#হৃদমাঝারে -[১৮]
ডিনার শেষে অর্ণা আর রওনাক দুজনে প্ল্যান করলো ওরা লং ড্রাইভে যাবে। কিন্তু এখন প্রবলেম হলো মুনকে নিয়ে। মুনকে একা এভাবে রেখে অর্ণা কিছুতেই রাওনাকের সাথে যাবে না। যদিও মুন বারবার বলছে ওদের চলে যেতে কিন্তু অর্ণা শুনতে নারাজ। অর্ণার এক কথা সে এত রাতে কিছুতেই মুনকে এখানে একা রেখে যাবে না। দরকার হলে অর্ণা রাওনাকের সাথে না গিয়ে মুনের সাথে বাড়ি ফিরে যাবে। পরক্ষনেই মনে হলো এখানে ফারহান আছেই। ফারহান এতক্ষণ ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো। কথা বলা শেষ করে ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো। অর্ণা আর রওনাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহানের ভ্রুযুগলে কিঞ্চিৎ ভাজ পরলো। মুনের দিকে এক পলক তাকিয়ে অর্ণাকে জিগ্যাসা করলো,
– এ্যানি প্রবলেম?
অর্ণা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, আসলে আমি আর রওনাক লং ড্রাইভে যেতে চাইছি। কিন্তু মুন এখানে একা থাকবে। ও তো তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই ভালো করে চিনে না। তাই বলছিলাম,,
– আমি মেহরিমাকে ড্রপ করে দিবো। উম্ যদি কারো প্রবলেম না থাকে। অর্ণাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ফারহান।
– উম্, প্রবলেম কেন থাকবে। মুনের দিকে তাকিয়ে বলে, তোর কোন প্রবলেম নেই তো মুন।
– নো নিড। আমার কারো হেল্পের প্রয়োজন নেই। আচ্ছা অর্ণা আমি কি ছোট্ট বাচ্চা নাকি হুম। আমি একা চলে যেতে পারবো। তুই যাতো। কথাটা বলেই সামনের দিকে পা বাড়ায় মুন। ফারহান একবার অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা যাও এদিকটা আমি দেখছি। ফারহান লম্বা পা ফেলে মুনের পিছনে চলে যায়। অর্ণা মৃদু হাসে। রওনাক ওর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
– এই এদের কেসটা কি বলতো?
– সময় হলেই জানতে পারবে। এখন চলতো আমাদের লেট হচ্ছে। অর্ণা রাওনাকের হাত ধরে টেনে ওকে বাহিরে নিয়ে যায়।
রেস্টুরেন্ট থেকে কিছুটা দূরে পিছনের সাইডে এসে দাঁড়িয়ে আছে মুন। চারিদিকে নিস্তব্ধ, ঘন কালো অন্ধকার। কোথাও কোন জন মানবের ছিটাও নেই। মাঝে মাঝে দু একটা প্রাইভেট গাড়ি যাচ্ছে। পাখিরা সব নিড়ে ঘুমাচ্ছে। মোবাইলের আলোতে চারিদিকটা পরখ করে নিলো মুন। উহ্ কেন যে পিছনের দিক দিয়ে আসতে গেলাম কে জানে? ভয় লাগছে এখন। শরীরের লোমগুলো কাটা দিয়ে উঠছে। ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে পা ফেলছে মুন। মনে হলো কেউ ওকে ফলো করছে। কিছু পিছনে ঘুরে তাকানোর সাহস পেল না সে। থমকে দাঁড়িয়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে শুরু করলো। এমন সময় কেউ করে কাধে আলতো করে হাত
রাখে। ভয়ে কেপে উঠে মুন। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শব্দগুলো গলায় এসে কুণ্ডলী পাকাচ্ছে। ভয়ার্ত গলায় বলল,
-ক্ – কে?
আগন্তুকের কোন শব্দ না পেয়ে মুন আবার বলে, ক্- কে আপনি? এবার কোন শব্দ পেল না। তবে সে অনুভব করলো তার কাধে গরম হওয়া ভয়ছে। ভয়ে মুনের হাত থেকে মোবাইলটা পরে যায়। চিৎকার করে উঠে আর তখনি কেউ তার মুখটা চেপে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
– নো সাউন্ড, আমাকে গন ধুলাই খাওয়ার হচ্ছে তাইনা। মৃদু স্বরে বলা কথাগুলো কানে আসতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুন। দিশেহারা মনে এক চিলতে আসার আলো খুজে পায়। মনে মনে বলে উঠে, ফারহান। ফারহান নিজের হাত ছাড়িয়ে নিচে পরে থাকা মুনের মোবাইলটা তুলে ওর হাতে দিয়ে বলে,
– এতই যখন ভয় পাও তাহলে এই রাস্তায় এসেছো কেন?
মুন কোন জবাব দেয়না। নিচের দিকে তাকিয়ে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শুধু। আচ্ছা আজ যদি ফারহানের জায়গায় অন্য কেউ থাকতো তাহলে! তাহলে কি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো মুন। মুনকে এভাবে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান আর কোন কথা বাড়ায় না। বুঝতে পারছে মুন ভয় পেয়েছে। ফারহান মুনের হাতটা শক্তকরে ধরে ওকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।
-আমি যাবনা আপনার গাড়িতে। গাড়ি থেকে নামতেই যাবে মুন তখনি ফারহান ওর আঙ্গুলটা মুনের ওষ্ঠের উপর রেখে বলে,
– হুস। কোন সাউন্ড হবে না। পাকনামো করতে একা এসেছিলে না এ দিকটায় দেখলে তো কি হলো। এখন বেশী,কথা বললে এই নির্জন রাস্তায় তোমাকে একা ছেড়ে দিয়ে যাবো। আর যাওয়ার আগে তোমার মাথায় কয়েকটা তেলাপোকা ছেড়ে দিয়ে যাবো। তাদের অত্যাচারে যদি তোমার মাথার জেদের পোকা কমে।
মুনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় ফারহান। মুন ফারহানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর সামনের দিকে তাকায়। ফারহান সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করছে। ফাকা রাস্তা পেড়িয়ে বড় রাস্তায় উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফারহান। মুনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান গাড়ির গতি কমিয়ে নেয়। সামনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
– মেয়েটা কে ছিলো?
– আমার ফ্রেন্ড।
– আই নো। বন্ধুর সাথে গেইম কেন খেলছো সেটাই জানতে চাইছি।
মুন বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকায়। এতে ফারহানের ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি বলতে চাইছেন আপনি?
– এর মানেও তোমাকে বুঝাতে হবে মেহরিমা। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কি বলতে চাইছি। ওকে ফাইন আমি বলছি, ওই মেয়েটাকে ত
তোমাদের বাড়িতে কাজের লোক করে রেখেছো কেন?
ফারহানের কথা শুনে চমকে উঠে মুন। জিগ্যেসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। ফারহান ওর দিকে ঘুরে মৃদু হেসে বলে,
– আই নো আমি ভেরী স্মার্ট, তাইবলে তুমি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কথাটা বলেই চোখটিপ দেয় ফারহান। মুন তাড়াতাড়ি করে ওর চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
– ম্ মোটেও না। এসব ভুল ধারনা মন থেকে বের করে দিন।
– কোনটা ভুল ধারনা?
– এই যে, আপনার নিজেকে ইউনিক ভাবা।
– ওহ্ রিয়েলি!
– হুম।
– কে যেন একসময় আমাকে বলেছিলো তুমি ইউনিক। তোমার এই বাদামী চোখ সবার থেকে আলাদা যেটাতে আমি ডুবে যাই বারংবার। থাক বাদ দাও এসব। এখন বলতো, তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে কেন কাজের লোক সাজিয়ে রেখেছো?
– আপনি কি করে জানেন এসব?
ফারহান গাড়িটা থামিয়ে দেয়। সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। তারপর মুনকে টেনে গাড়ির বাইরে বের করে দাঁড় করায়। ফারহান মুনের দিকে ঝুকে বলে,
– আই নিড ইউর হেল্প মেহরিমা।
স্মিত হাসে মুন। তারপর বলে, কি এমন হলো যে ক্যাপ্টেন ফারহানের আমার হেল্পের প্রয়োজন হলো।
– ঘটেছে তো অনেক কিছুই। যেটা তোমার অজানা নয়। আমি তোমার বাবার সম্পর্কে জানতে চাই। জানতে চাই কেন তুমি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলে? জানতে চাই কেন তুমি রনিকে শাস্তি দিচ্ছো মা এখনো। আর এটাও জানতে চাই, তুমি এখনো চাও তোমার বাবা শাস্তি পাক। সবশেষে একটা প্রশ্ন, সবকিছু জেনেও কেন তুমি এনআর নার্সিংহোমে জনেয় করলে। প্লিজ এ্যানসার মি মেহু। আমি জানি সব প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে আছ। প্লিজ টেল মি।
মুন এতক্ষণ অবাক হয়ে ফারহানের কথা শুনছিলো আর ভাবছিলো এতকিছু ফারহান কি করে জানলো। ফারহানের চোখে চোখ রাখে মুন। ফারহান এখনো ওর দিকেই ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে। মুন ওকে ধাক্কাদিয়ে সড়িয়ে দিতে চাইলে ফারহান মুনের দুপাশে হাত রাখে ওর দিকে আরো একটু ঝুকে দাঁড়ায়।,
– যতক্ষণ না তুমি আমার সব প্রশ্নের এ্যনসার দিচ্ছো ততক্ষণ তুমি এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে মেহুআ।
– দে্ দেখুন, অনেক রাত হয়েছে আমাকে যেতে দিন।
– আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।
– কিসের জবাব দিবো আমি। আমি কিছু জানি না।
– তাহলে আমি মনে করিয়ে দেই। ফারহান ঝুকে আরো কাছে আসে মুনের।
– কি্ কি মনে করিয়ে দিবেন আপনি?
– তুমি নিজে প্রমান জোগাড় করে তোমার বাবার মানে থানায় ডাইরি করেছিলে।
– আপনি এসব কি করে জানলেন? অবাক দৃষ্টি মুনের।
– কমিশনড স্যারের কাছ থেকে জেনেছি। কমিশনড স্যার আমার চাচার বন্ধু। সিনিয়র পুলিশ কমিশনার ফাহাদ শিকদার। নামটা শুনেছো নিশ্চয়?
– পাচ বছর আগে কার এক্সিডেন্টে যে পুলিশ কমিশনার মারা যায় সেটা আপনার কাকা?
– হুম। আর একটা কারন বলছি, এই কেইসের ইনভেস্টিগেশন আমি করছি। সো তোমায় সবটা বলতেই হবে।
– আপনি? আপনি কি করে ইনভেস্টিগেশন করেন। আপনি তো সৈনিক।
– হুম। তবে আমার একটা এনজিও আছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চ। সেটার হলেই ইনভেস্টিগেশন করছি। আচ্ছা এখনো কি তুমি আমাকে হেল্প করবে না। তুমি চাওনা তোমার বাবা তার অন্যায়ের শাস্তুি পাক।
মুন কিছু বলে মা শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফারহানের মুখপানে।
চলবে,,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।