অতিরিক্ত চাওয়া পর্ব ৪৪

অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৪৪|

তৃষ্ণার ফ্রেন্ড ইশফাক হাজির। বেশ স্যুট পরে মালিক মালিক ভাব। বেশ স্ট্যান্ডার্ড। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা কার বন্ধু। লোকটি এসেই বেলীকে বড় এক হাসি উপহার দিলো। বেলী জোরপূর্বক হেসে সালাম জানাল। এর মধ্যে তৃষ্ণার সাথে তার বন্ধুর ব্রো হাগ, পিঠ থাপড়ানোর কার্যক্রম শেষ। এবার ইশফাক তৃষ্ণার দিক তাকিয়ে লুক দিলো,
–” ভাবী কে দেখে মনে হচ্ছে, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসছিস। তুই শুধরাবি না? ”
তৃষ্ণা তখনও বেলীর লাল হয়ে থাকা, গালের দিক কনসেনট্রেশান দিয়ে আছে। ইশফাক ছোট নিশ্বাস ছাড়লো,
–” ভাবী আপনি এর জ্বালা নিতে পারছেন তো? ”
বেলীর বলতে ইচ্ছে করলো,
–” আররে আমাকে কি এক্সট্রা সুযোগ দেয়া হয়েছে? আমি নিতে না পারলেও নিতে হবে। আমাকে নেওয়াবে। ”
মুখে বেলী হালকা হাসলো। আর আঁড়চোখে তৃষ্ণার দিক তাকালো।
ইশফাক আবারও ক্যাজুয়ালি বলল,
–” আই হোপ, আই এম ন’ট ডিস্টার্বিং ইউ গাইস? ”
এবার তৃষ্ণা ইশফাকের দিক তাকালো। সোজা কন্ঠে বলল,
–” ইউ আর অলরেডি ডিস্টার্বিং ম্যান। সি, সিজ গেটিং নার্ভাস। রাগলে সি উইল ন’ট টক টু মি। গেট লস্ট। ”
বেলীর গাল দুটো আরও লাল হয়ে উঠছে। ইশফাক চোখ পিটপিট করলো,
–” ভাবী আপনি নার্ভাস হচ্ছেন? ”
বেলী অসহায় ভাবে হাসলো।
–” উঁহু। একদমই না। ”
–” এটা না আমার ভাবী। ও আসলে দিনে বলে হাজার মিথ্যে। এই গুন্ডফুন্ডা আপনি কিভাবে পছন্দ করলেন? ”
তৃষ্ণা ভ্রু উঁচু করে ইশফাকের দিক তাকালো।
–” আচ্ছা? মিথ্যে বলে তোর গার্লফ্রেন্ড পটাতে গিয়েছিলাম? তোর গার্লফ্রেন্ড কে তুলতে গিয়েছিলাম? ”
ইশফাক দুষ্টু হাসলো,
–” সামনে ভাবী আছে ভেবে চিন্তে কথা বলতে হবে। ”
তৃষ্ণা দ্রুত বেলীর দিক তাকালো,
–” বেলী আই ওয়াজ জাস্ট সেয়িং অ্যা ফ্যাক্ট৷ ”
বেলী চুপচাপ অসহায় বাচ্চাদের মতো বসে। তারা মিলে তাকে নিয়ে মজা করছে।
ইশফাক হাসতে হাসতে বলল,
–” ওকে। আমি যাচ্ছি। এঞ্জয়। ”
ইশফাক যেতেই, বেলীর ধীর আওয়াজ,
–” আমরা যাবো না? অনেকক্ষণ হয়েছে তো। ”
তৃষ্ণা বেলীর হাত টেনে উঠালো। পরমুহূর্তেই সে তৃষ্ণার ইশারায় দুলছে। সফট ট্যুনের আওয়াজ স্পষ্ট। বেলী অস্ফুট স্বরে বলল,
–” আমি এগুলো পারিনা। ”
–” পারতে হবেনা। ”
বেলীর নিচু হাইটের জন্য, তাকে একপ্রকার তৃষ্ণা কোমর ধরে ব্যালেন্স করে রেখেছে। বলা যায় পুরো ভার তৃষ্ণার দিক৷ হঠাৎ হঠাৎ তৃষ্ণার বেখেয়ালি হাতের স্পর্শে বেলী মুচড়ে আছে। তৃষ্ণার তীক্ষ্ণ চাহনিতে সে আরও নেতিয়ে উঠছে।

আপাতত চৌধুরী বাড়ির পরিবেশ রমরমা। ছোটাছুটি চলছে। সকলে মিলে নানান পরিবর্তন এনেছে তৃষ্ণার রুমের। অবশ্য তৃষ্ণার পারমিশন রয়েছে। অঞ্জলি সেদিন জিজ্ঞেস করেছিল কিছুটা এভাবে,
–” বউ আসলে কিন্তু রুমের পরিবর্তন হয়ে যাবে। মনের মতো আর রাখতে পারবে না। ”
তখন তৃষ্ণার জবাব ছিলো,
–” সেই পরিবর্তন আমি এখনই চাই। ”
অঞ্জলি তো হাসতে হাসতে শেষ। সাধারণত তৃষ্ণার রুম খুব গোছালো থাকে। আর যেটা যেখানে ছিলো, সেখানেই থাকতে হবে। অদলবদল করলেই অঘটন। তাই তার পারমিশন ছাড়া, কেউ তার রুমের অদলবদল করার কথা ভাবতেই পারেনা।
আজ সোলাইমান আর অফিস যাচ্ছে না। সাধারণত তার বাড়ি ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। কিন্তু আজ স্পেশাল। এই স্পেশাল দিনে তার বাড়ি থাকা প্রয়োজন। সোফায় সকলের সাথে বসে গল্প করতে মন্দ লাগছে না। আমিদ এখনই ছেলেকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন।
–” অঞ্জলির প্রতি দ্বিগুণ যত্নশীল হতে হবে তোমার। এখন কাজকর্ম বেশি করা যাবেনা। অঞ্জলি’কে সময় দিবে। বাড়ি দ্রুত ফিরবে। ওর কি লাগবে না লাগবে, সেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ”
দেখা গেলো সোলাইমান ভালো ছেলের মতো মাথা দুলালো। এবং জবাব ও দিলো,
–” জ্বি বাবা। ”
আবির চা খাচ্ছিলো। সে হঠাৎ প্রশ্ন করলো,
–” তৃষ্ণাকে জানানো হয়েছে?”
সোলাইমান হালকা হাসলো,
–” হ্যাঁ, এক্সাইটেড আওয়াজে বলল আসছে। ”
–” যাক। সেই আনন্দে এটাকে দ্রুত পাওয়া যাবে। ”
সোলাইমান’কে বলা কথা মিথ্যে গেলো না। প্রায় তখনই তৃষ্ণার গাড়ির আওয়াজ পাওয়া গেলো। তৃষ্ণা প্রায় ঝড়ের গতিতে বাড়িতে ঢুকেছে। তার সাথে টেনে নিয়ে এসেছে বেলীকে। সদার মতো এবারও বেলী লজ্জায় আশেপাশে তাকাতে অক্ষম। ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তৃষ্ণার হাত হতে নিজের হাত ছাড়ানোর। বেশি কষ্ট করতে হয়নি তৃষ্ণা নিজেই ছেড়েছে। দ্রুত পায়ে গিয়ে আগে সোলাইমান’কে জড়িয়ে ধরে।
–” কতো সময় নিয়েছে আমাদের রাজকুমারী আসতে। অবশ্য নিবেই। চাচার মতো হবে তাই। অপেক্ষা করাবে সবাইকে। ”
সোলাইমান হাসতে লাগলো। তৃষ্ণা চেঁচিয়ে অঞ্জলি’কে এনে তাকেও এক প্রকার জড়িয়ে ধরে। আদুরে কন্ঠে জানায়,
–” আমাদের কি দিবে, রাজকুমারী না রাজকুমার? ”
অঞ্জলি বেশ লজ্জা পায়। তাও ধীর কন্ঠ বলে,
–” তুই কি চাচ্ছিস?”
–” রাজকুমারী। ”
–” তাহলে রাজকুমারী। ”
-” বলো কি লাগবে তোমার। ”
অঞ্জলি তৃষ্ণার নাক টেনে দেয়,
–” কিছুই না। তুই একটু বুঝ এখন। বিয়ে হয়েছে। বউ এসেছে। গুন্ডাফুন্ডা চলাচল বন্ধ। ”
তৃষ্ণা এবার হাসতে লাগলো। তারপর সে ধরাম করে সোফায় বসলো। অঞ্জলি’কে বলল,
–” ভাবী, একটা কফি। ”
অঞ্জলি বেলীকে আয়েশার হাতে দিয়ে দিলো,
–” আচ্ছা, আনছি। ”
সোলাইমান ভ্রু কুঁচকে ফেলল,
–” আমার বেলা কি বললে ” হবেনা কাজ আছে। পরে। ” আর এখন? ”
–” আমি স্পেশাল। ডার্লিং যাও আমার জন্য কফি। ”
তৃষ্ণার কথায় আবির সহ সকলে হাসছে। অঞ্জলি রান্নাঘরের দিক চলে যাচ্ছে। এদিকে তৃষা দৌঁড়ে এসেছে। সে বেলীকে টানতে লাগলো,
–” ভাবী আসো লেহেঙ্গা দেখবে। তোমার জন্য শাড়ি, লেহেঙ্গা সব আমি চুজ করেছি। নাকফুল, চুরি সব আমি পছন্দ করেছি। ”
বেলী নাকে সাথে সাথে হাত দিলো। সে কখনও নাকফুল পরেনি। প্রচন্ড অদ্ভুত লাগে তার কাছে। কেমন বিবাহিত বিবাহিত লাগতো। এখন তো সে বিবাহিত। নাকফুল থেকে আর বাঁচা যাবেনা।

বিমান এসেছে অভির সাথে। তার হাতে বড় এক ব্যাগ৷ হাওলাদার বাড়ি যেতেই তাকে, খুশি বেলীর পছন্দের সবরকমের জিনিস প্যাক করে দিয়েছে। বেলীর পছন্দের কিছু ড্রেসও দিয়ে দিয়েছে। বিমান আসতেই বেলী কিছুটা রেহাই পেয়েছে। বেলীর অসহায় চেহরা দেখে বিমান হাসছে,
–” ভীতু হতে হবেনা। মুখের দিক তাকানো যাচ্ছেনা দেখছি। ”
অঞ্জলি বেলীর চুল আঁচড়ে দিচ্ছে,
–” বুঝেছ বেলী। আমি যখন প্রথম আসি বউ হয়ে। তখন আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছিলাম না। ভয়ে লজ্জায় আমি প্রায় শেষ। কিন্তু তার পরপরই আসে তৃষ্ণা। আমাকে নিমিষেই হাসিয়ে ফেলল। ও যতক্ষণ ছিলো আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি নতুন এক বাড়ি এসেছি। প্রথম প্রথম একটু নার্ভাস লাগে কিন্তু দেখবে সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তুমিতো জামাই পেয়েছো লাখে এক। সে থাকতে তোমার সমস্যা হওয়ার কথাই
না। ”
বেলী বাচ্চাদের মতো মাথা দুলাচ্ছে। তার ভয় পরিবার নিয়ে না। সকলেই ভালো। সে মিশে যাবে। বড় ভয় তো তৃষ্ণা। এই সাংঘাতিক লোকের সাথে থাকতে হবে, ভাবতেই বেলীর মাথা ব্যাথা করছে। বুক ধুকপুক করছে। অদ্ভুত ভাবে শরীর ঝাঁকুনি দিচ্ছে।

জয়া এসেছে অঞ্জলির রুমে। বেলী তখন মাত্র গোসল করে বসেছে। তখন আবার বেলীকে নানান উপদেশ দিচ্ছিলো আয়েশা, অঞ্জলি। জয়াকে দেখে সবাই চুপ। জয়া এসে বেলীর পাশে বসে। বেলীর সাথে কথা বলতে বলতে, সে বেলীর দু’হাতে চুরি পরিয়ে দেয়৷ গলায় চেইন। এবং নাকে নাকফুল ও।
— ” আজ থেকে ভেবে নিবে এটা তোমার বাড়ি৷ আমরা তোমার মা-বাবা। সবাই তোমার আপনজন। কষ্ট দুঃখ আনন্দ, সিক্রেট তুমি আমার সাথে বা অঞ্জলি আয়েশা সকলের সাথে শেয়ার করতে পারবে। যেকোনো সমস্যা হলে আমায় জানাবে। আমি থাকব পাশে। হু? ”
–” জ্বি। ”
–” জ্বি কি?”
বেলী ধীরে বলল,
–” জ্বি মা। ”
জয়া বেলীকে জড়িয়ে ধরলো। এর মাঝে তৃষা দৌড়ে এসেছে,
–” মা দেখো ভাইয়া পাঞ্জাবি পরে, ছাঁদে আবিদ ভাইদের সাথে ড্রিংক করছে। ”
জয়ার জবাব নেই। সে বেলীকে উপদেশ দিচ্ছে৷ তার উপদেশ গুলো বেলী মন দিয়ে শুনলো। সত্যি তার জীবনের পরিবর্তন ঘটছে। অদ্ভুত পরিবর্তন। যেই পরবর্তন বেলীকে অনুভূতি দিচ্ছে।

বেলীকে সম্পুর্ন সাজানো হয়েছে। অঞ্জলি বেলীকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ” মা শা আল্লাহ ” বলে উঠলো। আজ বেলীকে সত্যি নতুন বউ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর দেখাচ্ছে। বেলীর সাথে সবাই সেজেছে। যেমন, আয়েশা, অঞ্জলি, তৃষা আর বিমান সেজেগুজেই এসেছিলো। আবার তৃষ্ণার মতো তার ভাইরাও পাঞ্জাবি পরেছে৷
আবিদ এসেছে ক্যামেরা নিয়ে। সে সুন্দর করে বেলীর অনেকগুলো ছবি তুলেছে। তারপর সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তুলেছে। তৃষা থেমে নেই, সে লাগাতার বেলীর সাথে ছবি তুলছে। আর একটু পরপর বলছে,
–” ভাবী কে কি সুন্দর লাগছে। ”
লাউড মিউজিকের জন্য বেলী ভালভাবে কিছুই শুনতে পারছেনা। জয়া নিজে হাতে বেলীকে খাইয়ে দিয়ে গেলো । তারপর বেলী আবারও বিছানার মধ্যে বসে। তাকে দিয়ে আবিদ নানান পোস দেওয়াচ্ছে।

তৃষ্ণা আবিরের সাথে ছাঁদে ছিলো। নামতেই দেখলো বেলী সোফায় বসে। তার ছবি তুলছে আবিদ। তৃষ্ণার পা সেখানেই থেমে। সে সেখানে দাঁড়িয়েই রইলো। বেলী আঁড়চোখে তৃষ্ণাকে দেখে ফেলেছে। এবার বেলীর লজ্জা মনে হচ্ছে আকাশ ছুঁয়েছে। এতো লজ্জা সে জীবনে পেয়েছে নাকি সন্দেহ। আবিদ তৃষ্ণাকে টেনে বেলীর পাশে বসালো। তৃষ্ণা এবার কাছ থেকে বেলীর দিক তাকিয়ে। সম্পুর্ন বউ রুপে বেলীকে তার কল্পনার থেকেও সুন্দর দেখাচ্ছে। দেখা গেলো তাকে বলতে হয়নি পোস দেওয়ার কথা। সে বেশ আরামসে বেলীর কোমরে হাত দিয়ে, বেলীর দিক তাকিয়ে পোস দিলো। আবির সেই ভাবে কিছু ছবি তুলেছে। তারপর সোফার চারপাশ ঘিরে গফ্যামিলি পিকচার ও তুলা হয়েছে।
বেলী সর্বক্ষণ শুধু নিচে তাকিয়ে ছিলো। তাকে এতো বলেও কেউ ক্যামেরার দিক তার চোখ নিতে পারেনি। শুধু তৃষ্ণা তার থুতনি ধরে নিজের দিক, তাকাতে বাধ্য করেছে। ব্যস, তখনই ক্লিক।
এতো এতো নিয়ম মেনে বেলী ক্লান্ত। এতটুকুতেই ক্লান্ত। বেলী ভাবতে লাগলো যদি কাল ঢোল বাজিয়ে তুলতে আসতো, তাহলে তাকে কতো ক্লান্ত হতে হতো?

তৃষ্ণার রুমে এসে বেলী প্রচন্ড লজ্জা পেতে লাগলো। হ্যাঁ এর আগে এসেছিলো একবার এই রুমে। কিন্তু আজকে অন্যরকম লাগছে। অন্যরুমের ক্ষেত্রে এই রুমটা বেশ বড়। অঞ্জলি তাকে বিছানায় বসিয়ে বলল,
–” তৃষ্ণার আবার ফুলে এলার্জি। এ আবার ফুলটুল দিয়ে সাজানো কিছু পছন্দ করেনা। তাই সিম্পল রেখেছি। তুমি বললে সাজাতে দিবে। কি বলো? ”
বেলী মাথা আরও নিচু করে ফেলল। তাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে। আয়েশা, অঞ্জলি আরও কিছু কথা বলল, এবার বেলীর ইচ্ছে করছে, আকাশে উড়ে চলে যেতে। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে, ভাইরা ভাইরা বাহিরে বারগেটিং করছে। আবিদ বলছে,
–” পুরো একদিনের জন্য তোমার কার্ড দিবে। নাহলে ভাবীর কাছে যাওয়া যাবেনা। ”
বেলী মনেমনে বলল,
–” হ্যাঁ আপনাদের সাথে রেখে দিন। আসতে দিবেন না। প্লিজ ”

চলবে

Nabila Ishq

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here