স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ২০

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২০
#Saji_Afroz
.
.
পরশ বললো-
এই বয়সী মেয়েদের বফ থাকে স্বাভাবিক ।
-ওহ তাই বলেন! আমিও ভাবছি, ছোঁয়া প্রেম করছে আর আমি জানিনা!
-তার মানে ওর বফ নেই?
-নাতো!
.
রুপালির কথা শুনে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো পরশ । মনের মাঝে এক ধরনের শান্তি অনুভব করছে সে ।
রুপালি বললো-
আমি আসি ।
.
রুপালি চলে যেতেই তোহাকে ফোন দিলো পরশ । তাকে সবটা জানাতেই তোহা বললো-
এইতো সুযোগ! এবার লেগে পড় পটাতে ।
-তোর কি মনেহয়? ও আমাকে পছন্দ করবে?
-কেনো নয়! কোনদিকে কম আছে তোর? অবশ্য আমারো কোনোদিকে কম নেই ।
.
হাসতে লাগলো তোহা । পরশ বললো-
তুই কি কষ্ট পেয়েছিস?
-তোর জন্য? পাগল নাকি! জাস্ট মজা করলাম ।
-হু ।
-কি করবি ভাবছিস?
-মনে জায়গা করতে চাই ওর । এর আগে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইনা ।
.
.
রুপালি এসে ছোঁয়াকে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো । ছোঁয়ার চোখেও পানি । এই মেয়েটিকে ভালো খারাপ সময়ে সবসময় কাছে পেয়েছে সে । তাই দূরে আসাতে খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক ।
ছোঁয়া বললো-
তুই তোর ফুফির বাসায় ছিলিস বলে আসার সময় দেখা হলোনা ।
-আমি ওই বাড়িওয়ালীকে বকে এসেছি । ওর জন্য তোদের এখানে আসতে হলো । শয়তান মহিলা ।
-দেখি চোখ মুছ । খুব দূরে তো না! কাছেই আছি ।
.
রুপালি শব্দ করে কেঁদে উঠে বললো-
আরো দূরে হয়ে যাবে ।
-মানে?
-আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে । ফুফির বাসায় তো পাত্র দেখতে গিয়েছি ।
-সত্যি?
-হ্যাঁ । দাঁতের ডাক্তার ছেলে ।
.
কথাটি বলে হেসে ফেললো সে ।
ছোঁয়া বললো-
হাসবি নাকি কাঁদবি?
.
রুপালি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো-
আমার ফুফার ভাই এর ছেলে । আমাকে নাকি আগে থেকেই পছন্দ করতো । আগে অবশ্য কয়েকবার দেখেছি । কিন্তু তাকে নিয়ে এমন কিছু ভাবিনি আত্নীয় বলে । এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলের উপর ক্রাশ না খেয়ে থাকলাম কি করে রে আমি?
-তোর পছন্দ হয়েছে উনাকে?
-আবার জিগায়!
-তাহলে এই পাগলের ডাক্তার?
-ও আফসোস করে মরুক । আমি দাঁতের নিয়েই হ্যাপি । তোর দাঁতের কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই যাবি । ফ্রিতে চিকিৎসা করাতে বলবো ।
.
রুপালিকে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়া বললো-
আমি বলেছিলাম না? ভালো কেউ আসবে তোর জীবনে?
-হু । মিলে গেলো তোর কথা ।
-আমি খুব খুশি! ভীষণ খুশি তোর জন্য ।
.
.
ক্লাস শেষে অফিস রুমে বসে আছে তোহা । এমন সময় নীলাও আসলো ।
তোহা মোবাইলে গেইমস খেলছে দেখে নীলা বললো-
হবু বরের সাথে চ্যাট না করে ফ্রি টাইমে গেইমস খেলছো? অদ্ভুত ।
-নীলা তুমি কি আমায় ইচ্ছে করে খোচাচ্ছো? কিছুই অজানা নয় তোমার ।
-কি খবর এখন তার?
-পরশের?
-হু ।
-জানতে পারলো, ছোঁয়া সিঙ্গেল ।
-তাহলে তো তোমার আর কোনো চান্সই নেই ।
-আমি চান্স কোনো সময় চাইনি! ওর মা আমাদের বাসায় এসেছিলো ।
-জানি সবটা । তাও আমার মনেহতো, তোমাদের ভালো মানাবে! আর আমি যেটা উপলব্ধি করেছি সেটা তুমি কেনো করোনা তোহা?
-কি?
-তুমি ভালোবাসো পরশ কে ।
.
থমকে গেলো তোহা । সে জানে তার মনে পরশের জন্য এমন ভাবনা আসেনি কখনো । তবুও সবাই কেনো এসব বলে!
নীলা বললো-
আমার একটা কাজিন আছে । জব করে এমন মেয়ে খুঁজছে বিয়ে করার জন্য । কারণ তাদের বাসার সবাই জব করে । আর এমনি তাদের পছন্দ । তুমি তার সাথে দেখা করবে?
-আমি দেখা করলে কি তোমার বিশ্বাস হবে, আমি ভালোবাসিনা পরশকে?
.
মৃদু হেসে নীলা বললো-
হু ।
-তবে করবো । কিন্তু বাসায় এখন জানাতে চাচ্ছি না । পরশ আগে ছোঁয়ার ব্যাপারে অগ্রসর হোক ।
-তাহলে আমি কাজিনকে বলছি, আজ ছুটির পরেই দেখা করতে?
-ওকে ।
.
.
সাফিনা আহম্মেদের হাতের নখ কেটে দিচ্ছে ছোঁয়া । তিনি হেসে বললেন-
আমায় একেবারে পুতুল বানিয়ে ফেলছো তুমি ৷ কোনো কাজ করতে দাওনা । সবটা করে দাও, আমার নিজের কাজ পর্যন্ত ।
-এটাই তো আমার কাজ ।
-কাজ বলেই করছো?
-নাহ! অন্য কোথাও হলে এতোটা ভালোবাসা পেতাম কিনা আমি জানিনা । তবে এটা জানি, আমিও আপনাদের ভালোবেসে ফেলেছি আন্টি । যা করি ভালোবেসেই করি ।
.
সাফিনা আহম্মেদের খাবার আনতে বের হলো ছোঁয়া । এতক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনছিলেন শফিউল আহম্মেদ । তিনি এসে বললেন-
পরশের সাথে তোহার বিয়েটা ঠিক নাহলে এই মেয়েটির জন্য তোমাকে সুপারিশ করতাম আমি ।
-সুপারিশ আমাকে করতে হতোনা । পরশকে করতে হতো!
-তুমি রাজি হতে?
-অবশ্যই । তবে আমার মনেহয়না তোমার ছেলে হতো ।
-কেনো?
-তোহার সাথেও রাজি হলো কোথায়? আমার কথা রাখতেই…
-ছোঁয়ার কথা বলে দেখবে?
-এখন সেটা অসম্ভব! পরশ এতোদিন বিয়েতে রাজি ছিলোনা । এখন হয়েছে । তোহার মায়ের সাথেও কথা হয়েছে আমার । এই সময়ে এসব কি বলছো তুমি?
-ছোঁয়ার মতো দায়িত্বশীল, ভালো একটা মেয়েকে হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করছেনা । ইশ! আরেকটা ছেলে থাকতো আমার!
.
.
নীলার কথায় রাজি হলেও তোহার মোটেও ইচ্ছে করছেনা কারো সাথে দেখা করতে । কিন্তু নীলাকে তার প্রমাণ করতেই হবে, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা এক নয় ।
রেস্টুরেন্টে নীলার সাথে বসে আছে তোহা । এমন সময় মুশফিক নামের এক ছেলে এলো । দেখতে মোটামুটি ভালোই সে । সম্পর্কে নীলার খালাতো ভাই হয় । নীলা তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে সরে গেলো সেখান থেকে । এভাবে মুশফিকের সামনে বসে থাকতে কিছুটা বিব্রতবোধ করছে তোহা । মুশফিক তা বুঝতে পেরে বললো-
আসলে আমাকে এভাবে তাড়া দিয়ে আসতে বললো নীলা, না এসে পারলাম না ।
-জ্বি ।
-আপনাকেও নিশ্চয় জোর করে এনেছে?
-ঠিক তা নয় ।
-থ্যাংক গড! আমি নীলাকে বলেছিলাম তার পরিচিত কোনো ভালো মেয়ে থাকলে পরিচয় করিয়ে দিতে । তবে আমি চাইনা ফ্যামিলিগতভাবে আগাতে । আমি চাই আগে নিজে জানতে তাকে । তাই কাউকে না এনেই এভাবে চলে এসেছি ।
-আসলে আমিও এখন বাসায় জানাতে আগ্রহী না ।
-বিয়ে করতে তো আগ্রহী?
.
এখানে আসার আগপর্যন্তও তোহার এসবে কোনো আগ্রহ ছিলোনা । কিন্তু মুশফিকের সাথে কথা বলতে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে । বড্ড মিশুক ছেলেটি । কতো সুন্দরভাবে কথা বলছে । দেখে মনেই হচ্ছেনা অপরিচিত!
মুশফিক প্রশ্নটি আবার করতেই সে মুচকি হেসে জবাব দিলো-
হু ।
-ব্যাস তাতেই হলো! আমার কোনো তাড়া নেই ।
-আমারো ।
-তবে বন্ধু হতে পারি আমরা?
-সিউর!
.
.
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই বাগানে হাঁটতে এলো ছোঁয়া । কিন্তু বাগানে রাফসানকে দাঁড়ানো দেখতে পেয়ে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো সে । রাফসান এখানে কিভাবে!
.
চলবে
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here