#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🌺🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️🥀
#পার্টঃ১৩
আমাদের জীবন ও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে সময় | অনেকে বলেন সময় নদীর স্রোতের মতো। আবার অনেকে বলেন সময়ই অর্থ। সময় আসলে কী? ছোট্ট এই প্রশ্নের উত্তরটি অনেক জটিল। হয়তো কোনো উত্তরই আমাদের জানা নেই। প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সময়ের কোনো অতি সুপরিচিত ব্যাখ্যা আমরা দাঁড় করাতে পারি, কিন্তু সত্যিকারের সময় কী সেটা খুঁজে বের করা হয়তো আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা প্রতিনিয়ত সময় ও সময়ের অস্তিত্বকে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করে আসছেন।
সময় চলে যায় আপন গতীতে দেখতে দেখতে কিভাবে ২ টো বছর কেটে গেছে সেদিনের ঘটনার পর থেকে।
সেদিন আফ্রিদ অনেক ভেঙে পড়েছিলো।
হাজারো হোক মা হারানোর ব্যাথাটা যে সয্য করবার মতো নাহ।
বলে নাহ ছেলেরা সহজে কষ্ট না পেলে কাঁদে নাহ।
সেদিন আফ্রিদ অনেক বেশিই কষ্ট পেয়েছিলো।
ইয়াসিবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদেছিলো।
সেদিনের ঘটনার পর এক সপ্তাহ পুরো আফ্রিদ চুপ-চাপ হয়ে গিয়েছিলো।পরে আফ্রিদ দেখে যে সে ভেংগে পড়লে ইয়াসিবাও কেমন নেতিয়ে যাচ্ছিলো।তাই আফ্রিদ নিজের মনকে শক্ত করে।
যা হয়েছে তা ওর ভাগ্যে ছিলো আর সে এটা মেনে নিয়েছিলো।
অনেক কষ্ট করেছে ইয়াসিবা জীবনে ওকে আর কষ্ট পেতে দিবে নাহ আফ্রিদ মনে প্রানে শপথ করে।
আজ ২ বছরে আফ্রিদ ইয়াসিবাকে এতোটা ভালোবাসা দিয়েছে যে ইয়াসিবা আরো তীব্রভাবে আফ্রিদের ভালোবাসায় ফেসে গেছে।আফ্রিদ আর ইয়াসিবা এখন ইব্রাহিম চৌধুরীর সাথেই থাকে।
ইয়াসিবা,আফ্রিদ আর ইব্রাহিম চৌধুরী এই তিনজনকে নিয়ে ভালোই কাটছে তাদের দিন।
—————
আফ্রিদ কাজে গিয়েছে একটু আগেই।
আফ্রিদ যাওয়ার পরেই ইয়াসিবা টেবিল গুছাতে শুরু করলো।
থালাবাসন নিয়ে রান্নাঘরে যাওয়ার পথেই হঠাৎ ইয়াসিবার মাথাটা ঘুরে উঠে।
নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।
ইব্রাহিম চৌধুরী সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন ইয়াসিবাকে পড়ে যেতে দেখে উনি দ্রুত উঠে দাড়ান।
ইয়াসিবার কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে লাগলো,
–” বউমা! বউমা! কি হলো তোমার?চোখ খুলো বউমা!”
তারপর জোড়ে চিৎকার করে সার্ভেন্ট’সদের ডাকে।
দুজন মহিলা সার্ভেন্ট’স এসে ইয়াসিবাকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে সুইয়ে দেয়।
ইব্রাহিম চৌধুরী আর একটুও দেরি নাহ করে দ্রুত কল করেন আফ্রিদকে।
————–
মাত্রই হাস্পাতালে এসে বসেছিলো আফ্রিদ।
সাথে সাথে বাবার কল পেয়ে একটু আশ্চর্য হয়।
মাত্রই তো বাসা থেকে আসলো।আবার কিছু অঘটন হলো না-তো?
দ্রুত ফোন রিসিভ করে আফ্রিদ।
–” হ্যালো বাবা!”
–“আফ্রিদ বউমা! বউমা!”
–“কি হয়েছে বাবা ইয়াসিবার?”
–“তুই একটা মহিলা ডাক্তার নিয়ে আয় জলদি বউমা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।”
–” কিহহহহহহহ!! আমি এক্ষুনি আসছি বাবা!”
আফ্রিদ কলটা কেটে আর একটু দেরি না করে।একটা মহিলা ডাক্তারকে নিয়ে জলদি বাড়ি পৌছায়।
রুমে ডুকে দেখে ইয়াসিবা বিছানায় সুয়ে আছে।
আর পাশেই ইব্রাহিম চৌধুরী,আর দুজন মহিলা সার্ভেন্ট’স।
আফ্রিদ দ্রুত ইয়াসিবার পাশে বসে ওকে ডাকলো,
–” ইয়াসিবা?ইয়ু! চোখ খুলো দেখো আমি এসেছি।”
ইয়াসিবার রেস্পন্স না পেয়ে আফ্রিদ ওই মহিলা ডাক্তারটাকে বললো,
–” আপনি একটু দেখেন তো ওর কি হয়েছে?”
–” আপনি নিজে এতো বড় ডাক্তার হয়ে আমাকে কেন বলছেন স্যার?”
–” কারন আমি টেন্সনে সব গুলিয়ে ফেলবো আমার মাথা ঠিক নেই।”,
–” ওকে ওকে হাইপার হওয়া লাগবে নাহ।আমিই দেখছি।”
মহিলা ডাক্তারটি ইয়াসিবাকে চেক-আপ করেন।
তারপর মুচকি হেসে তাকায় আফ্রিদের দিকে।
আফ্রিদ ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
–” কি হয়েছে ডা.সুমাইয়া? আপনি হাসছেন কেন?”
–” কারন আপনি বাবা আর ম্যাম মা হতে চলেছেন।কোনগ্রাচুলেশন স্যার।মিষ্টি খাওয়ানো লাগবে আমাদের পুরো হাস্পাতালের মানুষদের।”
আফ্রিদ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ইয়াসিবার দিকে।সে কাঁপা গলায় বললো,
–” কি বললেন?আবার একটু বলুন নাহ?”
–” আপনি বাবা হতে চলেছেন স্যার।”
ইব্রাহিম চৌধুরী আফ্রিদকে জড়িয়ে ধরে খুশির আমেজে বললো,
–” মাই সোন,আই এম গোয়িং টু বি আ গ্রান্ডফাদার।আহা! কি আনন্দ। আই উইল বি আ গ্রান্ডফাদার।ওহ! আল্লাহ্ থাংক ইউ সো মাচ। ডাক্তার সুমাইয়া এই নিন টাকা আপনি পুরো হাস্পাতালকে মিষ্টি কিনে খাওয়াবেন।এটা আপনাকে আমি দায়িত্ব দিলাম।
সুমাইয়াকে টাকা দিয়ে কথাগুলো বললেন ইব্রাহিম চৌধুরী।
–“ওকে স্যার।তাহলে এখন আমি আসি।”
–” চলো আমি তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
ইব্রাহিম চৌধুরী ডাক্তার সুমাইয়াকে নিয়ে চলে গেলেন।
আফ্রিদ দরজাটা আটকে দিয়ে ইয়াসিবার পাশে বসলো।
মেয়েটা ওকে কতোটা খুশি দিয়েছে ও বলে বুজাতে পারবে নাহ? মানুষ বলে নাহ অতি খুশিতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আফ্রিদ এর অবস্থাও ঠিক তেমন।
—————-
জ্ঞান ফিরতেই আসতে আস্তে চোখ খুলে ইয়াসিবা।
মাথাটা ভার ভার লাগছে।পাশে চোখ যেতে দেখে আফ্রিদ তার হাত ধরে বসে আছে।
ইয়াসিবা উঠে বসতে নিতেই আফ্রিদ তাকে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়।
বলে,
–” এখন কেমন লাগছে?”
–” মাথাটা একটু ভার ভার লাগছে।
আপনি কখন আসলেন?”
–“এইতো একটু আগে।”
–” আমার কি হয়েছিলো?”
–” তুমি জানোনাহ তুমি কি করেছো?”আফ্রিদের গম্ভীর স্বরে বলা কথায় ভয় পেয়ে যায় আস্তে করে বলে,
–” আমি কি করেছি?”
হুট করে আফ্রিদ ইয়াসিবাকে জড়িয়ে ধরলো।
ইয়াসিবা এইবার মনে হয় ভয়ে কেঁদেই দিবে।
সেও আফ্রিদকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো,
–” কি হয়েছে বলুন নাহ?”
ইয়াসিবা টের পেলো ওর কাধে গরম পানি ফোটায় ফোটায় পড়ছে।আতকে উঠলো ইয়াসিবা তবে কি আফ্রিদ কাঁদছে কিন্তু কেন?ও কি কোন ভুল করেছে।
ইয়াসিবা কোনমতে কান্না থামানোর চেষ্টা চালিয়ে বলে উঠলো,
–” আপনি কাদছেন কেন?আমি কি কোন ভুল করেছি?আপনাকে কি কোন কষ্ট দিয়েছি আমি?”
বলতে বলতে ইয়াসিবা কেদে দিলো।
আফ্রিদ দ্রুত সরে এসে ইয়াসিবার দুগালে হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–” হুসস! কাঁদে নাহ।
আজ তো আনন্দের দিন।জানো পৃথিবীতে অতিরিক্ত আনন্দ কোনটা একটা পুরুষের জন্যে?
যখন সে জানতে পারে তার ভালোবাসার মানুষটির মাঝে আর একটা ভালোবাসার অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে।তখন ঠিক কতোটা আনন্দ লাগে বলে বুজাতে পারবো নাহ।দেখো এইতো কদিন আগে
জীবনসঙ্গী হিসেবে তোমায় নিয়ে নতুন দিগন্তে পা রাখলাম। এরপর থেকে কিছু স্বপ্ন যোগ হয়ে স্বপ্নময় জীবন গড়া শুরু করলাম। প্রথমে আমরা দুজন। তারপর আমাদের হাতে হাত রাখার জন্য আরেকজন অতিথির আগমন ঘটতে যাচ্ছে। এই জীবনে প্রথম বাবা হবো। আমাদের ঘরে একটি চাঁদ আসবে। সেই চাঁদে আলোকিত হবে পুরো ঘর। আর তাকে নিয়ে আমাদের স্বপ্নময় একটি সংসার হবে।
ধীরে ধীরে আমাদের সন্তান, আমাদের ভালোবাসা(ইয়াসিবার পেটের কাছ থেকে কাপড় সরিয়ে দিয়ে)তোমার গর্ভে বেড়ে উঠছে। তাকে নিয়ে কত পরিকল্পনা করবো।
তুমি ভাবতে পারছো ঠিক কতোটা খুশি আমি।আমাদের একটা ছোট বাবু হবে।ছোট ছোট হাত-পা থাকবে বাবুটার।আমাকে বাবা তোমাকে মা ডাকবে সে কি যে সুখ বলে বুজাতে পারবো নাহ।”
আফ্রিদ ইয়াসিবার পেটে চুমু খেলো।
ইয়াসিবা বাকরুদ্ধ হয়ে আছে।
ওর ভাষা হারিয়ে গিয়েছে।এ কেমন অনুভূতি?
মা হওয়ায় বুজি এতো সুখ?
ইয়াসিবা কিছু না বলে ঝাপিয়ে পড়লো আফ্রিদেত বুকে।
কেঁদে আফ্রিদের বুক ভাসিয়ে দিলো।
আফ্রিদও কিছু বললো নাহ।ঝড়ুক না কিছু সুখের অস্রু।
থাকুক না কিছু অব্যক্ত অনুভূতি।
———————-
অপারেশন রুমে ইয়াসিবার হাত ধরে বসে আছে আফ্রিদ।
এদিকে ইয়াসিবা প্রসব বেদনায় চিৎকার করে কাদছে।
আফ্রিদের নিজের চোখজোড়া ছলছল করছে।
আগে কতো সার্জারি করেছে,কতো মানুষের সন্তান প্রসব করিয়েছে কিন্তু আজ নিজের সন্তানের বেলাই কোন শক্তি পাচ্ছে না সে।হাত কাঁপছে তার।
তাই অন্য ডাক্তার সুমাইয়াকে দিয়েই ডেলিভারি করানো হচ্ছে।
–“আফ..আফ্রিদ! আল্লাহ্ এতো ক..কষ্ট কেন?
আ..আফ্রিদ আ..আমি মরে গেলে আ..আমার সন্তানকে আগলে রা..রাখিয়েন।আয়ায়ায়ায়ায়ায়া!”
–” এসব বলো নাহ ইয়াসিবা কিছু হবে নাহ তোমার।তোমরা দুজনেই সুস্থ্য থাকবে।
ডা.সুমাইয়া কি ব্যাপার এতো সময় লাগছে কেন?আমার ইয়াসিবা কষ্ট পাচ্ছে।”
–” স্যার বাচ্চার মাথা আটকে গিয়েছে।বের করতে সমস্যা হচ্ছে।ম্যাম কে আর একটু জোড়ে পুশ করতে বলুন।আর একটু ধৈর্য ধরতে বলুন।”
সুমাইয়ার কথায় আফ্রিদ করুন গলায় ইয়াসিবাকে বলে,
–” ইয়াসিবা আর একটু শক্তি প্রয়োগ করো।।জোড়েজোড়ে নিঃশ্বাস নেও।ইয়াসিবা ইউ ক্যান ডু ইট।”
আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা জোড়েজোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।কিছুক্ষন পরেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো।সুমাইয়া বললো,
–” অভিনন্দন স্যার এবং ম্যাম আপনাদের মেয়ে হয়েছে।
ইয়াসিবা ঝাপসা চোখে সেদিকে তাকালো।
মুচকি হেসে ক্লান্ত চোখজোড়া সে বুজে ফেললো।
—————-
তোয়ালে জড়িয়ে নিজের মেয়েকে আফ্রিদ কোলে নিয়ে বসে আছে।একধ্যানে সে তাকিয়ে তার মেয়ের দিকে।
এতোটা পূর্ণতা পেয়েটুপ করে আফ্রিদের চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
এইতো শান্তি এইতো সুখ।
পাশেই ইয়াসিবা ঘুমোচ্ছে।
ইব্রাহিম চৌধুরী এর মাঝে এসে ইয়াসিবা আর তার
নাতিকে সে-কি খুশি তিনি।
ইয়াসিবা চোখ খুলে আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আফ্রিদ একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
তবে কি এটা ওর বাচ্চা?ওর আর আফ্রিদের ভালোবাসার চিহ্ন।
–” আমাদের বাচ্চা।” ইয়াসিবার দূর্বল গলা।
ইয়াসিবার গলার আওয়াজ পেয়ে তাকায় আফ্রিদ।
বললো,
–” উঠে গেছো?কেমন লাগছে এখন?”
–” আপনাকে আর আমাদের সন্তানকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।দিন ওকে আমার কোলে দিন।”
আফ্রিদ মুচকি হেসে মেয়েকে ইয়াসিবার কোলে দিলো।
ইয়াসিবা কেঁদে দিয়ে বললো,
–” আমার বাচ্চা।”
আফ্রিদ দু-হাতে ইয়াসিবা আর তার মেয়েকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–” উহু!আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন আমাদের ভালোবাসা।”
থাকুক প্রতিটি ভালোবাসার মানুষ সুখে।
ভালোবাসার এক অথৈ সাগরে ভেসে যাক তারা।
সুখে দুঃখে একে-অপরের কাছা-কাছি পাশাপাশি থাকুক আজীবন।
——————সমাপ্ত————————