হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ২৩

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

পর্ব~২৩

#ফাবিহা_নওশীন

🍁🍁
সকাল পেড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে।মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে।পুলিশ সবরকম চেষ্টা করছে।
হৃদ আর শুভ্রার পাপা হৃদকে এদিক সেদিক খোজছে।তারা কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে ফিরেছে।শুভ্রা রোজের কাধে হেলান দিয়ে বসে আছে।খাওয়া নেই, টেনশন করার কারনে শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে।
হৃদের মাম্মা,দাদি,নানি,বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।

রোজ হটাৎ বলে উঠে,
—–ভাইয়া!!!

সবাই দরজার দিকে চোখ দিলো।হৃদ দাড়িয়ে আছে।ওকে বিধ্বস্ত লাগছে।চুল এলোমেলো,মুখ ফ্যাকাসে শুকিয়ে গেছে,শার্টের দুতিনটা বোতাম খোলা,এক হাতা উঠানো আরেকটা নামানো, হাতে গায়ের কোর্ট ফ্লোর ঘেষে আছে।শুভ্রা ঢলতে ঢলতে উঠে দাড়িয়ে হৃদের কাছে গিয়ে হৃদকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিলো।তারপর বিরবির করে কিছু একটা বলছে।
কান্নার কারণে কথা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না।
শুধু বুঝা যাচ্ছে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে?

হৃদের মনে হাজারো অভিমান জমে থাকলেও শুভ্রার কান্নার কাছে হার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।হৃদের মন গলে যাচ্ছে।একহাত শুভ্রার পিঠে রাখে।পুরো পরিবার প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে হৃদের দিকে চেয়ে আছে।

হৃদ সবার দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে নিলো অপরাধীর মতো।হটাৎ শুভ্রা শরীর ছেড়ে দিলো।হৃদ শুভ্রাকে দু’হাতে ধরে ফেললো।
সবাই দৌড়ে এলো।
হৃদ শুভ্রাকে কোলে তুলে নিলো।শুভ্রার পাপা মাম্মা বিচলিত হয়ে পড়লো।

হৃদের পাপা বললো,
—–রিলেক্স এভ্রিওয়ান।অতিরিক্ত টেনশনে সেন্স হারিয়েছে।হৃদ ওকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দে।তারপর ফ্রেশ হয়ে নে।
বাকি কথা পরে হবে।

হৃদ শুভ্রাকে উপরে নিয়ে গেলো।বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর চোখে মুখে পানি দিচ্ছে।
শুভ্রা তবুও চোখ খোলছেনা।হৃদ ফ্রেশ হয়ে এলো।শুভ্রার পাশে বসতেই শুভ্রা চোখ মেললো।শুভ্রা চোখ খোলে হৃদকে পাশে বসে থাকতে দেখে উঠে বসতে চাইলেই হৃদ হাতের ইশারায় বাধা দেয়।
—–একদম উঠবিনা।শুয়ে থাক।আমি রুমে এসে যেনো দেখি এভাবেই আছিস।

শুভ্রা কিছু বলতে চাইলে হৃদ আংগুল নিজের ঠোটে রেখে বললো,
—–শিসসস..কোনো কথা নয়।

হৃদ ধীরপায়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।সবাই হাজার প্রশ্ন নিয়ে ওকে ঘিরে ধরবে।
হৃদ নিচে যেতেই শুভ্রার পাপা ওর সামনে এসে দাড়ালো।হৃদ সবার উদ্দেশ্যে বললো,শুভ্রার জ্ঞান ফিরেছে।

শুভ্রার পাপা বললো,
—–ব্যাপার কি তোমার হৃদ?বাড়ির সবাইকে টেনশনে ফেলে সারারাত কোথায় ছিলে?এমন ছেলেমানুষী তোমার কাছ থেকে আশা করি নি।শুভ্রার সাথে এমনটা কি করে করতে পারলে?মেয়েটা আমার শেষ হয়ে যাচ্ছিলো তোমার চিন্তায়।গতকাল থেকে একটা দানাপানি মুখে নেয়নি।আমি অনেক ভরসা করে শুভ্রাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি আর তুমি এই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলে?

হৃদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রার মাম্মা সামনে গিয়ে বললো,
—-আহ চুপ করো তো।এসব পরে বলতে পারবে।
আপু(হৃদের মাম্মা)হৃদকে খেতে দেও।

হৃদের মাম্মা ছেলেকে টেবিলে নিয়ে বসালো।হৃদ টেবিলে বসে বললো,
—–তোমাদের সবাইকে টেনশনে ফেলার জন্য দুঃখীত।কিন্তু আমি অনেক অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম ইনফ্যাক্ট এখনো আছি।কি হয়েছে এটা কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করোনা আমি বলতে পারবোনা।ফেসে গেছি।এর থেকে বেরুতে পারছিনা।এ নিয়ে প্লিজ কেউ আমাকে প্রশ্ন করোনা।আমার সমস্যা আমাকে বুঝে নিতে দেও।

আর হ্যা কাকাই আমি শুভ্রাকে কষ্ট দেইনি।আমি ওর সবকিছুর যথেষ্ট কেয়ার করি।যা কষ্ট দেওয়ার ছোটবেলায় দিয়েছি।
ছোটমা শুভ্রার জন্য খাবার পাঠাও।

শুভ্রার মাম্মা মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে গেলো।

হৃদকে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করে নি।হৃদের পাপা প্রশ্ন করতে চাইলেও হৃদের মাম্মা ইশারায় না করে।

~~~~~

হৃদ গার্ডেনে বসে আছে।ওর পাপা ওর
কাছে গিয়ে বসলো।তারপর কাধে হাত রেখে বললো,
—–জানিনা কি প্রব্লেমে আছিস।জানতেও চাইনা।শুধু বলবো সব সমস্যার সমাধান আছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করে ফেল।যদি শুভ্রার সাথে কোনো সমস্যা হয় তাহলে দুজনে একসাথে বসে সমস্যা নিয়ে কথা বল।
দু’জন দু’জনের ইগোকে একদিনের জন্য অন্যপাশে রেখে মন খোলে কথা বল।
হৃদ পাপার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে শায় দিলো।
হৃদের পাপা মুচকি হেসে হৃদের চুল এলোমেলো করে দিয়ে উঠে গেলো।

.
.

হৃদ সন্ধ্যায় রুমে গিয়ে শুভ্রাকে রুমে পায়নি।শুভ্রাকে ঘরে না পেয়ে হৃদ কিছুটা টেনশনে পড়ে যায়।তারপর ছাদের দিকে এগিয়ে যায়।
ছাদে ঠান্ডা বাতাস বইছে।হৃদের পাতলা শার্ট ভেদ করে ঠান্ডা বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে।
—–বাবারে এত ঠান্ডা কেন?

শুভ্রা রেলিঙ ধরে চোখের পানি ফেলছিলো।হৃদের কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলো।
শুভ্রার জামা ওড়না তীব্র বাতাসে উড়ছে।হৃদ শুভ্রার পাশে গিয়ে দাড়ালো।তারপর দুজনের মধ্যে নীরবতা।শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দও যেনো বাতাসের শব্দের কাছে হার মানছে।

শুভ্রা ঘুরে হৃদের মুখোমুখি হয়ে বললো,
—-তুমি সব ইচ্ছে করে করেছো তাইনা?আমাকে টেনশন দেওয়ার জন্য,কষ্ট দেওয়ার জন্য?

হৃদ ডান হাতে ব্রু চুলকে বললো,
—–নাহ,,তোমার তো টেনশন করার কথা না,কষ্ট পাওয়ার কথাও না।

—–আচ্ছা,তাহলে কার কষ্ট পাওয়ার কথা?পাশের বাড়ির মেয়ে বা বউয়ের?

হৃদ চুপ করে রইলো।শুভ্রার এমন প্রশ্নের উত্তর নেই।
শুভ্রা হৃদের নীরবতা দেখে হৃদকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর আবারো কেদে দিলো।শব্দ করে কাদছে।

হৃদ বিচলিত হয়ে বললো,
—–শুভ্রা কাদছো কেন?

শুভ্রা কাদতে কাদতে বললো,
—–তুমি অনেক খারাপ।আগের মতোই খারাপ রয়েছো।একটুও ভালো হওনি।আমাকে তুমি মানুষ মনে করোনা?আগের মতোই কষ্ট দিচ্ছো।আমার কি কষ্ট হয়না?কেন এমন করো আমার সাথে?তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?

হৃদ শুভ্রার পিঠে হাত রেখে বললো,
—–তুমি তো বললে আমি ফিরে না এলেই খুশি হতে।

শুভ্রা হৃদকে ছেড়ে বললো,
—–আমি তো রাগের মাথায় বলেছি।কোনটা মনের কথা আর কোনটা রাগের কথা সেটা কি তুমি কখনো বুঝবে না।

—–জানিনা,,
তবে আমার খুব কষ্ট লেগেছিলো তোমার ওই কথা শুনে তাই ভেবেছিলাম দূরে চলে যাবো কিন্তু পারিনি তাই আবার ফিরে এসেছি।
নিজের জন্যই ফিরে এসেছি।আমি আসলে আর পারবোনা তোমাকে ছাড়া থাকতে।

শুভ্রা আবারো কেদে হৃদকে জড়িয়ে ধরলো।
—–আমিও পারবোনা।গতকাল আমি বুঝেছি তোমাকে ছাড়া আমার একটা দিনও চলবে না।আমি থাকতে পারবোনা।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।

হৃদ শুভ্রাকে ছাড়িয়ে চিলেকোঠার ছাদে নিয়ে গেলো।
তারপর শুভ্রাকে ওর বরাবর বসালো।
—–দেখ শুভ্রা এখন এখানে আমরা দুজন আছি।এখন আমরা কিছু সময়ের জন্য আমাদের ইগো একসাইডে রেখে মনের ভিতরের জমানো কথাগুলো বলবো।একে অপরের প্রতি যত অভিযোগ,রাগ,ক্ষোভ আছে সব একে একে বলবো।
লেডিস ফার্স্ট।

শুভ্রা প্রথমেই বললো,
—–সরি বলো।

হৃদ শুভ্রার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো,
—–সে নাহয় বলবো কিন্তু কিসের জন্য সেটা বল।

শুভ্রা চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—–তুমি আমাকে একবারো সরি বলোনি।আমি তোমার কাছে একটা সরি আশা করেছিলাম।আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে বলো ছোট বেলায় তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি এর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দে।
কিন্তু তুমি একবারো সেটা বলোনি।সরি না বলেই প্রপোজ করে দিলে।আর এইজন্য আমি তোমাকে একসেপ্ট করতে পারছিলাম না।

হৃদ বসে বসেই আরেকটু এগিয়ে বললো,
—–আরে আগে বলবি তো সরির বন্যা বানিয়ে দিতাম।

—–কেন বলবো?তুমি তো ঢং করে বলে বেড়াও আমাকে রগে রগে চিনো?

——তোর রগে একটু সমস্যা আছে তাই কিছুকিছু বুঝা যায়না।

শুভ্রা হৃদের এই কথাটা শুনে হৃদকে আবারো মারতে শুরু করলো।

.
.

হৃদ বাম হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।শুভ্রা হৃদের বুক বালিশ বানিয়ে শুয়ে আছে।শুভ্রার ওড়না দিয়ে যতটুকু পেরেছে দুজনের শরীর ঢেকে নিয়েছে।হৃদের ডানহাত শুভ্রার পিঠের উপরে।
দীর্ঘ সময় একে অপরের প্রতি জমে থাকা রাগ,অভিযোগ সব প্রকাশ করেছে।একে অপরকে সরি বলেছে।মিটিয়ে নিয়েছে সব রাগ, অভিমান, ক্ষোভ।
দুদিনের ক্লান্তি নিয়ে ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকার প্রশান্তি নিয়ে দুজন নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে।

.
.

রোজ শুয়ে শুয়ে অরিত্রের ফেসবুক প্রফাইল চেক করছে।প্রোফাইল পিকচার আগেরটাই আছে।এতদিনেও চেঞ্জ করে নি।ওর প্রতিটি ছবিতে হাত বুলিয়ে দেখছে।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।রোজ ফোন রেখে চোখের পানি মুছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো।

“হৃদ তোমাকে একটা কথা বলার আছে।”
শুভ্রা হৃদের টাই লাগাতে লাগাতে বললো।হৃদ এতক্ষণ শুভ্রাকে দেখায় ব্যস্ত ছিলো।
—–হ্যা বলো।

শুভ্রা টাই লাগানো শেষ করে বললো,
—–জানি কথাটা শুনে রাগ করবে তবুও বলছি।প্লিজ রাগ করোনা।আমার পুরো কথাটা শুনো।
হৃদের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে।
রোজ ভালো নেই।ও শুধু ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে।আগের চেয়ে নরমাল হয়েছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে এখনো কষ্ট পাচ্ছে।আমি বলছি কি…

হৃদ শুভ্রার কথা শেষ হওয়ার আগেই বললো,
——ডোন্ট টেল মি আমাদের অরিত্রের সাথে কথা বলা উচিত।

——একবার বললে কি এমন ক্ষতি হবে?রোজের খাতিরে অন্তত একবার কথা বলায় যায়।জাস্ট একবার।

হৃদ কিছু একটা ভাবলো তারপর বললো,
—–ওকে।আমি ওর সাথে কথা বলবো।

—–তুমি একা কথা বলবেনা।আমিও তোমার সাথে যাবো।

হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে বললো,
—–ওকে ফাইন।

সবাই একসাথে নাস্তা করছে।হৃদ রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
——ভার্সিটি যাবি?

রোজ উত্তর দিলো।
—–না ভাইয়া,আজকে ক্লাস নেই।

—–তাহলে আমার সাথে অফিসে চল।অনেকদিন অফিসে,ওয়ার্কশপে যাস না।পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটা শিখে রাখা ভালো।

সবাই শায় দিলো।রোজ বললো,
—–আচ্ছা,আমি রেডি হয়ে আসছি।

হৃদ শুভ্রাকে বললো,
—–তুমি যাবে?

শুভ্রা মুচকি হেসে বললো,
—–হ্যা যাবো।
তারপর রোজকে বললো,
—–দাড়া আমাকেও রেডি হতে হবে।

সবাই হৃদ আর শুভ্রাকে দেখে আস্বস্ত হলো।পাশাপাশি রোজকে অফিসে নেওয়ার বিষয়টিও ভালো লাগলো।

হৃদ শুভ্রাকে ডেস্কে ডেকে পাঠালো।
—–শুভ্রা অরিত্র এখন লেকের পাশে আছে।ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলি চল।
দুজনেই অরিত্রের সাথে কথা বলার জন্য বেরিয়ে পড়লো।

অরিত্র একাই পা ভিজিয়ে বসে আছে।ওর সাথে কেউ নেই।দৃষ্টি ওর অন্যমনস্ক।
শুভ্রা আর হৃদ ওর পাশে গিয়ে দাড়ালো।
শুভ্রা ডেকে উঠলো।
—–অরিত্র!!

অরিত্র চমকে শুভ্রার দিকে চেয়ে আরো একবার চমকে গেলো হৃদকে দেখে।অরিত্র উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–শুভ্রা তোমার আবার কি চাই?

শুভ্রা বললো,
—–আমার না হৃদের।

অরিত্র হৃদের দিকে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।হৃদ বললো,
—–তোমাকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো ভাবতাম।কিছুদিন আগেও আমাদের মধ্যে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো।রোজের সাথে ব্রেকাপ করেছে,ওর ইমোশন নিয়ে খেলেছো এস এ ব্রাদার আমি তোমাকে কিছুই বলিনি।আর এর কারণ ছিলো রোজ।কিন্তু তুমি এখন যেটা করছো তার জন্য আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে কথা বলবোনা।আমার বোনকে ফলো কেন করছো?
শুভ্রার ভাষ্যমতে তুমি এখনো রোজকে ভালোবাসো বাট আই ডোন্ট থিংক সো।কিছু ছেলের ক্যারেক্টারই এমন থাকে।কয়েকদিন পর পর গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে তারপর যখন ফ্রি থাকে এক্সদের ফলো করে মন ভরায়।তুমিও ঠিক ওই ক্যারেক্টারের ছেলে।মেয়েদের টিস্যু মনে করো?তোমাকে দেখে তো এতটা বাজে ছেলে মনে হয়নি কিন্তু তুমি তো গিরগিটি।মুহূর্তেই রং পাল্টে ফেললে।ব্রেকাপ হয়েছে ভালো কথা ওর পেছনে পেছনে ঘুরছো কেন?বাজে নজর কেন দিচ্ছো আমার বোনের উপর? কি উদ্দেশ্য তোমার? কি চাইছো?

অরিত্র চুপচাপ হৃদের কথাগুলো হজম করে নিলো।তারপর শান্তকন্ঠে বললো,
—–আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই।আর না আমি রোজের উপর বাজে নজর দিচ্ছি আর না আমি রোজকে ফলো করছি।

——শাট আপ,একদম মিথ্যা বলবেনা।আমার বোনের দিকে যদি কোনো কুনজর দেওয়ার চেষ্টা করো আমি তোমাকে ছাড়বোনা।

শুভ্রা ভাবছে,, হায় আল্লাহ একে আমি কেন আনলাম।প্যাচ লাগাতে না খেলাতে?

—–কুনজর! তখন থেকে কি বলছেন?কি বলতে চাইছেন?আমার দ্বারা রোজের কোনো খারাপ হবেনা।নিশ্চিত থাকুন।

—–যা খারাপ করার তো করেই দিয়েছো।আর এখন কি চাইছো বুঝতেই পারছিনা।
তুমি আমার বোনের ইমোশন নিয়ে খেলেছো।আমার বোনটা বদলে গেছে।চুপচাপ হয়ে গেছে।ওকে আমরা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি আর তুমি আবার ওর পেছনে লেগেছো।কি চাও তুমি ও মরে যাক?তাহলে শান্তি পাবে?

—–ভাইয়া!! (আতংকিত হয়ে)

হৃদ অরিত্রের কলার চেপে ধরলো,
—–তোমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন ওর মরার কথা শুনে? ও তো মরেই গেছে।মেরে ফেলেছো তুমি।কেন ওর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছো?

অরিত্র আর সহ্য করতে না পেরে বললো,
—–আমি কোনো অভিনয় করিনি।সত্যিকারের ভালোবেসেছিলাম।আজো বাসি।রোজ একা মরেনি আমিও জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছি।

শুভ্রা আর হৃদ দুজনেই শকড।
হৃদ অরিত্রের শার্টের কলার ছেড়ে দিলো।হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে অরিত্রকে জিজ্ঞেস করলো,
—–তাহলে কেন এ লুকোচুরি?

হৃদের দিকে চেয়ে অরিত্র চিতকার করে বললো,
—–আপনার মায়ের জন্য।আপনার ফ্যামিলির জন্য।আপনার মা আর ফ্যামিলির অন্যায়ের জন্য আমরা দুজন কষ্ট পাচ্ছি।

হৃদের মাম্মার নামে অরিত্রের মুখে এমন কথা শুনে হৃদের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।হৃদ অরিত্রের দিকে তেড়ে গেলে শুভ্রা হৃদকে আটকে দেয়।
—-শুভ্রা তুই শুনিস নি ও কি বললো আমার মাম্মাকে নিয়ে?
ওকে আমি…

শুভ্রা হৃদকে গাড়ির দিকে ঠেলে নিয়ে গেলো।
——হৃদ তুমি গাড়িতে বসো।অরিত্রের সাথে তোমার কোনো কথা বলতে হবেনা।যাও।
হৃদ হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর মাম্মা কোনোদিন কারো সাথে অন্যায় করতে পারেনা।
—–হৃদ আমি অরিত্রকে দেখছি।

—–তুই কি দেখবি এর পরে ওর সাথে কোনো কথাই থাকতে পারেনা।

—–থাকে।ও আমাদের ফ্যামিলির উপর এত বড় অপবাদ দিয়েছে তার প্রুফ দিতে হবেনা।এমনি এমনি ওকে ছেড়ে দেবো?

শুভ্রা অরিত্রকে বললো,
—–দেখো তুমি আমার মামনি আর আমার ফ্যামিলির উপর যে কালি লাগালে তার প্রুফ তোমাকে দিতেই হবে।তোমাকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করতে হবে।তুমি বাধ্য।এর সেটা পুরো পরিবারের সামনে হবে।এমনও হতে পারে কোনো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং চলছে।সবটা ক্লিয়ার করা দরকার।আর রোজেরও রিজন জানা দরকার ব্রেকাপের।অধিকার আছে ওর।
আমরা ছোট থেকে মামনিকে দেখে আসছি সে কারো সাথে অন্যায় করতে পারেনা।লিখিত দিয়ে দেবো তোমাকে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here