অন্ধকার পল্লী পর্ব ৭

#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:৭

পরপর দুইদিন অবনী এসেছিলো আফিনকে দেখতে।আফিনের রান্না থেকে শুরু করে ওর শরীর মুছে দেয়া,নিজ হাতে খাইয়ে দেয়া সব করেছে অবনী।লোকটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে ও।লোকটার যত্ন নেয়া ওর কাছে দায়িত্ব থেকে আরো বেশি কিছু মনে হচ্ছে।আপনজন না হলে ও হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকে সে অবনীর।আবার এমন কি রোজ রাতে ভিডিও কলে অবনী কে দেখেছে আফিন।আর অবনী পড়াশুনা করেছে।মাঝে মধ্যে আফিনের কথায় দুএকটা জবাব ও দিয়েছে।
দুইদিনের একটা লোকের জন্য এমন অনুভব হওয়াটা বেশ অদ্ভুত লাগে।কিন্তু অবনীর ক্ষেত্রে এমন টা হচ্ছে।না চাইতে ও আফিনকে নিজের হৃদয়ে জায়গা দিতে শুরু করেছে ও।তিনদিন এর দিন অবনী আফিনের বাসায় এলো।আজ একটু দূর্বল তারপর ও আগের থেকে ভালো আছে আফিন।আজ অবনীদের কলেজে অনুষ্ঠান ছিলো যার কারনে একটা মিষ্টি কালারের শাড়ী পরে এসেছে অবনী।আফিন রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।নুপুরের শব্দে মাথা তুলে তাকায় আফিন।পরনে শাড়ী,খোলা চুল, হালকা সাজ হাতে কিছু চুড়ি,কপালে টিপ সত্যি এতোটা অসাধারন লাগবে ভাবনাতীত ছিলো আফিনের।কখনো পরী দেখেনি আফিন কিন্তু আজ বুঝতে পারলো পরী কেমন?পরী স্বয়ং যে ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

চাঁদ ও আজ লজ্জা পাবে অবনীকে দেখে।অবনীর সৌন্দর্য লক্ষ চাঁদ তারা কে হারিয়ে দিয়েছে।

আফিনের এভাবে ওর দিকে এক নজর তাকানোয় খানিকটা লজ্জা পায় অবনী।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অবনী।আফিন উঠে দাঁড়িয়ে অবনীর দিকে এগোলো।অবনী পিছুচ্ছে আর আফিন ওর দিকে এগিয়ে আসছে।পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলো অবনী।অাফিন অবনীর সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালে হাত রাখলো।পরীর মতো লাগছে আপনাকে।সেটাকি জানেন আপনি?আফিন মুচকি হেসে বলে উঠে।অবনী মাথা তুলে তাকায় আফিনের দিকে।অবনীর গাল নাক লাল হয়ে এসেছে।কাঁধের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলোর ফাঁকে ফর্সা কাঁধ দৃশ্যমান অবনীর।অজানতেই দুহাতে অবনীর কোমড়ে হাত রাখলো আফিন।কিছুটা কেঁপে উঠলো অবনী।লোকটাকে সরাতে হবে কিন্তু কি করে?পারছেনা যে অবনী।অবনী কে একটু উঁচু করে ওর নাকে ঠোঁট ছোঁয়ালো আফিন।অবনীর চোখ জোড়া আকস্মিকতার উচ্চতায় পৌছে গেছে।নাকে আর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে অবনীর চুলে মুখ ডুবিয়ে ওর কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়ালো অাফিন।অবনী সোজা দাঁড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে এসব কি করছে এই লোক?।অবনীর হৃদকম্পন খুব দ্রুত গতিতে চলছে।

স্যার আপনার রান্না!!!!!! ওদের দেখে মেয়েটি থেমে গেলো।আফিন সরে এলো অবনী থেকে।

অবনী শাড়ী ঠিক করতে করতে বেরিয়ে গেলো।পাকঘরে এসে দাঁড়ালো অবনী।রান্নায় মন দিতে হবে ওর।ওসব ভাবলে চলবেনা।কোমড়ে আঁচল গুঁজে রান্বা করতে লাগলো অবনী।সিড়ি থেকে মুগ্ধতার সাথে অবনীকে দেখছে আফিন।একদম বৌ বৌ লাগছে মেয়েটাকে।নেক্সট উইক ও আমেরিকায় যাবে।পাঁচদিনের ট্রিপ থেকে এসে অবনীকে নিজের করে নিবে আফিন।বিয়ে করে নিবে অবনীকে।কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো আফিন।নিজের রুমে চলে গেলো আফিন।অবনী রান্না সেরে খাবার নিয়ে আফিনের দিকে প্লেট ধরলো।অন্য সময় হলে খাইয়ে দিতো অবনী।প্লেট দেখে উপরে তাকালো আফিন।হা করে আছে আফিন এই মনে করে যে অবনী ওকে খাইয়ে দেবে।কি হলো প্লেট নিয়ে খেয়ে নিন খাবারটা।বলে উঠলো অবনী।না মানে খাইয়ে দেবেননা?প্রশ্ন করলো আফিন।না আপনি তো এখন সুস্থ আছেন।বলে উঠলো অবনী।অবনীর কথায় কিছুটা রাগ করে ওর হাত থেকে প্লেট নিয়ে অন্যদিকে রেখে দিলো আফিন ভাতের প্লেটটা।কি হলো?খাবেন না?রান্না ভালো লাগেনি?আবার রান্না করবো?এক নাগাড়ে প্রশ্ন করতে থাকে অবনী।নাহ আমি তো এখন সুস্থ খেতে হবে না আমার।অভিমানী কন্ঠে বলল আফিন।
ওহ এই কথা?প্লেটটা নিয়ে আফিনের সামনে এসে বসলো অবনী।নিন খাইয়ে দিচ্ছি।

আফিন অন্যদিকে ফিরে আছে।আরে বাবা খাইয়ে দিচ্ছি তো হা করুন।বলে উঠলো অবনী।অাফিন হালকা হেসে খাবারটা খেয়ে নিলো।বাবারে বাবা এতো রাগ আপনার?

কিছুটা মজার ছলে বলল অবনী।শুনো কাউকে আপনি করে বলিনা আমি।এতোদিন তোমাকে আপনি করে বলতে গিয়ে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।এখন থেকে তুমি করেই বলবো তোমাকে।কি মনে করো না করো I don’t care.গম্ভীর গলায় বলল অাফিন।এতক্ষন আফিনের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলে ও এবার নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসলো অবনী।আচ্ছা ঠিক আছে তুমি করেই বলবেন।এবার শেষ করে নিন ভাতটা।আফিনের মুখে আরেক লোকমা ভাত তুলে দিয়ে বলল অবনী।আচ্ছা এখানে প্রতিদিন আসো সমস্যা হয়না তোমার বাসায়?খেতে খেতে বলল আফিন।নাহ আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।বলে উঠলো অবনী।Oh thats good.বলে উঠলো আফিন।সন্ধ্যা নামার আগেই বেরিয়ে পড়লো অবনী।আজ রাতে ও ল্যাপটপের সামনে বসে অবনীকে দেখছে আফিন।অার অবনী পড়ছে মাথা নিচু করে।গুনগুন করে অবনীকে শুনিয়ে গান গাইতে লাগলো আফিন “যদি বৌ সাজো গো, আরো সুন্দর লাগবে গো।আফিনের গানে মাথা তুলে তাকায় অবনী।জি?কিছু বললেন?প্রশ্ন করলো অবনী।না পড়ো তুমি।বলল আফিন।অবনী চুপচাপ পড়তে লাগলো।আর আফিন একনজরে শুধু অবনীকেই দেখছে।চোখ ফেরানো দায় মেয়েটার থেকে।অবনী ও আড়চোখে আফিনকে দেখে আবার পড়ায় মনযোগ দিচ্ছে।এভাবে তিনদিন চলে গেলো।আফিন অবনীর বাসার গলির সামনে গাড়ি থামালো।অবনী বের হতেই আফিন অবনীর হাত ধরে টেনে ওর গালে চুমু একেঁ দিলো।

চোখ বড় করে ফেলল অবনী।অাফিন সরতেই অবনী বলল খুব সাহস হয়েছে আপনার?শেষমেষ রাস্তায় বলে জিভ কাঁটলো অবনী।

আফিন হেসে সামনে তাকালো। অবনী বেরিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলো।পিছনে ফিরে আফিনকে একবার দেখে নিলো অবনী।আফিন অবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।বাসার একটু কাছে এগুতেই বখাটে মামুন অবনীর হাত টেনে ধরলো।সুন্দরী আজ তোমাকে নিয়ে যাবো চলো।এই রসোগোল্লা নষ্ট হবে যে নাহলে।আসো জানু।তোমাকে অাদর দিবো অনেক।অবনী ওর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে।হঠাৎ মামুনের হাতে সজোরে লাথি বসিয়ে দিলো কেউ।মামুন অবনীর হাত ছেড়ে নিচে পড়ে গেছে।আফিন অবনীর কাঁধ জড়িয়ে ধরেছে।আফিনের গার্ডরা বখাটে গুলোকে এসে মারতে লাগলো।অবনীকে বাসার গেটে ঢুকিয়ে দিলো আফিন।বাসায় যাও।বলে উঠলো আফিন।অবনী অাফিনের হাত ধরলো।আপনি আসেন।বলে উঠলো অবনী।না অবনী।তুমি বাসায় যাও।বলে চলে যেতে লাগলো আফিন।অবনী আফিনের হাত টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নিলো।চলুন বলে অবনী আফিনকে নিয়ে বাসায় এলো।অবনী এটা কে মা?আফিন কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন আমেনা বেগম।মা ও আমার ফ্রেন্ড।রাস্তায় বখাটে গুলো বিরক্ত করছিলো ও বাঁচালো আমায়।বলে উঠলো অবনী।

ওহ।বলে উঠলেন আমেনা বেগম।বাবা বসো সোফায়।আফসানা যা ওনার জন্য পানি নিয়ে আয়।আমেনা বেগম বলে উঠলো।রহমত সাহেব ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন।কে বাবা তুমি?প্রশ্ন করে উঠলেন অবনীর বাবা।

বাবা রাস্তায় মামুন বিরক্ত করছিলো ও বাঁচালো আমায়।ওর নাম আফিন আমার বন্ধু।বলে উঠলো অবনী।ওহ বলে রহমত সাহেব আফিনের দিকে তাকালো।আমেনা যাও আফিন বাবার জন্য রান্না করো।বলে উঠলেন রহমত সাহেব।না আঙ্কেল আমার যেতে হবে।বলে উঠলো আফিন।না বাবা বসো।বললেন রহমত সাহেব।অবনী আর আমেনা বেগম রান্না করতে চলে গেলো।রহমত সাহেব বাহিরে গেলেন কোন এক কাজে।আফসানা আফিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।আফিন আফসানার দিকে তাকিয়ে আবার নিচে তাকালো।আমি কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনেছি।বলে উঠলো আফসানা।কি করে?প্রশ্ন করলো আফিন।আপনি আপুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন সেটা আর কেউ না দেখলে ও আমি দেখেছি।বলেই হাসলো আফসানা।ওহ তাই?প্রশ্ন করলো আফিন।হুম।আপনি যদি চান আমি কথা গুলো বাবা মার থেকে গোপন রাখতে পারি।একটা শর্ত আছে।বলে উঠলো আফসানা।কি শর্ত ভ্রু কুঁচকালো আফিন।আমি জানি আপনি আপুকে লাভ করেন। সেদিক থেকে আমি আপনার শালী।তো কিছুতো গিফট করতেই হয় শালীর মুখ বন্ধ রাখতে।কি গিফট চায় আমার কিউট শালীটা?মায়া ভরা কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফিন।আপু আমার সব চকোলেট খেয়ে ফেলে আপনি আমাকে অনেক গুলো।চকলেট গিফট করবেন।বলল আফসানা।তোমার আপুর চকোলেট পছন্দ?জিজ্ঞেস করলো আফিন।পছন্দ মানে?আপু চকোলেট পেলে বাবু হয়ে যায়।বলল আফসানা।

দুইদিন পর আমেরিকায় যাবো।তখন তোমাদের জন্য অনেক গুলো চকোলেট আনবো।বলল আফিন।অবনী থেমে গেলো আফিনের কথা শুনে।আমেরিকায় যাবেন ওনি?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here