হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব -৪১+৪২

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪১
চোখ মুখ গম্ভীর করে বসে আছে আরাবী।তীক্ষ্ণ চোখে একটু পর পর জায়ানকে দেখছে। আর হাঁচি দিচ্ছে ক্রমাগত।উপুর হয়ে শুয়ে জায়ান আরাবীকেই দেখছে।ঠোঁটে তার হাসি বিদ্যমান।ওকে এইভাবে হাসতে দেখে আরাবী তেতে উঠে বলে,’ একদম হাসবেন নাহ আপনি।খা’রাপ লোক কোথাকার।সুযোগ দিয়েছি বলে আপনি আমার সাথে এমন করবেন?হাঁচি দিতে দিতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

বলতে বলতে আবারও হাঁচি দিয়ে বসল আরাবী।পর পর আরও দু তিনটে দিয়ে দিল।এইবার জায়ানের খারাপ লাগল।তরতরিয়ে উঠে বসল সে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল, ‘ আচ্ছা আ’ম সরি।কি করব বলো?অনেকদিন দূরে ছিলাম তোমার থেকে।তার উপর তোমাকে এমন ওই অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। শুভ্র তোয়ালে জড়ানো ফর্সা শরীরে তোমাকে কি যে আবেদনময়ী লাগছিলো।বল বুঝাতে পারবোনা।’

জায়ানের কথায় আরাবীর লজ্জা লাগলেও তা জায়ানকে বুঝতে দিল নাহ।বরংচ আরও রাগ দেখিয়ে বলে, ‘ আমার অতো বুঝা লাগবে নাহ।আগামী একসপ্তাহ আমার কাছে আসবেন নাহ আপনি।একদম দূরে থাকবেন।দূরে মানে বুঝেন তো?দূরেএএএএ।’

লাস্ট লাইনটা টেনে টেনে বলল আরাবী।জায়ান চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো আরাবীর দিকে।তারপর দাম্ভীকতার সহিত বলে, ‘ হাহ্? আমার কথা নাহয় বাদই দিলাম।তুমি থাকতে পারবে আমার থেকে দূরে?রাতে পিনপিন করে কে আসে আমার কাছে?আমার বুকে শোয়ার জন্যে?’

এই পর্যায়ে এসে থেমে যায় আরাবী।দিকদিশা না পেয়ে বলে, ‘ আমি ওই শুধু একটু আপমার বুকেই তো ঘুমোতে যাই।তাই বলে আপনি আমায় এইভাবে তা নিয়ে খোটা দিবেন?’

‘ আরে?তুমি তো উল্টো বুঝছ।আমি সেটা বলেনি।’ জায়ান বুঝাতে চেষ্টা করল আরাবীকে।আরাবী মুখ ফুলিয়ে বলে, ‘ হ্যা, বুঝি বুঝি।’

আরাবী অন্যদিকে ফিরে গেল।জায়ান এইবার হাত বাড়িয়ে টেনে আনল আরাবীকে।আরাবী হকচকিয়ে গেল।থেমেথেমে বলে, ‘ আরেহ! কি করছেন?ছাড়ুন আমায়।’

জায়ান আরাবীর কাধে থুতনী ঠেকিয়ে বলে, ‘মুখ ফুলিয়ে থাকবেনা একদম।এইভাবে মুখ ফুলিয়ে থাকলে তোমার গালদুটো টমেটোর মতো হয়ে যায়।তখন আমার কাম’ড় দিতে ইচ্ছে করে।’

আরাবীর গালে স্লাইড করল জায়ান।লজ্জা পেল আরাবী।দুহাতের সাহায্যে জায়ান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।তারপর বলে, ‘ হয়েছে আর বলতে হবে নাহ।আপনার লাগামছাড়া কথাবার্তা এই জীবনে বন্ধ হবে না আমি জানি।লু’চু জানি কোথাকার।’

‘ লু’চু বলবে না একদম।তাহলে কিন্তু লু’চুগিরি আবার শুরু করব।’

জায়ানের কথায় ভয় পেয়ে যায় আরাবী।’নাহহ!’ বলে চিৎকার করে দ্রুত কম্বল দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলে।আরাবীর এমন বাচ্চামো দেখে হেসে ফেলে জায়ান।রুমময় ঝংকার তুলছে জায়ানের হাসি।আরাবী কম্বল একটু উঠিয়ে উঁকি দিল।জায়ানের প্রাণখোলা হাসিটুক মুগ্ধ নয়নে মন ভরে দেখে নিল।লোকটার হাসি মারাত্মক সুন্দর।জায়ান সচরাচর এমনভাবে হাসেনা।লোকটা কি জানে তাকে হাস্যরত অবস্থায় ঠিক কতোটা সুদর্শন দেখায়।এইযে আরাবীর বক্ষস্থলে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে জায়ানের এই হাসি দেখে।যাকে বলে সুখের ব্যথা।জায়ান হাসি থামাল।তারপর কম্বল সরিয়ে টেনে উঠাল আরাবীকে।আরাবী কিছু বলবে তার আগেই দরজায় করাঘাত হলো।আরাবী সরে আসল দ্রুত।জায়ান নিজেকে ঠিক করে নিয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নূর।জায়ান দরজা খুলতেই ও বলে,’ ভাইয়া নিচে জিহাদ আংকেল’রা এসেছেন।তোমাকে আর ভাবিকে নিচে যেতে বলেছেন আব্বু।’
‘ হুম তুই যা।আমরা আসছি।’

নূর মাথা দুলিয়ে চলে গেল।জায়ান শান্ত চোখে তাকালো আরাবীর দিকে।আরাবীর কোন ভাবান্তর দেখা গেল নাহ।জায়ান জিজ্ঞেস করল, ‘ নিচে যাবে?’

আরাবী মাথা দুলিয়ে সায় জানাল।তারপর ধীর আওয়াজে বলে, ‘ আমায় একটু সাহায্য করুন উঠে দাড়াতে।’

আরাবীর কাছে এগিয়ে গেল জায়ান।তারপর আরাবীকে কোলে তোলার জন্যে দুহাত বাড়াতেই আরাবী পিছিয়ে যায়।জায়ান ভ্রু-কুচকালো।বলল,’ সরলে কেন?’

আরাবী নাকচ করল, ‘মাথা ঠিক আছে আপনার?নিচে সবাই আছে।আপনার কোলে করে আমি কিছুতেই নিচে যাব নাহ।আমায় শুধু একটু ধরুন আপনি।তাহলেই হবে।’
‘ ডু ইউ থিংক আই কেয়ার এবাউট দ্যাট?’
‘ ইউ ডোন্ট কেয়ার বাট আই ডু।সো প্লিজ।’
‘ওকেহ, আসো।’

জায়ানের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্ত।আরাবী হেসে এগিয়ে আসল।জায়ান দুহাতে যতোটা সম্ভব আরাবীকে সাহায্য করল।আরাবী জায়ানের নাক ফোলানো দেখে হেসে বলে, ‘ এইভাবে নিচে গেলে সবাই হাসবে।’
‘ হাসুক তাতে তোমার কি?’
‘ উফ, যান যাব-ই না আমি।খালি শুধু শুধু রাগ করে।’

জায়ান বলে, ‘ আমিই রাগ দেখাই তাই নাহ?তুমি কি করো?আমার কোলে উঠলে কি হবে?’
‘ আপনি কি অবুঝ জায়ান?কেন এমন করেন?জানেন না আমার লজ্জা লাগে?’

আরাবী কথায় জায়ান দুষ্টু হাসল।বলে,’ এতো বার লজ্জা ভাঙ্গালাম তাও লজ্জা শেষ হয়না তোমার?’

‘উফ,থামবেন আপনি?’ আরবী বাহুতে মুষ্ট্যাঘাত করল।হেসে দিল জায়ান।আরবীও হাসল তা দেখে।এদিকে উপর থেকে হাস্যজ্জ্বল কপোত-কপোতীকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল সবারই।জায়ান আর আরাবী বসারঘরে আসতেই জিহাদ সাহেব বলে উঠেন, ‘ কেমন আছিস আরাবী মা?’

আরাবীর চোখ ভরে উঠতে চাইল।তাও নিজেকে সামলালো।আরাবী জায়ানকে ইশারা করল আর বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যে।জায়ান মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।তারপর জিহাদ সাহেবের কাছে গিয়ে আরাবীকে বসিয়ে দিল।আরাবী সাথে সাথে জিহাদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ কেমন আছো বাবা?’
‘ তুই কেমন আছিস সেটা বল।তুই ভালো আছিস মানে আমিও ভালোবাসি।’

আরাবী মুঁচকি হেসে বলে, ‘ আমি অনেক ভালো আছি।’
‘ আমিও ভালো আছি মা।তোকে সুখে শান্তিতে দেখে আমার প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো।’

এদিকে মাথা নিচু করে বসে আছেন লিপি বেগম।ঠিক কিভাবে তিনি কথা বলবেন আরাবীর সাথে তা ভেবে পাচ্ছেন নাহ তিনি।মাথা উঁচু করে তো কারো দিকে তাকাতেই তিনি পাচ্ছেন নাহ।জিহাদ সাহেব সেটা লক্ষ করে তাকে ডেকে উঠলেন, ‘ লিপি?মেয়েটাকে বুকে নেবে নাহ?’

লিপি বেগম ছলছল চোখে স্বামির দিকে তাকালেন।ফের আরাবীর দিক তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলেন।দু হাত জোড় করে ধুকরে কেঁদে উঠে বলেন,’ আমাকে মাফ করে দে মা।আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি।ক্ষমা করে দে আমায় মা।তুই আমায় যেই শাস্তি দিবি আমি সব মাথা পেতে নিব।তবুও আমায় ক্ষমা করে দে মা।’

আরাবী সাথে সাথে লিপি বেগমের হাত দুটো আঁকড়ে ধরল।ধরা গলায় বলে, ‘ এভাবে বলবে না প্লিজ।তুমি যা করেছ এতে কোন অন্যায় নেই।এই পৃথিবীতে কেই বা আছে যে অন্যের সন্তান তাও আবার কুড়িয়ে পাওয়া তাকে ছোটো থেকে এতো বড় করে?তুমি করেছ।সেইভাবেই হোক আমায় নিজের সন্তানের পরিচয়ে বড় তো করেছ?বাবা আর তুমি না থাকলে তো আমি সেই ছোটো বেলাই ময়লার স্তুপে পরে থাকতাম।কাঁদতে কাঁদতে একসময় ম’রেই যেতাম।খাদ্য হতাম কাঁক,শকুনের।বাবা আমায় বাড়ি নিয়ে গিয়েছে। তবে তুমি যদি আমায় গ্রহন না করতে বুকে টেনে না নিতে তাহলে তো আমার ঠাই হতো না কোথায়ও।তাই মাফ চাইবে না আমার কাছে।উলটো তুমি আমার জন্যে যা করেছ তার জন্যে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব তোমার কাছে।’

লিপি বেগম নতমস্তকে বলেন,’ এভাবে বলিস না মা।এইভাবে বলে আমাকে পর করে দিস নাহ।তাহলে যে আমি ম’রে যাব।তোর সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি।তুই আমার জন্যে যা করেছিস তা তো আমার পেট থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানও আমার জন্যে কোনদিন করেনি।আমি একটু ব্যাথা পেলে তুই সবার আগে ছুটে আসতি আমার কাছে।জ্বরে বিছানায় পরে কাতরাতে থাকলে তুই এসেই আমার মাথা জলপট্টি দিতি।অথচযেই মেয়ের জন্যে আমি তোর সাথে দিনের পর দিন অন্যায় করে গিয়েছি সেই মেয়ে তো ফিরিয়েও তাকাতো নাহ।আমায় পর করে দিস না রে মা।তুই আমার মেয়ে।আমার মেয়ে তুই।আমায় মা বলে ডাক নাহ মা।মা বল।’

আরাবী কেঁদে ‘মা’ বলে লিপি বেগমকে জড়িয়ে ধরল।লিপি বেগমও জড়িয়ে ধরলেন আরাবীকে।মা মেয়ের মিলন দেখে সবার চোখে জল অথচ ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।জিহাদ সাহেব হাসিমুখেই বলেন,’ কি গো?মা মেয়ে কি খালি কাঁদবেই?হয়েছ তো?’

আরাবী সরে আসল।লিপি বেগমও চোখ মুছে সরে বসলেন।জিহাদ সাহেব আবার বলেন, ‘ এইবার তাহলে উঠি?আরাবীকে দেখতে এসেছিলাম।ও ঠিক আছে দেখেই আমার শান্তি।’

‘ সে কি ভাইসাহেব।এটা হবে না।আজ এখানে থাকবেন আপনারা।’ বলে উঠলেন সাথি বেগম।’
‘ আরে কি বলছেন ভাবি? এটা হয় না।বাড়িটা খালি পরে আছে।আর ফিহা যেমনই হোক।মেয়ে তো আমার।ওকে একলা বাড়িতে রেখে কিভাবে থাকি বলেন তো?’

সাথি বেগম বলেন,’ তাহলে আজ রাতের ভোজন করিয়েই তবেই ছাড়ব।আর একটা কথাও না ভাইসাহেব।’
‘ কিন্তু ফাহিম?ছেলেটা যে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেই আমাকে খুঁজবে।’ লিপি বেগম উদাস হয়ে বলেন।

তার উদাসিনতার একটাই কারন।তা হলো ফাহিম আগে কাজ থেকে ফিরিই উনার খবর নিতেন।তার হাতের এককাপ চা না হলে যেন চলেই না ফাহিমের।অথচ সেই ঘটনার পর থেকে যেন ছেলেটার মুখটা দেখাও কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে।ও যে কখন যায় আর কখন আসে কিছুই টের পাননা তিনি।আর যেদিন ছেলেটাকে একটু দেখেন।ওর সাথে একটু কথা বলতে গেলেই ফাহিম মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।ভীতরটা কষ্ট পুড়ে যাচ্ছে উনার।তাও সবার সামনে স্বাভাবিক থাকলেন।মিলি বেগম বলেন,’ ফাহিমকে এখানে আসতে বলে দিন ভাবি তাহলেই হবে।ও এসে খাওয়া দাওয়া করে একেবারে আপনাদের নিয়েই ফিরবে নেহ।’

মিলি বেগমের কথাটা যবারই যুক্তিগত মনে হলো।তাই জিহাদ সাহেব রাজি হলেন।তা দেখে নূরের মুখে হাসি ফুটে উঠল।সাথি বেগম বলেন,’ আরাবী মা জিহাদকে ফোন করে আসতে বলে দেও।’

আরাবী বলে,’ মা আমি তো ফোনটা রুমে রেখে এসেছি।’

এর মধ্যে চট করে নূর বলে, ‘ আমি ফোন করছি।আমি ফোন করছি।’

সবাই নূরের এতো উত্তেজিত কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে তাকালো।নূর ভড়কাল,থমকাল।নিজের বোকামি বুঝতে পেরে জিভ কাটল।অতি খুশিতে মাথাটা গেছে ওর।নূর বোকা বোকা হেসে বলে,’ হা হা আই মিন আমি ফোন করছি।ভাবি তো ফোন আনেনি।মানে ওই আরকি।’
‘ হুম ফোন কর।বলিস জলদি আসতে।’ সাথি বেগমের স্বাভাবিক কণ্ঠে হাফ ছাড়ল নূর।যাক তাহলে কেউ সন্দেহ করেনি।নাহলে কি একটা কান্ড হতো।ফাহিমকে ফোন করল নূর।তা কেটে দিল ফাহিম।উলটো মেসেজ করল, ‘ ব্যস্ত আছি নূর।ক্লাস নিচ্ছি।’

নূর মেসেজটা পড়ে মুখ ফোলায়।ফাহিমকে মেসেজ দেয়,’ আমি সাধে দেয়নি ফোন।আপনার সাথে এমনিতেও আমি কথা বলতাম নাহ।সেতো আম্মু বলল তাই ফোন দিলাম।’
‘ আম্মু মানে সাথি আন্টি?তিনি কি বলেছেন?’
‘ আম্মু বলেছেন আপনাকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছেন।আপনার বাবা মা মানে আমার হবু শশুড় শাশুড়ি আমাদের বাড়িতে এসেছেন ভাবিকে দেখার জন্যে। এখন আম্মু তাদের যেতে দিবে নাহ।আর আপনাকেও আসতে বলেছে।ডিনার করে একেবারে আংকেল আন্টিকে নিয়েই ফিরবেন।’
‘ আচ্ছা বুঝলাম এবার।’
‘ আসবেন?’
‘ না এসে পারা যায়?হবু শাশুড়ির হুকুম।’

ফাহিমের লাস্ট মেসেজে হেসে দিলো নূর।তারপর আবার ফাহিম আসবে শুনে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।ভালোবাসার মানুষটার জন্যে একটু সাজগোছ তো করাই যায় তাই নাহ?
#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪২
গাঢ় বেগুনি রংয়ের সুন্দর একটা গোল জামা পরেছে নূর।সাথে হালকা পাতলা একটু সাজগোজ করে নিয়েছে।ফাহিম আসবে বলে কথা।নূর মনের আনন্দে নেচে-কুঁদে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসল।উদ্দেশ্য নিচে বসারঘরে যাওয়া।নূর নিচে এসে দেখে ফাহিম এসে পরেছে।এবং বেশ ভদ্রলোকদের মতো বসে আছে।হাতে তার চায়ের কাপ।একটু পর পর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।নূর গিয়ে আরাবীর পিছনে দাঁড়াল।ফাহিম একবার নূরকে চোখের পলক দেখে নিয়ে আবার নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসল।মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে।ফাহিম নিজের দৃষ্টি সংযত রাখার চেষ্টা করছে।কারন এখানে পরিবারের সবাই বসে।কিন্তু বেহা’য়া মন মানলে তো?সেই চোখ বার বার নূরের দিকে চলে যাচ্ছে।আর এই সুযোগেরই সৎ ব্যবহার করলো নূর।ফাহিম সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে নূরের দিকে তাকাতেই নূর সবার অগোচরে খুব কৌশলে ফাহিমকে চোখ মেরে দিল।সাথে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখাতে ভুললো নাহ।ফাহিম সবেই চায়ের কাপে মুখ দিচ্ছিল।নূরের এহেন কান্ডে চা ফাহিমের নাকে মুখে উঠে গেল।কাশতে লাগল ফাহিম।সাথি বেগম দ্রুত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল ফাহিমকে।ফাহিম তা দ্রুত পান করে নিল।সাথি বেগিম চিন্তিত কন্ঠে বললেন, ‘ ঠিক আছো তুমি বাবা?’

গলা খাকারি দিল ফাহিম।আঁড়চোখে আবারও নূরের দিকে তাকাল।মেয়েটা হাসছে।এই মেয়েটা হাড়ে হাড়ে বজ্জা’ত।কিভাবে ওকে সবার সামনে নাস্তানাবুদ করল।ফাহিম দৃষ্টি সরিয়ে এনে বলে, ‘ জি আন্টি।ঠিক আছি আমি।’

একটু থেমে আবারও বলে,’ একটু ওয়াশরুমে যেতাম আরকি।’
সাথি বেগম বলেন,’ হ্যা হ্যা বাবা। নূর তোমায় দেখিয়ে দিবে।তুমি যাও ওর সাথে যাও।’

সাথি বেগম নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘নূর যাও ফাহিমকে নিয়ে যাও।’
‘ আচ্ছা আম্মু।’

ফাহিম উঠে দাঁড়ালো।নূর বলল,’ আসুন আমার সাথে।’

নূর আগে আগে যাচ্ছে।ফাহিম পিছে পিছে।সবার থেকে দূরে যেতেই ফাহিম আশপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিল।নাহ কেউ নেই।সবাই বসার ঘরে আড্ডায় ব্যস্ত।এই সুযোগে ফাহিম নূরের হাত শক্ত করে ধরল।নূর একটু চমকালো।কিছু বলবে তার আগেই ফাহিম ওকে টেনেটুনে পাশেই একটা রুমে নিয়ে গেল।খুব দ্রুততার সাথে দরজাটাও আটকে দিল।নূর হকচকিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে?কি করছেন?’

ফাহিম চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,’ ওখানে সবার সামনে এমন করলে কেন?’
‘ কি করেছি আমি?’ ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে বলল নূর।যেন সে কিছুই করেনি।একেবারে ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে নাহ।ফাহিম মাথার পিছনে হাত বুলাল।ঠোঁট কামড়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে।হুট করে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের নিকট নিয়ে আসল।আচমকা এমন করায় ভয় পেয়ে গেল নূর।চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল ফাহিমের দিকে।পলক ঝাপ্টে কাঁপা গলায় বলে, ‘ কি কর..করছেন?’

বাঁকা হেসে ফাহিম বলে, ‘ কেন তুমি যা করছিলে?’
‘ কি করেছি আমি?’ ভয়ে ভয়ে বলে নূর।
‘ তখন যা তুমি ওখানে করছিলে।দূর থেকে ইশারা দিচ্ছিলে।আর সেটাই আমি প্রেক্টেকেলি এখন তোমাকে করে দেখাবো।’
‘ দেখুন এমন কিছুই নাহ।’
‘ কিছুই নাহ?’
‘ নাহ।’
‘ আমি তো জানি অনেক কিছু।’
‘ কি অনেক কিছু?’
‘ দেখবে?’
‘ নাহ।’
‘ আমি তো দেখাব।’

বলতে বলতেই ফাহিম ঝুকে আসল নূরের কাছে।চোখ বন্ধ করে নিল নূর।ফাহিম নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘ তুমি যে আমায় ঠোঁটের ইশারায় চুমু দেখালে।এখন তাই আমি তোমায় চুমু খাবো।’
‘ নাহহহহ!’ চিৎকার করে উঠল নূর।

ফাহিম দ্রুত নূরের মুখ চেপে ধরল।আতংকিত গলায় বলে, ‘কি করছ?সবাই শুনবে।’
‘ উম।’
‘ ওহ সরি।’

ফাহিমের নূরের মুখের থেকে হাত সরিয়ে দিল।ফাহিম হাত সরাতেই নূর জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিল।তারপর বলে, ‘আ..আপনি যে এতো অস’ভ্য তা তো আগে জানতাম নাহ।অস’ভ্য কোথাকার।’

নূরের বলার ধরন দেখে হেসে দিল ফাহিম।হাসি থামাতেই বলে,’ এইটুকুইতে আমাকে অস’ভ্য উপাধি দিয়ে দিলে?এখনও তো তোমার সাথে আরও কতো কি করা বাকি।’
‘ ক…কি করবেন?’

বাঁকা হেসে ফাহিম বলে,’ সেটা নাহয় বিয়ের পরেই দেখাব।’
নূরকে চোখ মেরে সরে আসল ফাহিম।নূরের মুখশ্রী জুড়ে লালাভ আভা ছড়িয়ে পরল।মাথা নুইয়ে মুঁচকি হাসল ও।
‘ লজ্জা পেলে সুন্দর লাগে।’

কথাটা কানে এসে পৌছাতেই নূর দ্রুত চোখ তুলে তাকায়।কিন্তু তার আগেই ফাহিম দরজা খুলে চলে গিয়েছে।নূরও কয়েক মিনিট স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।পর পর ছুট লাগাল বসারঘরের দিকে।
***
রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে জিহাদ সাহেব,লিপি বেগম,আর ফাহিম যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিলো।তাদের শতো বলেও থাকার জন্যে রাজি করানো গেলো নাহ।ওনারা যেতেই সবাই টুকাটাকি কথাবার্তা বলে যার যার রুমে ঘুমাতো চলে গেল।সবাই যেতেই জায়ান এইবার আরাবীকে কোলে তুলে নিয়েই ঘরে আসল।আরাবী সোফায় বসিয়ে দিয়ে বিছানা করে নিল।তারপর আরাবীকে আবারও কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।আরাবীকে ফ্রেস করিয়ে নিয়ে বিছানায় রেখে আসল।তারপর নিজেও ফ্রেস হয়ে আসল জায়ান।রুমের লাইট নিভিয়ে আরাবীর পাশে গা এলিয়ে দিল।সাথে সাথে বুকের উপর নরম দেহের অস্তিত্ব টের পেয়ে হাসল জায়ান।দুহাতে আঁকড়ে ধরে আরাবীর দেহটা জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।প্রশ্ন করল,’ ঘুমাও নি যে?’
‘ বিকেলে ঘুমালাম নাহ কতোক্ষন?অনেক্ষন ঘুমিয়েছি।ঘুমটা ভালো হয়েছে।তাই এখন ঘুম আসছে নাহ।’ বলল আরাবী।

আরাবীর কথার পরিপেক্ষিতে দুষ্টু হেসে জায়ান বলে,’ এতোদিন পর স্বামির আদর ভালোবাসা পেয়েছ।ঘুম তো ভালো হবেই।’

আরাবী জায়ানের বুকে আলতো হাতে আঘা’ত করে করল।মুখ ফুলিয়ে বলে, ‘ অস’ভ্য লোক।’

শব্দ করে হেসে দিল জায়ান।আরাবী তা দেখল চেয়ে চেয়ে।পলক ঝাপ্টালো না একটুও।নির্নিমেষ দৃষ্টি তাক করে রাখল জায়ানের দিকে।আরাবী সেই দৃষ্টি লক্ষ্য করে হাসি থামাল জায়ান।নরম চোখে চেয়ে বলে, ‘ কি দেখছ?’
‘ আপনাকে!’ সরল গলায় বলল আরাবী।’
‘ আমাকে?’
‘ হুম,এভাবে আর কারো সামনে আপনি হাসবেন নাহ।’

ভ্রু-কুচকালো জায়ান আরাবীর এমন কথায়।প্রশ্ন করে,’ কেন?কি হয়েছে?’
‘ কিছু না শুধু হাসবেন নাহ।’
‘ আরেহ বাবা কারনটা তো বলবে।’

জায়ানের বুকে মুখ গুজে দিল আরাবী।তরতরিয়ে বলে উঠল,’ এইভাবে হাসলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।ভয়ংকর সুন্দর যাকে বলে।এইযে আপনার হাসি দেখেই তো আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা হয়।এই ব্যথাটা আমার ভীষণ ভালোলাগে।তাই আমি চাই আপনি কারো সামনে এইভাবে হাসবেন নাহ।আর কেউ যেন এই ব্যথার উপলব্ধি না করতে পারে।’

আরাবীর আবেগঘন কথায় মন জুড়িয়ে যায় জায়ানের।আরাবীর মাথায় হাত রেখে নম্র গলায় বলে,’ হাসব নাহ।কখনও হাসব নাহ।আমার কাঠগোলাপ যা অপছন্দ করে তা আমি কখনই করব নাহ।’

জায়ানের কথায় ঘুম ঘুম চোখেই হাসে আরাবী।জায়ানের বুকে মাথা রাখলেই যেন শান্তিতে চোখ বুজে আসে আরাবীর।জায়ানের আলতো হাতে চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দেয়।ঘুম না এসে উপায় আছে।আরাবীও ঘুমিয়ে পরল।জায়ান মৃদ্যু হাসল ঘুমন্ত আরাবীকে দেখে।আরাবীর এলোমেলো চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে গুছিয়ে দিল।আরাবীর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিল।এই মেয়েটা তার জন্যে যে কি সেটা ও কাউকে বলে বুজাতে পারবে নাহ।জায়ান মৃদ্যু কন্ঠে বলে উঠল,’তোমার মনের সকল আশাআমি পূরন করব কাঠগোলাপ।জানি এতে তুমি কষ্ট পাবে।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।এটা আমার করতেই হবে।তৈরি থাকো জান।খুব শীঘ্রই সকল সত্যি সম্মুখীন হবে তুমি।তবে চিন্তা করো না।এই আমি সবসময় তোমার কাছে ছিলাম,আছি,থাকব।ভালোবাসি জান। অনেক ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।’

#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।ছোটো হয়েছে জানি।মাফ করবেন আমায়।আজ এক জায়গায় এসেছি।ভীষণ ক্লান্ত।ইনশাআল্লাহ কালকেও দিব।কাল বড়ো করে দিব ইনশাআল্লাহ।
#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here