#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:৬
সেদিন রাতে আফিন,অবনী কেউই সেই মিষ্টি মুহূর্তটাকে ভুলতে পারছিলোনা।ভুলবেই বা কি করে তখন কেউই যে কারোর মাঝে ছিলোনা।আফিনের সেই দৃষ্টি অবনীর ভিতরটাকে যেন কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো।বিছানার ওপরে থাকা ফোনটা হাতে নিলো অবনী।কন্টাক্ট লিস্টে গিয়ে আফিনের নম্বরটি একবার দেখে নিলো।হয়ত ভাবছিলো সে কল করবে।কিন্তু করেনি।ফোনটা আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করে ঘুমিয়ে গেলো অবনী।
শরীরটা ভালো লাগছেনা আফিনের।ঘাড় মাথায় প্রচন্ড রকমের যন্ত্রনা হচ্ছে।একটা ডিসপ্রিন নিয়ে শুয়ে পড়লো আফিন।অবনীর অনেক কাছে চলে গিয়েছিলো আজ ও।মেয়েটা অজান্তেই ওর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।মেয়েটা ভীষন ভাবে প্রভাবিত করছে আফিনকে।অবনীকে ভাবতে ভাবতে চোখে একরাশ ঘুম এসে ভর করে আফিনের।কিছু বিদঘুটে স্বপ্ন দেখতে থাকে আফিন।কেউ যেন ওকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।ওর শরীর থেকে মাংস আলাদা করছে।ঘুমের মাঝেই আফিন অনূভব করতে পারে ওর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে।
সকালে অবনীর ঘুমভাঙ্গে ফোনে রিংটোনের শব্দে।ঘুমেরঘোরেই ফোন রিসিভ করে কানে ধরে অবনী।
অপর পাশ থেকে ঘুমঘুম গলায় আফিন বলে উঠলো আজ ড্রাইভার পাঠিয়েছি।সে তোমাকে নিয়ে আসবে আর নিয়ে যাবে।আমি আসবোনা।অবনীকে চুপ থাকতে দেখে আফিন বলে উঠলো জলদি রেডি হও।ড্রাইভার পৌছে যাবে।কথা গুলো বলে ফোন রেখে দিলো আফিন।অবনী কান থেকে ফোন সরিয়ে কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে ছিলো।কালকের বিষয়টা নিয়ে হয়ত আপসেট আছেন ওনি।কিন্তু কাল যা হয়েছিলো সেটা তো দুজনেরই ঘোরের মাঝে হয়েছিলো।ওনার কোন দোষ নেই।তাহলে আসবেননা কেন?ওনার সাথে আসাটাই তো অভ্যাস হয়ে গেছে।ভালো ও লাগছেনা আজ কলেজে যেতে।সামনে পরীক্ষার কথা ভেবে অগত্যা উঠে পড়তে হলো অবনীকে।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো অবনী।ফোনে আবার ও কল এলো তবে এখন একটি আননোন নম্বর থেকে।ফোন রিসিভ হতেই অপর পাশ থেকে ড্রাইভার বলে উঠলো আমি বাসার নিচে আছি।আফিন স্যার পাঠাইছে আমারে।আপনারে কলেজে নিবার লাইগা।আফিন নামটি শুনতে চিনতে পারেনি অবনী।কিন্তু কলেজে নেবার কথা বলতেই চিনতে দেরি হলোনা অবনীর।সেই পরিচিত মুখটাই আফিন।অবনী ফোন রেখে নিচে নেমে আসে।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই অবনী গাড়িতে বসে পড়লো।আপনার স্যার আসেননি কেন?ড্রাইভার কে প্রশ্ন করলো অবনী।
স্যারের অনেক জ্বর।আজ অফিসে ও যায় নাই।বলে উঠলো ড্রাইভার।ওহ।কিছুটা মন খারাপ করলো অবনী।কলেজে পৌছে গেলো অবনী।আজ অন্তরার সাথে বেশি কথা বলে নি এমনকি হাসে ও নি।অজান্তেই মনটা ভীষন খারাপ ছিলো।অন্তরা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু জবাব ছিলো না অবনীর কাছে।আজ ঘরে ও মন ভালো লাগছে না অাফিনের।মেয়েটাকে দেখা ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা আফিনের।শূন্য শূন্য লাগে বুকখানি।একটু জলপরীর দেখা পেলে মন্দ হতোনা।মুখটা ও কেমন তেতো লাগছে।স্যুপ এনে দিয়েছিলো মেইড সার্ভেন্ট।এতো ঝাল ছিলো এক চামচের বেশি খেতেই পারলোনা অাফিন।অবনী কে ড্রাইভার নিয়ে আসতে গেলো।গাড়িতে ঢুকে বসলো অবনী।আপনার স্যারের বাসায় নিয়ে চলুন আমায়।বলে উঠলো অবনী।জি।বলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো ড্রাইভার।কিছুক্ষনের মাঝেই আফিনের বাড়িতে পৌছে যায় অবনী।বাড়ির গেটে ঢুকেই মাথা ঘুরে যাওয়ার যোগাড় অবনীর।বড় বাগানে ঘেরা,সুইমিংপুল, দোলনা দিয়ে সাজানো। বাগানের ফুলগুলো দেখতে দেখতেই বাসার ভিতরে ঢুকলো অবনী।প্রাসাদ থেকে কম নয় ওনার বাসা।বাসায় ঢুকতেই দুপাশে বড় দুটি সিংহের শোপিজ।চকচক করছে সেগুলো।ভিতরে আরো সুন্দর করে সাজানো।দামী দামী আসবাবপত্র ব্যাবহার করা হয়েছে পুরো ঘরে।লোকটা সৌখিন আছে।একটা মেয়ে এসে অবনীর সামনে দাঁড়ালো।আফিন স্যারের রুমটা কোন দিকে?মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো অবনী।সিড়ি দিয়ে উঠে ডানপাশের রুমটা।বলল মেয়েটা।তবে আপনি কে ম্যাম? ঠিক চিনতে পারলাম না।মেয়েটি বলল।
আমি অবনী।স্যারকে দেখতে এসেছি।কিছু খেয়েছে স্যার?না বলে মেয়েটি অবনীর সামনে থেকে চলে গেলো।সিড়ির দিকে পা বাঁড়ালো অবনী।চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে ছিলো আফিন।সারারাত ঘুম হয়নি ওর।হঠাৎ নুপুরের মিষ্টি শব্দে চোখ থেকে হাত সরালো আফিন।নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।সত্যি কি এসেছে ওর জলপরী?হলুদ একটি স্যলোয়ার কামিজ পরে এসেছে অবনী।কানে ছোট্ট একজোড়া টপ।চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। চুলগুলো এলো মেলো ভাবে পিঠে ছড়িয়ে আছে।সত্যি সুন্দর লাগছে অবনীকে।একদম পাগল করার মতো সুন্দর।আফিন শোয়া থেকে খাটে হেলান দিয়ে উঠে বসলো।অবনী আফিনের কাছে এলো।খান নাই কেন এখনো?প্রশ্ন করে উঠলো অবনী।আপনি কি করে জানলেন?আর এখানে কেন আপনি?আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।খাননি কেন?বলে উঠলো অবনী।স্যুপ টা এতো ঝাল ছিলো।বলার মতো না।বলল অাফিন।ওহ।অবনী আর অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে গেলো।নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে নিলো আফিনের জন্য।আফিন অবাক চোখে অবনীকে দেখছে।মেয়েটা ওর জন্য সুপ বানিয়ে আনলো?অবনী আফিনের পাশে বসে চামচে একটু সুপ নিয়ে আফিনের দিকে ধরলো।
অবনীকে একনজরে দেখছে অাফিন।মেয়েটা বড় মায়াবী।এই মায়াভরা মুখটাই আফিনকে অবনীর দিকে টানে।খেয়েনিন অবনীর কথায় ঘোর ভাঙ্গে আফিনের।নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিলো।চামচের সুপটুকু খেয়ে নিলো অাফিন।অবনী ওকে খাইয়ে দিচ্ছে ভাবতেই মনটা ভরে গেলো আফিনের।
সুপ খাইয়ে দিয়ে অবনী আফিনের কপালে হাত রাখলো।গা তো পুড়ে যাচ্ছে!!! চিন্তিত হয়ে বলল অবনী।আফিনের পাশ থেকে রুমাল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো অবনী।রুমাল ভিজিয়ে আফিনের পাশে এসে বসে পড়লো।আফিনের হাত পা মুখ মুছে দিতে থাকলো অবনী।জ্বর একটু কমে এসেছে।নিজ হাতে রান্না করে আফিন কে খাইয়ে সন্ধ্যায় অবনী বেরিয়ে পড়লো।রাতে মেয়েটাকে অনেকবার কল দিয়েছিলো অবনী আফিনের খবর জানতে।রাতে ও নাকি আফিনের গা পুড়ে যাচ্ছিলো জ্বরে।
(