হৃদমাঝারে পর্ব -২২

#হৃদমাঝারে – [২২]

১৫,
অর্ণার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। দূর দূরান্ত থেকে মেহমান আসতে শুরু করে দিয়েছে। মাঝে আর দুটো দিন তারপর পরেই অর্ণা আর রওনার শুভ বিবাহ। মুন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো ওর মোবাইলটা বেজে চলেছে। বিছানার কাছে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আকাশ কল করেছে। মুন কলটা রিসিভ করে বলল,

– কোথায় তুই?

– আমি তো পৌঁছে গেছি তুই কোথায়?

– আমি এখুনি বাসা থেকে বের হবো।

– হোয়াট। আমাকে তাড়া দিয়ে এখন ম্যাডাম নিজেরই কোন খবর নাই। আমি ওয়েট করছি কিন্তু মুন।

– আচ্ছা রাগ করিস না। আমি আসছি।

নবদিগন্ত ফ্যাশন হাউজের সামনে এসে গাড়িটা ব্রেক করলো মুন। গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেল আকাশ ওর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুন আকাশের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশ একটু রাগী চোখে ওর দিকে তাকাতেই মৃদু হাসলো। এক হাতে কান ধরে বলল, সরি।

– ঠিক আছে। এত ফরমালিটি করতে হবেনা, এবার চল ভিতরে যাওয়া যাক।

– হুম।

দুজনে মিলে নব-দিগন্ত ফ্যাশন হাউজের ভিতরে প্রবেশ করে। ফ্যাশন ডিজাইনার অনন্যার ডিজাইন করে কিছু লেহেঙ্গা দেখছে মুন। ডিজাইনার হিসেবে অনন্যা অনেক নাম শুনেছি। আজ নব-দিগন্ত এসে সেটা নিজের চোখে দেখে দেখেও নিলো। প্রত্যেকটা লেহেঙ্গার ডিজাইন ইউনিক। মুন নিজের পছন্দমত তিনটা লেহেঙ্গা নিয়ে নিল একটা নিজের জন্য আর অন্যটা অর্ণার জন্যে। ফ্যাশন হাউজ থেকে বের হয়ে মুন আকাশকে নিয়ে চলে যায় রনি ফ্লাটে। অনন্যা এখন মিষ্টি কে নিয়ে আলাদা একটা ফ্ল্যাটে থাকে ফ্যাশন ডিজাইনিং তারা এখন প্রফেশনাল কাজ। মেয়েটার ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হবে আর আজ সে দেশের অন্যতম নামকরা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। কলিং বেল বাজাতে অনন্যা এসে দরজা খুলে দেয় দরজার ওপাশে মুনকে দেখে বেশ অবাক হয়ে অনন্যা, সাথে বাকরুদ্ধ। উৎফুল্লতার সাথে জিজ্ঞেস করে,

– আপু তুমি এখানে? তুমি আমার বাসা হঠাৎ কি মনে করে! আসো আসো ভিতর আসো। দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় অনন্যা। মুন আর আকাশ ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেলো মিষ্টি বল নিয়ে খেলা করছে। মুনকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে ওকে জাপটে ধরলো মিষ্টি। মুন মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ওকে আদর করতে লাগলো। তারপর মিষ্টির গাল দুটো টেনে বলল,

– কেমন আছো মামনি?

– আগে বল তুমি এতদিন আসো নি কেন? জানো আন্টি পাপাও আমার কাছে আসে না। আন্টি তুমি আমার পাপাকে বকে দিবে। আর বলবে আমি তাকে খুব মিছ করচি। মিষ্টির কথা শুনে মুন আর অনন্যা একে অপরের দিকে তাকায়। অনন্যা চোখের ইশারায় বলে, মেয়েটা আর পাপাকে ছেড়ে একদমই থাকতে পারে না। মুন মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ঠিক আছে মামনি আমি তোমার পাপাকে বকে দিবো।

– তুমি খুব ভালো আন্টি। মিষ্টু আবারও মুনকে জড়িয়ে ধরে।

ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে আকাশ মুন আর অনন্যা। মিষ্টি এখন ওর রুমেই আছে। কথার ফাকে অনন্যা জিগ্যেস করলো, আচ্ছা আপু বললে না তো হঠাৎ কি মনে করে তুমি আমার বাসায় আসলে?
মুন একটা শপিং ব্যাগ অনন্যার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, দেখো এটা পছন্দ হয়েছে কি না? অন্যনা শপিং ব্যাগ থেকে লেহেঙ্গা বের করে অবাক হয়ে মুনের দিকে তাকায়। মুন অনন্যার দৃষ্টি বুজতে পেরে বলে, নিজের ডিজাইন করা লেহেঙ্গা উপহার পেয়ে অনুভূতি কেমন হচ্ছে। অনন্যা লেহেঙ্গাটা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, খুব খুব খুব ভালো লাগছে।

– আচ্ছা শুনো তাহলে, পরশু অর্ণার বিয়ে। তুমি কিন্তু কাল সকালে আমাদের বাড়ি চলে আসবে।

– কালকেই? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অনন্যা।

– হ্যাঁ, কেন তোমার কোন প্রবলেম আছে?

– না ঠিক তা নেই। কিন্তু,,,,,

– কোন কিন্তু নয়। কাল সকালে তুমি মিষ্টিকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছো ব্যাস।

অনন্যার ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে মুন সোজা ওর বাড়ি চলে যায়। আকাশও আসে সাথে। মুন আকাশকে নিয়েই বাড়ি এসেছে। কিন্তু বাড়িতে এসে যখন দেখলো ফারহান রওনাক আরো একটা ছেলে এসেছে ওদের বাসায় তখন মুনের মাথাটা গরম হয়ে যায়। গত কাল রাতে ফারহান কল করে মুনকে। প্রথম দুইবার কল রিসিভ করে না মুন। তারপরেও যখন ফারহান কনট্রিনিউ কলটা করেই যায় বিরক্ত হয়ে মুন কল রিসিভ করে। আর তখনি ফারহান মুনের উপর চেঁচিয়ে উঠে। কল রিসিভ করতে দেরী হয়েছে কেন সেই কইফিয়ত চায়। এতে মুন রেগে যায় আর সে উল্টো ফারহানের উপর চেঁচামেচি শুরু করে। মুনকে রাগাতে পেরে মৃদু হাসে ফারহান।ফারহান ইচ্ছে করে মুনকে রাগিয়ে দিয়েছে যাতে একটু বেশি সময় ধরে মুনের সাথে কথা বলতে পারে।একদিকে মূন রাগে ফুঁসছে আর অন্য দিকে মিটমিট করে হাসছে ফারহান। এভাবে প্রায় অনেকক্ষণ কেটে যায় তারপর হঠাৎ করে ফারহান বলে উঠলো,

– আই লাভ ইউ মুন। প্লিজ আর রাগ করে থেকো না আমার উপর। আমি আমাদের এই দূরত্ব আর নিতে পারছি না। তুমি যা শাস্তি দিবে আমি সেটাই মাথা পেতে নিব। প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে। প্লিজ, প্লিজ কাম ব্যাক।

মুহূর্তে শান্ত হয়ে যায় মুন। শক্ত চোয়ালগুলি ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে। অস্ফুটভাবে ভাবে বলে,

– ফারহান, আপনি আবার এসব বলছেন। কতবার বলছি আপনি আমাকে কল করবেন না। রাখছি, এরপর কল করলে আপনি আপনার নামে ইভ টিজিং এর মামলা করবো।

– আমি একজন সৈনিক মেহরিমা। আর তুমি আমার নামে ইভ টিজিং এর মামলা করলেই যে পুলিশ সেটা গ্রহন করবে সেটা নয়। আমরা সাধারণ পাবলিকের নিরাপত্তা দেই।

-বলবো নিজের ক্ষমতার সুযোগ নিচ্ছেন। এখন তো আবার সবাই রক্ষকের নামে ভক্ষক।

– মুন।

– রাখছি।

-ওয়েট। তুমি এখন কলটা কাটবে না আমার কথা আছে তোমার সাথে। আমার কথার অবাধ্য হলে কিন্তু আমি তোমার বাড়ি চলে আসবো।

– আপনি যা খুশি তাই করেন এবার আমি কলটা রাখছি। বলে শেষ করে কল কেটে দেয় মুন। বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পরে।

রাগী দৃষ্টিতে কটমট করে ফারহানের দিকে তাকাতেই ফারহান চোখটিপ দিয়ে ফ্লাইং কিছ ছুড়ে দেয়। আর চোখের ইশারায় বলে, বলেছিলাম না বাড়িতে চলে আসবো। যেটা দেখে মুন ক্ষেপে যায়। আর ওর নানুভাইকে ডেকে বলে, এরা এখানে কি করছে? রওনাক এসে মুনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আরে কুল শালিকা। এত হাইপার কেন হচ্ছো। আসলে আমার মামাতো ভাই এসেছে তো তাই ওকে নিয়ে আসলাম অর্ণার সাথে পরিচয় করাবো বলে। তুমি বসো না এখানে আমরা একসাথে আড্ডাদেই। তারপর আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, হাই আমি রওনাক। আকাশ রাওনাকের সাথে হ্যান্ডসেক করে বলল, আমি আকাশ, মুনের বেস্টফ্রেন্ড।

নিজের রুমে বসে পাইচারি করছে আর একা একা বকে চলেছে মুন। দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের উপর হাত ভাজ করে মুনকে দেখে চলেছে ফারহান। মুনকে প্রান ভরে দেখছিলো। মুনকে দেখতে পেয়ে ফারহানের তৃষ্ণার্থ চোখদুটো যেন শান্ত হয়ে আসছ ক্রমশ। মনে ভীতরে জমে থাকা ভালোবাসার পাহাড় যেন গলে গলে পড়ছিলো। ঠোঁটের কোন মলিন হাসি নিয়ে দেখে যাচ্ছে রাগি মুনকে।

কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে আতকে উঠে মুন। কিন্তু মুনের নানুভাইকে দেখে অধোরে হাসি ফুটিয়ে বলে,কি বলবে নানুভাই?

-বলছি এভাবে দূর থেকে দেখে কি শান্তে পাও বলতো।

– কি করবো বলো, তোমার নাতনীটা তো আমাকে তার কাছে যেতে দিচ্ছে না।

– সে খুব অভিমানি এভাবে ধরা দিবে না। তুমি ওকে বাধ্য করো যাতে সে নিজে তোমার কাছে ছুটে আসে।

– মান,, ভ্রু কুকচে প্রশ্ন করে ফারহান।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here