অনুভূতিহীণ পর্ব -১৯+২০

#অনুভূতিহীন (পর্ব ১৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

এক কাপ চা হাতে আমার পাশে এসে দাড়ালো রিদ ভাই। আমি ফোন রেখে বিষণ্ন মনে ছাদের কর্নিশ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রিদ আমায় বললো,
– মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন, এ্যানি প্রব্লেম?
আমি গম্ভির মুখে বললাম,
– সাবিহার বিয়ের কথা চলছে।
আমার কথায় ওনি যেন খুব আনন্দ পেয়েছে। হেসে বললো,
– বাহ্ কনগ্রেচুলেশন।
– কনগ্রেচুলেশনের কিছু নেই, সে বিয়েতে রাজি না।
উনি একটু ভ্রু-কুচকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। হয়তো কারণ টা জানতে আগ্রহি। তার দৃষ্টি বুঝতে পেরে আমি বললাম,
– সে আমাদের এলাকার সাব্বির ভাইকে ভালোবাসে। আর চাচা তাদের সম্পর্ক মেনে নিচ্ছে না। কারণ সাব্বির ভাই বেকার। মাস্টার্স কমপ্লিট করে অনেক দিন ধরে চাকরির খোজ করছে বাট কোথাও চাকরি হচ্ছে না। তাই একটু আগে সাবিহা ফোন দিয়ে কাঁন্নাকাটি করছিলো।
রিদ ভাই আবারও চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
– সে এখন কি চায়?
– সে সাব্বির ভাইকে ছারা আর কাউকে বিয়ে করবে না। আর চাচা বলেছে সাব্বির ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে দিবে না৷ কারণ সাব্বির ভাইয়ের কোনো চাকরি নেই।
আমার কথায় তার চোখে মুখে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তো তোমার কি উচিৎ না তোমার বান্ধবিকে হেল্প করার? তোমার দুঃসময়ে সে’ই তো তোমার পাশে ছিলো।
আমি মন খারাপ করে বললাম,
– আমি চাই কিছু করতে, বাট কি করবো বুঝতে পারছি না৷
সে চা শেষ করে বললো,
– ছেলেটার নাম কি বললা? ওহ্ হ্যা সাব্বির, তাকে বলো ঢাকায় আসতে, আর বলো বাবার অফিসে একটা সিভি জমা দিতে। বাকি সব বাবাকে বলে রাখবো আমি।
তার একটা কথায় মুহুর্তেই যেন আমার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দিয়ে উঠলো। এতো সহজেই একটা পথ পেয়ে যাবো তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো।
আমি হাস্যজ্জল মুখে বললাম,
– আচ্ছা আমি আজকেই বলবো।
সে এবার পুরোপুরি আমার দিকে চেয়ে বললো,
– আচ্ছা বিয়ের আগে তুমি এমন কোনো রিলেশনে ছিলো না তো?
তার এমন প্রশ্নে আমার একটু রাগ হলো। একটু রাগি লুক নিয়ে বললো,
– রিলেশনে থাকলে কি আপনাকে বিয়ে করতাম? রিলেশন নিয়ে আমি কখনো ভাবতাম না। আমার একটাই ডিসিশন ছিলো যে আমার কপালে লিখা আছে বিয়ের পর তাকেই শুধু ভালোবাসবো। তাই কখনো রিলেশনে যাওয়া হয়নি।
– আচ্ছা, গুড।
– হুম, ওসব রিলেশনে জড়ালে কোনো কালেই ভালো থাকতে পারতাম না। এখন যেমন আছি ভালোই আছি। আমিও আপনাকে ভালোবাসি আর আপনিও আমাকে ভালোবাসেন। আর কি লাগে বলুন?
মুহুর্তেই ওনার ভাব চেন্জ হয়ে গেলো,
– আমি কখনো বলেছি তোমায় ভালোবাসি?
ওনার কথায় যেন মুখ টা হা হয়ে গেলো আমার, বলে কি এই ছেলে। এই কয়দিনে কম করে হলেও দুই তিন বার বলেছে, আর এখন জায়গায় পল্টি?
আমি আর কিছু বলার আগেই ওনি হাটা ধরলেন। আমি বির বির করে বলতে লাগলাম,
– সালা, তোর তো ডাক্তারি না করে এফ’ডি’সি তে যাওয়া উচিৎ। এতো অভিনয় এফ’ডি’সি তে কাজে লাগালেও এতো দিনে অনেক বড় অভিনেতা হয়ে যাইতি। খবিস একটা।

দুপুরের জন্য রান্না করছিলাম। কাজের মেয়েটা ছুটিতে গেছে। আর মামিকে বললাম আজ আমি রাঁধবো। এবাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছ থেকে মোটামুটি রান্না শিখেছি। তখনি তার আগমন ঘটলো। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আজ এতো তারাতারি ফিরেছেন যে?
– জুম্মা শেষে আবার ৩ টায় চলে যাবো।
– আচ্ছা। তো এখানে এসেছেন কেন?
– আমার খুশি,,,
– আচ্ছা তাহলে আমায় হেল্প করুন।
– ওকে ফ্রি যেহেতু আছি তাহলে কা/টা/কা/টির কাজ গুলো আমায় দাও। বাকি গুলো তুমি করো।
ওর কথায় পেয়াজ, রসুন, মরিচ এগুলো তার দিকে এগিয়ে দিলাম। সে কাটছে আমি বললাম,
– সাবিহাকে বলেছি সব। জানেন ও খুব খুশি হয়েছিলো। সাব্বির ভাই হয়তো কালকে বা পরশু ঢাকায় আসবে।

বলেই আমি রান্নায় মন দিলাম। তার দিকে চেয়ে দেখি, বেচারা একটা পেয়াজ কে/টে শেষ করতে পারেনি তার আগেই কেঁদে দিয়ে দিবে ভাব। কা/টছে আর হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছে এতে আরো ঝাঁঝ লাগছে, সব মিলিয়ে একটা নাজেহাল অবস্থা। আমি তার থেকে ছু/রি আর এগুলো নিয়ে বললাম,
– হয়েছে লাগবে না আর হেল্প করা৷ গাধা দিয়ে কখনো হাল চাষ হয় না। এটা আপনার অপারেশনের কোনো রোগী না, যে কাটবেন আর সেলাই করবেন। ওয়াশ রুমে গিয়ে কতোক্ষন চোখে পানি ছিটিয়ে নেন।
,
,
পরদিন সকাল পেড়িয়ে দুপুর হবে হবে ভাব। ঘড়ির কাটা তখন ১২ টা ছুই ছুই। সূর্যি মামার দেখা আজ আর মিলেনি। বর্ষার শেষের দিকে। আকাশ মেঘলা হয়ে বৃষ্টি বর্ষন হচ্ছে। বেলকনিতে দাড়িয়ে হাত দুটু বাইরে দিয়ে বৃষ্টিকে ছুয়ে দিচ্ছি আমি। মাঝে মাঝে ভালোই লাগে এসব ছোট খাটো পাগলামি গুলো। তখনি বাড়ি ফিরলো সে। চুল গুলো ভেজা। শরিরের অনেক অংশেই বৃষ্টি ফোটা পরে ভিজে গেছে। তার হাত টা ধরে আমি বললাম,
– চলুন,,
– কোথায়?
– আজ আবারও দুজন মিলে বৃষ্টিতে ভিজবো।
– পাগল হলে তুমি? কিসব বাচ্চাদের মতো শুরু করলে?
– কেন আপনি নিজেই তো বলেন, আমি বাচ্চা। তাহলে বাচ্চামি করলে দোষ ধরেন কেন?
– দোষ ধরলাম কখন? আমি বলছি ভিজলে জ্বর আসবে,,
ওনি আর কিছু বলার আগেই আমি এক আঙুল তার ঠোঁটে চেপে ধরে তাকে চুপ করিয়ে বললাম,
– কোনো কথা না। আপনার ওসব জ্ঞান আজ কানে ঢুকবে না আমার। বর্ষা শেষের দিকে। আর কয়দিন পর চাইলেও এখাবে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো না। আপনি না চাইলেও আজ আমার সাথে ভিজতে হবে। এক সাথে ভিজবো দুজন।
তাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই তার হাত ধরে ছাদের দিকে হাটা ধরলাম আমি। বেটা যাবি না মানে, প্রয়োজনে ফ্লোরে ফেলে পা দুটু ধরে টেনে টেনে নিয়ে যাবো। তবুও ভিজতে হবে আজ।
,
,
আজ সাব্বির ভাই আসলো ঢাকায়। মামার অফিসে সিভি জামা দিলো। রিদ ভাই মামাকে আগেই বলে রেখেছে সব। তাই আর এতো কিছু প্রয়োজন হয় নি।
রিদ ভাইয়ের সাথে আমাদের বাসায় নিয়ে এলো তাকে। দুপুরে খেয়ে বিকেলে রওনা দিবে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। এর পর ওখানে সাবিহার বাবার কাছে তার বাবা মাকে পাঠিয়ে কথা বার্তা এগিয়ে রেখে কয়দিন পরই চাকরিতে জয়েন করবে।

রাত আট টার পর বাসায় ফিরলো রিদ ভাই। সাধারণত দশ টার পর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাই আমরা।
ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে কলম হাতে সামনে একটা বই নিয়ে কি যেন করছে। আমি তার কাছে গিয়ে সামনে থেকে বইটা সরিয়ে তার কোলে উঠে বসে গেলাম। আমার কাজে হয়তো একটু অবাক হয়েছে সে। আমি ওসব না ভেবে তাকে বললাম,
– থ্যাংক ইউ,
– কেন?
– এই যে আপনার জন্য সাবিহার স্বপ্নটা পুরণ হবে।
– তুমি খুশি?
– হুম খুব খুশি। যার কারনে আপনাকে একটা জিনিস দিবো আমি।
– কি?
– চোখ বন্ধ করেন।
– কেন?
– ওফ, করেন না,,,,
– আচ্ছা করলাম, কি দিবে দাও।
আমি একটু হেসে এক হাতে তার চোখ দুটু ধরে ছোট্ট করে একটা চুমু এঁকে দিলাম তার ঠোঁটে। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি। এক দৌড়ে মামির কাছে চলে এলাম। এসেই মুখে হাত দিয়ে হেসে দিলাম আমি।

রাতে সাবিহাকে ফোন দিলাম। মেয়েটার মনে খুব আনন্দ দেখছি আজকাল। তার সাথে কথা বলে মনেই হয় না সে এতো দিন কষ্টে ছিলো। এটা তার প্রাপ্তির আনন্দ। ফোনের মাঝে খুব হেসে হেসে কথা বলছে মেয়েটা। আজ খুব হাসি খুশি সে।
,
,
দুই দিন পর। ফেসবুকে আজ কাল তেমন একটা ঢুকা হয় না। ফ্রি সময়ে একটু ফোন হাতে ফেসবুকে প্রবেশ করলাম। কুমিল্লার কিছু বড় ভাইয়ের সাথে এড আছে ফেসবুকে।
ওখান থেকে এক বড় ভাইয়ের আইডিতে একটা পোষ্ট দেখে মাথা টা ঘুরতে লাগলো আমার। সারা শরির কাঁপছে। একপাশে একটা গলা কা/টা মেয়ের লা/শ পরে আছে, আর অন্য পাশে সাবিহার একটা ছবি।
ফোন টা হাত থেকে পরে গেলো আমার। খুব কান্না পাচ্ছে। সাথে সারা শরির কাঁপছে এক মুহুর্তের জন্য যেনো নিজের হুশ টা হারিয়ে গেছে আমার।
আমার এমন অবস্থা দেখে রিদ ভাই এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে কিছু জিজ্ঞেস করলো। কিছুই আমি শুনতে পারছি না। রিদ ভাই কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি।
#অনুভূতিহীন (পর্ব ২০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদ ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে বসে আছি আমি। গাড়ি ছুটে চলছে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। মাথা তুলে কতটুকু এসেছি, তা দেখার শক্তি টুকু নেই আমার। ঢলে পরা লতার মতো নুইয়ে আছি আমি।
সাবিহা আমার বান্ধবি না। আপন বোন সে। হুট করে এমন একটা ঘটনা শুনায় নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারছি না।

সাবিহাদের বারিতে এসে দেখি অনেক মানুষের কোলাহল। তবে সাবিহার লা/শ বাসায় নেই। সকালো পোস-মার্টামের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। হয়তো কিছুক্ষন পরই নিয়ে আসবে।
একজনকে দেখলাম বাড়ির সামনে বরই গাছ টা থেকে বরই পাতা ছিড়ছে। পোস মার্টাম করা লা/শ বেশিক্ষন রাখবে না। আনলেই গোসল দিয়ে দাফনের জন্য নিয়ে যাবে।
বাড়ির সামনে ছোট বারান্দাটায় ফ্লোরে বসে আছি আমি। মুখে নেই কোনো হাসি কান্নার ছাপ। চুপচাপ বসে আছি।

কিছুক্ষন পরই এম্বুলেন্স এর আওয়াজ শোনা গেলো। সামনে পিলার টা ধরে উঠে দাড়ালাম। দেখি সাবিহার লা/শ বাড়ির উঠানে এনে একটা মাদুরের উপর রাখা হলো। অনেকেই চার পাশে ভির করে দাড়িয়েছে।
লা/শ শব্দটা শুনতেই ছোট বেলা থেকে ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতো আমার। কিন্তু আজ সকলের ভির সরিয়ে সাবিহার মাথার কাছে বসে হাুমাউ করে কাঁদছি। আজ এতো সুন্দর মেয়েটার মুখের দিকেই তাকানো যাচ্ছে না সব কা/টা-ছেরার দাগ। আমার কাঁন্নার ব্যাগ বেড়ে যাওয়ায়। কয়েকজন মহিলা আমাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ওখান থেকে। এর পর রিদ ভাইয়া আমাকে ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। আর বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে সাবিহাকে গোসল দেওয়ার জন্য নিয়ে চলে গেলো।

চাচি তো সেই সকাল থেকেই নাকি একবার জ্ঞান হারাচ্ছে, আরেক বার জ্ঞান ফিরছে। একটু আগে মেয়ের কা/টা-ছেরা লা/শ দেখে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আর চাচাকে দেখছি বরই গাছটার সাথে হেলান দিয়ে মাটিয়ে বসে আছে চুপচাপ।

আসরের পর সাবিহাকে দাফন করে আসা হলো। ততোক্ষনে বাড়ির সবার কাঁন্না প্রায় থেমে এখন নিশ্চুপ।
আমিও বসে আছি চুপচাপ। পাশে বসে আছে রিদ ভাই, আর তার পাশে সাব্বির ভাই।
রিদ ভাই গম্ভির ভাবে সাব্বির ভাইকে প্রশ্ন করলো,
– কিভাবে হয়েছে এতো কিছু? যদিও আমি কিছুটা শুনেছি, তবুও বিস্তারিত শুনতে চাইছি।
– আমি কিছু জানিনা,,
বলেই হাটা ধরলো সাব্বির ভাই। রিদ ভাই খপ করে তার হাট টা ধরে উঠে দাড়ালো। সাব্বির ভাইকে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
– সেই শুরু থেকেই আপনার চোখে মুখে লুকুচুরি ছাপ ভেষে আছে।
সাব্বির ভাই এবার গম্ভির ভাবে বললো,
– গত কাল সন্ধায় আমার সাথে বের হয়েছিলো সাবিহা। বাড়িতে কেও জানতো না। সবাইকে বলে গেলো সে তার বান্ধবি সামিয়ার বাসায় গিয়েছে। গুরাঘুরি শেষে নাস্তা করার জন্য একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকেছিলাম। আর বের হয়েই দেখি একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাড়িয়ে সূর্য আর আসিফ মিলে সাবিহাকে তু/লে নিয়ে গেলো।
এর মাঝে রিদ ভাই বললো,
– আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখেছিলেনসব?
– আমার কিছু করার ছিলো না। ওরা বললো, চুপ থাকতে।
– বাহ্ কি গভির প্রেম আপনাদের। তো এখনো কি চুপ থাকবেন?
সাব্বির ভাই সোজাসুজি ভাবে বললো,
– আমি চাই না বাড়তি ঝামেলা করতে। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। যে ম/রার সে ম/রে গেছে। এখন বাড়তি ঝামেলা করলেও সে আর ফিরে আসবে না। আর আমারও একটা ভবিষ্যৎ পরে আছে। এসব নিয়ে কিছু বলে নিজেকে কোনো ঝামেলায় জরাতে চাই না আমি।

সাব্বির ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে এবার আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম। ওনি কতো সুন্দরেই বলে দিলো, যে মরার সে মরে গেছে, বাহ্। তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আপনার মুখে এমন কথা শুনবো তা আমার ধারনার বাইরে ছিলো সাব্বির ভাই। সাবিহা আপনার জন্য কি করেনি। কয়েকবার তার বাবার হাতে মা/র খেয়েছে শুধু আপনার জন্য। কতো সম্মন্ধ ফিরিয়ে দিয়েছে শুধু আপনার জন্য। ফ্যামিলির এতো কথা শুনেও চুপচাপ সহ্য করে পরেছিলো শুধু কখন আপনার একটা চাকরি হবে এই আসায়। শেষে ওই মেয়েটাই আপনাকে একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে শুধু আপনাকে পাওয়ার জন্য। আর আপনি বলছেন যে ম/রার সে ম/রে গেছে। বাহ্,,,,

আমার কথায় সাব্বির ভাই উঠে দুই হাত জোড় করে বললো,
– প্লিজ, আপনাদের যা ইচ্ছা করুন, তবে আমাকে এসব ঝামেলায় টানবেন না।
তৎক্ষনাৎ রিদ ভাই ঠাস করে একটা চ/ড় মে/রে তাকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দেয়। কলার ধরে মুখের সামনে মুখ নিয়ে বললো,
– আপনার ভালোবাসা কতটুকু ছিলো তা বুঝাই যাচ্ছে। বেশি সাধু সাজার চেষ্টা করবেন তো, ওদের জায়গায় আপনাকেই ফাঁ/সিয়ে দিবো। যা সত্য চুপচাপ সময় মতো তাই স্বীকার করবেন। আর কোন রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে ওখানে আমায় নিয়ে চলুন। নিশ্চই সি’সি টিভির ফুটেজ পাওয়া যাবে। কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।
,
,
সব কিছু স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন লেগে গেলো। অভিযুক্ত প্রধান আসামী সূর্য ও আসিফ কেও এর মাঝে ধরে ফেলেছে। দুই দিন পলাতক থাকলেও রেব এর সাহায্যে মাটিরাঙা থেকে গ্রেপতার করেছে তাদের। শাক্ষি, সি’সি টিভি ফুটেজ সবই স্পষ্ট প্রমান। সারা দেশে একটা খবর ছড়িয়ে পরলো, উপজেলা চেয়ারময়ার এর ছেলে ও তার এক সহযোগি মিলে ধ/র্ষণের পর হ/ত্যা করে নদীর ধারে ফেলে এসেছিলো সাবিহা নামের এক তরুনিকে।
এই কেস ঘাটতে গিয়ে আসিফের পুরোনো কেস গুলোও জেগে উঠলো।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে আরিফ সাবের বার বার এদিক ওদিক ফোন দিয়ে পরিস্থিতি হাতে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু নানার প্রমান সহ আটক হওয়ায় পরিস্থিতি আরো হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এম’পি কে ফোন দিলেও উল্টো গালি গালাজ শুনতে হলো। ‘হা/রাম/জাদা তোকে আগেই সাবধান করেছিলাম নিজের ছেলেকে সামলা। রাজনীতির পাওয়ার খাটিয়ে মা**বাজি করে বেড়াবে তোমরা আর পরে ভাববে আমরা পাশে আছি? তুমি ভালো হলে আমিও ভালো, আর নাম ভেঙে মা*বাজি করে বেড়ালে আমি তোমার পাশে নাই,,,, কথা ক্লিয়ার?
,
,
এই ঘটনার বেশ কয়েক দিন কেটে গেলো। তবুও আমি নিজেকে মানাতে পারছি না যে সাবিহার সাথে আর দেখা হবে না আমার। অথচ তাকে বলেছিলাম তার বিয়ের দিন যাবো। তার বিয়ে হবে, সাব্বির ভাইয়ের সাথেই ধুম ধাম করে হবে। কতো কথা বলতাম তাকে। ওসব সময় গুলোই বার বার মনে উঠে আমার। আমার জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা। ওই দিন সাবিহার কারণে ওরা আমায় কিছু করতে পারেনি। সেই জেদ আর সূর্য সাবিহাকে পছন্দ করতো কিন্তু সাব্বির ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো। এই সব মিলিয়ে শেষে মেয়েটার জীবনই চলে গেলো। আর ভয়ে চুপ করে ছিলো তার ভালোবাসা নামের সেই মানুষ টা। সাবিহাকে তার সামনে দিয়ে নিয়ে গেলো তার চুপচাপ তাকিয়ে ছিলো সে।
,
,
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আরশি। তখন সন্ধা পেড়িয়ে গেলো। হালকা বাতাশ বইছে। চুল গুলো বার বার এলোমেলো হয়ে মুখে এসে পরছে। আরশি কাঁদছে, চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তবে তা অজান্তে। যাকে বলে নিরব কান্না। সে তো চুপচাপ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কিছু স্মৃতি মনে হতেই চোখ বেয়ে জল পরছে তার।

ওদিকে শাওয়ার নিয়ে বের হলো রিদ। ট্রাউজার পরে খালি গায়ে, টাওয়াল দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে বেলকনির সামনে এসে দাড়ালো। ওখানে দাড়িয়ে কিছুক্ষন মুগ্ধ নয়নে আরশির দিকে তাকিয়ে রইলো। বার বার এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুল গুলো কানের পেছনে গুজে নিচ্ছে সে। নিরবতায় থাকলে স্মতি গুলো মনে পরে বার বার। আরশিকে একটু ব্যস্ত রাখা দরকার। তাহলে হয়তো ব্যস্ততায় অল্প অল্প করে ভুলে যাবে সব।
রিদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করে দাড়ালো সে। রিদ শান্ত ভাবে বললো,
– এক কাপ কপি বানিয়ে দিবে আরশি?
আরশি খুব শান্ত ভাবে বললো,
– আচ্ছা আপনি বসুন আমি আনছি।

রুম থেকে বেড়িয়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে কেও একজন খুব তারাহুরা করে ছাদের দিকে উঠে গেলো। মামাও এখনো বাসায় নেই। আর রিদ ভাইয়াও রুমে। তাহলে এটা কে?
মন ভর্তি সন্দেহ নিয়ে পিছু নিলো আরশি। চুপচাপ ছাদে উঠে দাড়ালো সে। দেখে নির্জন দাড়িয়ে সিগারেট টানছে ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে। হুডি খোলা আর মুখে মাস্কও নেই। ছাদে লাইটে আলোয় মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার।
হুট করে আরশি সামনে এসে দাড়ানোতে বিব্রত কর অবস্থায় পরে যায় নির্জন। কোমর থেকে পিস্তল টা বের করে আরশির দিকে তাক করে দাড়ায়। নির্জনের খুব ভয়/ঙ্কর রুপ। ভয়ে বুকটা ধুকধুক করে কাঁপতে থাকে আরশির।

To be continue….

,,
To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here