অন্তরালের কথা শেষ পর্ব

#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৫৪ (অন্তিম পর্ব)
.
.

“আপনার চোখে কিছুই যায়নি কেবল সাবানের ফেনা চোখজুড়ে থাকায় চোখ জ্বলেছিল এর থেকে বেশি কিছু না।”
বলেই তিহানের চোখ থেকে নিজের চোখ নামাতেই দেখে তিহান তার খুব কাছে। যতটা কাছে থাকলে একটি মানুষ অপর মানুষের বুক সমুদ্রের গহীনে থাকা হৃদস্পন্দন সুস্পষ্ট শুনতে পায় ঠিক ততটা কাছে। যতটা কাছে থাকলে একজন পিপাসিনী আবেদনময়ী অপর ব্যাক্তিটির সান্নিধ্য ত্যাগ করার ক্ষমতা রাখতে পারে না ঠিক ততটা কাছে।
নিদ্রার ঠোঁট জোড়া সমানে কেঁপে যাচ্ছে সেই সাথে কাঁপছে তিহানের ঠোঁট। তিহানের ভেজা হাত দিয়ে নিদ্রার কোমড় চেপে ধীরে ধীরে পিঠ ভুবনে হাতরাতেই সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো নিদ্রা। হাত পা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে ভেঙে আসছে। গুরুতর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে সে।
এদিকে নিদ্রার নেশা নেশা ভাব দেখে তিহান তার প্ল্যান ভুলে নিদ্রার মাঝে ডুবে যেতে লাগল। নিদ্রার গায়ের ওড়না একটানে খুলে মেঝেতে ফেলে হাত বাড়ালো জামার পেছন ভাগের চেইনে। কিন্তু নিদ্রার যেন সেদিকে কোনো হুশই নেই।সে তো তিহানের ঘন লোমযুক্ত বুকে খাঁমচে ধরে দাঁড়িয়ে তিহানকে আরও উত্তেজিত হতে সাহায্য করতে লাগলো। জামার চেইন খুলে কাঁধের বাপাশ দিয়ে জামা কিছুটা নামিয়ে তিহান আলতো করে ঠোঁট জোড়া ডোবালেই নিদ্রা কেঁপে তিহানকে খাঁমচে ধরে চোখ বুজে ফেলে। নিদ্রার সায় পেয়ে পাগলের মতো কাঁধে গলায় হাজারো ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিতে লাগলো তিহান।এক ফাঁকে জামার ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মসৃণ পিঠে হাত দুটোকে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করার মাঝে গায়ের জামা একটানে খুলে মেঝেতে ফেলে নিদ্রাকে গায়ের সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালো তিহান।
শরীরের বিভিন্ন অংশে দুটো হাতের বিচরণ অনুভব করতে পেরে চোখ মেলে তাকালো নিদ্রা। তিহানকে এতটা কাছে পেয়ে যতটা না তার ভালো লাগল তারচেয়ে বেশী রাগ হলো তিহানের ওভাবে চলে যাওয়ার কথা মনে করে।এক ধাক্কায় তিহানকে দূরে সরিয়ে দু-হাত দিয়ে শরীর ঢেকে বলল,
“লজ্জা করলো না আপনার এই কাজটা করতে?আপনি নিজেকে কী ভাবেন বলুন তো?আপনার কথায় সব হবে? সবার মতো আমিও আপনার হাতের পুতুল? যেভাবেই নাচাবেন সেভাবেই নাচব?যখন ইচ্ছে হবে কাছে টেনে নিবেন আবার যখন ইচ্ছে হবে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। তাই না?”
আচমক ধাক্কা খেয়ে শরীরের ব্যালেন্স ধরে রাখতে না পেরে ওয়াশরুমের দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে হাতের কুনইয়ে বেশ ব্যাথা পায় তিহান। হাতের কুনি চেপে ধরে নিদ্রার কাছে আসতে আসতে তিহান বলল,
“তুমি যেরকমটা ভাবছ আসলে সেরকম কোনো ইচ্ছেই আমার ছিল না নিদ্রা।”
“আপনার কী ইচ্ছে ছিল আর কী ইচ্ছে ছিল না সেটা আমার এই হাল দেখেই বেশ বুঝতে পারছি। আমার মনে হয় না এরপরেও আপনার থেকে শোনার মতো কোনো এক্সপ্ল্যানেইশন আমার প্রয়োজন আছে।”
বলেই বুকে তোয়ালে পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে রুমে এসে আলমারি খুলে কাপড় হাতে নিতেই পেছন থেকে তিহান একটানে নিদ্রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে চেপে ধরল।বলল,
“তুমি আমাকে কী পেয়েছ? আমি কি মানুষ না?আমার কি কষ্ট, যন্ত্রণা হয় না?অতীতকে পেছনে ফেলে তোমাকে নিয়ে বাঁচার আশায় যতই তোমার কাছে নিজের সবটা দিয়ে নিজেকে মেলে ধরছি ততই তুমি আকাশে উঠছ।কেন এরকম করছ তুমি?কোন কারণে এরকম করছ?”
তিহানের কথার প্রতিত্তোর না দিয়ে নিদ্রা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেকে তিহানের বাহুডোর থেকে আলাদা করতে। এদিকে নিদ্রার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিদ্রাকে আরও বুকের সাথে চেপে ধরল তিহান। বলল,
“কথা কানে যাচ্ছে না তোমার? না-কি মানুষ মনে হচ্ছে না আমাকে কোনটা?”
“ছাড়ুন আমাকে।”
“ছাড়ব না।আমি তোমাকে ছাড়ব না। কী করবে তুমি?”
“আপনাকে বলছি ছেড়ে দিন আমাকে।”
“বললাম তো ছাড়ব না।”
“আপনি কিন্তু আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলছেন।এখনো সময় আছে ভালোয় ভালোয় বলছি ছেড়ে দিন আমাকে।”
“তোমাকে কাছে পাবার জন্য যতদূর অবধি আমাকে যেতে হবে আমি যাবো।এতে যদি তোমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় বিশ্বাস করো আমার এতে কিছুই করার নেই।”
নিদ্রা কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো তিহানের দিকে। বলল,
“আচ্ছা,সবসময় সবকিছু যে আপনার ইচ্ছেমতো হবে সেটা কেন ভাবেন আপনি?অন্যকারোও যে ভিন্ন কিছু মতামত কিংবা ইচ্ছে থাকতে পারে সেটা কি বুঝেন না?”
“আমি কি তোমার ইচ্ছের বা মতামতের প্রাধান্য কখনোই দেইনি নিদ্রা?”
“আমার তো মনে পড়ছে না।আর আপনিও ভালোভাবে মনে করে দেখলে হয়তো খুঁজে পাবেন আদৌ আপনি আমার ইচ্ছের প্রাধান্য দিয়েছেন কি না।”
“আচ্ছা ধরো আমি প্রাধান্য দেইনি। এখন তোমার করনীয় কী?”
এমন সময় দরজার বাহির থেকে অতলের ডাক পড়তেই তিহান নিদ্রাকে ছেড়ে দিল। এদিকে নিদ্রাও আলমারি থেকে জামা বের করে দ্রুত গায়ে দিয়ে ওড়না বুকে জড়াতেই তিহান দরজা খুলে দিল। বলল,
“ডেকেছিলে ভাইয়া?”
অতল তড়িঘড়ি করে বলল,
“হুম,তানহার ফুচকা খেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। তাই সবাই মিলে রাস্তার মোড়ে রহমান মামার দোকানে যাচ্ছি ফুচকা খেতে।নিহানিকে নিয়ে তুই আর নিদ্রাও চল বেশ ভালো লাগবে।”
“না ভাইয়া আমরা যাবো না। আসলে নিহান মাত্রই ঘুমিয়েছে তো এখন ওর ঘুম ভাঙানোটা ঠিক হবে না। তারচেয়ে ভালো তোমরা গিয়ে ঘুরে এসো আমরা না-হয় সময় করে পড়ে যাবো।”
“নিহান যেহেতু সবেই ঘুমিয়েছে আর কী বলব বল। তবে হ্যাঁ, একসাথে সবাই গেলে অনেক মজা হতো।”
“সেটা তো আমিও জানি ভাইয়া।তবে সমস্যা নেই অন্যকোনো একদিন না-হয় সবাই মিলে আবার যাবো। ”
“আচ্ছা, যা ভালো বুঝিস। আমি তাহলে চললাম সবাই আবার অপেক্ষা করছে।”
“আচ্ছা যাও।”
অতল চলে যেতেই তিহান ঘরের দরজা লক করে দিল। পেছন থেকে নিদ্রা ভারী গলায় বলল,
“দরজা লক করেছেন কেন, আমি বাহিরে যাবো সাইড দিন।”
“তুমি বাহিরে যেতে চাইলেই যে যেতে পারবে তা কেন ভাবছ?আমার কথা বলা শেষ হোক তারপর না-হয় বাহিরে যাবে।”
“কিন্তু আমার শোনার মত কোনো কথা তাও আবার আপনার থেকে আছে বলে আমার মনে হয় না।”
বলেই তিহানকে পাশ কাটিয়ে নিদ্রা চলে যেতে নিলেই নিদ্রার দু-হাত চেপে ধরল তিহান।পেছনে ধাক্কা মেরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিদ্রার একদম কাছে ঘেঁষে দু’হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,
“কী পেয়েছ আমাকে?মানুষ মনে হয়না, জানোয়ার মনে হয়? কত ঘুরাবে….আর কত ঘুরাবে বলো। একটা ভুলের শাস্তি আর কতদিন, কতভাবে, কী কী পদ্ধতিতে দিবে বলো।”
হুট করে তিহান এতটা কাছে আসায় নিদ্রা হতচকিয়ে যায়।চোখমুখ কুচকে বলল,
“কী করছেন আপনি? দূরে যান। দূরে গিয়ে আপনার যা কথা বলুন কিন্তু, প্লিজ আপনি দূরে সরে যান।”
“কেন, আমার কাছে আসাটা বুঝি ভালো লাগছে না? ভয় করছে?ও হো…পুনঃরায় ধর্ষিতা হবার ভয় পাচ্ছো তাই না? ”
তিহানের এরকম আচরণ দেখে নিদ্রা চোখ বুঝে চিৎকার করে বলল,
“লজ্জা না,ঘেন্না করে। হ্যাঁ হ্যাঁ, ঘেন্না…. আপনাকে দেখলে আমার ঘেন্না করে।আপনার মত মানুষ ঘেন্নারই যোগ্য এর থেকে বেশি কিছু না।”
“নিদ্রা……”
“নিদ্রা বলে লাভ নেই। আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি আর অন্তরের অন্তস্তল থেকেই বলেছি।যে মানুষ কি-না তার পুরনো প্রেমিকার জন্য বিয়ে করা বউকে ফেলে চলে যেতে পারে সে ঘেন্না ছাড়া অন্যকিছুর যোগ্য হতেই পারে না।”
বলেই চোখের জল ফেলে তিহানের চোখে চোখ রাখল নিদ্রা। কাঁপা গলায় আবারও বলল,
“প্রেমিকার ভালোবাসা থেকে পালাতে তো পাড়ি জমিয়েছিলেন বহুদূর কিন্তু,যাওয়ার আগে একটিবারের জন্য কি ভেবেছিলেন আমার কথা?আমার ভবিষ্যতের কথা?আপনিহীনতায় আমার একাকীত্ব দিনগুলোর কথা?আমাদের এই দাম্পত্য জীবনের কথা? ভাবেননি আর ভাবেননি বলেই মুখ লুকিয়ে চলে যেতে পেরেছিলেন অজানা শহরে। তাহলে আপনার মতো মানুষটিকে ঘেন্না করা ছাড়া আদৌ কি কিছু করার থাকতে পারে আমার?”
“তুমি ভুল বুঝছ নিদ্রা। আমি কিন্তু কোনো তৃতীয় ব্যাক্তির জন্য অজানা পথে পাড়ি জমাইনি। আমি তো…..”
” আপনি তো কী হ্যাঁ? আপনি তো কী?আপনি যে কী জন্য আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তা আমি বেশ ভালো করেই জানি।নতুন করে জানার কোনো প্রয়োজন নেই।আর ওই তৃতীয় ব্যাক্তি শব্দটি না বলে প্রেমিকা বলুন আপনার করা কান্ডের সাথে বেশ মানাবে। ”
নিদ্রা নাকের পানি চোখের পানি এক করে তিহানকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে নিলেই তিহান নিদ্রার হাত চেপে ধরল। এদিকে নিদ্রা এক ঝটকায় তিহানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলল,
“কোন সাহসে আপনি আমার হাত ধরেছেন?আর কোন অধিকারেই বা বারবার এতো কাছে এসেছেন? আপনার তো কোনো অধিকার নেই আমার উপর। যা অধিকার ছিল সেই মাঝরাতে চিঠি লিখার সময়ই নিজ হাতে শেষ করে গিয়েছেন।তাহলে কেন আবার এখন অধিকার ফলাতে আসছেন বারবার?”
নিদ্রাকে পাগলের মতো কাঁদতে দেখে তিহান তার দু-হাতের মুঠির মাঝে নিদ্রার হাত নিয়ে অসহায় গলায় বলল,
” প্লিজ নিদ্রা ঠান্ডা মাথায় একটিবার আমার কথাটি বুঝার চেষ্টা করো।”
“কী শুনব আমি? কী শোনার আছে আমার?আপনার কথাগুলো শুনলে কি আমার সেই দিনগুলো ফিরে আসবে? আমার চোখের কোণ বেয়ে পড়া অজস্র নোনাজলের ধারাগুলো ফিরে আসবে?আমার অসহায় ভরা একাকী দিনগুলো কী ফিরে আসবে?নিহানকে গর্ভে নিয়ে কাটানো সেই ন’টা মাস কি আমার ফিরে আসবে?আসবে না তো। তাহলে কেন শুনব আপনার কথা?কোন কারণে শুনব?”
তিহান কিছু বলার আগেই নিদ্রা তিহানের হাতের মুঠো থেকে হাত ছাড়িয়ে আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আপনি শুধু আমার বাহিরটুক দেখেছেন কখনো ভেতরের আমি টাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেননি।আপনি জানেন, এই আমি আপনার জন্য কত কেঁদেছি?আপনার পথ চেয়ে দিনের পর দিন পার করেছি?বাগানের শিউলি গাছতলায় বসে কত অপেক্ষা করেছি? আপনার লিখা চিঠিকে বুকে জড়িয়ে চোখের জল ফেলে কত রাত পার করেছি? জানেন না, কারণ আপনার জানার ইচ্ছে নেই। আমার কষ্টে যে আপনার কোনোদিনই কিছু যায় আসেনি।কিন্তু আমি….আমি শুধু পাগলের মতো আপনার কথা ভেবে নিজের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছি। নিজের জীবনের সমস্ত রঙ ধুয়ে মুছে সাদা কাগজের মতো করে ফেলেছি।”
“বিশ্বাস করো সেদিন আমি অন্যকোনো তৃতীয় ব্যাক্তির জন্য বাড়ি ছেড়ে যাইনি।আমি তো গিয়েছিলাম কেবল তোমার জন্যে। তোমার মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে তোমার তিহান রূপে ফেরবার জন্যে।”
“না,আমি কখনোই এটা বিশ্বাস করি না আর করবোও না।কারণ আপনি আমায় মনে গাঁথতে নয় বরং অন্য কাউকে ভুলতে চলে গিয়েছিলেন।আপনি কখনোই আমায় ভালোবাসেনি কিংবা ভালোবাসার চেষ্টাও করেননি। আমিই শুধু কারণে অকারণে আপনাকে ভালোবাসতে মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম।”
কথাগুলো বলেই নিদ্রা কেঁদে দিল। তিহান মুচকি হেসে নিদ্রাকে জোরপূর্বক তার বুকে টেনে নিয়ে বলল,
” এতই যখন খুঁজেছ আর এতই যখন ভালোবাসো তাহলে আসার পর একটিবারের জন্য কাছে আসোনি কেন?আর এখন যখন আমি তোমাকে কাছে টেনে নিতে এত করে চাইছি ফিরিয়ে দিচ্ছো কেন?”
এবার আর তিহানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল না নিদ্রা। উল্টো নাক টেনে তিহানকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
” রাগে আর লজ্জায় আসতে পারিনি। আপনার সাথে করা ব্যবহার যে আমাকে বাঁধা দিচ্ছিল আপনার কাছে যেতে।অপরদিকে আপনার এভাবে চলে যাওয়াটাও ভীষণ করে ক্রোধ সৃষ্টি করেছিল মনের মাঝে।”
” আমি জানি, আমি যা করেছি ভীষণ ভুল করেছি।আমার ওভাবে চলে যাওয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি।তবে বিশ্বাস করো সেদিন ওভাবে চলে গিয়েছিলাম বলেই আজ নতুন আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে। নয়তো কখনোই হয়তো এই তোমার আমি টাকে তুমি তোমার করে পেতে না।আর না আমি পেতাম তোমার মায়াজালে আবদ্ধ হবার সুযোগ। ”
“তাই বলে এতটা দূরে চলে যেতে হয়েছিল? তাও আবার এত দীর্ঘদিনের জন্যে?আমার যে কষ্ট হবে, আমি যে কাঁদব জানতে না?”
“জানব না কেন,আমি খুব করে জানতাম তুমি কষ্ট পাবে।তুমি খুব করে কাঁদবে তাও জানতাম।তবে আমার করা ভুলের জন্য তুমি আমায় ঘেন্না কর‍তে শুরু করেছিলে তাও বুঝে গিয়েছিলাম। তাই তো দূরে চলে গিয়েছিলাম।”
“দূরে চলে গেলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়? দূরে না গিয়ে কাছে থেকেও তো আমাকে বুঝতে পারতে তাই না?”
“হয়তো পারতাম কিংবা না।তবে আমার মতে দূরে যাওয়াতেই হয়তো আমাদের সম্পর্কের ভিতটা মজবুত হয়েছে। কাছে থাকলে এতটা হতো না।”
“কিন্তু…..”
“আর কোনো কথা নয় নিদ্রা সরি বউ।কথা বললেই কথা বাড়বে তাই এই মুহুর্তের পর থেকে আগের একটি কথাও আর উঠবে না। সব ভুলে আমরা নতুন করে শুরু করব। কি করবে তো শুরু? ”
” আমিতো চাই আপনার হয়ে বাঁচতে। আপনার অন্তরে নিজের নাম লিখাতে। আপনার ভালোবাসায় নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে। ”
” আমিও তো তাই চাইরে পাগলী। তবে হ্যাঁ, তার আগে তোমায় একটা কাজ করতে হবে। ”
নিদ্রা মাথা উঁচু করে চোখের জল ফেলে তিহানের চোখে চোখ রেখে ডুগ গিলে বলল,
” কী কাজ বলুন, আমি আপনার হওয়ার জন্য সবকিছু করতে রাজী আছি। ”
” এই মুহূর্তে সবকিছু লাগবে না, আমার সময়মতো আমি নিজেই আদায় করে নিব। এখন আপাতত তুমি আমায় তুমি করে ডাকো তাহলেই হবে। ”
” তুমি করে বলব! ”
” কেন পারবে না? আমায় আপন করে নিতে পারবে না তুমি? ”
” পারব আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তোমার ভালোবাসা পেতে আমি সবকিছু করতে পারব। ”
বলেই নিদ্রা তিহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর তিহান শক্ত করে নিদ্রাকে জড়িয়ে ধরে নিদ্রার চুলের ভাজে চুমু দিয়ে মুচকি হাসল।
.
আকাশে পূর্ণ জ্যোৎস্না। আর তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগণিত ঝলমলে তারা। এ যেন এক অপরূপ দৃশ্য। আর সেই দৃশ্য একে অপরের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে উপভোগ করছে অতল ও তানহা। আজ যে তাদের খুশির সীমানা নেই। তাদের অপূর্ণতা যে পূর্ণ হতে চলল বলে। আর মাত্র ৩ মাস। তারপরই যে তাদের কোল জুড়ে আসছে এক ছোট্ট তানহা। কথাগুলো ভেবেই দুজনের মনে বয়ে যাচ্ছে এক শান্তির ছোঁয়া। তাইতো তারা চুপটি করে অনুভব করছে সেই শান্তির ছোঁয়াকে। এমন সময় কারো হাঁটার শব্দ পেতেই অতল ও তানহা ফিরে তাকালো ছাদের দরজার দিকে। আর ফিক করে হেসে দিল দুজন। অতল বলল,
” বেশ লাগছে তো তোদের দেখতে। তোর পাজ কোলে নিদ্রা আর নিদ্রার কোলে নিহান। উফফ! কি যে লাগছে না। দাঁড়া দাঁড়া তোদের একটা ছবি তুলি। ”
বলেই অতল প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই দেখে সে মোবাইল আনতে ভুলে গিয়েছে। বলল,
” ধ্যাৎ! মোবাইল-ই তো আনিনি। ”
অতলের কথাটি শুনে নিদ্রা তিহানের কোল থেকে নেমে যেতে চাইলেও তিহান নামতে দিল না। উল্টো নিদ্রাকে পাজ কোলে নিয়েই হেসে অতলের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলল,
” মাঝে মাঝে ভালো জিনিসকে ফ্রেমে বন্দী করতে নেই। অন্যকেউ দেখলে নজর লাগিয়ে দিতে পারে। ”
” তা ঠিক বলেছিস। ”
” হুম, তবে ভাইয়া এটা কিন্তু কথা ছিল না।”
” কোনটা? ”
” এই যে আমি আমার বউকে কোলে নিয়ে রেখেছি আর তুমি তোমার বউকে দাঁড় করিয়ে রেখেছ। মনে আছে কি ঠিক করেছিলাম ছোট থাকতে আমরা? ”
” হুম হুম, মনে আছে তো দাঁড়া সেই কথাটিও পূরণ করে ফেলছি। ”
বলেই অতল তানহাকে পাজ কোলে নিয়ে নিল। সাথে সাথে নিদ্রা খিলখিল করে হেসে বলল,
” এতক্ষণ আমার লজ্জা লাগলেও এখন লাগছে না আপু। আমার মতো তুমিও যে ভাইয়ার কোলে হি হি..”
তানহা বলল,
” তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? কি করছ কি তুমি? নামিয়ে দাও আমায়। ”
অতল বলল,
” আমার ছোট ভাই আমার সামনে তার বউকে কোলে নিয়ে রেখেছে আর আমি নিব না তা কি হয়? আর এমনিতেও আমরা ছোট থাকতেই ঠিক করেছিলাম দুজন দুজনের বউকে পাজ কোলে নিয়ে ছাদে এসে একসাথে জ্যোৎস্নাবিলাস করব। তবে আজ অবধি সেই প্ল্যানে আমরা সাকসেস হতে পারছিলাম না, যেটা আজ দুজনের অজানার ভেতরই সাকসেস হয়ে গেল। ”
” কিন্তু…! ”
” কোনো কিন্তু না। চুপ করে নিদ্রার মতো বুকের সাথে মিশে থাকোতো। ”
তানহা মুচকি হেসে আর কিছু বলল না, কেবল অতলের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। এদিকে অতল তিহানকে বলল,
” তিহান তুই কিন্তু ভাবিস না, তুই নিদ্রা ও নিহানকে কোলে নিয়ে আমার থেকে এগিয়ে আছিস। আমিও কিন্তু তোর মতই কোলে নিয়ে আছি। তবে একটাই ব্যবধান আমাদের ছোট্ট তানহা এখনো বড় তানহার কোলে আসেনি। কেবল পেটের ভেতর গোল গোল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ”
কথাটি শুনেই তিহান আর নিদ্রা বেশ জোরে হেসে ফেলল। তিহান বলল,
” ভাইয়া, অবশেষে আমাদের সংসারে শান্তি ফিরল। ”
” চারটি জীবনের পূর্ণতা যে ঘিরে ধরেছে সংসারকে। শান্তি না ফিরে যাবে কোথায়? শান্তিরাও যে চায় শান্তির মাঝে বাস করতে। ”
অতল তানহাকে আর তিহান নিদ্রা ও নিহানকে পাজ কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদের মুখ করে। আর তাকিয়ে আছে হাসি মুখ করে ভরা আকাশের দিকে। আজ যে কেবল চারটি জীবনের পূর্ণতা পায়নি, পূর্ণতা পেয়েছে আলো, বাতাস পুরো এই জগৎ সংসার। এ চারটি জীবনের হাহাকার ঘোচানো হাসি মুখ দেখে। আর ছড়িয়ে দিয়েছে ভুবন জুড়ে মনোমুগ্ধকর জ্যোৎস্নাবিলাসের অসহ্যনীয় মায়া।
.
.
(সমাপ্ত)
(অবশেষে সমাপ্তির দেখা মিলল অন্তরালের কথা গল্পের। সবার অনুভূতি কেমন?)অবশ্যই জানাবেন কেমন কেমন লাগলো

1 COMMENT

  1. Golpota khub koster……. Niyoti manus ke kothi ane……. Duti valobasar manus alada hole ki je kosto seta ak matro tarai bujhe…….. Ai golpota pore amaro kanna paye chilo onek………. But sob sese charti manus sukhi hote pareche ata dekhe mone santi payechi……… Somoy sob kichu thik kore dei………. Osomvob sundor golpota……… Darun darun darun….. Thanks for beautiful story.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here