#অন্যরকম_প্রেমকাহিনী
#পর্ব_১০
#অধির_রায়
দুঃখের সময় চিরস্থায়ী নয়৷ সময়টা খারাপ গেলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় নতুন দিনের আশায়৷ সাদাফ এঝন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে৷ ঠিক আগের মতোই হলে থাকা শুরু করছে৷ নিয়মিত সালাত আদায় করে মুনাজাতে মা- বাবার জন্য দোয়া করে৷ ক্লাস শেষে বন্ধু মহল শাহবাগ মাঠে ঘাসের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের সামনে কালো রঙের টয়োটা গাড়ি এসে থামল। ড্রাইভার গাড়ির কপাট খুলে দিল৷ গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসল ছোঁয়ার মা বাবা৷ ছোঁয়ার মা বাবাকে দেখে ছয়টি প্রাণ দাঁড়িয়ে পড়ল৷ পড়ন্ত দুপুরে কেউ ছোঁয়ার মা বাবাকে আশা করেনি৷ ছোঁয়ার বাবা ঘাসের উপর বসতে বসতে বলল,
“দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? আজ আমরা আটজনে মিলে আড্ডা দিব৷ ভার্সিটি লাইফে অনেক আড্ডা দিতাম৷ বসো সবাই৷”
ছোঁয়ার বাবার কথামতো সবাই গোল হয়ে বসে পড়ল৷ গুরুজনের সাথে আড্ডা দেওয়া কেমন জানি দেখায়৷ কিছুতেই কেউ ফ্রী হতে পারছে না৷ বড়লোক ব্যবসায়ী ঘাসের উপর বসে আছেন সেটা যদি সন্তানের বন্ধ মহল হয় তাহলে কথাই নেই৷ আরাফ সংকোচ কাটিয়ে বলল,
“আঙ্কেল, আন্টি কেমন আছেন? আপনারা হুট করেই আমাদের সাথে আড্ডা দিতে আসলেন?”
ছোঁয়ার বাবা অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
“আমার মেয়ে তোমাদের সাথে আড্ডা দেয়৷ আজ আমি একটু আড্ডা দিতে আসলাম৷ আগে তোমাদের পরিচয় দাও৷”
একে একে সবাই পরিচয় দিল৷ সাদাফকে আগে থেকে চিনে তবুও ভদ্রতার খাতিরে আবারও পরিচয় দিল৷ ছোঁয়া এক পাশে গুটিশুটি হয়ে বসে রয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে তার বাবা চলে আসবে কখনও বুঝতে পারেনি। ছোঁয়ার বাবা আরাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“গিটারে কেমন সুর তুলতে পার?
আরাফ তো হেব্বি খুশি৷ মনে লাড্ডু ফুটেছে৷ কেউ তাকে গিটারের কথা বলছে৷ খুশিতে ঠে’লা’য় কাথায় বলতে পারছে না৷ আমতা আমতা করে বলল,
“আমি গিটারে টুংটাং সুর তুলছি৷ আপনি নিজেই জার্জ করে নিন৷”
ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি গিটারে সুর তুল৷ আমরা দু’জনে গানের সুর তুলি৷”
সকলের চোখ আকাশপ্রাণে৷ চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছয় জোড়া চোখ৷ বিষ্ময় কাটিয়ে আরাফ গিটারে টুংটাং শব্দ তুলল৷ ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়ার মাকে রোমান্টিক মুডে চোখ টিপল দিয়ে মধুর স্বরে গান ধরল৷
♪♪মুখে মুখে রটে যাবে আমাদের প্রেমকাহিনী।
আবাক হয়ে দেখবেই এ দুনিয়ায়,
করবে সবাই কানাকানি।♪♪
ছোঁয়ার মাও মধুর স্বরে বলে উঠল,
♪♪ মুখে মুখে রটে যাবে আমাদের প্রেমকাহিনী।
আবাক হয়ে দেখবেই এ দুনিয়ায়,
করবে সবাই কানাকানি।♪♪
ছোঁয়ার বাবা বলল,
♪♪তোমার এ হাত যে ধরেছি মরণ এলেও ছাড়ব না৷
যতই না মানুষ দিক বাঁধা প্রেমের খেলায় আমি হারব না৷♪♪
ছোঁয়ার মা বলল,
♪♪তুমি আমার দিন, তুমি যে রাত৷ তোমায় নিয়ে দিন কাটাব সারাদিন।
একটি পলক যদি দূরে যাও, আমার ছাড়া পাঠাব৷ ♪♪
ছোঁয়ার মা বাবা এক সাথে বলল,
♪♪” আজ যা বলব ভালোবাসায় কাল হবে প্রেমের বাণী।”
বন্ধু মহল এক সাথে সুর মেলাল
❝মুখে মুখে রটে যাবে আমাদের প্রেমকাহিনী।
আবাক হয়ে দেখবেই এ দুনিয়ায়,
করবে সবাই কানাকানি।❞
ছোঁয়ার মায়ের কন্ঠে ধ্বনিত্ব হলো,
♪♪এখন প্রেমের বড় অসময় পাড়িজার ফুল আর ফুটছে না৷
দেহের ভাষায় নয় মনের ভাষায়। কথা বলার লোক জুটছে না৷
তবুও এই মরুর মাটিতে একটু বাগান আমি সাজাব৷♪♪
ছোঁয়ার বাবার কন্ঠে ধ্বনিত্ব হলো,
♪♪ভালোবাসার এই রাগ রাগীনি, নতুন স্বরে তাল বাজাব৷
ইতিহাসে থাকবে লেখা, আমাদের এ জীবনী৷♪♪
এক সাথে সবাই বলে উঠল,
❝মুখে মুখে রটে যাবে আমাদের প্রেমকাহিনী।
আবাক হয়ে দেখবেই এ দুনিয়ায়, হই
করবে সবাই কানাকানি।❞
বন্ধু মহল প্রশংসায় মুখরিত হয়ে উঠল৷ ছোঁয়ার বাবাব সাদাফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সাদাফ আমরা ঘুরিয়ে কথা বলতে আসিনি৷ আমরা সরাসরি কথা বলার জন্য চলে আসছি৷ তোমার মা যখন বেঁচে ছিলেন৷ তখন উনার সাথে কথা হয়েছিল৷ উনি তোমাদের মাঝে কাউকে না কাউকে বলেছেন৷ আমরা চাই উনার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে৷”
সাদাফ এক ধ্যানে মাটিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে৷ সবাই সাদাফের উত্তরের আশায় রয়েছে৷ সাদাফ মেঘার কাছ থেকে জানতে পেরেছে মা বিয়ে নিয়ে ছোঁয়ার সাথে কথা বলেছে৷ সাদাফ মুখ তুলে বুকের মাঝে সাহস জুগিয়ে বলল,
“আঙ্কেল আমার মা বাবা কেউ নেই৷ ছোঁয়াকে আমি সুখী করতে পারব কিনা জানি না৷ আমি নিজেই হলে থাকি৷ ছোঁয়া আমার লাইফে আসলে ছোঁয়া নিজে সুখী থাকবে তো৷ ছোঁয়া আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তো৷ ছোঁয়ার আমার সাথে থাকতে পারলে আমি রাজি৷ শর্ত একটাই আপনার কাছ থেকে এক পয়সাও নিতে পারবে না৷”
ছোঁয়া সাদাফের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি তোমার সাথে সব জায়গায় থাকতে পারব৷ এক বেলা না খেয়েও থাকলে ভালোবাসার অভাব পড়বে না৷ আমি নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব৷”
সাদাফের বাবা বলল,
“ছোঁয়া বড় হয়েছে৷ বাবা হিসেবে তার ভালোবাসার মূল্য দেওয়া আমার উচিত। আমি সব সময় তোমাদের ভালোবাসাকে সম্মান করি৷ বিয়ের পর আমার কাছ থেকে তুমি এক বিন্দু সাহায্য পাবে না৷ এমনকি আমার কোম্পানিতে জবও করতে পারবে না৷ বাকি চারজন চাইলে করতে পারবে৷ তুমি বা ছোঁয়া করতে পারবে না৷ তোমরা কখনও এমনটা আশা করবে না৷ তুমি বিয়ের পর ছোঁয়াকে কোথায় রাখবে আমরা জানতে চাইব না৷ আমরা জানব আমাদের মেয়ে সুখে আছে৷ আর কষ্ট থাকলে আমার কাছে ভালো লাগবে৷ কোনদিন কষ্ট বুঝেনি৷ একটু কষ্টের মাঝে গেলে জীবনে অনেককিছু শিখতে পারবে৷ কিন্তু মাসের যেকোনো একটা দিন আমাদের দিতে হবে৷ সেদিন তোমাদের কোন কথা শুনব না৷ সেদিন দু’জনই আমার কথা মতো চলবে৷”
সাদাফ ছোঁয়ার দিকে এক পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল৷ ছোঁয়ার চোখে চোখ পড়তেই ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলল৷ সাদাফ ভালোবাসার স্বরে বলল,
“আমি আমার মায়ের ইচ্ছা পূরণ করব৷ আমাকে কিছুদিন সময় দিতে হবে৷ আমি থাকার একটা ব্যবস্থা না করার পর্যন্ত আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ ছোঁয়াকে দেখে রাখবেন৷ আমি চাইনা ছোঁয়া জীবনে কষ্ট করুক৷ আমি আমার মায়ের চাওয়া অবশ্যই পূর্ণ করব৷ আর হ্যাঁ আপনার টাকার প্রতি সাদাফের কোন লোভ নেই৷ সাদাফের ক্ষমতা আছে তার ভালোবাসার মানুষকে সুখে রাখার৷”
সাদাফের উত্তর পেয়ে সবাই সুখীতে মেতে উঠল৷ পড়ন্ত দুপুর এভাবে আনন্দময় হয়ে উঠবে বুঝতে পারেনি৷ সবাই তাদের অভিনন্দন জানাল৷
জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সব আল্লাহর কাছে৷ মহান আল্লাহ তায়ালা কার সাথে জুটি বানিয়ে পাঠিয়েছেন আমরা জানি না৷ দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসল সন্ধ্যা। মায়াময় মোহীনি সন্ধ্যাকে চির স্মরণীয় রাখার জন্য সবাই চলে আসল হাতিরঝিলে৷ ছয় বন্ধু এক হলে তো কথায় নেই৷ দুনিয়ার সব কিছু ভুলে যায়৷ ছোঁয়া সাদাফকে একা রেখে সবাই উধাও হয়ে যায়৷ ছোঁয়া লজ্জায় সাদাফের দিকে তাকাতে পারছে না৷ অন্য দিন হলে অ’স’ভ্য মেয়ের মতো তাকিয়ে থাকত। ছোঁয়া উঠে চলে যেতে নিলেই সাদাফ ছোঁয়ার হাত ধরে নিজের কাছে টানে৷ হেঁচকা টান দেওয়ায় ছোঁয়া সাদাফের গায়ে পড়ে৷ পরক্ষণেই ছোঁয়া নিজেকে সামলিয়ে নেয়৷ ছোঁয়ার লজ্জা দেওয়াট জন্য সাদাফ নেশা ভরা কন্ঠে বলল,
“পা’লি’য়ে যাওয়ার অনেক ইচ্ছা। পালিয়ে গেলে তোর লজ্জামাখা মুখটা দেখবো কিভাবে? তুই পাশে থাকলে আমি দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যায়৷ ইচ্ছা করে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে৷”
ছোঁয়ার লজ্জা মাখা মুখটা লজ্জা আরও ভরে গেল৷ ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলল,
“এতোদিন তোর মুখ থেকে ভালোবাসার কথা বের হয়নি৷ আজ ভালোবাসা উপচে পড়ছে৷ আমি তোকে ভালোবাসি না৷”
ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে কানের ফিসফিস করে বলল,
“ভালোবাসি বলেই ভালোবাসার কথা বলিনা৷ আর তোকে ভালোবাসতে হবে না৷ আমি ভালোবাসা দিয়ে তোর জীবন ভরিয়ে দিব৷ মানুষের মুখে মুখে রটে যাবে আমাদের অন্যরকম প্রেমকাহিনী।”
#অন্যরকম_প্রেমকাহিনী
#পর্ব_১১
#অধির_রায়
অপূর্ণ ভালোবাসার পূর্ণতা পাওয়া মানে পৃথিবীর সমস্ত সুখ হাতের মুঠোয়। এক মুঠো সুখ, এক মুঠো ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সবাইকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়৷ অপেক্ষার ফল সব সময় ভালো হয়৷ সাদাফ ছোঁয়াকেও অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে৷ অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রাণপ্রিয় প্রেয়সীর হাতে হাত রাখার৷
ছোঁয়া রাগ মিশ্রিত লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল,
“তুই কাছে আসার চেষ্টা করবি না৷ আমি তোর পিছনে কতো ঘুরেছি৷ তুই আমার ভালোবাসা বুঝতে পারতি না৷ কোনদিন তো সাড়া দিলি না৷ আজ ভালোবাসা দেখাতে হবে না৷ দূরে সরে বস৷ আমার গায়ের সাথে ঘেঁষে বসতে পারবি না৷”
ছোঁয়াকে লজ্জা ফেলতে সাদাফ আরও নেশা ভরা কন্ঠে বলল,
“তুই রাগ তোকে আরও সুন্দর লাগে৷ তোর মোহ মায়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে৷ তোর মায়া ভরা মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আমি জীবন পার করে দিতে পারব৷”
ছোঁয়া অভিমানী স্বরে বলল,
“আমি এতোদিন এক পক্ষিক ভালোবেসে এসেছি৷ তোর ভালোবাসা আমার জীবনে আগো আসলে আমি নিজের জীবন আরও সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারতাম৷”
ছোঁয়ার মাথা সাদাফ নিজের কাঁধের উপর রেখে বলল,
“তুই পাশে থাকলেই চলবে৷ তুই পাশে থাকলে আমিও সবকিছু গুছিয়ে নিব৷ আমিও তোকে খুব ভালোবাসতাম৷ একটু আগেই না বললাম ভালোবাসি বলেই ভালোবাসার কথা বলিনা৷ কিছু না বলা ভাষা বুঝে নিতে হয়৷ তোর মনে তো সেই ভালোবাসার মন নেই৷ তুই বুঝতে পারবি কবে?”
“আমার মন নীল আকাশের মতো বিশাল নয়৷ আমার ছোট মনে শুধু তোরই বসবাস৷ তোকে নিয়েই স্বপ্ন বুনি৷ তোকে ভাবতে ভালো লাগে৷ অন্য ভাষায় অন্য কিছু না বলা ভাষা বুঝার দরকার নেই৷ আমার ছোট মনে তুই থাকলেই চলবে৷ আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোর বুকে যেন থাকতে পারি৷”
চিরবন্ধু চারজন বসে বসে পাহারা দিচ্ছে তাদের। আরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমরা তাদের কেন প্রেমের পাহারা দিব৷ তারা এখন আমাদের বন্ধু৷ বন্ধুদের কাজ হলো প্রেমের বারোটা বাজানো৷”
অর্পি মলিন কন্ঠে বলল,
“পৃথিবীতে কম ভালোবাসায় পূর্ণতা পায়৷ তাদেরকে সময় দেওয়া উচিত। তারা যেন তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে৷ একটু ভালোবাসার কথা এনে দিতে পারে স্বর্গীয় সুখ৷”
রঙ্গন, আরাফ বিষ্ময় দৃষ্টি মেলে তাকায় অর্পির দিকে৷ অর্পির মুখে এতোদিন আ’জে’বা’জে কথা শুনে আসছে৷ কোন দিন মুখ ফুটে বলেনি ভালোবাসার কথা৷ রঙ্গন চকিত হয়ে বলল,
“ভালোবাসা মানে কি? কাকে ভালোবাসা বলে? এসব বুঝিস৷ তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই ভালোবাসার পিএইচডি করে এসেছিস৷”
অর্পি কিছু বলতে নিবে তখনই মেঘা বলল,
“ভালোবাসার জন্য পিএইচডি করতে হয়না রঙ্গন৷ আমাদের চোখের সামনে যা হচ্ছে আমরা তা দেখতে পারি৷ দেখে দেখে অনেক কিছু শেখা যায়৷ তুই চাইলে পিএইচডি করতে পারিস৷”
আরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“দূর ব আকাল ল তোদের কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ এতো ভালোবাসা কোথা থেকে আসে৷ তোরা এখানে বসে থাকতে পারিস আমি পারব না৷ আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে গেলাম৷”
অর্পি হুট করেই বলল,
“এজন্য তোর জীবনে ভালোবাসা নেই। সাদাফ, ছোঁয়ার কাছ থেকে কিছু শিখতে পারিস৷”
আরাফ তাদের কথার কোন পাত্তা না দিয়ে চলল সাদাফ ছোঁয়ার প্রেমের বারোটা বাজাতে৷ ছোঁয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে সাদাফ৷ বলে যাচ্ছে না অজানা কথা৷ আরাফ ভুতের মতো এসে বলল,
“বা দোস্ত আজই সব কথা শেষ করে ফেলছিস৷ বাসর ঘরের জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখ৷ তোদের দেখে মনে হচ্ছে বাসর ঘরে প্রেম আলাপ চলবে না শুধু…”
আরাফ কথা শেষ করতে পারল না৷ তার আগেই অর্পি আরাফের পিঠে সজোরে থা’প্প’ড় বসাল৷ আরাফ অর্পির দিকে অগ্নি দৃষ্টি মেলে তাকায়৷ অর্পি অট্টহাসি দিয়ে বলল,
“মারা রাগ করিস না৷ তুই হুট করে আসাতে ছোঁয়া সাদাফ লজ্জায় আলাদা হয়ে গেছে৷ দুইজন বেঞ্চের দুই মেরুতে বসে আছে৷ একটু আগেই এসিড + ক্ষারের মতো প্রশমন বিক্রিয়া করছিল৷ তাদের মাঝে কেমিস্ট্রি ফুটে উঠছিল৷ তুই বানিয়ে দিলি মরুভূমি।”
আরাফ ছোঁয়ার মাথায় গা*ড্ডা মে*রে বলল,
“কু”ত্তী আস্তে থা”প্প”ড় মা”র”তে পারতি৷ আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিছি৷ যার জন্য তুই আমাকে এতো জোরে…আর একটু হলে আমি উপরে চলে যেতাম৷”
মেঘা মুচকি হেঁসে বলল,
“মামা বহুদিন হলো ফ্রীতে চল্লিশা খাইনা৷ তুই উপরে চলে যেতে পারিস৷ আমি ফ্রীতে চল্লিশা খাব৷”
রঙ্গন কঠিন স্বরে বলল,
“বাচ্চাদের মতো ঝ’গ’ড়া থামা৷ তোদের দেখে কেউ বলবে তোরা অনার্সের ছাত্র। তোদের দেখে মনে হচ্ছে মা’ন’সি’ক হ’স’পি’টা’ল থেকে আজই পালিয়ে আসছিস৷”
সাদাফ ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
“অনেক হয়েছে৷ তাছাড়া রাত গভীর হচ্ছে৷ অর্পি, মেঘাকে একটু পর হলে ঢুকতে দিবে না৷ তাই কথা না বাড়িয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা শুরু কর৷”
সাদাফের কথায় সম্মতি জানাল সবাই৷ একে একে সবাই প্রস্থান করল৷ সাদাফ ছোঁয়ার জীবনে নেমে আসল ভালোবাসার মুহুর্ত৷ রাতে কিছু প্রেম আলাপ করেই সাদাফ ফেসবুকে পোস্ট করে দিল এক রুমের বাসা লাগবে৷ স্বামী স্ত্রী থাকব৷ ঢাকা শহরে ব্যাচালার বাসা পাওয়া মুশকিল৷ ফ্যামিলি বাসা নিয়ে পোস্ট করার পরপরই দুই একদন পোস্টের কমেন্ট বক্সে চলে আসল৷
ঢাকার বুকে সবই হয়ে গেছে কৃত্রিম। বৈদ্যুতিক তেজস্ক্রিয় বাল্বের আলোয় জোনাকি পোকা বিলীন প্রায়৷ পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে না৷ ঘুম ভাঙে এলার্মের শব্দে৷ দিনের শুরুটা হয় কৃতিমত্ব দিয়ে৷ সাদাফ ঘুম থেকে উঠে নতুন বাসার খুঁজে পা বাড়ায়৷ আরাফকে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে আজ সে ক্লাস করবে না৷ ছোঁয়াকে মন দিয়ে ক্লাস করতে বলা হয়েছে৷ সকল নোট ছোঁয়ার কাছ থেকে নিবে৷
ঢাকার বুকে বাসা পাওয়া কি মুখের কথা? বাসা পেলেও পকেটের পরিস্থিতি সামলিয়ে বাড়া মিলে না৷ সারাদিন ঘুরে ঘুরে অনেক বাসা দেখেও ভালো মানের কোন বাসা পাওয়া গেল না৷ ক্লান্ত দেহে ফিরে আসতে হলো সাদাফকে হলে৷ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সবকিছু হিসাব করে যাচ্ছে৷ চারটা টিউশনি থেকে প্রায় বিশ হাজার টাকা সে৷ বাসা ভাড়া দশ হাজার চলে গেলে বাকি দশ হাজার দিকে কোন রকম চলতে পারবে৷ যদি দশের কম পাওয়া যেত ভালো হতো৷ ছোঁয়ার চাহিদা অনেক৷ কিভাবে দশ হাজার দিয়ে জীবন পার করবে৷ সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখের কোণে ঘুম আসল৷ ক্লান্ত চোখে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল সাদাফ৷
তোলপাড় ক্যাফেডিয়ামে বসেছে বন্ধু মহলের আড্ডা৷ রঙ্গন চায়ের কাপে চুমু দিয়ে বলল,
“সাদাফ গতকাল ক্লাস মিস দিলি কেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি?”
সাদাফ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল,
“সমস্যা কিছুই হয়নি৷ গতকাল বাসা খুঁজতে বের হয়েছিলাম৷ মন মতো বাসা পেলাম না৷ এক রুমের বাসা পাওয়া খুব কঠিন৷ দুই রুমের বাসা পাওয়া যায়। দুই রুমের অনেক খরচ৷ বিশের মতো খরচ পড়বে৷ সেজন্য আজ পোস্ট করেছি সাবলেট বাসা লাগবে৷ দেখি কি করা যায়?”
ছোঁয়া হন্তদন্ত হয়ে বলল,
“তোকে এতো কষ্ট করতে হবে না৷ তুই ভাবছিস আমি যেমন তেমন বাসায় মানিয়ে দিতে পারব না৷ তুই বরং টিনের ঘরের বাসা দেখ৷ দেখবি কম দামের মাঝে ভালো বাসা পেয়ে যাবি৷”
সাদাফ মুচকি হেঁসে জবাব দিল,
“সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না৷ তোরা আড্ডা দে৷ টিউশনি শেষ করে তোদের সাথে আড্ডা দিব।”
চলবে….