#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫১
কথায় আছে না দুঃখের পর সুখ আসে।তেমনটাই ঘটেছে সাখাওয়াত ভিলাতে।এতো দুঃখজনক ঘটনা জানার পর আরাবী মা হবে এই খুশির খবরটা যেন সেই দুঃখটুকুকে ছায়ার মতো ঢেকে দিয়েছে।সবার চোখে মুখে আনন্দ উপচে পরছে।নূর খুশিতে চিৎকার করে লাফাতে লাফাতে বলে,’ আমি ফুপি হবো।আমি ফুপি হবো।উফ,উফ,এতো খুশি লাগতেছে।’
ফাহিম সবার দিকে তাকাল।কেউ এদিকে তাকিয়ে নেই।এই সুযোগে ফাহিম নূরের কানে ফিসফিস করে বলে,’ মামিও কিন্তু হচ্ছো সেই সাথে।ভুলে গেলে?’
নূর লাফানো থামিয়ে দিল ফাহিমের কথা শুনে।তারপর ফাহিমের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল।আলিফা বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে।যাক ওর কথাটাই ঠিক হলো। ইফতি আলিফার সেই মনো মুগ্ধকর হাসি দেখে নিজেও হাসে।সাথি বেগম,মিলি বেগম, লিপি বেগম তিনজন মিলে কোলাকুলি করে নিলেন।নিহান সাহেব,মিহান সাহেব আর জিহাদ সাহেবের ক্ষেত্রেও একই।
‘ দাদি হবো।’ সাথি বেগম বললেন।তা শুনে
মিলি বেগম হেসে বলেন,আমিও তো দাদি হচ্ছি ভাবি।’
‘ হ্যা রে।’
‘ আমি নানু হবো।’ লিপি বলেন।
‘ আমি দাদা।মিহান তুইও।আর জিহাদ সাহেব আপনি নানা হবেন।’ বললেন নিহান সাহেব।হাসি যেন সরছেই না তার অধর থেকে।
ফাহিম আর ইফতি কোলাকুলি করল।ফাহিম বলে,’ মামা হচ্ছি।’
‘ আমি চাচ্ছু।’
নূর আর আলিফার ক্ষেত্রেও এক।তারাও আনন্দ প্রকাশ করছে।ডা.রোজি সবাইকে এতো আনন্দিত দেখে তিনি হাসি মুখে বলেন,’ তা এতো খুশির একটা সংবাদ জানালাম আপনাদের।মিষ্টি খাওয়াবেন নাহ?’
সাথি বেগম দ্রুত মাথা নারেন,’ হ্যা হ্যা এইতো আমি যাচ্ছি।নিজ হাতে বানাবো মিষ্টি।চল মিলি।’
‘ আমিও আসি ভাবি।’ লিপি বেগম বলে উঠেন।সাথি বেগম আর না করলেন নাহ।হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলেন।তারা তিনজন মিলে চলে গেলেন রান্নাঘরে।ডা.রোজি তাকালেন জায়ানের দিকে।তারপর মুঁচকি হেসে বলে উঠেন,’ সবাই নিচে যাই আমরা।আপাততো আরাবীকে বিশ্রাম নিতে দেই।ওর শরীর অনেক দূর্বল।’
‘ হ্যা হ্যা অবশ্যই।আসুন আন্টি। আপনার ব্যাগটা আমায় দিন।’ কথাগুলো বলে ইফতি ডা.রোজির ব্যাগটা নিয়ে নিচে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াল।আলিফাকেও ইশারা করল আসার জন্যে।তাই আলিফাও ইফতির পিছু পিছু যাচ্ছে।এরপর একে একে সবাই চলে গেল।সবাই চলে যেতেই ডা.রোজি উঠে দাঁড়ালেন।জায়ানের কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলেন।জায়ান কেমন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।কোন নড়চড় নেই ওর মাঝে।ডা.রোজি ধীর আওয়াজে বলতে লাগলেন,’ বাবা হচ্ছো জায়ান।এখন থেকে আরাবীর প্রতি আরোও যন্তশীল হতে হবে তোমাকে।ওর খেয়াল রাখবে ভালোভাবে।এই সময়ে তোমার সাপোর্টই ওর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।আর যেই পরিস্থিতিতে দিয়ে আজ ও গিয়েছে।তাতে ও অনেক কষ্ট পেয়েছে,মানুষিক আঘাত পেয়েছে।ওকে তোমাকেই সামলাতে হবে।একমাত্র তুমিই পারবে আরাবী আর তোমাদের সন্তানকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আনতে।তোমার হাতেই সবকিছু।আর বাদ বাকি যা হবে বাকিটা উপর-ওয়ালার ইচ্ছা।আসি তাহলে জায়ান।ওর পাশেই থেকো।জ্ঞান ফিরলে কিছু ফল খাইয়ে দিও।আর হ্যা ফলটা গ্লিসারিন যুক্ত পানিতে দশ মিনিট ভিজিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে তারপরেই ওকে খাওয়াবে।’
ডা.রোজি জায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। জায়ান ডা.রোজিকে যেতে দেখেই তাকাল আরাবীর দিকে।তারপর আবার আরাবীর পেটের দিকে তাকাল।ওর সারা শরীর কাঁপছে।জায়ান অনেক কষ্টে ওর কাঁপা হাতজোড়া নাড়িয়ে আরাবীর শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিল।তারপর আরাবীর ফর্সা উদরে কাঁপা হাতটা রাখতে ওর শরীরটা ঝংকার দিয়ে উঠল।অদ্ভুত শিহরণে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে জায়ানের।এ কেমন অনুভুতি? বাবা হবার অনুভুতি কি সত্যিই এতো সুখের?জায়ান চোখ বন্ধ করল।ওর চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পরল একফোটা তপ্তজল।জায়ান দুহাতে মুখ ঢেকে নিল।কিয়ৎক্ষণ এইভাবেই রইল।তারপর হুট করে আরাবীর পাশে শুয়ে পরল।তারপর দু হাতে আরাবীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।এলোপাথাড়ি আরাবীর মুখশ্রী জুড়ে অধরজোড়ার উষ্ণ স্পর্শে ভড়িয়ে দিলো।এরপর আরাবীর ঘারে মুখ গুজে দিলো জায়ান।বিরবির করে বলতে লাগল,’ থ্যাংকিউ আরাবী।থ্যাংকিউ সো মাচ।আমায় এতো বড় একটা উপহার দেওয়ার জন্যে।ভালোবাসি আরাবী।তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমার হৃদয়ের বাগানে একমাত্র ফুল হলে তুমি। আমার কাঠগোলাপ।তোমাকে আমি আমার এই বুকে আজীবন আগলে রাখব।’
একটু থেমে আবারও বলে জায়ান,’ তুমি আমার শুরু, তুমি আমার শেষ,
তুমি আমার ভালোবাসার সুখের যত রেশ।’
___________
শামিম সাহেব নিজের জন্যে বরাদ্ধ করা রুমের ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছেন।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।তার পাপের ফল যে তিনি এভাবে ভোগ করবেন কোনোদিন ভাবতে পারেননি তিনি।লোভে পরে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল সে।দিনের পর দিন ভালোবাসার প্রিয়তমা স্ত্রীকে ঠকিয়ে গিয়েছে।আরেকজনকে ভালো না বেসেও মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করে গিয়েছে।প্রতিটি মুহূর্তে তার বিশ্বাস তার ভরশা নিয়ে ছেলেখেলা করেছে।শেষ মেষ নিজের সন্তান নিজের অংশকেও মৃ’ত্যুর মুখে ফেলে দিয়েছিল।একবারও তার বুক কাঁপেনি এমন জঘ’ন্য কাজ করে।মানুষ অপরাধ করে কোনোদিন অপরাধ স্বিকার করে না।যতোক্ষন পর্যন্ত না তার প্রায়েশ্চিত্ত বোধ হয়।অনুশোচনা না হলে কেউ-ই তা অপরাধ এতো সহজে মেনে নেয় না।তিনি স্বিকার করেছেন।স্ব-ইচ্ছাতেই স্বিকার করে নিয়েছেন নিজের অপরাধ।কারন তিনি অপরাধবোধে ভুগছেন।তিলে তিলে মর’ছেন অপরাধবোধে।তাও আজ থেকে না বিগত বিশটা বছর ধরে।আর আজ থেকে এই অপরাধবোধের মাত্রা আরোও বেড়ে গিয়েছে।যখন থেকে জেনেছে আরাবীই তার সেই সন্তান।যেই সন্তানের অস্তিত্বই তিনি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।তার সেই ফেলে দেওয়া সন্তানকেই অন্য একজন সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন।এতোটা বছর বাবা মায়ের আদর,স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন।এতো ভালো একটা পরিবার দেখে বিয়েও দিয়েছেন।আর তিনি কি করলেন?জন্মদাতা পিতা হয়ে কিছুই করতে পারলেন নাহ।কিছুই না।তার দু দুটো মেয়ের চোখে আজ তিনি ঘৃ’নার পাত্র।অবশ্য সে তো ঘৃৃনারই যোগ্য।কারও ভালোবাসা তিনি ডিজার্ব করেন না।তার সবচেয়ে আদরের মেয়ে তার কলিজার টুকরো তাকে আজ ভালোবাসি বাবা বলার বদলে ঘৃ’না করি বাবা বলে গিয়েছে।আর আরেক সোনার টুকরো মেয়ের মুখে তো এখনও বাবা ডাকটাও শুনতে পাননি তিনি।আর কোনোদিন শুনতেও পারবেন নাহ।এটা তো আশা করাও তার জন্যে অপরাধ।এইসব ভাবছেন শামিম আর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছেন।সে নিশ্বাস নিতে পারছে না।মনে হচ্ছে তার বুকে কেউ বিশাল ওজনের পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে।এই ওজন তিনি নিতে পারছেন নাহ।তার বুকে ব্যথা করছে প্রচন্ড ব্যথা।অশহনীয় ব্যথা।তিনি মুক্তি চান এই ব্যথা থেকে।এই যন্ত্রনা থেকে।তিনি দুহাতে বুকের বাঁম পাশটা খামছে ধরলেন।যন্ত্রণা হচ্ছে এখানটায়।এতো মানুষের ঘৃনা নিয়ে তিনি বাঁচতে পারবেন না।তিনি বেঁচে থাকতেও চাননাহ।তিনি ঘুমোতে চান।শান্তির ঘুম।চিরনিদ্রায় যেতে চান।যেই নিদ্রা কোনোদিন ভঙ্গ হবে না।যেই নিদ্রা থেকে কেউ তাকে জাগাতে পারবে না।শামিম সাহেবের বুকের ব্যথাটা আরও বাড়তে লাগল।তীব্র ব্যথায় তিনি কুকিয়ে উঠলেন।শরীর মুচড়ে উঠল।সহ্য করতে না পেরে তিনি একহাত দিয়ে ফ্লোরে থা’প্পড় মারতে লাগলেন ক্রমাগত।এতো যন্ত্রণার মাঝেও তার অধর জুড়ে হাসি। কারন সে যে জানে তার সময় এসে পরেছে চিরনিদ্রায় যাওয়ার।আস্তে আস্তে শামিম সাহেবের নিশ্বাস কমে যেতে লাগল।চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো তার।তিনি গভীর শ্বাস নিয়ে ধীর স্বরে বলে উঠলেন,’ আ..আমায় ক্ষমা করো ইরা।আ..মাকে ক্ষমা করো মিথিলা।আমাকে তোমরা ক্ষমা করিও আহানা,আরাবী।ক্ষ…মা.. ক..রে দিও।’
এই কথাগুলো বলে শেষ করতেই তার নিশ্বাস থেমে গেল।তার দেহের প্রাণপাখি সবার চোখের আড়ালে পারি জমালো অন্য এক জগতে।শুধু পরে রইল নিষ্প্রাণ এক দেহ।
__________
ঘুমের ঘোরে নিজের দেহের ওপর কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরে। পিটপিট করে নয়নজোড়া মেলে তাকাল আরাবী।জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিলো।শক্তপোক্ত লম্বাটে দেহটা দেখেই বুঝার বাকি নেই লোকটা তার স্বামি তার জায়ান।আরাবীর ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে হাসি ফুটে উঠল।দূর্বল হাতজোড়া রাখল জায়ানের চুলের ভাজে।আলতোভাবে জায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।লোকটা কিভাবে তাকে ঝাপ্টে ধরে ঘুমোচ্ছে।যেন সে কোথাও পালিয়ে যাবে আর জায়ান তাই ওকে নিজের সাথে ধরে বেধে রেখে দিয়েছে।হঠাৎ করে কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলো মনে পরতেই আরাবীর ঠোঁটের হাসি উধাও হয়ে যায়।নিজের জীবনের তিক্ত কিছু সত্য আজ ও জেনে গিয়েছে।ওর মা…ওর মা আর বেঁচে নেই।আর..আর শামিম?শামিম সাহেবই কিনা ওর জন্মদাতা পিতা।এতো ভালো মানুষটা যে এতোটা জঘ’ন্য, এতোটা খারাপ হতে পারে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি আরাবী।বিগত কয়েকটাদিনে এই লোকটার ভালো মানুষী দেখে মনে অনেক শ্রদ্ধা জমেছিল ওর মনে।আজ সেই শ্রাদ্ধার পাহার একনিমিষেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।কিভাবে পারলো সে এমনটা করতে?কিভাবে ঠকালো তার মা’কে।কিভাবে পারলো নিজেরই ঔরসজাত সন্তানকে মে’রে ফেলার পরিকল্পনা করতে।না চাইতেও আরাবী আর নিজের কষ্টটুক লুকিয়ে রাখতে পারলো না।দুহাতে জায়ানের পিঠ খামছে ধরে নিশব্দে কেঁদে উঠল।
এদিকে জায়ান বক্ষস্থলের মাঝে নরম তুলতুলে দেহের কাঁপতে থাকা অনুভব করতে পেরেই ধরফরিয়ে উঠে বসল জায়ান।জায়ান আরাবীর উপর থেকে উঠতেই আরাবী দুহাতে মুখ ঢেকে অন্য দিকে ফিরে গেল।জায়ান ব্যাথিত নয়নে আরাবীর দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর দুহাতে জোড় করে টেনে আরাবীকে বুকে আগলে নিল।ব্যাকুল কণ্ঠে বলতে লাগল,’ কেঁদো না আরাবী।কাঁদে না তো।তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়।কেন বুঝো না। ‘
আরাবী দুহাতে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরল।জায়ানের বুকের মাঝে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো যতোটা পারা যায়। আরাবী কাঁদতে কাঁদতে বলে,’ আমার ভাগ্যটাই এতো খারাপ কেন জায়ান?আমার সাথেই কেন এমন হয়।’
জায়ান অপরাধিস্বরে বলে,’ আমি সরি আরাবী।আমার জন্যেই তুমি এতো কষ্ট পেয়েছ।আমি যদি অতীত টেনে এনে তোমার সামনে দাঁড় না করাতাম তুমি এতো কষ্ট পেতে নাহ।’
‘ আপনার কোন দোষ নেই জায়ান।আপনিই তো আমাকে আমার আসল আমির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।আমার বাবা মায়ের পরিচয়পত্র এনে দিয়েছেন।আমি নিজেই তো আপনার কাছে আবদার করেছিলাম এটার জন্যে।আপনি আমার জন্যে কি তা আমি নিজেও বলে বুঝাতে পারবো নাহ।আপনার আগমনে আমার জীবন যেন নতুন রং খুঁজে পেয়েছে। সে রঙের মহিমায় আমি সব সময় উচ্ছ্বসিত থাকি। সে রং আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা যোগায়, আত্মবিশ্বাস দেয়।’
আরাবীর নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।জায়ান কিছুতেই আরাবীর কান্না থামাতে পারছে না।জায়ান এইবার না পেরে আরাবীর দু গাল শক্ত করে ধরল।আরাবীর চোখের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাঢ় স্বরে বলে,’ এতো কাঁদো কেন?এতো কাঁদলে হবে?এখন তো তুমি একা নও।তোমার মাঝেও একজন আছে।তুমি কষ্ট পেলে তো তারও কষ্ট হবে।’
আরাবী নাক টেনে কান্না থামানোর চেষ্টা করল।ফ্যালফ্যাল করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে জায়ানের কথাটা বোঝার চেষ্টা করল।বিষয়টা বুঝতে পেরেই চোখ বড় বড় করে তাকাল।তবে কি জায়ান জেনে গিয়েছে? কিন্তু কিভাবে জানল?আরাবী কাঁপা গলায় বলে,’ আপনি…মানে… আমি…!’
‘ হ্যা আরাবী আমাদের সন্তান আসতে চলেছে।তুমি মা আর আমি বাবা হবো আরাবী।আমাদের পুচকে একটা বেবি হবে।যার ছোটো ছোটো হাত পা হবে।মায়াবী,আদুরে মুখশ্রী হবে।আমাকে বাবা আর তোমাকে মা বলে ডাকবে আরাবী।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আরাবী আমাকে এই সুখের সাথে পরিচয় করার জন্যে।ভালোবাসি আরাবী।ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপ।’
#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন নাহ।#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫২
মিথিলা এসে তার আর শামিম সাহেবের জন্যে বরাদ্ধকৃত রুমটার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।মনটা কু ডাকছে তার।রাত হয়ে গেল শামিম সাহেবের দেখা পাননি তিনি।হাজার হোক স্বামি তো তার।ভালোবাসেন তিনি তাকে।সেই ভালোবাসার টানেই শামিম সাহেবকে একটি পলক দেখার জন্যে ছুটে এসেছেন।কিন্তু রুমে ভীতরে যেতে গিয়েও বার বার ফিরে আসছেন।কি করবেন তিনি?নানা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে অবশেষে পা বাড়ালেন রুমটায়।রুমটা অন্ধকার করে রাখা।বাতিগুলো সব নিভানো।মিথিলা বেগম এগিয়ে গেলেন। রুমটা গুমোট অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে।সেই অন্ধকারের মাঝেই আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে ফ্লোরে কেউ শুয়ে আছে।মিথিলা বেগম ঘাবড়ে গেলেন।ওটা যে শামিম তা বুঝতে বাকি রইলো নাহ।মিথিলা দ্রুত রুমের লাউটসগুলো জ্বালিয়ে দিলো।চারদিকে আলোকিত হতেই দৌড়ে শামিম সাহেবের কাছে যান।উনার ফ্যাকাশে মুখশ্রী দেখেই মিথিলার গলা শুকিয়ে যায়।কাঁপা গলায় তিনি আলতো স্বরে ডাকেন,’ শামিম?শামিম?উঠো।এখানে এইভাবে শুয়ে থাকার মানে কি?উঠো বলছি।’
কিন্তু না শামিম সাহেবের বিন্দুমাত্র নড়চড় নেই।হবে কিভাবে?কোনোদিন কি এটা হয়?মৃ’ত মানুষ কি কখনো জীবত হয়?হয় না।কোনোদিনও হয় না।মিথিলার শরীর কাঁপছে।কম্পিত হাতজোড়া শামিমের গালে স্পর্শ করতেই তার রূহ কেঁপে উঠে।চোখ ভিজে উঠে উনার।আর্তনাদ করে বলে উঠেন,’ শামিম?উঠো।এটা হয় নাহ।কি করছ?আবার আমার সাথে অভিনয় করছ?কেন করছ?দেখো এইগুলো আমার ভালো লাগছে না।উঠো শামিম।’
মিথিলা উন্মাদের মতো হয়ে গেলেন।তার শামিমের সাহেবের দেহটা ঠান্ডা হয়ে আছে।মিথিলা দ্রুত শামিম সাহেবের বুকে মাথা রাখলেন।স্পন্দনের ধ্বনি শোনার জন্যে।কিন্তু ব্যর্থ হলেন।কারন শামিম সাহেবের হৃদস্পন্দন তো অনেক আগেই থেমে গিয়েছে।মিথিলা সেটা বুঝতে পেরেই ছিটকে দূরে সরে যায়।অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে থাকে শামিম সাহেবের দিকে।তারপর হঠাৎই চিৎকার করে উঠেন তিনি,’ নাহহহহহহহ! এটা হতে পারে না।কখনোই না।’
তারপর আবার উন্মাদের মতো শামিম সাহেবের কাছে যান।বলতে থাকেন,’ এইইইইই তুমি কিভাবে পারো?কিভাবে পারো আমায় এইভাবে ছেড়ে যেতে।আমি এখনো ক্ষমা করিনি তোমায়।শুনছো ক্ষমা করিনি আমি।উঠো বলছি।উঠোওওওওওওওও।’
তারপর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন।
___________
এদিকে আরাবীর রুমে সবার ভীড়।সবাই আরাবীর সাথে কথা বলছে।আর ব্যস্ত আরাবীকে এটা সেটা খাওয়াতে।এমন সময় হঠাৎ মিথিলা বেগমের এমন বিভৎস চিৎকার শুনে সবাই আঁতকে উঠে।আরাবী পানি খাচ্ছিলো ও নিজেও খাবড়ে যায় ফলে পানি ওর নাকে মুখে উঠে যায়।জায়ান অস্থির হয়ে দ্রুত আরাবীর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।ইফতি বলে,’ এইটা ফুপির চিৎকার না?উনি এইভাবে কাঁদছেন কেন?মা চলো তো।’
ইফতির কথামতো মিলি বেগম ইফতির সাথে পা বাড়ালেন।একে একে সবাই ছুটলো সেদিকে।আরাবী একটু স্বাভাবিক হতে দেখে জায়ান বলে,’ ঠিক আছ?’
‘ হ্যা।কি হয়েছে ফুপি এইভাবে কাঁদছেন কেন?’
‘ সেটা তো ওখানে গেলেই দেখতে পাবো।’
‘ আচ্ছা চলুন তাহলে।’
তারপর জায়ান আরাবী এগিয়ে গেল ওখানে।গিয়ে দেখে মিথিলা কাঁদছেন সেই সাথে আহানাও চিৎকার করে কাঁদছে।
আহানা বলছে,’ বাবা উঠো।এভাবে তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারো না বাবা।আমায় এইভাবে একলা করে রেখে যেতে পারো নাহ।’
আরাবী থম মেরে গেল।কি বলছে এসব ওরা? চলে গেছে মানে?আরাবী ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।সবাই আরাবীকে দেখে সরে দাঁড়ায়।আরাবী গিয়ে শামিম সাহেবের কাছে বসে পরেন।শামিম সাহেবের নিস্তেজ মুখশ্রীটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।কান্নারত মিথিলাকে শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,’ কি হয়েছে উনার?উনি এইভাবে এখানে শুয়ে আছেন কেন?’
মিথিলা আরাবীর কথা শুনে যেন আরও ভেঙে পরেন।আরাবীকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’ ও আর নেই আরাবী।ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।চলে গিয়েছে আরাবী।’
আরাবী মাথায় যেন বজ্রপাত হলো।অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো শামিম সাহেবের মৃ’তদেহের দিকে।কেমন যেন পাথর হয়ে গিয়েছে ও।কষ্ট লাগছে ওর আবার লাগছেও নাহ।হাজার হোক লোকটা ওর জন্মদাতা পিতা।আজকেই বাবা সম্পর্কে জানতে পারলো আর আজই কিনা এমন হলো?আরাবী কাঁদলো না।মূলত ওর কান্না আসছে না।কার জন্যে কাঁদবে ও?লোকটা শুধুমাত্র ওর নামেই জন্মদাতা পিতা।এছাড়া আর কিছুই নাহ।আরাবী ঢোক গিলে বড় বড় শ্বাস নিল।তারপর শামিম সাহেবের গালে স্পর্শ করল।কি ঠান্ডা শরীরটা।মানুষ ম’রে গেলে বুঝি এমনই হয়?আরাবী অত্যন্ত শীতল কণ্ঠে বলে উঠে,’ আপনি যা করেছিলেন তা খুবই জ’ঘন্য কাজ করেছিলেন আমার মায়ের সাথে,আমার সাথে।আমার মায়ের শেষ চিহ্ন মানে আমাকে মা’রার জন্যে আমার অস্তিত্ব বিলীন করার জন্যে রাস্তায় কুকুর শিয়ালের খাবার হবার জন্যে ফেলে দিয়েছিলেন।আপনার কারনে আমার নানাজান মারা গিয়েছে।সম্পত্তির লোভে আপনি কতোগুলো পাপ করেছেন।আপনি কি ক্ষমার যোগ্য বলুন?যোগ্য না জানি।তবুও আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম।আজ এই এতোগুলো মানুষকে সাক্ষি রেখে বললাম আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম।আল্লাহ্ তায়ালা যেন আপনাকে জান্নাত নসিব করেন আমিন।’
তারপর মিথিলা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় আরবী।জায়ানের কাছে গিয়ে বলে,’ উনার জানাজা’র ব্যবস্থা করুন জায়ান।’
জায়ান নিঃশ্বাস ফেলে বলে,’ তুমি ঘরে যাও।আমি সব ব্যবস্থা করছি।’
অতঃপর শামিম সাহেবের মৃ’তদেহটা জায়ান, ইফতি আর ফাহিম ধরে ভালোভাবে রাখল।সাথি বেগম আর মিলি বেগম মিথিলাকে সামলাচ্ছেন।নূর,আলিফা দুজন মিলে আহানাকে।রাতটা সেইভাবেই কেটে গেল।পরেরদিন যথাসময়ে শামিম সাহেবের জানাজা দেওয়া হয়।মিথিলা আর আহানা আরাবীর কাছে গিয়ে অনেকবার ক্ষমা চান।মিথিলা নিজের কৃতকর্মের জন্যে অনেক অনুতপ্ত।শামিম সাহেবের মৃত্যুর পাঁচদিন পরেই মিথিলা আর আহানা আমেরিকা চলে যান।সবাই বারণ করেছিলো তাদের আমেরিকা যাওয়ার জন্যে।কিন্তু মিথিলা শোনেন নাহ কারো কথা।
______
সময় বহমান এইভাবেই কেঁটে যায় তিনমাস ।সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।এর মাঝে ফাহিম তার বাবা মাকে জানায় ও নূরকে ভালোবাসে আর নূরকে যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ে করতে চায়।ছেলের কথামতো তারা সম্বন্ধ নিয়ে যান সাখাওয়াত বাড়িতে।ফাহিম ভালো ছেলে।ফ্যামিলিও ভালো।লিপি বেগমও ভালো হয়ে গিয়েছেন।তাই আর দ্বিমত করলেন না কেউ।সেদিনই বাগদান সেরে ফেলা হয় ওদের।আর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইফতি আর আলিফার বিয়ে সাথেই ফাহিম আর নূরের বিয়ে হবে।শামিম সাহেবের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃ’ত্যুর কারনে ইফতি আর আলিফার বিয়ের তারিখ পিছিয়ে যায়।তার উপর এর কিছুদিন পরেই আলিফা আর আরাবীর মাস্টার্সের ফাইনাল এক্সাম এসে পরে।তাই আর হয়নি ওদের বিয়ে।একেবারে পরিক্ষা শেষেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবেন তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
_____
আজই আরবী আর আলিফার লাস্ট এক্সাম।এক্সাম শেষ করে আরাবী আর আলিফা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে নিজেদের প্রিয় মানুষদের।আরাবীর প্রেগ্ন্যাসির পাঁচমাস চলছে।মেয়েটা এখন অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়।এইযে একনাগাড়ে বসে পরিক্ষার খাতায় লিখতে লিখতে এখন ওর কোমড়ে প্রচন্ড ব্যথা করছে।তবুও মুখ ফুটে কিছু বলছে না মেয়েটা।আরাবী ব্যথাতুর মুখশ্রী দেখে আলিফা বিষয়টা আন্দাজ করতে পারল।আলিফা নরম গলায় বলে,’ তোর কি কষ্ট হচ্ছে?’
আরাবী মলিন হাসল।দূর্বল গলায় বলে,’ এইতো কোমড়টা একটু ব্যথা করছে।’
‘ তোর একটু ব্যথা মানে অনেকটা ব্যথা আমি জানি।দেখি এদিকে আয়।এখানটায় বোস।আমি ভাইয়াকে ফোন করছি।’
আরাবী ধরে করিডোরে রাখা একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিলো আলিফা।আরাবী বেঞ্চে বসে হালকা আওয়াজে বলে,’ তাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই।এমনিতেই লোকটা পুরো পাগল।দেখিস নি প্রতিটা এক্সামে আমার জন্যে পুরোটা সময় অপেক্ষা করত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।অফিস যেতো না সেদিন।আজও যেতো না।সেতো জরুরি মিটিং থাকায় গিয়েছে।এখন তুই ফোন করলে মিটিং ছেড়েছুড়েই চলে আসবে।’
‘ তবুও আরাবী তুই অসুস্থ।’
‘ কিচ্ছু হবে নাহ।আমি ঠিক আছি।’
‘ কিন্তু…..’
আলিফা কিছু বলবে তার আগেই দূর থেকে জায়ান আর ইফতিকে দেখে বলে উঠে,’ ওইতো ইফতি আর ভাইয়া এসে পরেছে।’
আরাবী আলিফার কথা শুনতে পেতেই সামনের দিকে দৃষ্টি রাখে।জায়ানের ঘার্মাক্ত চেহারাটা দেখে হাসল।লোকটা মনে হয় মিটিং শেষ করেই ছুটে চলে এসেছে।জায়ান দ্রুত পায়ে আরাবীর কাছে আসল।আরাবীর ব্যথাতুর মুখশ্রী নজরে আসতেই অস্থির হয়ে উঠে ও।জায়ান আরাবীর গালে হাত রেখে অস্থির গলায় বলে,’ কি হয়েছে?এমন দেখাচ্ছে কেন তোমায়?’
আলিফাই আগে হরবর করে বলে,’ ওর কোমড়ে নাকি ব্যথা করছে ভাইয়া।’
জায়ান ভয়ার্ত নয়নে তাকায়।এই মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হবার পর থেকে জায়ান যে ঠিক কতোটা ভয়ে থাকে ওকে নিয়ে তা বলার বাহিরে।আরাবী একটু টু শব্দ করলেও ও নিজেই ব্যাকুল হয়ে পরে।জায়ান হাটু গেরে বসল আরাবীর সামনে।তা দেখে আরাবী বলে উঠে,’ আরে কি করছেন?’
জায়ান ভ্রু-কুচকালো।আরাবীর কথায় পাত্তা দিয়ে বলে,’ কোথায় ব্যথা হচ্ছে?বেশি ব্যথা করছে?আমি রোজি আন্টির সাথে কথা বলে নিচ্ছি।এখান থেকেই সোজা তার কাছে যাবো আমরা।চেক-আপ করিয়ে আনি।’
এই লোকটা এতো পাগল কেন?ভাবে আরাবী।ওর একটু কিছু হলেই হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে ফেলে।আরাবী ঠোঁট উলটে বলে,’ এখনও এক সপ্তাহও হয়নি চেক-আপ করিয়েছি জায়ান।এটা সামান্য একটু ব্যথা করছে।চিন্তা করবেন না।বাড়িতে গিয়ে কোমড়ে টাইগার বাম দিয়ে ম্যাসাজ করেলেই ঠিক হয়ে যাবে।’
‘ কিন্তু তুমি….’
‘ কোন কিন্তু না।বাড়ি যাবো।ভালো লাগছে নাহ।ক্ষিদেও পেয়েছে।’
আরাবী ক্ষিদে পেয়েছে শুনে জায়ান আর কিছু বলল নাহ।অন্য সময় হলে আশেপাশে কোন রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতো।কিন্তু এখন জায়ান আরাবীকে বিন্দুমাত্র বাহিরের কোন খাবার খেতে দেয় নাহ।জায়ান নিজের হাত বাড়িয়ে দিল আরাবীর দিকে।তারপর নরম স্বরে বলে,’ চলো তাহলে।সাবধানে ঠিক আছে?’
আরাবী মুঁচকি হেসে জায়ানের হাতে হাত রাখে।তারপর পা বাড়ায় সামনের দিকে।জায়ান খুব সাবধানে আরাবীর হাত ধরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।আরাবী মুগ্ধ চোখে জায়ানকে দেখছে।জায়ানের ঘর্মাক্ত,ক্লান্ত মুখটা যেন জায়ানকে অন্যরকম সুন্দর লাগে।চোখ ধাধিয়ে যায় আরাবীর।এই লম্বা,চওড়া,শক্ত-পোক্ত দেহের অধিকারি সুদর্শন লোকটা ওর স্বামি।যে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে।জায়ানের ভালোবাসায় আরাবী মাঝে মাঝে অবাক হয়।কেউ কাউকে কিভাবে এতোটা ভালোবাসতে পারে।আরাবীও ভালোবাসে এই লোকটাকে।খুব খুব ভালোবাসে।লোকটার স্পর্শ, লোকটার শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণ সব সব ভালোবাসে।আর আজীবন এইভাবেই ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতে চায়।
#চলবে____________
ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আগামী পর্ব শেষ পর্ব হবে।ইতি টানা হবে এই গল্পের।