অনুভূতিহীণ পর্ব -২১+২২

#অনুভূতিহীন (পর্ব ২১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

নির্জনের এমন ভয়ঙ্কর চাহুনিতে রীতিমতো সারা শরির কাপতে লাগলো আমার। এক পা এক পা করে পিছিয়ে আমি দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। ভয় ও কাঁপুনি তে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা আমার।
লেপটপ হাতে সোফায় বসে ছিলো রিদ ভাই। লেপটপ টা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। দৌড়ে নিচে নামে হুট করে সে সামনে পরায় জড়িয়ে ধরলাম তাকে। সারা শরির কাঁপছে আমার। কথাও বলতে পারছিনা ঠোঁট দুটুও কাঁপছে খুব।
আমার এমন অবস্থায় সে কপির টপিক বাদ দিয়ে আমায় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আমায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে দুই গালে হাত রেখে বললো,
– এমন করছো কেন, কি হয়েছে তোমার?
আমি হাত দিয়ে ছাদের দিকে ইশারায় দেখিয়ে বললাম,,
– ছা ছা ছাদে,,,
সে আরো উত্তেজিত হয়ে বললো,
– ছাদে কি?
– স স সে আমাকে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলো।
সে এবার আমার দুই কাধে হাত রেখে ঝাকিয়ে বললো,
– আগে শান্ত হও তুমি। দেখ আমি তোমার সামনে, কেও কিচ্ছু করতে পারবে না তোমাকে।

তার এমন আশ্বাসে একটু ভরসা পেলাম আমি। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও সারা শরির এখনো কাঁপছে। এর মাঝে গর গর করে তাকে বলে দিলাম,
– নি নির্জন ভাই আমাকে ছাদে গু/লি করে মে/রে ফেলতে চেয়েছিলো।
আমার কথায় এবার ভুবন কাপিয়ে হো হো করে হেসে উঠে তিনি। হাসতে হাসতে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আর ইউ সিরিয়াস? কিন্তু কিভাবে? গত দুই দিন ধরে তো নির্জন ঢাকার বাইরে। মানে তুমি দিনেও জেগে জেগে দুঃস্বপ্ন দেখ আরশি?
বলেই ওনি আবারও হাসতে লাগলেন।
আমি আবারও তাকে করুন গলায় বলতে লাগলাম,
– বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার? আমি নিজ চোখে তাকে দেখেছি। মাথায় লম্বা লম্বা কালো চুল, গালে খোচা খোচা দাড়ি, চোখ দুটু হালকা নীলচে রঙের আর ডান চোখের নিচ বরাবর গালে একটা কা/টা দাগ আছে। ও এখনো ছাদে আছে, বিশ্বাস না হলে চলুন আমার সাথে।
আমার এমন বর্ণনায় ওনার হাসি মুখ টায় এবার একটু চিন্তার ছাপ ভেষে উঠলো। আমার হাত ধরে ছাদের দিকে হাটা ধরলো সে। আমিও তার সাথে যাচ্ছি ভয়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে। ছাদে আসতেই আমি ওনার পেছনে লুকিয়ে লুকিয়ে হাটতে লাগলাম।
কিন্তু ছাদ পুরোপুরি স্বাভাবিক। রিদ ভাই আমায় নিয়ে পুরোটা ছাট হেটে দেখালো। কারো কোনো অস্তিত্ব নেই ছাদে।
আমার সন্দেহ ভাঙছে না দেখে রিদ ভাই ফোন বের করে নির্জনকে ফোন দিলো। একবার রিং হতেই রিসিভ করলো। আর রিদ ভাইয়া স্পিকার অন করে দিলো যেন আমিও শুনতে পাই।
– হ্যা নির্জন কোথায় তুমি?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
– কেন আপনি জানেন না? দুই দিন আগে অফিসের কাজে চট্টগ্রাম এসেছি আমি। আগামি কাল সকালেই ঢাকায় ব্যাক করবো।

রিদ ভাইয়া আমার দিয়ে চেয়ে চোখ নাচিয়ে উঠলো, যার অর্থ ‘কি বুঝলে?’
কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি বিশ্বাস যোগ্য নয়। কারণ নির্জনকে আমি নিজের চোখে দেখেছি ছাদে। আমি এগিয়ে গেলাম যেখানে নির্জন দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো। নিশ্চই ওখানে সিগারেটের কোনো ছাই পাওয়া যাবে।
ওই কর্নারে গিয়ে পায়ের উপর ভর করে বসলাম আমি। তৃক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করতে লাগলাম, কোনো ছাইয়ের চিহ্ন পাওয়া যায় কি না। কিন্তু না, আশে পাশে এমন কোনো চিহ্ন চোখে পরেনি আমার। নিরাশ হলাম আমি। তৃক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষ নির্জন। গেলো গেলো সব প্রমান মুছে দিয়ে গেলো।

আমার কানের পাশে ভাও সুচক একটা শব্দ হতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম আমি। আর বিপরিতে ভুবন কাপিয়ে হাসছে রিদ ভাই। মনে হচ্ছে হাসির শ্রষ্ঠ কৌতুক টি পড়েছে সে। আমি আবারও রিদ ভাইয়ের দিকে চেয়ে করুন গলায় বললাম,
– বিশ্বাস করুন, আমি ভুল কিছু দেখিনি। স্পষ্ট দেখেছি আমি।
আমার কথা শুনে রিদ ভাই আবারও হাসিতে গরাগড়ি খাচ্ছে। আমি এবার হাল ছেরে দিলাম। কারণ এখন একশ টা প্রমান তার সামনে হাজির করলেও সে বিশ্বাস করবে না। তবে আমি যা দেখেছি সেটাই সত্যি।
এর মাঝে রিদ ভাই এসে আমার দুই গালে আলতো করে হাত রেখে বললো,
– দেখো আরশি আমি বুঝতে পারছি যে খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে তুমি সময় কাটাচ্ছে। তোমার উপর দিয়ে পর পর দুইটা ঝড় বয়ে যাওয়ায় নিজের মানসিক ভারসাম্যের ব্যঘাত ঘটছে। আর তুমি যা মনে মনে ভাবছো, তোমার মনে হচ্ছে সেগুলোই তোমার চোখের সামনে ভেষে উঠছে। এগুলো সবই তোমার দুঃশ্চিন্তার ফল। এখন তোমার এসব দুঃশ্চিতায় ভেঙে পরার সময় নয়। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়। যারা অন্যায় করেছে তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে। তুমি এখন তোমার মাঝে নেই, তোমার মাইন্ড রিফ্রেশ এর প্রয়োজন। এই কয়েকদিনের মাঝে আমি সময় বের করে তোমার পছন্দের জায়গায়ই ঘুরতে যাবো। তোমাকে এমন বিষণ্ন একধম মানায় না। আমি আমার সেই আগের দুষ্ট হাসিখুশি আরশিকেই চাই। সব সময় হাশিখুশি থেকে আমাকেও ভালো রেখো।

বলেই আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন সে। আমি এখনো নিজের দেখাকে অবিশ্বাস করতে পারিনি। যা দেখেছি একটুও ভুল দেখিনি আমি।

কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক। আমি নিজে বিশ্বাস করি, নির্জনের ভিতর নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। তা না হলে ওর চেহারা দেখায় ও আমাকে মে/রে ফেলতে চাইবে কেন?
গভির রাত, একপাশে কিছু রং পেন্সিল আর সামনে কিছু সাদা কাগজ নিয়ে বসে আছি। নির্জনের চেহারা টা এখনো চোখের সামনে ভাসছে। হাতের পেন্সিন টা ঘুরাচ্ছি আর চেহারা মনে করে একটু একটু করে আঁকছি। আজ সারা রাত জেগে হলেও স্কেচ টা কমপ্লিট করবো আমি।

—————-

– আমার বয়স যখন ২০ বছর ছিলো তখন নির্জনকে বাবা আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছিলো। ইন্টার পাশ করেচিলো তখন সে। বাবাকে একদিন অফিস শেষে বাসায় আসছিলো। তখন কিছু চিনতাই কারি ধরে তার থেকে সব কিছু নিয়ে গিয়েছিলো। গাড়িটা অব্দি নিয়ে গেলো। আমাদের ড্রাইভারটাও ওই ছিনতাই কারিদের দলের একজন ছিলো। এর পর ওদের সাথে তাকেও আর খুজে পাওয়া যায় নি। বাবাকে মে/রে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলো। আর ওই দিন নির্জন বাবাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
ওখানেই তাদের পরিচয়। নির্জনের কেউ ছিলো না। এতিম সে, এর ওর কাজ করে ইন্টার অব্দি পড়েছে সে। এর পর নিজে চলার মতো সামর্থ ছিলো না। তাই বাবা তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। নির্জন আমার সমবয়সি ছিলো, বাট কখনো তার সাথে বন্ধু সুলভ সম্পর্ক তৈরি হয় নি। কারণ সে একা থাকতো খুব গম্ভির। এখনের মতো নিজেকে লুকিয়ে রাখতো আগে থেকেই। বাবা চেয়েছিলো তার পর আমি তার বিজনেসের হাল ধরি। বাট আমার ওসবে কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না। আমার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে মানুষদের সেবা করা।
ধিরে ধিরে নির্জনকেও বাবা নিজের ছেলের মতো দেখতে শুরু করলো। বাবা নিজেই তাকে ভার্সিটি ভর্তি করালো। তার পড়ািলেখা শেষ করালো। ধিরে ধিরে নির্জন বাবার সাথে ব্যবসায় জড়িত হয়। বাবাও এখন মনে করে তার দুইটা ছেলে। এক ছেলে ডাক্তার আরেক ছিলে বিজনেস করে। নির্জনও আমার বাবাকে এখন মাঝে মাঝে বাবা বলে ডাকে।

এক নাগারে কথা গুলো বলে গেলো রিদ ভাই। আমি চুপচাপ বসে শুনছিলাম। তারপর আগ্রহ নিয়ে বললাম,
– আচ্ছা সে সব সময় নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখে কেন?
– এটা আমিও জানিনা, অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিছু বলেনি। এর পর আমি ভাবলাম হয়তো এটা তার একটা অভ্যাস।
আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম,
– কিন্তু আমার তো তাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।
আমার কথায় একটু হাসলো রিদ ভাই। তারপর বললো,
– এটা তোমার মনের ভুল। প্রথম প্রথম এমন দেখছো তো, তাই তোমার এমনটা মনে হচ্ছে। পরে দেখবে সব মানিয়ে নিতে পারবে।

আমি কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম। এই মানুষটাকে আমি যাই বলি কিচ্ছু বিশ্বাস করবে না সে। তাই চুপচাপ উঠে গেলাম, রুম থেকে বের হতে হতে বললাম,
– পথের যেদিন পথ শেষ হয়ে যায়, বি-পথ সেদিন হাসে।
তেমনি করে কিছু বিপদ ঘড়ির কাটার ন্যায় একই পথে ফিরে আসে।

To be continue……#অনুভূতিহীন (পর্ব ২২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আরিশা আপুর ছেলে হলো গতকাল। সেই খুশিতে গ্রামের বাড়িতে একশ কেজি মিষ্টি পাঠিয়েছে দুলাভাই। আমিও গত কাল থেকেই আরিশা আপুর সাথেই হসপিটালেই ছিলাম। রিদ ভাইয়া খাবার নিয়ে এসেছিলো।
আরিশা আপুর সাথেই বসে আছি আমি। সেলাইন চলাকালিন অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে আরিশা আপু। আর আমি ব্যাস্ত আরিশা আপুর ছেলেকে নিয়ে। ছোট বেলা থেকেই বাচ্চা খুব পছন্দ আমার। বাচ্চা দেখলেই কোলে নিয়ে গাল ভর্তি চুমু দিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। আরিশা আপুও ছিলো এমন। এই নিয়ে আমাদের দুই বোনের মাঝে ছোট বেলায় প্রায়ই ঝগড়া হতো। বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে আর তাদের বাচ্চা থাকলে, আমার আর আরিশা আপুর মাঝে কাড়াকাড়ি চলতো।
এক সময় আরিশা আপু পরাজিত হয়ে দাত কিড়মিড় করে বলতো,
– এক সময় আমারও কিউট কিউট বেবি হবে দেখিস। তখন তোকে ধরতেও দিবো না, হুহ্,,,
ঝগড়ার সময় প্রতি উত্তরে আমি বলতাম,
– তোর একটা হলে আমার দুইটা কিউট বেবি হবে। আর তোর দুইটা হলে, আমার চার টা হবে। আর আমার গুলো হবে কিউট কিউট। আর তোর গুলো হবে সব উগান্ডার মতো।
এর মাঝে আমার দাদি আবার পোড়ন কাটতো,
– আজকাল কার ছেড়ি গুলা লাজ লজ্জার মাথা খাইছে। এই বয়সে বাচ্চা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে দিছে। আচ্ছা মেনে নিলাম তোগো ডজন ডজন বাচ্চা হইবো,,, কিন্তু বাচ্চা কেমনে হয় তা তোরে দুজন মিলে আমারে বুঝা।

তবে ছোট বেলায় আরিশা আপুকে ঝগড়ার সময় যেই অভিশাপ টা দিতাম তা পুরন হয় নি। কারণ অরিশা আপুর বেবি উগান্ডার মতো হওয়ার বিপরিতে কতো কিউট হয়েছে। ইচ্ছে করছে আরিশা আপুর সাথে এটা নিয়েও কাড়াকাড়ি শুরু করে দিই। কিন্তু এখন তো আর ছোট নেই।
ছোট বেবিটার হাত গুলো বার বার ছুয়ে দিচ্ছি আমি। কি সুন্দর ছোট ছোট দুইটা হাত। মাঝে মাঝে চুমুও দিচ্ছি ওই হাত গুলো তে।

এর মাঝে খেয়ালই করিনি দুলাভাই আর রিদ ভাইয়া কখন কেবিনে ঢুকে গেলো। কিছু ফ্রুটস হাতে এক পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে রিদ ভাই। আার তার পাশে দুলাভাই আমার কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। তা খেয়াল করে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে এক পাশে দাড়িয়ে গেলাম। দুলাভাই হেসে রিদ ভাইকে বললো,
– আরিশার মুখে অনেক কাহিনি শুনছি দুই বোনের। সেই হিসেবে এবার আমার শালিকাকে খুশি করার দায়িত্বটা নিয়ে নাও।

লজ্জায় মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার। আমার টা নাহয় মানা যায় আমি মেয়ে মানুষ লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রিদ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি সে ফ্রুটস গুলো রেখে ওখান থেকে হাওয়া।
দুলাভাই দুষ্টুমি করে একটা কথা বললো। আর রিদ ভাই প্রতি উত্তরে কিছু বলবে তা না, লজ্জায় সেখান থেকেই কে/টে পরলো। ব্যাটা নিজেকে যতই রোমান্টিক প্রমান করতে চায়না কেন? বেচারা দিন শেষে আস্ত একটা নিরামিষ।

আরিশা আপুকে আজ নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। আমি আরিশা আপুর ছেলেকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছি। রিদ ভাই পাশে এসে বললো,
– এবার দিয়ে দাও। আমরা নাম রাখার দিন আবার যাবো৷ কিছু সময় অপেক্ষা করো এর পর নিজের বাচ্চা সামলাতেই বাচ্চার স্বাদ মিটে যাবে তোমার।
,
,
হসপিটাল থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতেই মামি বললেন ফ্রেশ হয়ে নিতে। তার মুখ ও কথা বার্তা কেমন গম্ভির মনে হচ্ছে আমার কাছে। কারণ টা আমার অজানা।
রুমে এসে কাপর চেন্জ করে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম আমি। হসপিটাল থেকে ফিরে আসায় গরম ও অস্বস্থি লাগছিলো খুব। ওরনা ফেলে শাওয়ার টা অন করে চোখ বন্ধ করে নিচে দাড়িয়ে রইলাম আমি। ভিজে ধিরে ধিরে ঠান্ডা হচ্ছে শরির টা।
তখনই হুট করে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো রিদ ভাই। পরনে একটা টাওয়াল ব্যাতিত আর কিছুই ছিলো না। তাকে দেখে ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম আমি। আমি কোমরে হাত রেখে বললাম,
– আপনি না একটু আগে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছেন, এখন আবার ঢুকলেন কেন?

আমার কথার কোনে উত্তর না দিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো সে। আমার দুই পাশে দুই হাত দেওয়ালে রেখে নিজের মাঝে বন্ধি করে বললো,
– নিজের বৌ এর সাথেই তো আছি। অন্য নারীর কাছে তো যাই নি। তাহলে প্রব্লেম কোথায়?
আমি তার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে ছিলাম। তার কথা শেষ হয়েই বললাম,
– আমি কি বলেছি কোনো প্রব্লেম হয়েছে? আমি তো যাস্ট জিজ্ঞেস করলাম।
ওনি একটু মুচকি হেসে বললো,
– আচ্ছা প্রব্লেম যেহেতু নেই তাহলে আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি।
বলেই সে আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমার মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে আনতেই আমি হাত দিয়ে তার ঠোঁট চেপে ধরে মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বললাম,
– এখন না,,,
– কেন,,,
– আমার ইচ্ছা,, আর আপনি সুজুগ নিতে এসেছেন তাই না?
আমার কথায় মুহুর্তেই তিনি দেওয়ালে ভর থেকে সোজা হয়ে দাড়ালো। পাশে রাখা তার ধোয়া পেন্ট ও টি-শার্ট নিয়ে বললো,
– একটা ফোনের আওয়াজ শুনে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আর এখন এখানে এসেছি পেন্ট আর টি-শার্ট ধুয়ে রেখেছিলাম ওগুলো নিয়ে ছাদে শুকাতে দিবো তাই। জানতাম না তুমি ভেতরে ঢুকেছো। আর এমন অসময়ে আর বেজায়গায় সুজুগ নেওয়ার মতো লো মেন্টালিটির মানুষ আমি না। আমি যাস্ট তোমায় একটু বাজিয়ে দেখছিলাম, এর চেয়ে বেশি কিছু না।
বলেই ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সে। আমি ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলাম। কিছুই মাথায় ঢুকছে না৷

রাতে খাওয়ার সময়ও খেয়াল করলাম মামির মুখ টা গম্ভির হয়ে আছে। আমি আবার অস্বস্থি বেশিক্ষন চেপে রাখতে পারি না। মামির পাশে গিয়ে করুন শুরে বললাম,
– কোনো বিষয়ে আমার উপর রাগ করেছো মামুনি?
মামি খেতে খেতে স্বাভাবিক গলায় বললো,
– আমি কারো উপর রাগ করিনি।
এর মাঝে মামা পোড়ন কেটে বললো,
– আমিও খেয়াল করছি এই দুই একদিন তোমার মুখটা বাংলা পাঁচ এর মতো করে রেখেছো। আরে বাবা কি হয়েছে না বললে আমরা বুঝবো কিবাবে?
তখনই মামি মামার দিকে চেয়ে বললো,
– আমার কি ইচ্ছে করে না, নাতি-নাতনির মুখ দেখতে? আমার কি ইচ্ছে করে না, আমার নাতি-নাতনি নিয়ে খেলতে? দুই দিন আগেই তো আমার ভাইয়ের আরেকটা মেয়ের কি সুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা হলো। আর এদিকে আমি ছেলে বিয়ে করিয়েছি আজ কতো দিন হলো, এখনো সু-খবরটা পর্যন্ত পেলাম না।

আচমকাই মামির এমন কথায় বিষম উঠে গেলো রিদ ভাইয়ের। মামা তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে পিঠে মেসেজ করে দিচ্ছে। কাজের মেয়েটাও দাত কেলিয়ে হাসছে। সব মিলিয়ে একটা লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে পরে গেলাম আমি। ব্যাপার টা সত্যিই লজ্জার। খুব লজ্জার।
,
,
এর মাঝে আরো দুই দিন কেটে গেলো। মানিক চাচাকে দিয়ে বড় বক্সে একটা জিনিস নিয়ে আসলাম আমি। ভেতরে কি আছে তা এখন বলা যাবে না৷ বিষয় টা সারপ্রাইজ।

সেই সন্ধা থেকে রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ করে রেখেছি। মামুনি তখন বসে বসে টিভি দেখছিলো। এর মাঝে রিদ ভাই বাসায় এলো। রুমের সামনে আসতেই দেখে দরজা ভেতর থেকে লক করা। কিছুটা সাইডে গিয়ে গ্লাস ভেদ করে দেখার চেষ্টা করছে ভেতরে কি চলছে। কিন্তু পর্দা টেনে রাখায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
দরজায় হাত দিয়ে দুইবার টোকা দিয়ে আমায় ডাক দিলো রিদ ভাই। আমি সোজাসুজি ভাবে বললাম, এখন রুমে আশা যাবে না।
ওনি একটু উচু গলায় বললো,
– আরে আমি ফ্রেশ হবো, দরজা খোল বলছি।
আমিও উচু গলায় জবাব দিলাম,
– খুলবো না, অন্য কোথাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি বাইরে জামা কাপর সব রেডি করে রেখেছি।

নিরাশ হয়ে মায়ের কাছে এসে বসলো রিদ। তারপর বললো,
– আরশি কি শুরু করেছে দেখেছো মা?
মা চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বললো,
– বাসায় কিসের একটা বড় বাক্স নিয়ে আসলো। এর পর সেই সন্ধা থেকেই রুমের ভেতর কি যেন করছে। কাউকে যেতে নিষেধ করেছে।

রাতে খাওয়ার সময় রুমের লাইট অফ করে দরজা লাগিয়ে খাবার টেবিলে এসে বসলাম। রিদ ভাইকে ফিসফিস করে বললাম,
– আমি না বলা অব্দি রুমে ঢুকবেন না।
এর পর খাওয়া শেষে রুমে ঢুকেই আবার দরজা লক করে দিলাম। আজ অদ্ভুত এক ইতিহাস রচনা করতে চলেছি আমি।
প্রায় এক ঘন্টা পর রিদ ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম, এবার রুমে আসতে পারেন।

ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় সারে এগারো টা বাজে। আর এই সময়ে রুমে ঢুকার অনুমতি মিললো। বুকে হাত দিয়ে একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলো রিদ। না জানি মহারানী আজ কি কান্ড ঘটিয়েছে।

দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই একটা ঝাটকা খেলো রিদ। সারা রুম জুড়ে কাঁচা ফুলের সুবাস বিচরন করছে। আর রুমের মেইন লাইট অফ করে ডিম লাইট অন করে রাখলো। সেই ডিম লাইটের লাল আলোয় বুঝা যাচ্ছে রুমটা নানান রকম ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আর ঠিক খাটের মাঝখানে হালকা সাজে বসে আছে আরশি।

রিদ ভাইয়া হেটে আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি খাটের মাঝখানে। আমার ধারণা এখন সে আমার পাশে এসে বসে থুতনিতে হাত রেখে আমার মুখটা একটু দেখে নিয়ে প্রশংসা করবে। আর তার জন্য অধিক আগ্রহ নিয়ে বসে আছি আমি।
কিন্তু আমার সব ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে রিদ ভাই বললো,
– বাহ্, শুনলাম ছোট বেলায় নাকি আরিশা’র সাথে বেবি নিয়ে ঝগরার সময়ও প্রতিযোগিতার কথা বলতে। তার একটা হলে তোমার দুইটা হবে। তার দুইটা হলে তোমার চার টা হবে। এখন তো দেখছি সত্যি সত্যি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার জনয় রেডি হয়ে গেছো।

বলেই হাসতে লাগলেন উনি। রাগে আমার দুই কান জুড়ে যেন আগুনের ধোয়া বের হচ্ছে। প্রতিযোগিতার কথা তো তাকে কখনো বলিনি। তাহলে সে কিভাবে জানলো?
আচ্ছা শুনছে ভালো কথা, তাই বলে কি এভাবে ইনসাল্ট করতে হবে? ধুর এক কথায় আমার সব ফিলিংস নষ্ট করে দিলো এই নিরামিষের বাচ্চা।

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here