অচেনা শহর পর্ব ২৪+২৫+২৬

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৪]

সারা বাড়ি মানুষে গমগম করছে চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই আছে। কান আমার জ্বালা পালা করে দিচ্ছে তার মূল হচ্ছে রায়া।কাল বিকেলেই তাদের আগমন ঘটেছে আমার ধমক শুনে আর কথা ফেলতে পারেনি। কাকিমা ও চলে এসেছে কিন্তু নিশাত আসেনি‌। সে নাকি বিয়ের দিন আসবে ফোনে বলেছে।কাকিমা ড্রাইভারের সাথে চলে এসেছে।
আপু সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে বিয়ের। সাথে ভাইয়া কৌশিক। রানী আমাকে দেখেই বলেছে,

“ও নাকি অনেক মিস করেছে আমাকে।”

আদ্র নিজের বাসায় চলে গেছে আসলে যেত না অন্তরা ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। এটা এখন শশুর বাড়ি হয়ে গেছে বিয়ের আগে ব‌উ এর কাছে থাকা যাবে না। আদ্র গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আমার কিছু বলার আমি নিরব থেকেছি। বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়েছে সাথে জাইন চলে গিয়ে ওই বাসায়।
কালকে গায়ে হলুদ। আজকে মেহেদী পড়াবে তাই নিয়ে সবাই মিলে একটু আনন্দ করবে। মেহেদী দেওয়ার জন্য আলাদা কোন লোক ঠিক করেনি। আর করবেই কেন আদ্র নিজেই নাকি আমাকে নিজের। ইচ্ছে মতো মেহেদী পড়াবে?
তখনই আশা ফোন করে বলেছে,,

” ভাবি তোমার হাতের অবস্থা খারাপ করে দেবে ভাইয়া দেখো?”

উওর এ আমি শুধু ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলছি। আমি চাই আদ্রর সমস্ত আবদার পূরণ করতে অনেক তো হলো। আদ্রর ভালোবাসার পাগলামো অনুভব করতে চাই।

অন্তরার চিৎকার এ ছুটে নিচে এলাম। আদ্রর সাথে চেঁচামেচি করছে।
তার মূল কারণ ও কেন এসেছে বিকেলের আগে। আর আদ্রর আমাকে ডাকতে বলছে তাই নিয়ে ঝামেলা করছে আমি নামতেই আদ্রর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার দর্জাল বান্ধবী কি ভাবে আমার সাথে ঝগড়া করছে দেখো ব‌উ। আমি নাকি আমার ব‌উ এর সাথে দেখা করতে পারবো না এটা কোন কথা তুমি বলো এতো বড় অন্যায় কি করে মানবো বলোতো।”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না? আদ্রর কথার সাথে সাথে অন্তরা বলে উঠলো,,
“আপনি যাবেন কোন কথা না ও কি বলবে? আর এখন ব‌উ কিনা বাদ দিন দুইদিন পর কোলের উপর বসিয়ে রাইখেন এখন যান।”

কোলের উপর বসিয়েই তো রাখবো সেটা তোমাকে বলতে হবে না আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে। সরো।

কোন সরা সরি নাই দরজা দিয়ে চলে যান এখন। যা দরকার সব বিকেলে মিটায়েন।

আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সার্কাস দেখছি। আর মিটিমিটি হাসছি। অন্তরার সাথে না পেরে আদ্র ফট করেই অন্তরার হাত দিয়ে আগলে রাখ হাতে নিচ দিয়ে মাথা নিচু করে ছুটে আমার কাছে চলে এলো।

অন্তরা চিৎকার করে উঠল,, চিটিং বাজ।

আদ্র আমার হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা লক করে দিলো।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি কিছু বুঝার চেষ্টা করছি।

এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন? জীবনে আমাকে দেখো নি যাও রেডি হয়ে আসো।

আদ্রর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম সাথে রেগে গেলাম,

” কি বললেন আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি?”

আদ্র আমার কথা শুনে মাথা চেপে ধরে বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে বলল,
” রেডি হ‌ওনা গো ব‌উ প্লিজ লেট হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা সরি।”

আমি কটমট চোখে তাকিয়ে বলল,
” কোথায় যাবো?”

“গেলেই দেখতে পাবে?”

“আমি যেতে পারব না।”

“কেন?”

‘সবাই কি ভাববে আর অন্তরা এখন আপনার সাথে কোথা ও যেতে দিবে না।”

“ওর কথা বাদ দাও আমি ম্যানেজ করে নেব। প্লিজ।”

আদ্রর অনুরোধ ফেলতে পারলাম না‌।বাইরে থেকে অন্তরা দরজায় টোকা দিয়ে ই যাচ্ছে।
বের হয়ে আদ্র এগিয়ে গিয়ে অন্তরাকে ফিসফিস করে কি যেন বললো আর অন্তরা রাগ কমে গেল যেতেও রাজি হলো আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে রাজি হতেই আদ্র আমার হাত শক্ত করে ধরে মুঠোয় নিয়ে বেরিয়ে এলো।

“আপনি অন্তরাকে কি বললেন ফিসফিস করে? যে এতো সহজে মেনে নিলো।”
আদ্রর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,

“ক‌ই কিছু বলিনি তো।”

“একদম মিথ্যা বলবেন না সত্যি করে বলুন।”

আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে আমার একদম কাছে চলো এলো আমি হকচকিয়ে ঘাড় পিছিয়ে নিলাম।

“কি হচ্ছে রাস্তায় এমন করছেন কেন?”

“শুনবে না কি বলেছি।”

“সেটা বলার জন্য এতো কাছে আসার কি দরকার?”

“আরে শুনো ওকে বলেছি দুইদিন তো ব‌উয়ের কাছে আসতে পারবো না এখন একটু আমাদের একা সময় কাটাতে দাও। বিকালে তো অনেকে থাকবে তখন কি সবার সামনে রোমান্স করতে পারবো।”

আদ্রর কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,,
“আপনি সত্যি এসব বলেছেন?”
চরম অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম।

“হুম।”

“আমি আপনার মতো অসভ্য লোকের সাথে যাবনা কোথাও। ছিঃ কি নির্লজ্জ লোক এসবের জন্য এতো কিছু করে বাসার বাইরে আসলেন। অন্তরা কি ভাবছে ছিঃ লজ্জা আমি ওর সামনে মুখ দেখাবো কি করে?”

আদ্রর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বাসায় ভেতরে
আসতে গেলাম।
আদ্র পেছনে থেকে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে হাঁটতে লাগলো গাড়ির দিকে।

“আরে ছারুন আপনার সাথে যাব না আমি।”

“ইম্পসিবল ব‌উ এই হাত আমি জীবনে ছারতে পারবোনা।”

বলেই হাতের পিঠে চুমু খেলো।
আমি থমকে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র টেনে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি।

গাড়ি চলছে আদ্র একটু পর পর আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে আমি কিছু বলছি না চুপ করে বসে আছি।
গাড়ি থামতেই বাইরে তাকিয়ে দেখি শপিং মলে এসেছি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি এখানে কেন এলো আদ্র? আমাদের বিয়ের শপিং সব করেছে আদ্রর মা আর আদ্র আমাকে বলেছে। আমাকে বলছিলো আমি না করে দিয়েছি তাদের পছন্দ মত হলেই হবে।
আমাকে আদ্র হবে কিছুর ছবি পাঠিয়েছে‌। গায়ে হলুদের জন্য পিন কালারের লেহেঙ্গা তার উপরে সাদা পাথরের কাজ যা মুক্তর মতো লাগে। জামা ক্রিম তার উপরে সুতার কাজ করা।ওরনা ক্রিম এর মাঝে পিন কাজ করা। ওইটা আশার পছন্দের। ও নাকি ওর ভাবিকে বিভিন্ন রঙের ড্রেস পরাবে সবাই হলুদ পড়ে সেখানে ও পিন কালার চয়েজ করেছে। বৌভাতের জন্য মিষ্টি কালারের শাড়ি যেটা শাশুড়ির পছন্দের। আদ্র নিজের পছন্দের করতে চেয়েছিল কিন্তু মার বিরুদ্ধে যাওয়াটা আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি মানা করেছি।
আদ্র বলেছে বিয়ে ড্রেস ওই পছন্দ করবে কাউরোটা হবে না।
বিয়ের ড্রেসটাই দেখি নি ওইপারে কোন পিক দেয়নি আমাকে।

“এখানে কেন এসেছেন?

“চলো” বলেই গাড়ি থেকে নেমে গেল আমাকেও বের করে এনে তিনতলা নিয়ে এলো।আমি বার বার জিজ্ঞেস করছি তা আদ্রর কানেই যাচ্ছে না।
ব্যর্থ হয়ে আদ্রর সাথে এলাম একটা দোকানে এসে লোকটা আদ্রকে দেখেই বলল,

আপনার ড্রেসতো কমপ্লিট স্যার আনবো।

আদ্র হুম বলতেই লোকটা একটা শপিং ব্যাগ এনে দিলো।

কিসের ড্রেস?

বিয়ের ড্রেস!

এটা নেওয়ার জন্য এসেছেন?

হুম।

তাহলে আমাকে কেন আনলেন?

তুমি না এলে এটা পড়াবো কাকে?

মানে।
অবাক হয়ে বললাম।

মানে আমি এখন আমার ব‌উকে এই ড্রেসটা পরিয়ে দেখবো তাকে কতো সুন্দর লাগে বিয়ের দিন তো আগে দেখতে পারবো না তাই আজকে।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। পাগল হয়েছে এই লোকটা। আমি নিশ্চিত।
আদ্র ড্রেসটা দিয়ে চেন্জিং রুমে নিয়ে এলো।আর ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে বলল,,

“পাঁচ মিনিট এ বের হবে।”

ড্রেস হাতে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্রর সব আবদার মানবো ভেবেছিলাম তাই কিছু বলতেও পারছি না। সব মানতে হচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর ড্রেসটা লাল টকটকে লেহেঙ্গা ওতো গর্জিয়াস না কাসটা হালকা ভার না ওতো। এটা পড়ে আমার একটু ও খারাপ লাগবে না।
লেহেঙ্গা নিচের পাটে ছোট ছোট ফুল ডিজাইন সোনালি ফুলের মাঝে একটা করে পাথর অদ্ভুত পাথর গুলো আর কাচ গুলো এতো টা চকচকে যেন এগুলো সুতো না র্স্বন আর মুক্ত ঝলমল করছে।পুরো লেহেঙ্গা ছোট ছোট ফুল দিয়ে ভড়া আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে দরজা খুললাম। আদ্র এতোক্ষণ কতোবার দরজা ধাক্কা দিয়েছে তার হিসেব নাই‌। আমি খুলতেই বলে উঠলো,

“উফফ এতো সময় কেন লাগে আমি কতোক্ষণ ধরে ধাক্কাচ্ছি দেখছো না?”

বলতে বলতে আমার দিকে তাকিয়ে ওর চোখ স্থির হয়ে গেল। আদ্র হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর চোখে মুখে মুগ্ধতা বিরাজ করছে চোখে পলক পরছে না আমি বলল,

“এখন আপনি এমন হা করে তাকিয়ে আছেন?”
তখন আমাকে বলেছিলেন এখন আমার বলবো‌ হু।

আমার সামনে একটা লাল পরী দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে না থেকে পারা যায় না।

বলতে বলতে আমার কাছে এসে ওরনা টেনে আমার মাথা দিয়ে দিলো।

আমার লাল পরীর মতো ব‌উ।

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি‌।
আদ্র কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

“এই ড্রেসটার কাজ গুলো আলাদা একদম তাইনা। কোন সুতা দিয়ে করেছে বলেন তো?”

এটা তো সুতার কাজ না।

তাহলে?

গুল্ড দিয়ে করা হয়েছে তার আর হিরো বসানো হয়েছে।

কথাটা শুনে আমার চোখ দুটো মার্বেল এর মতো বড় বড় হয়ে গেল।
#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৫]

সারাটা দিন আমার অবাক হয়ে কাটলো আদ্রর কথাটা শুনার পর থেকে থ মেরে ছিলাম। সন্ধ্যায় আদ্র, রাহাত, রাইসা, আয়রা, আশিক আদ্রর সব ফ্রেন্ড এসেছে। জাইন, আশা সবাই ছাদে করা হয়েছে স্টেজ। অন্তরা আর আশা আমাকে ইচ্ছা মতো ভূত সাজাচ্ছে পার্লার থেকে লোক আনতে চেয়েছিলো আমি মানা করে দিয়েছি। এমনিতে তিনদিন সাজতে হবে। কিন্তু এরা ও কম না এতো এতো সাজাচ্ছে। কখনো এতো মেকাপ করিনি তাই খুব অস্বস্থি হচ্ছি পাপড়ি লাগাতে এলে আমি লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পরি।

” কি হলো?”

“আমার চোখে কি পাপড়ি নাই যে নকল তা দিচ্ছিস কেন?”
রেগে।

“আরে আহাম্মক আয় এটা না দিলে ভালো লাগবে না। ”

“দরকার নাই এতো ভালো লাগার আমি আর কিছু দেব না।”
বিরক্ত হয়ে। কিন্তু পারলে সে এদের সাথে আশা এসে আমাকে অনুরোধ করতে লাগলো আর টেনে নিয়ে গেল। যন্ত্রনা উফ।
শেষে হার মেনে নিতে হলো।

ছাদে আসতেই সবার দিকে নজর পরলো অনেক দিন পর আদ্রর সব ফ্রেন্ডকে দেখলাম।
সবার সাথে কথা বললাম। তারপর আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। সবাই সেটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো আমি লজ্জা পেলাম খুব আদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই আমার কাছে এসে আমাকে বসিয়ে দিলো সোফায় এটাতে বসেই কাল আমার গায়ে হলুদ হবে আর আজ মেহেদী হবে।

ভাই তুই মেহেদী দেওয়া শিখলি ক‌‌ই থেকে।
আশিকের কথায় কড়া চোখে তাকাল আদ্র তারপর বলল,

ব‌উয়ের হাতে মেহেদী দিতে শিখতে হয়না রে।একটা শিখা হয়ে যায়।

তাই নাকি আমরাও তাহলে শিখে যাব বলছিস? রাহাত তুইও তাহলে আয়রা কে মেহেদী দিয়ে দিস।

রাহাত হা করে বলল,, পাগল নাকি আমি এসব পারিনা।

আরে পারবি পারবি দেখিস না আদ্র একাই সিংকে গেছে বিয়ের সময় তুই ও শিখে যাবি দেখিস।

বলেই সবাই হা হা করে হেসে দিলো।
রাইসা আপু এসে আমাকে বলল,

তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

থ্যাংকস আপু।

সবাই হাঁসি তামাশা করছে আর আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে কেমন মেহেদী পড়ায় দেখার জন্য। আদ্র সবার দিকে তাকিয়ে একটা পার্ট নিয়ে মেহেদী হাতে নিলো।
ওর হাত কাঁপছে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আদ্র নার্ভাস মুখ করে তাকালো আমার দিকে আমিও তাকিয়ে ছিলাম। ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

তখন আশা এসে বলল,
আজকে ভাবি তোমার হাত শেষ ছাগল দিয়ে কি আর মেহেদী দেওয়া হয়।ও দেবে মেহেদী দিয়ে তাহলেই হয়েছে।

আদ্র কটমট করে তাকালো আশা ভয় পেল না উল্টো ভেংচি কেটে চলে গেলো।

ওই আদ্র তোর হাত কাঁপছে কেন তারাতাড়ি কর। দেখ ওইটা ধরেছিস পনেরো মিনিট হয়ে গেছে আটটা পনেরো বাজে।
আয়রা আপু বলল।

আদ্র কাঁপা হাতে আমার হাতের কাছে নিয়ে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
খারাপ হলে মন খারাপ করো না ব‌উ আমি সত্যি মেহেদী দিতে পারি না। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিলো আমার ব‌‌উয়ের হাতে আমি মেহেদী দেবো তাই।

আমি আদ্রর কথায় হালকা হেসে বললাম দিন আমি মন খারাপ করবো না উল্টা খুশি হবো।

সত্যি।

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। আদ্র দেওয়ার এনার্জি পেয়ে গেল। আস্তে আস্তে করে লাগাচ্ছে হাত কাঁপছে হাতের মাঝামাঝি তে কিছু লিখছে আ দেখেই বুঝলাম এটা আদ্র লেখছে।
হাতে না লেখলেও আপনি আমার এই মনে আছেন আদ্র যেখানে শুধু আপনার নাম।

এতো আনন্দ তাও আমার মন খারাপ অন্তরাটার জন্য। এতো আনন্দের মাঝেও মেয়েটা মুখটা মলিন করে উদাস হয়ে বসে আছে‌। ওর শরীর টাও খারাপ খেতে পারে না বমি করে ভাসিয়ে দেয়।
কি হলো হলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি হঠাত আমার দিকে তাকালো আর জিজ্ঞেস করলো কি আমি কিছু না বললাম ও এখন হাসলো কিন্তু এটা দেখানো হাসি আমি জানি ও যে চঞ্চল মেয়ে এমন বসে থাকার না‌।

বড় করে নিজের নামটা লিখে বড় শ্বাস ফেলে মেহেদী রেখে দিলো।

আর পারবো না অনেক দিয়েছি। এতো কষ্ট জানলে জীবনে এসব দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতাম না।

কেন তোর দম এতো তারাতাড়ি শেষ হয়ে হলো। দে আরো দে হাত ভর্তি করে।

ইম্পসিবল।

সবাই হা হা হা করে হেসে উঠলো।সবাই হাসিতে ব্যস্ত আর আদ্র ফট করে আমার গালে চুমু খেল। আমি বিস্মিত হয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম। আদ্র বলল,

এতো সুন্দর লাগছে আমি সামলাতে পারছি না গো ব‌উ মন চাইছে এখনি বাসর করে ফেলি।

আমি হতভম্ব হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌।আদ্রর কথা শুনে চোখ গোল গোল হয়ে গেল সাথে একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো আমাকে। রাগী চোখে তাকিয়ে বসে আছি। আশা এসে আদ্রকে সোফা থেকে ঠেলে উঠিয়ে নিজে বসে পরলো মেহেদী লাগাতে।দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়ে দিলো।

মেহেদী দেওয়ার পর পরেছি ঝামেলায় চুল বাঁধা তবুও ছোট কিছু চুল চোখ এসে ডিসটার্ব করছে। ফূ দিয়ে সরানোর ট্রাই করছি। তখন ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম। এই স্পর্শ আমার পরিচিত আমি কেঁপে উঠলাম। আদ্র চুল কানে গুঁজে দিয়ে আমার পাশে বসে পরলো তারপর আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে দেখছে।
মেহেদী রাঙ্গা হাত। বলেই ফূ দিতে লাগলো।

আদ্র একটা গান ধর স্নেহার জন্য।

হুম আদ্র আশিক ঠিক বলেছে।

সবাই আদ্রকে গান গাওয়ার জন্য জরাজরি করতে লাগলো।
আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে গাইতে লাগলো।

🎵🎵আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে,
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে সপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে,
আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে,
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে সপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে,
তুই থাকলে রাজি, ধরবো বাজি, কোন কিছু না ভেবে,,
তুই থাকলে রাজি, ধরবো বাজি, কোন কিছু না ভেবে,,
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।
ও একটু নয় অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে।🎵🎵

আমি মুগ্ধ হয়ে আদ্রর গান শুনছি।গান শেষ হতেই তালির আওয়াজ হলো।পুরোটা সময় আদ্র আমার চোখের দিকে তাকিয়ে গাইছে গানটা।
ডিনার আদ্র নিজের হাতে করিয়ে দিলো তা নিয়ে আরো লজ্জায় পরতে হলো কিন্তু আদ্রকে বলে লাভ নেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খাইয়ে দিলো।
সারে এগারোটায় সবাই চলে গেল যাওয়ার আগে আদ্র আমার কপাল স্পর্শ করে গেছে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু থাকলো না থাকলেও অন্তরা কিছু বলতো না। আদ্র নিজের থেকেই চলে গেছে।

পরদিন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বাসায় পার্লার থেকে লোক এসেছে আমাকে সাজানোর জন্য।
বিকেলে আমাকে বসানো হলো হলুদ এ আদ্রর গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ নিয়ে লোক এসেছে আশা আরো অনেকে প্রথম গায়ে হলুদ ভাইয়া দিলো। ভাইয়া হলুদ দেওয়ার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউয়াউ করে দুই ভাই বোন কাদলাম। বাবা মায়ের কথা মনে পরছে তারা থাকলে কতো না খুশি হতো।
কান্না কাটি শেষ করে হলুদ দিতে লাগলো।রায়া আমার পাশে বসে আছে ও আমাকে হলুদ দিলে আমি ওকে হলুদ দিয়ে ভূত করে দিলাম।

রুনা আপুকে দেখলাম হলুদ শাড়ি পরেছে কি মিষ্টি লাগছে কৌশিক ভাইয়া কি যেন বলছে আপু লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।
নিশাত আসেনি কেন আসি নি জানি না। ফোন করলে বলছে অফিসে কাজ আসতে পারবে না কাল ট্রাই করবে।
এই নি তাকে বকলাম ও কি করার শুনলো না।
কাকিমা চলে যেতে চাইছে সবার মুখোমুখি হতে চায়না।কেউ না চিনলেও আদ্রর বাবা ও কাকার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে চিনে এজন্য উনি থাকতে চাইছেন না কাল তো সবাই আসবে কিন্তু আমি যেতে দেব না যা হ‌ওয়ার‌ হবে কিন্তু কাকি এখানেই থাকবে।

রাত আটটা পর্যন্ত নয়টা পর্যন্ত বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে উঠে দাঁড়ালাম সবাই হলুদ দিয়ে মাখামাখি করছে আর নাচছে।
আমি উঠে ছাদে বাম পাশে চলে এলাম এখানে কেউ নেই। ডান পাশে অনুষ্ঠান আর বড় ছাদ হ‌ওয়ায় এপাশে কেউ আসেনি।

আবসা অন্ধকারে রেলিং এর উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি। ঠান্ডা বাসা ছুঁয়ে দিচ্ছে চোখ বন্ধ করতেই আদ্রর হাসিমাখা মুখ ভেসে উঠলো কতটা ভালোবাসে আদ্র আমাকে এখন আমিও। আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে কালকের পর থেকে আমরা এক হয়ে যাব। ভালোবাসার মানুষটির সাথে থাকবে একটা পরিবার পাব কতো সুন্দর হচ্ছে সব। এতো সুখ এতো ভালোবাসা পাচ্ছি আমি। ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে। এসব আমার কপালে স‌ইবে তো অতিরিক্ত কিছু ভালো না এতো এতো সুখ আমি মানতে পারছি না মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যাবে আদ্রকে হারিয়ে ফেলবো কেউ ছিনিয়ে নেবে আমাকে ওর থেকে। খুব ভালোবাসি আদ্র তোমাকে খুব বেশি হারাতে পারবো না মরে যাব আমি।

হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চমকে পাশে তাকিয়ে আতকে উঠলাম। একটা পুরুষের ছায়া আমার থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে রেলিং এ হাত রেখে ভয়ে আমার শরীর এর পশম খাড়া হয়ে গেল।
ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,,

কককে আআপনি…..
#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৬]

ভয়ে আমার হাত পা কাপছে। কিন্তু লোকটা কথা বলছে না আমার দিকে তাকাচ্ছে ও না আমি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কে এই লোকটা কোন শত্রু নাকি কপালে আমার ঘাম ছুটে গেছে হলুদের মাঝেই আমি হাত বাড়িয়ে দেখলাম।

আমি আবার বললাম,
“কে আপনি কথা বলছেন না কেন?”

এবার লোকটা আমার দিকে তাকালো শুধু তাকালো না এগিয়ে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। ভয়ে আমি চিৎকার করতে যাবে তখন মনে হলো স্পর্শ টা আমার খুব চেনা কারো। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। এবার লোকটার মুখ দেখার জন্য তাকালাম। সাথে সাথে সমস্ত ভয় মূহুর্তে মাঝে শেষ হয়ে গেল। বিস্মিত হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি আদ্রর ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে আমার ভীতু মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি বড় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রেগে তাকালাম,

“আপনি আমাকে এই ভাবে ভয় দেখালেন কেন?”

আদ্র অবাক হ‌ওয়ার ভান করে বললো,,
“ভয় কোথায় দেখালাম!”

“আবার অস্বীকার করছেন। কি অসভ্য লোক। ভয় দেখাননি বলছেন তাহলে ওইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? ডাকলেও সারা দেন না আমি কতো কিছু ভাবছিলাম জানেন?”

আদ্র এক হাত বাড়িয়ে আমার ছোট চুল গুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলল,
“কি ভাবছিলে তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করতে এসেছে?”

আমি বললাম, ” তা না কিন্তু ওই মাইশার বলা লোকটা ভাবছিলাম।”

“এতো ভয় পেয়না বাইরে গার্ড আছে। কিছু হবে না দেখ হবে ঠিক থাকবে। আমার স্নেহাকে আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”

আমি মুখ কালো করে বললাম,, ” আমার ভয় করছে খুব মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটবে। আপনাকে হারানোর ভয় পাচ্ছি। আমি আপনার থেকে আলাদা হলে এবার মরেই যাব আদ্র।”

বলতে বলতে আমার চোখ ভড়ে গেল জলে। আদ্র গম্ভীর হয়ে গেল সাথে সাথে ওর শক্ত চাহনি দেখতে পাচ্ছি অন্ধকার হলেও আবসা আলোতে হালকা বুঝা যায়।
চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,

“তোমাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না‌। আর যদি সেই দুঃসাহস করে তো তার আমি এমন অবস্থা করতে সে নরক যন্ত্রণা কি দেখতে পাবে।”
দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন গলায় বলল।

তারপর হাত বাড়িয়ে আমার গালের পানি মুছে দিয়ে মুখ স্বাভাবিক করে বলল,
“উফফ ব‌উ কেঁদো না তো কোথায় লুকিয়ে এলাম রোমান্স করতে আদর খেতে তা না শুধু কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছো।”

এবার আমার টনক নড়লো,
“আপনি এখানে কিভাবে আসলেন? আজ তো আপনার ওইখানে থাকার কথা! ”

“তুমি এখানে আমি কি ওইখানে থাকতে পারি তাই তো চুরি করে এসে পরলাম। কি‌ কপাল আমার নিজের ব‌উ এর সাথে দেখা করতে আমাকে লুকিয়ে আসতে হচ্ছে।”

“কিন্তু আপনি আসলেন কেন? কাল তো আসতেই হতো এখন কেন আসলে ছারুন আমাকে আর ফিরে যান।”

“পাগল নাকি‌ এতো কষ্ট করে আসলাম যার জন্য তা না করেই চলে যাব।”

আমি অবাক‌ হয়ে বললাম,
” কি জন্য এতো কষ্ট করে এসেছেন শুনি।”

“সবাই তোমাকে হলুদ দিবে আর আমি কিনা দিতে পারবো না এটা কি হতে পারে।”

এই লোকটা নির্ঘাত পাগল হয়েছে।

তার মানে।

আদ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। আর নিজের মুখ আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগলো।নিজের গালে হলুদ আমার দুগালে লাগিয়ে থামলো আমি পাথর হয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
হাত বাড়িয়ে আমার গলায় ও লাগিয়ে দিলো আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।
আমার কপালে চুমু দিলো।

কাজ শেষ।

আদ্রর কথা শুনে চোখ মেলে তাকালাম। রেগে
আমি কিছু বলবো তার আগেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পরলো আদ্র আমি ভয়ে ছুটে এসে আদ্রর ধরার ট্রাই করলাম।
আর সাথে চিৎকার করে উঠলাম আদ্র।
রেলিং ধরে নিচের দিকে ঝুঁকে আছি এটা কি করলো আদ্র কিছু মাথায় ঢুকছে না।

নিচে তাকিয়ে দেখি আশিক দাঁড়িয়ে আছে একটা দরি ধরে আদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার চিন্তিত মুখ দেখে বলল,

ব‌উ আমি ঠিক আছি। এটা আমার করাই ছিলো এতো ভয় পাও কেন? বাই এইদিককে আমাকে খুঁজে পাগল হচ্ছে সবাই বাই।টেক কেয়ার। পৌঁছে কল করবো।

বলেই চলে গেল আমি আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে এসেছে অনেক এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে চিৎকার কেন করলাম।আমি আমতা আমতা করছি কি বলবো ভাবছি।
তারপর বললাম অন্ধকারে এ ভয় পেয়েছি সবাই এটা শুনে বকলো একা এখানে কেন এসেছি।

সব চেন্জ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। অন্তরার দিকে তাকিয়ে বলল,

তোর এই অবস্থা আমার ভালো লাগছে না। হৃদয় কে একবার হাতের কাছে পাই কি যে করবো আমি আমার বোনকে কষ্ট দেওয়া তাই না।

ওকে কোথায় পাবি।

মেসেজ করবো নাম্বার দে।

দরকার নেই‌।

আছে‌।

আমি জোর করে নাম্বার নিয়ে মেসেজ করলাম।
‘ভাইয়া কাল আমার বিয়ে আর আপনি আসবেন না এটা কিন্তু ঠিক না তাহলে আমিও কিন্তু আপনাদের বিয়েতে যাবনা।’

লিখে পাঠিয়ে দিলাম।
“কয়েকদিন ধরে ও আমাকে ইগনোর করছে। ”

অন্তরার কথায় থমকালাম। তারপর বললাম,
“ওইখানে কাজে বিজি তাই হয়তো।”

“এর আগে থেকেই।

“মানে। অবাক হয়ে বললাম।

“সেদিন তো বলল, আমাকে নাকি বিয়ে করবে না।

“মানে কি সব বলছিস?

“হুম। ফোন করলে ডিসটাব ফিল করে। দেখা করে না তাই আমি ওর বাসায় চলে গেছিলাম তখন ও আমাকে এসব বলেছে আর,
বলেই ডুকরে উঠলো।
আমি হতদম্ব হয়ে ওর কথা শুনছি।

সেদিন আর কি?

ও আমাকে মেরেছে জানিস। আমার গায়ে হাত তুলেছে।

আমি হতবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে।

আমি কাউকে বলতেও পারছি না‌ স‌ইতে ও পারছিনা বাবা মাকে কি করে এসব বলবো আমি। নিজের পছন্দ করেছি ওকে আমি।

ও কেন এমন করছে ?

জানি না কিছু। কিন্তু আমার মনে হয় আমি ওর মনে থেকে উঠে গেছি তার জন্য ওইটাই‌ কারণ…

কি?

মুখ চেপে ধরে কাঁদছে অন্তরা ওর কান্না দেখে আমার ভেতরটা ও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। আমি ওকে জরিয়ে ধরলাম।

কাদিস না হয়তো মন খারাপ ছিলো তাই‌। হৃদয় তো তোকে খুব ভালোবাসে কতো কিছু করেছে তোর জন্য মনে নেয় ওই তো তোর পেছনে ঘুরেছে।

আমার সব শেষ হয়ে গেল ও যদি আমাকে বিয়ে না করে আমার কি হবে ওকে আমি খুব ভালোবাসি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি। কেন এমন করছে কি করেছি আমি বলনা।
আমার বুকের ভেতরে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। ওকে আমার কাছে এনে দে না কতো কল করেছি দেখ একবার ও রিসিভ করেনি।

অন্তরার সব কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে আছি। হৃদয় এমন কেন করছে জানতেই হবে।

কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। কাঁদিস না।

বলেই ওর চোখের জল মুছে দিলাম। আদ্র কল করেছে কখন থেকে বাজছে অন্তরাকে রেখে ফোন কানে নিলাম।
আদ্র কে বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এখন না বলাটাই বেটার কাল বলবো নি। হৃদয় এর সাথে কথা বলতে হবে। এমন করছে কেন যেখানে ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তাও এমন কেন করছে সে তো অন্তরাকে ভালোবাসে তাহলে কষ্ট কেন দিচ্ছে।

পরদিন বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো সবাই। আমি সব কিছুর মাঝেও অন্তরার জন্য ভাবলাম কিন্তু কিছু করার নেই।

আদ্র আমাকে খালি কল করেই যাচ্ছে ধরছি তো ধরছি না। পার্লার থেকে লোক এসেছে আমাকে সাজাতে সাজানো হচ্ছে তখন একটা হাসি মুখে রুমে এসে ঢুকলো তাকে দেখে আমি বসা থেকে থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#এক্সটা পর্ব

হাসি মুখে মাইশা এগিয়ে এলো আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“বাব্বাহ রাস্তায় থেকে একদম রাজরানী হয়ে গেলি। তোর কপাল আছে।”

ব্যঙ্গ করে তাকিয়ে বলল। এগিয়ে এসে আমার ড্রেস তুলে ধরলো। তারপর আমাকে দেখে বলল,
“এতো খুশি হস না স্নেহা তোকে আমি খুশি হতে দেবো না। এখন আমি কিছু করতে পারছি না কিন্তু ও তোকে আদ্রর থেকে আলাদা করবেই দেখিস। তার আদ্র শুধু আমার হবে। আজকে তোর জীবনের সব চেয়ে খারাপ দিন হবে দেখিস।”

বলেই ভাব করে চলে গেলো। আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। কিন্তু আমার মাথায় আসছে না। মাইশা আপু এখানে কি করছে তাকে কে ইনভাইট করলো?

“ম্যাম বসুন।”
পার্লারের মেয়ের কথায় বসে পরলাম। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মাইশার কথাগুলো।
ভয়ে আঁতকে বসে র‌ইলাম থ মেরে। আচমকা আমার বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো আমি কি সত্যি আদ্রকে হারিয়ে ফেলবো।

ম্যাম কাঁদছেন কেন কাজল ছরিয়ে যাচ্ছে তো।

উনারা বিরক্ত হয়ে সাজাতে লাগলো।
কিন্তু আমি নিজেকে থামাতে পারছিনা। আমার ভয় করছে খুব বেশি ভয় করছে।

রানী এলো লাফালাফি করতে করতে। গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা পরেছে। খুব সুন্দর লাগছে এসেই আমার পাশে দাঁড়িয়ে সাজ দেখতে লাগলো।
_______________

সাজ কম্পিলিট হতে তিনঘন্টা লাগছে।এতো আটাময়দা দিয়েছে যে মুখে নিজের কালার নাই।
অস্বস্থি লাগছে এভাবে থাকতে কিন্তু বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।
আমার পাশে বসে আছে অলি। ওর হাতে আমার ফোন যেটাতে আদ্রকে কল করছে কিন্তু আদ্র রিসিভ করছে না।
আমি চিন্তিত হয়ে ভাবছি সব আদ্রকে বলবো কিন্তু সে তো রিসিভ ই করছে না।

আপু রিসিভ করছে না।

আচ্ছা আর দিতে হবে না।

অলি মাথা নেড়ে ফোন রাখতে যায় তখন মেসেজ আসে টোন করে।আমি সেদিকে তাকায়।

অলি ফোনটা দাও তো‌।

হুম।

আদ্র মেসেজ করেছে।

“ব‌উ রাগ করো না ফোন রিসিভ করতে পারছি না বলে। শয়তানের দল আমাকে ফোন ধরতে দিচ্ছে না। আমরা র‌ওনা হচ্ছি এসে কথা বলবো‌ কেমন।”

মেসেজ দেখে ফোন রেখে দিলাম। রায়া ছুটে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

আন্টি তোমাকে কতো সুন্দর লাগছে।

আমি হেসে বললাম,, তাই।

হুম। লাল টুকটুকে ব‌উ তোমার গাল ধরি।

বলেই আমার গাল স্পর্শ করতে আসবে তখন রানী এসে ওকে ধরে বললো,
ওই আপুর গাল ধরছিস কেন?

কেন কি হয়েছে?
রায়া গোমড়া মুখ করে।

আপুর সাজ নষ্ট হয়ে যাবে ধরিস না দেখ শুধু।

মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। আমি ওর গাল টেনে দিলাম।
ভাইয়া এলো রুমে আমি গিয়ে ভাইয়া ধরে নিয়ে এলাম।
ভাইয়া আমার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
তারপর মাথা হাত দিয়ে বলল,

আমার ছোট বোনটা কতো বড় হয়ে গেল আজ তার বিয়ে। কি মিষ্টি লাগছে তোকে

আমি আরো আগেই বড় হয়েছি বিয়ে তো আরো আগে হয়েছে‌।

ভাইয়ার কথাটা শুনে হাসলো। তারপর‌ই মুখ কালো করে বলল,
আমি যদি থাকতাম তাহলে ওইভাবে তোর বিয়ে হতো না। আর না বাবা মা ওইভাবে।

ভাইয়া আর এসব ভেবো না আমাদের কপাল টাই এমন ছিলো। তাই নিজেকে আর দোষ দিও না।

ভাইয়ার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। আমি বললাম,
এখন তুমি কাঁদলে কিন্তু আমিও কেদবো।

আমার কথা শুনে ভাইয়া চোখ বন্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর চোখ মুছে নিয়ে আমাকে বলল,

না একদম না। তাহলে তোর সাজ নষ্ট হয়ে পেত্নি হয়ে যাবে।
__________________

বর এসেছে বলে সবাই চেঁচামেচি করতে লাগলো। আমার কাছে অন্তরা ও রানী ছিলো বর এসেছে শুনেই সবাই চলে গেল দৌড়ে আমাকে রুমে একা রেখে। আমাদের বিয়ে আগেই হয়ে গেছে তাই আজকে শুধু আমাকে আর আদ্রকে স্টেজে বসাবে। মজা খাওয়া দাওয়া পিকচার তুলে সন্ধ্যায় ওইবাসায় যাব।
আমিও আদ্রকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না তাই তো লেহেঙ্গার দুই হাতে ধরে বেলকনিতে গিয়ে দেখার জন্য আদ্রকে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে বেলকনির কাজে যেতেই আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। আদ্র হাসি ফুটে দাঁড়িয়ে আছে।
বিয়ের শেরোয়ানি পরে দাঁত বের করে হাসছে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি এই মানুষটি শুধু আমার শুধুই তখনি মনে হলো দরজা খুলে কেউ ভেতরে এলো। তার পায়ের আওয়াজ আমার কানে আসছে সবাই গেটের কাছে আদ্রদের কাছে অন্তরা অলি রানী রায়া সবাই তাহলে এখানে কে এলো অজানা ভয়ে আমার বুক ধক করে উঠল। চমকে ভেতরে আসতেই একটা মুখ দেখলাম কিছু বলার আগেই তিনি আমার মুখে স্পে করে দিলো সাথে সাথে আমি জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলো সে আমাকে নিজের বাহুডরে আবদ্ধ করে নেয়।

স্নেহা বেবি এবার তুমি শুধুই আমার। কেউ তোমাকে আমার থেকে নিতে পারবে না। আর না আদ্র পারবে। বেচারা তোমার সুখে না পাগল হয়ে যায়।

লোকটা ঘাড় বাঁকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে আদ্রর দিকে তাকালো বেলকনি দিয়ে যেখানে আদ্রর হাসিমাখা মুখ দেখা যাচ্ছে।

এই হাসি একটু পর‌ই বিলিন হয়ে যাব। জাস্ট একটু সময়।
বলেই বাঁকা হাসলো লোকটা।
________________

আদ্রর অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই ওকে নিয়ে হাসি তামাশা করছে। আদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই ও আছে স্নেহার চিন্তায় আজকে একবার ও স্নেহাকে দেখে নি তাকে ব‌উ সাজে দেখার জন্য ছটফট করছে।অনেক দিনের ইচ্ছে এটা স্নেহাকে ব‌উ সাজে দেখবে। যে ওর জন্য লাল টুকটুকে ব‌উ সেজে ওর অপেক্ষায় বসে থাকবে। ব্যাকুল হয়ে উঠছে।

রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
ভাই একটু তারাতাড়ি কর।

রাহাত বলল,, একটু তোর স‌ইছে না। তাহলে দিয়ে দে সব টাকা।

পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েছে গেটের জন্য আদ্র তাই দিয়ে দিলো। স্টেজে নিয়ে আদ্রদের বসানো হলো। ওর পাশে স্নেহার চেয়ার খালি। পাশে দাঁড়িয়ে আশে ওর ফ্রেন্ডরা।
অন্তরা নিচে স্নেহাকে আনতে গেছে।
অন্তরা নিচে এসে দেখে রুম ফাঁকা স্নেহা নাই। স্নেহা কে ডাকতে লাগে কিন্তু নো রেসপন্স ভয় পেয়ে যায় অন্যান্য রুমে খুজতে লাগে শেষে না পেয়ে ছুটে ছাদে চলে আসে।

অন্তরাকে হাঁপাতে হাঁপাতে আস্তে দেখে সবাই অবাক হয় সাথে রুনা বলে,
কিরে একা কেন স্নেহা ক‌ই। আর এমন হাপাচ্ছিস কেন?

আপা স্নেহা তো রুমে নেই।

মানে। রুমে নেই অন্য রুমে দেখেছিস।
অবাক হয়ে।

হুম কোথাও নেই আমি কতো ডাকলাম কোন সারা শব্দ নেই। কোথায় গেল ও।

আদ্র সোফায় থেকে দেখতে পাচ্ছে অন্তরা কান্না গলায় কিছু বলছে। অন্তরা তো স্নেহা কে আনতে গেছিলো তাহলে ও একা কেন আর কি বলছে দুজনের মুখে এতো চিন্তা দেখা যাচ্ছে কেন?
স্নেহার কিছু হয়নি তো কথাটা মাথায় আসতেই সোফা থেকে উঠে পরলো।

কি রে কোথায় যাচ্ছিস?

আমার মনে হয় কোন গন্ডগুল হয়েছে। ওই দেখ।
বলেই অন্তরাদের দেখালো।

আশিক বলল, তুই উঠিস না সবাই কি ভাবে। আমি দেখ আসছি।

আদ্র দেখলো নতুন জামাইয়ের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে তাই উঠলো না।

কিন্তু একটু পর যা শুনলো তাতে ওর পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল।অলি রানি কে বলছে,

স্নেহা আপুকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই খুঁজছে কোথায় গেল বলতো।সবাই চিন্তা করছে অনেক‌।

স্নেহাকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি কি হয়েছে ওর। কোন বিপদ বুকে ব্যাথা অনুভব করছে আদ্র আর কোন দিক না তাকিয়ে স্টেজে থেকে দৌড়ে নেমে এলো সবাই জামাইয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
সেদিন খেয়াল নেই আদ্রর ওর মাথায় শুধু স্নেহা এখন। মনে হচ্ছে ওর কাছ থেকে কেউ ওর আত্না নিয়ে গেছে।

আদ্র পাগলের মতো সারা বাসা তন্ন তন্ন করে ও স্নেহার মুখ দেখতে পেল না।পাগলের মত বিহেভ করছে কেউ সামলাতে পারছে না।
রাহাত অন্তরার থেকে জানতে পারলো সকালে মাইশা এসেছিলো এটা শুনেই ও সিউল হয়ে গেছে এর পেছনে ওর হাত আছে। আদ্রকে বলতে হবে কিন্তু আগে ওকে শান্ত করতে হবে।
__________________

~~চলবে~~
~~চলবে~~
~~চলবে~~
~~চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here