#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_০৮
#জান্নাতুল_বিথী
দেখতে দেখতে কেটে যায় তিনদিন।এর মধ্যে শিহাব আর সিমি এ্যাংগেজমেন্ট হয়ে যায়। অয়ন আমাকে নিয়ে প্রতিদিন ঘুরতে বের হতো।আজ আমি বাড়ি চলে যাবো। বাড়ি যাবো তা ভাবতেই অনেক খুশি লাগছে।কিন্তু আবার খারাপও লাগছে উনাদের সবাইকে চেড়ে যেতে।এতো দিনের আদর স্নেহ ভুলবো কিভাবে.????আন্টি আংকেল আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর ভালোবাসায় দিয়েছে এতোদিন। অয়ন আমার প্রতিটা মন খারাপের সাথী হয়েছিলো। আমার একটু মন খারাপ হলেই উঠে পড়ে লাগতো মন ভালো করার জন্য।এসব ভাবতেই আর যেতে ইচ্ছে করে না। আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে এসব ভাবছি হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আমি ওই দিকে তাকাই।দেখি অয়ন বুকে দুই হাত গুজে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে উনার দিকে তাকাতে দেখেই অয়ন আমার দিকে এগিয়ে আসে।..
“আপনার ফোন টা একটু দিবেন..?????”(আমি)
“এই সময়ে ফোন দিয়ে কি করবা..????”(ভ্রু কুচকে)
“আরেহ মিলিকে একটু ফোন করবো।!!!!!(আমি)
“ওকে দিবো বাট আমি যা শিখিয়ে দেবো তুমি তাই বলবে ঠিক আছে..????”(অয়ন)
আমি ভ্রু কুচকে হ্যা বলি। অয়ন আমার দিকে ফোন এগিয়ে দেয়।মিলিকে ফোন করার পর রিং হওয়ার সাথে সাথে মিলি ফোন ধরে।মনে হচ্ছে ও আমার ফোনেরই অপেক্ষায় ছিলো..
“বান্ধুবি কেমন আছত..???”(আমি)
“তোকে ছাড়া ভালো থাকি কি করে সেটা বল।…???”(মিলি)
“ওপপপপপপস খুব মিস করছো বুঝি..???”(আমি)
“অনেক।আচ্ছা এটা বল যে জিজু কোথায় আর তুই কোন দিন আসবি।..???”(উত্তেজিত হয়ে মিলি বলে)
আমি অয়নের দিকে তাকাতেই অয়ন ইশারায় বলে।আর আমিও বলি…
“আজকেই আসবো একটু পর।”(আমি)
“তুই একা আসবি নাকি জিজু ও আসবে।…???”(মিলি)
আমি অয়নের দিকে তাকাই…
“উনি আমাকে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে যাবে।আর ওইখানের কাজ শেষ করে তারপর হয়তো আমাদের বাড়ি যাবে।”(আমি)
“আনুমানিক কয়টায় জিজু তোদের বাড়ি আসবে।..???”(মিলি)
ওর প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।কিছু বলতে যাবো তার আগেই অয়ন আমাকে ইশারায় না করে কিছু না বলার জন্য।তাই আমি চুপ হয়ে অয়নের কথা শুনে ওকে বলি..
“এখন সকাল টাইমেই আমি চলে আসবো।তারপর উনি মনে হয় রাতে আসবে।”(আমি)
আমার কথা শুনে মিলি একটা নিশ্বাস ফেলে বলে…
“ওকে জান তুমি চলে আসো।তোমার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করচে।”(মিলি)
“মানে কিসের সারপ্রাইজ..??? “(অবাক হয়ে)
“সেটা না হয় আসার পরই দেখবে।এখন চলে আসো যটপট আর এখন আমি রাখছি পরে কথা হবে।”(মিলি)
চোখের পলকে মিলি ফোন কেটে দেয়।ওর এমন ব্যবহারে আমি অনেক অবাক হয়ে যাই।অয়নের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি মুচকি হাসছে।উনাকে হাসতে দেখে আমি ভ্রু কুচকে কি জিজ্ঞেস করতেই উনি “কিছু না রেডি হও” বলে আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে চলে যায়। আমিও একটা দীর্যশ্বাস ফেলে রেডি হতে চলে যাই।…
_________________________
গাড়িতে বসে আছি আমি।বাহিরের দিকে তাকিয়ে।আমার পাশেই অয়ন ড্রাইভ করচে।আমার চোখে পানি। আন্টি সিমি ওরা কান্না করচে।আমার অনেক খারাপ লেগেছিলো উনাদের চেড়ে আসতে।..
“মন খারাপ..????”(অয়ন)
“আপনাকে কে বললো আমাকে ওই বাড়িতে নিতে তাও আবার সীমিত সময়ের জন্য।আর কেনোও বা এতো মায়ার সৃষ্টি করেছিলেন..???”(আমি)
আমার কথা শুনে অয়ন একটা দীর্যশ্বাস শ্বাস ফেলে বলে..
“আজ যদি আমাদের প্লেন মতো সব কিছু হয় তাহলে সব কিছুই তোমার সামনে আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।”(অয়ন)
আমি কিছু বলি নাই আর। কোনো প্রশ্ন ও করি নাই।কারন আমি জানি প্রশ্ন করে লাভ নেই। অয়ন আমাকে আমাদের বাড়িতে নামিয়ে দেয়..
“সোজা ভেতরে চলে যাও। একদম ভয় পাবে না আমি আছি সব সময় তোমার পাশে।আর তোমার মা বাবা কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবে যে আমাদের বিয়ে হইছে।তারপর আমি এসে সব সামলে নেবো।”(অয়ন)
আমি অয়নের কথায় মাথা নেগে হ্যা বলি।এখন অনেকটা ভরসা করতে পারি উনাকে।তাই অতিরিক্ত কোনো প্রশ্ন না করেই এগিয়ে যাই। ঘরের ভেতরে গিয়ে তো আমি পুরোই শকড।
_________________________________
আমাকে আসতে দেখে বাবা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমিও দুইহাত বাড়িয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরি।মুহূর্তেই সব রাগ অভিমান হাওয়ায় মিশে যায়।বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরেই বলে উঠে…
“এভাবে কেউ চলে যায়।আমি না হয় একটু রাগ করে যা মুখে দিয়ে আসছে তাই বলছি কিন্তু তুই ও বুঝি বুঝলিনা তোর বাবাকে। এখন যেহেতু ফিরে আসচত আমি আর যেতে দেবো না আমার মেয়েকে কোথাও। আর তুই যা চাইবি তাই হবে কথা দিচ্ছি তোকে।”
বাবার কথা শুনে আমি কিছুই বলি নাই।শুধু জড়িয়ে ধরে রেখেছি।..
“আংকেল আপনার আদর যদি শেষ হয় তবে কি আমরা আসল কথা আসতে পারি..???”(আদি)
আদির কথা শুনে আমি চমকে ওই দিকে তাকাই।আদি যে এখানে আছে সেটা আমি খেয়ালই করি নাই।এখানে আরও আছে মিলি আরও কিছু লোক যাদেরকে চিনি না।আদির গার্ড মনে হচ্ছে।
“কি বলবে তুমি..???”(মা)
“ওহহো আন্টি আপনি জানেন না আমি কি বলবো।আমি দিয়াকে বিয়ে করতে চাই এখন এইখানে এবং এই মুহূর্তেই।..”(আদি)
“দিয়া মা তুই কি আসলেই বিয়ে করচত..???”(বাবা)
একবার ভাবছি সত্যি কথা বলবো। পরে অয়নের কথা মনে হতেই আমি মাথা নেড়ে হ্যা বলি।..
“আমার অলরেডি বিয়ে হয়ে গেছে বাবা।”(মাথা নিচু করে বলি আমি)
আমার কথা শুনে আদি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে..
“তোমার বিয়ে যদি দশটাও হয় তবুও তুমি শুধু আমার।মাইন্ড ইট।”(আদি)
বলেই কাজি ডাকতে থাকে।আদির কাজে সবাই হতবাগ..
“আদি এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না তুমি সোজা এখান থেকে চলে যাও।বাধ্য করবে না আমাকে উল্টা পাল্টা কিছু করতে।”(বাবা)
বাবার কথা শুনর আদি গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবারর অভিনয় করে তারপর হো হো করে হেসে দেয়।…..
“ওপপপপপপপস সরি আংকেল আপনি তো তখনই কিছু করতে পারবেন যখন কেউ আপনার কথা শুনবে।”(আদি)
“মানে..???”(মা)
“আসলে আন্টি আমি আগে থেকেই জানতাম যে এমন কিছুই হবে তাই তো আমি পুর্বপ্রস্তুতি নিয়েই এখানে আসলাম।প্রতিশোধ যে পূর্ণ করতে হবে।”(শয়তানি হাসি দিয়ে বলে)
আদির কথা শুনে সবাই চমকে উঠে।
“প্রতিশোধ মানে কিসের প্রতিশোধ।..????”(আমি)
“ওহহহ হ্যা তোমাকে তো বলা যেতেই পারে আমার ওয়াইফ বলে কথা।
একটু থেমে আদি আবার বলতে থাকে।..
“আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগের কথা যখন আমার বাবা ফরিদ খান আর তোমার বাবা খুব ভালো বন্ধু ছিলো। আমার দেশের বিভিন্ন ধরনের সম্পদ স্মাগলিন করতো।কিন্তু তা কেউ জানতো না।একদিন তোমার বাবা হঠাৎ আমাদের বাড়ি চলে আসে আর কিভাবে কোন জায়গা থেকে কি করে সব কিছু দেখে নেয়। তারপর তোমার বাবা গিয়ে পুলিশকে ডেকে আনে আর আমার বাবার জেল হয় ১০ বছরের।তোমার বাবা এমন একজন পশু যে নিজের ছোটবেলার বন্ধুকেও ছাড় দেয় নাই। সেদিন আমি আংকেলকে অনেকবার নিষেধ করছি কিন্তু উনি গিয়ে পুলিককে সত্যিই ডেকে আনে।তারপর থেকে উনার উপর আমার একটা চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।শুধু আমার না আমার বোন মিলিও আমাকে সাহায্য করে।মিলি গিয়ে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করে।তারপর আস্তে আস্তে আমরা ক্লোজ হই তোমাদের পরিবারের।তারপর এখন তোমাকে আমি বিয়ের প্রস্তাব রাখি আর উনারা খুব সহজেই রাজি হয়ে যায়।কিন্তু মাঝখান থেকে তুমি লুকিয়ে বিয়ে করেই আমার সব চাল নষ্ট করে দিলে।কিন্তু তাতে কি এখন তো আমি তোমাকে বিয়েই করবো।”(আদি)
আদির কথা শুনে আমার সারা গা জ্বলে উঠে।বাবা নিজেই হতবাগ হয়ে যায়।..
“তুমি ফরিদের ছেলে.????তাহলে যাদের তুমি মা বাবার পরিচয় দিলে ওরা কারা..???”(মা)
“ওহহহহ হ্যা ভালো কথা ওরা তো আমার মামা আর মামি।”
বলেই হো হো করে হাসতে থাকে।
“আমি যা করেছি বেশ করেছি।তোমার বাবাকে আমি সাবধান করেছিলাম কিন্তু শুনে নাই।তাই আমি বাধ্য হয়ে পুলিশ ডেকেছি।আর তাছাড়া এ দেশে জন্ম হয়ে এদেশের সম্পদ স্মাগলিন করতে লজ্জা করে না..???”(বাবা)
বাবার কথা শুনে আদি হাসতে থাকে।আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে..
“চলো দিয়া তোমার বর যে দাড়িয়ে।তাকে বিয়ে করবে না বুঝি..????”
এখন আমার অয়নের কথা মনে পড়ে যায়।উনি হয়তো আগে থেকেই সব জানতো।তাইতো সেদিন আমাদের বাড়ি এসে আমাকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে উনি নিয়ে যায়।আজ যদি উনি সত্যিই আমাকে নিয়ে না যেতেন তাহলে এতোদিনে হয়তো আমার জীবন নরকে পরিনত হতো।ভাবতেই চোখের কোনে পানি জ্বমে। আর এখন আমার আর আদির বিয়ে টা কিভাবে কে আটকাবে।মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকি।উনি যেনো অয়নকে পাঠিয়ে দেয় আমাকে এই মানুষ নামের পশুর হাত থেকে বাচাতে।
চলবে কি……??????
[ আজ অনেক বড় করে দিলাম দয়া করে কেউ ছোট বলবেন না।ভালো লাগলে like comment করে জানাবেন ]