অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ২১

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_২১
.
সাদাদের কন্ঠ শুনে মনে মনে শুধু “ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি” করছি! এই বদ লোক ভার্সিটিতেও এসে আমার কথাই শুনতে হলো? তাও আবার যেন তেন নয়! বারবার ঢোক গিলছি। রাত্রির হাতে খামচির দাগ পড়ে গেছে। উনি আবার বললেন,

–কি হলো কথা বলোনা কেন? আমাকে তো ভয় পাও না!

এবার আমি চোখমুখ কুঁচকে দাঁত দিয়ে জিহবা কাটলাম। আমি কোন জবাব না দিয়েই চলে আসতে নিলাম কিন্তু সাদাদ মশাই তা হলে দিলো কই? আমার হাতের কব্জা ধরে রেখেছে। খুব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

–শালিকা! আমি কি ইনাকে নিয়ে যেতে পারি?

রাত্রি অসভ্যটা চোখমুখে হেসে বলল,

-অল ইয়োরস সাদাদ ভাইয়া!

কথা শুনে এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা করে নি সে। হাত টানছে! কিন্তু আমার পাত্তা না পেয়ে এক ভয়ানক কাজ করলো। সবার সামনে থেকে হুট করে কাঁধে তুলে নিল! লজ্জায় আমার অবস্থা খারাপ! আগেই ভালো ছিলো! কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছে। সবার নজর আমাদের দিকে! ছিঃ! সবাই তো আর জানে না আমাদের সম্পর্ক! আল্লাহই জানে কত কত বাজে কথা বলছে আমাদের নিয়ে! আমি বারবার চিৎকার করে বলছি,

–আরে! ছাড়ুন আমাকে! আমি হাঁটতে জানি! ওয়ে!

নাহ! উনার মধ্যে কোন ভাবাবেগ হলো না।সোজা গাড়ির ফ্রন্ট সিটে ধপ করে ফেলল আমায়! দরজা লাগিয়েই লক করে দিলো যেন নামতে না পারি। উনাকে আমি এতোক্ষন ভালো করে খেয়াল করি নি। কিন্তু এখন তাকিয়ে দেখলাম। মনে হচ্ছে এক অগোছালো পাগল আমার সামনে বসে। উনি ড্রাইভিং সিটে বসে স্টেয়ারিং উইলে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে! উনাকে কি কেউ বলছিলো আমাকে কাঁধে তুলতে? এখন হাঁপাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর উনি মাথা তুলে সরাসরি আমার দিকে তাকালেন। উনার চোখ দেখে আমার অবস্থা ফুস! ভয়ানক লাল হয়ে আছে।

উনি খুব শান্ত স্বরে বললেন,

–এভাবে জ্বালাচ্ছো কেন আমায়? মেরে ফেলতে চাও?

আমি উনার কথায় পুরো অবাক! আমি কি এমন করেছি যে উনি এই কথাটা আমাকে বলল! আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বললেন,

–কি সমস্যা তোমার? কোন কথা নেই বার্তা নেই। ফোন তুলছো না। বাসার ফোনে ফোন দিলেও কথা বলো না। কি সমস্যা?

আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,

–আসলে আমি এমনিই এমন করেছি। আমরা তো এখনো ঝগড়া করি নি। আর আমি জানি আপনি কখনো মনে হয় না আমার সাথে ঝগড়া করবেন! কথাই তো বলেন না। তাই আমি নিজ থেকেই…….

উনি বজ্রকন্ঠে বললেন,

–বাচ্চা তুমি? এগুলো কি ধরনের ছেলেমানুষি? এদিকে আমি টেনশনে মরে যাচ্ছি এটা ভেবে যে কেন কথা বলা বন্ধ করে দিলো? আর ইনি ঢং করে কথা বলা অফ করে দিয়েছে! বাহ!

আমি এবার কেঁদেই দিলাম। উনার এই ব্যবহার আমার মোটেই কাম্য ছিল না। উনার যেন হঠাৎ করে হুশ ফিরলো। নাকমুখ কুঁচকে কপালে হাত দিয়ে সিটে হেলান দিলো। উনি আমার দিকে ফিরে বললেন,

–সরি! আসলে খুব রাগ লাগছিলো! কন্ট্রোল করতে পারি নি!

আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। উনি আর কোন কথা না বলে গাড়ি চালাতে লাগলো। কি আজব! আমি এখানে রাগ করে বসে আছি আর উনি আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টাও করলেন না। এতে আমার আরো রাগ লাগলো। চুপ করে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছি। আর ক্ষনে ক্ষনে ভিতর থেকে ফুঁপানি উঠছে। সাদাদ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

.
সাদিয়া বেশ কয়েকবার রুবায়েতকে ফোন দিয়েছে কিন্তু রুবায়েত তুলছে না। এই কয়দিনে সাদিয়া স্বাভাবিক হওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু রুবায়েত তাকে কোন প্রকার সুযোগই দিচ্ছে না। সাদিয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রুবায়েত এর এইরকম ব্যবহারের কারণ কিন্তু সে মানতে পারছে না। প্রথমত সে আসিফের থেকে ধোকা পেয়েছে আবার এখন রুবায়েত এর অবহেলা সে নিতে পারছে না। যখন থেকে সাদাদ তাকে তার প্রতি রুবায়েত এর অনুভূতির কথা বলেছে তখন থেকে সে এক অনুতাপে ভুগছে। সে ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছে। সে একজন এডাল্ট নয়তো কোন ভূল পদক্ষেপ সে অনায়াসে নিতো। কিন্তু এখন ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়। এখন সে শুধু নিরবে কান্নাই করে।

.
আমাদের বাসার সামনে গাড়ি থামতেই চুপচাপ দরজা খুলতে গেলেই দেখি দরজা লকড! বেশ কয়েকবার ধাক্কা দিয়েও কোন লাভ হয় নি। তাই ব্যর্থ হয়ে ঠোঁট উলটে বসে আছি! তাও কথা বলবো না এই দুর্নীতিবাজের সাথে! হুহ!

উনি আবারও হাসলেন। আমার হাত টান দিয়ে উনার দিকে ফিরিয়ে আমার গাল উনার দুহাতে আবদ্ধ করে বললেন,

–সরি তো! এই!

উনার এই কথা শুনে কেমন যেন লাগলো। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনি মুচকি হেসে আলতো করে আমার গালে চুমু খেলেন! প্রথমে বাম গালে তারপর ডান গালে তারপর কপালে! আর তারপর..!

আমি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েও পারি নি! কারণটাও সে, আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে সে মুচকি মুচকি হাসছে! হাসলে তার ডান গালে হালকা টোল পড়ে যা দেখতে মারাত্মক! যতবার টোলটার দিকে তাকাই ততবার বুকের ভিতরে ধুক করে উঠে! তার ডান গালে টোল পড়লেও আমার পড়ে বাম গালে। কিন্তু চাইলেই সবাই দেখতে পারবে না। যারা আমাকে খুব কাছ থেকে জানে, তারা প্রায়শই দেখতে পায়! ভাবতে ভাবতে সাদাদের কন্ঠ শুনতে পাই,

–আর মাত্র তিনটে দিন! তারপর থেকে তুমি সম্পূর্ণ আমার হয়ে যাবে।

আমি চট করে চোখ খুলে ফেললাম! আসলেই তো! আমার কাছে আর তিনটে দিন আছে অবিবাহিত ট্যাগ নিয়ে ঘুরার জন্য!
,
,
,
চলবে……………..❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here