অন্যরকম প্রেমকাহিনী পর্ব -১৪ ও শেষ

#অন্যরকম_প্রেমকাহিনী
#পর্ব_১৪ (অন্তিম পাতা)
#অধির_রায়

ছোঁয়া সাদাফকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷ ভালোবাসার মানুষকে হারানোর তীব্র ভয় মনের কোণে বাসা বেঁধেছে৷ সাদাফ ছোঁয়াকে শান্ত করার জন্য ছোঁয়ার কপোলে ভালোবাসার পরশ একে দিল৷ ছোঁয়ার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল,

“ছোঁয়া নিজেকে শান্ত কর। ছাঁদে সবাই চলে এসেছে৷ এভাবে কান্না করলে সবাই কি ভাববে?”

ছোঁয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে ছাঁদ ভর্তি জনগণ। সকলের ঘুম ভেঙে গেছে৷ ছোঁয়ার মা বাবা ছোঁয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে৷ ছোঁয়ার মা ছোঁয়াকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

“জীবনে অনেক ঝড় আসবে৷ সামান্য কারণে ঝড়ে পড়লে চলবে না৷ নিজেকে অনেক শক্ত করতে হবে৷ তোমার উচিত ছিল সাদাফের পাশে দাঁড়ানো৷ তুমি ভিতু হয়ে দূরে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছো?”

সাদাফ বিনয়ী স্বরে বলল,

“ছোঁয়ার সনয়ের সাথে সবকিছু মানিয়ে নিতে পারবে৷ অনেক রাত হয়েছে৷ এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ঘুমাতে যাওয়া উচিত।”

ছোঁয়া তার মা বাবার সাথে ঘুমানোর জন্য চলে গেল৷ একে একে ছাঁদ থেকে সবাই চলে যেতে লাগল৷ মুখে মুখে রটে গেল ছেলে আগে প্রেম করত। স্বভাব চরিত্র ভালো নয়৷ সেদিন ছোঁয়া সাদাফের কোন আক্ষেপ নেই৷

লাল খয়েরী টুকটাকে গ্রাউন পড়ে সাদাফের পাশে বসে আছে ছোঁয়া৷ গায়ে ভারী গহনা। ঠোঁটের কোণে জমে আছে হাসির রেখা৷ সাদাফকে খয়েরী রঙের শেরওয়ানিতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে৷ সাদাফ বার বার আড় চোখে ছোঁয়াকে দেখে যাচ্ছে৷ একে একে সবাই ফুটোফ্রেমে পিক রাখার জন্য পিক তুলতে বিজি৷ ছোঁয়ার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠছে না৷ পরিবেশ ভালোবাসার কোলাহলে পরিপূর্ণ। গান বাজনা বাজছে। মেঘা, অর্পি এবং আরাফ, রঙ্গের মাঝে তুমুল ঝ’গ’ড়ার প্রতিযোগিতা চলছে৷ কেউ কাউকে হারাতে পারছে না৷

একটু ভিড় কমতেই সাদাফ ছোঁয়াকে ফিসফিস করে বলল,

“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে৷ তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না৷ তোমায় মায়ায় হারিয়ে যাচ্ছি৷ তোমার কাজল কালো চোখে ভালোবাসার প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি।”

সাদাফের কথাস ছোঁয়া কিছুটা লজ্জা পেল৷ হুট করেই সাদাফ তাকে তুমি করে বলছে। ছোঁয়া বিনয়ী স্বরে বলল,

“আপনাকেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছে৷ আমার চোখে আপনাকে সব সময়ই সুন্দর লাগে৷ তবে আজ অনেক সুন্দর লাগছে৷ কিন্তু আমার হিং”সা হচ্ছে৷”

সাদাফ ব্রো নাচিয়ে বলল,

“আমাকে দেখে তোমার হিং*সা হচ্ছে কেন? আমি তো মেয়ে মানুষ নয়৷ মেয়ে মানুষকে দেখে তোমার হিং*সা হওয়া উচিত।”

ছোঁয়া একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“আজ এতো সাজার কি দরকার ছিল। কিছু শ”য়*তা”ন মেয়ে আপনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে৷ ইচ্ছা করছে তাদের চোখ তুলে ফেলতে৷ আমার স্বামীর দিকে তারা তাকাবে কেন? আমি শুধু দেখবো আমার স্বামীকে৷”

“বাবা তুমি তো অনেক হিংসু*টে। আমার দিকে কেউ তাকালে নিজেকে হ্যাডসাম বয় মনে হয়৷”

সাদাফকে কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই অনেকে এসে হাজির। ভিড় ঠেলে চলে আসল কাজী সাহেব৷ সাথে ছোঁয়ার বাবা, সাদাফের কাকা৷ কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করল৷ সাদাফ ছোঁয়া একে অপর কবুল বলে শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো৷ চিরদিনের জন্য একে অপরের হলো৷ পূর্ণতা পেলো তাদের ভালোবাসা।

ছোঁয়া বাসর ঘরে সাদাফের জন্য অপেক্ষা করছে৷ সাদাফকে কিছুতেই বাসর ঘরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আরাফ, রঙ্গন, অর্পি, মেঘা৷ দুই জোড়া বাজপাখির হাত থেকে কিভাবে ছাড় পাবে সাদাফ৷ আজ সারারাত তাদের সাথে আড্ডা দিতে হবে৷ তাদের এক দাবী সাদাফ বাসর সেদিনই করতে পারবে যেদিন তারা বাসর করতে পারবে৷ আরাফ সাদাফের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“মামা তোকে বাসর ঘরে কিছুতেই ঢুকতে দেওয়া যাবে না৷ তুই বাসর করবি আমরা এখানে৷ বসে বসে আমরা মশা সাথে যুদ্ধ করব৷ এমনটা হতে পারে না৷”

“অর্পি অট্টহাসি দিয়ে বলল,

” সাদাফ ভাইয়াকে আজ আপুর কাছে যেতে দেওয়া যাবে না৷ আপু আপনার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়বে৷ আপনাকে ভুল বুঝবে৷ আপনার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে৷”

রঙ্গন সাদাফের পীঠে থা”প্প”ড় বসিয়ে বলল,

“মামা তোর কষ্ট দেখে আমার চোখ জলে ভরে উঠেছে৷ অশ্রুময় চোখ থেকে অশ্রু বন্ধ হচ্ছে না৷ আমার নয়নে জল নিবদ্ধ রয়ে আছে৷ শেষ তো সেদিন হবে যেদিন সাদাফ ছোঁয়ার বাসর হবে৷”

মেঘা আফসোসের সহিত বলল,

“সাদাফ আমি এক শর্তে তোকে বাসর ঘরে ঢুকতে দিতে পারি৷”

সাদাফ আহত কন্ঠে বলল,

“তোরা আমার ফ্রেন্ড নাকি শত্রু৷ তোদের এমন কান্ড কারখানা দেখে মনে হচ্ছে আমি তোদের বহু কালের চির শত্রু৷ এভাবে আমাকে আটকিয়ে আমার বাসর মাটি করে দিচ্ছিস ভালো কথা৷ আমার জন্য ছোঁয়া অপেক্ষা করে বসে আছে৷ ছোঁয়ার দিকটা একটু ভেবে দেখ৷”

মেঘা উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“তুই আমার শর্ত মেনে নিলেই তোকে বাসর ঘরে প্রবেশ করতে দিব৷ তোকে আহামরি কিছু বলিনি৷”

সাদাফ মিহি আহত কন্ঠে বলল,

“তোর আবার শর্ত কি? তুই কি আমার সাথে বাসর ঘরে যাবি৷ নাকি আমাদের লাইভ টেলিকাস্ট করবি৷”

মেঘা চোখ পাকিয়ে বলল,

“কু”ত্তা আমার ঠেকা পড়ছে তোর বাসর দেখার৷ তুই আমাদের চারজনকে মোট আট হাজার টাকা দে। এক হাতে টাকা দিবি অন্য হাতে তোকে বাসর ঘরের চাবি দিব৷”

সাদাফ মাথায় হাত রেখে বলল,

“তোরা আমাকে বিক্রি করে দে৷ আমার কাছে এতো টাকা নেই৷ আমার বাসর করতে হবে না৷ আমি এখানেই বসে স্বপ্ন বিলাস বাসর করব৷”

রঙ্গন রাগী গলায় বলল,

“এসব আর ভালো লাগছে না৷ সাদাফকে ছোঁয়ার কাছে যেতে দে৷ গতকাল রাতে অনেক সমস্যা হয়েছে৷ এখন সাদাফকে এখানে আটকিয়ে রাখলে ছোঁয়া ভুল বুঝতে পারে৷ ছোঁয়া তো সাদাফ বলতে পা*গ*ল৷ আমরা চাইনা আমাদের জন্য তাদের সুন্দর জীবনে কোন বা*জে প্রভাব পড়ুক৷”

মেঘা রঙ্গনকের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়৷ অগ্নি আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে রঙ্গনকে৷ কর্কশ গলায় বলল,

“তুই দাদা টাইপের কথা বন্ধ কর৷ আমি তোর কথার সাথে একমত নয়৷ এতোই চিন্তা হলে টাকা দেক আর এখান থেকে চলে যাক৷ আমরা তাকে আটকিয়ে রাখতে চাইনি তো৷”

রঙ্গন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

“আমি তোদের টাকা দিচ্ছি৷ তুই সাদাফকে যেতে দে৷”

অবশেষে সাদাফ সা*ই*কো ফ্রেন্ডদের থেকে মুক্তি পেল৷ রুমে প্রবেশ করতেই ছোঁয়া সাদাফের কাছে আসল৷ সাদাফকে সালাম করার জন্যই ঝুঁকতে নিলেই সাদাফ ছোঁয়ার কাঁধ রেখে আটকায়৷ ভালোবাসার সহিত বলল,

“এসবের কোন দরকার নেই৷ আল্লাহ ছাড়া কোনদিন কারোর সামনে মাথা নত করবে না৷ আল্লাহর কাছে শুধু মাথা নত করবে৷”

ছোঁয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল৷ সাদাফ সোফায় ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,

“ভারী শাড়ি গহনা পড়ে থাকার কোন দরকার নেই৷ এসব খুলে ফেলো৷ আর কষ্ট করতে হবে না৷”

ছোঁয়া ড্রেসিং টেবিলের বড় আরশির সামনে বসে বসে ভারী গহনা খুলল৷ সাদাফ ফ্রেশ হয়ে এসে ছোঁয়াকে তার কাছে সাহায্য করল৷ ছোঁয়াও ফ্রেশ হয়ে আসল৷ ছোঁয়া সাদাফের বুকে মাথা রেখে বলল,

“আমি আপনার এই বুকে মাথা রাখার জন্য আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করতাম৷ আজ আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করছে৷ আমি চাই আমাদের শুরুটা নামাজ দিয়ে৷ আমরা দুইজন একসাথে সালাত আদায় করব এখন৷”

ছোঁয়ার এমন ভালোবাসার উক্তিতে সাদাফ খুব খুশি হলো৷ সাদাফ ছোঁয়ার কথার সাথে একমত হলো৷ দু’জনে একসাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করল৷ সাদাফ অতিরিক্ত আরও দুই রাকাত সালাত আদায় করল৷ সাদাফ মুনাজাতে বসে মা বাবার জন্য দোয়া করল৷ সালাত আদায়ের শেষে ছোঁয়ার কাছে আসল৷ ছোঁয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল,

“আমাদের অন্যরকম প্রেমকাহিনী চরদিন রয়ে যাবে৷ রটে যাবে কিছু মানুষের হৃদয়ে৷”

সমাপ্ত…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here