অতঃপর সন্ধি পর্ব -০৮+৯

#অতঃপর_সন্ধি (০৮)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

মেসে এসে পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিতেই চোখ চরাক গাছ মায়ানের। দৈবাৎ হাত বের করে দেখলো এক হাজার টাকার দুটো চকচকে নোট। অখুশি, বিরক্তি চোখে নোট দুইটার দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইল বের করে কল লিস্টে গিয়ে পুষ্পিতার নাম্বারে কল লাগালো। একবার, দুইবার, তিনবার রিং হলো কিন্তু রিসিভ হলো না। তিরিক্ষি মেজাজে মোবাইল বিছানার উপর ছুঁড়ে মা’রে। নিজেও ধপাস করে বসে পড়ে বিছানার উপর। নোট দুইটা আবারও চোখের সামনে মেলে ধরে। হতাশার শ্বাস ফেলে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলে।

_________________

‘ফোন দিয়েছিলেন?’

‘এমনটা করার কারন কি, ফুলবানু?’ নির্লিপ্ত, উদাসীন গলায় ফিরতি প্রশ্ন করে মায়ান।

নিশ্চুপ, নিসাড়া রইলো পুষ্পিতা।

‘আমি একটা প্রশ্ন করেছি আপনাকে, ফুলবানু। চুপ না থেকে উত্তর দিন।’

ভয়ার্ত, সাহসশূন্য গলায় জবাব দিলো,

‘আসলে,,,,,,’

‘আসলে কি?’

‘আসলে বছরের শেষ তো। আপনার তো এখন কোনো টিউশন নেই। চলতে কষ্ট হবে তাই।’

‘তাই দয়া করেছেন আমার উপর?’

মায়ানের কথা শুনে মুখটা চুপসে গেলো পুষ্পিতার।

‘আপনি এভাবে কেন রিয়েক্ট করছেন?’

রাগান্বিত স্বরে মায়ানের কন্ঠনালী দিয়ে উচ্চারিত হলো,

‘আমি আপনাকে বলেছি কখনো আমার চলতে কষ্ট হচ্ছে? কাজটা করে আমাকে আমার কাছে ছোট করে ফেললেন ফুলবানু। প্রেমিকার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলার মানসিকতা আমার না।’

‘আমি আপনাকে ছোট করার জন্য দেইনি। এই মাসটা যেন আপনার চাপে থাকতে না হয় সেজন্য দিয়েছি। হাই ইন্টারেস্টে ধার দিয়েছি আপনাকে। বিয়ের পর প্রতি মাসে সুদেআসলে উসুল করে নিবো।’

__________________

মায়ানের সাথে কথা শেষ করে ফেসবুক স্ক্রল করছে পুষ্পিতা। হঠাৎ করে চোখ আর হাত দু’টোই স্থির হয়ে গেলো তার। সপ্তাহ খানিক আগে প্রোফাইল পিকচার আপডেট করেছে তানজিফ। হাতে গিটার, গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর সজারুর মতো চুল। চোখ আঁটকে যাওয়ার মতো লুক। তবে চোখ দু’টিতে আকুল আকাঙ্ক্ষা, ব্যগ্রতা, না পাওয়ার তৃষ্ণা। তানজিফের ছবিটার দিকে নিমেষহীন চোখে তাকিয়ে কিয়ৎক্ষণ কি ভেবে মেসেজ অপশনটায় ক্লিক করে আগের মেসেজ গুলো পড়তে লাগলো। কখনো তানজিফ তাকে রাগানোর জন্য মেসেজ করেছে কখনো বা করেছে পাগলামো। পুরোনো মেসেজ গুলো পড়ে ওষ্ঠাধর বিস্তীর্ণ হলো পুষ্পিতার। লাস্ট মেসেজ একবছর আগের দেখে মুহুর্তেই মুখটা মলিন,চুপসে গেলো তার। রিলেশনের ব্যপারটা জানার পরে তাকে আর কখনো মেসেজ বা কল দেয়নি তানজিফ। হুট করে অনুভব করল কিছু একটা তার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে নেই কিছু একটা নেই। আজ কেন জানি খুব চাইছে আইডির মালিক তাকে একটু জ্বালাতন করুক। একটু বিরক্ত করুক। এখন আর হুটহাট কেউ বউ ডেকে, মিসেস তানজিফ নওশাদ ডেকে ভড়কে দেয় না। অপ্রস্তুত করে না।

কি ভাবছে সে? ব্যপার বুঝতেই নিজেকে তড়িৎ গতিতে সামলে নিলো । তাড়াতাড়ি করে মেসেজ বক্স থেকে বের হয়ে মোবাইলই অফ করে দিলো। সে মায়ানের সাথে মিশে গিয়েছে খুব নিবিড়ভাবে। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে ওই সাধারনের মাঝে অসাধারণ মানুষটার সাথে।

___________________

মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে তানজিফ। মনে হচ্ছে বুকের উপর বড়সড় পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে কেউ। চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্যটা চোখে ভাসছে। কতদিন হয়ে গেলো পুষ্পিতাকে জ্বালায় না বিরক্ত করে না। ঠিকঠাক কথাও বলে না। তাহলে মায়া কেন কমছে না? একান্ত, নিবিড়ভাবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কেন কমছে না? কেন তা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে? ভালোবাসা কমছে না, মায়া কমছে না। তবে একটা জিনিস কেবল দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তা হলো হাহাকার আর শূন্যতা। আর আজ যেন সেই দৃশ্য ছিলো আগুনে ঘি ঢালার মতো। বুকের উপর হাত দুইটা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো তানজিফ। নিজের মতো কল্পনা করতে ব্যস্ত সে।

পাশাপাশি বসে আছে সে আর পুষ্পিতা। পুষ্পিতা আঙুলের ফাঁকে হাত গলিয়ে দিয়ে কাঁধে মাথা রাখল। সে ও একহাতে জড়িয়ে ধরলো দৃঢ়রূপে, নিবিড়ভাবে।

‘এভাবে আমাকে সারাজীবন আগলে রাখবি তো তানজিফ?’

‘তুই চাইলেও ছাড়বো না।’

চোখে বুঁজে পরিতৃপ্ত হাসলো তানজিফ। মৃদুস্বরে ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে আওড়াল,

‘মানুষ তার স্বীয় কল্পনায় সবচেয়ে বেশি সুখী। না থাকে কারো হস্তক্ষেপ আর না দিতে পারে কেউ কোনো কাজে বাঁধা। যা হয় সম্পূর্ণ আমাদের ইচ্ছেমতো। যেমন আমরা চাই ঠিক তেমনটাই। বাস্তবে না হউক কল্পনায় তুই শুধু আমার।

___________________

কপালে সমানতালে হাত ঘষে চলেছে পুষ্পিতা আর তানজিফ। অতর্কিত ধাক্কায় দু’জনেই টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ে।

‘চোখ কপালে নিয়ে চলিস? আর কি খাস,,,,,, ‘

মুখোমুখি তানজিফকে দেখে স্ফীত হয়ে গেলো পুষ্পিতা মুখমণ্ডল।

মাথা নুইয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে তানজিফ নীরস স্বরে বলল,

‘দৌড়ে আসছিলাম তো তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।’

আজ আর পূষ্পিতার চোখে চোখ রাখল না তানজিফ। দৃষ্টি নত ছিলো তার।

উঠে দাঁড়িয়ে তানজিফ চিৎকার করে বলল,

‘গায়েস, আমাদের ক্যান্সেল হওয়া ট্যুরটা আবার হবেএএএএএএএ।’

কান চেপে ধরে পুষ্পিতা। জারিনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাগত স্বরে বলল,

‘আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিছে। বুঝি না মনে করেছে।’

‘তা তোর হঠাৎ কেন মনে হলো এমন?’

‘মানুষের স্বভাব কখনো বদলায় না।’

ক্লাসের সবাই উল্লাসে নিমজ্জিত। আর তাদের মধ্যমনি তানজিফ। জারিন সেইদিকে দৃষ্টিপাত করে বলল,

‘এক বছর আগের তানজিফ আর আজকের তানজিফের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। সেটা তুইও জানিস আমিও জানি।’

আকস্মিক তানজিফ এক মুঠ রং এনে জারিনের গালে লেপ্টে দিলো। পুষ্পিতার দিকে এগিয়ে যেতেই সে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।

মিনিট পাঁচেক পরে চোখ মেলে তাকায় সে। গাল ঝেড়ে বলল,

‘আমি বলেছিলাম না মানুষের স্বভাব কখনো বদলায় না। দেখলি তো? জানে এসব রং নিয়ে খেলা আমি মোটেও পছন্দ করি না। তারপরও লাগিয়ে দিলো।’

জারিন সূঁচালো দৃষ্টিতে পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে রইলো। পুষ্পিতা জারিনের দিকে তাকাল।

‘এভাবে ঈগলের মতো তাকিয়ে আছিস কেন?’

জারিন রগড় গলায় বলল,

‘আবোলতাবোল পাগলের মতো বকলে তাকিয়ে থাকবো না?’

‘মানে?’

‘তানজিফ তো তোকে কোনো রংই দেয়নি। তাহলে গাল থেকে কি ঝেড়ে ফেললি?’

হাতের দিকে তাকালো সে।রঙের চিহ্ন মাত্র নেই।

‘রঙ দেয়নি দেখলি তো।’

পুষ্পিতার মুখটা কেমন চুপসে বিবর্ণ আকার ধারন করল। নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।

জারিন পুষ্পিতার কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠে সে।

‘তানজিফ তোর আর তার মাঝে দূরত্ব অনেক আগেই তৈরি করে নিয়েছে। আমি এতোবছর ধরে যে তানজিফকে চিনতাম সেই তানজিফ আর এই তানজিফের মাঝে বিস্তর ফারাক। গত একটা বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’

‘কফি খাবি? মাথা ধরেছে ভীষণ।’

‘এড়িয়ে যাচ্ছিস?’

‘ওই ছেলেটাকে আমি প্রথম থেকেই এড়িয়ে চলছি। আজ আর নতুন করে কি এড়াবো।’

‘এড়াতে এড়াতেই তো নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছিস।সেটা বুঝতে পারছিস না তুই। বুকে হাত রেখে বলতে পারবি তানজিফের পাগলামি তুই মিস করিস না?’

‘ওই ছেলেকে নিয়ে ভাবার সময় আছে নাকি আমার?’

পুষ্পিতার কথায় হাসলো জারিন।

‘আমরা যেগুলোকে বিরক্ত মনে করি একটা সময় পর সেগুলো আমাদের অস্তিত্ব হয়ে দাঁড়ায়।’

________________________

রাতের রান্না করছেন আফসানা হক। ড্রয়িংরুমে টিভির রিমোট নিয়ে তুমুল লড়াই করছে পুষ্পিতা আর ফারদিন। পুষ্পিতা ফারদিনের কলার টেনে বলল,

‘রিমোট দে ফারদিন। টিভি কি তোর বাপের?’

‘টিভি তোর বাপেরও না।’

রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন আফসানা হক।

‘দুই মিনিটের মাঝে দুই ভাইবোনের চিৎকার বন্ধ হলে কিভাবে বন্ধ করতে হবে আমার জানা আছে।’

আফসানা হকের কথাকে তেমন একটা পাত্তা দিলো না দুই ভাইবোন।

‘টিভি কারোর বাপের না। কারন তোদের দুইজন কে আমি হাসপাতালের করিডোর থেকে এনেছি।’

#চলবে#অতঃপর_সন্ধি (০৯)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

আশহাব শেখের কথায় দুই ভাইবোন একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। পুষ্পিতা ফারদিনের কলার ছেড়ে সোফার একপাশে গিয়ে বসল। আর ফারদিন অন্যপাশে।

আশহাব শেখ দুই ছেলেমেয়েকে দুইপাশে বগলদাবা করে বসিয়ে খবরের চ্যানেল ছেড়ে দিলেন। উনার অগোচরে পুষ্পিতা একবার ফারদিনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আরেকবার ফারদিন পুষ্পিতার দিকে।

তন্মধ্যে বেজে উঠলো কলিংবেল।

‘পুষ্পি দেখ কে এলো।’ রান্নাঘর থেকে হাঁক ছাড়লেন আফসানা হক।

আশহাব শেখের পাশ থেকে উঠতে পেরে পুষ্পিতা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। দরজা খুলতেই চমকে উঠে সে।

তানজিফ বড় এক ব্যাগ নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি সূঁচালো করে পা থেকে মাথা অব্দি তানজিফকে দেখতে লাগে পুষ্পিতা।

‘আমি নিশ্চয়ই বাইরে থাকার জন্য এখানে আসিনি?’

তানজিফের খুঁচা দিয়ে বলায় কথায় সম্বিত ফিরল পুষ্পিতার। চোখ মুখ কালো করে এক পাশ হয়ে তানজিফ কে জায়গা দিলো ভেতরে আসার জন্য।

‘আরে তানজিফ যে, কেমন আছো বাবা?’

হাতের ব্যাগটা রাখে তানজিফ। বিস্তীর্ণ হেসে জবাব দিল,

‘আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?’

‘আমরাও আলহামদুলিল্লাহ। আরে দাঁড়িয়ে না থেকে বসো।’

‘আপনার কলেজের খবর কি আঙ্কেল?’

হতাশ গলায় আশহাব শেখ বললেন,

‘আর বলো না আজকালকার পোলাপান এত দুষ্টু। পড়াশোনা নিয়ে একটুও সিরিয়াস না। সারাদিন শুধু মোবাইল আর মোবাইল। পরশু টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট পাবলিশ করবো। একটু চাপে আছি সেগুলো নিয়ে।’

‘মায়ের কাছে মাসির গল্প করছে বাবা।’ এক ভ্রু উঁচিয়ে বিড়বিড় করে বলল পুষ্পিতা।

আশহাব শেখের মুখে তানজিফের নাম শুনে রান্নাঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে ড্রয়িং রুমে পা রাখলেন আফসানা হক।

‘শাহজাদা কি মনে করে এই রাতে আমাদের বাসায় এলেন?’

‘কেন আন্টি রাতে কি তোমাদের বাসায় মেহমান এলাউ না? নাকি রাতে মেহমান এলে খেতে দাও না?’

‘বাপ যেমন একটাও কথা মাটিতে পড়তে দেয় না ছেলেও কম না। উত্তর রেডি থাকে। হঠাৎ রাতে কি মনে করে?’

পুষ্পিতা নাক উঁচু করে আবারও বিড়বিড় করলো,
‘উন্নত মানের গাধা।’

‘গাধা’ শব্দটা তানজিফের কানে গিয়ে ঠেকল। ভ্রু কুঞ্চিত করে একবার পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। আফসানা হকের প্রশ্নের উত্তর দিলেন।

‘আম্মু গ্রামে গিয়েছিল। সেখান বিভিন্ন সবজি, নারকেল আরো কি কি যেন নিয়ে এসেছে। এই ডেলিভারি বয়কে দিয়ে সেগুলোই পাঠালো।’

‘দেখতে ডেলিভারি বয়ের মতোই লাগে।’

কথাটা স্পষ্টই শুনতে পেল তানজিফ। শুনেও স্বাভাবিক রইলো। পুষ্পিতার দিকে তাকালো না অব্দি।

আধঘন্টা থাকার পর চলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে তানজিফ।

‘তুই খেয়ে যাবি ভেবে আমি আরো গরুর মাংস ফ্রিজ থেকে নামালাম।’ মুখটা কালো করে বলল আফসানা হক।

‘অন্য এক দিন দাওয়াত দিও কবজি ডুবিয়ে খাবো। কিন্তু আজ না। আজ আমাদের বন্ধুরা মিলে পার্টি করবো।’

চলে যাচ্ছে তানজিফ। দরজা বন্ধ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে পুষ্পিতা। সামনের দিকে কদম বাড়ানোর পা দিতে পুষ্পিতা সহসা বলে উঠলো,

‘আমাদের ট্যুরের ডেট কবে?

কদম দিতে গিয়েও দিলো না তানজিফ। পিছিয়ে এলো। তবে পুষ্পিতার দিকে তাকাল না। সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে জবাব দিল,

‘আগামীকাল জানিয়ে দেওয়া হবে।’ বলে তড়িৎ গতিতে প্রস্থান করে।

‘হাত ভাঁজ করে তানজিফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে পুষ্পিতা।

‘বাব্বাহ্! ছ্যাচড়া বলছিলাম বলে আমার সাথে এটিটিউডের গোডাউন খুলে বসছে। মনে করেছে এমন ভাব দেখালে আমি পটে যাবো।’

মুখ ভেংচি দিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দিলো পুষ্পিতা।

তানজিফ একটা একটা করে সিঁড়ি অতিক্রম করছে আর তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। থেমে গেলো সে। মাথা উঁচু করে উপরের দিকে তাকাল।

‘আমার নিদ্রা হরনকারীনি, আজ রাতে যে আর নিদ্রা চক্ষু জোড়ায় ধরা দিবে না।’

_______________

‘আজ সারাদিন এতো কল দিলাম, মেসেজ দিলাম কল ব্যাকও করলেন না আর মেসেজের রিপ্লাইও দিলেন না। আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?’
ফোন রিসিভ হতেই মায়ানকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করে বসল পুষ্পিতা।

‘আপনার নিশ্চয়ই গলা শুকিয়ে গিয়েছে? আগে এক গ্লাস পানি খান।’

‘মজা করবেন না আপনি। জানেন কত টেনশনে ছিলাম আমি।’

‘আপনি নাকি আমায় চশমিশ বলেছেন? আমি নাকি বেশি গ্যাপ দেই? আমাকে নাকি বাদ দিয়ে দিবেন? নতুন বছরে নাকি নতুন টিচার দেখবেন?’

মায়ানের একটার পর একটা পাল্টা প্রশ্নে লজ্জায় মিইয়ে গেলো পুষ্পিতা। নিশ্চুপ, নিরুত্তর রইলো।

‘আমি জেনেছি বলে ভয় পেয়ে গেলেন নাকি?’

পুষ্পিতা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,

‘ভয় পাবো কেন?’

এইবার যেন মায়ানের গলার স্বর বড্ড ভারী শুনালো।

‘আচ্ছা ঠিক আছে নতুন বছর থেকে আমি আর পড়াবো না। নতুন টিচারের সন্ধান শুরু করে দিন।’

পুষ্পিতার লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া ধৃষ্টে হঠাৎ করে আঁধার ঘনীভূত হলো। একেবারে চুপসে গেলো মুখশ্রী। নত স্বরে বলল,

‘আপনি রাগ করলেন? আমি জাস্ট মজা করে বলেছি।আর কখনো বলবো না।স্যরি।’

বলেই একেবারে নিশ্চুপ, শব্দহীন,নির্বাক হয়ে গেলো। চোখের কোণে পানি জমছে একটু একটু করে। ধীরে ধীরে বাড়ছে নিঃশ্বাসের গতি।

আচমকা মায়ান হু হা শব্দযোগে হাসতে লাগে। মায়ানের হাসির শব্দে ফুঁপিয়ে উঠলো পুষ্পিতা।

‘আপনি না ভয় পান না। একটু সিরিয়াস হয়ে কথায় বলায় তো অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো।’

কথা বলছে না পুষ্পিতা। নিঃশ্বাসের নিনাদ শুধু মায়ানের কর্ণে এসে ধাক্কা দিচ্ছে।

‘ভবিষ্যতে তো দেখছি কিছু বলা যাবে না। তার আগেই আমার ফুলবানু কেঁদেকেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে।’

পুষ্পিতা তবুও কিছু বললো না। মায়ানও বলা বন্ধ করে দিল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে মায়ান পুনরায় বলে উঠলো,

‘এভাবে চুপ করে থাকলে কিন্তু কল কেটে দিবো। সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম বলে একটুও কথা হয়নি। আর এখন এমন বাচ্চামো করতেছেন।’

পুষ্পিতা নাক টেনে জবাব দিল,

‘শুরুটা কে করেছে? আমি?’

শব্দযোগে হাসতে লাগে মায়ান।

‘না, আমিই শুরু করেছি। একটু ভিডিও কল দিন তো। দেখি কান্না করলে আপনাকে কেমন লাগে। পেত্নী নাকি হুরপরী?’

______________________

শীতের সন্ধ্যা! মাঝে মাঝে বয়ে যাওয়া হিম শীতল বাতাস শরীর কাঁপিয়ে তুলছে। ক্যাম্পাসের ভিতরে বাস দাঁড়িয়ে আছে। একে একে সবাই এসে দাঁড়াচ্ছে বাসের পাশে। কেউ এখনো আসেনি। আশহাব শেখ মাত্রই পুষ্পিতা কে নিয়ে ভিতরে এলেন। তারপরই ভাইয়ের সাথে এলো জারিন। বাস ছাড়বে আটটা বাজে। সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে অনেক। বাসের উঠার পালা। আশহাব শেখ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে চলেছেন।

‘বাবা? তুমি কি কাউকে খুঁজছো?’

‘হুম’ বলেই উনি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। ফিরে এলেন তানজিফকে নিয়ে।

‘দুইটা বাচ্চা মেয়েকে তোমার ভরসায় ট্যুরে যাওয়ার জন্য পারমিশন দিয়েছি। তুমি যেখানে যাবে সাথে করে নিয়ে যাবে। যেতে না চাইলে কান ধরে নিয়ে যাবে।’

‘আঙ্কেল আমি যখন ওয়াশরুমে যাবো তখনও সাথে করে নিয়ে যাবো। আপনি চিন্তা করবেন না একদম।’

‘ইয়াক ছিহ্!’ পুষ্পিতা নাক সিটকে বলল।

‘জারিন ধমকে বলল,

‘এগুলো কি ধরনের কথাবার্তা তানজিফ?’

চেহেরায় অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তানজিফ বলে উঠলো,

‘আঙ্কেলই তো বলল তোদের সব জায়গায় নিয়ে যেতে। তাই এনসিউর হয়ে নিলাম ওয়াশরুমে নিয়ে যাবো কিনা।’

এবার একটু স্বাভাবিক হয়ে আশ্বস্ত করে আশহাব শেখ আর জারিনের ভাইকে বলল,

‘চিন্তা করবেন না। আমরা সবাই একসাথে থাকবো।’

আশহাব শেখ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

____________________

বাস ছাড়ার সময় হয়েছে। তানজিফ নিজের সীট ছেড়ে পুষ্পিতা আর জারিনের সীটের পাশে এসে দাঁড়াল।

‘তোরা ঠিকমতো বসেছিস তো?’

‘জারিন দেখ দেখ আমি ঝুলে আছি। এই দেখ আমি বাদুড়ের মতো ঝুলছি।’

জারিন মিটিমিটি হাসছে। তানজিফ মুখে বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে তুলে।

‘জানালা খুলবি না কেউ। রিস্ক হয়ে যাবে। বড় ধরনের এক্সিডেন্টও হতে পারে।’

‘আমি নিজেই বাচ্চা। এই বাচ্চার উপর দুইটা দামড়া, ধিঙি মেয়ের দায়িত্ব দিয়ে গেল।’

বিড়বিড় করতে করতে নিজের সীটে গিয়ে বসল তানজিফ।

‘দেখলি কেমন ভাব দেখিয়ে চলে গেলো? আজকাল বড্ড ভাব নিচ্ছে। আমাকে দেখলে এমন একটা ভাব করছে যেন চিনেই না।’ নাক মুখ কুঁচকে বলল পুষ্পিতা।

জারিন পুষ্পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখেমুখে বিরক্তির রেখা। তা দেখে কিঞ্চিৎ হাসলো জারিন। রগড় গলায় বলল,

‘সুদর্শন ছেলে এটিটিউড দেখাতেই পারে।’

‘আগে যখন আমার পিছু পিছু ঘুরতো তখন কই ছিলো এই এটিটিউড?’ বলে একেবারে নীরব রইলো।

‘সত্য বেরিয়ে গেলো তো মুখ দিয়ে। আগের করা ঝগড়াগুলো তুই খুব মিস করিস তাই না?’

জবাব দিলো না পুষ্পিতা। মাথা ঠেকিয়ে রাখলো জানালার কাঁচে। আচমকা বাস থেমে গেল। বাইরের দিকে তাকিয়ে আরো আঁতকে ওঠে পুষ্পিতা।

#চলবে

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here