#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত অহনাকে গাড়ি করে বাসায় পৌছে দিয়ে নিজেও বাসায় চলে গেল। অহনা সারাদিন অনন্তের কথা ভাবতে ভাবতে লাগল। অহনা মনে মনে বলল
–আপনি যতই মুখে বলুন না কেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তুু আমার মনে হয় এসবই আপনার নাটক। আমি আপনাকে কিছুতেই বিশ্বাস করব না স্যার।
অনেকগুলো দিন যেতে লাগল।অহনা প্রতিদিন অনন্তের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
ঐদিকে অনন্ত প্রতিদিন অহনার ছবি জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। অনন্তের মা -বাবা অনন্তকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত কারণ অনন্ত দিনের পর দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। অনন্ত বাবার বিজনেস সামলালেও অনন্তের মন পরে থাকে অহনার কাছে। অনন্তের মা বাবা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ছেলের কিছু একটা হয়েছে কিন্তুু অনন্তকে তার মা বাবা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে অনন্ত কিছু হয় নি বলে এড়িয়ে যায়। অহনার মনে অনন্তের জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে সেটা অহনা বুঝতে পারলেও নিজের মন থেকে সবসময় অহনা এড়িয়ে যায়৷ অনন্ত প্রতিদিন অহনাকে দেখার জন্য অহনার কলেজে ছুটে চলে যায়৷ অহনা অনন্তকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যায়। অনন্ত অহনার এড়িয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কয়েকদিন মেনে নিলেও বেশি দিন মানতে পারে নি।
আজ অহনা কলেজ ছুটি হলে কলেজের গেটের সামনে পৌঁছাতেই অহনা অনন্তকে দেখতে পায়। অহনা প্রতিদিনের মতো আজও অনন্তকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে অনন্ত অহনার হাতটা খুব জোরে টান দেয় যার ফলে অহনা অনন্তের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনন্ত অহনার কোমড় জড়িয়ে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসল। অনন্তের এমন কান্ডে অহনা রেগে গিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হচ্ছে টা কি এসব! স্যার আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি! আপনি….
অহনাকে কিছু বলতে না দিয়ে অনন্ত কলেজের সবার সামনে অহনার চুলের পেছন আঁকড়ে ধরে অহনার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। কলেজের সব ছেলে -মেয়েরা, শিক্ষকরা এমনকি রাস্তার লোকেরাও অনন্তের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেল। যখন অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া ছাড়ল তখন অহনা রেগে গিয়ে অনন্তের গালে খুব কষিয়ে সবার সামনে থাপ্পড় দিয়ে দেয়। অনন্ত থাপ্পড় খেয়েও অহনার দিকে তাকিয়ে হাসছে। অনন্তের হাসি দেখে অহনা কিছুটা অবাক হলেও অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে খুব রাগী গলায় বলল
–আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার? সবার সামনে এভাবে আমাকে অপমান করার? ভন্ডামি করার আর জায়গা পান না? সবার সামনে আপনি আমাকে খারাপ, বাজে মেয়ে প্রমাণিত করতে চাইছেন? আপনি কি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন স্যার?
অনন্ত একটা মুচকি হাসি দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এটা অপমান করার জন্য নয় রে অহনা। আমি সবার সামনে জানিয়ে দিলাম যে আমি তোকে কতটা ভালোবাসি৷ আর আমি যে তোর জন্য কতটা বেহায়া হতে পারি তারই প্রমাণ দিলাম। তুই আমাকে অবহেলা করিস তাই আমি তোকে শাস্তি হিসেবে আমার ঠোঁটের স্পর্শ তোর ঠোঁটে দিয়ে দিলাম। যদি এভাবে তুই প্রতিদিন আমাকে এড়িয়ে চলিস তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন শাস্তি তুই পাবি।
অহনা অনন্তের কথা অবাক হয়ে শুনলেও মুহূর্তের মাঝে অহনা চারিদিকে লক্ষ্য করল সবাই আনাগোনা করছে এবং হাসাহাসি করছে৷ অহনার এটা দেখে বেশ লজ্জা লাগল। তাই অহনা অনন্তকে আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। অনন্ত এখনো একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
অনন্ত মনে মনে বলল
–আমি চাইলেই তোকে জোর করে বিয়ে করতে পারি অহনা কিন্তুু আমি তা করব না। আমি চাই তুই মন থেকে আমাকে মেনে নিস। আমি চাই তুই আমাকে মন থেকে ভালোবাস। তারপর আমি তোকে বিয়ে করব। কিন্তুু তুই কেন আমার সাথে এমন করছিস অহনা! এতটা অবিশ্বাস করিস তুই আমাকে!
কলেজের কিছু মেয়ে অনন্তের সাথে কথা বলতে গেলে অনন্ত মেয়েদেরকে এড়িয়ে সেখান থেকে মুহূর্তের মাঝেই চলে গেল।
অহনা বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে খুব কান্না করতে লাগল। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–আপনি এতটা খারাপ স্যার! আমি ভাবতেও পারছি না আপনি আবারও আমার সাথে এমন আচরণ করবেন! শেষে কিনা সবার সামনে আপনি আমাকে…!!! আমি কলেজে এখন কি করে সবার সামনে নিজের মুখ দেখাব! সবাই তো আমাকে ছিহ ছিহ করে ঘৃণা করবে। কলেজের কেউ আর আমার সাথে কথা বলবে না!
ঐদিকে অনন্ত বাসায় গিয়ে নিজের বেডরুমের দরজা বন্ধ করে সোফায় বসে মদ, সিগারেট খেতে থাকে। অনন্ত মাদক সেবন না করলেও অহনার দেওয়া আঘাতে অনন্তের মনটা খুব ভেঙে যায়। অনন্ত নিজে নিজে বলতে থাকে
–বুঝবি অহনা। তুই ঠিকই আমার ভালোবাসা বুঝবি কিন্তুু আমাকে আর তুই সেদিন পাবি না। আমি চলে যাবো তোর থেকে বহু দূরে। তখন তুই আমাকে হাজার খুঁজলেও পাবি না। তখন আমার জন্য কাঁদবি কিন্তুু আমি সেদিন থাকব না।
অনন্ত পাগলের মতো হাসতে থাকে। অনন্ত গিটার হাতে নিয়ে গান গাইতে শুরু করল
🎶তুমি জানো না, তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনেরই সাধনা,,
তোমায় প্রথম যেদিন জেনেছি,,
মনে আপন মেনেছি,,
তুমি বন্ধু আমার মন মানোনা,,
ও তুমি জানো না, তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা🎶
গান গাওয়ার সময় অনন্তের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে৷ অনন্ত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা দেখতে থাকে। অনন্ত আকাশের তারা দেখে মুচকি হেসে বলতে লাগল
–এই তারা আমি যদি তোর কাছে চলে আসি তাহলে কি তুই আমাকে অহনার মতো অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিবি? তুই হয়তো অহনার মতো আমার সাথে বেঈমানী করবি না। অহনাটা না আমার ভালোবাসা খুব অবহেলা করে। আমাকে অবিশ্বাসও করে তুই জানিস তারা?!! আমি নাহয় একটু ভুল করে ফেলেছিলাম তাই বলে ও আমাকে এতটা কস্ট দিবে! জানিস তারা অহনা আজ আমার ভালোবাসার উপহার হিসেবে আবারও আমার গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে। কিছুতেই অহনাটা আমার ভালোবাসাটা বুঝে না। আচ্ছা তারা তুই তো আকাশে থাকিস তুই নিশ্চয়ই সব দেখেছিস? হ্যা নিশ্চয়ই দেখেছিস। হা হা হা আমি আসলেই একটা পাগল। এত মেয়ে থাকতে শেষে কিনা অহনাকেই আমার মনে ধরলো! যাকে ভালোবাসি সেই আমাকে অবহেলা করে৷ আর যারা আমায় ভালোবাসে তাদের আমি অবহেলা করি। মন জিনিসটাও না আজকাল আমার সাথে বড্ড বেঈমানি করছে।
অনন্তকে থাপ্পড় দিয়ে ঐদিকে অহনার মনের ভিতর কেমন যেন কস্ট হচ্ছে। অহনা মনে মনে বলল
–আচ্ছা আমার বুকের ভিতর এত কস্ট হচ্ছে কেন? ওই লুচু দানবটার সাহস কি করে হয় আমার ঠোঁটের উপর অত্যাচার করার! থাপ্পড় মেরেছি বেশ করেছি কিন্তুু তবুও বুকে কেন এত চাপা কস্ট হয়?!
এভাবে আরও অনেকগুলো দিন কেটে যায়। ইদানীং অহনার বুকে প্রচুর ব্যথা হয় এবং শ্বাস কস্ট হয়। মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যায় অহনা। কিন্তুু অহনা ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও আদৌ কি তা স্বাভাবিক?!
।
।
।
#চলবে…..