#হঠাৎ_তুমি_এলে
#পর্ব_২১ (#শেষ_পর্ব)
#সুলতানা_পারভীন
-ম্যাম প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না। কি হয়েছে আমাকে বলবেন প্লিজ? আপনি হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলেন? আর এখন হুট করে ফিরে এসে ব্যাগ প্যাক করছেনই বা কেন? ম্যাম? কিছু তো বলুন?
প্রজ্ঞা কি করে ধূসরের বাড়িটা থেকে ফিরে এসেছে নিজেও জানে না। পুরোটা রাস্তা গাড়িতে তো কেঁদেছেই মেয়েটা, এখনও যেন কান্না বন্ধ হতে চাইছে না ওর। বারবার মনে হচ্ছে শুভ্রার ছলনার কাছে ওদের ভালোবাসা এভাবে হেরে গেল! এতোগুলো বছর যে মানুষটা ওর ফিরে আসার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিল, সেই মানুষটাই কিনা ওকে এক প্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়েই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সেই বাড়িটা থেকে, যেখানে ওরা নতুন করে সংসার শুরু করেছিল, যেই বাড়িটার এক টুকরো ছাদের নিচে সমাজের সবার সমস্ত অপমান, অসম্মানগুলোকে ভুলে ধূসরের বুকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতো, সেই বাড়িটার দরজা নিমিষেই চোখের সামনে বন্ধ করে দিল প্রজ্ঞারই সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা। এই কথাগুলো হামিদ সাহেবকে বললে কি লোকটা বুঝবে? প্রজ্ঞা কি করে বলবে এই চিন্তিত মানুষটাকে যে ধূসর যে কিনা হাজার জনের হাজার বাজে কথা, নাক সিঁটকানোতেও ওকে কখনো ছোটো করে দেখে নি কখনো, সেই ধূসর! সেই ধূসর হামিদ সাহেবকে নিয়ে প্রজ্ঞাকে এভাবে সন্দেহ করতে পারলো? তাও আবার নিজের মেয়েকে পর্যন্ত ——। কথাগুলো ভাবতেই কান্নাগুলো কেমন দলা পাকিয়ে যেতে শুরু করেছে প্রজ্ঞার বুকের ভিতরেই। কোনোমতে ধূসরের দেয়া ব্ল্যাঙ্ক চেকটা হামিদ সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতেই হামিদ সাহেবও হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে এক নজর ভালো করে দেখে ভ্রু কুঁচকে আবার প্রজ্ঞার দিকে তাকালো। ভদ্রলোক যে কিছুই বুঝতে পারছেন সেটা তার বিব্রত মুখভঙ্গিটা দেখেই বুঝতে পারছে প্রজ্ঞা।
-ম্যাম? এই চেকটা কে দিয়েছে? ওই শুভ্রা? আপনি ওই মেয়ের সাথে আবার দেখা করতে গেছেন? আমি তো আপনাকে বলেছিলাম ম্যাডাম ওই লোকগুলো একদমই সুবিধের না। এবার কি করবে আপনি ভাবতেও পারছেন না ম্যাডাম।
-এটা শুভ্রার দেয়া চেক নেয় হামিদ সাহেব। এটা আমার হাজবেন্ডের দেয়া চেক, ব্ল্যাঙ্ক চেক। যেন ওর আর শুভ্রার জীবন থেকে আগের মতোই দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। এই শহরটায় আসাটাই বোধ হয় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল হামিদ সাহেব। তাই আবার পালিয়ে যাচ্ছি এই অসম্মানের শহরটা থেকে। যে অপমানগুলো এতোদিন নিজে সহ্য করেছি, সেটা আমি আমার মেয়েকে ভোগ করতে দিব না, কখনোই না।
-আপনার হাজবেন্ড? ম্যাম কি বলছেন আপনি কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। এখানে চেক এ কারো সাইনই ও তো নেই। এটা কেমন নাম? স্বপ্নকুটির! আর ব্ল্যাঙ্ক চেক কোথায়? এমাউন্ট তো লেখা আছে। ওয়েট এ মিনিট। এমাউন্ট না, কয়েকটা নাম্বার। কিসের নাম্বার এগুলো?
-কি নাম লেখা বললেন? স্বপ্নকুটির! ধূসর—! ধূসর তাহলে—ধূসর তাহলে আমাকে আমাদের বাড়িটার কথাই বলেছিল বারবার। আর আমি এতো বোকা! ওকেই ভুল বুঝে চলে যাচ্ছিলাম! আবার চলে যাচ্ছিলাম আমার ধূসরকে ফেলে! কত বোকা আমি!
হামিদ সাহেবের হাত থেকে চেকটা ক্ষীপ্রহাতে ছিনিয়ে নিয়ে চেকের প্রত্যেকটা নাম্বার ছুঁয়ে দেখতে দেখতে আবার কান্নার রেখাগুলো নতুন করে ফুটে উঠলো। সাইনের জায়গায় ধূসরের নামের জায়গায় ‘স্বপ্নকুটির’ লেখাটা দেখেই যা বোঝার তা বুঝে গেছে প্রজ্ঞা। প্রত্যুষা এতোক্ষণ অদিতির সাথে পাশের রুমে খেলছিল। মায়ের কান্নার শব্দে রুমে এসে এতোক্ষণ থতমত খেয়ে রুমের একটা কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল মেয়েটা। এবারে প্রজ্ঞা রীতিমতো কাঁদতে কাঁদতে কাগজটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়তেই প্রত্যুষা ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে নিজেও কেঁদে ফেললো। ছোট্ট দুটো হাত দিয়ে প্রজ্ঞার চোখের পানিগুলোকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করতে করতেই নিজেই কেঁদে গাল ভিজিয়ে ফেলেছে মেয়েটা।
-মাম্মা? ও মাম্মা? তুমি কাঁদছ কেন এভাবে? আমি দুষ্টুমি করেছি বলে রাগ করেছি? এই দেখো কান ধরছি? প্রমিস আর দুষ্টুমি করবো না। পাপার কাছে যাওয়ার বায়নাও করবো না। প্রমিস তো? ও মাম্মা? লক্ষী মাম্মা, আর কেঁদো না।
-না মামনি। আর কাঁদবো না মাম্মা। তুইও কাঁদিস না সোনা মা আমার। আমরা তোর পাপার কাছে যাবো সোনা। আজই যাবো। কিন্তু ওই বাড়িটা—আমি জানিও না কিভাবে যাবো স্বপ্নকুটিরে, আমাদের স্বপ্নকুটিরে।
প্রজ্ঞা নিজের ছোট্টো মেয়েটাকে বুকে জাপটে আরেকবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার আগেই বাইরে থেকে গাড়ির হর্নের শব্দে হামিদ সাহেব, লতা আর প্রজ্ঞা তিনজনেই চমকে উঠলো। পর পর দুবার হর্ন দেয়ায় হামিদ সাহেব জানলার পর্দা সরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো এই অসময়ে ওদের বাড়িতে কে এসেছে! শুভ্রার গুন্ডাবাহিনী কিনা কথাটা ভাবার ফাঁকেই বাসার দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো। হামিদ সাহেব খানিকটা ইতস্তত করে লুকিং গ্লাসটা একবার চেক করে হালকা করে দরজা খুলতেই একজন বয়স্ক মানুষকে দেখতে পেল। লোকটা একটা কাগজ হামিদ সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো। হামিদ সাহেব হাতে ধরা কাগজটার দিকে তাকাতেই কয়েকটা নাম্বার দেখতে পেল। নাম্বারটা দেখেই চিনতে পারলো হামিদ সাহেব। প্রজ্ঞার ব্ল্যাঙ্ক চেকে এই নাম্বারগুলোই লেখা ছিল। তাহলে কি এই লোকটাকে ম্যাডামের হাজবেন্ড পাঠিয়েছে? কথাটা ভাবতেই আরেকবার লোকটার দিকে সর্তক দৃষ্টি ফেললো হামিদ সাহেব।
-আপনাকে কে পাঠিয়েছে? এই বাড়িতেই বা এলেন কিভাবে? কাকে চাই?
-আমার কিছু বলার পারমিশন নেই। প্রজ্ঞা আর প্রত্যুষা ম্যাডামকে বলুন ড্রাইভার এসেছে। স্যার ম্যাডামদের জন্য অপেক্ষা করছে।
-ম্যাডাম—। আপনাদের জন্য গাড়ি এসেছে—–।
পুরোটা রাস্তা প্রত্যুষা মাকে দুনিয়ার প্রশ্ন করতে করতে প্রায় পাগল করে দিচ্ছে। ওরা কোথায় যাচ্ছে, প্রজ্ঞা কাঁদছে কেন, অদিতিরা সাথে আসে নি কেন, প্রজ্ঞা কাঁদছে কেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়ের এতো হাজার প্রশ্নের জবাবে মেয়েকে বুকে আরো খানিকটা শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে দুরুদুরু বুকে একটা অজানা আতঙ্কে অপেক্ষা করছে স্বপ্নকুটিরে পৌঁছানোর। স্বপ্নকুটিরের গেইটের সামনে সাদা রঙের গাড়িটা যখন এসে থেমেছে ততক্ষণে চারদিকে অন্ধকার নেমেছে। গেইটে থাকা দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই প্রজ্ঞা আর প্রত্যুষাকে নিয়ে গাড়িটা স্বপ্নকুটিরের গাড়ি বারান্দায় এসে থামলো। ড্রাইভার নেমে এসে গাড়ির দরজা খুলে ধরতেই প্রজ্ঞা প্রত্যুষার হাত ধরে নেমে এলো গাড়ি থেকে। বছর পাঁচেক আগের মতোই আজকেও বাড়িটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রজ্ঞা। স্বপ্নকুটির! হঠাৎ একদিন এই বাড়িটাতেই স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর কতগুলো মূহুর্ত কাটিয়েছিল ওরা। আর আজও ভাগ্য ওকে সেই বাড়িটার চৌকাঠে এনে দাঁড় করিয়েছে প্রজ্ঞাকে। আজ কি লেখা আছে কপালে কে জানে! কথাগুলো ভাবার ফাঁকেই হাতে প্রত্যুষার ছোট্টো গুটিগুটি হাতের টান পড়ায় এক পা দু পা করে স্বপ্নকুটিরের দিকেই পা বাড়ালো প্রজ্ঞা। স্বপ্নকুটিরের মেইন ডোর পার করতেই ধূসরকে ব্যস্ত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে প্রজ্ঞা দরজার সামনেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল। প্রত্যুষা ততক্ষণে ধূসরকে দেখতে পেয়ে মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে ছুটে এসে ধূসরকে এসে জড়িয়ে ধরেছে। ধূসরও প্রথমবারের মতো নিজের মেয়ে সামনে থেকে দেখে আদরে আদরে ছোট্ট প্রত্যুষার মুখটা ভরিয়ে দিয়ে বুকে শক্ত করে জাপটে ধরলো। প্রত্যুষাও নিজের ছোট্ট হাতের বাঁধনে যতটা সম্ভব ধূসরের জামাটা শক্ত করে জাপটে ধরলো।
-মাম্মা, মাম্মা, দেখো পাপা। পাপা, ইয়েএএএএ পাপার কাছে এসেছি আমরা। মাম্মা?
প্রত্যুষার কথায় এতোক্ষণে যেন হুঁশ ফিরলো ধূসরের। ছোট্ট প্রত্যুষাকে এতোক্ষণ বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল খেয়াল হতেই ধূসর আস্তে করে ছেড়ে প্রত্যুষাকে কোলে তুলে নিয়ে প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। প্রজ্ঞা স্তব্ধ হয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে দেখে ধূসরও প্রজ্ঞার দিকেই এক পা দু পা করে এগিয়ে এলো। আর এদিকে প্রত্যুষা ধূসরের কোলে থেকেই ধূসরের কান্নাভেজা চোখ জোড়া দু হাতে মুখে দিয়ে নিজেই দুনিয়ার বকবক করে চলেছে। আর প্রত্যুষার বকবক শুনতে শুনতেই প্রজ্ঞা আর ধূসর একে অন্যের দিকে এগিয়ে এলো।
-মাম্মা পাপা কাঁদছে কেন? সেই কখন থেকে মাম্মাও কাঁদছে। ও মাম্মা? তোমরা কাঁদছো কেন? ও পাপা?
প্রত্যুষার কাঁদোকাঁদো গলায় প্রশ্নটা শুনে ধূসর এবারে হেসে ফেললো। প্রত্যুষার গালে অনেকগুলো আদরের পরশ বুলিয়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাকে হালকা করে নিজের সাথেই জড়িয়ে নিল ধূসর।
-এবার থেকে কেউ কাঁদবে না মামনি। আমার প্রত্যুষা বুড়িটা চলে এসেছে না? আর কেউ কাঁদবে না। তুমিও কাঁদবে না মামনি। আর তোমার মাম্মা পাপা কেউ কাঁদবে না। একদম কাঁদবে না।
প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত প্রত্যুষা পুরো স্বপ্নকুটিরে ধূসরের সাথে ছুটোছুটি করে কাটিয়েছে। ধূসরও যেন মেয়েকে পেয়ে নিজেও ছেলেমানুষ হয়ে গেছে। প্রত্যুষা ছুটোছুটি করে ক্লান্ত হয়ে যখন ধূসরের কোলেই ঘুমিয়ে গেছে তখন ধূসর মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে এসে বারান্দায় প্রজ্ঞার পাশে এসে বসেছে। এই পুরোটা সময় তিনজন মিলে এতো পাগলামি করেছে ঠিকই, কিন্তু আলাদা করে একটা কথাও হয়নি দুজনের। তাই এবারে প্রজ্ঞাকে বারান্দায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ধূসরও হুট করে প্রজ্ঞাকে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়েই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিল।
-এখনও রাগ করেই থাকবে প্রজ্ঞা? কথা বলবে না তোমার ধূসরের সাথে? জানো এতোগুলো বছর তোমার প্রতীক্ষায় যতগুলো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি, প্রতিদিন নতুন নতুন প্ল্যান করতাম, তোমাকে ফিরে পেলে কি বলবো, কতগুলো বকা দিবো, তোমার আদুরে শরীরটায় আঁচড়ে, কামড়ে এতোগুলো বছর আমাকে কষ্ট দেয়ার প্রতিটা শোধ তুলবো। অথচ আজ দেখো? তুমি আমার সামনে, আমার বুকে গুটিশুটি হয়ে মুখ লুকিয়ে নিয়েছ, এতোগুলো ঘন্টা আমরা দুজনের এতোটা কাছে আছি, নিজেদের স্বপ্নের দুনিয়ায়, অথচ বলার মতো কিছুু খুঁজেই পাচ্ছি না আমি। আর না তুমি নিজেও কিছু বলছ। এরকম কেন বলো তো ম্যাডাম?
-হয়তো আকর্ষণটা কমে গেছে আগের চেয়ে। হয়তো পাঁচটা বছরে আগের চেয়ে আরো বেশি কুৎসিত দেখতে হয়ে গেছি। অথবা ভাবছ এতোগুলো দিন কার না কার সাথে——-।
-শশশশশশশ। চুপ—–। আমার বউকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বললে না মেয়ে, সোজা খুন করে তোমার স্বপ্নকুটিরের আঙিনাতেই মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিব বলে দিলাম। তার সাহস কতো বড় আমার বউকে নিয়ে বাজে কথা বলে! এই শোনো মেয়ে? আমার বউটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম মানুষ বুঝলে? রাগের মাথায় কিসব বলেছি নিজেও জানি না। কিন্তু তুমি কি জানো না তোমায় কতোটা ভালোবাসি? জানো না শুধু পাঁচটা বছর কেন প্রয়োজনে মৃত্যু পর্যন্ত তোমার প্রতীক্ষায় থাকতাম আমি। মৃত্যুর পরের জীবনে কি হবে আমি জানি না, তবু মনে প্রাণে প্রার্থনা করি যেন সেই জীবনেও শুধু তোমার অস্তিত্বটাই থাকুক আমার জীবনে। আর আমাদের ছোট্ট পরীটার।
-কোথা থেকে কি হয়ে গেল তাই না ধূসর? জীবনটা হুট করে কিভাবে যেন বদলে গেল। বিশ্বাস করো তোমার থেকে, আমাদের সংসার থেকে দূরে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারি নি কখনো। অথচ জীবনের যে সময়টায় সবচেয়ে বেশি তোমাকে পাশে প্রয়োজন ছিল, সেই সময়টাতেই তোমাকে পাশে পাই নি।
-এই বাড়িটাতে বসেই একদিন কত প্ল্যানিং করেছিলাম আমরা মনে আছে প্রজ্ঞা? আমাদের ছোট্টো পরীটার আসার, ওর ধীরে ধীরে বড় হওয়ার মূহুর্তগুলো প্রাণ ভরে অনুভব করার প্ল্যান করেছিলাম। অথচ এটা জানতেও পারলাম না যে উপরওয়ালা অন্য কিছুই লিখে রেখেছেন আমাদের ভাগ্যে। নসীবের উপরে তো কোনো প্ল্যানিং চলে না প্রজ্ঞা। ভাগ্যে যা ছিল, তাই ঘটেছে। সেটা নিয়ে আফসোস করে তো সামনে যে জীবনটা অপেক্ষা করছে তাকে দূরে ঠেলে দিতে পারি না বলো? নতুন করে আবার সবটা শুরু করতে হবে তো নাকি?
-কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি তখন বাড়িতে ওভাবে আমার সাথে—–। আমার কি কষ্ট হয়েছিল জানো তুমি? মনে হচ্ছিল সত্যিই তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছ। মনে হচ্ছিল তখনই মরে যেতাম আমি——।
প্রজ্ঞার কান্নাভেজা মুখটা দু হাতে তুলে ধরে আলতো করে ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে সরে এলো ধূসর। প্রজ্ঞার মুখের কান্নার বৃষ্টিটা মুছে দিয়ে প্রজ্ঞাকে বুকে জড়িয়ে নিল ধূসর।
-এই পাঁচ বছরে কত ঝড় বয়ে গেছে তোমার ফেলে যাওয়া সংসারটায় তুমি কল্পনাও করতে পারবে না প্রজ্ঞা। তোমার অবর্তমানে তোমার শ্বশুরও বুঝতে পেরেছিল আসলে তুমি আমার জীবনে ঠিক কতোটা জায়গা জুড়ে ছিলে। মায়ের কাছে আমার হসপিটালের দিনগুলোর কথা শুনে বাবা মাকে অনেক বার বুঝিয়েছেও। মা তখনও যদিও নিজের ভাতিজির স্নেহেই অন্ধ ছিল। কিন্তু এক সময় মা ও সেই অন্ধ ভালোবাসাটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে ততদিনে।
-মানে? দেরি হয়ে গেছে মানে কি? বাবা মা কোথায় ধূসর?
-আরে ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়নি। শুধু তোমার শ্বশুর শাশুড়ির একটু শিক্ষা হয়েছে আর কি। তাদের আদরের কালনাগিনী তাদেরকেই ছোবল দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ওই যে বললাম, বাবা তোমার কমতিটা বুঝতে পেরেছিল। তাই সমস্ত চেষ্টা করেছে তোমাকে খুঁজে বের করার। আর তখনই শুভ্রার আসল রূপটাও বাবার চোখের সামনে আসে। ওই মেয়েটা আর ওর বাবা কত বড় ফ্রড সেটাও জানতে পারে বাবা নিজের লোক লাগিয়ে। কিন্তু ওই যে প্রমাণের অভাবে ওকে কিছু করাও যাচ্ছে না। বাবা নিজেই তাই প্ল্যান করে ওকে হাতে নাতে ধরার চেষ্টা করে। বাট ওই মেয়ে এতোটা শয়তান যে বাবার প্ল্যানটা জেনে ফেলার পর বাবাকেই গুম করে দেয়।
-হোয়াট!
-শকড? আরো কাহিনী বাকি বুঝলে? শুভ্রার ভাড়াটে গুন্ডাগুলো চব্বিশ ঘন্টা আমাদের সবাইর উপরে নজরদারি করছিল। ইভেন ওই মেয়ে নিজের স্পাই লাগিয়ে অফিসে, বাসায়, ইভেন আমাদের বাড়িতেও সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে অলটাইম মনিটর করার জন্য। কেউ যেন আমাকে তোমার ব্যাপারে কোনো রকম ইনফর্মেশন না দিতে পারে সেজন্য আর কী কী যে করেছে এই মেয়েটা কে জানে!
-এতোকিছু তুমি জানলে কি করে? আর বাবা মা কোথায় সেটাই বা বলছ না কেন? উনারা ঠিক আছেন তো?
-আমি কিছুই জানতাম না। অফিসের পুরোনো স্টাফরা বোধহয় বাবার কাছ থেকে ব্যাপারটা জেনেছিল। অনেক কষ্টে ওরা প্ল্যান করে আমাকে জামায় ব্যাপারটা। শুধু আদিবই জানতো আমাদের স্বপ্নকুটিরের কথাটা। তুমি যাওয়ার পর একবারের জন্য এই বাড়িতে আসাই হয়নি। আর আদিব শুভ্রার ব্যাপারে যা যা জানতো, অফিসে, বাসায় যা হচ্ছে সব একটা চিঠিতে লিখে স্বপ্বকুটিরে রেখে গিয়েছিল।সেদিনই জানতে পারি আমার প্রজ্ঞা পাগলিটা সেদিন আমাকে ছেড়ে কোথাও যায় নি। তাকে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
-জেনেই এতোগুলো কথা শুনিয়েছিলে তাই না? শুভ্রা আমার মতো ধোঁকাবাজ নয়, তোমার বিপদে, আপদে ঢাল হয়ে তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আরো কি যেন বলছিলে? আমি টাকার জন্য তোমার কাছে এসেছি——-।
-আরে বোকা মেয়ে? বললাম তো ওই বাড়িতেও শুভ্রা সব মনিটরিং করছিল। ও যদি দেখে আমি তোমাকে বুকে জড়িয়ে আদর করছি তাহলে বাবা মায়ের কি হাল করতো একবার ভাবো তো?
-বাবা মায়ের কি হাল করতো মানে? তুমি বসে বসে আমাকে গল্প না শুনিয়ে বাবা মাকে কিভাবে উদ্ধার করতে হয় সেটা ভাবো আগে।
-রিল্যাক্স ম্যাডাম। সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। সকাল বেলা আমাদের শুভ্রা ম্যাডামের চোখ খুলবে সোজা গারদের ভিতরে। আর বাবা মা ও এখন সেইফ আছে। বাবাকে আর মাকে একটা গোডাউনে আটকে রেখেছিল শুভ্রার সেই গুন্ডাবাহিনী। লোকটাকে তোমার মনে আছে? সেদিন রাগ করে তোমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার পর যার গাড়িতে করে তুমি মিস্টার হামিদ সাহেবের সাথে দেখার করতে গেলে? সেই লোকটাই শুভ্রার ব্রেকিং পয়েন্ট। ওই লোকটাকে দিয়েই দুনিয়ার সব অকাজ করায় মেয়েটা। আমার এক্সিডেন্টটাও ওই বদমাইশ লোকটাই করেছিল। তোমারও এক্সিডেন্ট করিয়ে দিত হয়তো সেদিন আমাকে দেখে ভয় পেয়ে না পালালে—।
-ওই লোকটা আজ সকালেও শুভ্রার অফিসের সামনেই আমাকে মারার চেষ্টা করেছিল। হামিদ সাহেব না থাকলে এতোক্ষণে কি হতো কে জানে।
-এই হামিদ সাহেবকে দেখছি একটা ধন্যবাদ দিতে হবে। মনে মনে কত গালিই না দিয়েছি লোকটাকে তোমার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখে। আর সেই ভদ্রলোকই কিনা আমার এই ছটফটে বউটাকে বাঁচিয়েছে। ধন্যবাদ তো পাওনা ভদ্রলোকের—-।
-একটা খারাপ লোক। কতোগুলো বকেছ আমাকে উনার সাথে দেখে। একবার ভাবলেও না কেন আমি তোমার কাছে আসতে পারছি না। একে তো নিজে খুঁজেও পাও নি। আমি কত আশায় ছিলাম হঠাৎ তুমি এসে আমাকে বলবে আমি তোমাকে খুজে পেয়েছি প্রজ্ঞা। ভেবেছিলাম পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তেই আমি থাকি না কেন তুমি ঠিকই খুঁজে বের করে ফেলবে আমাকে আর প্রত্যুষাকে। কিন্তু তুমি উল্টো আমি আসার পরও ভুলই বুঝলে—-। এই তোমার ভালোবাসা! ছি ধূসর! ছি ছি!
-এই যে ড্রামা কুইন? নিজে লুকিয়ে ছিলে। নইলে তুমি চাইলেই এই পাঁচটা বছর এভাবে নষ্ট হতো না। চাইলেই তুমি সুস্থ হয়ে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই আমার কাছে ফিরে আসতে পারতে, কিন্তু তুমি তো সেটা চাও ই নি। তখন আমাকে ব্লেইম করা হচ্ছে না? এর যোগ্য শাস্তিও পাবে তুমি ম্যাডাম। শুধু সময়টা আসতে দাও। ওকে?
এক সপ্তাহ পর।
ধূসরদের বাড়িটা আজ নতুন সাজে সেজেছে। শত শত ঝিলিক বাতির আভায় বাড়িটা মনে হচ্ছে চাঁদের জ্যোৎস্নাকেও আজ হার মানিয়ে দিবে। সেই উজ্জ্বলতাকে হার মানাচ্ছে আজ তিনটে মানুষ। তাদেরকে ঘিরে আজ হাজারো মানুষের ভিড়। সবার মুখে আজও প্রজ্ঞার নামের গুঞ্জন উঠেছে। তবে পাঁচ বছর আগের মতো অবজ্ঞার সুরে নয়। আজ ভিড়ের সেই পুরোনো মুখগুলো প্রজ্ঞার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এতোক্ষণে প্রজ্ঞার শাশুড়ির মুখে তারাও জেনে গেছে কিভাবে সেদিন মেয়েটা নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিয়েছিল ধূসরের চিকিৎসার করার নামের সাজানো নাটকটায়। কিভাবে হাজার অপমানের পরেও বারবার আকুতি করেছিল এক নজর ধূসরকে চোখ মেলে দেখার। আজ কেমন করে যেন সবার চোখেই প্রজ্ঞা হয়ে উঠেছে পৃথিবীর সুন্দরতম মানুষের একজন, আর পাঁচ বছর আগের তাদের মুখেই আগুনসুন্দরী সার্টিফিকেট পাওয়া শুভ্রা হয়েছে নর্দমার কিট।
যাই হোক, প্রজ্ঞা আর প্রত্যুষার ফিরে আসার ঘরোয়া অনুষ্ঠানটা শেষ হতে বেশ রাতই হলো। বিছানার উপরে নতুন বউয়ের বেশে বসে থাকা প্রজ্ঞা ভাবছিল ওর এই চড়াই উতড়াইয়ে ভরা জীবনটার কথা। এই মানুষগুলো যারা সবসময় ওকে ওর বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে বিচার করেছে, আজ তারাও প্রজ্ঞার নিষ্ঠাভরা ভালোবাসার তারিফ করছে। ধূসরের বাবা মাও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে নিজের মেয়ের মতোই কাছে টেনে নিয়েছে প্রজ্ঞাকে। তার চেয়ে বড় কথা সেই মানুষটাকে ফিরে পেয়েছে প্রজ্ঞা, যে মানুষটা ওর সমস্ত লড়াইয়ে ওর শক্তি হয়ে ছিল, পাঁচটা বছরের দীর্ঘ দূরত্বেও যে মানুষটা প্রজ্ঞার অপেক্ষায় ছিল, ফিরে আসার পর যে মানুষটা আর একটা মূহুর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেয় নি প্রজ্ঞাকে। একটা জীবনে সুখী হতে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে একটা মেয়ের?
প্রজ্ঞা কথাগুলো ভাবার মধ্যেই হঠাৎ আলতো শব্দ করে দরজাটা খুলে যেতেই প্রজ্ঞা চমকে মুখ তুলে তাকাতেই ধূসরকে দেখতে পেল। অনুষ্ঠানের জন্য দুজনকেই একেবারে নতুন বর বউ সাজানো হয়েছিল। এতোগুলো বছর পরেও ধূসরের ধীর পায়ে এগিয়ে আসা দেখে প্রথমদিনের মতোই কেঁপে উঠলো। আর সেটা দেখে ধূসরের ঠোঁটের কোণে আগের সেই দুষ্টুমিমাখা হাসি ফুটে উঠলো। ধূসর এগিয়ে এসে প্রজ্ঞার পাশে বসে আলতো করে প্রজ্ঞার গালে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিল।
-এভাবে লজ্জায় লাল হচ্ছো কেন বলো তো প্রজ্ঞা? মনে হচ্ছে এই বুঝি নতুন বউটাকে কেউ বাসরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আর সেই বেচারি স্বামীর প্রতিটা পদক্ষেপের শব্দেই কেঁপে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে আরো অনেক কিছুই কিন্তু রিপিট হতে পারে ম্যাডাম— তখনও কি সেদিনের মতো লাল টুকটুকে মুখটা দেখার সৌভাগ্য হবে?
-চুপ করো তো। বেশি কথা বলবে না একদম। প্রত্যুষা কোথায়? কত রাত হয়েছে খেয়াল আছে? বাচ্চাদের এতো রাত জাগলে শরীর খারাপ হয় জানো না?
-প্রত্যুষা? সে তো তার খেলার সাথী পেয়ে গেছে। হামিদ সাহেবরা এসেছে না? উনারা তো থাকছেন রাতে। তো আমাদের প্রত্যুষা বুড়ি অদিতির সাথে স্টেজের দিকটায় নাচানাচি করছে। বাবা মায়ের বিয়ে বলে কথা।
-আরে? মেয়েকে বাইরে রেখে উনি এসেছেন ঢং করতে। তোমার যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি। হুটহাট কোন দুনিয়ার কথাবার্তা এই লোকটা কে জানে—।
প্রজ্ঞা গজগজ করতে করতে বিছানা থেকে এক পা বাড়াতেই ধূসর প্রজ্ঞাকে টেনে আবার বসিয়ে দিয়ে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছে প্রজ্ঞার দিকে।
-প্রত্যুষাকে নিয়ে আপাতত টেনশন করা লাগবে না ম্যাডাম। আমাদের বুড়িটা আজ দাদা দিম্মার সাথে ঘুমাবে। আমরা আপাতত আপনার প্রত্যাশাকে আনার ব্যাপারে প্ল্যানিং করি আসুন। প্রত্যাশা নামটা আপনার পছন্দ করা। বাট আমি ওকে প্রীতি বলেই ডাকবো। প্রত্যুষা আর প্রীতি। কিউট কিউট দুটো পুতুল আমার। প্রত্যুষার সব কিছু মিস করেছি, এবার আমার পিচ্চিটা আসার প্রত্যেকটা স্টেজ আমি অনুভব করতে চাই প্রজ্ঞাা।
-ধ্যাত। পাগল একটা। তোমার জন্য একটা গিফ্ট ছিল। দেখো নি কিন্তু।
-হুম? কি? এতো তাড়াতাড়ি গুড নিউজও চলে এসেছে নাকি? বাট কিছুই তো করলামই না আমি–।
-অসভ্য একটা লোক। এই সরো তো তুমি। একদম কাছে আসবা না।
-আরে রাগ করো কেন এতো? আচ্ছা বাবা কি গিফ্ট বলো শুনি?
-বক্সটা দেখো।
-বক্স? কি আছে?
ধূসর নিজেই হাত বাড়িয়ে প্রজ্ঞার হাত থেকে একটা সুন্দর ডিজাইন করা কাগজের বক্সটা নিল। কিছুটা ইতস্তত করেই বক্সটা খুলতেই রীতিমতো হাত কাঁপতে শুরু করেছে ধূসরের। তার আবদারগুলো কত যত্নে সাজিয়ে রেখেছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞার কনসিভ হওয়ার রিপোর্ট, ছোট্টো প্রত্যুষার জন্মের পরের ছবি, ওর পায়ের ছাপ, প্রথম হামাগুড়ি দেয়ার ছবি, প্রথম ভাত মুখে দেয়া, প্রথম হাঁটতে শেখা, এমন কত কত ছবিতে ভরা বক্সটা। ছবিগুলো ছুঁয়ে দেখতে দেখতে প্রজ্ঞাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো ধূসর। সেই কবে থেকে ধূসরের এই ছোট্টো ছোট্টো আবদারগুলো পূরণ করার জন্য পাগলামি করছিল মেয়েটা।
-স্বপ্নকুটিরের খালি ফ্রেমগুলোর কথা মনে পড়লেই বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠতো আমার। ফ্রেমগুলো খালি থেকে যাবে ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠতো। তাই যখন যা পেরেছি, স্বপ্নকুটির আর তোমার জন্য সাজিয়ে রেখেছি।
-বাট ম্যাডাম ফ্রেমের জন্য ছবি জোগাড় হলেও আমার তো লাভ হলো না কোনো। তাই তো বললাম প্রীতির আসার প্ল্যানিং করি চলো। হঠাৎ তুমি এসে আমার জীবনটা সবগুলো রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলে। আবার হঠাৎই এক নিমিষে হারিয়ে গিয়ে জীবনের সবক’টা রঙ কেড়ে নিলে। প্রত্যুষা, আমাদের ভালোবাসার অংশ, সেও হঠাৎই এলো আমার জীবনে। অথচ বাবা হওয়ার যে নয়মাসের দীর্ঘ সময়ের অনুভব সেটা ফিলই করতে পারলাম না। হয়তো ভাগ্যে ছিল না বলে। কিন্তু সেই কমতিটা আমি পূরণ করতে চাই প্রজ্ঞা। চাই এবার হঠাৎ করে নয়, আগাম বার্তা দিয়ে জানান দিয়ে কেউ আসুক আমাদের জীবনে। আর প্যারেন্টস হওয়ার যে নয়মাসের দীর্ঘ যাত্রাটা সেটা আমিও তোমার সাথে শেয়ার করি। আমাদের সন্তানের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে পৃথিবীতে আসা সেই জার্নিটায় তোমার কষ্টগুলোর ভাগিদার হয়তো হতে পারবো না, কিন্তু সেটা একটু হলেও ফিল করতে চাই। সেই সুযোগটা আমাকে দিবেন ম্যাডাম?
ধূসরের গাঢ় কণ্ঠের কথাগুলো শুনতে শুনতে প্রজ্ঞারও চোখ জোড়া ভিজে এসেছিল। কোনোমতে চোখের পানিটা সামলে মাথা নেড়ে সায় জানাতেই ধূসরও আদুরে হাতে প্রজ্ঞাকে উষ্ণ ভালোবাসায় ছুঁয়ে রঙিন ভালোবাসার জগতে হারিয়ে যেতে শুরু করলো। আর বাইর থেকে ভেসে আসছে তাহসানের গানের মোহমাখা সুর।
“তোমাকে ভেবে পৃথিবী আমার
অদেখা তবু এঁকে যাই
আমার ভেতর শুধু তুমি
আরতো কিছু পায়নি ঠাঁই
তোমাকে ভেবে পৃথিবী আমার
অদেখা তবু এঁকে যাই
আমার ভেতর শুধু তুমি
আরতো কিছু পায়নি ঠাঁই
কেনো হঠাৎ তুমি এলে?
কেনো নয় তবে পুরোটা জুড়ে?”
সমাপ্ত।