# হৃদয়ের _ অন্তরালে _ তুমি ♥♥
# পর্ব : ০৫
# লেখক : আয়ান আহম্মেদ শুভ
** ইতি মুখ মলিন করে মাহিরের রুম থেকে বের হবে ঠিক ওই মূহুর্তে মাহির ইতির হাত ধরে ফেললো । ইতি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে । মাহির মুচকি হেসে বললো
— আমি বললাম তাই মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিস
— হুম আমার কাছে সব সময় তোর হাসিটাই ইমপ্রটেন্ট আর কিচ্ছু না
— তাই আচ্ছা তুই যদি আমার মুখে হাসি দেখতে চাস তবে তোকে এখন মিষ্টি খেতে হবে
— মানে ? কিসের মিষ্টি
— আরে বোকা আজ সকালে চাকরির জন্য গিয়ে ছিলাম না
— ওহহহ হ্যা তো বল চাকরি হয়েছে তো ?
— আগ্গে হুম চাকরি হয়ে গেছে । তাই তো মিষ্টি নিয়ে এলাম
— ওহহহ
— হুম
✒ মাহির মিষ্টির প্যেকেট থেকে কয়েটকা মিষ্টি ইতিকে খাইয়ে দিলো । মিষ্টি খাওয়া শেষে ইতি মাহির কে বললো
— জানিস মাহির আমি হয়তো আর বেশি দিন তোর মেয়েকে আমার কাছে রাখতে পারবো না
— কিহহহ কেনো কি হয়েছে ?
— বাবা বাসা থেকে বিয়ের জন্য প্রচুর চাপ দিচ্ছে
— ওহহহহ
— হুমমমম , আচ্ছা আসছি আমি বাসায় কাজ আছে
— হুম যা তবে কাল সকালে একটু তারাতারি আসিস
— হুম সব কিছু তোর হাতে মাহির
** ইতির এই শেষের কথাটা মাহিরকে ভিষন চিন্তায় ফেলে দিলো । সব আমার হাতে মানে কি বোঝাতে চাইলো ও ?? যাই হোক এই সব চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিয়ে মাহির মালিহাকে নিয়ে নিজেদের মতো করে হাসি ঠাট্টা শুরু করলো । আজ সারা দিন মাহির তার কলিজাকে দেখতে পায়নি । তাই মাহির খুব আবেগ প্রবন হয়ে পরে
✒ মহূয়া উজ্জলের ব্যবহারে ভিষন কষ্ট পায় । মহূয়া সারা দিন মন মরা হয়ে থাকে । এই দিকে সন্ধের একটু আগে মহূয়াকে অবাক করে দিলো একটা ঘটনা । আচমকা মহূয়ার প্রচন্ড বমি বমি ভাব শুরু হয় এবং এক পর্যাযে মহূয়া বমি করে ফেলে । ইদানিং মহূয়ার শরিল খুব ক্লান্ত লাগে । মহূয়া বমির কারন সঠিক ভাবে না বুঝতে পারলেও মহূয়া এটুকু আঁচ ঠিকই করে ফেলেছে যে সে এখন প্রেগনেন্ট । তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মহূয়াকে প্রেগনেন্সি টেষ্ট করাতে হবে । মহূয়া তাই করলো । মহূয়া ফার্মেসির দোকান থেকে প্রেগনেন্সি টেষ্ট করিয়ে ফেলে । এবং মহূয়াকে অবাক করে দেয় প্রেগনেন্সি টেষ্টের রিপোর্ট । আসলে রিপোর্ট পজেটিভ । আর পজেটিব হবে নাই বা কেনো ? মহূয়া উজ্জলের সাথে অনেকবার শারিরিক সম্পর্কে মিলিত হয় । যার ফল আজ এই প্রেগনেন্সির রিপোর্ট । মহূয়া রিপোর্ট হাতে নিয়ে ভিষন চিন্তায় পরে গেলো । মহূয়ার ভাবনার বিষয় হচ্ছে উজ্জল কিভাবে নিবে বিষয়টা ? আদু কি উজ্জল খুশি হবে এই খবর পেয়ে ? না কি রাগ করবে ? তবে যাই হোক আজ মহূয়াকে সত্যির মুখ মুখি হতেই হবে । উজ্জল কি তাকে নিজের স্ত্রীর অধিকার দিবে ? নাকি প্রতারনা করবে ? আজ মহূয়া উজ্জলের থেকে সব কিছু জেনে নিবেই
** মহূয়া প্রেগনেন্সি রিপোর্ট নিয়ে উজ্জলের বাসায় চলে এলো । উজ্জল এখনও বিছানায় শুয়ে আছে । মহূয়া উজ্জল কে ডাকলো । কিছুক্ষন পরে উজ্জল বিছানায় ঢেলান দিয়ে উঠে বসলো । উজ্জল বিরক্তি কর কন্ঠে মহূয়াকে বললো
— কি হয়েছে এমন করে ডাকচ্ছো কেনো ?
— একটা গুড নিউজ আছে তাই
— কি গুড নিউজ ?
— আমি মা হতে চলেছি
— ওহহহ এটা আর নতুন কি ?
— আরে বোঁকা আমার পেটে তোমার সন্তান
— ওয়াট ???? এটা গুড নিউজ তোমার কাছে ? এটা ভেরি বেড নিউজ
— এই সব কি বলছো তুমি ?
— আমি সত্যি বলছি । আচ্ছা এই বাচ্চা আমার কি করে হয় ? এই বাচ্চা তো মাহিরেরও হতে পারে
— মাহিরের মানে ? তোমার কথা মতো তো আমি মাহিরের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্কে জরাইনি আর
— আমি কি বোঁকা ? তুমি বলবে আর আমি মেনে নিবো ? মাহির এর সাথে গোপনে , আমাকে না জানিয়ে যে কিছু করো নাই তার কি গ্যারান্টি আছে ? আর মাহিরের পাশে কি চুপ চাপ শুয়ে থাকতে না কি তুমি ? তুমি যেই ধরনের মেয়ে বাবা । এই বাচ্চা নিশ্চই মাহিরের নয়তো অন্য কারো । আমার না
— স্টপ উজ্জল প্লিজ স্টপ । অনেক বলেছো । এই বাচ্চা মাহিরের বা অন্য কারো না । এই বাচ্চা তোমার আর আমার । বাবা না একজন মা জানে যে তার পেটে যে বাচ্চা আছে তার বাবা আসলে কে
— আচ্ছা কাঁন্না কাটি বন্ধ করো । বাচ্চা যারই হোক তুমি বরং এই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো । এতে করে আমাদের দুইজনেরই ভালো
— না উজ্জল আমি এই বাচ্চা কোনো মতেই নষ্ট করবো না
— কেনো ?
— ডাক্টার বলেছে এই বাচ্চা নষ্ট করলে আমি আর কোনো দিন মা হতে পারবো না
— বাহ এটাতো গ্রেট নিউজ । এতে তো ভালোই হবে । আমরা দুজনের মজা নিতে পারবো । কোনো প্রবলেম হবে না
— আর ইউ মেড উজ্জল ?? এই বাচ্চার কিছু করতে গেলে আমার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
— ওহহহহ
— উজ্জল তুমি আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলে । এখন সময় এসেছে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার
— বিয়ে আর আমি ? কাকে বিয়ে করবো ?
— কাকে মানে ? আমাকে
— ওহহহ নো ওয়াট এ ফান । সোনা তুমি ভাবলে কি করে যে আমি তোমাকে বিয়ে করবো ? আরে আমি তো তোমাকে দাম দিয়ে কিনে এনেছি । তোমার শখ , ইচ্ছে পূরন করে আমার শখ , ইচ্ছে পূরন করেছি
— মানে ??
— মানে এই যে আমি তোমাকে শুধু মাত্র আমার ইচ্ছে পূরনের জন্য ব্যবহার করেছি । যেমন টা তুমি আমার কাছে এসেছো নিজের ইচ্ছে পূরন করতে । তুমি প্রতারক, মাহিরের মতো একজন ভালো লোকের ভালোবাসা , আবেগ , চোখের পানি , গর্ব সব নিয়ে খেলা করেছো । আর আমি তোমাকে বিয়ে করবো । হাহাহাহা এটা জোক্স ছাড়া আর কি বা হতে পারে
— উজ্জল এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করো না প্লিজ 🙏 আমি মরে যাবো 😭
— মরে গেলে তো ভালোই হয় এই সমাজ থেকে একজন পতিতা কমবে । আর আমি রেহাই পাবো তোমার এই অত্যাচার থেকে
— উজ্জল তুমি আমাকে পতিতা বললে ?
— হুম কারন তুমি তাই । আর তুমি যদি চাও আমার সাথে থাকতে তবে তোমাকে এই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে হবে । অন্যথায় তোমাকে বেরিয়ে যেতে হবে এই বাড়ি থেকে
— উজ্জল আমাকে বের করে দিও না প্লিজ আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই
— আচ্ছা এখন তুমি যাও আমার এই সব ঘেন ঘেন ভালো লাগে না
✒ উজ্জলের আজকের কথা গুলো মহূয়ার কলিজায় এসে লাগলো । মহূয়া কোনো দিন কল্পনাও করতে পারে নাই যে উজ্জল তাকে এমন করে ঠকাবে । তবে একটা সত্যি কথা হলো মহূয়া কিন্তু এই সব অবহেলা , অপমান , ধিঁক্কারই পাওয়ার যোগ্য । মহূয়া যেমন মাহিরকে ঠকিয়েছে । মাহিরের বিশ্বাস ভেঙেছে ঠিক তেমন মহূয়া যার উপর ভরসা করেছে সেই এখন তার বিশ্বাস , ভেঙে দিলো । প্রকৃতির নিয়মই এটা আজ যাকে অবহেলা করচ্ছো , যাকে ঠকাচ্ছো একদিন ঠিক ততটাই ফেরত পাবে তুমি । যাই হোক মহূয়ার এখন কাঁন্না করাছাড়া আর কোনো উপায় নেই ।।
✒ মাহির সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে । ওই দিকে মালিহা সেই গতকাল রাত থেকেই কেঁদে চলেছে । মাহির অনেক চেষ্টা করেছে মালিহাকে থামানোর কিন্তু মালিহা কোনো মতেই থামছে না । মাহির এখন ইতির জন্য অপেক্ষা করচ্ছে । অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পরেও ইতি এলো না । মাহিরকে অপেক্ষা করতে দেখে মাহিরের মা মাহিরকে বললো
— মাহির এখানে দারিয়ে আছিস কেনো ? অফিস যাবি না ?
— যাবো তো মা কিন্তু ইতি তো এলো না
— শুনেছি ইতিকে দেখতে আজ ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসবে কিন্তু
— ওহহহ কিন্তু কি মা ?
— ছেলের বাড়ির লোক তো আসবে কিন্তু ছেলেটা মোটেও ভালো না । ইতিও এই বিয়েতে রাজি না । তবে ইতির বাবা মা এই বিয়ে দিতে চায়
— থাক মা এটা ইতির পারিবারিক বিষয় এখানে আমরা কি বলবো বলো ?
— না মানে মাহির তোকে একটা কথা বলার ছিলো
— কি কথা মা বলো ?
— তুই তো জানিস ইতির সাথে তোর আগে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো । কিন্তু তুই তো রাজি ছিলি না । আমার খুব ইচ্ছে ইতি এ বাড়ির বউ হয়ে আসুক । তুই যদি বলিস তো আমি ওর বাড়ির লোকদের সাথে
— থাক মা আর বলো না । ইতি আমার বন্ধু হয় আর ইতিও আমাকে সব সময় বন্ধু হিসেবে জানে । প্লিজ বন্ধুত্বের ভিতরে এই সব এনো না
— ইতি তো তোকে খুশি করতেই এই কথাটা তখন বলে ছিলো । আসলে ইতি তোকে খুব ভালোবাসে । এই কথাটা আমার মুখের না । ইতিই বলেছে আমায়
— তোমারও না মা কি যে হয় মাঝে মাঝে । আচ্ছা আমার লেট হয়ে যাচ্ছে আমি অফিসে যাই । তুমি মালিহাকে একটু দেখে রেখো
✒ মালিহাকে মা এর কোলে দিয়ে তারাতারি বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম । মা কি সব পাগলের মতো বলছে । ইতি আমার বন্ধু । আর আমি বিবাহিত ছেলে । আমার একটা মেয়ে আছে । বিনা দোষে আমি একটা মেয়ের জিবন কেনো নষ্ট করবো ? আর আমি বললে হয়তো ইতি রাজি হবে কিন্তু জেনে শুনে এইজন কে ঠকাতে আমি চাই না । কিন্তু ইতি একটা খারাপ ছেলেকে বিয়ে করবে । এতে করেও তো ওর জিবন নষ্ট হয়ে যাবে । সেটাও আমি কি ভাবে মেনে নিবো ? ধূর এই সব হয় না । আমি বরং অফিসে যাই ।
** মাহির অফিসে চলে গেলো । অনেক দিন বাদে মহূয়ার কথা মনে পরে গেলো মাহিরের সাথে মহূয়ার করা প্রতারনার কথাও । এ জিবনে আর মাহির কাউকেই হতো বিশ্বাস করে উঠতে পারবে না । যাই হোক মাহির সারা দিন অফিস করে রাতের দিকে বাড়ি ফিরলো । বাসায় আসতেই মাহির ভিষন অবাক হয়ে গেলো । মাহির দেখলো…………………………
# চলবে……………………
( কেমন লাগলো পর্বটা ? ভালো লাগলেও জানান আর খারাপ লাগলেও জানাবেন )
# Happy Reding ♥♥