#অনাকাঙ্ক্ষিত_সেই_বৃষ্টি
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃ Mishmi_muntaha_moon
১ সপ্তাহ হতে চলল।বিয়ের প্রস্তুতি খুব ভালোই চলছে।কিন্তু তার মাঝে আমার একবারও রুদ্ধ স্যারের সাথে কথা হয় নি।
নিজের বিয়ের খুশিতে এইসব মাথায় এলো না ততোটা।কালকে বিয়ের শপিং করতে গিয়েছিলাম।নিজের পছন্দে খুব সুন্দর একটা শাড়ি নিয়েছি৷ লাল রঙের।
আরও অনেক কিছু কেনাকেটা হলো বিয়ের উপলক্ষে।
***
বিয়ের আর ৬ দিন বাকি।আজ মহাশয় রুদ্ধ স্যারের কল দেখে ঘাবড়ে গেলাম।আশা করি নি বলেই হয়তো এই ঘাবড়ানো।
৩ বার কল করেছে দেখে মাথায় মৃদু রেখা পড়লো। ৪ বারের সময় আমি রিসিভ করেই সালাম দিলাম আমি।উনি সালামের উত্তর নিয়ে অনেকটা গুছিয়ে বলল
-“ভালো আছেন মিস, ফিয়ানা”
উনার মুখে এই মিস ফিয়ানা শব্দ টা আমার অধিক প্রিয় একটা শব্দ।শুনলেই ভালো লাগা কাজ করে।
আমার উত্তর না পেয়ে উনি আবারও শান্ত স্বরে বলে উঠলো
-“মিস, ফিয়ানা শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?”
উনার কথা শুনে তারাহুরো করে বললাম
-“জ্বী জ্বী শুনতে পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি ভালো আছেন?
-“জ্বী ভালো আছি।আপনি যদি ফ্রি থাকেন তাহলে কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।
দেখা করতে চাইছে আমার সাথে ভেবেই শিহরণ দিলো শরীর জুরে।সাত পাচ না ভেবে সাথে সাথেই বললাম
-“জ্বী।
-“তাহলে আজ বিকেলে কলেজের পাশের পার্কটাতে অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।সময় করে আসবেন প্লিজ।
-“ঠিক আছে আমি অবশ্যই আসবো।
আমার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌছাতেই কল কেটে দিলেন উনি।
আর আমি অস্থির হয়ে পরলাম নিজেকে আয়নায় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখায়।লজ্জার বিষয় এইটা আমার জন্য খুবই এমন বাচ্চাপনা আগে কখনো করি নি হয়তো এইজন্য।
**
বিকেল হতেই পরিপাটি হয়ে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি তে নিজেকে মুড়িয়ে রওনা দিলাম উদ্দেশ্য কলেজের কাছের সেই পার্ক।
আমাদের বাড়ি থেকে কলজেটা বেশি দূর না হলেও ততোটা সামনেও না।প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা রিকশা করে।
পার্কে পৌছে ভিতরে ঢুকার আগে আরেকটা বারের মতো নিজের শাড়ি এবং চুল ঠিক করে নিলাম।
পার্কে পা রাখতেই কর্নারের সেই বেঞ্চিটাতে উনাকে বসে থাকতে দেখলাম।
আকস্মিকভাবে উনার পাঞ্জাবির রঙ টা আমার শাড়ির সাথে মেচিং হয়েছে দেখে মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে পা বাড়ালাম উনার দিকে।
উনার সামনে গিয়ে দাড়াতেই উনি বাকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
-“মিস ফিয়ানা।এসেছেন আপনি, প্লিজ সিট।
উনার কথায় উনার থেকে কিছুটা চেপে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসলাম।
অসস্তি ঠেলে আমি আগে কিছু বলতে পারলাম না।আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে উনি বললেন
-“দেখুন মিস, ফিয়ানা আমি আপনাকে আমার দিক থেকে সবকিছু ক্লিয়ারলি বলতে চাই আর এইজন্যই আপনাকে ডাকা।
উনার কথা শুনে মুচকি হাসলাম।পরিবর্তে বললাম
-“যাক ভালোই হলো। আমিও আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। আপনি আগে বলুন কি বলবেন।
উনি কিছুক্ষণ থেমে আমার দিকে ফিরে অনুরোধের স্বরে বলল
-“দেখুন মিস ফিয়ানা।আমি নিজের অনুভুতি আপনার কাছে ক্লিয়ার করতে চাই। জানি না আপনার শুনতে কেমন লাগবে কিন্তু এইটা জরুরি।
উনার কিথা বলার ধরন শুনে আমার কল্পনার সুতো ছিড়লো।বিষয় টা যেমন ভেবেছিলাম তেমন না বুঝতে পারলাম।সাথে সাথেই অস্থিরতা বারলো।
উনি আমার উত্তর না পেয়ে আবারও বলল
-“আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছে তা আমি আপনায় বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চিত। কিন্তু তার পরিবর্তে কিন্তু আপনি কিচ্ছুটি বলেন নি।
আমি নিজের ঠোঁট টা ভিজিয়ে বললাম
-“জ্বী বলেছিলেন।আর আমিও ভেবেছিলাম ও এই বিষয়ে। আর আহসান আংকেল যেহেতু আপনার আমার সাথে বিয়ের কথা বলেছেন তাহলে নিশ্চিত আপনার প্রথম স্ত্রীর সাথে আপনার বিচ্ছেদের সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই নেই।
আমার কথার পরিবর্তে উনি বিদ্যুৎ এর বেগে বললেন
-“আমার প্রথম স্ত্রীর মাঝেই এখনো আমি।আর আমাদের বিচ্ছেদ হয় নি ও এখনো আমার স্মৃতি পাতার বাইরেও আমার জীবনের পুরো অংশ।
উনার কথা শুনে চমকালাম।কি বলতে চাইছে কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে প্রশ্ন করলাম
-“মানে?
-“সে মারা গেছে ২ বছর হলো।
উনার কিথা শুনে বাকরুদ্ধ হলাম।উনি আমার কথার অপেক্ষা না করে আবারও বলল
-“কিন্তু আমি এখনো ওর মাঝেই আছি।আর আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাই না।বাবার কাছে বলার পরেও উনি আমার কথার গুরুত্ব বুঝতে পারে নি।আপনাকে তাই বলে আমি আমার প্রথম বিয়ের কথা বলেছিলাম ভেবেছি আপনি বিয়ে করতে চাইবেন না।কিন্তু কথা এই পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার পরেও বিয়ে টা না থামায় আপনাকে খুলে বললাম।আই হোপ আপনি বুঝবেন।প্লিজ আপনি আপনার ফেমিলিকে বলবেন বিয়েটা স্থগিত করার জন্য। কারন আমি আপনার একদমই যোগ্য না।ইউ ডিসার্ব বেটার ওয়ান দেন মি।
কথা শেষ করে উনি বসা থেকে উঠে দারালো।আমার মাথায় আলগা হাতে বুলিয়ে আশ্বস্ত কন্ঠে বলল
-“সামলে নিবেন সব প্লিজ অনুরোধ আমার।
চলে গেলো একবুক আবেগের অনুভূতি সাথে নিয়ে এবং একবুক বিষন্নতা ঢেলে দিয়ে।
অনেক টা সময় পাড় হওয়ার পরও আমি বসে রইলাম।
উনার সাথে বিয়ে করার কথা আমার মাথায় আসে নি কখনো।
উনার সাথে তাই আমার বিয়ের স্বপ্ন টা ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত।
কিন্তু পর মুহুর্তেই নিজের মনের অজান্তেই মেনে নিয়েছিলাম।ভাবতে লেগেছিলাম হয়তো আমার চাওয়া পূরণ হওয়ারই ছিলো।
কিন্তু তারপর আবার কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড় তুমুল বেগে হানা দিলো আমার স্বপ্ন ভাংচুর করে দিতে।
চোখ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু ঝড়ে পড়লো নিজের বোকা সব স্বপ্ন গুলো ভেবে। বেঞ্চিতে রাখা ব্যাগ কাধে তুলে হাটা ধরলাম পার্কের বাইরের উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে পৌছে রুমে না গিয়ে সোজা মায়ের রুমে গেলাম।রুমে যেতেই আম্মুকে চোখে পড়লো বিছানাতে বসা অবস্থায়।কিছু না বলে আম্মুর কোলে মাথা রাখলাম।কিছু না ভেবেই আম্মুর উদ্দেশ্যে কম্পিত কন্ঠে বললাম
-“মা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।কোনো বিবাহিত পুরুষ কে চাই না আমি আমার জীবনে।দয়া করে এই বিয়েটা ভেঙে দাও মা তোমার কাছে আমার অনুরোধ।
তীব্র শীতের মাঝেও কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যায় ঝরে পড়লো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।আমার জীবনের মত আবেগের বৃষ্টি।অনাকাঙ্ক্ষিত সেই মানুষ টিকে পাওয়ার আশা করেও আবার কুয়াশার মত মিলিয়ে গেলো সেই আশা।
আম্মু অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলবে বলবে ভাব।তার আগেই আমি উঠে রুমে চলে গেলাম।
নিজের সাথে কিছু সময় কাটানো দরকার।
ডায়েরি ভাজে আজ লিখবো সব আবেগ সব চাওয়া ।লিখবো অনাকাঙ্ক্ষিত সেই বৃষ্টিতে কি পাওয়ার কথা ছিলো না, কি পাওয়ার আশা ছিলো,সব!
সমাপ্ত,,,
(