#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আরশিকে বন্ধি করে রাখা হয়েছে ছোট একটা ঘরে। ওটা তিন জন ছেলে ছিলো। আসিফ আর দুইজন তার সহযোগি। আরশিকে বন্ধি করে বিকেলেই সেখান থেকে চলে গেলো আসিফ। আর বাকি দুই জন সেই বিকেল থেকে বাড়ির সামনে হাটাহাটি করছে। এখন একজন বসে সিগারেট টানছে।
তখন প্রায় সন্ধা নেমে এলো। দুপুরের ফকফকা রোদের পর সেই বিকেল থেকেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আর এখন ঝড়ো হাওহা বইতে শুরু করলো। সাবিহা একটা ঝোপের আড়ালে বসে আছে আর উঁকি মেরে ওদের কর্ম কান্ড দেখছে।
বিকেলে যখন সে লাঠি নিয়ে ওই ঘরে যাবে ভেবেছিলো, তখন হটাৎ মনে হলো আরশি আইসক্রিম আনতে যাওয়ার সময় ফাইল টা তার কাছে দিয়েছিলো। আর ওটার ভিতর আরশির ফোনও ছিলো। যদিও পরিক্ষার হলে ফোন নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। তবুও প্রায় স্টুডেন্টই ফোন নিয়ে যায়, তবে লুকিয়ে রাখে।
সাবিহা দ্রত ফোন টা হাতে নেয়। দেখে লক করা নেই। কল লিষ্টে যেতেই প্রথমে একটা নাম্বার আসে যেটা সেভ করা, My niramish নামে।
আরশির কাছে এই নিরামিষের গল্প অনেক শুনেছে সে। তাই চিনতে ভুল হলো না নাম্বার টা কার। আর দেরি না করে কল করে সব কিছু খুলে বলে সে। আর সেই বিকেল থেকে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
ক্ষুদায় পেট টায় যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সেই সকালে খেয়ে বেড়িয়েছিলো, এখন অব্দি আর কিছু খায় নি।
সন্ধা পেরিয়ে আধার নেমে এলো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। ছেলে দুটি বাড়ির সামনে চালের নিচে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।
সাবিহা লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ির পেছনের দিক টায় চলে গেলো। দেখে বাতাসের ঝাপটায় ঘরের জানালা গুলো একবার খুলছে আরেকবার বন্ধ হচ্ছে। ঘরটা অন্ধকার, একেবারা ভিন্ন সাইডে ঘর। এদিকটায় কারেন্টের কোনো খাম চোখে পরছে না৷ বিজলির আলোয় বুঝা যাচ্ছে আরশি জানার পাশে দাড়িয়ে জানালা টা ঝাকাচ্ছে। সাবিহা গুটি গুটি পায়ে তার কাছে এগিয়ে গেলো।
আমার ভেতর ছিলো তখন শুধু এখান থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খোজা। হুট করে সাবিহাকে দেখে চমকে উঠলাম আমি। ও এখানে কি করে এলো? সারা শরির ভিজে একাকার অবস্থা। এভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে নির্ঘাত জ্বর উঠবে। সাবিহা জানালার পাশে এসে দাড়ালো। সারা শরির কাপছে তার। দেওয়াল ঘরের উপরে টিন সেট। সেই টিনেড় ঝড়ঝড়ে পানি এখনো তার গায়ের উপর পরছে। আমি অবাক হয়ে বললাম,
– তুই এখানে কি করে এলি? তোকেও কি ওরা তুলে নিয়ে এসেছে?
সাবিহা কাঁপতে কাঁপতে বললো,
– তোকে তুলে আনার সময় আমি অন্য একটা গাড়ি নিয়ে ফলো করতে করতে এখানে এসেছি। তুই কোনো চিন্তা করিস না আরু। আমি ফোন করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। আসিফ এখনো আসেনি হয়তো ঝড় থামলে আসবে। ততোক্ষনে আমি দেখছি কি করা যায়।
আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। জানিনা কি হবে আমার সাথে? সাবিহাকে বললাম,
– তুই এভাবে ভিজছিস, তোর তো জ্বর উঠে যাবে।
– উঠলে উঠুক, তোকে চারা এখান থেকে যাবো না আমি। মরলে এক সাথেই মরবো। আর আশে পাশেও কোনো বাড়ি ঘর নেই যে তাদের কাছে গিয়ে আমি সাহায্য চাইবো। আর শোন, একধম৷ কাঁদবি না। আমি দেখছি কি করা যায়। আর কিছুক্ষন দেখি। এর পর বাইরে থাকা ছেলে গুলোর উপর এটাক করবো। ওদের সাথে পারবো কি না জানি না। কিন্তু পারলে তোকে বের করে নিয়ে দুজন পালিয়ে যাবো। একধম ভয় পাশ না।
এর মাঝেই দরজা খোলার খট খট শব্দ হয়। আমি দ্রুত জানালা বন্ধ করে দিলাম। আর সাবিহাও লুকিয়ে পরলো। একটু পরই আসিফ ঢুকলো ভেতরে। সাথে ছেলে দুটিও। তারা রুমের কোনায় কোনায় মোম বাতি সেট করছে। আমি জড়সড় হয়ে এক পাশে বসে আছি। সারা শরির কাঁপছে আমার।
সব শেষ হলে আসিফ একটা টোন টেনে আমার সামনে এসে বসলো। আমার মুখটা উচু করেতেই আমি এক ঝাটকায় তার হাত সরিয়ে নিলাম। সে ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে বললো,
– তেজ দেখছি এখনো কমেনি। ওই দিন কি বলেছিলি, আমায় দুই পায়ের মাঝ বরাবর ফেরে ফেলবি? হা হা হা,,,,,,
তার বিশ্রি হাসি তে আমার সারা শরির জুড়ে ঘৃনা জাগ্রত হতে থাকলো।
সে আবারও হাসতে হাসতে বললো,
– লাভ নেই, এখানে এমন কেও নেই যে তোকে বাচাতে আসবে। আর তোর সাথে যা যা হবে তারও কোনো প্রমান থাকবে না। কারণ আমার শিকারের কোনো প্রমান রাখি না আমি। বাইরে আরো দুজন আছে। সব মিলিয়ে আমাদের তিন জনেরই জমিয়ে একটা পার্টি হবে। এর পর তোর স্থান হবে কোনো নদী তে। হা হা হা,,,,,,
আবারও হাসতে লাগলো আসিফ।
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। আর বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। মনে মনে ভাবছি, আমার জীবনের আয়ু কি এতো টুকুই?
রিদ ভাইয়ের চেয়ারাটা চোখের সামনে ভেষে উঠছে বার বার। আর চোখ গড়িয়ে পানি পরছে৷ আমার কাঁন্নায় যেন পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে আসিফ।
কিছুক্ষণ পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ ভেষে উঠলো। আসিফ পেছন ফিরে বললো,
– কি হয়েছে?
দরজার ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেষে উঠলো,
– দরজা খোল আসিফ।
আসিফের বুঝতে বাকি রইলো না লোক টা তার বাবা আরিফ সাহেব। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে বললো,
– হটাৎ এখানে কেন এলেন বাবা?
আরিফ সাহেব আমার দিকে একবার চেয়ে আসিফকে বললো,
– মেয়েটাকে কেন তুলে এনেছিস এখানে? মেয়েটার পরিচয় জানিস তুই?
আসিফ একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,
– এতো কিছু জানার সময় নেই আমার, আপনি চলে যান এখান থেকে।
– কুমিল্লা থেকে এম’পি সাহেব ফোন করেছিলো। মেয়েটার কিছু হলে আমাদের বাপ ছেলের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। অলরেডি পদ ত্যাগ এর নির্দেষ দিয়ে ছে সে। এখন মেয়েটাকে ছেরে দে। হয়তো হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে এম’পি কে বুঝাতে পারবো.
আসিফ অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– হোয়াট? এই খবর বাইরে গেলো কিভাবে? আর এম’পি এর সাথে মেয়েটার কি সম্পর্ক? ও মেয়েটার জন্য এতো কিছু করছে কেন?
আরিফ সাহেব টান্ডা মাথায় বললো,
– মেয়েটা কে তুই জানিস? ঢাকায় খুব বড় বিজনেস ম্যান রুদ্র চৌধুরির ছেলের বৌ। ঢাকা থেকে এম’পি সাহেবের কাছে খবর এলো। আর এম’পি ফোন দিয়ে আমায় এসব বললো। আর এটাও বললো, মেয়েটার গায়ে একটা টোকা পরলেও আগামি কাল সকালের সূর্য আমাদের বাপ ছেলের দেখতে হবে না। দেখ বাবা, এম’পি কখনো নিজে থেকে ফোন দিয়ে এভাবে রেগে কথা বলেনি। তুই পরিস্থিতিটা বুঝার চেষ্টা কর।
আসিফ বাবার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
– এতো কিছু বুঝার সময় নেই আমার। গত এক বছর ধরে আরশি আমার শিকার।
কিন্তু আরিফ সাহেব ছেলেকে কিছু না বলে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আমাদের ক্ষমা করে দিও মা, তোমার সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি আমরা। তুমি এখন এখান তেকে চলে যাও, কেও কিছু করবে না তোমায়।
বাচার পথ পেয়ে আর এক মুহুর্তও দেরি করলাম না আমি। দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি। ছুটে বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে গেলাম। বুঝতে পারছি অনেক রাত হয়ে গেছে।
আসিফ রাগ সামলাতে না পেরে বাবার গালে সর্ব শক্তি দিয়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করলো,
– কু*বাচ্চা সামান্য একটা বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারিস না তুই?
ছেলের এমন ব্যবহারে নিচে পরে থম মেরে তাকিয়ে আছে আরিফ সাহেব। রাগে কটমট করতে করতে বিছানায় বসে পরে আসিফ।
আমি বাড়ির পেছনে এসে দেখি একটা গাছের আড়ালে চুপচাপ বসে আছে সাবিকহা। সারা শরিরর ভেজা থর থর করে কাপছে সে। ঝড় একটু আগে থেমে গেছে। গাছের পাতা চুইয়ে পানি পরছে টপ টপ করে। সাবিহার হাত ধরে দেখলাম সারা শরির গরম হয়ে আছে। থাকবেনাই বা কেন? পুরোটা ঝড়ে ভিজেছে সে।
আমি সাবিহাকে ধরে তুললাম। সে কাঁপা গলায় বললো,
– তোর কিছু হয় নি তো? ওরা কিছু করেনি তো তোকে?
– না কিছু করেনি।
– কিভাবে বের হলি?
– পরে বলবো তোকে, এখন এখানে থাকা ঠিক হবে না। চল দ্রুত।
সাবিহাকে ধরে ধরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলাম আমরা দুজন। মেয়েটা না থাকলে হয়তো আজ অনেক কিছুই হয়ে যেত আমার।
একটু হাটতেই মেইন রোড দেখতে পেলাম। এদিকে সাবিহা প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। তবুও তাকে ধরে অনেক কষ্টে মেইন রোডে গিয়ে দাড়ামাম। গাড়ি তেমন চোখে পরছে না। ভেবে পাচ্ছিনা কিভাবে যাবো। এদিকের রাস্তা ঘাট কিছুই চিনিনা।
সাবিহার হাতের মুঠোয় আমার ফোনটা এখনো আছে। বাকি সব কোথায় ফেলে এসেছে কে জানে। একটু আশার আলো দেখতে পেলাম আমি। কিন্তু ফোনটা হাতে নিতেই সেই আশা টাও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি বন্ধ হয়ে আছে। একটা শ্বাস নিলাম আমি। এখন এই মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবো কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। লাইফে কখনো ভাবতেও পারিনি, সৃষ্টি কর্তা কখনো আমায় এমন পরিক্ষায় ফেলবে।
কিছুক্ষন পর একটা কার এসে দাড়ায় আমাদের সামনে। ভয়ে বুকটা আবারও ধুক ধুক করতে লাগলো। ওরা আবার এসেছে কি না? কিন্তু গ্লাস নামাতেই দেখলাম ওরা কেও না। অপরিচিত একটা ছেলে। মাথায় হুডি আর মুখে মাস্ক পরায় চেনা যাচ্ছে না তাকে। হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ করা। ছেলেটা বললো,
– গাড়িতে উঠুন। ভয় পাবেন না। আপনাকে চিনি আমি। আরফিন স্যার এর মেয়ে আপনি। বিপদে পরে এখানে দাড়িয়ে আছেন। গাড়িতে উঠে বসুন বাড়িতে ড্রপ করে দিচ্ছি আপনাদের।
তবুও আমার ভয় কাটছে না। অপরিচিত ছেলে, অপরিচিত কন্ঠস্বর। ছেলেটা আবারও বললো,
– ভয় পাবেন না। নির্ভয়ে উঠতে পারেন। আর আপনার বান্ধবির অবস্তা তো খুবই খারাপ। হয়তো আবারও বৃষ্টি আসতে পারে।
আমি বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিলাম। কপালে যা আছে তাই হবে আজ। সাবিহাকে দরে গাড়িতে বসিয়ে দিলাম। আর আমিও উঠে বসলাম।
,
,
আমাদের বাড়ির সামনে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো ছেলেটা। এতোক্ষনে ভয়টা একটু কাটলো আমার। ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম, মোটেও এতো খারাপ না। তবে ছেলেটা কে তাও বুঝতে পারছি না।
যাই হোক এতো ভাবার সময় নেই আমার। সাবিহাকে ধরে ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলাম আমি।
দেখি বাবা মা বসে আছে ভেতরে। আমাকে দেখেই তারা দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,
– ঠিক আছিস তো মা? কিছু হয়নি তো তোর?
– তোমাদের পরে সব বলছি মা। আগে সাবিহাকে রুমে নিয়ে যাও। আমি জামা নিয়ে আসছি তার জন্য।
সাবিহাকে নিয়ে খালি রুমটায় চলে গেলো মা। আমি আমার রুমের দিকে হাটা দরলাম। রুমে আসতেই আরো অবাক হলাম আমি। ফ্লোরে দুই পা ছড়িয়ে খাটের উপর বসে আছে রিদ ভাই। আমি চুপচাপ অপরাধির ন্যয় মাথা নিচু করে তার কাছে এগিয়ে যেতেই, সে উঠে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো আমার গালে।
ফ্লোরে ছিটকে পরে আমি আহত চোখে তার দিকে চেয়ে রইলাম। সে রাগি স্বরে বললো,
– এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না তুমি? আমায় একটা বার বলতে যে, কোনো ছেলে তোমায় বিরক্ত করতো। একটি বার বলার প্রয়োজন মনে করলে না আমায়?
আমি চুপচাপ ফ্লোরে বসে আছি। হুট করে সে আমার পাশে বসে আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। কপালে অজশ্র চুমু দিয়ে বললো,
– কেন এমন করলে তুমি? আজ তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাচতাম বলো? সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমায় ভালোবাসি আমি। আমার যে বেচে থাকার অক্সিজেন টাই তুমি।
#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
রিদ ভাইয়া কখনো আমার গায়ে হাত তুলবে তা ভাবতেও পারিনি আমি। গালে হাত দিয়ে আহত চক্ষু জুগল তার দিকে দৃষ্টি স্থির করে আছি।
আর তিনি তার মতো করে অনেক কথা শুনিয়ে গেলো আমায়। বেশিক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। দৃষ্টি ফ্লোরে স্থির রেখা বসে আছি।
আবার আচমকাই আমার পাশে এসে বসে আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
– কেন এমন করলে তুমি? আজ তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাচতাম বলো? সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমায় ভালোবাসি আমি। আমার যে বেচে থাকার অক্সিজেন টাই তুমি।
হটাৎ তার এমন পরিবর্তনে অবাক হয়েছি খুব। সে কি বলছে তা কানের পাশ দিয়েও যাচ্ছে না আমার। বিকেল থেকে এখন রাত পর্যন্ত সব কিছু একটা ঘোরের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে এটা একটা স্বপ্ন। একটু পরই ভেঙে যাবে।
,
,
একটা জামা নিয়ে পাশের রুমে চলে গেলাম আমি। একটা চেয়ারে বসে আছে সাবিহা। সারা শরির ভেজা। সাবিহাকে ধরে দাড় করালাম। সে ক্লান্ত শরিরে কপালে হাত রেখে বললো,
– মাথা টা ব্যাথা করছে প্রচুর।
আমি আবারও গায়ে হাত দিয়ে চেক করলাম। জ্বরে পুরে যাচ্ছে গা।
– চল জামা চেন্জ করে নিবি।
– আমায় দে আমি করে নিচ্ছি।
– পারবি?
– হুম,,
সাবিহার বাসা থেকে কল আসছে সন্ধা থেকে৷ কিন্তু উত্তেজনা বসত কেওই ফোন ধরতে পারেনি। হয়তো কয়েক বার বিরক্তও হয়েছে। কিন্তু এখন সব শেষে একটু আগে আবার আসলো। বাবা ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সাবিহার বাবা উত্তেজিত হয়ে বললো,
– আমার মেয়ে কোথায় ভাই জান? সেই সকালে আরু মার সাথে বেড়িয়েছিলো এখনো বাসায় আসেনি। আরু-মা কোথায়? সে কি বাসায় ফিরেছে?
বাবা ঠান্ডা মাথায় তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
– টেনশন করবেন না, আরুর সাথে আমাদের এসেছে সাবিহা। বাড়িতে একটা ছোট অনুষ্ঠান ছিলো। আজ রাত এখানেই থাকবে।
ওনার যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। বাবাকে বললো,
– সত্যি কি আমার মেয়ে আপনাদের বাসায়?
– হ্যা, কথা বলবেন?
– জ্বি তাকে একটু কষ্ট করে দিতে পারবেন? টেনশন হচ্ছে খুব।
বাবা ফোন টা কানের কাছ থেকে একটু নিচে নামিয়ে উচু গলায় মা কে ডাক দিলো।
– আরিশার মা, কোথায় তুমি? সাবিহা কি জেগে আছে, নাকি ঘুমিয়ে গেছে?
মা বাবার রুমে যেতে যতে বললো,
– হ্যা একটু আগে অল্প খেয়ে মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। কার ফোন?
– ওর বাসা থেকে ফোন এসেছে।
– আচ্ছা বলে দিন, আমাদের বাসায় এসেছে, আর এখন ঘুমিয়ে পরেছে।
– হুম,,,,
রাত তখন ১২ টা ছুই ছুই। পাশের বাড়ি থেকে কারো চিল্লাচিল্লির আওয়াজ ভেষে আসছে। বড় কাকা ক্ষেপেছে খুব। চাচিকে নাকি সেই সন্ধা থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ। আমার বিপদের কথা শুনেই নাকি সে পালিয়েছে বাড়ি থেকে। কারণ কয়দিন আগে সে যেটা স্বপ্নে দেখেছিলো তাই ঘটেছে আমার সাথে। তাই ভয় পেয়েছে খুব। অভি ভাইয়ার মৃত্যুর পর চাচা যেমন তাকে ৩ রাত গাছের সাথে বেধে রেখেছিলো। তেমনই আজ হয়তো সারা জীবনের ঘুর হারাম করে দিবে। সেই ভয়ে খবর পাওয়ার সাথে সাথেই বাড়ি থেকে ভেগেছে সে। বড় কাকা তার শশুর বাড়িতে ফোন করে জানতে পারে চাচি সেই সন্ধায় বাপের বা্রি চলে গেছে। চাচাও কড়া গলায় বললো, এক জগ পানি নিয়ে ওর সামনে বসে থাকবেন। ও যেন কিছুতেই ঘুমাতে না পারে। ঘুমালেই একটা অঘটন ঘটায় এই বাড়িতে।
,
,
ঘুম আসছেনা আমার। দুই হাটু ভাজ করে বসে আছি বিছানায়। আমার পাশে সাবিহা গভির ঘুমে। এক দৃষ্টিকে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কাঁন্না করি। সে না থাকলে হয়তো আজ আমার গল্প টা অন্য দিকে মোড় নিতো। মেয়েটা চাইলে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু নিশ্চিৎ বিপদ জেনেও আমায় বাচাতে ছুটে গিয়েছে।
রিদ ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে অনেক্ষন কাঁদতে ইচ্ছে করছে আজ। পরিবারের সবাইকে ধরে অনেক্ষন কেঁদে নিজেকে হাল্কা করার তীব্র ইচ্ছে জাগছে মনে।
এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছিলো আর কারো মুখ বোধ হয় দেখতে পাবো না। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আজ আমি ওখান থেকে বেচে ফিরেছি। নয়তো আগামি কাল সকালে আমার লা*শ ভাসতো কোনো নদীতে বা লুকিয়ে থাকতো কোনো জঙ্গলের মাটির নিচে। আর বেছে থাকলেও সবাই মুখের উপর আঙুল তুলে বলতো ওই তো ধ*র্ষিতা মেয়েটা।
ভাবতেই হাটুতে মুখ গুছে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি।
রাত প্রায় এক টা। হয়তো আজ কেও ঘুমাচ্ছে না। কারো চোখে ঘুম নেই সকলের মুখ দেখেই বুঝা গেছে কে কতখানি দুঃশ্চিন্তার মাঝে সময় পার করেছে।
তেমনই চোখে ঘুম নেই রিদেরও। বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে ফোনটা তার কানের মাঝে ধরা। হয়তো কারো সাথে কথা বলছে গভির রাত জেগে। দুই চোখ লাল হয়ে আছে তার। উত্তেজনায় সারা শরির জুড়ে র*ক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কাউকে ফোনে বললো,
– তুমি এখন কোথায়?
অপর পাশের লোকটা বললো,
– আপাততো হোটেলে আছি।
রিদ একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,,
– ওরা যতক্ষন শান্তিতে ঘুমাবে ততোক্ষন আমার চোখে ঘুম আসবে না।
বিপরিত মানুষ টা বললো,
– সকালের আগেই কাজ হয়ে যাবে।
– গুড,,, আর শুনো, জানে মা*রার দরকার নেই শুধু এতটুকুই বুঝিয়ে দিবে যে কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিলো।
– আচ্ছা। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।
রিদ বেলকনিতে হাটতে হাটতে বললো,
– তোমার ফোন না আসা অব্দি আমার ঘুম আসবে না।
– আচ্ছা,,,,
ফোন রেখে রুম থেকে বের হয়ে আসে রিদ। আরশি যেই রুমে আছে ওই রুমের দরজার কাছে এসে দাড়ায়। ভেতরে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না। কারণ ভেতরে আরশি একা নয়। অন্য একটা মেয়েও আছে তার সাথে। তাই হুট করে আর ঢুকে যাওয়া যায় না। দরজায় টোকা দিতে গিয়েও থেমে গেলো। কি ভেবে আবার উল্টো রুমের দিকে হাটা ধরলো। বেলকনিতে এসে একটা শ্বাস নিলো সে। হয়তো আরশিকে একটু দেখতে মনটা বেকুল হয়ে আছে। কতো ভয়েই না ছিলো সে।
তখন ভোর সারে চার টা। বেলকনির গ্রিল ধরে এখনো দাড়িয়ে আছে রিদ। চোখ দুটু এখনো লাল হয়ে আছে। এটা তোর ছোট বেলার সমস্যা। রাগ হলেই চোখ দুটু লাল হয়ে যায় তার। তার উপর সারা রাত এক সেকেন্ডও ঘুমায় নি।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করলো। তখন ফোনটা বেজে উঠে,
– কাজ হয়েছে?
– হুম,,,,
– আচ্ছা তুমি হোটেলেই থেকো বের হওয়ার দরকার নেই। দুপুরের পরই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো আমরা।
– আচ্ছা।
কল কেটে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো রিদ। এবার যেন রাজ্যের সমস্ত ঘুম একটু একটু করে আসতে শুরু করেছে।
,
,
চার রাস্তার মোড়ে তিনটা ছেলে পরে আছে। সারা শরির র*ক্তাক্ত। সারা এলাকায় খবর ছড়িয়ে গেলো চেয়ারম্যান এর ছেলে আর তার সাথের দুইজন কে কারা মে*রে চার রাস্তার মোড়ে ফেলে গেছে। র*ক্তাক্ত অবস্থায় দুইটা শুয়ে শুয়ে গোগাচ্ছে বাকি একটা শুয়ে আছে লম্বা হয়ে।
ওদেকে ঘিরে চার পাশে মানুষের ভির। কেও তাদের কাছে যাচ্ছে না। কিছুক্ষন পর ওখানে চেয়ারম্যান এর গাড়ি দেখে সকলে সরে গেলো। আরিফ সাহেব ছুটে ছেলের পাশে গিয়ে বসলো। ছেলের জন্য প্রায় পাগল হয়ে আছে সে। অথচ এই ছেলেই গতকাল রাতে তাকে থাপ্পর মেরেছিলো। কিন্তু সকাল হতেই ছেলের বিপদ শুনে সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো তার। বাবা তো বাবাই হয়। ছেলে মেয়ে যতই কষ্ট দিক, তাদের বিপদ শুনলে সবার আগে মা বাবাই কেঁদে উঠে।
“ওরা এখনো ম*রেনি।”
দুজন হাতেল পালস চেক করে বললো। আরিফ সাহেব দ্রুত গাড়িতে উঠিয়ে তাদের নিয়ে হসফিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। এম্বুলেন্স আসার অপেক্ষা করছে না সে।
,
,
সকাল ৯ টা ঘুম ভেঙে গেলো রিদের। এর আগে মা এসে দুইবার ডেকে গেছে। উঠছেনা দেখে আর ডাকেনি। বিষয় টা সহজ ভাবে নিলেও একটা জিনিস সহজ ভাবে নিতে পারলো না সে।
কয়েক মাস আগে যখন আরশি তার কাছে ছিলো। তখন সকাল হতেই আরশির অত্যাচার শুরু হতো। পাশে বসে ডাকতে থাকতো। উঠতে না চাইলে টেনে উঠাতো, নয়তো গ্লাস এনে মুখে পানি ছিটিয়ে মারতো। সেই ১০-১২ দিন তাকে কম জ্বালায় নি মেয়েটা।
কিন্তু আজ একবারের জন্যও ডাকতে আসলো না। গত কাল রাতেও আরশিকে এতো কথা বলেছে তবুও কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর আজ সে আমার কাছে আসছে না।
বিছানা থেকে নেমে চোখ কঁচলাতে কঁচলাতে রুম থেকে বের হলো সে। ড্রয়িং রুমে বাবা-মা, ফুফা-ফুফি আর আরশির বান্ধবি টা বসে আছে। সবাইকে গত কালকের পুরো কাহিনি বিস্তারিত বলছে। আরশি এতোক্ষন ছিলো সেখানে। হয়তো ভালো লাগছে না দেখে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। তার সাথে তো তেমন বেশি কিছু হয়নি। তবুও সবার সামনে দারাতে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে তার। খুব নিচু মনে হচ্ছে আজ।
রিদ রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। আরশি এখানে নেই মানে রুমেই আছে। রুমে প্রবেশ করে কাউকে না দেখে বেলকনিতে চলে গেলো। দেখে আরশি মন মরা হয়ে দাড়িয়ে আছে। এগিয়ে আরশির পাশে গিয়ে দাড়ালো ভেবেছে হয়তো আরশি কিছু একটা বলবে। না হয় কিছু একটা করে বসবে। হয়তো কেঁদে দিবে নয়তো জড়িয়ে ধরবে। কারণ মেয়েটার আবেগ সম্পর্কে অনেক ধারনা আছে তার। খুব বেশি আবেগি মেয়েটা।
কিন্তু আজ যেন সব আবেগ কোথায় হারিয়ে গেলো। চুপচাপ সেখান থেকে চলে যেতেই রিদ হাত টা ধরে ফেলল। আরশির মাঝে অবাক হওয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। সে একেবারে শান্ত। শান্ত গলায় বললো,
– নাস্তা করেছেন?
রিদ ছোট করে জবাব দিলো,
– না, মাত্র উঠলাম,,,,
– আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নিয়ে আসছি।
বলেই চলে গেলো আরশি। রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। এমন পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিৎ, তা জানেনা সে। সব কিছুই যেনো আজ তার কাছে শুধুই একটা দির্ঘশ্বাস।
To be continue,,,,,
To be continue,,,,,