অচেনা শহর পর্ব ৮+৯

#অচেনা শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৮

ভোরের আলো ফুটবে স্নেহার ঘুম ছুটে গেল।
চোখ মেলে তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ উঠে বসলো। কাল সারারাত জ্বরের মধ্যে ছিল রুনা আপু রাতে খাবার দিয়ে গিয়েছিলো ওষুধ খাইয়ে দিয়ে গেছিলাম। এখন শরীর ঠান্ডা জ্বর কমে এসেছে। স্নেহা উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো। সাথে সাথে কলিংবেল বেজে উঠলো,,

দরজা খুলতেই দেখি রুনা আপু দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,,

” কিরে এত সকাল সকাল উঠে পড়েছিস জ্বর কমেছে?”

“হ্যাঁ আপু এখন জ্বর নাই শরীর।”

“যা বলতে এসেছিলাম সকালে রান্না করিসনা আমি খাওয়া দিয়ে যাবনি।”

“কি সব বলছো তুমি খাবার দেবে কেন? কালকে রাতে তুমি খাবার দিয়ে গেছিলে! এখন দরকার নাই আমি এখন সুস্থ আছি রান্না করতে পারবো তুমি এত টেনশন করো না।”

“কিন্তু..”

“কোন কিন্তু না আপু ভাইয়া কি অফিসে চলে গেছে তাহলে তুমি আমার সাথে খেয়ে নিও।”

“না না তোর ভাইয়া তো একটু আগেই কেবল গেল রান্না করতে দিল না বাইরে নাকি খেয়ে নিবে। আজকে আগেই গেছে।”

“তাহলে তুমি রান্না করো না আমি করি এখানে খেয়ে নি ও।”

“এই শরীর নিয়ে আবার রান্না করতে যাবি।”

“সমস্যা হবেনা আমার অভ্যাস আছে।”

আপুর কথা শুনলাম না। আমার সাথে না পেরে আপু রান্না করে আমাকে সাহায্য করতে লাগলো। দুজন মিলে রান্না শেষ করে সকালের নাস্তা করে নিলাম। আজকে শুক্রবার এ জন্য ভার্সিটি ও অফ।

আপু কিছুক্ষণ থেকে দুপুরের আগে চলে গেল। আমি বাসার টুকটাক কাজ করে রুমে আসছি ফোন বেজে উঠল। ফোন হাতে নিয়ে দেখি 10 মিসকল।
সব অন্তরার নাম্বার থেকে ফোন রিসিভ করতেই ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,,,

“স্নেহা আর ইউ ওকে তুই ঠিক আছিস তো। তোর নাকি…

“আমার আবার কি হবে আমি তো ঠিক আছি।”

“আমি শুনলাম তুই নাকি অসুস্থ।”

“না তোকে কে বললো আমি অসুস্থ।”

“জানি আমি তুই কেন আমাকে মিথ্যা বলছিস? কালকে তুই হসপিটালে ছিলিস সেটা কি মিথ্যা কথা!”

“স্নেহা অবাক হয়ে অন্তরের কথা শুনছে, স্নেহা কিছু বলে নাই জানলে কিভাবে?”

“তুই জানলি কি ভাবে আমি হসপিটালে ছিলাম?”

“একজন বলেছে।”

“কে বলেছে?”

“কালকে জানাই, আমি সব শুনছি তুই নাকি পুকুরে পড়ে গেছিলি কি করে হলো এসব?”

“হ্যাঁ একটু অসাবধানতায় পড়ে গেছিলাম।”

“এখন ঠিক আছিস তো আমি কি তোকে দেখতে আসবো?”

“তারা দরকার হবেনা আমি এখন একদম সুস্থ আছি।”

“সত্যি তো।”

“হ্যাঁ।”

আর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। অন্তরা কিভাবে জানালো ওকে তো আমি এখনো কিছু জানায় নাই তাহলে ওকে কে বলল?

পরক্ষণেই আবার মনে পড়লোভার্সিটিতে ঘটনাটা ঘটেছে অনেকে অবশ্য দেখেছে তাদের মধ্যে হয়তো বা কেউ অন্তরাকে জানিয়েছে।
স্নেহা অন্তরাকে সবই জানতো কিন্তু এভাবে বললে ও দুশ্চিন্তা করবে বেশি এজন্য ভেবেছিল ভার্সিটিতে গিয়ে সামনে সামনে সব বলবে। কিন্তু ও তো সব জেনেই গেছে।

বিকেলে আমিই রুনা আপুর খোজ করতে লাগলাম, সে বলেছিল আমাকে একটা টিউশনির ব্যবস্থা করে দেবে।গিয়ে সেই সব বিষয়ে জানার জন্য তার বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপলাম কিন্তু দরজা খুলছে না মনে হয় বাসায় নাই গেল কোথায়! ছাদের কথা মনে পড়লো আরেক সিড়ি বেয়ে ছাদে আসলাম।

পুরো ছাদে চোখ বুলালাম অনেকেই আছে ছাদে বিকাল টাইমে অনেকেই ছাদে থাকে। এজন্য একটু অস্বস্তি হলাম আমি সবার সাথে মানিয়ে নিতেআমার সমস্যা নাই কিন্তু সবাই আমাকে দেখে আমার সাথে যেমন করে এতে আমার একটু খারাপ লাগে।

রুনা আপু চাঁদের বাম কর্নারে একটা মহিলার সাথে গল্প করছে রা য়া ছোটাছুটি করছে একটা ছোট্ট বাবুর সাথে।
ডান কানা রে দুইটা মেয়ে বসে আছে তাদের দুজনের হাতেই ফোন ফোনে কি জানি দেখছে আর হাসাহাসি করছে। সাতটা অনেক বড় আর ছাদে সবাই সবার মত সময় কাটাতে পারে বাসার বাড়িওয়ালা অনেক ভালো একজন মানুষ। আমি আজকে দিয়ে দ্বিতীয় বার ছাদে আসলাম।
আমি ছাদের উপরে পার রাখতেই রায়া ছুটি আমার কাছে আসলো।রায়াকে কোলে তুলে আপুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

“স্নেহা তুই আয় বস।”

আপুর পাশের মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম,, “এই মেয়েটাই বুঝি নতুন এসেছে।”

আপু হ্যা বলল। মহিলাদের জন্য আমি আর জিজ্ঞেস করলাম না কিছু মহিলাটি কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেল এখন আমি আর আপু বসে আছি।

“আপু তোমার সাথে আমার একটা কথা ছিল।”

“বল কি কথা?”

“তোমাকে যে বলেছিলাম আমার একটা টিউশনির কথা তুমি বলেছিলে ব্যবস্থা করে দিবে তা কি ব্যবস্থা করতে পেরেছ?”

আপু সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল তারপর উত্তেজিত হয়ে বলল,,

“কি ভোলা মন আমার দেখছিস স্নেহা? আমার তোকে বলতেই মনে ছিল না। আমার বান্ধবীর ভাইয়ের দুই জমজ ছেলে-মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। রিয়েল লেখিকা তানজিনা আক্তার মিষ্টি।অনেকের নিজের নামে দিয়ে গল্পটা পোস্ট করে দয়াকরে রিয়েলি কার নাম লেখা না থাকলে পাঠকরা এর প্রতিবাদ করবেন আশা করছি।যদি প্রতিবাদ না করেন তাহলে নেক্সট পর্ব পাওয়ার আশা কইরেন না। ইংরেজি আর গণিত দুজনকে সাবজেক্ট করে পরাবি তারা তোকে মাসে 5000 টাকা দেবে।এখান থেকে বেশি দূর না যাইতে মনে হয় দশ মিনিট সময় লাগে আমি তোকে প্রথম দিন নিয়ে যাব নি। এবার বল তোর কাজটা পছন্দ হয়েছে”

মাসে পাঁচ হাজার টাকা আসবে এটা ভেবে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল স্নেহা।

বলল এক তারিখ থেকে পড়াতে যেতে মাসে আজকে 25 তারিখ তাহলে আর পাঁচ দিন পর থেকে পড়াতে যেতে হবে। মা খুশি হয়ে রুনা কে জড়িয়ে ধরল,,

.

রাত এগারোটা টার কাছাকাছি। স্নেহা বারান্দায় বসে দাঁড়ায়। হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ছে অনেক কালকে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী কিন্তু মায়ের কবর দেখতে পারবেনা এটা ভাবতেও চোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। গ্রামে থাকলে মায়ের কবরে টা একবার ছুঁয়ে দেখতে পারতাম।

মায়ের কথা মনে পড়তেই আবার স্নেহার ভাই নামক শত্রুর কথা মনে পড়ল, সাথে সাথে ওর চোখ মুখ রাগে ফেটে পড়ল।মন চাইছে ভাই নামের শব্দটাকে মেরে ফেলতে তার জন্য মারা হল বাবা এমন ঘরে পড়ল। সবকিছু হয় ভাই নামক শত্রু তার জন্য‌। কোনদিন ঐ লোকটাকে ক্ষমা করবে না কোনদিনও না।চোখের সামনে যদি ভুলে ও পরে আমি মেরে ফেলবো একদম মেরে ফেলবো।

একটা সময় কত মিষ্টি সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনদের। সেই মিষ্টি সম্পর্কটা আজ শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এমনভাই যেন পৃথিবীতে আর কারো না হয়।

আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে কথাগুলো ভেবে চলেছে স্নেহা। হঠাৎওর চোখ নিচের দিকে আসলো, সাথে সাথে ওর ব্রু কুঁচকে উঠলো,,
ফাঁকা রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়ছে না হালকা আলোতে একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে একটা বাইক এর উপরে কেউ বসে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। কে ওখানে এভাবে এদিকে তাকিয়ে আছে কেন?

চরম বিষ্ময় নিয়েস্নেহা সেদিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কে বোঝা যাচ্ছেনা অন্ধকার এর সাথে বোঝা যাচ্ছে একটা ছায়া। এর থেকে বেশি কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াল,মতলব ঠিক লাগছে না উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে এলাম।

রুমে এসে চিন্তা করতে লাগল স্নেহ কে ওখানে এভাবে দাড়িয়ে ছিল আমার বারান্দার দিকে তাকিয়েছিল কেন? নানা চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে
এনার মতলব কি খারাপ না ভালো? একটি চোর ডাকাত কেউ? মাথা ব্যাথা হচ্ছে কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিল কালকে আবার ভারসিটি তে যেতে হবে।

পরদিন,,

অন্তরা আর আমি ক্যান্টিনে বসে আছি।আমার এখানে আসার ইচ্ছে ছিলনা অন্তরা জোর করে নিয়ে এসেছে। আসার পর থেকে কালকের সব শোনার জন্য পাগল হয়ে গেছে।তারপর আর কি সবকিছু বললাম আদ্রর প্রথম থেকে করা সবকিছু তারপর আমার কিছু মনে নেই আমার মনে হয় রাহাত ভাই আমাকে বাঁচিয়ে ছে সেটাও ওকে বললাম।

“রাহাত! কিন্তু আমি তো শুনলাম …

অন্তরার কথা না শুনে স্নেহা
বলতে শুরু করল,,,

“এবার তুই বল তুই কিভাবে জানলি তুই তো কাল ভার্সিটিতে আসিস নি।”

“হ্যাঁ আমি না কাল আসলে নি আমাকে না কাল সুজাতা বলেছে।”

“সুজাতা?”

“আরে চিনতে পারছিস না ওই যে আমাদের ক্লাসের মেয়েটা মোটা করে।”

“ওহে।’

সুজাতা মেয়েটা মোটা করে শ্যামলা বর্নের। সে প্রথম দিন ভার্সিটিতে এসে আমাদের সাথে থেকেছে আর আসেনি ও নাকি শুধু এক্সাম দেবে।

“ওই মেয়েটা সেইদিন এসেছিল। আমি তো দেখি নাই।”

“ও তো বলল ও নাকি পরে এসেছিলো। মানে ক্লাসে স্যার ঢুকেছিলে বলে আর ক্লাসে ঢুকে নাই। ক্যান্টিনে ছিল সেখান থেকে নাকি তোকে পুকুরে পড়ে যেতে দেখেছে তারপর তোকে আ..

আমরা দুজনে কথা বলেছিল এর মাঝে চেচামেচি করতে করতে আদ্ররা ক্যান্টিনে এলো।

ওদের পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো আদ্র সাথে ওর সবগুলো ফ্রেন্ড আদ্র ক্যান্টিনে এসে একনজর স্নেহার দিকে তাকালো, তারপর ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দিল।

স্নেহা ওদের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালে সবার দিকে। আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রর ওর দিকে তাকিয়ে আছে পাশে বসা মাইশার দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা বলল,,
মাইশা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো,

স্নেহা ঘৃণার নজরে আদ্রর থেকে চোখ সরিয়ে নিল। এই লোকটা কালকে ওকে মারার বন্দোবস্ত করেছিল।
ছেলেটাকে খারাপ ভেবেছিল কিন্তু এতোটা ভাবেনি।

স্নেহা অন্তরা দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

“অন্তরা চল যায় এখান থেকে।”

“কেন ? ক্লাস তো আরো 15 মিনিট পর।”

অন্তরা কথার মাঝেই স্নেহা উঠে দাঁড়ালো,

স্নেহা সোজা বাইরে হাটা ধরল অন্তরা ও বাধ্য হয়ে ওর পেছনে আসতে লাগলো।

দেখছিস কত অসভ্য মেয়ে কেমন তেজ দেখিয়ে চলে গেল। আমাদের দেখে। মেয়েটাকে আমার একদম দেখতে মন চায় না।
মাইশা কথাটা বলে নাক ছিটকালো।

আবার আদ্র দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,আদ্র এই মেয়েটার জন্য কালকে কত কিছু করলি আর এই মেয়েটা তোকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিল না। কেমন অসভ্য মেয়ে বলছে এই জন্য মেয়েটাকে দেখতে পারিনা, আর ড্রেস আপ দেখেছিস প্রতিদিন মনে হয় এই ড্রেসটাই পরে আসে। এই মেয়ের কি আর ড্রেস নেই নাকি। আবার দেখবি নবীন বরনের দিনে ও এই ড্রেস পরে এসছে। যত্তসব গাইয়া কোথা থেকে যে আসে।
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৯

মাইশা নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে হঠাৎ আদ্রর দিকে চোখ পড়তেই ও চুপসে গেল। কথা অফ করে একটা মেকি হাসি দিল।

“উঠছো কেন খাবে না?”

“না।”

“না মানে সবাই খেতে এলাম এখন না খেয়ে চলে যাবে।”

“আমি কি সবাইকে চলে যেতে বলছি তোরা খা। আশিক আমার সাথে আয় তো।”

“কোথায় যাবে?”

“দরকার আছে। আদ্র কাউকে কৈইফত দিতে পছন্দ করে না নেক্সট টাইম যেন এই ভুল তোর মাঝে না দেখি।”

বলেই আদ্র বেরিয়ে গেল ওর পেছনে আশিক ও গেল।

এদিকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে মাইশা।

“দেখলি আজও তোকে কেমন ইগনোর করে চলে গেল।”

“কি বলতে চাইছিস তুই রাইসা?”

“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদ্রকে মনের কথা জানিয়ে দে। কবে জানি আবার তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে ধরে বসে।”

“অসম্ভব। আদ্র আমাকেই লাইক করে দেখিস না অন্য কোন মেয়ের সাথে কেউ কথা বলে না‌। আর কাউকে তো ওর সহ্য করতে পারে না। আর ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে হলাম আমি আমাকে রেখে অন্য কাউকেও লাইক করবে ইম্পসিবল।ও আমাকে লাইক করে দেখিস রাগটা আর ওর অ্যাটিটিউড একটু বেশী এজন্য বুঝতে দেয় না। আর এই অ্যাটিটিউড হ্যান্ডসাম লূকের জন্য তো ওকে আমি এত ভালবাসি।”

“কি জানি ? জানি না বাবা”

রাইসা মনে মনে ভাবতে থাকে,,,
“তোকে যে আদ্র একটু সহ্য করতে পারে না সেটা আমার থেকে আর কেউ ভালো জানে না। আর তুই ভেবে বসে আছিস যে ও তোকে লাইক করে হাধারাম একটা।”

“তা জানবি কেন তুই কোন কামের না।”

বলে মুখ বেঁকিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।

রাইস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে রাইসা। ভার্সিটিতে এসে আদ্রর ও তার সব ফ্রেন্ডের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়। মাইশা একটু অহংকারী কিন্তু মনটা ভালো। ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা খুব কাকতালীয়ভাবে হয় রাইসাকে আদ্র সাহায্য করেছিল এখানে পড়াশোনায় । মধ্যবিত্ত হলেও ভাই-বোনের সংখ্যাঅনেক জানার জন্য টাকার অভাব পড়ে পরীক্ষার ফিস দিতে না পারায় এক্সাম দিতে দেয় না তখন আদ্র ওকে সাহায্য করে। তখন থেকেই ওর সাথে আদ্রর ফ্রেন্ডশিপ। তখন থেকে আদ্রর,আশিক, মাইশা, আয়রা, রাহাত, নাদিম, অনিক, আবির, রাফি আরো কিছু আছে সবাই একটা গ্রুপ হয়। এই গ্রুপে আগে দুইটা মেয়ে ছিল মাইশা আর আয়না। আয়রা আর মাইশা দুজন চাচাতো বোন। আয়রা আদ্রর ফুপাতো বোন আর সেই সুবাদে আয়রার সাথে আদ্রর এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।আর আয়নার চাচাতো বোন মাইশা সেজন্য দুজন গ্রুপে মেয়ে ছিল পরে আবার আমাকে যুক্ত করা হয়েছে।

প্রথম প্রথম মাইশা আমাকে দেখতে পারত না। কিন্তু থাকতে থাকতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হয়েছে। তবে জানতে পারি মাইশা আদ্র লাইক করে প্লাস ভালোবাসে। মাইশা অনেকগুলো রিলেশনও করেছে কিন্তু ও সবার সাথে টাইম পাস।
ও মনে করে আদ্রর ওকে লাইক পরে কিন্তু আমার তো মনে হয় না।

কিন্তু সামনা সামনি বললে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবে এজন্য চেপে গেলাম।

আয়রা বেড়াতে গেছে এজন্য ভার্সিটিতে আসতে পারতেছে না। কালকে ফিরে আসার কথা।

.

আদ্র আর আশিক স্নেহা দের ক্লাসে এলো। আশিক আর আদ্র ক্লাসের ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো।

যেন ক্লাসে স্যার এসেছে। আদ্র ক্লাসে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুজল, সবাই দাঁড়ানো দেখে স্নেহাকে চোখে পড়েনি আদ্রর স্নেহা সবার লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্প করছে অন্তরার সাথে এজন্য ও আর অন্তরা বাদে সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আদ্রর এটা দেখে রেগে উঠলো,

আদ্র স্নেহা আর অন্তরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
স্নেহা আর অন্তরা গল্প করতে এতটাই মগ্ন ছিল যে আদ্র কি খেয়ালই করেনি। আদ্রর রাগ মাথায় উঠে গেল।

ও রাগে বেঞ্চে একটা বারি মারলো,, ক্লাসের সবাই বারি পেছনে তাকালো,
স্নেহা আর অন্তরা আচমকা শব্দে ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালো, স্নেহা কিনারে বাসা ছিল আর অন্তরা সাইডে আদ্র স্নেহার মুখোমুখি মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা দাঁড়াতে আদ্রর মাথার সাথে বারি খেয়ে আবার সাথে সাথে বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।

আদ্র ওইভাবেই ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা তার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠল,

কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,, আ আ প নি ,,

“এত কিসের গল্প হচ্ছে যে সবাই আমাদের খেয়াল করলো আর তোমরা ফিরে তাকালে না।”

চিৎকার করে কথাটা বললো আদ্রর।

স্নেহা কথা বলতে পারছে না ও আদ্রর দিকে তাকিয়ে কাপাকাপি করছে। আচমকা আদ্রকে দেখে চমকে উঠে তারপর আবার চিৎকার করে বলা কথায় ভয় পেয়ে গেছে।

অন্তরা বলে,,” আসলে ভাইয়া আমরা একটা…

“স্টপ তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি আমি। যাকে জিজ্ঞেস করেছি তাকে বলতে দাও। হ্যালো মিস স্নেহা বলুন কি কথা হচ্ছিল।তোমাকে ঐদিন স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলতাই না ক্লাশে এসে পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়ার গল্প করা ইডিয়েট।”

স্নেহা লজ্জায় অপমানে মাথা নিচু করে আছে আদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, এক নজর স্নেহার মুখের দিকে তাকিয়ে সোজা সামনে এসে দাঁড়ায়।

তারপর নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নিয়ে কথা বলতে লাগে সবাইকে শাড়ি পড়ে আসতে বলে। মেয়েদের লাল শাড়ি আর ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি। আর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটা জানতে চাই। নাচ গান কবিতা আবৃতি অভিনয় সবকিছুই আছে। দিতে চাইলে ম্যাডাম আর একটা স্যারের নাম বলে। তাদের কাছে গিয়ে নাম দিতে হবে।

মেয়েগুলো তো হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল।
কথা শেষ করে বের হয়ে আসে।

আদ্র বেরিয়ে আসতে আবার আগের মতো গল্পে মেতে ওঠে সবাই স্নেহা আর অন্তরা হতভম্ব হয়ে বসে থাকে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছু ওদের মাথায় ঢুকলো না।

“দেখলি কতো অসভ্য এই ছেলেটার মতো বেয়াদব আরে একটা ও আমি দেখি নাই। কি বলছিলি এই ছেলে আমাকে বাঁচিয়েছে বললাম থ্যাংকস বলবো। অসম্ভবে ছেলের জন্যই তো আমি পড়েছিলাম ও যদি আমাকে সিগারেটের ধোঁয়া না দিত তাহলে আমি পড়তাম ই না।”

“আদ্র ভাইয়াকে কিন্তু আমার সেই লাগে! হ্যাঁ একটু রাগী বটে কিন্তু দেখতে কিন্তু হেব্বি।”

“দেখলে সুন্দর হলে হয়না মনটাও সুন্দর হতে হয় ছেলে যতটা দেখতে সুন্দর ততটাই মনটা খারাপ। প্রথম দিন থেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে যাচ্ছে।”

অন্তরা কিছু বলল না,, কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলল,,

স্নেহা পরশু তো শাড়ি পড়ে আসতে হবে লাল শাড়ি।আমিতো শাড়ি পরতে পারি না আমার তো পার্লারে যেতে হবে তুই কি যাবি তাহলে আমরা দুজনে একসাথে পার্লারে গিয়ে সেজে আসবো।

স্নেহা বড় বিপদে লাল শাড়ি পড়ে আসার কথা শুনে। না আছে শাড়ি একটা শাড়ি আছে সেটাও লাল না নীল এর মধ্যে সাদা শাড়ি। মার বিয়ের শাড়ি লাল ছিলো সে শাড়িটা ভাবি নিয়ে গেছে আর একটা ছিল। মাকে আব্বু পরে কিনে দিয়েছিল।নীল এর মধ্যে শাড়িটা সুন্দর অতো কাজ নয় পারটা সাদা ভেতরে হালকা কাজ আছে‌।
সেটা পরলে তো হবেনা। কি মুশকিলে পড়লাম এখন লাল শাড়ি কোথায় পাব। স্নেহাকে এত ভাবতে দেখে অন্তরা ওকে ধাক্কা দিয়ে ধ্যান ভাঙালো,,

“কিরে শাড়ি পরে আসবে না।”

“না।”

“হোয়াট কি বলল শুনলি না শাড়ি পড়ে আসতে হবে এটা তো বাধ্যতামূলক।”

“কি পরে আসবো এটা আবার বাধ্যতামূলক হবে কেন আমার যা আছে আমি তাই পরে আসবো।”

“দেখলি না সবাইকে পরে আসতে বলল।”

“এখন এসব বাদ দে ক্লাস কর।”

বলে আর স্নেহ কথা বাড়ালো না। ক্লাসে মনোযোগ দেয় স্যার ও এর মাঝে চলে আসে।

ক্লাস শেষে স্নেহা সোজা বাসায় চলে এলো।
অন্তরার সাথে তেমন কথা বলল না।

চলবে♥️
চলবে♥️

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here