#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২৩
#Saji_Afroz
.
.
আহসানা খাতুনের রাগ হচ্ছে প্রচুর । কিন্তু রাফসানের জন্য নিজেকে স্বাভাবিক করে রেখেছেন তিনি । আফিয়া জান্নাত তার পাশে বসে আছেন । রাফসান ইশারা করতেই আহসানা খাতুন বললেন-
আফিয়া ভাবী? আপনি রাগ করেছেন আমার উপরে? আসলে তখন আমি শুধুই আমার ছেলের কথা ভেবেছি । তাই ওমন একটা আবদার করেছিলাম । কিন্তু এখন বুঝছি, এটা করা আমার উচিত হয়নি । আমি আসলেই লজ্জিত ।
-এভাবে বলবেন না ভাবী! আমিও রাফসানকে এসব জানাতাম না । ও যেভাবে রেগে গিয়েছিলো নয়নের সাথে, বাধ্য হয়ে বলতে হলো ।
-নয়নতারা কোথায় গেলো? এখানেই তো ছিলো । ডাকুনতো ।
.
নিজের রুমের এক কোণে বসে কাঁদছে নয়নতারা । ভালোবাসার মানুষটার কাছে আর কতো অপমানিত হবে সে!
রাফসানের কি তার জন্য সামান্যতম মায়া হয়না?
ভাবতে ভাবতেই মায়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেলো সে । তাকে ডাকছে আফিয়া জান্নাত । বসা থেকে উঠে চোখ মুছে নিলো নয়নতারা । ড্রয়িংরুমে আসতেই
আহসানা খাতুন বললেন-
আমার ছেলে যা করেছে তার জন্য মন খারাপ করলে মা?
আমি ক্ষমা চাইছি ওর হয়ে ।
-আপনি কেনো ক্ষমা চায়বেন আন্টি! এসব বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না প্লিজ ।
.
রাফসানের দিকে তাকালো নয়নতারা । এবার যদি কিছু বলে সে! না, বললোনা এই ব্যাপারে৷ ছোঁয়াকে ডাকতে বললো ।
নয়নতারা যেতে চায়লে দেখা পেলো ছোঁয়ার ।
ছোঁয়া সালাম জানালো আহসানা খাতুনকে । তিনি বললেন-
রাফসান যখন সবটা জেনেছেই এখানে আর কাজ করতে হবেনা তোমার । সে আছেই তো তোমাদের মা মেয়েদের খরচ বহন করতে ।
.
আহসানা খাতুনের কথা বলার সুরটা পছন্দ হলোনা ছোঁয়ার । এই বাড়ির কাউকেই সহ্য হয়না তার । মায়ের জন্যই এতোকিছু করতে হয় ।
ছোঁয়া বললো-
আপনার ছেলের বহন করার প্রয়োজন নেই । আমি সম্মানের সাথেই এখানে আছি ।
-কিন্তু রাফসান…
.
মাকে থামিয়ে রাফসান বললো-
তুমি নিজের কর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছো এটাই যথেষ্ট । বাকিটা আমি দেখছি ।
দেখো ছোঁয়া তোমরা এখানে থাকতেই পারো । আমার কোনো সমস্যা নেই । কিন্তু ডাক্তার পরশ অবিবাহিত জেনে আমার…. আসলে বুঝছোই তো, আমি কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা ।
-এটাও জেনে গিয়েছেন! তবে এটা জানেন না?
উনার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । চিন্তার কোনো কারণ নেই ।
.
কথাটা শুনে যেনো শান্তি পেলো মনে রাফসান । মুচকি হেসে বললো-
আর কোনো সমস্যা নেই ।
.
.
সাফিনা আহম্মেদ গোসল সেরে এসে ছোঁয়ার নাম ধরে ডাকতে থাকলেন । শফিউল আহম্মেদ এসে বললেন-
কিছু লাগবে?
-হ্যাঁ আমার মাথাটা মুছে দেয়ার জন্য ।
-আমি দিই?
-ছোঁয়ার হাতে জাদু আছে ।
-এখন আমার জেলাস হচ্ছে । ছোঁয়া আসার পর থেকেই আমি সময় কম পাচ্ছি কিন্তু ।
-তুমি কি ছোঁয়াকে ভাগিয়েছো?
-নাহ । ওর বাসায় মেহমান এসেছে ।
-ওহ!
.
সাফিনা আহম্মেদের মাথা থেকে তোয়ালে টা নিয়ে, চুলগুলো মুছে দিতে দিতে শফিউল আহম্মেদ বললেন-
মেয়েটা মনে জায়গা করে নিলো । ও চলে গেলে কষ্ট হবে ।
-যাবে কেনো?
-আরে মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি যেতে হয়, এটা যেনো জানোনা?
-হু ঠিকই বলেছো । এতো তাড়াতাড়ি মায়ায় পড়ে যাবো ভাবতেই পারিনি ।
.
.
ছোঁয়া নয়নতারার রুমে এসে দেখলো, তার মুখটা ফ্যাকাশে । হাতে ব্যান্ডেজ করা । ছোঁয়া ব্যস্ত হয়ে বললো-
তোমার হাতে কি হয়েছে আপু? আমিতো খেয়ালই করলাম না ।
-ওই কেটে গিয়েছে একটু ।
-কিভাবে?
-গ্লাস পড়ে গিয়েছিলো হাত থেকে আমার । তুলতে গিয়ে…
-তোমার হাত থেকে পড়েছে? নাকি অন্যকিছু?
.
নিশ্চুপ নয়নতারাকে দেখে ছোঁয়া বললো-
বলো প্লিজ?
.
নয়নতারা সবটা বললো ছোঁয়াকে । ছোঁয়া সব শুনে বললো-
তোমাদের ছোট থেকে বন্ধুত্ব । এই কেমন বন্ধু তোমার উনি?
বন্ধু হিসেবেই এতো খারাপ উনি, স্বামী হিসেবে কেমন হবে ভাবতে পারছিনা ।
-ভীষণ ভালো হবে ।
-এতোকিছুর পরেও তার পক্ষেই বলে যাবে তুমি?
-কি করবো বল । আমি যে…
.
থেমে গেলো নয়নতারা । ছোঁয়া বললো-
কি?
-কিছুনা । একটু একা থাকতে চাই আমি ।
-তোমাকে সরি বলেছে উনি?
-নাহ ।
.
রাফসানের উপরে রাগে ফুঁসতে থাকলো ছোঁয়া । ওর বোনকে কাঁদিয়ে পার পাবেনা সে ।
.
.
কলেজের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তোহা ও মুশফিক ।
মুশফিক বললো-
হঠাৎ জরুরী তলব?
-আপনিও কাজের মাঝখানে এসেছেন, আমিও তাই । সো খুব বেশি সময় নিবোনা । কিছু কথা বলেই চলে যাবো ।
-আমার সমস্যা নেই । তুমি বলো ।
-আসলে… মানে…
-ওহ তোহা! বলে ফেলো প্লিজ ।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ।
.
তোহার কথা শুনে মুশফিকের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো । সে বললো-
মানে?
-সবটা বলছি ।
.
তোহার সব কথা শুনে মুশফিক হেসে বললো-
তুমি ভালোবাসোনা পরশকে?
-নাহ ।
-আমাকে?
-তাও না ।
-আমাদের দুইজনের মাঝে যেকোনো একজন তোমার জীবনসঙ্গী হলে চলবে । এইতো?
.
মাথা নিচু করে রাখলো তোহা ।
মুশফিক বললো-
তোমাদের অনেক দিনের পরিচয় । মায়া কাজ করবে স্বাভাবিক । কিন্তু লাইফে তাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত, যে তোমাকে ভালোবাসে । কথাটি আমার ক্ষেত্রেও বলতে পারো তুমি । আমাকে কিন্তু কেউ ভালোবাসেনা ।
-আমি আসলে কি সিদ্ধান্ত নিবো বুঝতে পারছিনা । আমাদের দুই পরিবার এসব সম্পর্কে অবগত নন । পরশ যদি ফিরে আসে? আমি অপরাধী হয়ে যাবো । কখনো যে মা বাবার অবাধ্য হইনি আমি ।
-আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন । সময় নেয়া উচিত আপনার । পরশ যদি ফিরে না আসে তবেই আমার সাথে যোগাযোগ করিয়েন আপনি । আমি ওয়েট করবো আপনার জন্য ।
.
মুশফিকের কথা শুনে অবাক হলো তোহা । কতো সহজে নিজেকে অপশন হতে দিলো সে । ভালোবাসা তবে এমনি হয়…
.
.
রাফসানের অফিস থেকে ফোন এসেছে । সে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ।
কথা শেষে তার পাশে ছোঁয়াকে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে বললো-
তুমি নিজ থেকে আমার পাশে?
-আপুর সাথে কবে থেকে বন্ধুত্ব আপনার?
-পিচ্চি থেকে ।
-আপুকে মনে কষ্ট দিয়েছেন, সরি বলতে হয় জানেন না?
-কি করেছি?
-কি করেছেন! সিরিয়াসলি আমাকে আস্ক করছেন এটা?
.
বুদ্ধি খাটিয়ে রাফসান বললো-
ফ্রেন্ডশিপে নো সরি নো থ্যাংক্স! জানোনা?
-জানি । তবে মনে কষ্ট পেয়েছে কিনা তো আস্ক করা যায়? মন ভালো করতে যাওয়া যায়? নো সরি, নো থ্যাংক্স সব কিছুতে হতে হবে বলে কথা নেই । আমি চাই আপনি আপুকে সরি বলবেন এবং এখুনি ।
.
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো রাফসান । ছোঁয়া ভেতরে যেতেই সে মুচকি হেসে বললো-
এভাবে কখন বলবে? তোমাকে ভালোবাসি বলার জন্য?
.
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল পরশ । ছোঁয়া ও রাফসানের গলার শব্দ শুনে আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়লো সে । আড়িপেতে তাদের কথা শুনতে গিয়ে রাফসানের শেষে বলা কথাটাও শুনলো । এই কি বললো রাফসান! সে কেনো আশা করবে ছোঁয়ার কাছে এমন কিছু? যেখানে তার সাথে নয়নতারার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । তবে কি রাফসানের মনে অন্য কিছু চলছে?
সে স্পষ্ট শুনেছে রাফসানের কথাটা, যেটা হালকাভাবে নিতে পারেনা সে । কি করা উচিত তার? নয়নতারার সাথে কথা বলা? হ্যাঁ নয়নতারাকে সবটা জানাবে পরশ, খুব বেশি দেরী হবার আগেই ।
.
চলবে
.।