অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব৩
মৌমিতা_শবনাম
ফ্যানের নিচে বসে আছে নিরব সারা শরীর ঘেমে গেছে তার। আজ তার আর বৃষ্টির বিয়ে। ফ্যানের নিচে এসে বসতেই রুনা বেগম এসে তাড়া দেয় গোসলে যেতে একটু পরই বের হতে হবে বরযাত্রী। নিরবও বাধ্য ছেলের মতো চলে যায় গোসলে।
গোসল করে এসে শেরওয়ানি পড়ে নিচে নেমে আসে। রুনা বেগম ছেলেকে দেখে চোখের নিচে থেকে কাজল নিয়ে নিরবের কানের নিচে লাগিয়ে বলেন,–” কারো নজর না লাগুক। ”
নিরব হেসে বলে,–” তোমার বৌমার নজর লেগে যাবে। ”
রুনা বেগম ছেলের গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলেন,–” মায়ের সাথে দুষ্টুমি হচ্ছে”
নিরব জোরে হেসে দেয় সাথে রুনা বেগমও। অতঃপর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নিরবরা বৃষ্টিকে আনতে।
————
তন্নি নিজের ফোনটা অনেক সাহস নিয়ে অন করে। ফোন অন হতেই অনেক গুলো নোটিফিকেশন আসে সবগুলো নিরবের মেসেজের। তন্নি সিন নাহ করেই ডিলিট দিয়ে দেয়। এমন কি আইডিটাও নষ্ট করে দেয়।
মিশমি নিজের ঘরে বসে ছিলেন। তখন তন্নি মন খারাপ করে তার ঘরে ঢুকে। মিশমি চিন্তিত হয়ে বলেন,–” কি হয়েছে মন খারাপ তোর?”
তন্নি বলে,–” আরেহ মন খরাপ নাহ তো টেনশন হচ্ছে কয়েকটা জায়গায় চাকরির এপ্লাই করেছি কিন্তু তারা যদি আমাকে না ডাকে।”
মিশমি মেয়ের কথা শুনে হাসেন। মেয়ের গাল দুটো টেনে বলেন,–” তুই সেই ছোট্ট তন্নিই রয়ে গেলি।”
তন্নি রাগ দেখিয়ে বলে,–“তোমারও আমার গাল ধরে টানার অভ্যাস গেলো না। ”
তারপর দুজনেই একসাথে হেসে দিল। মিশমি ভাবনায় মগ্ন হয়ে বললেন, –” তোর মনে আছে ছোটবেলায় এক্সামের আগে সারাটা রাত আমাকে জ্বালাতি একটু পর পর উঠে বলতি মা আমার এক্সাম ভালো হবে তো, কমন পরবে তো আরো কত প্রশ্ন।”
এটুকু বলে মিশমি হাসলেন। তন্নিও সাথে হেসে বলল,–” তো আমি কি করব প্রচুর চিন্তা হতো।”
দুই মা মেয়ে পুরনো স্মৃতির ডায়েরির পাতা উল্টাতে থাকে। পুরনো সব স্মৃতি মনে করে সব শেয়ার করে তন্নির মনটা ভালো লাগছে। নিজেকে সতেজ ও ফ্রেশ লাগছে। তন্নি মন খুলে একটা লম্বা শ্বাস নেয় মনটা হালকা করতে। সত্যি তার এখন ভালো লাগছে
—————
মাত্র অফিস থেকে ফিরলো রাদ। রাদ এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো আর রাইদাকে রিধি(রাধিকার পরিবর্তে রিধি দিয়েছি।) ফ্রেশ করিয়ে দিতে যায়।
রাদ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে। রাইদাকে রিধি খাইয়ে দিচ্ছে আর রাদ পাশে বসেই খাচ্ছে। রিধি বারবার রাদের দিকে তাকাচ্ছে আর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। রাদ বিষয়টা বুঝতে পারে সে রিধিকে খাবার পরে সব গুছিয়ে ওর রুমে আসতে বলে। রিধিও মাথা নাড়ায়।
খাবার শেষে রাদ রাইদাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রিধি সব কিছু গুছিয়ে রাদের কথা মতো তার রুমে যায়। রাদের রুমে গিয়ে দেখে রাইদা ঘুমিয়ে গেছে। রাদ রিধিকে দেখে ভিতরে আসতে বলে। রিধি রাদের কথায় চুপচাপ ভিতরে ঢুকে সোফায় বসলো তার পাশে রাদ হাত ভাজ করে সোফায় বসে বলল,–” কি বলতে চাইছিলি বল।”
রিধি নিচের দিকে তাকিয়ে বলে– “তুই কি আর আমার কথা শুনবি থাক বাদ দে।”
রাদ একটা ধমক দিয়ে বলে,–” কি বলতে চাইছিলি বল।”
রিধি আমতা আমতা করে বলে,–” বললে সেই তুই রাগই দেখাবি।”
রাদ চোখ পাকিয়ে বলে, –“দেখাবো না বল”
রিধি বুকের মাঝে অনেকটা সাহস করে বলে,–” ভাই তোকে এভাবে দেখলে আমার কষ্ট হয় সংসার নামক জিনিসটায় তোর এভার ঢুকা উচিত বিয়ে করা দরকার তোর কত একা থাকবি?”
রাদ চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলে,–” দেখ কোনো মেয়ে রাইদাকে মেনে নিবে না কোনো মেয়েই চাইবে না এক বাচ্চার বাবার সাথে বিয়ে করতে।”
রিধি বলে,–” কিন্তু রাইদা তো তোর নিজের……
রিধি কে থামিয়ে দিয়ে রাদ বলে,–“এটা শুধু তুই আর আমি জানি আর কেউ তো জানে না।”
রিধি বলে,–” তো কি হয়েছে জানাবো।”
রাদ বলল,–” জানিয়েছিলি তো একজনকে কি উত্তর পেয়েছিলি!”
রিধি বলল,–” সবাই একরকম না ভাই।”
রাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে–” হয়তো ওকে চেষ্টা করে দেখ। যা এখন ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়ে গেছে। ”
রাদের কথায় রিধি বলল,–” থ্যাংকস সুযোগটা দেওয়ার জন্য গুড নাইট। বাই”
রাদ হাত নাড়িয়ে গুড নাইট বলল। রিধি চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে ভাসতে লাগলো চোখের সামনে পুরোনো কিছু স্মৃতি। চোখের চারটি লাশ আপনজনদের চোখ ঝাপসা হয়ে গেল রাদের তার সাথেই কেন এমন হলো। চোখ মুছে শুয়ে পড়ল বিছানায় রাইদার পাশে। রাইদাকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল রাদ।
—————–
জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত তন্নি। হাতে তার ফোন যেখানে নিরবের ছবিটা ভেসে আছে। ঝাপসা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে তন্নি। আনমনে বলতে থাকে,–” আমি তো তোমাকে ভালোবাসতে চাই নি, তোমাকে আমার করে পেতে চাইনি তুমিই তো এসে অনুভূতি জাগালে আমার মনে শিখালে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। খুব আগলে নিজের করে নিলে কিন্তু এখন সেই তুমই বিচ্ছেদের বিষাক্ত স্বাদ অনুভব করাচ্ছো। যদি বিচ্ছেদই করার ছিল তাহলে কেন এতো মায়ায় জড়ালে আমাকে?”
কথা গুলো বলার সময় চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে ফোনের স্কিনে পড়ল। আরও কিছুক্ষণ তাকায় ছবির দিকে নাহ আর পারছে না কষ্ট হচ্ছে তার। ফোনটা সাইডে রেখে দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আজ পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে ওহ! আজ তো নিরব আর বৃষ্টির বাসর রাত ভুলেই গিয়েছিল তন্নি। অনেক কষ্টে হালকা হেসে হাত তুলে বলে, –” সুখে থাক তোরা আমাকে যেভাবে ঠকালি তোরা না ঠকে যাস এভাবে!”
তন্নি আর দাড়ায় না বারান্দায় উঠে রুমে চলে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১ টা বাজে আর দেরি করে নাহ শুয়ে পড়ে সে।
——————-
খুব ভালো ভাবেই নিরব আর বৃষ্টির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। নিরবের বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছে বৃষ্টি আশে পাশে বাসার মহিলারা বউ দেখতে এসেছে কিন্তু অহংকারী বৃষ্টি কাউকে সালাম দেয় না। এতে মহিলারা ক্ষেপে গিয়ে বলে,–” যাই বলিস রুনা আগের বউ হয়তো তোর এই বউয়ের মতো সুন্দরী ছিল না কিন্তু আদব কায়দাটা এই বউয়ের থেকে হাজার গুণ ভালো ছিল। ”
বৃষ্টি ক্ষেপে গেল সে ভুলে গেল যে এই বাড়ির নতুন বউ। মহিলাদের মুখের উপর বলে দিল,–” বেয়াদব বউ দেখতে আসছেন কেন? বেরিয়ে যান এই বাসা থেকে। ”
মহিলাদের মধ্যে একজন এসে বললেন, –” এতো ভালো বউকে বিদায় করে এই বেয়াদব আনলি তোর কখনো আসবো না আমরা আর রুনা।”
রুনা বৃষ্টির আচরণে খুবই অসন্তুষ্ট হন মহিলাদের আটকানোর জন্য বলেন,–” আপা আপনারা বসেন যাবেন না।”
কিন্তু কেউ রুনার কথা শুনেন না। মহিলারা চলে যেতেই রুনা ক্ষেপে বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সোজা চলে যায় নিরবের রুমে
রুনা খুবই কষ্ট পান বৃষ্টির এমন আচরণে। এখন এসে তার মনে হচ্ছে সে ভুল করেছে কিন্তু সে নিজের ভুল স্বীকার করতে রাজি নন। নিজে নিজেই বলতে থাকে, –“আমি কোনো ভুল করিনি। নতুন এসেছে তো তাই হয়তো বুঝতে পারে নি এমন আচরণ করে ফেলছে।”
ঘোমটা দিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। নিরব রুমে ঢুকে এসে বৃষ্টির পাশে বসে। বৃষ্টি নিজেই নিজের ঘোমটা সরিয়ে বলতে থাকে,–” তোমার মায়ের বন্ধুরা এতো খারাপ আমাকে এত্তো গুলো কথা শুনিয়ে গেছে। ”
তারপর নিরবকে সব খুলে বলে। সবটা শুনে নিরব বলে,–” তেমার ঐখানে উত্তর দেওয়া উচিত হয় নি।”
নিরবের কথা শুনে বৃষ্টি রেগে বলে,–” মানে কি আমাকে কি মনে করছো ওরা এতো গুলো কথা বলল ও কিছু না আমি একটা উত্তর দেওয়াতে আমার ভুল হয়ে গেছে!”
বৃষ্টি অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ে নিরব ফুস করে একটা শ্বাস ছেড়ে বৃষ্টিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে সরি বলে। কিছুক্ষণ রাগ করে থাকলেও একসময় নিরবের পাগলামোতে রাগ কমে যায়। আগে তন্নি এভাবে রাগ ভাঙ্গাতো আর এখন তার ভাঙ্গাতে হচ্ছে। মনের অজান্তেই নিরব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
বৃষ্টি নিরবের কানের কাছে এসে বলে,–” তোমাকে লাগবে।”
বৃষ্টির কথায় নিরব বৃষ্টির অনেক কাছে যায়। গভীর ভাবে স্পর্শ করতে থাকে সে বৃষ্টিকে। আজ তাদের আনন্দের দিন বিশেষ বৃষ্টি যেন খুবই খুশি। তার আনন্দে আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে। সে তার পছন্দের মানুষটাকে ছিনিয়ে নিজের করতে পেরেছে। নিরবের প্রতিটা স্পর্শে সেও সাড়া দিতে থাকে।
চলবে,
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর গল্পটা সম্পূর্ণ না পড়ে বাজে মন্তব্য করবেন নাহ। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন