স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ৩৬

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩৬
#Saji_Afroz
.
.
বিছানার উপরে চুপচাপ বসে আছে নয়নতারা ।
ছোঁয়া এসে বসলো তার পাশে । তাকে দেখে মুখে হাসি আনার চেষ্টা করলো নয়নতারা ।
ছোঁয়া বলল-
একটা কথা বলতে এসেছি আপু ।
-বল ।
-আশফাক ভাইয়াকে মনে আছে তোমার?
-কে?
-ওই যে সাইকিয়াট্রিস্ট এর ফ্রেন্ড । মজার মজার কথা বলেছিলেন যিনি ।
-হ্যাঁ ।
-তিনি নাকি তোমাকে পছন্দ করেছিলেন ।
.
কোনো কথা বলল না নয়নতারা । ছোঁয়া বলল-
মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে, প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করলেও সে তোমাকে পছন্দ করেছে । তোমাকে ভালো রাখবে ।
-মানে?
-তুমি যদি চাও তাকে বিয়েটা করতে পারো । উনি সব ব্যবস্থা করে দিবেন বলেছে ।
-পরশ?
-হ্যাঁ ।
-আমি একবার আশফাকের সাথে কথা বলতে চাই । অন্য একজনকে ভালোবাসি এটা জানা দরকার তার ।
-ভালোবাসো মানে?
.
আবারো নিরব দু’বোন । ছোঁয়া বলল-
রাফসান ভাইয়া তোমায় বিয়ে করতে চেয়েছে?
-হুম তবে ভালোবেসে নয় । সে যা করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ।
-তবে তুমি তার কোন ঋণ শোধ করবে বলেছ?
-তুই কি শুনেছিস এসব?
-হ্যাঁ । আমি আরো একটা কথা জেনেছি ।
-কি?
-বাবা তোমার বিয়ের জন্য যেসব গহনা রেখেছিল, সব তুমি রাফসান ভাইয়াকে দিয়েছ । দিয়ে বলেছ, এসব বিক্রি করে টাকা নিতে ।
আপু উনি আমাদের সাহায্য করেনি বলব না! আমাদের খেয়াল রেখেছেন তিনি । কিন্তু উনার টাকায় আমরা চলিনি । তুমি রাতদিন খেটে পরিশ্রম করে সংসার খরচ চালিয়েছ ।
মায়ের অসুখে বিসুখে উনি সাহায্য করেনি তা নয়! এসব আমার ভালো লাগতো না । অসহায় মনে হতো নিজেকে । কিন্তু আজ জানতে পারলাম, এসবের জন্য তুমি গহনা দিয়ে দিয়েছ! উনি যা করেছে সবটায় আমার চোখে ভালো সাজার জন্য ।
-তুই এসব জানলি কিভাবে?
-একটু আগে মায়ের সাথে রাফসানের মায়ের কথা কাটাকাটি হয়েছে ফোনে । তখনি শুনেছি ।
আপু আমরা কারো দয়ায় চলিনি । আমি আয়ার কাজ করতেও দুবার ভাবিনি । কেনো? মানসম্মান নিয়ে চলার জন্য । তুমি কোন ঋণ শোধ করবে বলেছ? বলো আপু?
.
কিছু বলতে পারলোনা নয়নতারা ।
.
এরইমাঝে আগমন ঘটলো আফিয়া জান্নাতের । তাকে দেখে ছোঁয়া, আশফাকের কথা জানিয়ে বলল-
তোমার বড় কোনো পরিবারে মেয়ের বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে । কিন্তু আমাদের ভালোবাসা দরকার মা । আশফাক ভাইয়া ভালো ছেলে । তোমারও ভালো লাগবে তাকে ।
-তুই আমাকে ভীষণ খারাপ ভাবিস তাইনা? আমি শুধু তোদের ভালোই চেয়েছি । অন্য কিছু নয় ।
.
নয়নতারা বলল-
আমি রাফসানকে গহনা দিয়েছিলাম, মা জানতো । তুই মাকে ভুল বুঝতি, রাফসানের সাহায্য নিতো বলে । বিষয়টা এমন নারে । মা আমাদের ভালোর জন্যই এসব করেছে । ভেবেছে রাফসানের কাছে তুই সুখী হবি ।
.
আফিয়া জান্নাত বললেন-
বাবা মরা মেয়ে দুটোর ভবিষ্যৎ ভেবে ভেবে অস্থির থাকতাম আমি । রাফসান তোর প্রতি যে ভালোবাসা দেখাতো, আমি নিশ্চিত ছিলাম সে তোকে ভালো রাখবে অনেক । তাই চেয়েছি তুই ওর কাছেই থাক । ছেলেটা তোর তো খেয়াল রাখতো খুব তাইনা? বাকি সব বাদ দিলেও এই কথাটি মিথ্যে নয়।
.
আফিয়া জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়া বলল-
যা হবার হয়েছে মা । এক তরফা ভালোবাসা দিয়ে সুখী হওয়া যায়না । আর উনি যা করেছেন, তা কোনো ভালো মানুষের কাজ নয় ।
-আমি আর কিছু বলব না রে । তোদের ভালো তোরা নিজেরাই বুঝতে শিখেছিস । যা মন চায় কর।
-মন থেকে বলছ তো?
-হ্যাঁ ।
.
.
বারান্দায় বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়োতে ব্যস্ত তুষার । এমন সময় তার মা মুনতাহা বেগম এসে বললেন-
তুই কি করতে চাচ্ছিস আমি কিছু বুঝছি না তুষার! যে মেয়েটা তোকে অপমান করে চলে গিয়েছিল, আজ হুট করে ফিরে আসতে না আসতেই আবার তাকে নিজের লাইফে আসার সুযোগ করে দিচ্ছিস? কেনো?
.
এসট্রেতে সিগারেট টা রেখে সে বলল-
আহ মা! এমন করো নাতো।
-হ্যাঁ আমার কথা তোর খারাপ লাগবেই । বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস । বিয়ের বয়স কি হয়েছে তোর? পুরো লাইফটা পড়ে আছে তোর ।
একমাত্র ছেলে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস?
.
হাসতে থাকলো তুষার । তার হাসির মানে বুঝতে পারলোনা মুনতাহা বেগম । তুষার বলল-
তোমাকে কিছু কথা বলার আছে মা । তোমার সাহায্য প্রয়োজন আমার । তোমার ছেলের খুশির জন্য এতটুকু করতে পারবেনা বলো?
-কি?
-বাবাকে কিছু জানাবে না বলো ।
-আগে কথাটি তো বল!
-হ্যাঁ শুনো…..
.
.
একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে ছোঁয়া । একটু পরেই তুষারের পরিবার আসবে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে । ভাবতেই অবাক লাগছে ছোঁয়ার । নতুন করে আবার সব শুরু হবে, ভাবতে পারেনি সে!
সাফিনা আহম্মেদের কাছে এলো ছোঁয়া । ছোঁয়াকে দেখে তিনি বললেন-
ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে ।
-সত্যি?
-হ্যাঁ । এদিকে এসো । একটু ছুঁই তোমাকে ।
.
ছোঁয়া বসতেই তার হাতে মুখে চুমু খেলেন সাফিনা আহম্মেদ । তার চোখে পানি দেখে ছোঁয়া বলল-
এইরে! আজ চলে যাচ্ছি না । সময় আছে ।
.
এবার শব্দ করে কেঁদে ফেললেন তিনি ।
ছোঁয়া বলল-
এমন করলে আমারো কান্না আসবে ৷ সাজগোছ নষ্ট হয়ে যাবে । আমাকে বাজে দেখাবে । তারপর তারা আমাকে রিজেক্ট করে চলে যাবে । এমন টা চান আপনি?
-খুব করে চাই ।
.
এবার ছোঁয়ার চোখেও পানি চলে এলো ।
তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন সাফিনা আহম্মেদ । দূর থেকে দৃশ্যটি দেখে শফিউল আহম্মেদের চোখটাও ভিজে এলো । অল্প কয়েকদিনেই এই কোন মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো তারা!
কি হতো? ছোঁয়া তার পুত্রবধূ হয়ে এই বাড়িতে এলে । সবটা কতো সুন্দর টায় না হতো ।
.
.
নয়নতারাও গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে আজ।
আশফাকের পরিবারও আসতে চলেছে আজ।
সকালেই আশফাকের সাথে তার ফোনে কথা হয়েছে। আশফাক তাকে বিয়ে করতে চায়। তাকে সে পছন্দ করে জানালো।
আশফাকরে রাফসানের কথা জানিয়েছে সে। তার কোনো আপত্তি নেই এতে।
অনেকটা হালকা লাগছে নয়নতারার। জানেনা আশফাকের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সে। কিন্তু একজন ভালো স্ত্রী হবার আপ্রাণ চেষ্টা সে করবে!
.
দুই পরিবারের আগমন ঘটলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হলো । একই দিনে বিয়ে হবে নয়নতারা ও ছোঁয়ার ।
তবে তুষারের মা জানালো, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আত্নীয়-স্বজন আসবেনা । তারা এসেই বিয়েটা সম্পন্ন করবে ।
যেহেতু তুষার এখনো কোনো জব করেনা । জব পাওয়ার পরেই ছোঁয়াকে
ঘরে তুলবে । তখন তাদের পক্ষ থেকেই বিয়ের আয়োজন করা হবে ।
এই বিষয়ে আর দ্বিমত পোষণ করলেন না আফিয়া জান্নাত ।
বিয়েটা হবে এতেই তিনি খুশি ।
.
.
রাতে বাগানে হাঁটাহাঁটি করছে পরশ । আর কদিন পরেই ছোঁয়ার বিয়ে । ভাবলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে ।
ছোঁয়াকে বলেছে, সে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিয়েটা দিবে । কিন্তু সে কি আসলেই পারবে এটা করতে? চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো হয়ে যাবে, এটা কিভাবে দেখবে সে!
-শুনছেন?
.
ছোঁয়াকে দেখে পরশ বলল-
অভিনন্দন ।
-সবটায় আপনার জন্য হয়েছে ।
-কি যে বলোনা…
-এবার আপনিও বিয়েটা সেরে ফেলেন ।
.
হাসলো পরশ । ছোঁয়া বলল-
আপনি যে মেয়েটিকে ভালোবাসেন তার নাম বলুন আর ঠিকানা দিন আমাকে । আপনি যেমন ভাবে আমার ভালোবাসার মানুষকে পেতে সাহায্য করেছেন, আমিও করতে চাই ।
-তুমি পারবেনা তাকে রাজি করাতে ।
-পারবো । আপনি ঠিকানা দিয়েই দেখুন না ।
-সত্যি পারবে?
-হুম ।
-তবে দিন ।
-হু দিব।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here