অচেনা শহর পর্ব ৬+৭

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৬

দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ চলে গেছে। এর মাঝে আর আজ আমার সাথে বা অন্তরা কারো সাথে কথা বলে নাই ভালো কিংবা খারাপ। আমরা আমাদের মতো আসি আমাদের মতই থাকি প্রথম প্রথম ভয় হয়েছিল আবার আসবে কিছু বলবে কিনা। কিন্তু আর কেউ কিছু বলে নাই তাই এখন ভয়টা কেটে গেছে তাদের আশেপাশে খুব কম যাই বললেই চলে। এ সেই ক্লাসের ঢুকি আর বের হয়না অন্তরা বের হয় আমি ক্লাসে বসে থাকি ভালো লাগেনা কিছু বসে বসে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। ক্লাস শেষ হলে বের হয়ে যায় টিফিন টাইমে অন্তরা অনেক ডাকে খেতে যাওয়ার জন্য যায় না।
প্রথম প্রথমে স্টুডেন্টরা আমাকে নিয়ে চর্চাটা বেশি করেছে এখন আর সেসব দেখি না। কিন্তু কেউ আমার সাথে মিশে না বললেই চলে তার প্রধান কারণ আমার ড্রেস আপ নাকি কারো পছন্দ না। কার সাথে বসতে গেলে একই কথা তুমি আমার পাশে বসে না প্লিজআমার তোমাকে ভালো লাগে না তুমি একটু স্মার্ট হয়ে আসতে পারো না কেমন খালাম্মা খালাম্মা লাগে। যেন যে সিটে কেউ থাকেন ঐ সিটে গিয়ে বসে পড়ি এর মাঝে অন্তরা কলেজ আসে নাই একদিন। সেদিন পড়েছিলাম মহা মুশকিলে। আমি একটা সিট ফাকা পেয়ে সেই সিটে বসে পড়ি আজকে অন্তরা আসবে না। অন্তরা থাকলে নিজেকে একা মনে হয় না কিন্তু আজকে একাকীত্বটা বুঝতে পারছি।

ক্লাস এতই স্টুডেন্ট অথচ কেউ আমার বন্ধু না সবাই সবার সাথে হাসি তামাশা করে চলেছে। আমি নিজের সিটে বসে সবার আনন্দ দেখছি নিজের চাইছি যদি এরাও আমার সাথে এভাবে গল্প করতো। কিন্তু এটা তো সম্ভব না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। যতদূর চোখ যাচ্ছে দেখে যাচ্ছে মাঠে একই স্থানে একেক স্টুডেন্ট বসে আছে। সবাই নিজেদের ফ্রেন্ড দের নিয়ে মেতে আছে। আচমকা আমার চোখটা ঝাপসা হয়ে হেলো গ্রামে থাকতে আমারও এমন ফ্রেন্ড ছিল আমরা সবাই কত আড্ডা দিতাম লেখাপড়া করে অবসর সময় আড্ডা দিতাম। রিনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল পরীক্ষার পর ওর বিয়ে হয়ে গেছে। গ্রামে থাকতে ওর বিয়ে খেয়ে এসেছি। গ্রামে কলেজ আছে কিন্তু ভালো ভার্সিটি নাই এজন্যই শহরে আসা। বাবার জমানো শেষ সম্বল ব্যাংকের টাকা উঠিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম আর কিছু টাকা আছে ওইটা কাইবা কতদিন যাবে। একটা কাজের ব্যবস্থা করতেই হবে।

আমি যে বাসায় থাকি সেটা নিচতলা। পাঁচতলা বিল্ডিং আমি নিচ তলার দুটো রুম নিয়েছি।সে যত রুমের ভাড়া 5 হাজার টাকা রুমগুলো ছোট আর একদম অযোগ্য ছিল এজন্য 4000 টাকায় দিয়েছে। না হলে তার অন্যসব রুমের ভাড়া নাকি একেকটা 4000 করে। তাহলে আমি ভাড়া নিতে পারতাম না। নিচতলার আমার পাশের রুম সেখানে একটা আপু থাকে তার একটা মেয়ে আছে দুই বছর।তার সাথে আমার এই কয়দিনে অনেকটা সম্পর্ক ভালো হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগ সময় আমার কাছে থাকে তার মেয়ে রায়া। সেই ভাবির নাম রুনা রুনা আপুকে আমি আমার সমস্যার কথা সব বলেছি। আপু বলেছে আমাকে একটা টিউশনি খুঁজে দেবে।আজকে গিয়ে সে কথাটা আবার জিগ্গেস করতে হবে পেয়েছে কিনা?

এক মনে বাইরে তাকিয়ে কথাগুলো ভেবে যাচ্ছি। কখন যে স্যার এসেছে টের পায় নাই। হঠাৎ স্যার এর ডাক কে চমকে দাঁড়ায়,, স্যার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
একটা শুকনো ঢোক গিলে স্যারের দিকে তাকায়,

এই যে মেয়ে কি যেন নাম তোমার?

জি স্যা র স্নে হা? ভয়ে টেনে টেনে কথাটা বলি!

আমি যে ক্লাসে এসেছি সেটা তুমি খেয়াল করেছো বাইরে থেকে কি করছিলে?

স্যার আসলে…

স্টপ ইট বেয়াদব মেয়ে বাইরে তাকিয়ে ক্লাসে অমনোযোগী ছিলে আবার এখন মুখে মুখে কথা বলছ। যাও বের হ‌ও ক্লাস থেকে।

কিন্তু স্যার…

তুমি আবার মুখে মুখে কথা বলছ আমার কথা না শুনে। গেট আউট।

স্যারের চিৎকার শুনে, এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে স্নেহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে এভাবে স্যার বের না করলেও পারত।এমনিতে স্যার আমাকে দেখতে পারেনা প্রতি ক্লাসেই কিছু না কিছু বলে কিন্তু অন্তরা কে সামলে নেয়। আজ অন্তরা নাই আজকে আমাকে এভাবে বের করে দিল।কেন সবাই আমার সাথে এরকম করে আমার টাকা নাই আমি গরিবের জন্য আমি এখানে পড়তে পারবোনা।কেউ তো আমার সাথে এমনিতেই মেশে না তবুও আমি নিজের কষ্টকে ধামাচাপা দিয়ে সবার সাথে মিশে থাকার চেষ্টা করি তবুও সবার আমাকে এভাবে কষ্ট কেন দেয?

দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি নিজেকে আর স্বাভাবিক রাখতে পারছি না। এলোমেলোভাবে নামছিলাম হঠাৎই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে চাইছিলামএমনিতে আমি এলোমেলোভাবে হাঁটছিলাম এখন নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে পড়ে যেতে নেয় আমি চিৎকার করে উঠি এখান থেকে একদম গড়িয়ে নিচে পড়লে প্রচন্ড ব্যাথা পাবো। ভাবতে গা শিউরে উঠছে ভয়ে বন্ধ করে ফেলি।অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু আমি নিচে পড়ছি না মনে আছে কেউ আমার কোমর শক্ত করে ধরে আমাকে পড়ার হাত থেকে বাচিয়েঁছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়।

চোখ মেলে তাকিয়ে আমি আরও ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে পড়ে গেলে মনে হয় ভালো হতো। প্রায় দুই সপ্তাহ পর আবার সেই মুখ দেখতে পাচ্ছি। এতদিন দূর থেকে দেখেছি আজকে আবার কাছে। আমি বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। অনেকক্ষণ হয়ে গেল আমাকে ছাড়ছে না সেইভাবে ধরে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমিও তার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি এমন করে তাকিয়ে আছে কেন?

আদ্রর নিশ্বাস আমার মুখে বারি খাচ্ছে। শক্ত করে আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে আটকে রেখেছে। অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আমার শরীরে।ফার্স্ট টাইম কোন ছেলে আমাকে এভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। আদ্রর নড়াচড়া না দেখে আমি নিজে একটু নড়ে উঠলাম।
সাথে সাথে আদ্র আমাকে ধরে রাখা নিজের হাত আলগা করে ফেলে।আমি চোখ বড় বড় করে নিজের দুই হাত দিয়ে আদ্রর শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরি‌
—-এভাবে ছেড়ে দিলে তো আমি পড়ে যাব আমাকে সোজা করে দাড় করান এভাবে ছাড়বেন না প্লিজ।

অসহায় মুখ করে কথাটা বললাম,,

—তোমাকে আমি সাহায্য করবো ইম্পসিবল।

—প্লিজ প্লিজ এভাবে ছাড়বেন না আমি ব্যথা পাব দেখুন কতগুলি সিড়ি আছে এখন আমি একদম পড়ে যাব।

—সো আই ডোন্ট কেয়ার!

—আপনি আমাকে এর জন্য যা করতে বলবেন আমি তাই করবো তবুও আমাকে এভাবে ফেলে দিবেন না প্লিজ।

আমার কথাটা শুনে আদ্র কিছুক্ষন চুপ করে কিছু একটা ভাবে।
—ঠিক বলছো তো।

—হ্যাঁ!

আমার ওই সময় আর তেমন কিছুই মনে পড়েনি নিজেকে রক্ষা করতে আমি হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছিলাম। একটা হাসি দিয়ে আমাকে টেনে ঠিক করে দাড় করায়। আমি দাঁড়িয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি,
মাথায় থেকে ওড়না পড়ে গেছে তাড়াতাড়ি ওড়না টেনে মাথা থেকে নেয়। দুই সিড়ি নিচে পড়ে আছে ব্যাগ আমি নিচে নেমে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নিচে নামতে লাগলাম কি মনে করেছেন আবার পেছন ফিরে দেখি আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিলাম।

তারপর নিচে নামতে লাগলাম পেছনে থেকে আবার আদ্রর ডাকে থেমে গেলাম।

—জি বলেন।

—তোমার ভয় করছেনা??

—কেন?

—আমার কথা এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলে। এখন আমি তোমায় কি দিয়ে কি করাতে পারি সেটা ভেবে।

কথাটা শুনে স্নেহার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় ভয়েআতঙ্কে তখন কোথায় কি স্বীকার করে ফেলেছে কি বলে ফেলেছে এখন মাথায় আসছে। সেটা মাথায় আসতে স্নেহা থমকে দাঁড়ায়।

আদ্রর এক ধ্যানে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নেহার ভয় পাওয়া মুখ দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছে। নিজের হাসি কন্ট্রোল করে বলল,

—কি ব্যাপার কাঁদছিলে কেন আর এখন না তোমার ক্লাস টাইম ক্লাস না করে বাইরে কোথায় যাচ্ছিলে।

আদ্রর স্নেহার চোখে পানি দেখতে পেয়েছে ধরে। তাই কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেলল,,
দুদিন তোমার ফাস্ট ইয়ারের নবীন বরণ অনুষ্ঠান হবে।আর যত অনুষ্ঠানে সেসব অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এসে পড়ে আদ্রর অপর সেই অনুষ্ঠানের কথা জানানোর জন্যই ওপরে যাচ্ছিল। তখনই হঠাৎ স্নেহাকে এলোমেলোভাবে দৌড়ে নামতে দেখে।

স্নেহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ওকে যে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে সেটা বলতো লজ্জা পাচ্ছে
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

—কি হল কথা বলছো না কেন?

স্নেহা আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে, তখনি আদ্রর ফ্রেন্ড রাহাত আসে রাহাদ এসেদেখে স্নেহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর আদ্র ওকে কি যেন বলছে,,

—এখানে কি হচ্ছে?আদ্রর তুই না ক্লাসে যাচ্ছিলি ফাস্ট ইয়ারের এখানে কি করছিস?

—কিছু না।

বলেই আদ্র একবার স্নেহা দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়।

রাহাত স্নেহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করবে তার আগে স্নেহা সেখান থেকে চলে যায়। দুজনের যাওয়া দিকে তাকিয়ে হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপরও ও উপরে যায়।

আদ্রর দুতালায় গিয়ে কনারের রুমের দিকে যেতে লাগে হঠাত ওর চোখ পড়ে নিচে দেখে স্নেহা বাম দিকে যাচ্ছে। ক্লাস বাদ দিয়ে ওইদিকে কেন যাচ্ছে ওর মাথায় ঢুকছেনা। ফাঁকিবাজ একটা। ওইদিকে লেকের পাড়
ভেবে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস এ ঢুকে। ক্লাসে গিয়ে হঠাৎই স্যারকে জিজ্ঞেস করে,,

—সারাটা আপনার ক্লাসে স্টুডেন্ট যে বাইরে ঘোরাফেরা করছে সেগুলো আপনি দেখেন না।

—-কার কথা বলছো তুমি আদ্র।

আছে হয়তো আপনি ক্লাসে থাকাকালীন বেরিয়ে গেছে।

—ও বুঝতে পারছি। আর বলো না মেয়েটাকে দেখলে আমার রাগ উঠে। তাই আমি আজকে ইচ্ছে করে বের দিয়েছি। আমি ক্লাসে আছি আর ওই মেয়েকে না বাইরে মনোযোগ দিয়ে রেখেছিল।

—এজন্য আপনি তাকে বের করে দিয়েছেন।

—-হ্যাঁ ,কিছুটা খুশি হয়ে। ভালো করেছি না।

.

স্নেহা মাঠ দিয়ে বাম পাশে ওই দিকে হাটতে হাঁটতে যাচ্ছিল এদিকে কেউ ছিলনা তাই। কেউ ওকে পছন্দ করে না এজন্য কারো পাশে ও যায়না। এদিকে আসতে একটা পুকুর চোখে পড়ে। হ্যাঁ আরেকবার আসছি লাম অন্তরার সাথে। আজকে এই পাশে কেউ নাই। ঠান্ডা বাতাস বইছে আমি লেকের পাশে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লাম।

অন্তরায় একদিন আসে নাই আর আজকে আমার সবচেয়ে খারাপ যাচ্ছে দিনটা। অনেকক্ষণ বসে রইলাম হঠাৎ চমকে পেছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আদ্র একটা গাছে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতে চোখ সরিয়ে পকেটে থেকে একটা সিগারেট বের করে আগুন লাগল, তারপর সেটা ফুঁ দিতে দিতে আমার পাশে এসে বসল,,,

আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।

—আপনি এখানে??

সে বসে সামনে তাকিয়ে ছিলো সিগারেটে ফূ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া নিয়ে আমার কথা বলার মাঝে সমস্ত ধোয়া আমার দিকে দিল।

আমি মুখ ধরার আগে সমস্ত ধোয়া আমার নাক মুখ দিয়ে ঢুকে গেছে মনে হয়।

কাশতে কাশতে আমার অবস্থা খারাপ অন্যদিকে ঘুরে আমি খেলেই যাচ্ছি ধুমবন্ধ হয়ে আসছে আমার।

অনেক কষ্টে মুহূর্তে বললাম,,

—একটু পানি দিন প্লিজ’ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৭

কথাটা বলে স্নেহা পেছন ফিরে তাকালো। কোন আওয়াজ আসছে না দেখে। পাশে তাকিয়ে দেখে আদ্র নাই। কাশতে কাশতে ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। গলা ব্যথা করছে মুখে হাত দিয়ে পেছন তাকিয়ে দেখে আদ্র চলে যাচ্ছে। ও সে দিকে এক পলক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়,,

কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আদ্র এমন একটা কান্ড করবে ও কল্পনা তে ভাবে নাই। আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময় হঠাৎ ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিচে পড়ে যায়। একেতে কাশি থামছে না তার ওপর আরেক যন্তণা। অনেক টা কিনার ঘেঁষে বসেছিল স্নেহা পুকুরের কিনারে ব্যাগটা পড়েছে ওই সেটা তুলতে গিয়ে পা পিছলে ধড়াম করে পানিতে পড়ে যায়।

স্নেহার কাশি দেখে বিরক্ত হয়ে আদ্র উঠে যায় ন্যাকামো একদম সহ্য করতে পারে না। এই সিগারেট খেতে বলেছিলাম বলে আমাকে সবার সামনে চর মেরেছিল না এখন সেই সিগারেটের গন্ধ খাও।বলে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে ওঠে শার্টে বুকের কাছ থেকে সানগ্লাস টা বের করে চোখে দিয়ে বাইকের চাবি আঙ্গুলে ঘোরাতে ঘোরাতে চলে যেতে লাগে। স্নেহার কাশি দিতে দেখেছে শুধু পানি চাওয়াটা শুনি নাই।

আপন মনে হেঁটে চলে যাচ্ছে হঠাৎ চিৎকার শুনে পেছনে তাকায়। অনেকটা দূরে চলে এসেছে তাই দূর থেকে কিছু বুঝা যাচ্ছে না শুধু চি‌ৎকার শুনা যাচ্ছে। হঠাৎও খেয়াল করে লেকের পাড়ে স্নেহা নাই। এই মাএ না ওখানে বসা দেখলাম গেল কোথায়।

চলে গেছে বোধ হয় এর সামনে ফেরে আবার তাড়াতাড়ি পিছনে ঘুরে। স্নেহা শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে এমনিতে ও সাঁতার জানে না। কাশিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে অস্থির লাগছে তারপর আবার পানিতে পড়েছে ভয়ে ও কি করবো বুঝতে পারছে না। ডুবে যাচ্ছে পানি খেয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে এখন বুঝি জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। হঠাৎ বাবার মুখটা ভেসে উঠলো আমার কিছু হলে বাবার কী হবে কে তাকে দেখে রাখবে ভাবতে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো।আস্তে আস্তে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো। হঠাৎ মনে হলো কী আমাকে জড়িয়ে ধরেছে? আমি উপরে উঠছি মনে হয়। চোখ খুলতে পারছি না চোখ খুলে মানুষটাকে দেখতে চাইছি। মনে হচ্ছে কেউ আমার গালে হাত দিয়ে আমাকে ডাকছে আমার নাম ধরে। শত চেষ্টা করেও চোখ খুলতে পারলাম না। তারপর আর কিছু মনে নেই যখন চোখ খুললাম দেখলাম আমি একটা অচেনা পরিবেশে আছি চোখ খুলে হাত নাড়াতে গিয়ে হাত নাড়াতে পারলাম না।

হাতে কিছু একটা টান পড়লো সে দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে স্যালাইন দেওয়া । হঠাৎ চিৎকার করে ডাক্তার ডাক্তার বলে ডাক দিল। দেখে দেখে এই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম এই নার্স হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি এখন বুঝতে পারলাম। নার্স ডক্টর কে চিৎকার করে বলছে ডক্টর পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে।

তারপর আমার পাশে এসে একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল এখন কেমন লাগছে?

আমি ভালো বলে। জিজ্ঞেস করলাম,,,আমি এখানে কি করে এলাম আমি তো ভার্সিটিতে ছিলাম।

আপনাকে একটা আমার কথার মাঝে ডক্টর রুমে ঢুকলো। উনি আর উত্তর দিতে পারল না সরে দাঁড়ালো।

ডাক্তার এসে ও এক‌ই কথা জিজ্ঞেস করলো, এখন কেমন লাগছে?

ভালো লাগছে বলাতেই উনি আমার হাত থেকে স্যালাইনটা খুলে নিল।
তারপর দুজনে বেরিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর দরজা হলে খুলে রাহাত ভাইয়া রুমে ঢুকলো। সে এসে আমার পাশে বসলো। তাই দেখে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল সে এখানে কি করছে আচ্ছা উনী কি আমাকে বাঁচিয়েছে। জ্ঞান হারায় আগে আমি বুঝতে পেরেছি কেউ আমাকে ডেকেছিল। পুকুরে থেকে উঠিয়ে ছিল কিন্তু আমি তাকাতে পারছিলাম না।

—হে স্নেহা তুমি পুকুরে কিভাবে পড়লে?

—ভাই আপনি আমাকে উদ্ধার করেছেন তাই না।

—সেসব পরে হবে আগে বল তোমার এই অবস্থা কিভাবে হল কতটা ভয় পাই দিয়েছিলে সবাইকে।

—আজ আর কথা বলতে গিয়ে বলল না।

—জানিনা কিভাবে যেন পড়ে গেলাম।

—থ্যাঙ্ক গড তুমি ঠিক আছো।

—-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। এভাবে সাহায্য করার জন্য। আপনি না থাকলে আমার যে কি হত।

রাহাত কিছু বলবে ওর ফোনটা হঠাৎ বেঁচে উঠল,,

—-একটু বস আমি একটু কথা বল আসছি।

বলে রাহাত দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। স্নেহা আস্তে আস্তে উঠে বসলো পুরা শরীর ব্যথা হয়ে আছে। গলাটা অনেক ব্যাথা হয়ে আছে তখন অনেক কাশি হয়েছিল এজন্য। আদ্রর জন্য আমরা আজ এই অবস্থা। আমি কখনো ক্ষমা করবো না ।বিনা দোষে সরি বলেছিলাম সামান্য একটু গায়ে হাত তুলেছিলাম বলে আমার সাথে এরকম করবে। সে আমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছিল। আজ যদি আমার কিছু হয়ে যেত বাবার কি হতো। বাবার কথা ভাবতে চোখ দুটো স্নেহা ছল ছল করে উঠলো। দেয়াল ঘড়িতে চোখ যেতেই দেখি চারটা বাজে। এত বেলা কখন হয়ে গেল ভার্সিটিতে যখন ছিলাম তখন সাড়ে এগারোটা মত ছিল। এত সময় আমি অজ্ঞান ছিলাম।
তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।

দুপুরে বাবার ঔষধ খাওয়াতে হবে। এখনো তো বাবার না খেয়েই আছে। ওর আর এদিকের কিছু খেয়াল নেই স্নেহা সোজা কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল। রিসিপশনে গিয়ে টাকা দিতে গেলে বলে টাকা নাকি দেওয়া হয়ে গেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে। একটা বাইক দেখে একটু চমকালো বাইকটা তো আদ্রর এটা এখানে কেন? আদ্র কি এখানে আছে?

ভাবতে ভাবতে একটা অটো পেয়ে গেল তাই এদিকে আর মাথা না ঘামিয়ে অটোতে উঠে বসে,

রাহাত ফোনে কথা শেষ করে কেবিন এসে দেখে স্নেহা নাই। স্নেহার নাম ধরে কয়েক বার ডাকে সাড়া শব্দ না পেয়ে বেরিয়ে আসতেই আদ্রর সাথে দেখা হয়।

কিরে এভাবে কি খুজছিস?

স্নেহা কেবিনে পেলাম না আমি কথা বলছিলাম হঠাৎ ফোন আসায় বেরিয়ে কথা বলে এলাম এসে দেখি ও বেডে নাই। গেল কোথায় মেয়ে টা?

চলে গেছে।

চলে গেছে মানে। তুই জানলে কিভাবে চলে গেছে?

দেখলাম অটোতে উঠে গেল।

চলে গেলে তুই আট কালি না। অর শরীর দুর্বল আর ওষুধের নিলোনা। আরেকটা কথাও ভেবেছে আমি নাকি ওকে বাচিয়েছি।

ভালো।

ভালো কেন আমি তার কথা বলতে চাইছিলাম কিন্তু বলার সুযোগই পেলাম না কালকে বলে দেবো।

না দরকার নাই বলিস না।
চল এবার বাসায় যাওয়া যাক সারা দিন তো একটা ফালতু মেয়ের পেছনে সময় নষ্ট করলাম।

তাকে বুঝি না একটু আগে এত অস্থির হয়ে ছিলি কেমন পাগলামি করছিলি এখন কঠিন কথা বলছিস।

ওই অস্থির আমি ওর জন্য কখনোই হই নাই।জাস্ট নিজের জন্য একজন মরতে বসে ছিল তাই তাকে জাস্ট বাঁচিয়েছি বেঁচে গেছে আমার কাজ শেষ। ঝামেলা মুক্ত হলাম আবার মরে গেলে তো ঝামেলায় ফেসে যেতাম এজন্যই বাঁচিয়েছি।

কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না হয়। তুই আবার ঝামেলার ভয় পাস নাকি।

দেখ রাহাত তুই কিন্তু বাজে কথা বলছিস ওই মেয়ের জন্য আমি কেন চিন্তিত হতে যাব।

একটু রেখেই কথাটা বলল আদ্রর আর রাহাত প
কিছু বলল না,,, আচ্ছা চল বাসায় যাই।

আদ্র আগে আগে চলে গেল ওর পেছনে রাহাত ও এল। এই ছেলেটাকে বুঝতেই পারেনা।হসপিটালে আনার সময় আদ্র খুবই পাগলামি করে চিৎকার করে ডাক্তার কে ডেকেছে। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত হাত ধরে বসে ছিল আদ্র স্নেহার ওর চোখে ভয় দেখেছিলাম।

কিন্তু এখন আবার কেমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথা বলল। তখনকার আদ্র আর এখনকার আদ্র দুইজন দুই রকম।

.

স্নেহা বাসায় এসে সোজা ওর বাবার রুমে যায়। গিয়ে দেখি বাবা ঘুমিয়ে আছে। পাশে খাবারের প্লেট। খাবার এলো কোথা থেকে? হঠাৎ পেছন থেকে রুনা আপুর আওয়াজ এলো,,,

কিরে স্নেহা তোর আজকে বাসায় আসতে এত লেট হল কেন? তোর আসতে লেট হয়েছে বলে আমি দুপুরের খাবার দিয়ে গেলাম আঙ্কেলকে। হয়তো ভার্সিটিতে তোর কোন কাজ আটকে পড়েছিল।

ধন্যবাদ আপু আমি তো বাবার জন্য খুব চিন্তা করছিলাম। তুমি আমার অবর্তমানে বাবাকে দেখেছো এজন্য তোমার কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবো।

দেখছো মেয়ের কথা আমি না তোর বোন আমাকে বলিস ঋণী হয়ে থাকার কথা। বোন হয়ে বোন কে সাহায্য করব এটা আবার ঋণের কি হলোরে পাজি মেয়ে আর কখনোই একথা বলবিনা তোকে আমি নিজের ছোট বোন মনে করি। আর আংকেলকে নিজের বাবা মতো ভালোবাসি।

সত্যি আপু তুমি খুব ভালো।

তোর থেকে কম যা এবার ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে কেমন শুকনো লাগছে? শরীর ঠিক আছে তো এমন লাগছে কেন?

সত্যিটা বলো না কিছুক্ষন নিরব থেকে বললাম ঠিক আছে আপু তুমি বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ড্রেস চেঞ্জ করে বসতে শরীর কেঁপে উঠলো শরীরের জ্বর এসেছে বুঝতে পারলাম আমার কথা বলার মত আর পরিস্থিতি ভালো না পেলাম না শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে। ধড়াম করে খাটে শুয়ে পড়লাম। এর মাঝে রায়া আন্টি বলতে বলতে রুমে আসলো কথা বলতে পারছি না চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। একটু পর আপু ভেতরে চলে এলো।

আমাকে পড়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে আঁতকে উঠল চোখ বন্ধ করে আছি আর আপু আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।

চলবে♥️
চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here