অনুভূতি পর্ব ৩ ও শেষ

#গল্প: অনুভূতি
#লেখা:আদনান_তাওসিফ

[পর্ব:০৩]

বেশকিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজানোর শব্দ আমি ধৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি আদনান নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে।দাঁতের উপর দাঁত চেপে কি বলল বুঝতে পারলাম না।তারপর আমি কিছু বললাম না উনাকে ধরতেই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

আমার তোর কোনো হেল্প লাগবে না go to hel.

আমি ধাক্কা সামলাতে না পেরে মেঝেতে পরে আছি উনি হনহন করে রুমে চলে গেলো।আমি উনার খাবার দিলাম বললাম,,।
আপনার খাবার খেয়ে নিন।অনেক তো রাত হলো।

তোর খাবার তুই খা আমার বুকে যে জ্বালা আর তুই আমাকে খাবার খাওয়াতে আসছিস হুম।
আদনান রাগান্বিত স্বরে এগুলো বললে খাবার এর প্লেট ফেলে দেয় আমি নিশ্চুপ হয়ে চলে যাবো তখন ই আমার গলা চেপে ধরে।

আমাকে একদম বিরক্ত করবি না।তোকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি শেষ করার জন্য বুঝলি।তোর খাবার খাওয়ার জন্য না।

এগুলো বলে আমাকে ছেড়ে দেয়।আমি বিছানার এক পাশে শুয়ে আছি ঘুমিয়ে যাই হঠাৎ দেখি আদনান আমার মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়ে আমাকে মারার চেষ্টা করছে।চমকে উঠলাম এটা স্বপ্ন ছিলো।বিছানা থেকে উঠে। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেলাম।পুরো শরীল ব্যাথা এই কয়দিনে অনেক মার খেয়েছি।শরীলে বেল্টের আঘাত স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এরকম ভাবে কেউ মারতে পারে তা এনাকে দিয়ে বোঝা যাই।বেশ কিছুক্ষণ পর কোথা থেকে জেনো কান্নার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি রুমে গিয়ে দেখি আদনান কাঁদছে বাচ্চাদের মতন কাঁদছে আমি আর কিছু বললাম না কিছু বললেই আবার মারতে শুরু করবে আমি সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।কখন যে সকাল হয়েছে বুঝতেই পারি নি।সকালে ঘুম ভাঙলেই দেখি আদনান নেই কোথায় গেছে জানি না আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দূর আকাশ দেখছি আর ভাবছি কত স্বপ্ন ছিলো এখানে এসে স্বামির সাথে ঘুরবো আনন্দ করবো শুধু আনন্দ।তা আর হলো না আমার কপালে সুখ নেই।
আমি নিচে এসে নাস্তা রেডি করলাম।এর মধ্যেই আদনান চলে আসে দেখে বুঝলাম জগিং গিয়েছিলো।উপর থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছে খুব সুন্দর লাগছে আবার নতুন করে প্রেমে পরলাম।মুখ টা রাগি রাখি করে রেখেছে।আমি ভয় পেয়ে তাকালাম না খাবার তৈরিতে মন দিলাম। আমরা দুজন নাস্তা করছিলাম এর মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠলো।আদনান গিয়ে দরজা খুললো ।আপু এসেছে ৫ বছর পর আছে আপুর সাথে দেখা আমার কি যে ভালো লাগছে আপুকে জড়িয়ে কেঁদে দিলাম।আদনান পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে মাথা দিয়ে ইশারা করে আপুকে কিছু বলতে না করছে আমি তাই অন্য কথা বলা শুরু করলাম।।

আচ্ছা আপু আদনান কেমন ছেলে মানে তোমার কি মনে হয়।

এখন এটা কেমন প্রশ্ন তোকে তো বিয়ের আগেও বলেছি ওর মতন ছেলে হয়না আমাদের সাথে তো অনেক দিনের পরিচয় এতদিনে দেখেছি ও কেমন তোকে খুব সুখেই রাখবে।তোকে অনেক আগে থেকেই
পছন্দ করে আর অবশেষে বিয়ে হয়ে গেলো।ওর বাবা মা মারা যাবার পর খুব কষ্ট করে ব্যবসা টিকে রেখে আজ এই অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। ছোট থেকে ওর চাচার চাচির কাছে মানুষ হয়েছে।
আমি আর আপু কথা বলছিলাম তখন আদনান একটু দূরে ছিলো।আমাকে ডাক দিলো ভয়ে ভয়ে গেলাম।

আমি আদনান এর কাছে যেতেই আদনান আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো।

আমার হাত চেপে ধরে,,,,এই যে শোন ওরা জেনো কিছু বুঝতে না পারে বললাম।আর ওদের সামনে তুমি করে বলবি।

আচ্ছা ছাড়ুন লাগছে তো,,,,।

আমি আপুর কাছে আসলাম আর অন্য কথা বলতে থাকলাম অনেকক্ষন কথা বলার পর আপু তার বাসায়
চলে যাই।থাকতে বললাম অনেক দুলাভাই কে বলে আসে নি তাই চলে গেলো।
আদনান আমার দিকে রাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
আমার কাছে এসে একটা থাপ্পর দেওয়ার জন্য হাত তুলতেই আমি হাতটা ধরে ফেলি।

অনেক হয়েছে আমি অনেক সহ্য করেছি আর না।আমি চুপ থাকি বলে ভাববেন না আমি দুর্বল।

বোন এসেছিলো তাই দেখছি কথা ফুটেছে ।সাহস ফেলেছে অনেক তাই না।

আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।সাহস হয়েছে তাই না খুব সাহস আজকে এখন তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিবো দেখি তুই কোথায় যাস কি করিস।

না না প্লিজ এটা করবেন না আমি মাফ চাচ্ছি।
আমার কোনো কথা শুনলো না বাড়ি থেকে বের করে দিলো আমি এখন কোথায় যাবো সারাদিন পার হয়ে গেলো সন্ধ্যা নামিয়ে আসছে ভেবেছিলাম সারাদিন এ রাগ কমলে হয়তো আমাকে নিতে আসবে খুঁজতে আসবে কিন্তু না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমি এখন কোথায় যাবো ঠিক তখন ই বেশ কিছু মাতাল আমার পিছু করেছে।আমি তো এখানে কিছু চিনি না এখন কি করবো।তখনি আদনান চলে আসে আর আমাকে নিয়ে বাসায় যাই।।

আপনি তো আমকে বের করে দিলেন।এখন আবার দয়া দেখাতে আসছেন।

দয়া দেখাবো তাও তোকে।তুই আমার হাতেই মরবি অন্য কেউ তোকে মারতে পারবে না।তোর মৃত্যু আমার হাতে প্রথম দেখাই ভালোবেসেছিলাম তাই এখন তোকে মারতে পারছি না বার বার দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।

আমার সাথে আপনার কি শত্রুতা আমি আপনার কি করেছি।
শুনতে চাস তুই কি করেছিস। আমার ছোট একটা বোন ছিলো আমি এখানে আসার পর ওকে কোথায় রাখবো তাই চাচা চাচির কাছে রেখেছিলাম সব কিছু ভালোই চলছিলো।আমার বোন তোর ভাইকে ভালোবেসেছিলো আর তোর ভাই আমার বোনকে ঠকিয়েছে সব কেঁরে নিয়েছে আমার বোন সুছাইড করেছে শুধুমাত্র তোর ভাই এর জন্য আর আমার বোন মারা যাওয়ার কয়দিন পর ই তোর ভাই কার অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যাই যেমন কর্ম করেছিলো তেমন ফল পেয়েছে।তখন আমি ঠিক করেছিলাম তোকে বিয়ে করে তোর জীবন জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো।যা আর আমাকে কিছু বলতে আসিস না আমি তোকে ঠিক সময় মেরে পুঁতে দিবো।

আমি আর কিছু বললাম না বাহিরে এসে কাঁদতে লাগলাম। একজন মানুষের এত রাগ জমে আছে ।আর কোনো কিছু ভাবলাম না আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে পরেরদিন সকালে খুব ভোরে আমি দেশে আসলাম।

আদনান আমাকে পরেরদিন সকালে না পেয়ে বাবা মা কে কল করেছে।আমি আদনান কে বলে আসি নি।

হ্যালো আংকেল নিপা কি আপনাদের ওখানে গেছে আমি সকাল থেকে খুঁজছি পাচ্ছি না।

বাঁবা বলল,,,, হ্যাঁ নিপা আমাদের এখানে চলে এসেছে এই নাও ওর সাথে কথা বলো।

এই তোর সাহস কি করে হয় একা একা চলে গেলি আমাকে একটা বার বলার প্রয়োজন যে করিস নি।

আসলে বলার সময় ছিলো না আপনি দেশে আসুন খুব দরকারি একটা কাজ বাকি আছে করতে হবে।

আমি পারবো না তুই ওখানে থাক আমার কোনো দরকার নেই।
আমি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলাম।পরেরদিন দেখি আদনান চলে এসেছে এই লোকটা বলে কি আর করে কি আমি কিছু বললাম না,,,।

আমার টাকা নষ্ট করে দেশে নিয়ে এছেসিস এখন কি দরকার বল।
আমি সবার সামনে কিছু বলতে চাই আমার ভাই কোনো প্রতারক নয় আমার ভাই কাউকে ঠকায় নি।
এই নিন চিঠিটা পড়ুন যেটা মৃত্যুর আগে আপনার বোন আমার ভাই কে দিয়েছিল।চিঠিতে স্পষ্ট লেখা আপনার বোন ছুচাইড করেছে আপনার ছোট চাচার জন্য যে প্রতিদিন আপনার বোনকে রেপ করতো আর এই কষ্ট সহ্য না করতে পেরে আপনার বোন ছুচাইড করে এখানে আমার ভাই এর কোনো দোষ নেই আর হ্যাঁ আমার ভাই ঘটনা চক্রে রোড অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যাই আশা করি আমার কথা বুঝতে পারছেন।

বাবা বলল,,, কিন্তু তুই এখন এসব বলছিস কেনো এগুলো তো আমরা সবাই জানি ।

আসলে বাবা আমি কারো কাছে প্রমাণ করে দিলাম আমার ভাই প্রতারক নই।

আদনান আমার কোনো কথাই উত্তর না দিয়ে বললো,,,আমার সাথে একটা জায়গায় থাকবে,,।
আমি আদনান এর সাথে ওর চাচার চাচির বাড়ি গেলাম,,,।

আদনান:চাচি আর চাচা আপনারা দুজন মিলে আমার বোনের সাথে এমনটা করতে পারলেন আমি কখনো আশা করি নি।আমাকে যদি বলতেন আমি আমার বোনকে বাঁচাতে পারতাম আমি আপনাদের কাউকে ছাড়বো না।

আমাদের মাফ করে দে বাবা আমরা ভেবেছিলাম তুই সবটা শূনলে আমাদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিবি তাই এই কাজটা করেছি আমাদের ভুল হয়ে গেছে।

আমি আদনান কে শান্ত করলাম আর সবাইকে পুলিশ এর হাতে তুলে দিলাম।
আমি আমার রুমে দাড়িয়ে আছি এমন সময় আদনান আমার পা ধরে আছে,,,,।

কি করছেন কি ছাড়ুন আর উঠুন,,,।

সরি আমাকে মাফ করে দেও আমি খূব বড় ভুল করেছী । আমাকে একটা সুযোগ দেও।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।

আমি থাকবো আপনার সাথে তবে আমার একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত আমি সব শর্ত শুনতে রাজি।

আমাকে কখনো মারা যাবে না আমি এই কয়দিনে এত মার খেয়েছি যা আমার জীবনে কখনো খাই নি।

প্লিজ এগুলো বলে আমাকে আর লজ্জা দিয়ো না।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here