অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব -০২

অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ২
মৌমিতা_শবনাম

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে তন্নি আর তুষার। ডাক্তার মাথায় হাত রেখে চিন্তা করছে এমনটা ওর সাথে কেন হয়। তুষার গলা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করে, –“ডক্টর আমার মেয়ের কি সিরিয়াস কিছু হয়েছে?”

ডাক্তার মাথা সোজা করে তুষার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে–,” এটা শ্বাস কষ্ট তো নয়। অস্বাভাবিক কিছু হলে ওর এই রোগটা ভাসে।”

তুষার সাহেব চিন্তিত গলায় বলেন,–” তাহলে?”

ডাক্তার বলেন,–” আচ্ছা আমি কিছু ঔষধ দিচ্ছি এগুলো খাওয়াবেন আশা করি ভালো হয়ে যাবে। ”

তুষার সাহেব কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ালো। ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ প্রেসক্রাইব করে সেখান থেকে তন্নিকে নিয়ে চলে গেলেন তুষার সাহেব।

————–
নিরব আর বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর ২ দিন পর ওদের বিয়ে নিরব খুবই ব্যস্ত ব্যবস্থা করা নিয়ে তার উপর একটু পরপর সব কিছুর ছবি তুলে তন্নিকে পাঠাচ্ছে। নিরবের এই কাজটা করতে দারুন লাগছে সে যেন এই কাজটায় একটা পৈশাচিক আনন্দ পায়।

রুনা বেগম ফোনে বৃষ্টির সাথে কথা বলছিলেন। মেয়েটাকে তার দারুণ লেগেছে। কি সুন্দর মিষ্টি করে কথা বলে আর দেখতেও তন্নির থেকে ভয়াবহ সুন্দরী। নিরব কাজের সুত্রে রুনা বেগমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেকে দেখে রুনা বেগম নিজের কাছে ডাকেন। নিরব কাছে এসে বলল,–“কিছু বলবে মা?”

রুনা বেগম বললেন, –” আমার সোনা বাবা তোকে নিয়ে আমার গর্ব হচ্ছে। ”

নিরব বলল,–” ওমা তাই! কেন গো মা?”

রুনা বেগম বললেন, –” এই যে এমন একটা লক্ষী বৌ মা এনে দিচ্ছিস।”

মায়ের কথায় নিরব ঠোঁট মেলিয়ে হাসলো। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে–” খুব পছন্দ হয়েছে বুঝি?”

রুনা বেগম হেসে বলল,–” অনেক।”

আবার রুনা বেগম মুখ কালো করে বললেন –” একজন এনেছিলি বাজে চেহারা তার উপর শ্যামলা।”

নিরব বলল,–” ভুলটা শোধরে নিয়েছি তো।”

রুনা বেগম বললেন,–” হ্যা এটা আরেকটা ভালো কাজ করেছিস।”

নিরব হাসলো তারপর কাজের কথা বলে সেখান থেকে চলে গেল।

—————
বৃষ্টি আর তার বাবা বাবুল সাহেব আর মা তরি বেগম বসে আছেন তন্নিদের বাড়িতে। বুঝতে পারছেন না তো ওরা এখানে কেন? তন্নি আর বৃষ্টি একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।

তুষার সাহেব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, –“আপনারা এখানে কেন?”

বৃষ্টি উঠে বলে,–” আরে আঙ্কেল আমার বিয়ের কার্ড দিতে আসছি।”

তুষার সাহেব বিরক্ত হয়ে বলে,–” আমি কথাটা তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি।”

বৃষ্টি কিছু বলে না আর। বসার ঘরে বাবার রাগী গলা শুনে তন্নি ছুটে বেরিয়ে আসে সেখানে। বসার ঘরে এসে বৃষ্টিকে দেখো অবাক হয়ে বলে–” তুই এখানে!”

ব্যস বৃষ্টি যেন এতক্ষণ এই মুহূর্তের অপেক্ষাতেই ছিল। উঠে গিয়ে তন্নিকে জড়িয়ে ধরে বলে,–” থ্যাংকস তন্নি নিরবকে আমার জন্য ছেড়ে দেওয়ার জন্য।”

তন্নি বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,–” তুই এখানে কেন এসেছিস? ”

বৃষ্টি গা জ্বলানো হাসি দিয়ে বলে– ” তোকে দাওয়াত দিতে। তুই কিন্তু অবশ্যই আসবি।”

তন্নি বুঝতে পারে বৃষ্টি তাকে কষ্ট দিতে এগুলো বলছে। কিন্তু তন্নি ওদের সামনে নিজেকে দুর্বল করবে না। তন্নি মুচকি হাসি দিয়ে বলে– ” হ্যা অবশ্যই আমি চেষ্টা করবো আসতে।”

বৃষ্টি মুখটা কালো হয়ে যায়। সে তন্নির চেহারাটা শুকনো দেখতে চেয়েছিল চোখ পানিতে টলমল করছে। কিন্তু হলো তো উল্টো টা তবে বৃষ্টিও থেমে থাকার মেয়ে না সে তার হাতে পড়ে থাকা একজোড়া বালা দেখিয়ে বলে,–” এগুলো নাহ আমাক শ্বাশুড়ি মা পড়িয়েছে।”

বালা গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে এগুলো তার বালা ছিল এখন এগুলো অন্যের হাতে। তন্নি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,–” সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস। ”

বৃষ্টি কপাল কুচকে বলে,–” হোয়াট! ”

তন্নি হালকা হেসে বলে,–” খেয়ে যাবি তো।”

বৃষ্টি কিছু বলতে নিবে তন্নি তাকে পাত্তা না দিয়ে মিশমি জাহানের দিকে তাকিয়ে বলে– “মা ওদের নাস্তা দেও।”

মিশমি জাহান রান্নাঘরে চলে যায়। তন্নি জেদ নিয়ে সেখানেই বসে তাকে। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে তবু সে উঠবে না সেখান থেকে। সেখান থেকে চলে গেলে সবাই তাকে দুর্বল ভূববে। কিন্তু সে তো দুর্বল নয়।

——————-
অন্ধকার রুমে বসে আছে তন্নি। চোখ দুটো ফুলে গেছে কান্না করে। তুষার সাহেব আর মিশমি জাহান কেউ আসে নি ডাকতে তবে তারা বাহিরে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে দুজনই তাড়াতাড়ি করে ভিতরে ঢুকে।

ভিতরে ঢুকে দেখে তন্নি আবার অসুস্থ হয়ে গেছে। মিশমি জাহান দৌড়ে গিয়ে পানি এনে তন্নির মাথায় ঢালতে থাকে। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে সে ঠিক হয়। তন্নিকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয় তুষার সাহেব। অল্প খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয় তাকে। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর তন্নি তার বাবার হাত ধরে বলে,– বাবা একটা রিকুয়েষ্ট করবো।”

তুষার সাহেব মেয়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে,–” কি বলবি বল?”

তন্নি সোজা হয়ে বসে বলতে থাকে,–” আমি কাজ করতে চাই এই ট্রমা থেকে আমাকে কাজই মুক্তি দিতে পারবে।”

তুষার সাহেব এতে বাধা দেয় না। মেয়ে নিজে কিছু করতে চায় করুক নাহ। মেয়েকে আশ্বাস দিয়ে ঘুমাতে বলে কপালে চুমু দিয়ে চলে যায় তারা।

—————-
সকাল ৭ টা বাজে ওয়াশরুমে শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে আছে রাদ চৌধুরী। একটু দূরের টেবিলে রাখা আছে একটা ল্যাপটপ। সে তার মেনেজারের সাথে কথা বলছে অডিও কলে। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে গেছে। রাগী গলায় সে তার মেনেজারকে বলে,–” ওকে বের করে দাও আর বিজ্ঞাপন দিয়ে দাও যে রাদ ফ্যাশন ডিজাইনে নতুন পিএ লাগবে। ”

মেনেজার সজীব ভয় ভয় গলায় অপর পাশ থেকে বলল,–” জ্বী স্যার।”

কল কেটে দিল। প্রায় অনেক্ষণ শাওয়ার নিয়ে রুমে আসে ল্যাপটপ হাতে নিয়ে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৭:৪০ বাজে। জলদি রেডি হয়ে নিচে আসে রাদ।

নিচে এসে দেখে তার ৩ বছরের মেয়ে রাইদা বসে আছে ডাইনিং এ। রাদ মিষ্টি হেসে ডাইনিং এ গিয়ে বসে পড়ে। রাইদা বাবাকে দেখে এক লাফে তার কোলে। রাদ জড়িয়ে ধরে বলে,–” আমার প্রিন্সেস কখন আসলো।”

রাইদা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে– ” ইপ্পি ( ফুপ্পি) রেডি করিয়ে দিয়েছে। ”

রাদের বোন রাধিকা খাবার প্লেটে করে রাদের সামনে দিল। রাদ নিজেও খেল রাইদাকেও খাওয়াতে লাগলো। খাওয়ার মাঝে রাধিকা বলল,–“ভাই তোর রাইদার জন্য হলেও একটা বিয়ে করা উচিৎ।”

রাদ বিরক্ত হয়ে বলে,–” দেখ এইসকল বিষয়ে আমি তোদের আগেও বলেছি এখনও বলছি আমি আর কোনো বিয়ে করবো না। ”

রাধিকা আর কিছু বলে না কিছু বলে লাভও নাই। রাদ একবার যা নলে দিয়েছে সেটাই। রাদ খাবার খেয়ে রাইদাকে নিয়ে চলে যায়। রাদের আপন বলতে তার ছোট বোন রাধিকা আর ওর মেয়ে রাইদাই আছে।

——————–
তন্নি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখছে অনলাইনে। কিন্তু কোনো পোস্ট তার ভালো লাগছে না। হঠাৎ একটা বিজ্ঞাপনে তার চোখ যায় যা কিছুক্ষণ আগেই দেওয়া হয়েছে পিএ এর পদ। তন্নি সেখানে সিভি লিখে দিল। কিন্তু যখন সে রিলেশনশিপ স্টাটাস লিখতে গেল তখন তাকে ভাবালো সিঙ্গেল নাকি সে ডিভোর্সি দিবে। অবশেষে সব চিন্তা বাদ দিয়ে সে ডিভোর্সি দিল।

অ্যাপলিক্যাশন করা শেষে শস্তির নি:শ্বাস ফেলে সে।তারপর মায়ের কাছে যায় সে বাবা চলে গেছে কাজে। তন্নি গিয়ে দেখে মিশমি জাহান বিরিয়ানি রান্না করছে। তন্নি গিয়ে জিজ্ঞেস করে, –” কি করছো মা?”

মিশমি জাহান হেসে বলে,–” তোর জন্য বিরিয়ানি রান্না করছি। ”

তন্নি খুশি হয়ে যায়। বিরিয়ানি তার ভীষণ প্রিয়। মেয়েটাকে হাসি খুশি দেখে মিশমি জাহানের মনটা জুরিয়ে যায়। সত্যি বাবা মা বড় অদ্ভুত একজন। সন্তানের খুশিতে হাসে সন্তানের দুঃখে কাদে। মিশমি জাহান নিজের কাজে মন দেয়।

——
রাদ অফিসে নিজের রুমে বসে আছে পুরো শরীর ঘেমে একাকার। মাত্র নতুন কন্ট্রাক্টের ডিজাইন গুলো কালেক্ট করে এসেছে ডিজাইনারদের থেকে। এসিতে বসে সে ডিজাইন গুলো দেখতে থাকে আর তার পাশে সোফায় বসে রাইদা খেলছে। অফিসে রাদ রাইদাকে নিয়ে আসে কারণ রাধিকা সারাদিন কলেজে থাকে।

রাইদা তার পাপার দিকে তাকিয়ে বলে– ” বাবা নুর ( রাদের আগের পিএ) আঙ্কেল কোথায়? ”

রাদের মনে পড়ে গেল নুরের কথা তার বেইমানির কথা যে কি না তার সকল ডিজাইন চুরি করে অন্য কোম্পানিকে দিচ্ছিল। তাই তাকে বের করে দিয়েছে আর আজকে মেনেজার সজীব একটু আগে তার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গেছে কারণ তার বউকে ডাক্তার দেখাবে।

–” কি হলো পাপাই বলো?”

রাইদার কথায় ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো। রাদ হেসে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল,–” সে তো চলে গেছে আর আসবে না।”

ব্যস রাইদার কান্না শুরু হয়ে গেল কেন তার নুর আঙ্কেল তাকে ছেড়ে চলে গেছে। রাদ ব্যস্ত হয়ে পড়ে মেয়ের কান্না থামাতে। বেইমানরা সব সময় অতিরিক্ত মায়া লাগিয়ে বেইমানি করে। অজান্তেই রাদের ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

চলবে,
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here