গল্প – অতঃপর তুমি আমি
রেশমী রফিক
পর্ব – ১৩
শেষমেশ জামিন পেয়ে বাসায় ফিরল জুনায়েদ। ঘড়িতে তখন রাত এগারটা। আপাতদৃষ্টিতে জামিন হতে খুব একটা সময় লাগার কথা নয়। জুনায়েদের অপরাধগুলো তেমন মারাত্মক ছিল না। কেবল আইন ভঙ্গ করেছিল সে। পুলিশ ওর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সিরিয়াল অনুসারে সেই মামলা কোর্টে উঠবে। তখন কোর্ট থেকে চিঠি আসবে জুনায়েদের ঠিকানায়। ওকে শুনানিতে উপস্থিত হতে বলা হবে। এরপর শুনানি শেষে বিচারক রায় দেবেন। এ ধরনের নিয়মভঙ্গের সাজা হিসেবে জরিমানা হবে জুনায়েদের। অনাদায়ে ভলান্টিয়ারি কম্যুনিটি ওয়ার্ক করতে হবে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে কিছু পয়েন্ট কাঁটা পড়বে। উলটাপালটা গাড়ি চালাবার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যাপারটা আরো কিছুদূর গড়াত। কপাল ছিল বলেই হয়তো ওরকম কিছু হয়নি। তবু, জুনায়েদের জামিন হতে বেশ খানিকটা সময় লাগল। কারণ, তার পুলিশ রেকর্ড ভালো না। বেশ কয়েকবার তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনার সমস্যা হওয়ায় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ এসেছে তার নামে। বেশ কজনের সাক্ষ্য আছে।
জামিন পেয়ে প্রথমেই হাসপাতালে গিয়েছিল জুনায়েদ। দেখা হয়নি পিউয়ের সাথে। ওর অবস্থা এখনো সন্তোষজনক নয়। আইসিইউতে আরো দুইদিন রাখার পরিকল্পনা ডাক্তারের। তাছাড়া, সুইসাইড কেস হবার কারণে পুলিশও জড়িত হয়েছে এখানে। সন্দেহের তীরটা স্বাভাবিকভাবেই জুনায়েদের দিকে। তাই পিউয়ের সাথে তার দেখা করায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জুনায়েদের শক্ত অ্যালিব্যাই থাকার কারণে এখনো ওকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে নজরদারিতে আটকে রেখেছে। শহরের বাইরে পা দেবার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ওর উপর। আপাতত পিউয়ের জবানবন্দির উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতের কার্যক্রম। ওসব নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথা নেই জুনায়েদের। শাস্তি হলে হবে, তা নিয়ে মাথা খারাপ করার দরকার নেই। খুব বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে ওর। বাকিটা জীবন জেলেই পচে মরতে হবে। সেটাই ভালো। পিউবিহীন এই দুনিয়াটা এমনিতেই আকর্ষণহীন তার কাছে।
বাসায় ফিরেই সে বাগানে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল দোলনার দিকে। এই দোলনাটা কেনা হয়েছিল পিউয়ের জন্যই। তার খুব শখ ছিল একটা দোলনার। গ্রামের বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে উঠানে একটা গাছের সাথে বেতের দোলনা বাঁধা ছিল। পিউয়ের খুব শখের জায়গা ছিল ওটা। প্রায় সময় দেখা যেত, দোলনায় বসে আপনমনে দোল খাচ্ছে সে। পরে দোতলার বারান্দার জন্যও কিনেছিল আরেকটা। এখানে বেতের দোলনা পাওয়া যায় না। তাই ডাবল সিটের একটা দোলনা কিনে এনেছে। উপরে ক্যানোপি দেয়া। গরমের দিনগুলোতে পিউ এখানেই শুয়ে-বসে থাকে সারাদিন। দোলনার পেছনটা নিচে নামিয়ে সমান্তরাল করার ব্যবস্থা আছে। কখনোবা দেখা যায়, এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে পিউ। লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল জুনায়েদ। বাংলাদেশ থেকে এসেছে প্রায় পাঁচ-ছয় বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে কতবার ঝগড়াঝাটি হয়েছে, কত রকমের ঝামেলা হয়েছে ওদের মধ্যে। একবার সেপারেশনেও ছিল এগারো মাস। পিউ তখন এই বাড়িতে একাকী ছিল, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবুও তো সুইসাইড করার চিন্তা মাথায় আনেনি। তাহলে এখন কেন?
অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। আপাতত উত্তরগুলো জানার উপায় নেই কোনো। কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল এসবের উত্তর দিতে পারে একমাত্র পিউ নিজেই। যদি সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়, তবেই জানা যাবে। নইলে আজীবনই প্রশ্নগুলো রয়ে যাবে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে জুনায়েদের। বুকের ভেতর থেকে ভেঙ্গেচুরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে সবকিছু। চিৎকার করে একটু কাঁদতে পারলে হয়তো মনটা হালকা লাগত। সমস্যা হচ্ছে, চিৎকার করে কাঁদার অভ্যেসটাই নেই ওর। কখনো ওভাবে কাঁদা হয়নি। ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছে, পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই। তারা কেবল বুকের ভেতর চেপে রাখবে সব কষ্ট। নইলে আর কীসের পুরুষ? কাঁদবে শুধু মেয়েরা। কান্নাটা মেয়েদেরকেই শোভা পায়। সেজন্যই হয়তো পিউ গাল ফুলিয়ে কাঁদতে দেখলে জুনায়েদের বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। পিউ যখন কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে রাখে, সেই ফোলা মুখের দিকে তাকিয়ে জুনায়েদের আরো অনেকগুলো বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। কান্নাবতী বউকে আগলে রেখে লক্ষ-কোটি দিন পার করে দিতে ইচ্ছে করে। মন বলে, এই দিনগুলো আর কখনোই শেষ না হোক। পিউ আজীবনই এমন ছোট হয়ে থাকুক। বাচ্চাদের মতো খামখেয়ালী করুক। অভিমান করে গাল ফুলিয়ে রাখুক। কান্নাকাটি করে চোখ ফোলাক। তাতে করে অন্তত পিউয়ের মনটা হালকা হবে। বুকের উপরে ভারী পাথর চাপা পড়বে না। পিউ কাঁদতে পারে বলেই হয়তো আগের সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছে। কিচ্ছু মনে নেই তার। জুনায়েদ ওকে কতটা অত্যাচার করেছিল, কীভাবে অত্যাচারিত হয়েছিল, একটা প্রাণের উপস্থিতি ছিল তার গর্ভে, সেই প্রাণটা ঝরে গেছে কিছু নিষ্ঠুর মানুষের নির্মম মনমানসিকতায়। সব ভুলে গিয়েছে বলেই এখনো কিশোরীর মতোই উচ্ছ্বল সে। কিন্তু সময় তো আটকে থাকেনি। সময় আপন গতিতে গড়িয়েছে। পিউও আগের তুলনায় বড় হয়েছে, অনেকটাই পালটে গেছে। এখনো কিশোরী বয়সের ধাপে তার মনটা আটকে থাকলেও অতীতের সেই ছোট্ট আলাভোলা ধরনের কিশোরী আর নেই সে। কিছু একটা পাল্টেছে, পিউয়ের সাথে কিছু একটা ঘটেছে, যেটা কীনা জুনায়েদের দৃষ্টিতে ধরা পড়েনি। পিউয়ের শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া রক্ত এখনো দোলনায় লেগে আছে। শুঁকিয়ে যাওয়া সেই রক্তের উপর আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল জুনায়েদ। তার মন বলছে, একবার পিউয়ের সাথে দেখা করতে পারলেই সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে। পিউ বেঁচে যাবে এবং সুস্থ হয়ে উঠবে অল্পদিনের মধ্যেই। কিন্তু দেখা করাটাই যে হচ্ছে না!
কী মনে হতে ঝট করে বাড়ির ভেতরদিকে পা বাড়াল জুনায়েদ। এক লাফে দোতলায় গিয়ে বেডরুমে ঢুকল। আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, বেডসাইড ড্রয়ার সবখানে ঘাটাঘাটি করল। পিউয়ের জিনিসপত্রগুলো সব উলট-পালট করল। কিছু একটা খুঁজছে সে, যেটা চোখে পড়লে পিউয়ের সুইসাইডের কারণ সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেরকম কিছুই নেই। পিউয়ের কোনোকিছুই তার কাছে গোপন নয়। বরং পিউয়ের জিনিসপত্রগুলো কোথায় কী আছে, কীভাবে রাখা আছে, সেগুলো সবই জানে সে। সবকিছু তো সে নিজেই গুছিয়ে রাখে। পিউ নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার মতো মেয়ে নয়। এমনকি তার প্রতি মাসের নির্দিষ্ট মেয়েলী দিনগুলোর এবং স্যানিটারি ন্যাপকিনের খবরটা পর্যন্ত জুনায়েদকেই রাখতে হয়। তবু, আঁতিপাঁতি করে খুঁজল সব। কোথাও সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না। তার বদলে জুনায়েদের হাতে পড়ল ভালোবাসায় ভরপুর পিউয়ের কিছু খামখেয়ালী।
পিউয়ের মোবাইল গ্যালারীতে জুনায়েদের অসংখ্য ছবি। কোনোটায় জুনায়েদ বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। মুখটা হা হয়ে আছে তার। কোনোটায় কপাল কুঁচকে রেখেছে। কোনো ছবিতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ড্রাইভ করছে। বা ফোনে কথা বলছে। এইসব ছবি কখন তুলেছে, জুনায়েদ জানে না। সে কেবল পিউয়ের হাতে মোবাইলটাই দেখেছে সবসময়। এর মধ্যে কিছু ছবি পিউ প্রিন্ট করিয়েছে আজদা থেকে। একটা এনভেলাপে ছবিগুলো পাওয়া গেল। সবগুলোই হাবিজাবি ধরনের। একটা ড্রয়ার ঘেঁটে পাওয়া গেল জুনায়েদের ফেলে দেয়া সব জিনিসপত্র। পারফিউমের খালি বোতল, ছেঁড়া ওয়ালেট, ভাঙ্গা হাতঘড়ি, কালি ছাড়া কলম, কালি লাগানো একটা টাই, একপাটি ছেঁড়া জুতো, এমনকি জুনায়েদের ছেঁড়া বা বাতিল জামাকাপড়গুলোও সে সযত্নে রেখে দিয়েছে। আরেকটা ড্রয়ারে পাওয়া গেল জুনায়েদের দেয়া পিউয়ের প্রথম মোবাইলটা, বিয়ের পর থেকে এই পর্যন্ত যা কিছু উপহার দিয়েছে জুনায়েদ, তার কোনোকিছুই ফেলা হয়নি। এমনকি গিফটের প্যাকেট বা এনভেলাপও রেখে দিয়েছে। আলমারির একপাশের পুরোটা জুড়ে শেলফ। তাতে এইসব হাবিজাবি দিয়ে ভরা। কিছু জিনিসপত্র আছে বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ের। সেগুলো যে এই পর্যন্ত বয়ে এনেছে পিউ, ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি জুনায়েদ। তার মনে পড়ল, একটা লাগেজ ছিল বাংলাদেশ থেকে আনা। পিউ নিজে কখনো সেটা খোলেনি। তাকেও খুলতে দেয়নি। বলত, ওটায় আমার কিছু পুরনো জিনিসপত্র আছে যেগুলো এখন লাগবে না। কিন্তু পরে লাগতে পারে। জিনিসপত্র বলতে জামাকাপড়ই বুঝেছিল জুনায়েদ তখন। এখন হতভম্ব হয়ে সবকিছু নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। তার বউ পাগলামীতে সেরা, এটা জানত। কিন্তু সত্যিকারের পাগল, তা বোধহয় এবারই প্রথম জানল। নইলে এইসব হাবিজাবি কেউ বয়ে আনে বাংলাদেশ থেকে? অল্প সময়ের সংসার ছিল তখনকার। নতুন বিয়ে, নতুন সম্পর্ক, নতুন করে জীবন শুরু করায় উত্তেজনা ছিল অনেক। তাই সময়ে-অসময়ে এটা-সেটা কিনত পিউয়ের জন্য। দৃষ্টিতে কিছু একটা আটকে গেলে সেটা পিউয়ের জন্য কেনাটা অভ্যেসে দাঁড়িয়েছিল। দ্বিতীয়বার যখন বিয়ের আয়োজন করা হলো, তখন ঘরোয়াভাবে গায়ে হলুদ করা হয়েছিল ওদের। সেই হলুদে পরিহিত হাতের রাখি, শুকনো ফুলের মালা, হলুদের ছোট্ট ডালা, মাটির তৈরি বাতিদানি, হলুদ-মেহেদির বাটি কী নেই! সব নিয়ে এসেছে পাগল মেয়েটা।
প্রায় বারো দিন পর পিউ বাসায় ফিরল। এই বারোটা দিন জুনায়েদ পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, বাসা, অফিস সবখানে দৌড়ে বেড়িয়েছে। এর মধ্যে তিন দিন ইন্টারোগেশনের জন্য পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালেও গিয়েছে নিয়ম করে। কিন্তু কোনোভাবেই দেখা করতে পারেনি পিউয়ের সাথে। একবার এক নার্সকে অনেকবার অনুরোধের পর দূর থেকে পিউকে দেখেছিল ক্ষণিকের জন্য। আইসিইউয়ের দরজার বাইরে দাঁড়ানো ছিল সে। দরজার কাচের ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছিল পিউকে। সবসময় ওদিকে পর্দা টানা থাকে। সেবার নার্স পর্দা সরিয়ে দিয়েছিল। তাও কয়েক মুহূর্তের জন্য। পিউ ওকে দেখেনি। ডিনারের সময় বিছানায় বসে নিজের হাতে কিছু একটা খাওয়ার চেষ্টা করছিল। নার্স গিয়ে ওকে খাইয়ে দিয়েছে। একদিন ওর জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে গিয়েছিল জুনায়েদ। ওসব অ্যালাউ করেনি ডাক্তার। তাদের ধারণা, খাবারে বিষ মেশানো থাকতে পারে। তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল। খাবারগুলো বাসায় ফিরিয়ে এনে নিজেও খেতে পারেনি জুনায়েদ। খেতে বসে কান্না চলে এসেছিল তার। খুব মন খারাপ হয়েছিল তখন। পরদিন আবার পুলিশ স্টেশন থেকে এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছে। কোনো অবস্থাতেই পিউয়ের সংস্পর্শে যাবার চেষ্টা করা যাবে না। তারপর বেশ কতগুলো দিন পেরিয়েছে। পিউ সুস্থ হবার পর তার স্টেটমেন্ট দিয়েছে পুলিশকে। অবশেষে গতকাল হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়েছিল জুনায়েদ। পিউকে ডিসচার্জ করে দেবে, এই খবরটা জানিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আজ হাসপাতালে যাবার পর পিউয়ের সাথে দেখা করতে পেরেছে ঠিকই। কিন্তু পিউ একটা কথাও বলেনি ওর সাথে। একবার চোখ তুলেও তাকায়নি। কোনোরকম সাহায্য ছাড়াই হাসপাতাল থেকে বের হয়েছে। শান্ত ভঙ্গিতে গাড়িতে গিয়ে বসেছে। তবে জুনায়েদের পাশের সিটে নয়, পেছনের সিটে। জুনায়েদ ওর পাশের সিটের দরজা খুলে দিয়েছিল। পিউ ওকে পাশ কাটিয়ে পেছনে বসেছে। সারাটা পথও একদম নিশ্চুপ ছিল। জুনায়েদ ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। সে কোনো উত্তর দেয়নি। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকেছে শুধু।
বাড়ি ফেরার পর সরাসরি দোতলায় চলে গেল পিউ। মাস্টার বেডরুমে না গিয়ে পাশের রুমটায় ঢুকে দরজা আটকে দিল। জুনায়েদ তখনই ওর পিছু নিয়েছিল কিন্তু রুমের ভেতর ঢুকতে পারেনি। কিছুক্ষণ দরজায় নক করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। জুনায়েদও আর ঘাটাল না পিউকে। মাত্রই হাসপাতাল থেকে ফিরেছে সে। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। শরীর অনেকটাই দুর্বল। তাই কয়েকদিন চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয় মনে হলো ওর। ডিনারের সময় আবার নক করল জুনায়েদ। পিউ দরজা খুলল না, তবে কথা বলল। ভেতর থেকে জানিয়ে দিল, সে খাবে না। তার ক্ষিধে নেই। যদিও বাস্তবে ঘটছে তার উল্টোটা। ক্ষুধায় নাড়িভুঁড়ি গিট লেগে আছে। বিছানায় শুয়ে ঘুমুতে চেষ্টা করছে অনেকক্ষণ যাবত। কিন্তু ঘুম আসছে না। বদ্ধ রুমে চুপচাপ শুয়ে-বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। দমবন্ধ হয়ে আসছে কেমন। তবু কষ্ট করে অনেক রাত পর্যন্ত চুপচাপ বসে রইল সে। চারদিক নিস্তব্ধ হতেই কোনোরকম শব্দ না করে রুম থেকে বের হলো। বিড়ালের মতো পা টিপে নিচতলায় নামল। তারপর বাগানের দিকে পা বাড়াল। জুনায়েদ তক্কে তক্কে ছিল। সে জানত, পিউ ঘুমায়নি। পিউকে বাসায় আনার আগেই পুরো বাড়িতে চার-পাঁচটা সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করেছে, যার একটা ছিল পিউয়ের রুমে। এতক্ষণ নিজের রুমে বসেই চুপচাপ পিউকে লক্ষ করছিল। এবারে সেও নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো। নীচতলায় নেমে দেখল, পিউ বাগানের দোলনায় বসে আছে চুপচাপ। ওদিকে না গিয়ে রান্নাঘরে গেল সে। একটা প্লেটে ভাত-তরকারি তুলে বাগানের দিকে এগোল। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পিউয়ের পাশে বসে ভাত মাখল। তারপর পিউয়ের মুখের সামনে খাবার তুলে বলল,
– খাও।
পিউ কথা বাড়াল না। ক্ষুধায় চারপাশ কেমন অন্ধকার লাগছে তার। তাই বিনা বাক্যব্যয়ে খেয়ে নিল প্লেটের পুরো ভাতটুকু। খাওয়া শেষ হবার পর পানি খেল। তারপর মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে থেমে থেমে বলল,
– আমি বাংলাদেশে চলে যাব। আমার আব্বু-আম্মুর কাছে ফিরে যাব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। (চলবে)