অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় সে পর্ব -২১+২২

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -২১
___________________
৪৬.
–“দাঁড়াও তৃপ্তি।আমার কথা না শুনে কোথাও যাবে না তুমি।তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।তুমি ইনায়ার ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছো!দুনিয়ায় আর ছেলে ছিল না তোমার জন্যে?প্রথমে আমি তোমাদের কেবল বন্ধু ভেবেছিলাম।কিন্তু ইনায়া আজ সব বললো আমায়।অসম্ভব এই সম্পর্ক।”
বাবার শেষ কথাগুলো কানে প্রবেশ করতেই তৃপ্তির পা থামে।মন খারাপের পাল্লা ভারী হয়।পেছনে বাঁক ফিরে সে তার বাবাকে জবাব দেয়,
–“সম্ভব-অসম্ভব আমি কিছুই জানিনা।উনি আমাকে ভালোবাসেন আর আমিও।এইখানে বাকি মানুষের সমস্যা হলে আমাদের কি যায় আসে?”
অরিত্রন চট্টোপাধ্যায় কপট রেগে যায়।রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তৃপ্তির গালে চড় দেয় বেশ জোরেই।
বিচলিত তৃপ্তি কয়েক পা পিছিয়ে গেলো অনায়াসে। অরিত্রন পুনরায় তাকে শাসিয়ে বললো,
–“ঠেং ভেঙে দিবো।ইনায়া ভালো মানুষ না,সে তোমার ভালোও চায় না।এটাই মঙ্গল হবে,তোমাদের দুজনের মধ্যকার সম্পর্কের ইতি টানো ।”

–“আমি পারবো না।আদ্রিন আমাকে ছাড়া কখনো ভালো থাকবে না।উনি আমার জন্যে শুধু একটা সম্পর্ক না।উনি আমার অনুভূতি,আমার সবকিছু।”
গলার তেজ বাড়লো তৃপ্তির।চামেলী প্রিয়কে অন্য রুমে রেখে এই কক্ষে এলো,
–“কি হয়েছে?তৃপ্তিকে মেরেছো তুমি দাদা?”

চামেলী তৃপ্তিকে ধরতে এলে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে সে,
–“দুনিয়ায় আমিই একমাত্র সমস্যা তোমার তাই না?কেনো যে মায়ের সাথে আমিও ম’রলাম না!”

একাই তৃপ্তি সকলকে উপেক্ষা করে বেরিয়ে যায় বাসা হতে।রক্তিম আঁখি বাঁধ ভাঙলো।ঝরছে অবাধ্য অশ্রু।লিফটের অপেক্ষা না করে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছে সে।লিফটের জন্যে অপেক্ষা করলে নিশ্চয় কেউ না কেউ এই দুর্বল তৃপ্তিকে দেখতে পাবে!তবে তৃপ্তি চায় না এমনটা।
দ্বিতীয় তলায় নামতেই তৃপ্তির বাবার সেই বন্ধুর সাথে দেখা হয় তার।লোকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,
–“বাবা এলেই শুধু কান্না করায় তাই না,মা?এমন বাবাকে বাসায় ঢুকতে দিও না ফের।”

–“আপনার মতো বন্ধু থাকলে শত্রুর দরকার হয় না।বাবা আমার বাড়ি কবে আসবে এই জন্যেই উঁকি মেরে থাকেন।আবার এসব নিয়ে আমাকে কথা শোনান আমার বাবার বিরুদ্ধে!আপনি বন্ধু না কালসাপ।”
তৃপ্তির চেহারা অগ্নিমূর্তি।মেয়েটার জ্বলজ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে অত্র লোক আর কিছু বলতে পারলো না।
তৃপ্তিও সেই লোকের পানে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এলাকার রাস্তায় হাঁটতে আরম্ভ করলো।

বিকালের তন্দ্রা কাটিয়ে কালকের ট্যুরের জন্যে ব্যাগ প্যাক করছিলো তৃপ্তি।মাঝপথে পেইজের জন্যে শাড়ি পড়ে ছোট একটা লাইভও করেছিলো সে।।হঠাৎই তৃপ্তির বাবা এসে উপরোক্ত কাহিনীটা করলো।ভালো লাগছে না তৃপ্তির।মনটা কেমন বিষিয়ে। মোবাইলও আনা হয়নি তার।একা জীবনে কেউ তো ছিলই না,আদ্রিন এসে সেই একাকীত্ব দূর করেছিলো।তাহলে এই মানুষকে কিভাবে নিজ জীবন হতে দূরে সরিয়ে দিবে?পারবে না তৃপ্তি।কখনোই না।হাঁটতে হাঁটতে তৃপ্তি এলো সাফার বাসার সম্মুখে।এক পর্যায়ে ভাবলো,ড্রইং করিয়ে কিছুক্ষণ এইখানে সময় ব্যয় করলে হয়তো দুঃখ কিছুটা লাঘব হবে!

ভেতরে ঢুকতেই কিঞ্চিৎ ঘাবড়িয়ে যায় তৃপ্তি।পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক কোনো আলাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে।তাহলে কি সাফা আজ ড্রইং করবে না?
ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুলেই রিয়ানার দেখা মিলে।রিয়ানা তাকে প্রশ্ন করে,
–“ঐদিকে কই যাও?সাফা রুমেই আছে।”
তৃপ্তি শান্তির শ্বাস ফেললো,
–“আমি ভেবেছিলাম আজ করবে না ড্রইং।এতো মানুষ!”
–“আরে না।সাফা না করলে তোমাকে আমি জানিয়ে দিতাম।যাও যাও,তুমি এইখানে কারো চোখে পড়লে আমার ভাইয়ের আবার সহ্য হবে না।”
মিষ্টি হাসে রিয়ানা।তৃপ্তি ভাবলেশহীন।অনুভূতি শূন্যের পর্যায়ে তার।ধীর পায়ে সাফার কক্ষে যায়।রিয়ানা ব্যস্ততার মাঝে তৃপ্তির কষ্ট অনুভব করেনি একবিন্দু।

সাফাকে ছবি এঁকে তা অনুশীলন করতে বলে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় তৃপ্তি।মাথায় অসহনীয় ব্যথা।কেমন ধপধপ শব্দ হচ্ছে অন্তরালে।এইখান থেকে বেরিয়ে আবার কোথায় যাবে সে?টাকাও আনেনি মোবাইলও না।বাসায় ফিরতে তার ইচ্ছে নেই।আপাতত চিন্তা করছে সে আলেয়ার বাসায় যাবে।আলেয়াই ভাড়া দিবে সিএনজির।তবে তৃপ্তির চিন্তা সব সেগুরে বালি।

হুট করেই কক্ষে আসে ইনায়া।হচকিয়ে সোজা হয়ে বসে তৃপ্তি।ইনায়াকে দেখা মাত্রই তার মনে উদয় হয় অস্থিরতা।
ইনায়া বিনা শব্দে হুট করেই তৃপ্তির গাল চেপে ধরে।সাফা উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
–“ছাড়ো নানু।মিস ব্যথা পাচ্ছে।”

তৃপ্তি অস্ফুট স্বরে চেঁচায় চোখ খিঁচে।

–“সাফা,রুম থেকে বেরিয়ে যাও,সোনা।তোমার মিসের সাথে আমার কথা আছে।”

সাফা উত্তর দেয়নি।সে রুম থেকে বেরিয়েছে তার মাকে ডাকার উদ্দেশ্যে।ছোট সাফা ঠিক বুঝে তার কথায় নানুর মন গলবে না।

–“খুব শখ আমার ছেলের বউ হওয়ার?”
ইনায়া আরো জোরে বল প্রয়োগ করলে তৃপ্তির আঁখি ভেসে যায় অশ্রুতে।সে ইনায়ার হাত ছাড়িয়ে জবাব দেয়,
–“আপনার ছেলেরই শখ আমাকে নিজের বউ করার।”
–“বাবার ঠিক নেই,মায়ের ঠিক নেই।এমন মেয়েকে আমার ঘরের বউ করবো?এতো দুর্দিন আসেনি আমার।আদ্রিনের আশেপাশে যেনো না দেখি তোমাকে।বে’শ্যার মেয়ে।”

টেবিলে থাকা রঙের কৌটাগুলো সজোরে আছাড় দেয় তৃপ্তি।মায়ের ব্যাপারে এমন জঘন্য কথা কোনো মেয়ে কি সহ্য করবে আদৌ?ক্রোধে দপদপ করতে থাকা তৃপ্তি চিল্লিয়ে উঠে,
–“আমার মা কি ক্ষতি করেছে?যাকে দেখি সেই আমার মায়ের নামে এটা সেটা বলে।কিন্তু,সাহস করে কেউ সত্যিটা বলে না।বে’শ্যা আমার মা না।যারা তার নামে বাজে কথা বলে..”
তৃপ্তি কথা শেষের পূর্বেই ইনায়া সজোরে চড় দেয় তৃপ্তির গালে।চেয়ারের সাথে নিজেকে সামাল দেয় মেয়েটা।

–“মা!কি সমস্যা তোমার?আদ্রিন জানলে কি হবে ভাবতে পারছো?”
রিয়ানা এসেই বুকে আগলে নেয় তৃপ্তিকে। ফুঁপিয়ে উঠলো তৃপ্তি।জীবনটা কেনো এত দুর্বিষহ?আদ্রিন যেখানে তাকে কোনোদিন বাজে ভাবে ছুঁয়ে দেয়নি,সেখানে তার মা আজ তৃপ্তির গায়ে হাত তুললো!কিসের এতো ক্রোধ তার?
–“এই মেয়ে আমার ছেলের মাথা খেয়েছে।আমি বেঁচে থাকতে কখনোই তাদের এক হতে দিবো না।এই মেয়েকে আমি মে’রেই ফেলবো।আমার ছেলের জীবন থেকে বেরিয়ে যাও।”
ইনায়া চিৎকার করে।

–“আপনার ছেলেই আমার জীবনে এসেছে।আমি না!”
তৃপ্তি বিনয়ী সুরে বলে।
–“আবার কথা?নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার। বাপের টাকা তো কম নয় যে আমার ছেলের পিছে টাকার জন্যে লাগবে তুমি।তোমার উদ্দেশ্য কি?আমার ছেলের পিছে পড়ে আছো কেনো?তোমার মা যেমন তোমার বাবার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে,তেমনটা করার জন্য?”

ধ্বক কর উঠে তৃপ্তির হৃদয়খানা।কানে যেনো শব্দের ভান্ডার আর প্রবেশ করছে না। ভোঁতা যন্ত্রণা মাথায়।
আর পারবে না সে এমন কটু কথা শুনতে।তার এখন নিরাপদ জায়গা চায়।যেখানে সে একা থাকতে পারবে।মানুষের ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে মেয়েটার।
রিয়ানা হতে ছুটে দৌড় দেয় তৃপ্তি।রিয়ানার এতো ডাকেও ফিরলো না সে।নিচে মানুষের সমাগমে কতো জনের সাথে ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে সে জানেনা।অবাক দৃষ্টিতে উদভ্রান্তের মতো আচরণ করা মেয়েটাকে দেখছে সকলে।
৪৭.
বাহিরে কেমন গুমোট আবহাওয়া।ভ্যাপসা গরমে জীবন যাত্রা থমকে যেনো।অথচ খানিক পূর্বেও ঝলমলে পরিবেশ ছিল বাহিরে।তৃপ্তির ভেতরকার অবস্থাটার সাথে পরিবেশের বুঝি মন খারাপ হলো!
ঘামে জবজবে তৃপ্তি সিএনজিতে উঠে পড়লো নিভৃতে।আলেয়ার ঠিকানা বললেও পরক্ষণে সে নিজের বাড়ির ঠিকানা বলে নিজের মত পরিবর্তন করলো।যেভাবে হোক,তার মায়ের মৃ’ত্যু রহস্য আজ সে উদঘাটন করবেই।
গুমোট পরিবেশ ভেদ করে ঝিরঝির বাতাসে সকলের মনে আশার আলো দোদুল্যমান।এখন সকলে অপেক্ষায় এক পশলা বৃষ্টির।যেমনটা তৃপ্তিও অপেক্ষা করছে বাড়ি ফিরে সকল কিছু উদঘাটনের।

‌দারোয়ানকে ভাড়া দিতে বলে তৃপ্তি ভেতরে যায়।দিদা, কাকীরা এতো ডাকলো;কারো কথায় কান দিলো না সে।সোজা দোতলায় গেলো।সকলের মুখের সম্মুখে বাবার রুমের দরজা বন্ধ করে।মুহূর্তেই হট্টগোল শুরু হয়।দিদা আর্তনাদ করে উঠেন,
–“ও তৃপ্তি তোর কি হলো রে?গালে আঙ্গুলের ছাপ কেনো?কেউ অরিত্রনকে ডাক!”
অর্করা বাসায় নেই।অফিসে সকলে।কাজের ছেলেটা ছুটে গেলো পাশের দোকানে।কিছুক্ষণ আগে অরিত্রন বাসায় ফিরে আবারও পাশের দোকানে গেলো বন্ধুর সমেত দেখা করতে।

তৃপ্তি বহুকষ্টে আলমারির চাবি পেলো।এমন পাপ সে কখনো করতে চায়নি।কিন্তু,সে নিরুপায়।আলমারি হতে মায়ের ডেড সার্টিফিকেট পেলো মুহূর্তেই।দরজার বিপরীতে তার বাবার হাক শোনা যাচ্ছে সাথে দরজা ভাঙার তীব্র চেষ্টা।

কাঁপা হাতে ফাইল খুললো।স্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখলো তার মায়ের মৃত্যু কারণ – সুইসাইড।অর্থাৎ আত্মহত্যা।বাকিটা আর দেখার সুযোগ হয়নি।অরিত্রন ফাইল ছিনিয়ে নেয়।এর দরুণ তার ঘড়ির চৌখা অংশের সাথে তৃপ্তির নাকে আঘাত পায়।নরম নাকের অধিকারী মেয়েটার নাক হতে ঝরঝরিয়ে রক্তের সমাগম।
তৃপ্তি বেখবর।সকলের সকল কথা উপেক্ষা করে টলমলে পায়ে এগোয়।একপর্যায়ে সকলকে রুমের ভেতরে লক করেই বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে উদ্যত।

‌–“তৃপ্তি মা, নাক থেকে রক্ত বেরুচ্ছে তো!”
বাবার উচ্চ চিৎকারেও মেয়েটার মন গললো না।গলবে কিভাবে? এতদিন বিনা কারণেই বাবাকে দোষ দিয়েছে সে মায়ের মৃত্যুর কারণ লুকানোর জন্যে।তার মায়ের করা এমন পাপের কথা তার বাবা জানতে দেয়নি তাকে।আর সে কিনা বাবার সাথে কথা না বলেই বাবাকে কষ্ট দিয়ে গেলো?মায়ের আত্মহত্যার কারণের চেয়ে এখন তার কাছে বড্ড অনুশোচনা হচ্ছে সবকিছু নিয়ে।নিতান্তই সে একটা খারাপ মেয়ে!যে বাবাকে এতদিন কেবল কষ্ট দিয়েই গেলো,বাবার মনটা একবার বোঝার চেষ্টা করলো না!তবে তার মা কেনো আত্মহত্যা করলো,এটাও এক বিরাট প্রশ্ন তার মনে।যদিও সে সিদ্ধান্ত নিলো এইসব সে কখনোই আর জানতে চাইবে না।বাবাকে আর একবিন্দু কষ্ট দিবে না সে।বাড়ির দারোয়ান অরিত্রনের নির্দেশেও আটকাতে পারেনি তৃপ্তিকে।

বাহিরে তুমুল বর্ষণ শুরু হয় সকলের মনের দোয়ায়।
তৃপ্তি পার্কের বেঞ্চিতে বসে।নানান মানুষের কটু দৃষ্টি তার উপর।মেয়েটা বেখবর।হাজারো চিন্তায়,নাকের ব্যাথায়,মনের পীড়ায় জর্জরিত সে।আজকের দিনটা তার জীবনের জঘন্য দিন।

বৃষ্টিতে সারা সত্তা ভিজে মেয়েটার।নাকের রক্ত এখনো বহমান।একটু আহ্ শব্দটাও করলো না।
কান্নায় চোখ মুখ ফুলে উঠেছে তৃপ্তির।রাতের কয়টা বাজে তারও হাদীস নেই। শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে নিলো সে।হঠাৎ শীত বাড়ছে কেনো?
গাড়ির শব্দ চারিদিকে।তৃপ্তি উঠে পড়ে।বাসায় ফিরতে হবে।এইভাবে আর কতক্ষণই বা বাহিরে থাকবে।আদ্রিনের কথা মনে পড়ছে।ছেলেটা নিশ্চয় তার খোঁজে বেহাল?কিন্তু,তার মা তো তাদের এক হওয়া চায় না।আদ্রিনের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে তৃপ্তি।তার মা তৃপ্তির সাথে যেসব করেছে সবটাই বলবে মেয়েটা।
৪৮.
লম্বা জ্যাম সাথে বৃষ্টির ব্যাগ বাড়ছে।সিএনজিও খালি নেই।রাস্তার ধারে এলোমেলো পা ফেলে ভিজছে তৃপ্তি।হঠাৎই তার হাত আঁকড়ে ধরে কেউ।ভয়ে পেছন ফিরতেই আঁতকে উঠে।আদ্রিন দাঁড়িয়ে!দৃষ্টি তার ভয়ানক।এলোমেলো চুলে তৃপ্তির মুখ ঢেকে।ছেলেটা দেখলোই না তার প্রিয়তমা নাকে চোট পেয়েছে।তৃপ্তি ঠোঁট কাপুনির ফলে কিছু বলতে পারলো না। আদ্রিনের পানে তার দৃষ্টি আটকে।ট্রাফিকের ভেতরেই তৃপ্তির কাঁধ জড়িয়ে গাড়ির দিকে এগোয়।দরজা খুলেই ধাক্কা দিয়ে তৃপ্তিকে ভেতরে নিক্ষেপ করে আদ্রিন।তাল সামলে উঠতে না পেরে তৃপ্তি সিটের উপর থমকে পড়ে।
পরপর আদ্রিন উঠে তৃপ্তির পাশেই বসে।

তন্ময় চিন্তিত সুরে বলে উঠে,
–“ভাগ্যিস ম্যাম আপনাকে পাওয়া গেলো। স্যার…”
–“শাট আপ তন্ময়!গাড়ি আমার হাউজে যাবে।আর থানায় কল দাও।মিসিং ডায়েরি উঠিয়ে নাও।”
আদ্রিনের কণ্ঠ যেনো জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড।তৃপ্তি নিজেকে সামলে উঠে বসে সোজা হয়ে।শাড়ির অবস্থা নাজেহাল।মুখের উপর চুল সরালে নাকের ক্ষত তাজা হয় আবারও।কোনোভাবে শাড়ি চেপে ধরে সে নাকে।

আদ্রিনকে নানান প্রশ্ন করতে চায় তৃপ্তি।কিন্তু,আদ্রিন তার অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করবে তো দূরের কথা,কেমন যেনো থমকে রইলো।অনবরত নিজের ভেজা চুল পিছনের দিকে ঠেলছে।তৃপ্তি একবার আদ্রিনের হাতের উপর হাত রাখতে নিলে হাত ঝাড়া দেয় ছেলেটা।
কেঁপে উঠে তৃপ্তি।মুখে কিছু বলতে নিলে নাকের ব্যথা তাকে থামতে বাধ্য করে।

‌গাড়ি বিশাল ফটকের মাঝে প্রবেশ করে।বৃষ্টির বেগ এখনো তীব্র।আকাশ যেনো আজ তার মনের সকল কষ্টের বহিঃপ্রকাশ করছে।গাড়ি থামে।তৃপ্তি আদ্রিনের নির্দেশনার অপেক্ষায়। এইভাবেও ছেলেটা তার কোনো প্রশ্ন বা উত্তর শুনতে নারাজ।
নাকের ক্ষতের স্থানে তৃপ্তি পুনরায় নিজের চুল দিয়ে ঢাকে।অযথা দুর্বলতা প্রকাশের মানে খুঁজে পায়না মেয়েটা।আদ্রিন বেরিয়ে পুনরায় তন্ময়কে নির্দেশ দেয়,
–“কল আলেয়া।ওকে বলবে,তৃপ্তির বাসায় ফোন দিয়ে যেনো বলে আজ তৃপ্তি আলেয়ার বাসায় থাকবে।আর আলেয়া যদি বেশি প্রশ্ন করে তাহলে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবে।সে বুঝবে।”
–“জ্বী স্যার।”
তন্ময় জবাব দেয়।

চমকিত তৃপ্তির গাড়ীতেই বসে।কি করবে সে?আদ্রিন তাকে এইখান থেকে আবার আলেয়ার বাসায় দিয়ে আসবে?নাকি এইখানেই থাকতে বলবে?অসম্ভব!ভাবুক তৃপ্তির ভাবনার মাঝে আদ্রিন সজোরে আঘাত করে জানালায়,
–“কাম আউট!”(বাহিরে আসো)।
তড়িঘড়ি করে বেরুতে নিলে শাড়ির কুচি পায়ের তলায় পড়ে আর কুচির রফাদফা হয়।
কাঁপা হাতে কুচির তাল ধরতে গেলে আদ্রিন তাকে কাঁধে তুলে নেয়।অস্ফুট স্বরে চেঁচায় তৃপ্তি।এই শব্দ আদ্রিনের কানে প্রবেশ করেও যেনো করলো না।

ভেতরের পরিবেশ থমথমে।দুইজন কর্মচারী তাদের দেখে ঘরের সকল আলো জ্বালালো।রোজ তারা সকল রুম পরিষ্কার রাখে।তাদের মালিকের আসার কোনো সময় থাকে না।অপরিষ্কার জিনিস আবার আদ্রিনের অপছন্দ। সাবধানের মার নেই।তাই তারা সর্বক্ষণ ঘরের সেবায় নিয়োজিত।
আদ্রিনকে সালাম দিতে গিয়েও দিলো না।তন্ময় আগেই তাদের ফোন করেছিল। আদ্রিনের সাথে কথা বলতে মানা করলো সে নিজ থেকে বলা অব্দি।আদ্রিন তার বাগদত্তার সাথে রেগে আছে এই কথাও বলতে ভুলেনি তন্ময়।নাহলে মানুষের মন নানান কথা বানাতে বড্ড পটু।

নিচ তলার রুমের বেডে তৃপ্তিকে এক প্রকার ধিক্কার জানিয়ে নামালো আদ্রিন।রাগ সংবরণ করতে না পেরে খাটের কিনারায় লাথি দিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো মানব,
–“পালাচ্ছিস আমার থেকে?দূরে যাবি?কই যাবি?বল,আমি দিয়ে আসি!”
এলোকেশী তৃপ্তি খুলে যাওয়া শাড়ির অংশ বুকে টেনে কেঁদে যাচ্ছে সমানে।সে তো পালাচ্ছিলো না।একা সময় কাটাচ্ছিলো কেবল।

–“এই কথা বল?কই যাবি?চল।দিয়ে আসি।আম্মির কথায় আমাকে ছাড়বি তুই?এই কয়েক ঘন্টা,জানিস কিভাবে ছিলাম আমি?রিয়ানা ফোন না করলে আমি কিছুই জানতাম না।আমার ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার তুই কে?বলেছিলাম না,তুই শুধু আমার!”
আদ্রিনের গর্জনে কানে হাত চাপে তৃপ্তি।বুকের ভেতরটা পুড়ে ছারখার।আদ্রিন অহেতুক তাকে ভুল বুঝছে!

তৃপ্তি জবাব না দিলে আদ্রিন তার বাহু টেনে কাছে আনে।ইতিমধ্যে তৃপ্তির ভেজা শাড়ীর দরুণ বেডশিট ভিজে।মেয়েটার ঠান্ডা লাগছে এটাও আদ্রিন ভুলে বসেছে।

তৃপ্তির চিবুক ধরে মুখ তুললো সে,
–“কি আজ মুখে কথা নেই? হাউ ডেয়ার ইউ?আমার জানকে আমার থেকে দূরে সরাবি,তুই?”
–“নাহ,আদ্রিন।আমি..আমি এমন..টা চায়নি তো..”
তৃপ্তির কান্না মাখা কণ্ঠ যেনো ধনুক।মুহূর্তেই ছেদ করে আদ্রিনের অন্তরে।
–“তাহলে,কেনো একা একা রাস্তায় ঘুরছিস? আম্মির কথায় আমাকে…”
থেমে যায় আদ্রিন।তার ক্রোধ মাখা দৃষ্টিতে আটকে গেলো রক্তিম আভা।

বাম পাশের মুখের আস্তরণ থেকে এক গোছা চুল সরাতেই আঁতকে উঠে আদ্রিন,
–“এটা কিভাবে হলো?জান? আম্মি মেরেছে?নাকি রাস্তায় কেউ কিছু করেছে?বল মেহেবুবা!কি হয়েছে?”

পিটপিট দৃষ্টিতে মেয়েটা আবেগী ছেলেটার দিকে তাকায়।কপালে কিছু চুল লেপ্টে তার। সে তার থেকে দূরে চলে যাবে ভেবেই তার এতো পাগলামো।আদ্রিন কি জানেনা এই মেয়েটাও যে আদ্রিনের দেওয়ানা?
হুট করেই তৃপ্তি জড়িয়ে ধরে আদ্রিনকে,
–“কিছু হয়নি।একটু জড়িয়ে ধরুন না।”

আদ্রিন বেসামাল।বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে মেহেবুবাকে।রাগ,ক্রোধ কোথায় যেনো উবে পালালো।এলোমেলো শাড়ীর ভাঁজে ছুঁয়ে যাচ্ছে আদ্রিনের হাত। কেঁপে উঠে তৃপ্তি।শার্ট দুমড়ে যাচ্ছে তার মুঠোতে।

–“আম্মির কথায় কিছুই মনে করবে না।তোমার গায়ে হাত তোলার জবাব আম্মিকে দিতেই হবে।আমি শুধু তোমাকে চাই।অ্যান্ড,ইউ আর অনলি মাইন। নাকের অবস্থাটা দেখাও।দেখি।”

বুকের মধ্যিখান হতে সরতে নারাজ তৃপ্তি।তবে ভাবুক প্রেমিক তা উপেক্ষা করে নাকের ক্ষত পর্যবেক্ষণ করে,
–“কেটেছে শুধু।কিভাবে হলো?”
–“বাবার ঘড়ির সাথে ব্যথা পেয়েছি।”
–“মেরেছে?”
আবারও শক্ত হয় আদ্রিনের সুর।
–“নাহ।আপনি এমন রেগে ছিলেন কেনো?আমি কেনো আপনাকে ছেড়ে যাবো?আপনি আমার জীবনের বড় অধ্যায়।মন খারাপ ছিলো তাই একা ছিলাম।”
–“ভয় পেয়েছিলাম অনেক।ভেবেছিলাম এমন মাইর দিবো আজ!”
আদ্রিন ভ্রু কুঁচকে চায়।
–“ইসস,তারপর?”
তৃপ্তি নরম হয় আদ্রিনের ঘাড়ে হাত রেখে।

পরপর ছেলেটার বাঁকা হাসি দৃশ্যমান।বেশ ঝুঁকেই গলায় অধর ছুঁয়ে দেয় ছেলেটা।চমকিত তৃপ্তি দূরে সরতে গেলে আদ্রিন তার উন্মুক্ত কোমরে হাত রাখে,
–“খোলা শাড়িতে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো।অঘটন হলে দোষ কার?তোমার।”
তৃপ্তি দ্রুত ঠিক করতে ব্যস্ত হয় শাড়িখানা।

আদ্রিন থামায় তাকে,
–“ভেজা তো।ছেড়ে দাও।আমার টিশার্ট দিয়ে কাজ চালাও আজ।নাকেও ড্রেসিং করতে হবে।”
তৃপ্তি মাথা নাড়ায়।

অবশেষে সবকাজ শেষে খাওয়া দাওয়া চুকলো।আদ্রিনের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট তৃপ্তির নিকট ফুল প্যান্ট,এমনকি আরো লম্বা।ঢোলা শার্ট আর প্যান্টে তাকে যেনো জোকার লাগছে!
আদ্রিনের মন খু’ন হয় তার প্রিয়তমার রূপে।দৃষ্টি তার সংযত রাখতে কষ্ট হচ্ছে।তাই জোর করেই সে তৃপ্তিকে মুড়িয়ে নেয় কম্বলে।পাশে বসেই মাথায় হাত রাখে,
–“ঘুমাও।আমি সোফায় থাকবো।অধিকার হয়নি এখনো,তাই চেয়েও বুকের মাঝে আগলে নিতে পারছি না।এমন আগুনের কাছে নিজেকে ধরা দিলে সব নিঃশেষ হবে।আমি চাই,পবিত্রতার সাথেই আমরা এক হই।”

মুচকি হাসে তৃপ্তি।আদ্রিনের হাত আকড়ে ধরে সে আওড়ায়,
–“আজকে যা পাগলামি করলেন।ভয় পেয়েছি অনেক।”
–“ভয় পাওয়া ভালো।ভয় পেলে ভালোবাসা বাড়ে,কষ্ট দেওয়ার কথা মাথায় আসে না।দেখি চোখ বন্ধ করো।জ্বর আসছে তোমার। কে বলেছে তোমাকে একা থাকতে?আর কখনো এমন করবে না।আমার হৃদয়ে জ্বলন হয়।”
আদ্রিন অপর হাতে তৃপ্তির মাথায় হাত ছোঁয়ায়।

–“জানেন,বাবার দোষ নেই কিছুতেই।আমার মা সুইসাইড করেছিলো,তাই বাবা মায়ের করা পাপ আমাকে জানতে দিতে চায়নি।আর আমি কিনা বাবাকে বিনা দোষে কষ্ট দিয়েছি।আমি কি খুব বাজে?হ্যাঁ বাজেই তো,কালকের ট্যুরও ক্যান্সেল হলো আমার জন্যেই।”
–“হয়েছে তো জান।দেখি চোখ বন্ধ করো।”
তৃপ্তি একপাশ ফিরে শোয়।আদ্রিনের খরশান গালের খোঁচা দাড়িতে হাত স্পর্শ করে,
–“আজকের সারাটা দিন আমার জন্যে বেশ কষ্টের দিন ছিলো।কিন্তু,এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি সুখী।আপনি পাশে থাকলেই আমার চিরসুখ,পরমসুখ।”

তৃপ্তির প্রশ্নে আদ্রিন অধর ছোঁয়ায় তৃপ্তির হাতের উল্টোপিঠে,
–“আর কিছুই বলো না।আমি বড় কোনো ভুল করে ফেলবো,জান। ঘুমাও প্লিজ।টেম্পারেচার বাড়ছে তোমার।”

–“জীবনটা যেনো এখন নতুনরূপে সাজাতে পারি আমি।”

–“দেখবে কাল একটা সুন্দর সকাল হবে।ঘুমাও রে বাবা।”
আদ্রিন আশ্বাস দেয়।

তৃপ্তির চোখ বুঁজে আসছে।শরীরটাও কেমন নেতিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।অবচেতন তৃপ্তি তার মনের কোনো এক ভাবনায় তৃপ্তি বিড়বিড় করলো,
–“মনে হচ্ছে,কাল ভয়ংকর কিছু হবে।আপনি আমায় রক্ষা করবেন তো,আদ্রিন?”

চলবে…..
কপি করা বারণ।

ছবি কালেকশন: ইনস্টাগ্রাম।#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -২২
___________________
৪৯.
প্রেয়সীর রাতভর জ্বরের কা’ত’রতা সহ্য করেছে আদ্রিন। ভোরের আলো ফুটলে তখনই মেয়েটার জ্বর কমে।চিন্তিত আদ্রিন তার পাশেই বসা অবস্থায় ঘুমিয়ে।এক হাত এখনো তৃপ্তির কপালে ঠেকানো তার।জলপট্টি দিয়েই জ্বর কাবুতে এনেছিল আদ্রিন।কেমন ব্যাকুল হচ্ছিলো সে বারংবার।নিশিকালে তীব্র ঝড়ো হাওয়ায় এবং বর্ষণেও ছেলেটা হয়তো তার মেহেবুবার জন্যে ডাক্তারের খোঁজ করতেও পিছপা হতো না।যদি না এর পূর্বে জ্বর নিয়ন্ত্রণে না আসতো!

জ্বরে ক্লান্ত,বিষাদগ্রস্ত তৃপ্তি।গায়ের টিশার্ট ঘামে জবজব।জ্বর ছাড়ার ফলাফল। ক্ষীণ আলোয় কক্ষ জ্বলজ্বল।ক্লান্ত দৃষ্টি তার সরাসরি জানালায় স্থির।পর্দার আড়ালে সোনালী রোদ যেনো গত রাতের ঝড়কে বুড়ো আংগুল দেখাচ্ছে।

তার দৃষ্টি সোফায় যেতেই হচ’কালো কিঞ্চিৎ।আদ্রিন অনুপস্থিত।পরক্ষণে নিজের কপালে ভারী ভাব অবলোকন করতেই পাশ ফিরলো সে। মুহূর্তেই মন পিঞ্জিরা হরতালের আহ্বান জানায়।তার মনের ঘাতক তার সন্নিকটে বসে।গভীর তন্দ্রায় নিমজ্জিত।নিঃশ্বাসের গতি দেখে মনে হয়, বেশ ক্লান্ত তার প্রেমিক পুরুষ।
রাতে ঘুমানোর পর কিছুই মনে নেই তৃপ্তির।তবে,শরীর জুড়ে তার অস্থিরতা,ক্লান্তি।আদ্রিনের হাত সরিয়ে নেয় কপাল হতে।দুহাতের মুঠো তার ঘুমন্ত প্রেমিকের ভারী হাতকে কাবু করতেই নাজেহাল অবস্থা।মলিন হাসে মেয়েটা।অতঃপর দুর্বল হাতে তুলে সেই শক্ত হাতের মাঝে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়।মনের নি’ষিদ্ধ ইচ্ছার সঞ্চনরণ।পাশ ফিরে আদ্রিনের কোমর জড়িয়ে ধরার জন্যে ব্যাকুলতা বাড়ছে তার।

কিন্তু,নিজেকে ধাতস্থ করলো তৃপ্তি।নি’ষিদ্ধ ইচ্ছাটা মনেই হলো পিন্ড।ঘাড় কাত হয়ে থাকার দরুণ আদ্রিনের চুলের কিছু অংশ হেলে পড়েছে একপাশে।সেই পাশের ট্রিম করা ছোট চুল দেখায় যাচ্ছে না। তৃপ্তির আদুরে লাগলো ব্যাপারটা।টি শার্টের বাহিরে বিদ্যমান বাহুতে এক আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষণ আঁকিবুকি করলো তৃপ্তি।ছেলেটার খবর নেই। নিদ্রাসক্ত সে।

খানিকক্ষণ সময় প্রিয়তমকে পর্যবেক্ষণ করে কাটলো তৃপ্তির। তবে, এখন বাথরুমে যাওয়া জরুরি।ধীরে উঠতে গিয়ে ব্যাঘাত ঘটে। দুর্বলতার দরুণ তার শরীর টলমলে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হেলে পড়লো সে আদ্রিনের উরুর উপর।

তাৎক্ষণিক নিদ্রাভাব কাটে আদ্রিনের।বিচলিত কণ্ঠে আওড়ায়,
–“তৃপ্তি?ঠিক আছো?”
কপালে আঙ্গুল চেপে তৃপ্তি ধীর কণ্ঠে শুধায়,
–“হু।সরি,ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।”
তৃপ্তির চুলের ভাঁজে আঙ্গুল দ্বারা স্পর্শ করে আদ্রিন,
–“হুশ।খারাপ লাগছে?”
–“নাহ।আপনি ঘুমান প্লিজ।আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।রাতভর জেগে ছিলেন কি?”
দূর্বল কণ্ঠ তৃপ্তির।
–“জ্বর ছিলো তোমার।আমি কিভাবে ঘুমায়?ওয়াশরুম যাবে?নিয়ে যাবো?”
উবু হয়ে থাকা আদ্রিনের গালে হাত ছোঁয়ালো তৃপ্তি,
–“সবকিছু বুঝে যান কিভাবে?আপনার উপর নির্ভর হয়ে গেলে তো সমস্যা।মহা সমস্যা।”
–“তোমার সমস্যার সমাধান আমি।দেখি।উঠো।”

তৃপ্তির ঘাড়ের নিচে হাত রেখে উঠে বসায় তৃপ্তিকে।পরক্ষণে তৃপ্তি আদ্রিনকে আঁকড়ে ধরে ওয়াশরুমে যায়।আদ্রিন দাঁড়িয়ে বাহিরে।দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে।আরেক চোট ঘুমানো‌ খুব দরকার তার।মিটিং আছে দুপুরে।বড় একটা ডিল।অনেক খাটুনির প্রয়োজন।

তৃপ্তি বেরোয়।আদ্রিন তাকে আগলে বসায় বিছানায়।ভেজা মুখে তাওয়াল স্পর্শ করে আদ্রিন বলে,
–“শাড়ি পড়ে নাও।পারবে পড়তে?”
–“শাড়ি? ভিজে ছিলো না?”
তৃপ্তি অবাক।
–“হ্যাঁ।রাতে সার্ভেন্ট ছিলো একজন।উনাকে দিয়ে ঠিক করিয়েছি সব।শাড়ি শুকনো অ্যান্ড ভাঁজ করা আছে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

তৃপ্তি মাথা নাড়ায়।

কিছুক্ষণ বসে তৃপ্তি শাড়ি পড়তে উদ্যত হয়।মুটামুটি পারলেও একেবারে পরিপক্ক হয় না তার শাড়ি পড়াটা।তাও,গতি নেই আজ।পড়তেই হবে।যেভাবে হোক।তৃপ্তি ধীর হাতে আন্দাজ করে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে।তবে বিপত্তি ঘটলো কুচি নিয়ে।দূর্বল হাতে কিছুতেই কুচির ঠিকানা সঠিক হচ্ছেই না।এর মাঝেই আদ্রিন এলো অন্য রুম হতে।একেবারে পরিপাটি সে।যাওয়ার পূর্বে অবশ্য নিজের কাপড় নিয়ে গিয়েছিলো সে।

তৃপ্তি কুচির কথা ভুলে অদ্ভুত নজরে চেয়েই রইলো তার প্রেমিক পুরুষের পানে।লোকটা কেনো এত আকর্ষণীয়?বুকে জ্ব’লন সৃষ্টি হয় তৃপ্তির।

তৃপ্তির অবস্থা অবলোকন করে আদ্রিন শুধায়,
–“শাড়ি পড়োনি এখনো!”
–“কুচিটা পারছি না।হাত কাঁপে।সার্ভেন্ট আছে?ডেকে দিন না।”
ইতস্তত বোধ করে জানায় তৃপ্তি।

বাঁকা হাসির ছড়ক দেখা মিলে আদ্রিনের অধরে,
–“আমি আছি।লেট মি ডু ইট। এইভাবেও পরে এইসব জিনিস আমাকেই করতে হবে।আদর্শ হাজবেন্ড হবো বলে কথা!”
–“আমি পারি।কিন্তু,এইযে হাত কাঁপছে!”
–“পারলেও সমস্যা নেই।আমার সামনে না পারার ঢং করবে।কেমন?”
তৃপ্তি কিছু বলতে চায়। এর পূর্বে আদ্রিন তৃপ্তির সম্মুখে বসে পড়ে।আদ্রিন আমতা আমতা করছে খানিকটা।এই কাজ ইহকালে করেনি।তারপরও কুচির ধার ঠিকভাবে আয়ত্তে আনার বৃথা চেষ্টা করছে।
হঠাৎই তার চেষ্টায় বিপত্তি ঘটে।তৃপ্তির উদরের দিকে খানিকটা শাড়ি সরে যায়।দৃশ্যমান হয় শুভ্র উদর।পাশে একটা লাল রঙা তিল হবে হয়তো!দৃষ্টি সেথায় স্তব্ধ।ভেতরকার সত্তা জেগে উঠে একটিবার সেথায় ছুঁয়ে দিতে।
হৃদয়খানা পুড়ে ছাই।দৃষ্টি ঘুরিয়ে দ্রুত উঠে পড়ে আদ্রিন,
–“এইসব হবে না আমার দ্বারা।”
–“আরে হচ্ছিলো তো।আরেকটু চেষ্টা করবেন প্লিজ?”
তৃপ্তি অনুরোধ করে।
–“আরেকটু চেষ্টা করলে,তোমার কাছে আমি সর্বোচ্চ অসভ্যতে পরিণত হবো।কিন্তু,আমি তা চাই না।আমি চাই,আমি একান্তই তোমার হালাল অসভ্য হয়ে থাকি।পাঠাচ্ছি কাউকে।”
আদ্রিন হুড়মুড় করে কক্ষ ত্যাগ করে।

ভাবুক তৃপ্তি ভাবতেই রইলো।কাহিনীটা তার আন্দাজের বাইরে।
৫০.
পরিপাটি হয়ে ডাইনিং এ যায় তৃপ্তি।পুরো পথ সার্ভেন্টই আগলিয়ে রেখেছিলো।আদ্রিন তার জন্যে খাবার বাড়ে।সে বসতেই এক টুকরো ডিমে ভাজা পাউরুটি মুখের সম্মুখে ধরে,
–“হা করো।”
তৃপ্তি খায়। এইভাবেও তার খিদে লেগেছে প্রচুর।খাওয়ার পর্ব শেষে বেসিক কিছু ঔষধ খাওয়ায় সে তৃপ্তিকে।পরিচিত এক ডাক্তার থেকে এই পরামর্শ জেনে নেয় তৃপ্তির প্রেমিক পুরুষ।

আদ্রিন তার মোবাইলে ব্যস্ত। মিটিংয়ের সব রিচেক করছে।তন্ময় ড্রাইভ করবে।তাই আপাতত তারা তন্ময়ের অপেক্ষায়।তৃপ্তি সোফায় বসে রইলো চুপচাপ।ভেতরকার অন্তর জ্বালাপোড়া করছে।মন বলছে আজ খারাপ কিছু হবে।আদ্রিনকে কি জানাবে সে এই অস্থিরতা সম্পর্কে?নাহ।ছেলেটা তার কাজে মশগুল।নিশ্চয় বড় কোনো কাজ আছে তার।তাকে বিরক্ত না করায় শ্রেয়।

‌মিনিট দশেক পরে একজন গার্ড উপস্থিত হয় লিভিংরুমে।নরম সুরে বলে,
–“অরিত্রন চট্টোপাধ্যায় নামের একজন এসেছে।ভেতরে আসতে বলবো কি?”
–“ইয়াহ।”
আদ্রিন জবাব দিয়ে পুনরায় মোবাইলে মগ্ন।

তৃপ্তি নড়ে উঠে।বাবা এসেছে!কি করবে এখন বাবা? জড়তায় তার দুর্বলতা বাড়ে।আদ্রিনকে ডাকতে চায়।কিন্তু,গলার আওয়াজ যেনো ফুরিয়েছে।আদ্রিন লক্ষ্য করে সবটা।তার প্রেয়সীর ব্যাকুলতা তার নজরে স্পষ্ট।আদ্রিন তার পাশে বসে নির্বিঘ্নে।মাথায় হাত স্পর্শ করে,
–“টেনশন করো না।আমি আছি।”
–“বাবা!”
ভয়ে আড়ষ্ট সে।
–“কিছু করবে না।”
–“ভয় হচ্ছে খুব।”
–“আমি আছি তো,জান।”
আদ্রিনের কথায়ও শান্তি পেলো না মেয়েটা।কেমন যেনো বুকে হাহাকার।ঠিক,খুব খারাপ কিছু হবে হয়তো!

–“তৃপ্তি!তোর এতো সাহস, বান্ধুবিকে দিয়ে মিছা কথা বলিয়ে এইখানে রাত কাটিয়েছিস?”
অরিত্রন বেশ রেগে।

–“রাত কাটিয়েছে বলতে আপনি কি খুব বাজে জিনিসটা মিন করছেন?আমার মাঝে নায্যবোধ আছে,মিস্টার অরিত্রন চট্টোপাধ্যায়।”
আদ্রিনের কথায় ব্যাপক আলোড়ন।

ভরকে যায় তৃপ্তির বাবা।সেদিকে লক্ষ্য করে পুনরায় আদ্রিন বলে,
–“হ্যাভ এ সিট।আপনার মেয়েরই বাড়ি হবে এটা।আমি আপনার মেয়ের ফিউচার ফ্যামিলি।”

অরিত্রন রেগে অস্থির।সে বসবে না বলে স্থির।
তৃপ্তি ভয়ে,শঙ্কায় আদ্রিনের শার্ট চেপে।আসলেই ব্যাপারটা অন্যদিক দিয়ে ভাবলে যে কেউ বাজে ভাববে।একা বাড়ীতে আদ্রিনের সাথে থাকাটা তার উচিত হয়নি।দুনিয়াকে হাজার বুঝালেও,বুঝবে তারা ঠিক উল্টোটা।

–“তৃপ্তি উঠে আয়।এই ছেলের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে বারণ করেছি না?”
–“বারণ তৃপ্তি শুনলেও আমি শুনবো না।আমার আম্মি আমাকে থামাতে পারেনি,সেখানে আপনি আমার কাছে কিছুই না।আমার ভবিষ্যৎ ফ্যামিলি তৃপ্তির বাবা আপনি,তাই ব্যবহার ঠিক রেখেছি।”
আদ্রিন এক আঙ্গুল কপালে ঘষে।

–“তোমার মায়ের থেকে পারমিশন নিয়ে এরপর আমার মেয়ের কাছে আসবে তুমি।তোমার মা যতদিন পর্যন্ত নিজে না এসে আমার মেয়ের হাত চায়,ততদিন আমি তোমাদের সম্পর্কে রাজি হবো না।”
অরিত্রন চট্টোপাধ্যায় একসুরে বলে।

–“আই লাইক ইট,আঙ্কেল।সোজাসাপ্টা কথাটা আমার পছন্দ হয়েছে।হুম, ডান।আমি আম্মিকে নিয়ে আপনাদের বাসায় আসবো শীঘ্রই।ততদিন আমার মেহেবুবা আপনার দায়িত্বে।ভুল বশত গতকালের মতো সে যেনো কোনো আঘাত না পায়।নাকের দিকটায় কেটেছিল তার,আপনার ঘড়ির আঘাতে।একটু সাবধান হবেন।”
কথার পিঠে আদ্রিন হাতঘড়ি দেখে।সাথে সাথেই তন্ময়ের মেসেজ।সে এসেছে।আদ্রিন উঠে দাঁড়ায়।অরিত্রন তৃপ্তিকে ধরে উঠাতে নিলে ব্যালেন্স হারায় সে পায়ের।আদ্রিন তার বাবার কাছ হতে এক প্রকার ছিনিয়ে নেয় তৃপ্তিতে,
–“জান,ঠিক আছো?”

অস্ফুট শব্দ করে তৃপ্তি কেবল।

–“ও এমন দূর্বল কেনো?”
অরিত্রনের চোখে চিন্তা স্পষ্ট।

–“জ্বর ছিলো সারারাত।ডাক্তার দেখিয়ে নিবেন।ওকে কোনো রকম প্রেসার দিবেন না।দেখে রাখবেন।”
আদ্রিন পরপর কোলে তুলে নেয় তৃপ্তিকে।অসহায় তৃপ্তির গায়ে জোর নেই।সত্যি ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন তার। আদ্রিনের বুকে লেপ্টে রইলো সে।ফিসফিসিয়ে বললো,
–“আমাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে দিবেন না কখনো।”

হাঁটা অবস্থায় তার কপালে অধর স্পর্শ করলো আদ্রিন,
–“অপেক্ষা করবে।আমি আসবো আম্মিকে নিয়ে।সুস্থ হয়ে উঠো ততদিনে।”

অরিত্রন তাদের পিছু পিছু আসছে।ইনায়ার ছেলে ইনায়ার মতো নয়।সে ভেবেছে তার মেয়েকে আদ্রিন মায়ের কথার জেরে প্রতিশোধ নিতে ভালোবাসার নাটক করেছিল।কিন্তু,এই আদ্রিন আর তার মেয়ের প্রতি এমন ব্যাবহার দেখে সে কিঞ্চিৎ দোটানায় ভুগছে।মনে মনে করা পরিকল্পনার সাথে বড্ড হিমশিম।তার মেয়েও যে এই ছেলেটা মগ্ন তা বুঝতে দেরি হলো না।কিন্তু,বাবার মন তো।ভুলিয়ে দিচ্ছে সবটা।ইনায়ার কাছে সারাজীবনের জন্যে মেয়েকে দিবে এটা ভাবতে ভেতরটা শূন্য লাগছে তার।সিদ্ধান্ত নিলো মেয়ে যেটা বলবে সেটাই শুনবে সে।এতো বছর পরে মেয়েকে নিজের সাথে নিচ্ছে তাও মেয়ে নিজ থেকে চুপ।এর মানে মেয়েটা তার বাবাকে ভুল বুঝবে না আর!

–“আঙ্কেল,আমি বিশ্বাস করছি আপনাকে।আমার তৃপ্তিকে দেখে রাখবেন।এখন সে আপনার ফ্যামিলি।কিন্তু,তাকে আমার ফ্যামিলি মেম্বার করার স্বপ্ন দেখছি।অ্যান্ড,সেটা আমি পূরণ করবোই।উল্টোপাল্টা কিছু করতে যাবেন না।আমি আমার অন্য রূপ আপনাকে দেখাতে চাই না,বিলিভ মি।এই মেয়েতে আমার প্রাণ আটকে।”
নিজ বক্তব্য শেষ করে গাড়ির জানালা অল্প ঝুঁকে তৃপ্তির মাথায় হাত স্পর্শ করে আদ্রিন,
–“সাবধানে থেকো।”
–“আপনিও।”
মলিন হাসে আদ্রিন তৃপ্তির কথায়।

বিনা বাক্যে আদ্রিন নিজ গাড়ির দিকে এগোয়। পিছন ফিরলে হয়তো সে তৃপ্তির ছলছল দৃষ্টি দেখতে পেতো।চেয়েও মেয়েটা নিজেকে ধাতস্থ করতে পারছে না।ভয়ংকর ভাবনা মনে জেঁকে।ধীরে ধীরে দুই গাড়ি দুই গন্তব্যে ছুটলো।
.
মিটিং শেষ।রাত প্রায় বারোটা। ডিল ফাইনাল সহ যাবতীয় সব কাজ সকলকে বুঝিয়ে আদ্রিন এবং তন্ময় মাত্রই রওনা দিলো।কিছুদূর এগোতেই লুকিংগ্লাসে বড় দুইটা সফেদ রঙের গাড়ি দেখতে পায় তন্ময়।একই গতিতে তাদের পিছনে।অথচ তারা সহজেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারে।এইসব দৃশ্য তন্ময়ের নিকট পরিচিত।সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
–“স্যার,আজকে হয়তো আবারও আপনার ঝামেলায় পড়তে হবে।পেছনে গাড়ি দেখলাম।”
–“আম্মির কারসাজি।”
আদ্রিন মোবাইলে কিছু একটা দেখলো।রাফির মেসেজ। তির্যক হাসে সে। ক্ষীণ সুরে বলে,
–“গাড়ি থামাও।কথা বলি।”

গাড়ি হঠাৎ থামতেই পেছনের গাড়ি থামে।অতঃপর তিনটা গাড়ি রাস্তার ধারে।আদ্রিন নামতেই পেছনের গাড়ির লোকেরা কিঞ্চিৎ ভাবলেশহীন হয়।আদ্রিনকে শুট করার বা আঘাত করার অনুমতি নেই।কিন্তু,তাকে অপহরন করার নির্দেশনা আছে।ভরা রাস্তায় এটাও অসম্ভব।
আদ্রিনের নির্দেশে তন্ময় তাদের কাছে যায়।বেরিয়ে আসে তাদের প্রধান।

প্যান্টের পকেটে দুই হয় গুঁজে আদ্রিন।সামনের খেলাটা ব্যাপক মজাদার হতে চলেছে।প্রধান লোকটা আসতেই আদ্রিন কোটের পকেট হতে সিগারেট বের করে এবং সাথে সাথে দুই অধরের মাঝে চেপে তাতে জ্বলন্ত রূপ দেয়।প্রধান লোকটা নিজের পেছনে থাকা রিভলবার বের করতে নিলে শব্দ করে হাসে আদ্রিন।হাসির সাথে গালের ধোঁয়া তীব্রবেগে ছুটে।

তন্ময় হুট করেই সেই প্রধানের পিঠে রিভলবার ঠেকে কৌশলে।পেছনের গাড়ির কেউ দেখেইনি ব্যাপারটা তন্ময়ের অবয়বের কারণে।

–“তিনগুণ দিবো।প্ল্যান হবে আমার।”
আদ্রিন ধূমপানে মগ্ন।
–“ম্যাডামকে কি বলবো?”
–“এখন না,যেদিন কাহিনী সামনে আসে সেদিন বলবে,এই দুনিয়ায় টাকার নেশা সবচেয়ে বেশি।”

প্রধানের মাথায় সব সেট।

আদ্রিন সিগারেটের শেষ টান দেয়,
–“কিডন্যাপ মি।”(অপহরণ করো আমাকে)।
……
ঘরটায় আবছা অন্ধকার।কেবল মাথার উপর অল্প পাওয়ারের একটা বাল্ব জ্বলছে।ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বাহিরের তিমির ভাব দৃশ্যমান।আদ্রিন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে।প্রধানের সাথে আলাপ শেষ করলো খানিকক্ষণ পূর্বে।মোবাইল বেজে উঠে প্রধানের।ইশারায় বুঝায় সে,ইনায়া ফোন দিয়েছে।

–“স্পিকারে দাও।”
আদ্রিনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে প্রধান।

ইনায়া বলতে আরম্ভ করে,
–“কড়া ইনজেকশন পুশ করবে।একসপ্তাহ আমার ছেলেকে অজ্ঞান রাখার দায়িত্ব দিলাম।”
পরপর ফোন কাটে।

প্রধান বিনা বাক্যে বেরিয়ে যায় কক্ষ হতে।আদ্রিন ঘাড়ের ছাটা চুলে হাত বুলায়,
–“তৃপ্তি থেকে আমাকে আলাদা করতে এতো প্ল্যান আম্মি!কেনো ভুলে যাও আমি তোমার রক্ত।তোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর।”

মোবাইলে তৃপ্তির হাস্যোজ্বল ছবি স্পষ্ট। গতরাতের মেয়েটার মলিন মুখের প্রতিচ্ছবি ভাসতেই হাহাকার সৃষ্টি হয় মনে। জ্বরে কেমন নেতিয়ে গিয়েছিলো সে।কেমন আছে সে এখন?এই সিম বন্ধ তার।নতুন সিমের ব্যবস্থা করতে হবে। তম্ময়ও এইখানে।ব্যাপার না।আদ্রিনের সব পরিকল্পনা মাথায় সেট। এতদিনে সে বুঝে এমন চতুরতা তার মায়ের থেকেই প্রাপ্য।রহস্যময় হাসির দেখা মিলে তার অধরে।বিড়বিড় করে বলে,
–“ইনজেকশনের চেয়েও আমি তৃপ্তির নেশায় আসক্ত,আম্মি।এই আসক্তির শেষ নেই।এই নেশার সেরা ঔষধ আমার মেহেবুবা,আমার তৃপ্তি।”

চলবে…..
কপি করা বারণ।
ছবি কালেকশন: ইনস্টাগ্রাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here