হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ২৪

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

পর্ব-২৪(রহস্যভেদ)

#ফাবিহা_নওশীন

🌿🌿
শুভ্রা বিছানার মাঝখানে বসে গভীর ভাবনায় বিভোর।অরিত্রের সাথে কথা বলার পর ওর মাথা ভনভন করছে।কি হতে পারে, কি এমন ঘটনা,ওদের পরিবারের সাথে কি অরিত্রের কি সমস্যা।হটাৎ শুভ্রার খেয়াল হলো ও এতটাই ভাবনায় বিভোর যে ভাবতে ভাবতে নলহ কামড়ে ওর এত সুন্দর নখটা এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে।
শুভ্রা অসহায় ভাবে নখের দিকে চেয়ে আছে।
হৃদ হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় বসে পড়ল।এতক্ষণ সে বারান্দায় পাইচারি করে ভাবতে ভাবতে ব্রেইন আর পা ফুটোই ক্ষয় করে ফেলেছে।

—-শুভ্রা কি এমন হতে পারে বলতো ভাবতে ভাবতে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।পা অলরেডি ব্যথা হয়ে গেছে।

শুভ্রা নখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
—–আর আমি ভাবতে ভাবতে নখ ক্ষয় করে ফেলেছি।দেখো কি হয়েছে?
(নখ দেখিয়ে)

হৃদ শুভ্রার কান্ড দেখে হতবাক।
—–ওই আমি ভাবতে ভাবতে মাথা ফাটিয়ে ফেলছি,পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুই নখ দেখাচ্ছিস?
উফফফ,পাগল হয়ে যাচ্ছি।

শুভ্রা বললো,
—–এই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছো?আমার একমাত্র স্বামী পাগল হয়ে যাচ্ছে।এখন কি হবে আমার?তোমাকে তো মানসিক হসপিটাল আই মিন পাগলাগারদ পাঠাতে হবে আর এর জন্য পাবনার চেয়ে ভালো জায়গা আর হতেই পারে না।কিন্তু ওখানে কি সিট খালি আছে।দাড়াও আমি যোগাযোগের চেষ্টা করি।সবটা ডিটেইলস জানতে হবে।(চিন্তিত ভংগীতে)

হৃদ মুখ বাকিয়ে বললো,
—–সো ফানি!!!
ড্রামা কুইন।

শুভ্রা শব্দ করে হেসে দিলো।হাসি যেনো থামছেই না।হাসি থামিয়ে বললো,
—–আরে এত চিন্তা করোনা।মাথা ঠান্ডা করে ঘুমাও।আগামীকাল সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।তারপর আমি ওই অরিত্রকে দেখে নিবো।
(ওর জন্য আমার শখের নখের বারোটা বেজেছে মনে মনে)

হৃদ শুতে শুতে বললো,
—–আমিও ওকে দেখে নিবো ওর জন্য আমি…
এটুকু বলেই থেমে গেলো।

শুভ্রা হৃদের পাশে শুয়ে বললো,
—-ওর জন্য কি?

—–কিছুনা।
হৃদ শুভ্রার কাধে মুখ গুজে ওকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো।তারপর মনে মনে বললো,
—–বউয়ের সাথে এতদিনে সব মান অভিমান ভেংগেছে,কই একটু ভালোবাসার কথা বলবো,একটু রোমান্স করবো তা না এখন মাথা ভো ভো করছে।

.

রোজ লিভিং রুমে বসে বসে টিভি দেখছে।তখনই হৃদ,শুভ্রা বাড়ির ভিতরে ঢুকলো ওদের পেছনে পেছনে অরিত্র।অরিত্রকে দেখে রোজের চোখ কপালে।
রোজ বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।তারপর হৃদ আর শুভ্রার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।অরিত্র রোজকে একবার দেখে চোখ নামিয়ে নিলো।
হৃদ মুচকি হেসে বললো,
—–মাম্মা,পাপাকে ডেকে আন।

রোজ কোনো কথা না বাড়িয়ে উপরে পা বাড়ালো।
শুভ্রা অরিত্রকে বসতে দিয়ে কিচেনে গেলো।সার্ভেন্টকে চা,নাস্তা দিতে বললো।তারপর বাকি সদস্যদের ডাকতে চলে গেলো।
.
.
.

পুরো ফ্যামিলি একজায়গায় জড়ো হয়েছে।অরিত্র সেখানে বসে কাচুমাচু করছে।
শুভ্রা বললো,
—-অরিত্র আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য আমাদের কাছে খোলা বইয়ের মতো।আমরা একে অপরের সাথে অনেক ফ্রি।তাই আমাদের সবার সামনে তুমি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারো।আমাদের সবার সবকিছু জানার অধিকার আছে।

অরিত্র বললো,
—–আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছিলাম কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চায়না বলে জানিয়েছে।

সবকিছু রোজের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।তাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।

অরিত্র তারপর মুখ খুলল।
—–হৃদ ভাইয়ার বিয়ের দিন আমার মামা আমেরিকা থেকে আমাদের বাড়িতে আসে।আমার মামা ছোট থেকেই আমাকে অনেক আদর করে।খুব ভালোবাসে।ছোট থেকেই আমি মামার বাদুক ছিলাম।মামা বলতে পাগল ছিলাম।আমদের বাড়িতে আসলে আমি সর্বক্ষণ তার সাথে থাকতাম।মামাকে এতটা ভালোবাসি যে সে আমার কাছে আমার বাবা-মায়ের চেয়ে বেশী ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে উঠছিলো।সেদিন বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় তাই আর দেখা হয়নি।সকালে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে সারপ্রাইজ হই।পাশাপাশি প্রচুর খুশি হই।
তারপর মামা জিজ্ঞেস করলো,
—-ভাগনে রাতে কোথায় গিয়েছিলে?

আমি বলেছিলাম বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়েতে।বাবা নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হতেই মামাকে ফিসফিস করে বললাম,
—–মামা একচুয়ালি গার্লফ্রেন্ড মানে আমার হবু বউয়ের ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম।

মামা গার্লফ্রেন্ড কথাটা শুনে এতটা এক্সসাইটেড হয়ে পড়েছিলো যে জোরেই বলে ফেলে,
——গার্লফ্রেন্ড!!!

দেন মমের চোখ আমার দিকে।মামা শত চেষ্টা করেও টপিক ঘুরাতে পারেনি।তারপর দুজন মিলে আমাকে জেকে ধরলো মেয়ের নাম কি,কি করে,কোথায় থাকে,বাবার নাম কি বাগেরা বাগেরা।
আমি যখন বলি রোজের বাবার নাম রেদোয়ান রোদ্দুর আমাদের ভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের হেড তখন দুজনের মুখ কালো হয়ে যায় পাশাপাশি শকড।মামা চেয়ার টেনে চুপ করে উঠে যায়।
আমি মমকে কারণ জিজ্ঞেস করলে মম বলে,
—–বাবা অরিত্র তুমি ও মেয়েকে ভুলে যাও।ও মেয়ে না এ বাড়ির বউ হতে পারবে আর না ওদের পরিবারের সাথে আমাদের কোনো আত্মীয়তা হবে।তাই ভুলে যাওয়াই ব্যাটার।

আমি মমের কথার কোনো মানে বের করতে না পেরে মামার কাছে গেলাম।
মামাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও উত্তর দিচ্ছিলো না।তারপর তিনি বলতে শুরু করেন।

অরিত্র রোজের মাম্মার দিকে চেয়ে বললো,
—–আন্টি আপনার অন্য একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো,
এনগেজমেন্ট হয়েছিলো এমনটা আমি রোজের কাছেও শুনেছি।

রোজের মাম্মা অস্বস্তিতে পড়লেও স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–হ্যা হয়েছিলো অনেকেই জানে।আর এটা লুকানোর মতো বিষয় না।

—–জ্বি আন্টি এটা ফ্যাক্ট না।
অরিত্র কিছুক্ষণ থেমে বললো,
—–আমার মামার নাম রিশাত।(অরিত্রের বাবার নাম আয়মান মাহমুদ খান)

সবাই অরিত্রের কথা শুনে চমকে যায়।সবার মুখ অটোমেটিক হ্যা হয়ে গেলো।সবটা সামলে রোজের পাপা বললো,
—–তো কি বলেছে রিশাত মানে তোমার মামা?

অরিত্র আবার বলতে শুরু করলো,
—–ভার্সিটিতে প্রথম দেখায় মামা আন্টিকে পছন্দ করে ফেলে।আন্টির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় আর সবাই রাজিও হয়ে যায়।বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়।এনগেজমেন্টও হয়।মামা খুব খুশি ছিলো।আন্টি নাকি মামার সাথে ঘুরতেও গিয়েছিলো তারপর হুট করে তার কাজিন মানে আংকেলকে বিয়ে করে নেয়।
এই নিউজ শুনে মামা খুব কষ্ট পায়।আর আন্টির সাথে কথা বলতে এবাড়িতে আসে কিন্তু এবাড়ির সবাই মামাকে মারধোর করে অপমান করে বের করে দেয়।
ভার্সিটিতে আপনারা দুজন মামাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাসাহাসি করতেন মামার খুব কষ্ট হতো আপনাদের একসাথে দেখে।মামা রাগে আন্টির সাথে মিসবিহেভ করে ভার্সিটিতে আর আপনারা নারী নির্যাতন কেইসে মামাকে ফাসিয়ে দেন।
মামার ৭বছরের জেল হয়।সাতটা বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে যায়।তার পড়াশোনা ক্যারিয়ার লাইফ সব শেষ হয়ে যায়।জেল থেকে বেরুনোর পর অনেক বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনরা মামাকে ত্যাগ করেছে,পাড়াপ্রতিবেশি কটুক্তি করতো।
মামা এসব সহ্য করতে না পেরে সুসাইট এটেম্প করে।
কিন্তু বেচে যায় তারপর সবাই মামার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু অতীত জানার পর আর কেউ বিয়ে করতে চায়না।
তারপর মামা দেশের সব পাট চুকিয়ে বিদেশে চলে যায়।
মামার এই দুর্বিষহ জীবনের কাহিনি আমি মেনে নিতে পারছিলাম না কিন্তু এর শাস্তি আমি রোজকেও দিতে পারছিলাম না।

মামা আমাকে বলেছে,,
——রোজ যেদিন এবাড়িতে পা রাখবে সেদিন থেকে মামা আর আমাদের বাড়িতে পা রাখবেনা।

মম আমাকে বলেছে যাদের জন্য আমার ভাইয়ের এই অবস্থা তাদের বাড়ির মেয়েকে আমি কিছুতেই মেনে নিবোনা।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি বুঝানোর।এতে রোজের কি দোষ।কিন্তু মমের এক কথাই সে কিছুতেই মেনে নিবেনা।
তারপর আমাকে শর্ত জুড়ে দেয় হয় ফ্যামিলি নয়তো রোজ।যেকোনো একদিক বেছে নিতে।
আমি রোজকে ভালোবাসি কিন্তু ২৩বছরের ভালোবাসা আমি কি করে ছাড়তে পারি আমার বিবেক সায় দেয়নি।আমি অনেক প্রেশারে ছিলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তাই রোজের সাথে ব্রেকাপ করি।

অরিত্রের কথা শুনে শুভ্রার পাপা রাহাত বলে,,
—–বাহ!কি সুন্দর স্টোরি?সবাই চুপ করে আছো কেন তালি দেও?
সবাই রাহাতের দিকে চেয়ে আছে।

রাহাত অরিত্রকে বললো,
—–এই ঘটনার সাথে আমিও জড়িত আছি।আমার কাছে শুনো তোমার মামার আসল রুপ।
তোমার মামা তানহাকে(রোজের মাম্মা)প্রথম দিন থেকেই বিরক্ত করতো।ওকে পছন্দ করে এটা সেটা।তানহা এভয়েড করতো তারপর একদিন সরাসরি বলে দেয় ওর বিয়ে ঠিক।তারপর আমাকে আর ভাইয়াকে একদিন ভার্সিটি নিয়ে যায়।ভাইয়া আর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তারপর আর বিরক্ত করে নি।কিন্তু আমাদের বাড়িতে মা আর দাদি বাধা হয়ে দাড়ায়।মা আর দাদি তানহাকে ভাইয়ের বউ হিসেবে মানেনি।তানহা বাড়িতে যেনো এ নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয় তাই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।ভাইয়া ভার্সিটিতে ওর সাথে কথা বলতে যায়।কিন্তু তানহা ভাইকে আবারো ফিরিয়ে দেয় আর এটা তোমার মামা শুনে নেয়।
অনেক চেষ্টার পর তানহাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই,ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়,ওদের মধ্যে সব মিটমাট হয়।
আর তখনই তোমার মামা বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।আর বলে যেকোনো শর্তে তানহাকে বিয়ে করতে চায়।এটা শুনে তো আমার মা দাদি তো হাতে আকাশের চাদ পায়।
ভাইয়া অসুস্থ।ঘর থেকে বেরুতে পারেনা।আর এই সুযোগে মা তানহাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে মেহমানদের সামনে বসিয়ে দেয়।আর ওরা হাতে আংটি পড়িয়ে যায়।ওর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না।

তানহা তোমার মামার সাথে ঘুরতে যায়।আর সেখানে এটাও বলে ও তোমার মামাকে বিয়ে করবেনা।কিন্তু তোমার মামা জেদ ধরে বসে ওকেই বিয়ে করবে।একটা মেয়ে বিয়ে করতে চায়না এটা জেনেও তাকে বিয়ে করতে চাওয়া জেদ ছাড়া আর কিছুই না।
ভাইয়া যখন সবটা জানে মেনে নিতে পারেনা।প্রচন্ড রেগে যায় আর একদিনের মাথায় রেজিস্ট্রি পেপার রেডি করে ঘরভর্তি লোকের সামনে সাইন করে বিয়ে করে ফেলে।
আর তোমার মামা কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সবার চোখ ফাকি দিয়ে তানহান বেডরুমে ঢুকে ওর সাথে মিসবিহেভ করে।তানহার চিতকার চেচামেচিতে সবাই ছুটে আসে।ভাইয়া ওকে দেখে অনেক রেগে যায় আর রাগের মাথায় ওর গায়ে হাত তুলে।
বাসার সবাই ওদের ছাড়িয়ে রিশাতকে তানহান ঘরে ঢুকার কারণ জিজ্ঞেস করে।সবাই ওকে চলে যেতে বলে।আর তুমি বলছো মারধোর করে অপমান করে বের করে দিয়েছি।একটা মেয়ের বেডরুমে ঢুকে মিসবিহেভ করবে তার হাসব্যান্ড তালি বাজাবে?
আর কি বললে কি কেসে ফাসানো হয়েছে?তোমার মামাকে এটেম্প টু মার্ডার কেসে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।তোমার মামা আমার ভাই আর তানহাকে মারার চেষ্টা করেছে।

মারার চেষ্টা কথা শুনে রোজ,হৃদ,শুভ্রা,অরিত্র সবাই চমকে উঠে।এ বাড়ির বাচ্চারে কেউ এ বিষয়ে জানেনা।

অরিত্র বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–কি বলছেন এসব?মামা,,নো মামা এটা করতে পারেনা।

—–তোমার মামা এটাই করেছে।আমি সবেমাত্র ভার্সিটিতে জয়েন করেছি।আমি আর আমার ওয়াইফ একসাথে বাসায় ফিরছিলাম।তোমার মামা গাড়ির ব্রেকফেইল করে দেয় আমাদের দুজনকে মারার জন্য।কিছুদূর যাওয়ার পর বুঝতে পারি গাড়ির ব্রেইক কাজ করছেনা।হাজার চেষ্টা করেও গাড়ি থামাতে পারছিলাম না।কিন্তু মনোবল ভাংগিনি।কোনোমতে ফুলকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই দেন আমিও লাফিয়ে পড়ি।গাড়ি ব্রিজের পাশ কেটে নদীতে পড়ে ব্রাস্ট হয়ে যায়।আল্লাহর রহমতে বেচে যাই।(রোজের পাপা)

শুভ্রার পাপা বললো,
—–এমনও হতে পারতো তোমার মামা সেদিন সাকসেসফুল।
তাহলে আজ সে দুজন মানুষের খুনী হতো।কাউকে মারা আর মারার চেষ্টা করা সেইম ক্রাইম।সেদিন ছোট খাটো এক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু বেচে আছে।তাই তোমার মামা সহিসালামত আছে।সাতবছর শাস্তি তোমার মামার জন্য খুব কম হয়ে গেছে।

অরিত্র তবুও বিশ্বাস করছেনা।
—–আপনারা কিভাবে শিওর হলেন মামা করেছে?অন্য কেউ করতে পারে।

—–সেটা পুলিশ বের করেছে।আমরা ওকেই একাজের জন্য সন্দেহ করেছিলাম।দেন পুলিশ সব প্রুফ বের করেছে।তোমার মামা কোর্টে শেষে স্বীকারও করেছেন।
এখনও বিশ্বাস না হলে থানায় যোগাযোগ করো।আমাদের কাছে সেই কেইসের কাগজপত্র সব আছে।তোমার ফ্যামিলি বিশেষ করে রিশাতকে জিজ্ঞেস করো।
দেখো আমরা যদি জানতে পারতাম তুমি রিশাতের বোনের ছেলে তবুও তোমার আর রোজের সম্পর্ক নিয়ে আমরা আপত্তি করতাম না।কিন্তু তোমার ফ্যামিলির মন-মানসিকতা দেখে বলছি তোমরা রোজকে ডিজার্ভই করোনা।

রোজ উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–রাইট কাকাই।ওরা আমাকে ডিজার্ভই করেনা।
রোজ নিজের রুমে চলে গেলো।

অরিত্র মাথা নিচু করে বসে আছে।
রোজের পাপা বললো,
—–তুমি রোজকে ছেড়ে তোমার ফ্যামিলিকে চুজ করেছো এটা দেখে আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছি।এমনকি রোজও।কেননা ফ্যামিলি সবার আগে।আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা ফ্যামিলির মূল্য বুঝে।কিন্তু তুমি সত্যতা না যাচাই করে রোজকে আমাদেরকে অপরাধী বিবেচনা করেছো এটা ঠিক করোনি।তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান শিক্ষিত একটা ছেলে তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।তোমার সবটা যাচাই করা উচিত ছিলো।

অরিত্র দাড়িয়ে গিয়ে বললো,
——আপনাদের কি বলবো বুঝতে পারছিনা।আমি কতটা অস্থিরতা,ধোকার মধ্যে আছি আপনাদের বুঝাতে পারবোনা।আমার মামা একজন ক্রিমিনাল বিষয়টা আমি হজম করতে পারছিনা।তবে আমি মম আর মামার কাছে এর জবাবদিহি চাইবো।কোনো ধোকায় থাকবোনা।আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।এখানে না আসলে মুদ্রার অপর পিঠ দেখতে পারতাম না।
আর পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন।যদিও আমি এর যোগ্য না।আসছি।

অরিত্র বেরিয়ে গেলো।অরিত্রের কাছে সবকিছু এলোমেলো লাগছে।ওর ভিতরটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে।
গাড়ি চালাচ্ছে আর ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।এতবড় ধোকা মেনে নিতে পারছেনা।ওর সব জবাব চাই।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here