# হৃদয়ের _ অন্তরালে _ তুমি ♥♥
# পর্ব : ০৬
# লেখক : আয়ান আহম্মেদ শুভ
** বাসায় আসতেই মাহির ভিষন অবাক হয়ে গেলো । মাহির দেখলো ইতি একদম নতুন বউ এর বেশে বসে আছে মাহিরের রুমে । ইতির পাশে বসে ছিলো মাহিরের মা ও বাবা । মাহির প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিরের মা এর দিকে । মাহিরকে দেখে মাহিরের মা বললো
— মাহির তুই চলে এসেছিস !!! ( মা )
— হ্যা মা কিন্তু ইতি এখানে আর এমন সাজে বিষয় কি ? ( মাহির )
— ইতি ওর বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে এখানে ( মা )
— চলে এসেছে মানে ? এখানে কেনো আসলো ও ? আর বাড়ি থেকে ? আসলেই আমি কিছুই বুঝতে পাচ্ছি না মা ( মাহির )
— দেখ মাহির ইতি নিজের বাড়ি , পরিবারের সকলকে ছেড়ে এখানে চলে এসেছে শুধু মাত্র তোর উপর ভরসা করে ( বাবা )
— আমার উপর ভরসা করে মানেটা কি ? ওই ইতি আমি তোকে বলছি বাসা থেকে পালিয়ে চলে আয় ? না কি বলছি ওই ছেলেকে বিয়ে করিস না কোনটা ? ( মাহির )
— ………………… ( ইতি )
— দেখছো মা ওয় নিশ্চুপ হয়ে গেছে । এই মেয়ে আমাদের ঝামেলায় ফেলার জন্যই এই সব করচ্ছে মা ( মাহির )
— মাহির ও আমাদের ঝামেলায় ফেলতে এসব করে নাই । ও এই বিয়ে করতে চায় না তাই এসব করেছে । আর আমি তো আগেই তোকে বলেছি ইতি তোকে ( মা )
— মা হইছে আর বলো না । আমি এই বিষয়ে না কোনো কথা বলতে চাই আর নাই বা কোনো কথা শুনতে চাই । তোমরা এখন এখান থেকে যাও । আমি ইতির সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই ( মাহির )
* মাহিরের কথা মতো মাহিরের মা বাবা রুম থেকে বেরিয়ে যায় । মাহির ইতির সামনে এগিয়ে গিয়ে ইতিকে বললো
— ইতি দেখ পাগলামি করিস না । এই ছেলেকে বিয়ে করতে না চাইলে করিস না । অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে কর । এখানে মানে আমাদের বাসায় বসে থেকে কি লাভ ?
— হুম কিন্তু আমি অন্য কোনো ছেলেকেই বিয়ে করবো না । যদি বিয়ে করার হতো তবে অনেক আগেই করে ফেলতাম
— আচ্ছা জ্বালা তো !!! তুই বিয়ে করতে না চাইলে তোর বাবা মা কে সরাসরি বল । এখানে কি ? তুই তো নিজেও ফাঁসবি আর আমাকেও ফাঁসাবি
— ওই তোর কি মনে হয় আমি বাবা মা কে বলি নাই এই কথাটা ? ওনারা শুনছে না আমার কথা ।
— আচ্ছা দারা আমি তোর বন্ধু আমি বরং তোর বাবাকে কল দিয়ে বলি তুই এই ছেলে কে অনয কোনো ছেলেকে বিয়ে করবি । আর তোর জন্য ভালো ছেলে যেনো তারা দেখে । ওকে
— ………………….. ( নিশ্চুপ )
** ইতি মাহিরের কথা গুলো চুপ চাপ শুনচ্ছে । ইতির ধৈর্য্যের বাঁধ এই বার ভেঙে গেছে । যেই কথাটা কোনো দিন মাহিরকে বলার সাহস ইতি পায় নাই আজ সেই কথাটাই ইতি বলবে । মাহির পকেট থেকে ফোন বের করে ইতির বাবার নাম্বারে ডায়েল করতেই ইতি বিছানা থেকে ধুম করে উঠে দারিয়েই মাহিরকে
— ঠাসসসসসসসস ,,, ঠাসসসসসসসস এটিটিউড দেখাস তুই হ্যা এটিটিউড । কেনো ইতিহাসে কি এই প্রথম নাকি যে বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ে করা যায় না । একজন ভালো স্বামী বন্ধুর মতো হয় । যার সাথে নিজের সমস্থ কথা শেয়ার করা যায় । আমি বিয়ে করতে চাইলে আরও আগেই করতে পারতাম । যখন তুই মহূয়াকে বিয়ে করেছিস । নিজের ভালোবাসা আরেক জনের হাতে তুলে দিয়েছি । সেদিন ও কিছুই বলতে পারি নাই তোকে । আশায় ছিলাম তুই আমাকে বুঝবি । আমার মনের কথা তুই ঠিক বুঝতে পারবি । আরে তুই কি পাথর নাকি রে ? যে আমার অনুভূতি গুলো তোর হৃদয়ে পৌঁচ্ছালো না । মহূয়াকে নিয়ে নিজের সুখের সংসার তৈরি করলি তুই । আর আমি নিরবে কেঁদে কেঁদে নিজের জিবনের বাকি পথটা একাই চলার সিধান্ত নিলাম । আর আজ যখন মহূয়া তোকে ছেড়ে দিলো । আমি তখন তোকে আবার ফিরে পেতে চাই । আর তুই কি না । আল্লাহা । যাই হোক তোকে হয়তো থাপ্পর মারাটা আমার উচিত হয় নাই । কিন্তু নিজের রাগকে আর কন্ট্রল করতে পারি নাই । কথা দিলাম আমি আর জিবনেও তোর সামনে আসবো না আর কোনো দিনই তোকে নিজের মনের কথা জানাতে এসবো না । সারা জিবনের মতো চলে যাচ্ছি তোর জিবন থেকে । তবে একটা কথা বলতে চাই মাহির আমার হৃদয়ের অন্তরালে তুই ছিলি আর থাকবি । গুড বাই ফর এবার
✒ মাহির গালে হাত দিয়ে শুধু মাত্র ইতির দিকে তাকিয়েই ছিলো । ইতি এরকম বিহেব করবে তাই সাথে সেটা মাহির কোনো দিনই কল্পনাও করে নাই । ইতি এমন মেয়েই না যে এতোটা সহজে নিজের কথা গুলো বলবে । সব চেয়ে অবাক করার বিষয় হলো ইতি আজ মাহিরের গা এ হাত তুললো । যে ইতি মাহিরের কষ্ট কোনো দিন সহ্য করতে পারে নাই । সেই ইতি আজ মাহিরকে আঘাত করলো । যাই হোক মাহির বোকার মতো দারিয়ে আছে । ইতি মাহিরের পাশ দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে গেলো । মাহির গাল থেকে হাত নামিয়ে ইতিকে পিছন থেকে ডেকে বললো
— ইতি আমার একটা কথা শোন প্লিজ যাস না প্লিজ
— কি বলবি বল ?
— সত্যি কি তুই সব জেনে শুনে আমার সাথে বিয়ের সম্পর্কে জরাতে চাস ?
— হ্যা চাই আর কিভাবে বলবো আমি ?
— ইতি একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেছিস কখনও ? আমি বিবাহিত ছেলে আমার একটা মেয়ে আছে । আর তুই একটা অবিবাহিত মেয়ে । কেনো জেনে শুনে নিজের জিবন নষ্ট করচ্ছিস ?
— তুই বিবাহিত বলে কি হয়েছে ? আমার ভালোবাসা তো তোর প্রতি সেই জন্য মোটেও কমে নাই । বরং আরও বেড়েছে । তোর মেয়ের প্রতি তোর ভালোবাসা দেখে তোর প্রতি শ্রদ্ধা বোধ আরও বেড়ে গেছে । আর আমি তোর সাথে নিজের জিবন জরালে আমার জিবন মোটেও নষ্ট হবে না বরং আমরা দুজনে মিলে মালিহাকে মানুষ করবো
— ইতি আমি নিজের কথা কখনই ভাবি নাই । আমি মালিহার কথাই সব সময় ভেবেছি । তোকে যদি আমি বিয়ে করি তা হলে প্রথম প্রথম তুই হয়তো মালিহাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসবি কিন্তু পরবর্তীতে তুই ওকে অবহেলা শুরু করবি । যা আমি কখনই মেনে নিতে পারবো না । আর এমনিতেই যখন তোর বেবি হবে তখন মালিহার প্রতি আমার ভালোবাসাও কমে যাবে । আর আমি তা কখনই চাই না । ইতি আমরা বন্ধু হিসেবেই ভালো আছি । এর থেকে বেশি কিছু নাই বা হলাম
— এটাই কি তোর ফাইনাল ডিসিসন ?
— হুম
— ওকে বায়
✒ ইতি হন হন করে চলে গেলো মাহিরের বাসা থেকে । মাহির সোফার উপর নিশ্চুপ হয়ে বসে পরলো । ভেবে পাচ্ছে না মাহির এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত । ইতি কি কোনো উল্টা পাল্টা কাজ করে ফেলবে ? আচ্ছা ইতিকে যদি আমার জিবন সঙ্গি করে নেই তবে কি আমি আবারও ঠকবো ? মহূয়ার মতো কি ইতিও আমাকে ঠকাবে ? আমার বিশ্বাস ভাঙ্গবে ? যাই হোক মাহির সোফা থেকে উঠে রাতে আর কিচ্ছু খেলো না । মালিহাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো । কাল ফ্রাইডে সেই জন্য অফিস বন্ধ । মাহির সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মালিহাকে খাবার খাওয়াতে থাকলো । কিছুক্ষন বাদে মাহির অনুভব করলো ইতির উপস্থিতি । মাহির নিজের রুম থেকে বেড়োতেই দেখতে পেলো ইতি ওর মা বাবা কে নিয়ে এসেছে । ইতির মা বাবা মাহিরের মা বাবার সাথে কথা বলছে । ইতিকে দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে যে ও স্বাভাবিক নেই । একটু অন্যমনস্ক লাগচ্ছে ইতিকে । যাই হোক মাহির দেখতে পেলো ইতি মাহিরের রুমের দিকেই আসছে । মাহির ইতিকে আসাতে দেখে দরজা থেকে সরে গেলো । ইতি মাহিরের রুমে এসে মাহিরকে উদ্দেশ্য করে বললো
— মালিহাকে নিয়ে তোর চিন্তা তাই তো
মাহির কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না । মাহির বললো
— হুমম
— এই নে তোর সমস্থ চিন্তার অবসান করিয়ে দিলাম
* ইতি নিজের কথা শেষ করতেই মাহিরের দিকে কিছু কাগজ ছুড়ে দিলো । মাহির টেবিলের উপর থেকে কাগজ গুলো নিজের হাতে তুলে নিলো । মাহির কাগজ গুলো খুলতেই ভিষন অবাক হয়ে গেলো । মাহির অবাক চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে বললো
— এই সব কি করেছিস তুই ?
— কেনো ? ভূল কি করেছি ? আমি প্রমান করেছি যে আমি তোকে আর মালিহাকে প্রচন্ড ভালোবাসি আর কোনো দিন তোদের কাছ থেকে দূরে যেতে চাই না
— ইতি তাই বলে তুই এতো বড় একটা কাজ করবি । আমাকে একটা বার কেনো বললি না তুই ? ( ইতির হাত ধরে )
— হাত ছাড় মাহির । আগে বল এখন কি আমি তোর বউ হওয়ার যোগ্য ? না কি এখনও কোনো পরিক্ষা দিতে হবে । তোকে ভালোবাসার ?
— চুপ একদম চুপ তোকে কোনো পরিক্ষা দিতে হবে না । আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তু ইতি তুই যদি আবার মহূয়ার মতো আমাকে ছেড়ে যাস ? আবার আমাকে একা করে দিস । সেই জন্যই তোকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছি রে । বিশ্বাস কর আমি কখনই চাইনি তুই আমার জন্য এমন একটা কাজ করবি । একজন নারীর ইচ্ছে থাকে মা হবার কিন্তু তুই নিজের সেই ইচ্ছে
— বিসর্জন দিলাম । তবুও তোকে চাই ( জরিয়ে ধরে )
** মাহিরের আর কিচ্ছু বলার ভাষা নেই । মাহির চুপ হয়ে দারিয়ে আছে । ইতি মাহিরকে জরিয়ে ধরে কাঁন্না করচ্ছে । ইতি মাহিরকে বললো
— মাহির তুই তো জানিস আমি আর চাইলেও কোনো দিন মা হতে পারবো না । তাই তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো প্লিজ কথা দে আজ আমি যা চাইবো তা দিবি তুই
— হুম কথা দিলাম তুই যা চাইবি তাই দিবো আমি
— যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেনো মালিহাকে কোনো দিন জানতে দিবি না যে আমি ওর আসল মা না । ওকে আমি আমার মেয়ের পরিচয়ে মানুষ করতে চাই । আমার এই ইচ্ছেটা তুই পূরন করবি ? কথা দে
— ধূর পাগলি মালিহা যেমন আমার মেয়ে ঠিক তেমন তোর মেয়ে । ওর উপর যেমন আমার অধিকার আছে ঠিক ততটুকু তোর অধিকার আছে ।
— হুম তবুও কথা দে প্লিজ
— কথা দিলাম মালিহা তোর আর আমার মেয়ে । আর মালিহা আসল মা তুই । গর্ভে রাখলেই মা হওয়া যায় না । মা হতে চাই ত্যাগ, দায়িত্ব যা মহূয়া কোনো দিন পালন করে নাই । তবে আমি তোর ভিতর দেখেছি মা হয়ে ওঠার সকল গুন । সেই জন্য মালিহা শুধু মাত্র তোর মেয়ে । আর ওর উপর তোর অধিকার আছে ।
— হুম
✒ মাহির আর ইতি নিজেদের কথা শেষ করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো । বিয়েটা আজই হয়ে গেলো কারন মালিহাকে দেখা শোনার জন্য মা এর খুব প্রয়োজন ছিলো । তাছাড়া মাহিরের মা বাবাও তাই চায় । মাহির চিন্তা করলো একবার নিজের জিবনের সিধান্ত নিজে নিয়ে চরম ভূল করে ছিলো সে । তাই এইবার মা বাবার সিধান্তেই মাহির রাজি হলো । মাহির নিজের জিবনকে আবারও একটা সুযোগ দিলো ।
✒ মহূয়া ভিষন দূর্যোগের ভিতর দিন পার করচ্ছিলো । সকালে বেলা উজ্জল ঘুম থেকে উঠে মহূয়াকে জ্বিগাসা করলো
— বাচ্চা নষ্ট করেছো ?
— না
— তা হলে বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে
— আমার সাথে এতো বড় প্রতারনা করলে তুমি !! তোমার থেকে মোটেও আমি এই জিনিসটা আশা করি নাই উজ্জল
— আশা তো আমিও করি নাই যে তুমি সত্যি সত্যি আমার বউ হওয়া জন্য উঠে পরে লাগবে
— আমি তোমার এই কাজ কর্মের জন্য আইনের কাছে যাবো । দেশে এখনও আইন আছে
— চুপ বেশি কথা বললে তোর ভিডিও ভাইরাল করে দিবো । এই সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবি না । ভেবেছিলাম তোকে রাখবো কিন্তু এখন আর না । বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে
* উজ্জল মহূয়াকে…………………………..
# চলবে…………………………..