#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃDoraemon
অহনার কথার কোনো উত্তর অনন্ত দেয় নি। অনন্ত এখনো চুপ করে আছে। অনন্তের চুপ করে থাকা দেখে অহনা আবারো অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো স্যার কিছু বলছেন না কেন? আপনি আবার আপনার শিক্ষক জগতে ফিরে আসবেন তো? আবার ফিরে আসুন না প্লিজ??
অনন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর জন্য যে পেশাটা ছেড়েছি সেই পেশায় আমি আর ফিরে যেতে পারব না অহনা৷ আমাকে তুই জোর করিস না। আমি তোর এই কথাটা রাখতে পারব না। তোকে ভালোবেসেই আমি আমার শিক্ষক পেশাটা ছেড়েছি৷ আমি আমার ভালোবাসার অপমান করতে পারব না। আর আমি আমার কথারও খেলাপ করতে পারব না।
–কেন স্যার আমিই তো আপনাকে বলেছিলাম এই পেশাটা ছেড়ে দিতে এখন আমিই আপনাকে বলছি ফিরে আসতে তাহলে আপত্তি করছেন কেন? ফিরে আসুন না প্লিজ? এমন করছেন কেন?
অনন্ত মুচকি হেসে অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
–আমি চাই না তুই আবার আমার আগের রূপটা দেখে আমাকে ভয় পাস। আমার থেকে দূরে চলে যাস। আমি শিক্ষক পেশায় যাওয়া মানেই আবার তুই আমার ভয়ংকর রূপটা দেখে আমাকে ভয় পাবি৷
অহনা এবার অনন্তের কোল থেকে উঠে পড়ে সোজা অনন্তের মুখের সামনে সোজাসুজি বসল। অহনা এক দৃষ্টিতে অনন্তের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অহনার এভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনন্ত কিছুটা অবাক হয়।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কি আগের থেকে বেশী অসুন্দর হয়ে গেছি নাকি যে এভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস?
অনন্তের কথা শুনে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি দেখতে এত সুন্দর কেন? কি আছে আপনার মধ্যে?
অহনার কথা শুনে অনন্ত ৪২০ ভোল্টের শক খেল। অনন্ত কখনো আশা করে নি অহনাও তাকে অন্যান্য মেয়েদের মতো এমন প্রস্ন জিজ্ঞেস করবে! অনন্ত এবার ধমক দিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে নাকি অহনা? কোন কথা থেকে কোন কথায় যাচ্ছিস তার কি কোনো খেয়াল আছে তোর?
–আমিতো ঠিকই বলছি। এত সুন্দর না হলেও আপনি পারতেন। এত সুন্দর ছেলে আমাকে ভালোবাসে এটা দেখতে বড্ড বেমানান লাগছে।
–অহনা তুই কি ঠিক আছিস?
–হ্যা আমি ঠিকই তো আছি৷
অনন্ত এবার রেগে অহনার দু বাহু ঝাকিয়ে চিতকার করে বলল
–তুই কি বলছিস তা কি তুই বুঝতে পারছিস অহনা?
অহনার এবার ধ্যান ফিরল। অহনা স্বাভাবিক হয়ে নিজের কথাগুলো মনে করে নিজেই লজ্জা পেতে লাগল। অহনা মনে মনে বলল
–হায় আমার কপাল! আমি এই দানবটাকে এসব বলেছি! ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্ শেষে কিনা আমি এসব বললাম! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এবার তো স্যার আমাকে কেটে কিমা বানিয়ে দিবে!
অনন্ত রাগী গলায় অহনাকে বলল
–তুই যেন কি বলছিলি আমি তোর সাথে বড্ড বেমানান আরো কি বলছিলি আমি এত সুন্দর কেন?
মাথাটা কি তোর মঙ্গল গ্রহে ঘুরতে গিয়েছিল অহনা?
অহনা একটা মরা মরা হাসি দিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আই এম সরি স্যার! আমার ভুল হয়ে গেছে।
অনন্ত অহনার আরো কাছে এসে অহনার মুখের কাছে মুখ এনে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই আমার জন্য একদম পারফেক্ট অহনা। নিজেকে ভুলেও বেমানান ভাববি না। আর আমি দেখতে সুন্দর সেটা আমি জানি এটা তোকে বিশ্লেষণ করে বলতে হবে না। আমার থেকে তুই হাজার গুণে সুন্দরী বুঝেছিস তুই?
অহনা অনন্তের কথায় অবাক সাথে ভয় পেয়ে যায়। অহনা মনে মনে বলল
–সুন্দরী তাও আবার আমি! জীবনেও কেউ আমাকে সুন্দরী বলল না। আর উনি যে কি দেখে আমায় ভালোবাসলেন একমাত্র খোদাই জানেন! পৃথিবীতে কি মেয়েদের অভাব পড়েছে শেষে কিনা আমার মতো গরীব বিশ্রী মেয়েকেই উনার পছন্দ হলো। ভাবা যায় এগুলা।
অনন্ত একটু মুচকি হেসে বলল
–ভালোবাসা এমনিতেই হয় অহনা। ভালোবাসা কোনো কিছু বিচার করে হয় না। তুই যেটা ভাবছিস তা নয়। আমি তোকে আগেও বলেছি।
অহনা চোখ বড়বড় করে মনে মনে ভাবতে লাগল
–আমার মনের কথা উনি বুঝলেন কি করে?! উনি কি শিক্ষকের সাথে সাথে জ্যোতিষীও ছিলেন নাকি!
–কি হলো আবার কোন দুনিয়ায় চলে গেলি তুই?
অহনা একটা শুকনো হাসি দিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমি এই দুনিয়ায় এখনো আছি। পরকালে কিছুদিন পর চলে যাবো আরকি!
অহনার কথা শুনে অনন্ত আবার রেগে গিয়ে অহনাকে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অহনা বিছানায় ছিটকে পড়ে। অহনা ভাবতেও পারে নি অনন্ত তাকে আবার মারবে। অহনা গালে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে। অনন্ত দাঁতে দাঁত চেপে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই কি বললি তুই পরকালে চলে যাবি? তোর পরকালে চলে যাওয়ার এতই শক!
অনন্ত অহনার কাছে এসে অহনার দু হাত বিছানায় শক্ত করে চেপে ধরে। অহনা ছুটাছুটি করার চেস্টা করছে। অহনা ভয়ে কান্না করতে করতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স স্যার আমি ওই কথাটা আর কোনোদিনও বলব না। আ আমাকে এ এভাবের মতো ক্ষমা…
অহনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নেয়। অহনা অনন্তের কাছ থেকে ছুটতেও পারছে না। কারণ অনন্ত অহনার দু হাত চেপে ধরেছে। কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো অহনার ঠোঁটে কোনো ব্যথা লাগছে না। অনন্ত যখন অহনাকে ছাড়ল তখন অহনা অনন্তের কাছ থেকে দূরে সরে অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে লাগল৷ তারপর অহনা অনন্তের দিকে তাকিয়ে চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি খুব বাজে স্যার৷ খুব বাজে। অসভ্য, ইতর, বেয়াদব, ফাজিল সব আপনি। আমার সাথে আপনি সবসময় এমন কেন করেন? এজন্য আমাকে আপনি আপনার বাসায় এনেছেন? আমি আজই আপনার বাসা ছেড়ে চলে যাব। আপনার পেশা চাকরি নিয়ে আপনি জাহান্নামে যান৷ আমি আপনাকে খুব খুব খুব ঘৃণা করি।
অনন্ত অহনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে অহনা আবারো অনন্তকে বলল
–কি হলো আবার আমার দিকে অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছেন কেন? লজ্জা করে না আপনার?
–তুই উল্টো পাল্টা কথা বললে আমার কাছ থেকে এই শাস্তিই পাবি অহনা। আর বাসা থেকে যেতে চাইলে তোকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখব। যতদিন না তুই পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছিস ততদিনে তুই আমার বাড়িতে আমার ঘরেই থাকবি। তোকে এক কথা বার বার বলে আমি হয়রান হয়ে গেছি। এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পর।
।
।
।
#চলবে…..