অনুভবে তুই পর্ব -৩৩+৩৪

#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব- ৩৩

শুক্রবার, ছুটির দিন। ভোরের ট্রেনে রোজারা গ্রামে ফিরে গেলো। রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ায় আদ্রিশ ইচ্ছে থাকলেও তখন ঘুম ভেঙে ওঠতে পারে নি। আদ্রিশের উদ্ভট রাগের কারণে বাড়ির কেউ ওকে ডাকার সাহসও করে না। যখন ঘুম থেকে ওঠলো প্রথমেই রোজার কথা মনে পড়লো। বেড সাইড টেবিলে থাকা ঘড়িটা তড়িঘড়ি করে হাতে নিয়ে দেখলো বেলা বারোটা। বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে একটা আছাড় মারলো ঘড়িটাকে। তিক্ত মেজাজে টি-শার্টটা গায়ে জড়াতে জড়াতে বিছানা থেকে নামতেই ঘড়িতে পা পিছলে মেঝেতে আছাড় খেয়ে পড়লো। নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে সেখানেই বসে থাকলো আদ্রিশ। ওঠলো না সেখান থেকে। হাত বাড়িয়ে নিজের ফোনটা নিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে ডায়াল করলো একটা নাম্বারে। দু’তিনবার রিং হয়ে যাওয়ার পরেও যখন ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না তখন দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা নিজের কপালে বারি দিয়ে যেভাবে ছিলো সেভাবেই বসে রইলো। ফোনটা ভাঙলো না; কারণ রোজা যদি পরে ফোন করে তাহলে আদ্রিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। যদিও আদ্রিশের যথেষ্ট সন্দেহ আছে, রোজা ওকে ফোন দেবে কি-না! এই মেয়ে যে ওকে ফোন দেবে না এটা খুব ভালোমতোই জানে। আদ্রিশ হতাশ কন্ঠে আনমনে বলল, ‘মেয়ে মানুষ যে কেন এত নিষ্ঠুর হয় কে জানে?’

দরজার ওপাশ থেকে ফিহার কন্ঠ শোনা গেল, ‘ভাইয়া? এই ভাইয়া? ওঠেছ? আমি কী খাবার নিয়ে আসতে বলবো? ভাইয়া?’

আদ্রিশ শুনতে পেয়েও জবাব দিলো না। মৌনতা অবলম্বন করে আগের ন্যায় বসে রইলো। সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিহা কী করবে বুঝে ওঠতে পারলো না। ঘরের ভেতরে থাকা আদ্রিশ একপর্যায়ে কিছু একটা চিন্তা করে অনেকক্ষণ পর বলল, ‘আছিস তুই? ফিহা?’

বাইরে থেকে ফিহার কোনো সাড়া না পাওয়া গেলেও উৎসের গলা শোনা গেল। উচ্চস্বরে বলে ওঠল, ”ফিহা নেই। আমি আছি।’

আদ্রিশ হন্তদন্ত পায়ে ওঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। উৎস ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ‘তোমার কিছু প্রয়োজন আছে নাকি?’

আদ্রিশ অবাক হয়ে বলল, ‘তুই কীভাবে বুঝলি?’

উৎস হেসে বলল, ‘কমনসেন্সের প্রশ্ন ভাই। বাই দ্যা ওয়ে, তোমাকে এত আপসেট দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে? আমাকে বলবে নাকি ফিহাকে? আফটার অল ফিহা তোমার অনুগত বোন।’

‘তুই কী আমার সঙ্গে ফাজলামো করতে এসেছিস?’

‘মোটেও না। আমি তো তোমার সাহায্য লাগবে কি-না জিজ্ঞেস করতে এলাম।’

আদ্রিশ খানিকক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করল, ‘তোর খালার বোন ঠিকঠাকমতো বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছে? জানিস এ ব্যাপারে কিছু?’

আদ্রিশের ঘোরালো-প্যাঁচালো কথাবার্তা শুনে উৎস মনে মনে হাসলো। তারপর বলল, ‘বাড়ি পৌঁছে খেয়েদেয়ে ঘুম দিয়েছে। ইভেন আমি তাঁদের পৌঁছে দিয়ে বাড়িতেও ফিরে এসেছি।’

আদ্রিশ হতভম্ব হয়ে বলল, ‘মানে? তুইও গিয়েছিলি নাকি? আমি তো জানি না।’

উৎস বলল, ‘হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আংকেল-আন্টি এতগুলো ব্যাগপত্র নিয়ে এতদূর যাবে, তাই আমি সাথেই চলে গেলাম।’

আদ্রিশ রুক্ষ স্বরে বলল, ‘আর এই কথাটা তুই আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?’

উৎস কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘তোমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করি নি। আফটার অল রোজার সাথে আমার চেনাজানা বা সম্পর্কের বয়স তোমার চেয়েও বেশি। তুমি ওর ফিয়ন্সে, আর আমি ওর ভাই। পার্থক্যটা বুঝো ভাই।’

আদ্রিশের ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে এলো। হাতের মুঠো কিলবিল করতে লাগলো। উৎসের নাক বরাবর ঘুষি দিতে ইচ্ছে করলো। তবুও সে চড়া গলায় প্রশ্ন করল, ‘এই, তোর গার্লফ্রেন্ড নেই?’

উৎস সোজাসুজি উত্তর দিল, ‘না ভাই।’

আদ্রিশ রেগে বলল, ‘কেন নেই? তোর মতো এত সুদর্শন একটা ছেলের কেন গার্লফ্রেন্ড থাকবে না?’

উৎস ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘কারণ রোজার মতো কাউকে পাই নি।’

ওর কথা শুনে আদ্রিশ হতভম্ব হয়ে গেলো। রাগে ফুঁসতে থাকা অবস্থায় মাথা ঝিমঝিম করতে করতে একপর্যায়ে ব্যথাও শুরু হলো। ওর মনে হচ্ছে গায়ে কেউ মরিচের গুঁড়ো পেস্ট করে লাগিয়ে দিয়েছে। পুরো চোখমুখ লাল হয়ে গেলো। উৎস নিজের হাতদুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করল, ‘আর ইউ জেলাস?’

আদ্রিশ ছুটে গিয়ে উৎসকে ঘুষি মারতে যাবে তার আগেই উৎস ওর হাত ধরে ফেললো। তারপর বলল, ‘এত জ্বলো কেন? রিল্যাক্স। নাকি আমার বোনের জন্য মন আঁকুপাঁকু করছে বলে আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছো? দিস ইজ নট ফেয়ার ভাইয়া।’

‘তোর বোন না; ভাবি বলবি। ওকে?’

উৎস দৃঢ় কন্ঠে বলল, ‘নেভার। ও আমার বোন।’

আদ্রিশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু তুই ওকে বোনের নজরে দেখিস বলে মনে হয় না।’

উৎস এবার হু হা করে হেসে ফেললো। বলল, ‘আর ইউ ম্যাড? জোক্স বুঝো না তুমি? ইদানীং এত বাচ্চা বিহেভিয়ার করো কেন? রোজা যথেষ্ট বুঝদার; ইম্প্রেসিভ। আর তুমি? অবুঝের মতো কথাবার্তা বলছো। তোমাদের তো মানাবেই না। এর চেয়ে তুমি নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো। মানাবে ভালো।’

আদ্রিশ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, ‘বেশি সাহস তোর। আমার সাথে মজা করিস ডাফার? ছোট আব্বুকে যদি না বলি তো আমার নামও আদ্রিশ নয়।’

উৎস নিজের কান ধরে বলল, ‘স্যরি ভাই। আর এমন ভুল করবো না, আব্বুকে বলো না।’

আদ্রিশ শান্ত হয়ে বলল, ‘তোর ফোন আর পাসওয়ার্ড দে। আর ভাগ এখান থেকে।’

‘কেন?’

‘আমি বলেছি তাই। দিবি? নাকি ছোট আব্বুকে বলব?’

উৎস তড়িঘড়ি করে ফোনটা বের করে আদ্রিশের হাতে তুলে দিলো। আদ্রিশ বাঁকা হেসে বলল, ‘নাও গেট আউট।’

উৎস ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বিষন্ন গলায় বলল, ‘বোনটা আমার, অধিকার বেশি তোমার। কি দিনকাল যে পড়লো! মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।’

উৎস বেরিয়ে যেতেই আদ্রিশ নিচতলায় গেলো। রান্নাঘর থেকে ব্রেড আর কফি নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে পায়ের ওপর পা তুলে বসলো। তারপর নিজের ফোন থেকে রোজার ফোনে কল দিলো। কিন্তু প্রায় বারোটা কল দেওয়ার পরেও যখন রোজা ফোন ধরলো না তখন ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। পরক্ষণেই রাগ সামলে শান্ত মেজাজ আর ঠান্ডা মাথায় উৎসের ফোনটা হাতে নিয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে ডায়াল করলো রোজার নম্বরে। সেকেন্ডের মাঝেই রোজা ফোন রিসিভ করে বলল, ‘ভাইয়া তুমি? বাঁচালে। আর কিছুক্ষণ হলেই নির্ঘাত আমার ফোনটা আ-ত্ম-হ-ত্যা করতে চাইতো।’

আদ্রিশ গলার স্বর নিচু করে বলল, ‘কেন? তোমার ফিয়ন্সে ফোন করেছিল বলে?’

ওপাশ থেকে আদ্রিশের গলা শুনতে পেয়ে রোজা জিভ কাটলো। তারপর আমতাআমতা করে বলল, ‘ওহ আপনি? কিন্তু ভাইয়ার ফোন আপনার কাছে কেন?’

‘ভাইয়ের খোঁজ পরে নিও। আমার ফোন রিসিভ করো নি কেন?’

রোজা হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘না মানে আমি ঘরে ছিলাম না। ধরার আগেই কল কেটে গিয়েছিল।’

‘তুমি ঠিকঠাক মিথ্যাও বলতে শেখো নি। আমাকে ভয় পাও? নাকি লজ্জা?’

রোজা রেগে বলল, ‘আপনি একটা গার্বেজ। আপনাকে ভয় পাবো আমি? আপনি জানেন আমি রোজা? আর রোজা কাউকে ভয়টয় পায় না।’

আদ্রিশ বাঁকা হেসে বলল, ‘সেদিন চু-মু দেওয়ার সময় যেভাবে রিয়্যাক্ট করেছিলে তাতেই প্রুফ হয়ে যায় তুমি আমাকে লজ্জা-ভয় দুটোই পাও। কিন্তু প্রকাশ্যে আনতে চাও না। আর যদি বলো আমি কীভাবে বুঝলাম তাহলে বলবো, যাকে ভালোবাসি তাঁর সবটা জেনে-বুঝে-চিনে নিয়েই ভালোবাসি। আর কাল রাতে তোমার দেওয়া খানিকটা সময়ের জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা।’

প্রসঙ্গটাতে রোজার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিলো। তাই সে কথা ঘুরাতে জিজ্ঞেস করল, ‘কী করছেন এখন?’

আদ্রিশ হেসে বলল, ‘তোমাকে ভাবা ছাড়া আমার আপাতত কোনো কাজ নেই।’

‘আপনি সবসময় এভাবেই কথা বলেন। একটু তো বদল আনুন।’

‘বোধহয় সেটা পারবো না। আফটার অল জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছি, তাঁর সাথে ফ্লাট করতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’

রোজা হতাশ গলায় বলল, ‘যা ভালো বুঝুন, করুন। রাখছি।’

আদ্রিশ লাফিয়ে ওঠে বলল, ‘ওয়েট ওয়েট।’

‘আবার কী?’

আদ্রিশ বলল, ‘বাড়ি থেকে একা একা কোথাও বের হবে না কিন্তু। সাবধানে থাকার চেষ্টা করবে। ওকে?’

রোজা তীক্ষ্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কেন?’

আদ্রিশ গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘তোমাকে তো গ্রামের একটা ছেলে বিরক্ত করে। সেজন্য বললাম। ও কিন্তু মোটেও সুবিধের নয়।’

রোজা আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরুতে চাইলো না। রাফির কথা মিন করছে আদ্রিশ। কিন্তু ও কীভাবে জানলো? রোজার নিজের মাথায়ই তো নেই কথাটা। ও তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করল, ‘আ আপনি কীভাবে ওর কথা জানলেন? ওকে চেনেন আপনি? ম মানে আপনি ও…’

আদ্রিশ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এসব কথা রাখো। আমি ফোন দিলে অবশ্যই ধরবে। আর যেন অন্য কারো ফোন থেকে যোগাযোগ না করতে হয়। আমি আবার এতটাও ফালতু ছেলে না যে, সারাদিন তোমাকে ফোন দিয়ে কথা বলতে চাইবো। যদি এটা করতেই আমার ইচ্ছে করে। কিন্তু সেল্ফ-রেস্পেক্ট বলে একটা কথা আছে না!’

রোজা হাসি চেপে বলল, ‘আপনার আবার সেল্ফ-রেস্পেক্টও আছে নাকি? বাহ!’

আদ্রিশ রেগে বলল, ‘আমি কিন্তু ফালতু প্রেমিক নই।’

রোজা বিগলিত কন্ঠে বলল, ‘কারণ আপনি রোজাকে ভালোবেসেছেন।’ #অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৩৪

রৌদ্রকরোজ্জ্বল বিকেল। হিমেল হাওয়ায় গাছগাছালির পাতা দুলছে ধীরগতিতে। ততদিনে শুকিয়ে যাওয়া বৃক্ষরাজি তরতাজা হয়ে ওঠার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আম গাছে নতুন পাতা, নতুন মুকুল এসেছে। সেখানকার তীব্র সুবাসে রোজাদের বাড়ির চারপাশটা আজকাল বড্ড মোহময় হয়ে থাকে। সেইসাথে চারদিকে অদ্ভুত এক নীরবতা বিরাজ করে। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ওড়াওড়ি করে মেঘমল্লার দল। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, শীতকাল প্রায় শেষের পথে। কিন্তু শীতের তীব্রতা কমেনি। ধোঁয়াটে কুয়াশার জাল আর ঠান্ডা বাতাস প্রতি মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় এখন শীত প্রকৃতিতে তার ভূমিকা রাখায় মশগুল। হরষপুর গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন চলছে হৈ হৈ রব। বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা! আশেপাশে গ্রামসহ শহরের কিছু গণমান্য ব্যক্তিবর্গকেও নিমন্ত্রণ করেছেন আজিজুর সাহেব। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে বিয়ের নানাবিধ কর্মকান্ড ও রীতিনীতিতে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য। এ সবকিছুর তাড়নায় আদ্রিশের ফোন ধরার জন্য তেমন একটা সুযোগ পায় না রোজা। কালভদ্রে পেলেও বাড়িভর্তি লোকজনের জন্য দু-এক মিনিটের বেশি কথা বলা হয়ে ওঠে না ওর। এই নিয়ে আদ্রিশ যতটা না বিরক্ত, তারচেয়ে বেশি বিরক্ত রোজা। ও হবু বউ বলে সারাক্ষণ কেউ না কেউ ওর সঙ্গে সঙ্গেই থাকছেই। গ্রামের কিছু কুসংস্কার মতে, বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ের ওপর অশরীরী আছর করে এবং আরও নানাবিধ সমস্যা করে। আর মেয়ে যদি হয় সুন্দরী তাহলে তো আরকোনো কথাই নেই! যদিও রোজা এসব বিশ্বাস করে না, কিন্তু সুলতানা আর বড়চাচীর তোড়জোড়ে সারাক্ষণ দু-একটা মেয়েকে সাথে নিয়েই ওর থাকতে বা ঘুমাতে হয়। সেই কারণে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু তো করতেই পারে না, আবার আদ্রিশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে ব্যর্থ সে। ওর ফোন এলেই রোজার অন্যান্য কাজিনরা পুরো বাড়িতে সেকথা রটিয়ে বেড়ায় আর আদ্রিশের সাথে মজা করার জন্য একপ্রকার ফোনের ওপর হামলে পড়ে। সবকিছু মিলিয়ে মারাত্মকভাবে বিরক্ত রোজা। তেমনই এক রাতে, ডিনার শেষ করে আদ্রিশ ডায়াল করলো রোজার ফোনে কথা বলার আশায়। গত দু’দিন যাবৎ এক সেকেন্ডের জন্যও রোজার সাথে ও কথা বলতে ব্যর্থ। কথা বলেছে ওর কাজিন, চাচী বা ফুফু। সবাই মিলে আদ্রিশকে অহেতুক লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করে যা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার। সেজন্য আদ্রিশ আজ মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে খুব করে চাইলো এবার যেন ফোনটা রোজাই ধরে। আর যদি না ধরে তাহলে সে আজ এর শেষ দেখে ছাড়বে। অন্যকেউ ফোন ধরলে সে আরকোনো ম্যানার্স দেখাবে না, মুখের ওপর অপমান করে দেবে। হবু স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে তোরা কেন কাবাব-মে-হাড্ডি হবি?

কিন্তু আদ্রিশের চাওয়া পূরণ হলো না। ফোন রিসিভ করলো রোজার দূরসম্পর্কের এক মাঝবয়স্ক ফুফু। নাম রেশমি বেগম। তার অহেতুক কথা আর চড়া মেজাজের জন্য সবাই তার ওপর বিরক্ত হলেও খুব ভয় পায়। গত দু’দিন যাবৎ রোজার ফোনটা তার কাছেই আছে। আদ্রিশের সাথে কিছুতেই রোজাকে কথা বলতে দেন না তিনি। তার মতে, বিয়ের আগে এত কথা বললে বিয়ের পরে ভালোবাসা বলে আরকিছু নাকি থাকে না। এবার ফোনটা ধরেই তিনি বিকট একটা হাসি দিলেন। ফলে আদ্রিশও মুহূর্তের মধ্যে বুঝে গেল এই ব্যক্তিটি কে! আর মহিলাটার হাসিটা খুবই বিশ্রি লাগলো আদ্রিশের কাছে। ও রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মহিলাটি বলল, ‘জামাই বাবাজি নি? বউয়ের লগে প্রেম করবা বিয়ার পরে, এখন আমাগো মতো বুড়া মানুষটির লগে দুইটা সুক-দুক্ষের গপ্প করবা। বুচ্ছ? বিয়ার আগে এত কথা কইলে, বিয়ার পরে বউরে আর ভাল্লাগতো না। তোমার ফুফা আছিল ঠিক তোমারই মতো। আমার গায়ে হলুদের রাইতেও সে চিঠি পাঠায়, সে কি প্রেমময় চিঠি। যেই বিয়াডা অইলো, তার সব প্রেম-ভালোবাসা কর্পূরের মতো আকাশে উইড়া গেল। তাই কইতাছি তুমি আর আমাগো মাইয়াডারে ফোন দিও না। এক্কেরে বিয়ার পরেই কথা কইয়ো।’

আদ্রিশ কপালে হাত চেপে ইজি চেয়ারে বসে রইলো শক্ত হয়ে। ভেবেছিল ক’টা কড়া কথা শুনিয়ে দিবে, কিন্তু পারলো না। বিরক্তিমাখা কন্ঠ নিয়ে সে হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করল, ‘আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি রেশমি ফুফু? কাল রাতে, আজ সকালে তো আপনিই কথা বলেছিলেন তাই না? ভালো আছেন?’

রেশমি ফুফু খুশিমাখা গলায় বললেন, ‘হ বাবাজি। আমি তোমাগো রেশমি ফুফু। তোমার মনডা আসলেই অনেক পরিষ্কার। কি নম্রভদ্র ব্যবহার। আবার সালামও দিলা। আজকাল পোলাপান তো গুরুজনরে সম্মান দেওয়া ভুইল্লাই গেছে। আমি ভালা আছি বাপ, তা তুমি কেমন আছো? কাজকাম কেমন চলতাছে?’

আদ্রিশ হতাশ স্বরে বলল, ‘ভালো আলহামদুলিল্লাহ।’

রেশফি ফুফু দাঁত বের করে হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভালো হইলেই ভালো। তা তুমি যেন কি বাবাজি? আজিজুর কইছিলো তুমি এঞ্জানিয়ার না কি জানি?’

আদ্রিশ উত্তরে বলল, ‘ওটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হবে।’

‘অ আইচ্ছা৷ আমাগো পাশের বাড়ির হামজা ভাইয়ের ছোডু মাইয়া মণি’র বিয়া অইছে এক এঞ্জানিয়ারের লগে। হেই’দিন দেখলাম মণি’র জামাই আমাগো বাজারের ভাঙা গাড়ি মেরামত করতাছে। পরে গিয়া জিগাইলাম, হে কইলো হে নাকি মেকানিকাল এঞ্জানিয়ার। ত তুমি কি ঠিক করো বাবাজি? কারেন্টের লাইন?’

এই প্রশ্ন শুনে আদ্রিশের মেজাজ অত্যধিক খারাপ হয়ে গেলো। কারেন্টের লাইন ঠিক করে মানে কী? মহিলা এসব কি বলছে? ভীষণ বিরক্ত হয়ে আদ্রিশ বলল, ‘না না ওসব করি না। বাই দ্যা ওয়ে, আপনার ভাতিজি’র সঙ্গে জরুরি একটু কথা ছিল। ফোনটা কী দেওয়া যাবে?’

রেশমি হেসে বললেন, ‘হে তো ঘুমাই গেছে। আর তুমি হের লগে কথা কইবার বাহানা খুঁজতাছো তাইনা? তয় শুইনা রাখো বাবাজি, বিয়ার আগ পর্যন্ত তোমাগো আর কথা নাই। ততদিন পর্যন্ত আমার সাথেই তোমারে কথা কওন লাগবো। রেশমি বেগম এমনি এমনিই হইনাই। আমারে বেকুব বানানো এত সহজ না, বুঝলা?’

আদ্রিশ আরকিছু না বলে খট করে ফোনটা কেটে দিলো। ফোনের মধ্যেই মহিলার কথা শুনে আদ্রিশ বুঝতে পারলো তার শান্তশিষ্ট রোজা সামনাসামনি কতটা ভুগছে এই মহিলার জন্য। আদ্রিশ ঠিক কি করবে বুঝে ওঠতে পারলো না। বিয়ের আগ পর্যন্ত নাকি কথা বলা যাবে না। মগের মুল্লুক নাকি সবকিছু? এক্ষুনি রোজার সাথে ওর কথা বলা চাই! তা যেকোনো মূল্যে। আদ্রিশ ফোন ঘেটে এর-ওর নাম্বার বের করলো। রোজার চাচা-বাবা বাজারে। রোজার মা-চাচীও ওকে রোজার সাথে কথা বলতে দেবে না ওই রেশমি ফুফুর জন্য। কোনো সুযোগ না পেয়ে আদ্রিশের দিশেহারা অবস্থা। ঘড়িতে রাত আটটা। এক মুহূর্ত কিছু একটা চিন্তা করে ডেনিম শার্ট আর পায়ে স্নিকার চাপিয়ে ওয়ালেটটা পকেটে ঢুকিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আদ্রিশ। রাগে তার চেহারা রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে। রেশমি ফুফুকে উচিৎ শিক্ষা দিতে মন চাচ্ছে। এই মহিলার জন্যই ওকে এত রাত করে বাড়ি থেকে বেরুতে হচ্ছে।

বাড়ির কিছু কাজে মা’কে সাহায্য করতে করতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল রোজার। এতগুলো কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে সে নিজের ঘরে গেলো। রেশমি বেগমের দুই মেয়ে রাহা-রাহী। দু’জন মায়ের বাধ্যগত সন্তান এবং মা যা বলে তাই করে। মায়ের কথামতো তারা দুজন রাতে রোজার সাথেই ঘুমায়। ঘরে ঢুকতেই ঘুমন্ত দুজনকে দেখে রোজা হতাশ হলো। বিছানায় বিন্দুমাত্র খালি জায়গা নেই যেখানে ও শোবে। দু-বোন হাত-পা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। রাগে-দুঃখে রোজার কান্না এসে গেলো। চোখ থেকে ঘুমও উধাও। নিজের ফোনটা থাকলে অন্তত সময় কাটানো যেতো ভেবে আফসোস হচ্ছিলো ওর। ঠিক তখনই জানালার পাশে কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো। আওয়াজ শুনেই রোজা ভয় পেয়ে গেল। রাফি ছাড়া এদিকে আর কেউ কখনো আসেনি। এত রাতে সে এখানে কি করছে? ইতোমধ্যে জানালায় কয়েকবার টোকাও পড়েছে। রোজা দম আটকে বসে রইলো। কাকে ডাকবে এখন? নিজেকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য মনে হচ্ছে। রাহা-রাহীকে ডাকলেও ওরা ওর কথায় পাত্তা দিলো না, দুজনেই কম্বল মুড়িয়ে পুনরায় ঘুমে মগ্ন হলো। একপর্যায়ে ও ঠিক করলো বাবাকে ডাকবে। যখন ঘরের দরজা খুলে বের হতেই যাবে তখনি ফিসফিসানি শুনতে পেলো। রোজা ভয়ে ভয়ে জানালার কাছে গিয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো। তখনি গম্ভীর গলায় কেউ বলে ওঠল, ‘হ্যালো হ্যালো। কেউ আছো? হেল্প মি প্লিজ।’

গলাটা খুব পরিচিত লাগলো রোজার কাছে। মাথায় একটু চাপ দিতেই ও বুঝতে পারলো এটা অন্য কেউ নয়, স্বয়ং আদ্রিশের গলা। কিন্তু এত রাতে এই লোক এখানে কি করছে? হতভম্ব রোজা জানালার কপাট খুলতেই শীতে জবুথবু মেরে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিশকে চোখে পড়লো ওর। আকস্মিকতায় চোখমুখ চমকিত হয়ে ওঠল। অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ‘আপনি এখানে? সত্যিই? এত রাতে?’

রোজাকে দেখে আদ্রিশ আটকে রাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখদুটো বন্ধ করে আবার খুললো। তারপর বলল, ‘হ্যাঁ আমিই এখানে।’

রোজা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘কেন এসেছেন?’

আদ্রিশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, ‘তোমার সাথে যোগাযোগ করার কোনো ওয়ে রাখেনি তোমার ওই বদের হাড্ডি ফুফু। অসভ্য মহিলার জন্য আমাকে এত রাতে আসতেই হয়েছে।’

রোজা ভীতসন্ত্রস্ত গলায় ওকে থামিয়ে ধীর গলায় বলল, ‘দয়া করে আস্তে কথা বলুন। পাশের রুমেই ফুপি ঘুমাচ্ছেন। আওয়াজ শুনলেই দৌড়ে আসবেন। আর আপনাকে দেখলেই হুলস্থুল কান্ড ঘটাবেন।’

আদ্রিশ রাগত স্বরে বলল, ‘আই ডোন্ট কেয়ার।’

‘বাট, আই কেয়ার।’

‘ননসেন্স। বাই দ্যা ওয়ে, আমাকে কি এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবে? আমি ভেতরে আসবো কীভাবে?’

রোজা অবাক হয়ে বলল, ‘ভেতরে আসবেন মানে? বাড়ির সদর দরজায় তালা দেওয়া। চাবি আব্বুর কাছে। এখন কোনোভাবেই আপনাকে বাড়ির ভেতরে আসতে দেওয়া যাবে না। এটা ইম্পসিবল। আপনি প্লিজ চলে যান।’

আদ্রিশ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘নো ওয়ে। এত রাতে কষ্ট করে এসেছি, এখন ফিরে যাওয়া সম্ভব না।’

রোজা হতাশ হয়ে বলল, ‘আমি এখন কী করব তাহলে?’

‘আমাকে ঘরে ঢুকতে দাও। দ্যাটস ইনাফ।’

রোজা অবজ্ঞাসূচক হাসি দিয়ে বলল, ‘ঘরে আমি ছাড়া আরও দুইজন রয়েছেন। আপনি কী তাদের সাথে মিট করতে চান?’

আদ্রিশ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কারা এরা?’

‘দ্যা গ্রেট রেশমি ফুফুর দুইমাত্র মেয়ে। ওরা কিন্তু আপনাকে অনেক পছন্দ করে।’

আদ্রিশ অবাক হয়ে বলল, ‘ওরা আমাকে চেনে?’

রোজা হেসে বলল, ‘অবশ্যই। আপনাকে সোশ্যাল সাইটে ওরা ফলো করে। তাছাড়া আপনার বিশাল একটা ছবি বাঁধিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন রেশমি ফুফু।’

আদ্রিশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ‘মানে? আমার ছবি কেন?’

রোজা উত্তরে বলল, ‘রোজার বিশিষ্ট বর মহাশয় বলে কথা৷ বাদ দিন, আপনি কীভাবে জানলেন এদিকে একটা সিঁড়ি আছে? আর আমার ঘর এদিকেই?’

আদ্রিশ খানিকটা গম্ভীর গলায় বলল, ‘ছোটবেলায় একবার দেখেছিলাম। আর আন্দাজ করেছিলাম এদিকেই হবে তোমার ঘর। উৎসকে জিজ্ঞেস করে কনফার্ম করে নিলাম।’

রোজা এ পর্যায়ে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘কেন এসেছেন? আমার সাথে দেখা করতেই তো? তাহলে দেখা করা শেষ? এবার যান।’

‘যাব মানে? কতদিন পর আমাদের দেখা আর তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছো? হোয়াট দ্যা…’

রোজা ব্যগ্র কন্ঠে বলল, ‘আমিতো তাড়িয়ে দিচ্ছি না। শুধু চাইছি আপনি যাতে ধরা না পড়েন। আমার ঘরে ওরা দু’বোন ঘুমাচ্ছে। একবার যদি টের পায় তাহলে গণধোলাই খাওয়াবে আপনাকে।’

রোজাকে উতলা হতে দেখে আদ্রিশের একটু ভালো লাগলো। ওর মাথায় তখনি একটা দুষ্ট চিন্তা এলো। ভাঙা সিঁড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতদুটো ভাঁজ করে রোজার উদ উদ্দেশ্যে বলে ওঠল, ‘যেতে পারি। এক শর্তে। শর্ত না মানলে এখুনি বাড়ির ভেতর ঢোকার চেষ্টা করবো।’

রোজা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কী শর্ত?’

আদ্রিশ জানালার কাছে চলে এলো। গ্রিলের ফাঁকা অংশ দিয়ে রোজার খুব কাছে। ওর এই ব্যবহারে রোজা খানিকটা হকচকিয়ে গেল। আদ্রিশ বাঁকা হেসে বলল, ‘আই ওয়ান্ট অ্যা কিস।’

রোজা চোখমুখ কুঁচকে বলল, ‘ছিঃ।’

আদ্রিশ রেলিঙের ওপর বসে শক্ত কন্ঠে বলল, ‘আজ রাতটুকু এবং কালকের দিনটা এখানেই কাটাচ্ছি।’

রোজা রাগমিশ্রিত কন্ঠে কিছু বলতে নিলেই বিছানার ওপর থেকে রাহা ঘুমঘুম গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘কে কথা বলে?’

রোজা তড়িঘড়ি করে বলল, ‘কেউ না তো। আমি। তুই ঘুমা।’

বাইরে বসে আদ্রিশ এটা শুনে উঁচু গলায় বলল, ‘তোমার অহংকারী বোনের হবু বর।’

কিন্তু কথাটা রোজা বাদে আরকেউ শুনলো না। রাহা তখনই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আদ্রিশের কান্ডকীর্তি দেখে ওকে মাঝরাতের পাগল বৈকি আরকিছুই মনে হলো না রোজার। কোনোমতেই ও যাচ্ছে না দেখে রোজা আহত হলো। অনেক কষ্টে নিজের মনকে বুঝিয়ে শান্ত করলো সে। গ্রিলের ওপর থাকা আদ্রিশের হাতের পিঠে ছোট্ট করে একটা চু-মু খেলো। এটার জন্য আদ্রিশ প্রস্তুত ছিলো না। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে গেলো। আর এই সুযোগে রোজা ঠাস করে জানালাটা বন্ধ করে রাহা-রাহীর মাঝখানে গিয়ে শুয়ে পড়লো। লজ্জায় ওর চোখমুখ গরম হয়ে ওঠলো। ইশ, কী কান্ড করেছে সে! আর আদ্রিশ তখনো সেভাবেই বসে রইলো রেলিঙের ওপর। ও তো রোজাকে অপ্রস্তুত করতে চেয়েছিল, যাতে আরেকটু সময় কাটাতে পারে একসাথে। কিন্তু রোজা যে কথাটা সত্যি মনে করে ওকে কি-স করবে সেটা ও ভাবেই নি। রেলিঙের ওপর বসে আদ্রিশ নিজের অজান্তেই মুহূর্তটার কথা ভেবে হাসছিলো। আর কাঁথার নিচে মুখ লুকিয়ে রোজা তখন ব্লাশড হচ্ছিলো।

—————————————————————————–

চলবে…

—————————————————————————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here