরিয়াস কথা বলে ফেলেছি ।
-খারাপও বলিসনি । থাকতেই পারে ওর জীবনে স্পেশাল কেউ । আর থাকলে আমি সরে যাবো ।
.
সাফিনা আহম্মেদের সাথে গল্প করছে ছোঁয়া । তোহা ড্রয়িংরুমে এসে তাদের সাথে যোগ দিলো । পরশও আসলো । পরশ যে এক দৃষ্টিতে তোহার দিকে তাকিয়ে আছে এটা আর কেউ খেয়াল না করলেও তোহা করলো ।
আর নিজেরমনে বললো সে-
ইশ! এভাবে যদি কেউ আমাকেও ভালোবাসতো! কেউ কেনো? পরশ বাসলেই পারতো । ছোঁয়ার বফ থাকলে মন্দ হতোনা । অন্তত পরশ আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করতো । আর একবার বাসলেই আজীবন আমাকে সেই ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখতো ।
.
এসব ভেবে মাথাটা ঝাকালো তোহা । এসব কি ভাবছে সে! পরশ ভালোবাসে ছোঁয়াকে । ছোঁয়ার বফ থাকুক এমন কামনা সে কিভাবে করতে পারে? এটা অন্যায়! ভারী অন্যায়…
.
.
সন্ধ্যা হতেই ছোঁয়ার বাসায় হাজির হলো রুপালি। তাকে দেখেই ছোঁয়া অন্য বিষয়ে গল্প শুরু করলো । রুপালি বললো-
অনেকক্ষণ ধরে তোর বকবকানি শুনছি ।
-বকবকানি?
-হু । আমি ডাক্তার বাবুর কথা শুনতে চাই ।
.
এইরে! যেই ভয়টা ছোঁয়া পেয়েছিলো সেটাই হয়েছে । ছোঁয়া এতক্ষণ ইচ্ছে করেই অন্য প্রসঙ্গে কথা বলছিলো । পরশের যে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, এটা জানলে সে কষ্ট পাবে ।
রুপালি বললো-
আজ কি কি করেছে ডাক্তার বাবু? বলনা?
-আসলে রুপালি…
-কি? তোর উনাকে ভালো লাগতে শুরু করেছে?
-ধ্যাত!
-আরে মজা করলাম । তোর কিভাবে অন্যকাউকে ভালো লাগতে পারে!
.
নিশ্চুপ হয়ে গেলো ছোঁয়া । রুপালি তার নীরবতার কারণ বুঝতে পেরে বললো-
সরি ।
-সরি কেনো?
-আমি আসলে…
-বাদ দে ।
-হু ।
-ডাক্তার পরশের বিয়ে ঠিক করা আছে, তার বান্ধবীর সাথে । আজ তাকে দেখেছি আমি । বেড়াতে এসেছিলো ।
.
ছোঁয়ার কথা শুনে রুপালি হো হো শব্দে হেসে উঠলো । সে অবাক হয়ে বললো-
হাসছিস কেনো?
-দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি ।
-এভাবে বলছিস কেনো? পথ চলতে যেকাউকে ভালো লাগতেই পারে ।
-ভালো লাগারও লিমিট দরকার ।
-মন খারাপ করেছিস?
-উহু ।
-সত্যি?
-হু ।
.
রুপালিকে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়া বললো-
ওলে বাবালে…
আমার বান্ধবীটার জন্য আরো ভালো কেউ আসবে দেখিস ।
.
.
দিন ভালোই কাটছিলো । কিন্তু ছোঁয়ার এমন প্রশ্ন করার কারণ পরশ ধরে নিয়েছিলো অন্যকিছু । তাই সে এই বিষয়ে ছোঁয়ার কাছে কিছু জানতে চায়নি । ছোঁয়া নিয়মিত আসে পরশের বাসায় । ছোঁয়াকে লুকিয়ে দেখা যেনো পরশের নিত্যদিনের কাজ হতে লাগলো । তবে মাঝখানে ঘটে গেলো একটা দূর্ঘটনা । সাফিনা আহম্মেদ ওয়াশরুমে হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে কোমরে ও পায়ে ব্যথা পেয়েছেন । পা না ভাঙলেও ভালোই আঘাত পেয়েছেন তিনি । বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছেন না । ছোঁয়া যতোটুক সময় থাকে, তার সেবা করতে মগ্ন থাকে । ছোঁয়ার এসব দেখে মুগ্ধ হলেন শফিউল আহম্মেদও । মায়ের মতোই যত্ন করে সাফিনা আহম্মেদের সেবা করছে ছোঁয়া । এই অবস্থায় শফিউল আহম্মেদ ছোঁয়ার কাছে একটা আবদার করে বসলেন-
মা তুমি কিছুদিন এই বাড়িতে থাকবে? আসলে তুমি যতোক্ষণ থাকো ওর কোনো অযত্ন হয়না, হাসিখুশি থাকে । তাই বলছিলাম কি যদি কিছুদিন এখানে থাকো ভালো হয় । এটা আমার আবদার বলতে পারো ।
.
আড়ালে দাঁড়িয়ে পরশ অপেক্ষা করছে ছোঁয়ার উত্তর শোনার জন্য । এই যেনো মেঘ না চায়তেই বৃষ্টি! ছোঁয়া কিছুদিন এখানে থাকা মানেই পরশ তার আরেকটু কাছে যাওয়া….
.
এদিকে ছোঁয়া কি বলবে বুঝতে পারছেনা । তার বোন নয়নতারা নিশ্চয় রাজি হবেনা । এখন শফিউল আহম্মেদকে কি বলবে সে?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here