অনাকাঙ্ক্ষিত সেই বৃষ্টি পর্ব -০২

#অনাকাঙ্ক্ষিত_সেই_বৃষ্টি
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃMishmi_muntaha_moon

উনার কথা বোধগম্য হতেই বুক ধক করে উঠলো। খানিকটা চোখে পড়ার মতই কেপে উঠলো ঠোট দুটো।
অবাক চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি একই দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে।
উনার কথার পরিবর্তে কি বলবো খুজে পেলাম না।
কিছুক্ষন সময় পাড় হতেই উনি সামনে থেকে দৃষ্টি ফেরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও বললেন-

-“বিয়ে কোনো সহজ কথা না।প্রত্যেকের জন্যই এইটা খুবই কল্পনাপ্রবণ। তাই জেনে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনার কর্তব্য এবং সব বিষয় আপনার সামনে তুলে ধরা আমার কর্তব্য।

বলেই উনি চলে গেলেন।কিন্তু আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশে অবিশ্বাস্যভাবে দৌড়ে চলেছে উনার বলা কথা।উনি বিবাহিত এইটা কখনই ভাবি নি আর আমার ফেমিলিরাও জানে কি না সেই ব্যাপারে সন্দিহান।

আর উনার বাবা যেহেতু উনার বিয়ের কথাবার্তা চালাচ্ছে তাহলে নিশ্চিত যে বিবাহ এখন আর বিবাহের সম্পর্কে আবদ্ধ নয় বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

ভাবনার মাঝেই নিচে চোখ যেতে আহসান আংকেল আর রুদ্ধ স্যার কে চোখে পড়লো।আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে নিজেদের গাড়িতে উঠে বিস্তৃত রাস্তার মাঝে আড়াল হয়ে গেলো।
আব্বু বাড়িতে নেই দুইদিন হলো।কাজের ব্যস্ততায় বনানিতে যেতে হয়েছে। কালকে ফিরবেন।

>>>

আব্বু ফিরতেই আলোচনা বসলো আম্মুর রুমে।আমিও গিয়ে অসস্তিসূচক ভাব ঠেলে রেখে উনাদের কথায় মনোযোগ দিলাম।

একটা মাত্র মেয়ে আমি উনাদের এই সুবাদে বেশ জাকজমক পূর্ণ ভাবেই বিয়েটা অনুষ্ঠিত হবে বলে উনাদের সিধান্ত।
আব্বু আজকে আহসান আংকেলের সাথে কথা বলবে বিয়ের তারিখ ঠিক করার জন্য। তার মাঝেই কোনো এক সময় আংটি পড়াবে বলেও ঠিক করলেন।

উনাদের সম্পূর্ণ পরিষ্কার পরিকল্পনা। আমার ছোট ভাই ফায়াজ সুন্দরভাবে এসে আমার পাশে এসে বসে মুচকি হাসলো।ছেলেটা খুবই সহজ সরল এবং লাজুক। আমার বিয়ে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা তার।

-“আপু তোমার জামাইর নাম কি?”

ওর কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালাম।বিয়ে হলো না এখনই আমার বানিয়ে ফেললো রুদ্ধ স্যারকে।
কিন্তু শুনতে ততোটাও খারাপ লাগলো লাগলো না আমার কাছে।

-“রুদ্ধ আহমেদ”

আমার কথা শুনে ভ্রু নাচিয়ে কিছুটা টেনে বলল

-“ওওও”

আমিও কিছুক্ষন বসে থেকে রুমে চলে গেলাম।

রুদ্ধ স্যারের বিয়ের কথা শুনে আমি চমকালেও বিয়ে না করার মতো কোনোরকম মনোভাব মনে আসে নি।উনি আমাকে সত্যি টা বলেছে ভেবে ভীষণ রকম খুশিও হয়েছি বটে।

বিয়ে নিয়ে সব মেয়েদেরই নিজেস্ব স্বপ্ন থাকে ।বিয়ের
ভাবনার মাঝেই ফায়েজ এসে আমাকে জানালো কালকেই আহসান আংকেল এসে আমাকে আংটি পড়িয়ে যাবে।বলেই হুরহুর করে রুম থেকে চলে গেলো।

আমার জীবনে যেই পথ আমার কল্পনায় আসেনি কখনো, তা স্বীকার করতে আমি বেশি সময় নিলাম না।সবার চাওয়াই একদিন পূর্ন হয় আমারও হতে যাচ্ছে সেই আনন্দ হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি এবং করতে চাইছি।
উনার আরেকটা বিয়ে হয়েছিলো কথাটা আমার জন্য খুব বিস্ময়কর হলেও কোনো রকম নেগেটিভ ইফেক্ট আসে নি আমার মনে।
হয়তো আমি আসতে দিচ্ছি না।

>>>>>

আহসান আংকেল আর রুদ্ধ স্যারের ফুফু দুজন এসে আমাকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে বিকেল দিকে।সাথে একটা সুন্দর শাড়ি দিলো গায়ে হলুদের জন্য। বিয়ের তারিখ দেওয়া হয়েছে নভেম্বর গিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে।প্রায় ২ সপ্তাহ পর।

কিন্তু যেই শাড়িটা দেওয়া হয়েছে সেইটা রুদ্ধ স্যারের আম্মুর।

।।

আমাকে আর্ট টিচার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিলো কলেজে।
সবার একটা কিছুতে টেলেন্ট থাকে আমার হয়তো সেইটা আর্টের দিক থেকে। তাই বলে আমার কোয়ালিফিকেশন টা নজরে না দিয়ে রুদ্ধ স্যার তার বাবার কথায় আমাকে নিয়োগ করে।

নিজের রুমে এসে ডাইরি খুলে বসলাম রঙ তুলি নিয়ে।আজ আমার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ফুটিয়ে তুলবো সাদা আবরনের মাঝে।

>>>

কলেজে আমার প্রথম দিনটা ছিলো খুবই জটিল আমার জন্য। অবশ্য প্রাইভেট কলেজ হওয়ায় মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি না।আর আমার ক্লাসে আরও কম স্টুডেন্ট। কিন্তু নারবাসনেস টা ছিলো সব থেকে বেশি।
ক্লাস ফেলে রেখে সেইদিন কলেজের পাশে থাকা পার্কে গিয়ে বসে ছিলাম।

রুদ্ধ স্যারের সাথে আগে আমার দেখা হয়েছে বটে কিন্তু কথা হয় নি।
হঠাৎ পাশে কারো আবছা পড়তেই মাথা তুলে তাকালাম।রুদ্ধ স্যারকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।
আমার ব্যস্ত আচরণ দেখে রুদ্ধ স্যার মুচকি হসে বলল

-“ইটস ওকে মিস, ফিয়ানা বসতে পারেন আপনি।”

উনার কথা শুনার পরও বসলাম না আমি দাড়িয়েই রইলাম।

কিছুক্ষন যেতেই উনি আবার বললেন।

-“আপনার এইজ কত হবে ২৩, ২৪ হবে তো?”

উনার প্রশ্নে অবাক হয়ে তাকালাম। আমার এইজ দিয়ে উনি কি করবেন। কিছুটা ভেবে উত্তর দিলাম।

-“২৩ হবে।”

আমার কথার পরিবর্তে উনি পকেটে হাত গুজে এক ভ্রু তুলে বলল।

-“এইজের উপর নির্ভর করে আর আপনার কোয়ালিফিকেশনে নজর দিলে আপনি কিন্তু আপনার পদটার জন্য একদম ইমপারফেক্ট।

উনার কথা শুনে থতমত খেলাম। উনি সরাসরি আমাকে যে এইভাবে বলবে তা ভাবতে পারি নি।
অসস্তিতে মাথা কাটা যাচ্ছিলো।আবার উনার কথা কানে যেতেই মনোযোগ দিলাম শুনার জন্য।

-“কিন্তু টেলেন্ট বলেও একটা কথা আছে।আপনার আর্টের কোয়ালিফিকেশন দেখেই আমি আপনাকে এপোয়েন্ট করেছি নাহলে কারো কথা শুনে আমি এতো বড় ডিসিশন নিতাম না।আপনি খুবি টেলেন্টেড এই বিষয়ে কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স বলেও একটা কথা আছে।যেইটা আপনার নেই।তাই আমি চাই আপনি আপনার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করুন আমি যেমন আপনাকে সু্যোগ দিয়েছি সেইটার সদব্যবহার করবেন আশা করি।

উনার কথা শুনে অনেকটা আশ্বাস পেয়েছিলাম আমি সেইদিন। আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা মানুষ উনি।

**
পুরনো স্মৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ডায়েরিতে লিখে প্রশান্তির শ্বাস ফেললাম।

আমার জীবিনের একাংশে উনি অনেক আগেই ছিলো।কিন্তু এখন আমার পুরো জীবন টাই উনাকে জুরে হবে ভেবে আনন্দে নেচে উঠলো মনটা।

চলবে…….

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন.…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here