হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 08]
ইন্সপেক্টর মাহির চৌধুরী বাড়িতে আসতেই আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টিকে দেখে শকড্ হয়ে যাই।মাহির সবাই কে সালাম দিয়ে ইনভেস্টিগেশনের নাম করে আমার আর মেধার সঙ্গে দেখা করতে রুমে আসে। উনি রুমে আসার পর মেধার দিকে তাকিয়ে
আমার দিকে ফিরে একটা শুকনো হাসি উপহার দেয়।
আমি ও বিনয়ের সঙ্গে উনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলাম। উনি আমাদের সবটা বললেন এই মার্ডারটা যে করেছে তার পুরোনো কোন শত্রুতা ছিলো খুনির সঙ্গে তবে আমরা খোজ চালাচ্ছি ইনশাআল্লাহ পেয়ে যাবো। ইন্সপেক্টর মাহিরের কথা শুনে আমি আর মেধা একে অপরের দিকে চেয়ে রইলাম। মানেটা হলো এই মাডারের পিছনে যে উনি নেই স্পষ্ট। উনি বেশকিছুক্ষণ আমাদের সঙ্গে কথা বলে মেধাকে একটি বক্স দিয়ে বলল এটা রাখুন। মেধা অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে উনাকে বলল,
-” এটা কি?
মেধার প্রশ্নে উনি বললেন, ‘ এটা ফোন! সেদিন ওরা আপনার ফোনটা ভেঙে দিয়েছিল তাই ছোট্ট একটা উপহার ‘
ইন্সপেক্টর মাহিরের কথা শুনে আমার আর মেধার চোখ ছানাবড়া। উনি আবারো নিতে বলাই মেধা ফোনটা নেয়।
-” এসবের কি দরকার ছিলো? আপনি শুধু শুধু আমার জন্য ফোন নিতে গেলেন!”
-“দরকার ছিল। আমার মনে হয়েছে আপনাকে ফোন দেওয়াটা উচিত তাই দিয়ে দিলাম। সেদিন যদি আমি আর একটু আগে আসতাম তবে আপনাদের সঙ্গে ওরা অসভ্যতামি করার সুযোগ পেতো না আর না ওদের এইভাবে মরতে হতো ”
-” ইন্সপেক্টর মাহির ওদের এইভাবে মরতে হতো মানে? আপনি কি জানেন কারা, কি কারনে ওদের এইভাবে ভয়াবহ ভাবে হত্যা করেছে ?”
মেধার প্রশ্নে ইন্সপেক্টর মাহির হচকিয়ে বললেন,
-” না মানে আমি জানিনা তবে ওদের মৃত্যুর কারণ পলিটিকাল ইস্যু। আপনারা সবটা স্বাভাবিক ভাবে দেখুন আর ভয় পাওয়ার কারন নেই।”
এইভাবে ইন্সপেক্টর মাহির বেশকিছুক্ষণ আমাদের সঙ্গে কথা বললেন তারপর চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতেই অনিরুদ্ধকে দেখে বলে উঠলেন,
-” অনুরাগ তুই? তোর এমন অবস্থা কেনো?”
হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্নটা ছুড়লো ইন্সপেক্টর মাহির। উনার কথায় বাসার সবাই দৌড়ে দরজার কাছে যাই। অনুরাগ অনেকটা ক্লান্ত চুলগুলো এলোমেলো ব্লেজারটাই মাটি লেগে রয়েছে।
সবাই অনিরুদ্ধর এমন অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,”কি হয়েছে এমন অবস্থা কেনো?”
অনিরুদ্ধ কিছু না বলে ভিতরে এসে সোফাতে গা এলিয়ে দিয়ে বলল, “কিছু হয়নি ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হতে হতে বেচে গেছি।”
মাহিমা আন্টি আর আয়মান আঙ্কেল উনার কথা শুনে একসঙ্গে বলে উঠেন, ” কিইইইই? এক্সিডেন্ট? তোকে কতোবার নিষেধ করেছি অনি এইভাবে ফাস্ট স্পীডে গাড়ি ড্রাইভ করবি না তুই তো শুনিস না।আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো?”
মাহিমা আন্টি কাদতেঁ শুরু করায় আয়মান আঙ্কেল আর আম্মু গিয়ে থামাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। সবাই কে ইমোশনালি দেখে এবার উনি ভড়কে গিয়ে বললেন আরে মরে যাইনি তো এক্সিডেন্ট ই হতে যাচ্ছিলো এতো কান্না করার কি আছে আম্মু?
মেধা তখন আমার সঙ্গে উপরেই ছিলো নিচে কান্নার আওয়াজ পেয়ে মেধা নিচে এসে সবটা দেখে আমার কাছে হাফাতে হাফাতে দৌড়ে আসে। ওকে হাফাতে দেখে আমি চমকে জিগ্যেস করি,”কি রে হাফাচ্ছিস কেনো এনিথিং রং?”
-” তুর অনিরুদ্ধ ভাইয়া……”
আমি চমকে বলে উঠলাম কি হয়েছে উনার? মেধা বাইরে কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি কিছু খারাপ খবর না তো?
-“খারাপ খবর হতে যাচ্ছিলো তুর! অনিরুদ্ধ ভাইয়া এক্সিডেন্ট করতে করতে বেচে গেছে।”
কিইইইই?
-” ঠিক শুনছিস কালকে হেডলাইনে এই খবরটা বের হতো ‘দেশের সবচেয়ে কম বয়সি সাইনটিস্ট অনিরুদ্ধ জুবায়ের এর অকালমৃত্যু’ ভাগ্যিস আল্লাহ্ সহাই ছিলো কিছু হয় নি উনার।”
মেধার কথা শুনে অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এমনিতেও উনার সঙ্গে দেখা হয় না তারপর আবার উনার এক্সিডেন্টের খবর সবটা শুনে একপ্রকার ঘাবড়ে গেছিলাম আমি কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ কিছু হয়নি উনার। আমি মেধাকে বললাম,” উনি কোথায় এখন?”
আমার কথায় মেধা বলে উঠল,”নিচে আছে দেখলাম সবাই খুব চিন্তিত মাহিমা আন্টি তো কেদেই ফেলেছে। এর আগে একবার এক্সিডেন্ট হতে হতে বেচে গেছিলো আজ আবারো একি সমস্যা আন্টি তো কাদবেঁন ই।
সবটা শুনে বলে উঠলাম আমি,” যেহেতু উনার উপর এতো ফাড়া সেহেতু উনার একটু সাবধানে চলাফেরা করাই উচিত। মেধাও আমাকে সম্মতি দিয়ে বলল একদম ঠিক বলেছিস। মনটা বারবার উনাকে দেখার জন্য ছটফট করছে কিন্তু কিছুই করার নেই আমার।
এদিকে অনিরুদ্ধ ভাইয়া সবাইকে শান্ত হতে বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর ইন্সপেক্টর মাহিরকে নিয়ে বাগানের দিকটাই যায়। কেউ যেন ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা না করে এজন্য উনি একটা মনগড়া কাহিনি পরে শোনায় এতে সবাই কিছুটা স্বস্তি পাই।
বাগানের ভিতরে দিকটাই হাটছে মাহির আর অনিরুদ্ধ।
দুজনের চোখে চিন্তার ছাপ। অনুরাগ হুট করে মাহিরকে বলে উঠে,”ইমানের ব্যাপারে কি স্টেপ নিবি? ”
-” স্টেপ নেওয়ার কি আছে আমি তো প্রুফ করে ফেলবো ওর মৃত্যুটা পলিটিক্যাল কোন ইসুর জন্য হয়েছে। কিন্তু তুই আগে এটা বল তুই তো ল্যাবে ছিলি এখানে আসতে গেলি কেনো? আর কিভাবে এক্সিডেন্ট করতে যাচ্ছিলি?”
আমার এক্সিডেন্ট হয়নি!
মাহির হতবাক হয়ে বলে,” তবে তুই যে বললি আজ তুই বড় সড় এক্সিঠেন্টের হাত থেকে বেচে গেলি?”
-“আমাকে মারার প্লান করা হয়েছিল মাহির!”
-” কিইইই কিভাবে? কে মারতে চেয়েছিল পষ্ট করে বল আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
আজ আমি ল্যাবে যাইনি বাসাতেই ছিলাম শুধু তৃষাতুরের সামনে যেতে চাইনি বলে আব্বু আম্মুকে মিথ্যা বলেছিলাম। আজ সারাদিন আমি বাসাতেই আছি। হঠাৎ একটি আননন নাম্বার থেকে কল আসে আর বলতে থাকে গেম স্টার্ট আর প্রচুর জঘন্য ভাবে হাসতে থাকে। খুব ভুল না করলে ওই আমাদের সবসময় ফলো করে এমনকি আমাকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছে।
অনিরুদ্ধর কথা শুনে মাহির বলে উঠে,”কী বলছিস কী? কে সে কেনো মারতে লোক পাঠিয়েছিলো?
-” আমার জানা মতে এটা ওর কাজ! ও ফিরে এসেছে আমার থেকে বদলা নিতে চাই। ও যখন আমাকে হুমকি দিয়ে ফোন দিলো আমার কেমন জানি ভয় হচ্ছিলো সবার জন্য বিশেষ করে তৃষাতুরের জন্য। তাই চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যেই রওনা দিই। হুট করে বুঝতে পারি একটা গাড়ি আমাকে ফলো করছে আমি গাড়িটা বার্না আবাসিকের দিকে নিয়ে গিয়ে থামায়। দেখি গাড়িটাও থেমে গেছে আর এমন সময় গাড়ি থেকে চারপাচজন বের হয় সবার হাতেই হকিস্টিক ছিলো। আমি গান বের করে দুজনের পায়ে সুট করি ওরা দুজন ব্যথায় কুকড়ে ওখানে বসে পরে আর বাকি তিনজনের সঙ্গে আমার ফাইট হয়। ”
-“ভাগ্যিস গানটা ছিলো তোর কাছে! তারপর কি হলো?”
আর কি হবে ফাক পেয়ে পালিয়ে গেলো। এজন্য তোর অবস্থা এমন ছিলো। আঙ্কেল আন্টিকে না জানিয়ে ভালো করেছিস উনারা সবাই টেনশন করতো।
-“হুম সেটা নাহয় বুজলাম কিন্তু জোহার কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমি জানি এটা ও ছাড়া আর কেউ না। ও ফিরে এসেছে। ও আব্বু আম্মু ক্ষতি করতে চেয়েছিল এখন ওর টাগের্ট তৃষাতুর!!!
-“দেখ আমার মনে হয় না ও ফিরে এসেছে। কারন আমার জানামতে ডক্টর বলেছিলো ও কমাতে চলে গেছে। আর এতদ্রুত ভালো হবার কথাও না! কী গনধলায় দিয়েছিলি মনে আছে? আমাকে এটাও ধামাচাপা দিতে হয়েছে। আমার মনে হয় এটা জোহা না অন্যকোন বহিরাগত শত্রু।”
-” সঠিক জানি না তবে আমার মন বলছে এটা জোহা ছাড়া আর কেউ না। ও এবার আমাকে দমাতে তৃষাতুরকে ব্যাবহার করবে এর আগে আমাকে ওকে প্রমাণ দিতে হবে এটাইযে তৃষাতুর আমার দূর্বলতা না।”
-“চিন্তা করিসনা আমি সবসময় তোর পাশে আছি।কিছুতেই এই দুইপরিবারের উপর বিপদ আসতে দিবো না। আমার কাছে পরিবারের মূল্য অনেক কারন ছোটবেলা থেকে অনাথ আমি। জোহা তোর উপর বদলা নেওয়ার জন্য আমার মিহুকে মেরেছিলো এবার তৃষাতুরের পিছনে পরলে ওকে আমি ছাড়বো না অনিরুদ্ধ। আমি আমার কলিজাকে তো বাচাতে পারিনি কিন্তু বন্ধুর কলিজার গায়ে কিছুতেই হাত দিতে দিবো না। ওর পাপের বোঝা অনেক। ও যদি সত্যি ফিরে থাকে তবে ওকে তোর সঙ্গে সঙ্গে আমার সাথেও লড়তে হবে। তোকে কোনদিন একলা ছাড়বো না আমি।”
মাহিরের কথায় অনিরুদ্ধ একে অপরকে জরিয়ে ধরে। মাহিরে মিহূর জন্য কাদছে অনিরুদ্ধ বুঝতে পারছে সেটা তাই ও ঠিক করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মেধার সঙ্গে ওকে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ করলে মেধাই মিহুর কষ্টটা ভুলতে সাহায্য করবে মাহিরকে। দুজনে বেশকিছুক্ষণ গার্ডেনের এরিয়ায় সময় কাটিয়ে ভিতরে আসে। এদিকে সবাই দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি করতে থাকে দুপুরের খাবার খেয়ে মাহির চলে যাই। এদিকে মেধার তো মন খুশিতে নাচছে কারন ওর ভালোবাসা আজ ওকে নিজে ফোন গিফট্ করলো। ওরতো আনন্দ কমছেই না। এদিকে মনে মনে আমার ভিষণ অভিমান হতে লাগল। অনুরাগ ভাইয়া তো আমাদের বাসাতেই তবুও একটিবার আমার সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবলো না। এতো কেনো রাগ উনার? আমি কি এতটাই অপছন্দ করার মেয়ে?
~চলবে ইনশাআল্লাহ
[