অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় সে পর্ব -২৭+২৮

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -২৭
___________________
৬০.
–“কি?আগামী সপ্তাহেই বিয়ে?এতো দ্রুত কেউ বিয়ের তারিখ ফেলে?”
ভ্রু জোড়া কুঁচকে আছে আলেয়ার।তৃপ্তি তার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুঁজে।সে নিজেও ভারী অবাক।কিন্তু,কিছু করার নেই।স্বয়ং ইনায়া বিয়ের তারিখ ফেলেছে।এই মহিলার তৃপ্তির প্রতি অনীহা দেখে, বাসায়ও বিয়ের তারিখ নিয়ে কিছু বলেনি।বাকি রইলো আদ্রিন!সে খুশীতে আহ্লাদী।প্রত্যেক রাতে ফোন দিয়ে বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে,তার ভালোবাসার চাদরে তৃপ্তিকে মুড়িয়ে নেওয়ার জন্যে অপেক্ষা,সব কিছুর গল্পের প্রহর সাজিয়ে বলে।তৃপ্তি কি বা বলবে আর!এই ছেলেটা তার সবকিছু।আদ্রিনের মাথা ঠাণ্ডা আছে তাই ভালো।নাহলে পাগলের পাগলামি সহ্যের ক্ষমতা তৃপ্তির নেই।বিয়ের চিন্তা থাকলেও,তার অন্তরালে একটা স্বস্তি ভিড় করে।আদ্রিনকে সারাজীবনের জন্যে নিজের করে নেওয়ার স্বস্তি।

–“কিরে,ঘুমিয়ে পড়লি?”
আলেয়ার পুনরায় করা প্রশ্নে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে,
–“নাহ,ঘুমায়নি।”
–“বল না,এতো জলদি বিয়ে কেনো?”
–“জানিনা।আদ্রিন আর তার মা জানে।”
তৃপ্তি সোজা হয়।ক্যাম্পাসে উপস্থিত চারিদিকের মানুষের দিকে চোখ বুলায়।নতুন এডমিশনের জন্যে আজ বেজায় মানুষ।গরমটা কেমন ভ্যাপসা।ব্যাগ হতে টিস্যু বের করে গলায় চেপে ধরে।ঘামের বিন্দু বিন্দু জলের সংস্করণ চলে।
–“এইখান থেকে উঠি।চল রেস্টুরেন্টের দিকে যায়।”
আলেয়া জিদ করে একপ্রকার।

–“এখন?গরমে উঠতেই ইচ্ছে করছে না।বসে থাকি।”
তৃপ্তির কথায় আলেয়া রাগ দেখায়,
–“উঠ,আমাকে ট্রিট দিবি।বিয়ে করে বিবাহিত হওয়ার আগে আমাকে ট্রিট দে।”
আলেয়ার টানা হিচড়ায় হাসে তৃপ্তি।ব্যাগ কাঁধের বাম পাশে তুলে।উঠে পড়ে দুজন।গরমে দুইজনের গাল রাঙা।হেঁটে রাস্তা পার হয়।গাড়ির বেশ যানজট। হর্ণের শব্দে জর্জরিত এলাকা।তীব্র গরমে এমন হর্ণের শব্দ বেশ অসহ্যকর।মাথা ধরে যায় তৃপ্তির।আলেয়ার হাত ধরে রাস্তার বিপরীতে আসতেই চমকে।আদ্রিন দাঁড়িয়ে। হাতে সিগারেট।মুখের ভঙ্গি অন্যরকম।নিশ্চিত রেগে।সামনের ছেলেটাকে চিনে তৃপ্তি।আদ্রিনের সাথেই এসেছে হয়তো!জাওয়াদ নাম ছেলেটার।আদ্রিনের অফিসে কাজ করে।মাঝেমাঝে তৃপ্তির বাসায় এটাসেটা নিয়ে আসে,আদ্রিনের হুকুমে।

আলেয়া আদ্রিনকে দেখতে পেয়ে চিল্লিয়ে ডাকতে গেলে,তৃপ্তি মুখ চেপে ধরে তার,
–“উনি আসলেই বিপদ।তোর না ট্রিট লাগবে?উনি দেখতে পেলে সময় কমিয়ে দিবে।বেরুনোর জন্যে তাড়াহুড়ো করবে।তুই আর ট্রিট পাবি না শান্তি মতে।”
খাওয়ার লোভে আলেয়া চুপ করে যায়। দাঁত কেলিয়ে হাসে।অতঃপর দুইজন সাবধানে রেস্তোরায় ঢুকে পড়ে।

বেশকিছু খাবার টেবিলের রাখে।গরম থেকে এসির ভেতরে এসে তৃপ্তির যতো শান্তি। সে খাবার মুখে পুরে আলেয়ার সাথে খোশগল্পে মেতে উঠলো।অযত্নে পড়ে থাকা মুঠোফোন ব্যাগের ভেতরেই বাজতে থাকলো নিঃশব্দে।ক্লাস থেকে বেরিয়ে মেয়েটা আর ফোনের রিংটোন সচল করেনি।আলেয়া মেয়েটাও একই কাজ করে বসে আছে।
অথচ,তৃপ্তির কাকাতো ভাইয়ের অর্ধশত ফোনকল,বাড়ি থেকে ফোনকল,আদ্রিনের ফোনকল কারো ফোনই তার নজরে এলো না তৃপ্তির।নজরে এলো না আলিয়ারও।

প্রায় এক ঘন্টা পর বেরিয়ে যায় তারা।আলেয়াকে বিদায় জানিয়ে সম্মুখে হাঁটে তৃপ্তি। তখনই মনে পড়ে আদ্রিনের কথা।রোদটা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো যেনো।মাথার পীড়া একপাশে রেখে ব্যাগ হতে মোবাইল বের করে সে। স্ক্রিনে আলো জ্বললে,এতো এতো ফোনকল দেখে চিন্তার সূক্ষ্ম ঘাম বেয়ে পড়লো তার কপাল ঘেঁষে।অধর জোড়া কেঁপে উঠলো আপনা আপনি।শেষবার কল দিয়েছে আদ্রিন।মিনিট চার আগে।হলো কি?সবাই এইভাবে সমানতালে ফোন দিয়েছে কেনো?আতংকে হাতজোড়া অবশ হয়ে যায়।মোবাইলের ভারটাও যেনো অসহ্যকর।

হতদন্ত হয়ে আদ্রিনের কললিস্ট এড়িয়ে কাকাতো ভাইকে ফোন দিতেই সম্মুখে ভিড় করে এক মানব।যার লম্বা অবয়বের ছায়া তৃপ্তির মুখে সূর্যের আলো পড়তে বাঁধা দিচ্ছে।
মাথা তুলতেই আদ্রিনের এলোমেলো রূপ দেখে চমকায় তৃপ্তি।গায়ের শার্টটা কেমন ভিজে আছে ঘামে।ছেলেটার মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।রাগী আঁখিদ্বয়ে কেমন ক্ষোভ নাকি চিন্তা বুঝতে পারলো না সে।এরই মধ্যে আদ্রিনের পেছন হতে জাওয়াদ ছেলেটা দৌড়ে আসে কোথা থেকে।ঝুঁকে হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপানো অবস্থায় বলে,
–“স্যার, ম্যামকে পাচ্ছি না।সিসিটিভি দেখে এসেছি।ম্যাম অনেক আগেই বেরিয়েছে।আমাদের উচিত আশে পাশের দোকান…”

আদ্রিন তাকে থামিয়ে বলে,
–“পেয়েছি আমি।অফিসে যাও তুমি।”
হাঁটু থেকে হাত উঠে সোজা হতেই ভীত তৃপ্তিকে দেখতে পায় জাওয়াদ।অতঃপর কিছু না বলেই কেটে পড়ে।তার স্যার আজ বেজায় রেগে।

–“কোথায় ছিলে?ফোন না তুললে ফোন ব্যবহার করো কেনো?”
শান্ত কিন্তু ছুরির মতো ধারালো শোনাচ্ছে আদ্রিনের কণ্ঠ।তৃপ্তি ভয় পেলেও প্রকাশ করে না।শীতল চোখে চেয়ে রয় রাগী মানুষটার পানে।
তার কাঁধ চেপে ধরে আদ্রিন এইবার নিজের রাগ সংবরণ করলো না।নিচু স্বরে ধমকে উঠলো,
–“উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”
–“এটা রাস্তা।সিন ক্রিয়েট করবেন না।”
তৃপ্তির কাঁধ ছেড়ে আদ্রিন তার হাত চেপে বিনা বাক্যে সামনে এগুচ্ছে।অযথা তৃপ্তি প্রশ্ন করছে।আদ্রিন উত্তর দেয়নি একটাও।গাড়িতে গিয়ে বসে।তৃপ্তিও বসে নানান প্রশ্ন করে আদ্রিনকে।তবে, পূর্বের ন্যায় আবারো আদ্রিন উত্তর দিচ্ছে না দেখে তৃপ্তি মোবাইল বের করলো অর্ককে ফোন দেওয়ার উদ্দেশ্যে।সেই মুহূর্তে আদ্রিন বাম হাতে ফোন টেনে নেয়,
–“গিয়েই দেখো।তোমার কান্না কাটি আমার সহ্য হয় না।”
আরো ভয় ঢুকে যায় তৃপ্তির।সব গম্ভীর্যতা ভুলে আদ্রিনের বাহু আকড়ে ধরে,
–“কি হয়েছে বলুন না।”
–“মিস্টার অরিত্রনের এক্সিডেন্ট হয়েছে।হাসপাতালে আছেন।”
বাহু ছেড়ে দেয় সে আদ্রিনের।দুহাতে ঠোঁট চেপে ধরে।ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মুহূর্তেই।চোখে ভাসতে থাকে আজ সকালের দৃশ্য।তার বাবা জোর করে আদর মেখে পুরি আর ডাল খাইয়েছে।তখন তো বাবা ঠিক ছিলো।তাহলে?কিভাবে কি হলো?

আদ্রিন তৃপ্তির মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেয়।হাতের তালুতে অধর ছুঁয়ে বলে,
–“কাঁদে না।ভালো হয়ে যাবেন উনি।”
–“কি..কিভাবে হয়েছে?”
কান্নার রোল বাড়ে।

–“মেহেবুবা!কান্না করবে না।বললাম উনি ভালো আছে। হাতে,পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছে।”
আদ্রিন নরম সুরে বলতে চেয়েও ব্যাপারটা যেনো কঠোর শোনালো।
–“আপনি কি রেগে?”
নাক টেনে জিজ্ঞেস করে তৃপ্তি।
–“তা আর বলতে।তোমার বাবা ব্যথা পেয়ে মেয়ের বিয়ে পেছাতে তর্ক করছে।অদ্ভুত।”
–“মানে?”
তৃপ্তি গালের পানি মুছে।আদ্রিন গাড়ির এসির পাওয়ার কমায়।তৃপ্তিকে আলগোছে নিজের দিকে ধাবিত করে।ভঙ্গুর মেয়েটা নেতিয়ে যায়,মাথা রাখে আদ্রিনের কাঁধে।
আদ্রিন উত্তর দেওয়ার আগে তার ফোন বেজে উঠে।গাড়ির ডিভাইসের সাথে ফোন কানেক্ট থাকায় তৃপ্তিও ফোনের বিপরীতে থাকা মানুষটার কথা শুনতে পায়।অর্ক ফোন করেছে।তৃপ্তির ব্যাপারে খোঁজ নিলে আদ্রিন বলে,
–“তোর বোনকে পেয়েছি। রোদে রোদে দৌড়িয়েছে আমাকে, এই আরকি।”
অর্কের হাসির শব্দ শোনা যায়।দুই বন্ধু অতীতের স্মৃতি স্মরণ করে পূর্বের মতো এক হয়েছে প্রথম সাক্ষাতেই।
–“কাকার চেয়েও মেয়েটার চিন্তায় আমি অস্থির হচ্ছিলাম।কাকা খুঁজছে ওকে।নিয়ে আয়।”
অর্ক কথাটা বলতেই হাসি থামে আদ্রিনের,
–“তোর কাকা এখনো প্রলাপ করছেন?বিয়ে পেছানোর ব্যাপারে?”
–“এই অল্প সল্প আরকি।”
অর্কের চাপা কণ্ঠ।

–“ভাবছি,তোর বোনকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করবো।এছাড়া গতি নেই।”
আদ্রিন কথাটা বলতেই তৃপ্তি উঠতে চায় তার কাঁধ হতে।কিন্তু পারে না।এর পূর্বে আদ্রিন তার হাত দ্বারা আটকে নেয় তাকে।এক হাতে গাড়ি চালাতে বেশ দক্ষ আদ্রিন।
–“ভাই,এইসব করিস না।হাসপাতালে আয়।”
–“আসছি।”
আদ্রিন ফোন রাখতেই তৃপ্তি অনেক কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।গলায় কথা আটকে যাচ্ছে।ভালো লাগছে না তার কিছুই।বাবার কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

৬১.
হাসপাতালের পরিবেশ সর্বকালের মতো গুমোট।কেমন হাহাকার সবদিকে।তৃপ্তি নিষ্পলক হেঁটে যাচ্ছে।আদ্রিন তার সামনে।পাশের কিছু লোকজন লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় তৃপ্তি দৌড়ে আদ্রিনের শার্ট মুচড়ে ধরে।আহাজারি তার সহ্য হয় না মা মরার পর হতে।আদ্রিন বুঝতে পেরে তাকে সামনে হাঁটার নির্দেশনা দেয়।পেছন হতে সেও প্রেয়সীর হাতের মুঠোয় নিজের হাত গুঁজে।দুই তলায় যেতেই লিফট থামে।দূর হতে ইনায়া আসছে।চোখে সানগ্লাস।এই হাসপাতালের ভেতরেই।মহিলার ঢং আছে বেশ!
তৃপ্তি মিনমিনিয়ে বলে,
–“আন্টি এসেছেন?”
–“হুঁ।আমার জন্যে অপেক্ষা করছিলো।”
আদ্রিনের কথা শেষ,ইনায়াও ভেতরে আসলো।তৃপ্তি সালাম দিলে ইনায়া মাথা নাড়ায় কেবল।

আদ্রিন তৃপ্তির পিঠে হাত ঠেকে তাকে একপাশে নিয়ে যায়।ইনায়া এবং তৃপ্তির মাঝে সে’ই দাঁড়িয়ে পড়ে।

কেবিনের সম্মুখে সকল আত্মীয় স্বজন।সকলের সাথে সাক্ষাৎ করা অবস্থায় কান্নায় ভেঙে পড়ে তৃপ্তি।সচরাচর বাবার কিছু হোক,এটা কোনো মেয়েই চায় না।গলাটা কেমন করছে তার।চামেলী এসে তৃপ্তিকে ভেতরে নিয়ে যায়।আদ্রিন আর তার মাকেও আসার অনুরোধ করে মহিলা।সকলে ভেতরে গেলে তৃপ্তি তার বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে আলগোছে।তার বাবা হাসে মেয়ের ভালোবাসায়।এমন ভালোবাসার জন্যে কতো বছর অপেক্ষা করেছে এই লোক!আজ যেনো ব্যথা পেয়েও শান্তি পাচ্ছে সে।ব্যান্ডেজ লাগানো হাতে সে তৃপ্তির মাথায় হাত রাখে,
–“ঠিক আছি মা।”
–“কই ঠিক আছো?এইযে ব্যান্ডেজ সব!”
তৃপ্তির কান্নারত সুর।

–“প্রিয় আসছে শুনলাম,তৃপ।এইভাবে কান্না করলে সেও ভয় পাবে।বাচ্চাটার জন্যে হলেও সামলাও নিজেকে।”
আদ্রিন নিজের নির্দেশনা শেষে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ায়।তৃপ্তি নিজেকে সামলিয়ে নিলেও বাবার ব্যান্ডেজে মোড়ানো হাত পা দেখে সামলাতে পারছে না নিজেকে।তাও কান্না সংবরণ করছে সে।

ইনায়া টুকটাক কথা সারলো।বিদায়বেলায় অরিত্রন অনুরোধ করে বলে,
–“আমার মেয়েটাকে এই মাসের শেষে উঠিয়ে দিতে চাচ্ছি।আগামী সপ্তাহে না হোক…”
–“কি বলছেন এইসব?আমার ছেলে আপনাদের জন্যে সব করেছে।আর আপনি!”
ইনায়া তার অন্য ক্ষোভটা যেনো প্রকাশ করলো।আদ্রিন হাত মুঠ করে নেয়।তৃপ্তি নিশ্চুপ বসে।মেয়েটার কি কিছু বলার নেই?আদ্রিন তার মাকে থামতে বলে,
–“আমার মিটিং আছে আম্মি।চলো যাই।আসছি আমরা।”
তার কথায় জেদ স্পষ্ট।

অরিত্রন চেয়ে রয় কেবল।কি করবে সে?অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটার বিয়ের দায়িত্ত্ব পালনে যে হেরফের হবে তা সুনিশ্চিত।মেয়েটার মুখটা মলিন। সে কি ঠিক করেনি কথাটা বলে?

আদ্রিন তার মাকে নিয়ে বেরুচ্ছে।চামেলী তৃপ্তিকে আদ্রিনদের বিদায় জানাতে আহ্বান জানায়।তৃপ্তি উঠে।আদ্রিন,ইনায়া দ্রুত হাঁটছে।তৃপ্তি বেশ চিল্লিয়ে বলে,
–“রাতে আসবেন?”
তৃপ্তি একটু দূরে।ইনায়া,আদ্রিন পেছন ফিরে।তৃপ্তিকে দেখতে পেয়ে আদ্রিন এগিয়ে আসে।দূরে দাঁড়ানো ইনায়া।

–“এসে কি হবে?তোমার বাবা বিয়ে দিবে আগামী সপ্তাহে?দিলে আসবো।”
আদ্রিনের কথায় ভীত চোখে চায় তৃপ্তি,
–“এমন করছেন কেনো।বাবার কষ্ট হচ্ছে তাই বলেছে এমন।”
–“আমার কষ্ট হয় না?কেবল উপরের ব্যথায় সব?মনের ব্যথা নেই?”
মানবটা বেজায় অভিমান করেছে।রাগী হলেও বেশ আদুরে দেখাচ্ছে এই মানবকে।হাসি এলো অধরে।কিন্তু,হাসলো না তৃপ্তি।হাসলে নিশ্চয় এই ছেলের আর দেখা পাওয়া যাবে না।

তৃপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিন কিঞ্চিৎ ঝুঁকে তার কপালে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা মারে,
–“তোমার বাবা বারবার আমার সাথে বেইমানি করছে।কিছু করছি না তাই?কিছু করলে সহ্য হবে তার মেয়ের?”
–“এমন রাগছেন কেনো?বাবা সত্যিই কষ্টে আছে।”

মুখভঙ্গি পরিবর্তন হয় আদ্রিনের।মনে মনে অন্য সিদ্ধান্ত নিলেও প্রকাশ করলো না।অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা মেয়েটাকে আরো শায়েস্তা করতে তার গালে বৃদ্ধাঙ্গুল বুলিয়ে প্রশ্ন করে,
–“হ্যাঁ,সবার কষ্ট;কষ্ট।আর আমার কষ্ট কিছুই না?তোমার বাবা তোমার জন্যে কষ্ট পাচ্ছে স্নেহের।আর আমি কষ্ট পাচ্ছি আমার জানকে আমার সাথে মিশিয়ে নেওয়ার অভাবে।তোমার বাবার অন্তর আছে।আমার নেই?আমার কষ্ট লাগে না?”
#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -২৮
_________________
৬২.
–“মন খারাপ করছিস কেনো?আদ্রিন হয়তো রেগে আছে।যোগাযোগ করবে ঠিকই।তোর বাবা ঘুমানোর আগে বলেছে,তোকে খেয়ে নিতে।অথচ তুই মেয়ে না খেয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছিস।”
চামেলী পরপর কথাগুলো বললো।তৃপ্তি মেয়েটা কেবিনের সম্মুখে রাখা পেশেন্টের ওয়েটিং চেয়ারে বসে আছে চুপচাপ।মুখ গম্ভীর।আদ্রিন চলে যাওয়ার পূর্বে তার ঘাড়ে নখের আঁচড় দিতে ভুলেনি ভুলবশত।ছেলেটা এক প্রকার হিংস্র হলেও খুব কষ্টে রাগ সংবরণ করেছে তখন,এটা তৃপ্তির অজানা নয়।তৃপ্তির বাবা অসুস্থ বা এটা যদি হাসপাতাল না হতো,নিশ্চয় ছেলেটা তাণ্ডব চালাতে ভুলতো না। ঘাড়ে চিনচিন জ্বলছে।ছেলে মানুষের নখ লম্বা না হলেও ধার।
একে তো বাবার সম্মুখীন হতে পারছে না সে,তার বাবার ব্যান্ডেজের কারণে।আহত বাবাকে সাদা ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে মনে শায় দিচ্ছে না বিন্দুমাত্র।বিয়ে দেরীতে হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বাবা নিজেও ভেতরে পুড়ছে,এটা তৃপ্তি জানে। শেষ বাবার সাথে সাক্ষাৎ করেছে ঘণ্টা খানেক হলো।এরপর থেকেই বাহিরে বসে সে।চামেলীর কথায় ঘাড় তুলে তাকায় মেয়েটা,
–“আদ্রিনের কথা তুলবে না,লাভি।ছেলেটার রাগের আর জিদের আভাস পেয়ে বাবা কেমন ভেতরে ভেতরে খুঁড়ে যাচ্ছে,দেখেছো!বিয়ে এক সপ্তাহ পর হোক বা একমাস পর,বিয়ে তার সাথেই হবে।কিন্তু,নাহ। হঠাৎ করেই ধৈর্য্যের কমতি দেখা দিচ্ছে তার মাঝে।এই আদ্রিন ধৈর্য নিয়েই আমার পিছে পিছে ছিলো শুধু আমার ভালোবাসা পেতে।আর এখন?”

তৃপ্তির মায়াময়ী অভিমানে হাসে চামেলী।রাগলে,
অভিমান করলে মেয়েটার নাকটা কেমন আকর্ষণীয় লাগে। চীন দেশীয় নারীর ন্যায় চেহারার গঠনে ভ্রু জোড়া দ্বারা যখন অভিমান করে সামনের মানুষটা রাগ ভাঙ্গাতে না পারলেও প্রেমে পড়বে নিশ্চিত!চামেলী তৃপ্তির থুতনিতে হাত রাখে,
–“এতো অভিমান করলে,ছেলেটা এইভাবেও পাগল হবে।তুই যে তার কাছে বড্ড দামী,তাই ছেলেটা দেরী করতে চায় না।আমি এমন মেয়ের প্রেমিক হলে এক মিনিট নষ্ট করতাম না।উঠিয়ে বিয়ে করে নিতাম।তুই বলছিস আদ্রিনের ধৈর্যের কমতি আছে?আমি বলবো,ছেলেটার প্রচুর ধৈর্য।নাহলে সে অঘটন ঘটাতে দু’মিনিট অপেক্ষা করতো না।”

হকচকিয়ে যায় তৃপ্তি।চামেলীর মুখে দুষ্টু হাসি।হেসে দেয় তৃপ্তিও।মুখে হাত চেপে বলে,
–“তুমিও না?আজকাল বেশি বাজে বকছো।”
–“যাক,হাসি ফুটেছে তবে।”
চামেলী মাথায় হাত বুলায় তৃপ্তির মাথায়।পরবর্তী বাক্য আওড়ানোর পূর্বে রূপম বের হয় কেবিন হতে,
–“প্রিয় তোমাকে ডাকছে,লাভি।আমি বাসায় যাচ্ছি।কোনো সমস্যা হলে ফোন করবে।”
চামেলী দ্রুত ভেতরে যায়।তৃপ্তি অনড়।তার সম্মুখে এসে রূপম তাড়া দেয় যেনো,
–“চল।”
–“কই যাবো?”
তৃপ্তির মুখে অবাকের ছাপ।

–“বাড়িতে।আদ্রিন ভাইয়া বলেছে তোকে নিয়ে বাড়ি যেতে।তোর নাকি সারাক্ষণ প্রেসার লো থাকে।”
বেশ রসাত্মক শোনালো রুপমের কথা।যেনো তৃপ্তি প্রেসারের রোগী!যেমন বদ আদ্রিন,তেমন বদ তার নিজের ভাই।বেশি টেনশন বা অতিরিক্ত চাপ আর মাঝে মাঝে খাবার না খেলেই তার প্রেসারের সমস্যা দেখা দেয়।তাই বলে সেই দুইজন এমন রসিকতা করবে!তেজ বাড়ে তৃপ্তির,
–“তুমি যাও।আমি যাবো না কোথাও।আমি ঠিকাছি এইখানে।তোমার আদ্রিন ভাইয়ার এতো দরদ হলে আমার ফোন রিসিভ করতো।যত্তসব।”
–“ওকেই,বসে থাক।আমি যায়। আদ্রিন ভাই আসুক আর তোর একটা ব্যাবস্থা করুক।যত্তসব।”

রুপম তৃপ্তির চুল টেনে হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে।

তৃপ্তিও চুপ থাকেনি। ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দেয়,
–“তোর আদ্রিন ভাইয়ের বয়ে গিয়েছে এইখানে আসবে উনি।সবগুলোর এতো দেমাগ!”

রুপম শুনেও ফিরেনি।কেবল মোবাইলে সংবাদটা পাঠিয়ে দিলো আদ্রিনকে। সে নিজেও জানতো তৃপ্তি যাবে না হাসপাতাল থেকে কোথাও,তাও বাবাকে এইখানে ফেলে!রূপম জানে,তৃপ্তির নিকট নিজের পরিবার মানে অনেক বড় কিছু।আগে কতো সুন্দর ছিল তাদের পরিবার!মা ছিলো তখন।ছেলে মানুষ সে, তাই নিজের দূর্বলতা কখনো দেখায়নি।অথচ মা মারা যাওয়ার পর নেশার মাঝেই নিজেকে ডুবে রেখেছিল।বোনের দায়িত্ব,ভাইয়ের দায়িত্ব কিছুই বুঝতো না। রাত হলে মাকে মনে পড়তো।সবটা কেমন এলোমেলো।সবচেয়ে বেশি কাঁদতো তৃপ্তি।মাকে বেশি ভালোবাসতো সেই।বোনের এমন আহাজারি কেমন দম বন্ধ লাগতো রুপমের।তাই তো রাতের বেলা নেশাকেই আপন করছিলো। সবশেষে হুঁশ আসে সেদিন,যেদিন বোনের কষ্ট,বাবার সাথে বোনের অমিলের বেদনায় বোনের আঘাত পাওয়া মনটা বিষে ভরে যাওয়া,বোনের অস্থিরতা সবকিছু উপলব্ধি করেছিল।নিজে ভাই হিসেবে কতোটা নিষ্ঠুর ছিলো!অথচ বোন কোনোদিন আক্ষেপ করেনি।নেশাগ্রস্ত ভাইকে দূরে সরায়নি। সময়ের সাথে রুপম বাস্তবতা বুঝে।একপর্যায়ে ছেড়ে দেয় নেশা।বেশ দেরী হয়নি এই কাজ ছেড়েছে সে।এখন সে খুশি।পরিবারে মা না থাকলেও,বাকিরা আছে।পরিপূর্ণ লাগে নিজেকে।নেশার ঝাঁজ লাগলে পরিবারের সবার মাঝে সঁপে দেয় নিজেকে।আড্ডায়,মাতামাতি,বোনদের খুনসুটির সাথে সেই আবদার কই যেনো উবে যায়।সন্তুষ্ট রূপম।পরিবার জিনিসটা খুব বড় জিনিস। যার নেই সে বুঝে না।
রূপম উঠে পড়ে নিজের গাড়িতে। তখনই মেসেজের সুর।মোবাইলে আলো জ্বলে।আদ্রিনের বার্তা।গোটা অক্ষরে লেখা,
–“তোমার বোনকে ভালোবাসি বলে কড়া কথা শোনাতে পারি না।”
রুপম মুচকি হাসে।সে জানে,এই লোকটা তার বোনের জন্যে পারফেক্ট।সবদিকেই যেনো ষোলো আনা পরিপূর্ণ এই আদ্রিন নামের মানব।

৬৩.
রাত বারোটা কি পৌনে একটা।তৃপ্তি হাতের স্যান্ডুইচে কামড় দেয়।দৃষ্টি স্থির হাসপাতালের বাগানের দিকে।যেখানে সোনালী আলোয় লাল গোলাপের সমারোহ দৃশ্যমান। ঘাড়ের চিকন নখের ক্ষত ঢাকতে এতক্ষণ চুল বিলিয়ে রেখেছিল পিঠের উপর।কিন্তু,এখন অসহ্য লাগছে সবটা।তাই হাতের অল্প চুলে আটকে থাকা ক্লিপ নিয়ে সম্পূর্ণ চুল উঁচু করে বাঁধে সে।মলিন পবন সেই ক্ষতে লাগলে বেশ আরামবোধ করে মেয়েটা।আবেশে চোখ বুঁজে আসে।আদ্রিন নামক ছেলেটা লাপাত্তা।ফোন ধরছে না।এখন আবার বন্ধ শোনাচ্ছে।স্যান্ডউইচের শেষ অংশে কামড় এমন ভাবে দিলো যেনো আদ্রিনের আস্ত ঘাড় তা। রাগে তার মুখশ্রী কেমন রক্তিম!সাথে বিন্দু অশ্রু চিকচিক করছে নেত্রয়।কিছু মানুষের অতিরিক্ত রাগ অশ্রু হিসেবে গড়ায়।তৃপ্তি তার কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম হলেও,মাঝে মাঝে তার চরিত্র সেই কায়দায় পড়ে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তৃপ্তি। সব ম্যানেজ করেছে সে বাবার সাথে, বাবা গভীর ঘুম যাওয়ার আগে কথা বলেছে। আদ্রিনকে খুশির সংবাদটা দিতেই পারছে না কোনো ভাবে সে।
সব ঠিক করার কায়দা জানে,তৃপ্তি। কেবল সময়ের দরকার হয়।তবে,আজ লোকটা বেহুদা রাগ করে বসে আছে।অভিমান হয় তৃপ্তির।বড্ড অভিমান।

সকল মানুষ যার যার কেবিনে ঘুম হয়তো। কেউ নেই এইদিকে।বাবার কেবিনে থাকা একজন সাথীর জন্যে সিটে চামেলীকে ঘুমাতে বলেছে।মহিলাটা সারাদিন কতো খাটুনি করেছে।সেই প্রথম থেকেই।
অর্ক এসেছিলো। প্রিয়কে‌ তার সাথে নিয়ে গেল বাড়িতে।

নিস্তব্দতার মাঝে মাঝে কিছু যানের হালকা শব্দ শোনা যাচ্ছে।হাসপাতাল, তাই হয়তো এমন নিয়ম মানছে সবাই।না হলে,সড়কে কে মানে এইসব নিয়ম?যে যার জোর অনুযায়ী হর্ণের প্রতিযোগিতা করে!রেলিং এ হাত রেখে নিচে তাকালেই পেছন থেকে ভারী পরিচিত স্বর ভেসে আসে,
–“এমন করছো কেনো?পড়ে যাবা!দেখি,সোজা হয়ে দাঁড়াও।”
তৃপ্তির কাজ সারতে হয়নি।আদ্রিন এসেই তার বাহু আঁকড়ে ধরে।তৃপ্তি সোজা হয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু,মুখ ফেরালো না।আদ্রিনের কঠোর দৃষ্টি তৃপ্তির ঘাড়ে আবদ্ধ হয়।লাল চিকন লম্বা নিশান।আঁখি জোড়া মুহূর্তেই অন্য রঙ ধারণ করে।তৃপ্তিকে তার দিকে ফেরায়।তৃপ্তির নজর জমিনে।

–“ঘাড়ে কি হয়েছে?”

নিশ্চুপ তৃপ্তি মুখ বাঁকায়।আদ্রিনের উপর তার ভীষন রাগ জমে।এতক্ষণ ফোন না ধরে এইখানে কেনো এসেছে! রঙ করতে?নাকি আবারও বিয়ে নিয়ে কটু কথা শোনাতে!

চুপ থাকায়,তৃপ্তির গালে দু’হাত স্পর্শ করে,
–“বলো,মেহেবুবা কি হয়েছে?কে করেছে?”
–“যে করেছে তার নাম বললে কি করবেন? মারবেন তাকে?”
তৃপ্তির কথায় আদ্রিনের ভেতরকার ক্রোধ যেনো জ্বলে উঠে আপনাআপনি।আঁখি বুজে আবারও নেত্র জোড়া খুলে সে।কেমন রাগ সেথায়,আগুনের মতো ঝলসে দিবে যেনো!
তৃপ্তির গালে শক্তহাতে আলিঙ্গন করে বলে,
–“নাম বলো।বেঁচে থাকবে না নিশ্চিত।”

সাথে সাথেই তৃপ্তি হাত রাখে আদ্রিনের অধরে,
–“এতো বেশি কথা বলেন আপনি!”
–“বলো না,জান।আমার ধৈর্য্যের বাদ ভাঙছে।”
কেমন নেশাক্ত,কিন্তু মধুর শোনাচ্ছে আদ্রিনের কণ্ঠ।লোকটা সরাসরি অফিস থেকেই এসেছে।খেয়েছে কি কিছু!

–“আপনি করেছেন।তখন।রেগে গেলে একটু সামলে নিবেন নিজেকে।আপনি ডিনার করেছেন?”
শেষ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আদ্রিন বলে,
–“আমি করেছি? দেখি।”
তৃপ্তিকে ঘুরিয়ে ঘাড় দেখে।বিচলিত হয়ে পড়ে সে মুহূর্তেই।কি করবে না কি করবে যেনো আয়ত্তে আসলো না।ঠিক তখনই একটা অচেনা কাজ করে বসলো।নিজের অধর ছুঁয়ে দিলো লাল চিকন ক্ষতে।পরপর কয়েকবার স্পর্শ করলে তৃপ্তির সত্তা ঠেকে তার বুকের সাথে।হাত জোড়া তার পৌঁছে যায় মেহেবুবার উদরে। কম্পিত তৃপ্তি তার হাত খামচে করুণ সুরে বলে,
–“হসপিটাল এটা।”
শান্ত হয় আদ্রিন। হুঁশে ফিরে।চারিদিকে তাকায়।মানুষজন নেই। ক্ষতের উপর এখন অন্য দাগ দেখা যাচ্ছে। ব্যথা কমাতে পেরেছে কি সে আদৌ?

তৃপ্তি সামনে ফিরতেই নিজের ঘাড়ের ছোট চুলে হাত বোলায়।হুট করে ক্লিপ খুলে দেয়,
–“খোলা চুলে বেশি সুন্দর লাগে তোমাকে। পরে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিও।”
তার সন্দিহান নজর তৃপ্তি বুঝে।হাত পৌঁছে যায় সেথায়,
–“আপনি… আপনি একদম বাজে।”

আদ্রিন হাসে।খানিক পূর্বের ক্রোধে ভরপুর ছেলেটা যেনো এই আদ্রিন নয়।তৃপ্তি সায় দেয় আদ্রিনের হাসির সমেত।
পরপর সে আবারও জিজ্ঞাসা করে,
–“ডিনার করেছেন?”
–“হ্যাঁ।আম্মির সাথে ফিরেছিলাম।একসাথে খেয়েছি রেস্টুরেন্টে।”
আদ্রিন রেলিঙে ঠেস দিয়ে জবাব দেয়।
–“আন্টি এসেছে!”
আদ্রিন উপর নিচ মাথা দোলায়।

–“চলুন তবে।”
তৃপ্তি হাঁটছে।তার পাশে আদ্রিন।সে তৃপ্তিকে পুনরায় শুধায়,
–“বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও।প্রেসারের প্রব্লেম করবে আবারও।”

–“শুনুন,আমি বাবাকে রাজি করিয়েছি আগামী সপ্তাহে বিয়ের জন্য।এখন আমার মন মত কাজ করতে দিন।”
তৃপ্তির উত্তর একেবারে অপ্রত্যাশিত।
আত্মখুশিতে সে জড়িয়ে ধরতে নিলে,তৃপ্তি সরে যায়।ইশারায় দেখায়,নার্স একজন তাদের দিকেই আসছে।

তৃপ্তি দাঁড়ায় না।লজ্জায় এক প্রকার দৌড় দেয়।
আদ্রিন লজ্জা পায়নি,বিরক্ত হয়েছে।নার্সের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কিয়ৎপল।এই মহিলার জন্যে এমন সুখের সময় বৃথা গেলো তার!

কেবিনে আসে দুজন।অরিত্রন ঘুমিয়ে।চামেলী আর ইনায়া কথা বলছে।
আদ্রিন তৃপ্তিকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে পড়লো মাকে নিয়ে।ইনায়ার গম্ভীর মুখশ্রী দেখে আদ্রিন বলে,
–“সামনের সপ্তাহে বিয়ে ফাইনাল।”
–“মেয়েটা পারেও বটে।আমার ছেলের জন্যে সে সবকিছু,আবার তার বাবার জন্যেও।চালু বেশ মেয়েটা।তার বাবাকে নাকি বলেছে,তোমার সুখটাই নাকি ওর জন্যে মুখ্য।বিয়ে সাদামাটা হলেও বাবাকে কোনো কাজ করতে দিবে না বলে ওয়াদা করিয়েছে।অতটুকু মেয়ে,কেমন পটু সব কাজে!”

আদ্রিন আনন্দে যেনো সাত আসমানে উঠেছে।স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে বেশ গর্ব নিয়ে সে তার মাকে জবাব দেয়,
–“এইবার বুঝেছো,তোমার ছেলে কেনো মেয়েটার জন্যে পসেসিভ! এই মেয়েটাকে ছাড়া তোমার ছেলের চলবে না, আম্মি।কখনোই না।হাজারো অতৃপ্তির মাঝে এই মেয়েটাই আমার একমাত্র শান্তি,আমার তৃপ্তি সে।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here