#হৃদমাঝারে – [১৯]
১৩,
জাল ঔষুদ ও ড্রাগস এর কারবারি, বেনামে ঔষুদ পাচার ও হসপিটালে গরীব মানুষের অরগান বিক্রির অপরাধে ডক্টর ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছ পুলিশ। গতকাল রাতে ড্রাগস সহ কিছু ঔষুদের গাড়ি আটক করেছে পুলিশ। তদন্তে জানা গেছে এইসব ঔষুদের কারবার চলে এনআর নার্সিংহোমে।
টেলিভিশনের নিচে লাল অক্ষরে লেখা ব্রেকিং নিউজের পর এই লেখাগুলো ভেসে আসছে। প্রতিটা চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ এটা। খাবার খেতে খেতে টেলিভিশনে গান দেখছিলো মুন আর তখনি নিচের লেখাগুলো ওর চোখে পরে। মুন চ্যানেল ঘুরিয়ে নিউজ চ্যানেলে দেয়। ভলিয়মটা একটু বাড়িয়ে ড্রাইনিং এর দিকে তাকায়। সবাই ড্রাইনিং এ বসে গল্প করছে আর খাচ্ছে।
ঠিক কতবছর ধরে চলছে ডক্টর ইমরান খানের এমন দুর্নীতি। কত মানুষের মানুষের প্রাণ নিয়েছেন তিনি। ডক্টর ইমরান খান কি তার কৃতকর্মের শাস্তি পাবে? নাকি ক্ষমতার জোড়ে সে বাইরে বের হয়ে আসবে। কি বলছে পুলিশ প্রশাসন। জানতে হলে দেখতে থাকুন শুনতে থাকুন পথের দিশারী। মামুনুর রহমানের ক্যামেরায় আমি তামান্না।
সবাই খাওয়া বাদদিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে টেলিভিশনের দিকে। এসব কি দেখাচ্ছে টিভিতে কারো বোধগম্য হচ্ছে না। মুনের মামা ওর মুনের দিকে শান্ত দৃষ্টি রাখতেই মুন মাথা নাড়ে। অর্ণা এসে মুনের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– টিভিতে এসব কি দেখাচ্ছে রে মুন। খালু সত্যিই এরকম জঘন্য কাজ করেছে।
– প্রমান তো সেটাই বলছে রে বোনু। মুন উঠে দাঁড়ায়। ওদের বাড়ির সকলে ব্যাস্ত হয়ে পরে ডক্টর ইমরান খানের বাড়ি যাওয়ার জন্যে। না জানি মুনের মা ও মিঠুর অবস্থা এখন কেমন। মুন সবার দিকে এক পলক তাকালো সবাই কেমন অস্থির হয়ে গেছে। মুন সবাইকে উপেক্ষা করে উপরে নিজের রুমে চলে আসলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ফারহানের নাম্বার থেকে দুটো মিসড কল। মুন তাড়াতাড়ি করে কল ব্যাক করলো। রিং হতেই ওপাশ থেকে ফারহান কল রিসিভ করে বলে,
– থ্যাংকস মেহরিমা। থ্যাংক এ লট। তোমার সাহায্য না পেলে আমরা এই কেইসটা এত তাড়াতাড়ি সলভ করতে পারতাম না। তুমি যদি কাল রাতে খবরটা না দিতে তাহলে,,,
– এত ফর্মালিটির প্রয়োজন আছে কি? আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আচ্ছা আমার লেপটপটা! ওটা খুজে পেয়েছেন?
– হ্যাঁ । ডক্টর ইমরান খানের পারসোনাল লকার থেকে একটা লেপটপ পাওয়া গেছে। আমাদের ব্রাঞ্চেই আছে। তুমি একবার দেখে নিও ওটা তোমার কি না।
– ওকে ঠিক আছে। রাখছি।
মুন হসপিটালে যাওয়ার জন্যে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই শুনতে পেলো, প্রায় দশ বছর যাবৎ এনআর নার্সিংহোমে এসব কারবারি চলছিলো। কত মানুষ প্রান হাড়িয়েছে, কত যুবকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। এনআর নার্সিংহোমের দরজা বন্ধ, পুলিশ চারিদিক থেকে হসপিটালটিকে ঘিরে রেখেছে।
ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে পরে মুন। মুনের মামা বলে উঠে, কোথায় যাচ্ছিস? হসপিটালে তো যেতে পারবো না কাজেই এখন আমাকে থানায় যেতে হবে। একবার দেখে আসি ডক্টর ইমরানের কেমন সমাদর চলছে। টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে বলে মুন। তারপর ওর মামার দিকে তাকিয়ে বলে, আজ আর আমার মনে কোন আক্ষেপ নেই মামা। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। এখন ওই ডক্টর রুপি কশাইটা সঠিক সাজা পেলেই হবে। আমি আসছি মা। বলেই বেড়িয়ে যায় মুন।
থানার সামনে শত মানুষের ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় মুন। সব মানুষের মুখে একটাই কথা ইমরান খানের শাস্তি চাই। কেউ কেউ ব্যানারে ইমরান খানের ছবি একে তাতে কালি লাগিয়েছে কারো হাতে জুতা কারো হাতে ঝাড়ু। মুন সকলের দিকে একপলক তাকিয়ে হাসলো। তারপর সে সোজা চলে যায় থানার ভিতরে। সেখানে আগে থেকে ফারহান ও তার টিম ছিলো। মুন ফারহানের দিকে তাকিয়ে দু পা এগিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। থানার ভিতরে মিঠু মাথা নিচু লরে করে বসে আছে। মুন দ্রুত পায়ে মিঠুর সামনে গিয়ে বসে দু-হাতে মিঠুর মাথা তুলে সামনে দিকে করে তুলে। মিঠুর মাথায় কিছুটা কেটে সেখানে রক্ত জমাট বেধে আছে। মনে হয় অনেক আগেই কেটেছে। মুন মিঠুর মাথার কাটা স্থানে হাত রেখে বলল,
– কি হয়েছে ভাই? মাথায় কাটলো কি করে? বল কি হয়েছে?
মিঠু কিছু বলে না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে। তখন ফারহান ওদের সামনে হাটু গেরে বসে বলল, তোমার ভাই হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে জনগণের সাথে রামধোলাই খেয়েছে। মানে! প্রশ্ন করে মুন। মানে হলো গিয়ে, পাবলিককে বুঝাতে গিয়েছিলো যে তোমার বাবা নির্দোষ, আর পাবলিক সেটা মানতে না পেরে ওর উপর এ্যটাক করে। ফারহানের কথা শুনে মুন মিঠুর দিকে তাকিয়ে বলে, তুই এখানে কেন এসেছিস ভাই? জানিস তো এখন বাড়ির বের হলেই তোদের বিপদ বাড়বে তাহলে কেন এসেছিস তুই এখানে? আর আম্মু কোথায়? আম্মুকে বাড়তে একা ফেলে চলে এসেছিস তুই? বাড়ি যা মিঠু, মা-কে সামলাতে হবে তো। জানি নানুর বাড়ির সবাই এখম আম্মুর কাছে আসে তবুও সাধারন পাবলিক আর মিডিয়ার লোকদের কম্প্লিমেন্ট সামলাতে পারবে না কেউ। ভাই তুই যা। আম্মুর কাছে ফিরে যা। উঠে দাঁড়ায় মুন সাথে ফারহানও। মুন ফারহানের দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
মিঠুকে বাড়ির ফেরার ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন?
– যথা আজ্ঞা ম্যাডাম। ফারহান পলাশের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা মিঠুকে বাড়ির দিয়ে আসার ব্যাবস্থা করো। আর হ্যা ভুলেও যেন মিঠু পাবলিকের সামনে না পরে। ফারহান শিমুলের টেবিল থেকে একটা লেপটপ হাতে নিয়ে মুনকে উদ্দেশ্য করে বলে, দেখতো এটাই তোমার সেই লেপটপ কি না? মুন ফারহানের হাতে থাকা লেপটপের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্লতার সাথে বলে উঠলো,
– হুম এটাই আমার লেপটপ। কোথায় পেলেন এটা?
– তোমার বাবার সিক্রেট ড্রয়ারে।
মুন আর কিছু না বলে টেবিলের উপর লেপটপটা রেখে সেটা অপেন করতে লাগলো। পাশেই দাঁড়িয়ে মিঠু সবটা লক্ষ করছিলো আর ভাবছিলো কি থাকতে পারে এটাতে। আর এটা মুনের লেপটপ। এটা তো সে তার বাবার হাতে দেখেছিলো। তার বাবা মাঝে মাঝেই এই লেপটপটা নিয়ে কিছু একটা করতো। তবে এই নিয়ে সে তার বাবাকে কিছু জিগ্যেস করে নি। কিছুক্ষণ পর মুন একটা ভিডিও অপেন করলো। যেটাতে স্পষ্ট দেখা এনআর নার্সিংহোমের ভিতরে কয়েকটা লোক কিছু পার্সেল খুলে ঔষুদের প্যাকেট বের করে সেটাতে ড্রাগস ডুকিয়ে দিচ্ছে। আর তাদের দিছু কথোপকথন শুনতে পেলো। সব শুনে ফারহান স্মিত হাসলেও মিঠু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মুনের দিকে। তারপর বলে,
– আপু, তুই আগে থেকেই সবটা জানতিস?
– হুম।
– তাহলে আমাদের আগে কেন জানাস নি? আর সব জেনেও ওই নার্সিংহোমেই কেন নিজের চেম্বার নিলি। মুন এবার মিঠুর দিকে ঘুরে তাকায়। তারপর দৃঢ় স্বরে বলে, ডক্টর ইমরান খান যে প্রমান লোপাট করেছে সেগুলোর জন্যে এনআর নার্সিংহোমে আমার চেম্বার নিয়েছি। মিঠু আরো কিছু বলবে তখনি ফারহানের কলটা বেজে উঠে, ফারহান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল যেটা শুনে ফারহান হাসলো। চাপা স্বরে বলে উঠলো, এবার সবার খেল খতম।
– আবার কি হলো? বেশ উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করলো মুন। ফারহান মুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তবে আজ ওর দৃষ্টিতে নেই কোন মুগ্ধতা। আজ ফারহানের দৃষ্টি রয়েছে শুধু অনুতাপ। অপরাধবোধ।
ফারহান বেশীক্ষণ দৃষ্টি রাখতে পারলো না ওর মুখের দিকে। ভিতরটা তার ভেঙে চুরমার হয়ে আসছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে নিজের। এমনটা একটা নিঃপাপ মেয়েকে সে কতভাবে অপমান করেছে। কতটা খারাপ ব্যাবহার করেছে তার সাথে। রাগে নিজের হাতের শক্ত মুঠি করে নেয়। মুন ভ্রু কুচকে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– এই আপনার আবার কি হলো? কার খেল খতম বললেন না তো?
– একটু পরেই জানতে পারবে। বলেই একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো ফারহান। দু-হাতে মাথা চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখদুটো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে তার।
মুন ব্যাস্ত তার লেপটপটা নিয়ে। পলাশ এগিয়ে এসে মিঠুর সামনে দাড়িয়ে বলল, এবার আমাদের যাওয়া উচিৎ। না আমি কোথাও যাচ্ছি। মিঠু ও একটা চেয়ারে বসে পড়লো।
চলবে,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।