#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৪২
.
.
” হয়তো বুঝি আবার হয়তো না। ”
” হয়তো। ”
” হুম। ”
” জীবনটা পুরোই একটা গোলকধাঁধা। কখন কোন প্যাঁচ লেগে যায় বুঝা বড্ড দায়। ”
” একটু সহজ করে দেখলে সবকিছুই সহজ। ”
” পাঁচ বছর আগে আমিও এরকমটাই ভাবতাম। তবে এটা সম্পূর্ণই ভুল। আর সেই ভুল ধরিয়ে দেয় পরিস্থিতি নিজেই। ”
” আচ্ছা, আপনি কি একটু ভরসা করতে পারেন না আমায়? ”
” কথা বাড়িও না। যতটুকু বলেছি ততটুকুতেই থাকো। তা না-হলে পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, তোমার প্রাপ্য তুমি পাবে। অতটুকু বোধ আমার আছে। হয়তো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে জড়াতে পারব না, কিন্তু তোমার আর্থিক চাওয়া-পাওয়ায় কোনো কমতিও রাখব না। ”
” হুম। ”
কিছুটা চুপ থেকে তিহান বলল,
” তোমায় একটা প্রশ্ন করি? ”
” জিজ্ঞেস করার কী আছে? বলে ফেলুন। ”
” তুমি না খুব আজব টাইপের। বেলকনিতে এসে দেখলাম কাঁদছ। চুলের অবস্থা পাগলের থেকে কোনো অংশে কম নয়। আর সেই তুমিই মুহুর্তেই এতটা নরমাল হয়ে কথা বলছ। কেমন যেন অদ্ভুত অদ্ভুত লাগছে। ”
” ওহ্, এই ব্যাপার। আসলে হয়েছে কি আমার সাথে কেউ খারাপ বিহেভ করলে অনেক কষ্ট পাই। কিন্তু সেই মানুষটাই যদি পাশে এসে বসে আমাকে সঙ্গ দেয় তাহলে মুহূর্তের মাঝেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। তাই হয়তো আপনার ক্ষেত্রেও তাই হলো। ”
” ওহ্! ”
” হুম। ”
” রাত অনেক হয়েছে ঘুমাবে না? ”
” ঘুম আসছে না। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। ”
বলেই নিদ্রা চুপ হয়ে গেল। তিহানও আর কথা বলল না। দুইজনের চুপচাপ বসে আছে। এভাবে কতক্ষণ কেটেছে হয়তো কারো জানা নেই। হঠাৎ তিহানের কানে চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। তিহান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে নিদ্রা বেলকনির শেষ মাথায় গিয়ে গ্রিলের সাথে মাথা হেলান দিয়ে সমানে কেঁদে যাচ্ছে। ব্যাপারটি বুঝতে না পেরে তিহান বসা থেকে উঠে গেল নিদ্রার কাছে। ভ্রু কুচকে বলল,
” কী হয়েছে? এভাবে কাঁদছ কেন? ”
হেঁচকি তুলতে তুলতে নিদ্রা বলল,
” কিছু না। ”
” আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি কাঁদছ আর তুমি বলছ কিছু না! এটা কেমন ধরনের কথা? ”
” মনে রঙ লেগেছে তাই কাঁদছি আপনার কোনো সমস্যা? ”
” আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি! অকারণে কাঁদছ আবার ঝাড়িও দিচ্ছ? ”
” আমি অকারণে কাঁদছি? অকারণে? ”
” কারণ তো খুঁজে পাচ্ছি না। ”
” সে পাবেন কেন! আপনার কি কারণ খোঁজার ইচ্ছে আছে না-কি? ”
” কেন থাকবে? অকারণে আমি কোনো কিছু নিয়ে ভাবি না। ”
এবার নিদ্রার অভিমানের পাল্লাটা যেন আরও বেড়ে গেল। আর কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” কেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফালিয়ে দিয়েছিলেন? আমার বাবা-মা যেখানে আজ অবধি আমায় মারার কথা ভাবতেও পারেনি সেখানে আপনাদের বাড়িতে আজ প্রথম দিনই আপনি আমায় ধাক্কা দিয়েছেন। আপনার সাহস কত্ত বড় আপনি আমাকে অযথা মেরেছেন। ”
” কী বলছ কী নিদ্রা তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার? আমি কখন তোমায় মেরেছি? ”
” কেন ধাক্কা দেয়া কি মারের পর্যায়ে পড়ে না? ”
” ধাক্কা দেয়া যদি মারের পর্যায়ে পড়ে তাহলে থাপ্পড় দেয়া খুনের পর্যায়ে পড়ে। এখন থেকে তোমায় কেউ থাপ্পড় দিলে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে ভুলো না যেন। ”
” আপনি জানেন আমি হাতের কনুই আর পায়ের গোড়ালিতে কত ব্যাথা পেয়েছি। কতটা কষ্ট হচ্ছে আমার জানেন আপনি? ”
” সেজন্য তো আমি ক্ষমা চেয়েছি। আর এসব কথাতো অনেক আগেই আমাদের মিটে গিয়েছিল। এখন আবার নতুন করে তুলছ কেন? ”
” অনেক আগে মিটে থাকলেও আবার জেগে উঠেছে। ”
” মানে? ”
” ব্যাথা করছে প্রচুর। তাই আবার মনে পড়েছে। আমি আব্বুর আম্মুর সাথে কথা বলব। আর জিজ্ঞেস করব আমি কি খুব বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম কি-না যে, আপনার গলায় ঝুলিয়ে দিল। ”
” এই মাঝরাতে এসব বাদ দাও। যা বলার কাল সকালে বলো। এখন ঘুমাবে চলো। ”
” যাব না। আপনি আমায় কত্ত বড় ব্যাথা দিয়েছেন একবার ভেবে দেখেছেন? ”
বলেই বুক ফেঁটে কাঁদতে লাগল নিদ্রা। তিহান বিভিন্ন কথা বুঝালেও সে এই মুহুর্তে সেসব কথাই বুঝতে নারাজ। তিহান এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে মনে মনে বলল,
” একে তো অল্প বয়স তারপর আবার বাবা-মায়ের একমাত্র আহ্লাদী মেয়ে। হাজার কিছু বলে বুঝাতে চাইলেও তার চলবে না। সাধারণত অল্প বয়সী মেয়েরা তো এরকম একটু হবেই। বুঝেই বা কতটুকু। বয়স তো আমার হাঁটুর সমান। সে কী বুঝবে আমার কথা। তারচেয়ে ভালো একটু নরম করে কথা বলে কোনোমতে ঘুম পাড়িয়ে দিই। সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটার চোখের জলই আমার সহ্য হচ্ছে না। অন্য কেউ হলে হতো ফিরেও তাকাতাম না, কিন্তু এর যেই বয়স না ভেবেও পারছি। ”
তিহান হেঁচকা টান দিয়ে নিদ্রাকে নিজের বুকের সাথে লেপ্টে ধরল। নিদ্রার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
” চুপ। আর একটি কথাও না। আমি যেমন ব্যাথা দিয়েছি তেমনি আমিই তো আদর করছি তাই না? ”
.
রাত শেষ হয়ে প্রায় ভোরের পথে। দুজন দুপাশে চেপে শুয়ে আছে। কিন্তু দুজনের মাঝে রয়েছে ইয়া বড় এক কোলবালিশ। যা একটি দেশের বর্ডার বললেও ভুল হবে না। কেননা বিছানার পরিধি অনুযায়ী কোলবালিশটি একটু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই বড়। তারপরও যেন কারো সমস্যা হচ্ছে না। উল্টো খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুজন চেপে শুয়ে আছে। তবে কেউ ঘুমে মগ্ন আর কেউ অনুভবে মগ্ন। ঘরের জানালার কপাটগুলো ও বেলকনির দরজা খোলা থাকায় খুব স্পষ্ট, সুমধুর ভাবেই ভোরের গন্তব্যহীন পাখি গুলোর কলরব কানে বাজছে নিদ্রার। সেই মাঝরাত থেকে ঘুমের ভান করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে নিদ্রা। মনকে ফ্রেশ করতেই তার প্রয়োজন কিছুটা স্বস্তি। যেটা সে এই মুহুর্তে বেলকনিতে গেলেই খুঁজে পাবে ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দের মাঝে।
বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনিতে যেতে নিলেই একবার পেছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে হলো নিদ্রার। সেই সাথে বুকের ধুকপুকানিও শুরু হয়ে গেল। তারপরও পেছনে ফিরে তাকালো নিদ্রা আর চোখ ভরে দেখল তিহানের ঘুমন্ত মুখটা। বেশ লজ্জা লাগছে তার। এক অদ্ভুত মায়া যেন টানছে নিদ্রাকে। হাত পা জমে আসছে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে তিহানের জড়িয়ে ধরা মুহূর্তটির কথা। এই প্রথম কোনো ছেলের পরশ পেয়েছিল নিদ্রা। যে পরশের অনুভব সারারাত তাকে দুচোখের পাতা এক করতে দেয়নি। কেমন যেন এক অদ্ভুত শিরশিরানি তার শরীরের প্রতি রগের শিরায় শিরায় বয়ে গিয়েছে। তবে বেশ ভালোও লেগেছে এই নতুন অনুভূতি গুলো নিদ্রার।
চোখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলল,
” একরাতেই কি সব লজ্জা সরম খেয়ে ফেলেছিস? অসভ্য মেয়ে কোথাকার। ”
.
সকাল ৯ টা। তিহানের বিয়ের হ্রেস ধরে এখন অবধি অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘরের প্রতিটি মানুষ। এই কথাটি সকাল থেকে না হলেও শতবার বুঝিয়েছে তানহা অতলকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অতল যে এতগুলো ঘন্টা নিজের পেটের মধ্যে কথাটুকু রেখেছে এইতো অনেক! আর যে সম্ভব নয়। তাইতো তানহাকে ফেলেই অতল ছুটে গেল উঠানের মাঝে। আর জোড়ালো কন্ঠস্বর করে বলল,
” মা! বাবা! কোথায় তোমরা? ”
কোত্থাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। অতল আবারও বলল,
” কী হলো সাড়া দিচ্ছ না কেন? নাকি তোমরা এখনো ঘুম থেকেই উঠনি! মা! বাবা! ”
অতলের কথা শেষ হতেই আনিস খন্দকার ও মরিয়ম বেগম ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই উপস্থিত হলো।সেই সাথে উপরের সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল নিদ্রা। আর বলল,
” ভাসুর ভাই! এনি প্রবলেম? ”
” আরে না না, প্রবলেম কেন হবে! ”
” তাহলে এত সকাল সকাল সবাইকে ডাকছেন যে? ”
” সে অন্য কারণে। ”
পাশ থেকে মরিয়ম বেগম বলল,
” কি রে বাবা, গতকালের এত খাটাখাটুনির পর এই সকাল সকাল সবাইকে ডাকছিস যে ! তার ওপর আবার হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে! ”
অতল মুখে কিছু না বলে সোজা চলে গেল তার বাবা-মায়ের সামনে। মিষ্টির প্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,
” বলছি বলছি, সব বলছি মা। আগে মুখ হা করতো। ”
” কিন্তু মিষ্টিটা কিসের জন্য সেটা তো বলবি। ”
” বললাম তো বলব। আগে খাও না। ”
অতল তার বাবা-মা’কে মিষ্টি মুখ করাতেই নিদ্রা বলল,
” ভাসুর ভাই, শ্বশুর শাশুড়ী কেবল মিষ্টি খাবে? আমি খাব না? ”
অতল জিহবায় কামড় দিয়ে বলল,
” পাগল মেয়ে বলে কী! শ্বশুর শাশুড়ীকে এভাবে কেউ সরাসরি শ্বশুর শাশুড়ী বলে?”
” ইশ! সরি। ভুল হয়ে গিয়েছে। আর কখনো এরকম ভুল হবে না। ”
” মনে থাকবে তো? ”
” হান্ড্রেড পার্সেন্ট। এবার কি মিষ্টি খেতে পারব? ”
” সে আবার বলতে! তুমি খাবে না তো কে খাবে? আমাদের ঘরে কি ছোট্ট বাচ্চা আছে যে সে খাবে? ”
নিদ্রা দু’হাতে চারটি মিষ্টি নিয়ে খেতে খেতে বলল,
” আপনারা কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আমার মিষ্টি ভীষণ পছন্দ। তাই দু’হাতেই নিয়ে নিলাম। পরে যদি বেশি না পাই তাই। আর আমার পছন্দের খাবার একটু বেশি না খেলে কেমন কেমন যেন লাগে। মনে হয় যেন কিছুই খাই নি। হি.. হি…”
নিদ্রার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। অতল মিষ্টির প্যাকেট নিদ্রার সামনে ধরে বলল,
” নাও, এসবগুলোই তুমি নিয়ে নাও। আর কেউ খাওয়ার বাকী নেই। এসবগুলো তুমি খেয়ে ফেল কেমন! অবশ্য হ্যাঁ, এখান থেকে তোমার বরকে একটা দিও। সেতো ভাগে পায়নি তাই। ”
নিদ্রাতো চোখ দুটো বড় বড় করে ঠোঁটের কোণে হাসির ঝলক ফুটিয়ে বলল,
” সত্যি! এগুলো সব আমার! ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ, সব তোমার। ”
বলেই অতল তার মায়ের কাছে যেতেই তানহা নিদ্রার মাথায় হাত রেখে আস্তে আস্তে বলল,
” তুমি না এ বাড়ির নতুন বউ, এভাবে কেউ কথা বলে? মানুষ শুনলে কী ভাববে? ”
নিদ্রা মন খারাপ করে বলল,
” আমি কি তাহলে কথা বলব না? কিন্তু আমি যে কথা না বলে থাকতে পারি না! ”
” ধুর পাগলী! আম কি তাই বলেছি নাকি? কথা বলবে না কেন? অবশ্যই বলবে। তবে একটু সয়ে রয়ে। এখনই না। বুঝলে? ”
” আচ্ছা আপু। এই যে দেখো মুখ বন্ধ করলাম প্রয়োজন ছাড়া আর খুলব না। ”
” আবার বলে খুলবে না! কি যে করি তোমাকে নিয়ে। ”
” কি আর করবা নাচো আমাকে নিয়ে। ”
” এমা! তুমিতো দেখছি সত্যি পাগলী। ”
” একথা আব্বু আম্মুও বলতো। ”
বলেই মুখটা চুপসে গেল নিদ্রার। তানহা ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বলল,
” মন খারাপ করে না বোন। তোমার তো আব্বু আম্মু আছে,ইচ্ছে হলেই যেতে পারবে। কিন্তু আমার..আমার যে কেউ নেই। একদিনেই বাবা-মা’কে হারিয়েছি। আমার কি কষ্ট হয় না? অনেক কষ্ট হয়। তারপরও তো বেঁচে থাকার জন্য সবার সাথে মিলেমিশে দিব্যি আছি। তাহলে তোমার সবকিছু থাকতেও তুমি মন খারাপ করছ কেন? ”
নিদ্রার বেশ খারাপ লাগছে তানহার জন্য। তানহাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আমি আছি না তোমার? তুমি কেন কষ্ট পাবে তুমিতো হাসবে। আমি তোমাকে হাসাবো। আমি তোমাকে এত্তগুলা ভালবাসব। তুমি দেখে নিও। ”
” হ্যাঁ, সেতো আমি জানি। আমার দুষ্টু পুচকি বোন যে চলে এসেছে। ”
তানহা নিজেও নিদ্রাকে জড়িয়ে ধরতেই নিদ্রার ছাড়া চুলগুলো তার হাতে বাজলো। তানহা ভ্রু কুচকে নিদ্রাকে বলল,
” ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওনি? ”
” ফ্রেশ না হয়ে কি মিষ্টি খেয়েছি? আমি কি এতটাই বলদি? ”
” তুমি যেই ফ্রেশ হওয়ার কথা ভাবছ আম সেটা বলছি না। আমি বলছি গোসল করেছ কি-না? ”
” উহুম গোসল করিনি। এত সকালে গোসল করার অভ্যেস নেই আমার। আর ভালোও লাগে না। ”
” সবসময় কি সবকিছু ভালো লাগা নিয়ে করতে হয়? কিছু জিনিস অপ্রিয় হলেও সময় বুঝে সেসব করতে হয়। যাই হোক কাজটা এটা একদম ঠিক করোনি। ”
” কিন্তু আপু…”
” কোনো কিন্তু না। কাল থেকে যেন নিচে নামার আগেই গোসল কমপ্লিট দেখি। ঠিক আছে? ”
” আচ্ছা। কিন্তু আমার একটি প্রশ্ন আছে। ”
” বলো। ”
” আমার ফ্রেন্ড বলেছে হাব্বির সাথে কিছু মিছু হলেই গোসল করতে। নয়তো দরকার নেই। কিন্তু তার সাথে তো…”
” ওরে বাবা! মেয়ে তো দেখছি সব বুঝে। যতটা বাচ্চা ভেবেছি ততটা আপনি নোন। ”
” আরে আপ্পামনি এসব তো আজকাল ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া বাচ্চারাও জানে। আর আমিতো… ”
” আর পাকামো করতে হবে না। যাও গিয়ে গোসল করে নাস্তা করতে চলে এসো। বুঝেছ? ”
” হুহ! কথাই শেষ করতে দেয় না। রাগ করছি আমি রাগ করছি। ”
বলেই নিদ্রা চলে গেল উপরে নিজের ঘরের দিকে।
এদিকে তানহা খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে নিদ্রার কান্ড দেখে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মরিয়ম বেগম বললেন,
” এ আমি কি শুনছি মা! আমাদের বংশধর নাকি আসছে? এরকম খুশির খবর রাতে কেন আমাদের দিলে না। কী যে আনন্দ লাগছে বুঝাতে পারব না। ”
উপর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক অপ্রাপ্তিময় হাসি দিয়ে ঘরের ভেতর চলে গেল তিহান।
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল চারটি মাস। এই চার মাসে পরিবর্তন এসেছে সবার জীবনেই। কেবল পরিবর্তন আসেনি তিহান নিদ্রার সম্পর্কের। তবে হ্যাঁ, নিদ্রার মাঝে বেশ পরিবর্তন এসেছে। আগের নিদ্রা আর এখনের নিদ্রার মাঝে রয়েছে আকাশ পাতাল তফাৎ। চার মাসের ব্যবধানেই যে চাঞ্চল্যকর ছোট্ট নিদ্রা থেকে ভাবগাম্ভীর্য সম্পন্ন বুঝদার নিদ্রায় পরিণত হবে সেটা সবার কল্পনার বাহিরে। তবে এটাই সত্য। নিদ্রা এখন আর আগের মত হাসে না। আগের মত কথা বলে না। আগের মত ভাসুর ভাই ভাসুর ভাই বলে মাথা খারপ করে না অতলের। সম্পর্ক অনুযায়ী যার যার জায়গাকে সঠিকভাবে সম্মান করতে শিখে গিয়েছে নিদ্রা। আর এই সবকিছুই সম্ভব হয়েছে কেবল তিহানের অবহেলা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে।
এদিকে দিন যত বাড়ছে ততই যেন তানহার শরীর ভারী হয়ে আসছে। কিছুদিন আগেই পাঁচ মাসে পড়ল তানহার। এই ভারী শরীর নিয়ে রোজ রাতে একা একা ঘুমাতে বড্ড ভয় করে তানহার। সেসময় প্রচন্ড রাগ হয় অতলের উপর। ব্যবসা টাই যদি তানহার থেকেও বেশি ইম্পর্ট্যান্ট হয় তাহলে কী দরকার ছিল বিয়ে করার? আর বিয়ে যখন করেছেই কেন এ অবস্থায় তার সাথে না রেখে একা ফেলে গিয়েছে? ভেবেই রাগে, কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসে তানহার।
যেমনটা এই মুহুর্তে কাঁদছে। উঁচু পেটে দু’হাত আস্তে করে রেখে বলল,
.
.
চলবে…..