অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ৩

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৩
.
রুমের সাথে এটাচড মিনি টেরেসে বসে আছে সাদাদ। তার চোখদুটো ছলছল করছে। মাথার ঝাকড়া চুলগুলোতে একবার হাত বুলিয়ে চোখ বুঝলো সে। কিছুক্ষন পর চোখ খুলে তাকালো ওই শূন্য গগনে। রুমের স্টাডি টেবিলে ফোনটা অনবরত ভাইব্রেট হচ্ছে কিন্তু তাতে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। খুব একা লাগছে তার। তার কাছে সব থাকতেও যেন তার বুকটা খালি! যে জানে এটা কিসের শূন্যতা। কিন্তু সে নিরুপায়।

.
দুইবার নক করেও যখন সাদিয়া ভাইয়ের থেকে কোন জবাব পেলো না তাই দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে সাদাদ রুমে নেই। অথচ ফোনটা টেবিলে বাজছে। তার মানে সাদাদ রুম থেকে বের হয় নি। হাতে কফির মগটা নিয়ে এগিয়ে গেলো টেরেসের দিকে। আজ তার ভাইয়ের মনটা ভীষণ খারাপ, সাদাদের মন খারাপ হলেই টেরেসে বসে শূন্যে তাকিয়ে থাকে, এটা তার অভ্যাস। সাদিয়া ভাইকে দেখে মুচকি হাসলো। সেও গিয়ে সাদাদের পাশে বসলো। খুব শান্ত গলায় ডাকলো সে,
-সাদ!
সাদাদ শূন্য থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো। সাদিয়ার হাসি মুখটা দেখলেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সাদাদ ও মুচকি হাসলো। কিন্তু হাসিটা ছিল বিষন্নতায় ঘেরা। যা সাদিয়া স্পষ্ট বুঝতে পারলো। সাদিয়া কিছু বলার আগেই সাদাদ সাদিয়ার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। তার মা মারা যাওয়ার পর থেকে এই বোনই তাকে মানুষ করেছে। সুশিক্ষা দিয়েছে। তার বাবাও যথেষ্ট করেছে কিন্তু সাদাদকে তেমন সময় তিনি দিতে পারতেন না, কারন একটাই ব্যস্ততা। কিন্তু মনে প্রানে চেষ্টা করতেন। তাই হয়তো তার প্রতি সাদাদেরও কখনো কোন অভিযোগ শুনা যায় নি। সাদাদের পরিবার বলতে তার বাবা, বড় বোন সাদিয়া আর তার দাদি। আত্নীয় বলতে ফুপু মামা আছে। সাদাদ নিরবতা ভেঙে বলল,
–দি! ও আমায় কেন বুঝে না। কেন আমার থেকে দূরে পালায়? আমি কি এতোটা খারাপ?

সাদিয়া হালকা হেসে সাদাদকে বলল,
-আসলে হয়েছে কি বলতো! ও তো তোকে কখনো সাধারণভাবে পায় নি। তোর কথা শুনে বুঝতে পারলাম সুবাহ তোকে সবসময় রূঢ় অবস্থাতেই দেখেছে। আর স্বাভাবিক ভাবেই যে তোর ওই রুপ দেখবে সে ভয়ই পাবে। এতে সুবাহর কোনো দোষ নেই।

–দি আমি তো চাই ওর ভয় ভাঙাতে। কিন্তু ও তো আমাকে সেই সুযোগ ও দেয় না। আমাকে দেখা মাত্র ছুটে পালিয়ে যায়। জানো আজ কি করেছে! ক্যাফেটেরিয়ায় আমাকে দেখে খাবার ফেলেই ব্যাগ নিয়ে ভো দৌড় দিয়েছে। ওর থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু সাব্বির আর তমাল আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিলো।
সাদিয়া শব্দ করে হেসে দিলো।
-আচ্ছা তো এই জন্য সাব্বির তখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। আমাকেও কয়েকবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো ভাই কই! কিন্তু যাই বলিস না কেন! সুবাহ মেয়েটা অনেক কিউট! লাইক লিটল এঞ্জেল! আর এঞ্জেলরা তো একটি ভীতু টাইপেরই হয়! তো ভাই আমার! একদম হার মানবি না। সুবাহকে নিজের অনুভূতির দ্বারা পরিচয় করাও!
সাদাদ একটা শ্বাস ফেলে বলল,
–দি ওর জন্য আমার অনুভূতিরা শীর্ষে চলে গেছে। এখন আর চাইলেও আমি ওর সাথে প্রেম করতে পারবো না।
সাদিয়া অবাক হয়ে বলল,
-মানে?
সাদাদ সাদিয়ার কোল থেকে উঠে সাদিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আই নিড হার অ্যাজ মাই ওয়াইফ!

.
ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। চোখ বন্ধ করেই হাসি দিয়ে চোখ খুললাম। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি বাবা রেডি হয়ে মাত্র ডাইনিং টেবিলে বসলো। মা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। মায়ের কাছে গিয়ে বললাম,
–আম্মু আমি কি কিছু হেল্প করবো? তুমি তো ঘেমে গেছো! একটু রেস্ট নাও!
আম্মু মিষ্টি হেসে বলল,
-নাহ! মা কিচ্ছু করতে হবে না তোমায়! এই যে বললে তাতেই আমি অনেক খুশি হয়েছি! আমার কাজও প্রায় শেষ। এখন গোসল করতে যাবো। তুমি গিয়ে টেবিলে বসো। পড়া কম্পলিট হয়েছে?

আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো উপরনিচ মাথা দুলিয়ে বললাম,
–ইয়েস আম্মু!

সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ করে আম্মুকে নিয়ে চললাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আমার সাইডের জানালার কাঁচটা নামিয়ে দিয়েছি। যদিও রোদ ছিল প্রচুর। কিন্তু কেন যেন এই রোদকে উপেক্ষা করে বাইরের হাওয়া গায়ে লাগাতে ইচ্ছে হলো। কিছুক্ষণ পর লাগলো এক বিশাল জ্যাম। বাংলাদেশ মানেই তো এখানের বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যাম! মাঝে মাঝে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়! আমি সুন্দর ভাব নিয়ে বিদেশিদের বলতে পারবো ” কি! এতো সুন্দর জ্যাম লাগে তোমাদের দেশে? এটা শুধু আমাদের দেশেই সম্ভব! এবং আমি আমার দেশকে খুব ভালোবাসি!” পরক্ষণেই মনে হয় আমি কি আমার দেশ সম্পর্কে ভালো বলছি না খারাপ! খারাপ উত্তরটা মাথায় আসতেই দেশ মাতার কাছে কয়েক হাজারবার ক্ষমা চেয়ে নি আমি। কিন্তু এটা সত্যি আমি এই ট্রাফিক জ্যামের প্রতি চরম বিরক্ত।

.
দুইটা ক্লাস শেষ করে ক্যাফেটেরিয়ার ডান পাশে বেঞ্চিতে বসে আছি আমি আর রাত্রি। আমি আপাতত আড়চোখে রাত্রিকে দেখতে ব্যস্ত। তার নতুন বউয়ের মতো লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখে আমি খুবই বিরক্ত। এ নিয়ে সাতবার জিজ্ঞাসা করেছি কাহিনী কি কিন্তু সে লজ্জায় নিচু হয়ে আছে। তাই এবার খুব বিরক্ত হয়ে উঠে যেতে নিলেই রাত্রি আমার হাত ধরে আটকে বলল,
-আরে কই যাচ্ছিস?
আমি এবার বজ্রকন্ঠে বললাম,
–তো কি আমি এখানে তোর লজ্জায় রাঙা মুখটা দেখতে বসে থাকবো? কখন থেকে জিজ্ঞাসা করছি কি হয়েছে কিন্তু তুই তো বলার নামই নেস নি। এবার বল নয়তো থাপ্পড় খাবি।
রাত্রি আবার লজ্জা পেতে শুরু করতেই আমি বাই বলে চলে যেতে নিলেই রাত্রি আমাকে থামিয়ে বলতে শুরু করলো।
-আসলে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আমি সাথে সাথেই বললাম,
–সেতো ভালো কথা! কিইইইই??? তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা তুই এখন আমায় বলছিস? কুত্তা! তুই দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে! তুই আজ থেকে আমার শত্রু! হুহ!

রাত্রি অসহায় ভাবে বলল,
-বিয়ের খবরটার জন্য শত্রু বানিয়ে দিলি?
আমি চটে গিয়ে বললাম,
–উহু! শত্রু বানাই নি তো তোকে আমি মহাশত্রু বানাইছি! সর!
রাত্রি আমার হাত ধরে বলল,
-হুট করেই আমার বিয়েটা ঠিক হলো পরশুদিন। বাসায় গিয়ে শুনি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, অথচ আমায় দেখতে পর্যন্ত আসে নি।
আমি আড়চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে বললাম,
–ছেলের নাম কি? কি করে? কোথায় থাকে সব বায়োডাটা আমায় দিবি! আমার বেস্টুকে তো আর আমি বানের জলে ভাসিয়ে দিতে পারি না।

রাত্রি হেসে বলল,
-এই নাহলে আমার বেস্টু! ছেলের নাম বিভোর! মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আছে। বাসা ধানমন্ডি। দেখতে মাশাল্লাহ। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আমি বিজ্ঞদের মতো করে বললাম,
–হুম হুম! ঠিক আছে তোর যেহেতু পছন্দ হয়েছে আমি মানা করবো না। আমি রাজি তোর বিয়েতে!
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে দুজনেই হাহা করে হেসে দিলাম। আমাদের হাসির মাঝেই একটা ছেলে এসে বলল,
-এখানে সুবাহ তানজিম কে?
আমি জবাব দিলাম,
–জ্বি আমি! কিছু বলবেন?
ছেলেটা বলল,
-জ্বি আপনাকে ভি-৯ রুমে ডেকেছে!
আমি পালটা প্রশ্ন করলাম,
–কে ডেকেছে?
ছেলেটা কোনরকম বলল,
-সাদাদ ভাই!
সাদাদ ভাইয়ের নাম শুনেই আমার চোখ বড় হয়ে গেলো। ছেলেটা তৎক্ষনাত জায়গা ত্যাগ করলো। কিন্তু আমার তো অবস্থা খারাপ! মাথায় ঘুরছে আমি তো কোন অন্যায় করেনি এমনকি সাদাদ ভাইয়ের কোন রুলসও ভঙ্গ করি নি তাহলে আমাকে কেন ডাকলো? আমার যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। রাত্রির দিকে তাকাতেই দেখি তার চোখ চকচক করছে খুশিতে। আমি রাগে বললাম,
–তুই আসলেই আমার মহাশত্রু!
,
,
,
চলবে……………❤️

(আমি সময় পেলেই গল্প দিয়ে দিই। তাই আপনারাও কৃপণতা না করে সাদাদ আর সুবাহর বিষয়ে মন্তব্য করুন। আজ আর এক্সট্রা পর্ব দিবো না। তবে প্রকৃতি কন্যা গল্পটা দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here