অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব৭
মৌমিতা_শবনাম
স্তব্দ হয়ে বসে আছে কবরস্থানে। তার সামনে চারটি কবর আর তার পাশে রিধি ছোট বাচ্চাটিকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মা ছাড়া বাচ্চাটা কান্না থামাচ্ছেই নাহ। রাদ উঠে রিধির কোল থেকে নিজের কোলে নেয় কাপা কাপা গলায় বলে, —” আমার মাটার কি হয়েছে কে বকা দিয়েছে? রিধি বকা দিয়েছে ও তো পচা। ওর সাথে আড়ি।”
তারপর কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ঝুকাতে থাকে। আরাম পেয়ে বাচ্চাটা ঘুমিয়ে যায়। রিধি অশ্রুভরা চোখ নিয়ে রাদের দিকে তাকায়। রাদ নয়নার কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, –” চিন্তা করো না মিষ্টি ভাবি আমি তোমার মেয়েকে খুব যত্নে রাখবো সবাই জানবে ও আমার মেয়ে। ”
রিধিও এসে বলে, –” তোমার মেয়েকে তোমাদের অভাব বুঝতে দিব না।”
রাদ কবর জিয়ারত করে রিধিকে নিয়ে চলে আসে বাসায়। রিধি আর রাদ সারাদিন কিছু খায় নি। রাদ সোফায় বসে আছে কোলে ছোট বাচ্চাটি রিধি তার পশে বসে আছে তার কাঁধে মাথা দিয়ে।
————
আজ দুই দিন হলো রাদ কলেজে আসছে না মনির ফোন তুলছে না। মনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে আছে। এভাবে কেউ রিলেশন এ থাকতে পারে। মনি ফোনটা বের করে আবার রাদকে কল দেয়। রাদ এবার কল উঠিয়ে বলে,–“হ্যা মনি বলো।”
মনি রাগী গলায় বলল, –” দেখা করো এসে এক্ষুনি কলেজে। ”
মনি কল কেটে দেয়। রাদ চিন্তায় পড়ে যায় কি করবে সে। রাইদাকে রিধির কাছে রেখে সে কলেজ চলে যায়।
কলেজে পুকুরের পাড়ে এসে পায় মনিকে রাদ। রাদ এসে দাঁড়ায় মনির পাশে। মনি রাদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,–” অবশেষে তোমার দেখা পেলাম।”
রাদ বলে,–” কিছু বলবে এতো আর্জেন্ট ডাকলে যে।”
মনি বলে,–” আমাকে এখন আর তোমার ভালো লাগছে নাহ তাই নাহ?”
রাদ অবাক হয়ে বলে,–” মানে?”
মনি রেগে বলে,–” তুমি আমার সাথে আর রিলেশনটা কন্টিনিউ করতে চাও নাহ?”
রাদ বলল,–” কি বলছো এসব?”
মনি বলল,–” হ্যা এখন কিছু বুঝতে পারবেই নাহ কালকে সারাটা দিন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। ”
রাদ বুঝতে পেরে বলল,–” সরি রাগ করো নাহ আমার সমস্যা হয়েছে অনেক আমি…..। ”
রাদকে পুরোটা বলতে না দিয়ে মনি বলে,–” ব্যস অনেক হয়েছে রাদ আর আমার পক্ষে সম্ভব না রাদ তোমার সাথে কন্টিনিউ করা ভালো থেকো। আর নিজের সো কোল্ড ফ্যামিলি নিয়ে সুখে থাকো।”
রাদ অস্থির হয়ে বলল,–” আরে শুনো আমর কথা।”
মনি আর কোনো কথা না শুনে রাদকে পিছনে রেখেই উল্টো ঘুরে চলে যায় সে। রাদ পিছনে অবাক চোখে মনির দিকে তাকিয়ে আছে। সব ধাক্কা একসাথে খেলো রাদের বেচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলছে। সেদিন রাদ রিধি আর রাইদার কথা চিন্তা করে নিজেকে বাচিয়ে রাখে।
——-
নিজের কেবিনে বসে এগুলো ভাবছিল রাদ তখনই দরজায় নক করে তন্নি। রাদ সোজা হয়ে বসে তন্নিকে ভিতরে আসতে বলে। তন্নি ভিতরে ঢুকে বলে,–” স্যার আমায় ডেকেছিলেন?”
রাদ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে কিছু ফাইল তার দিকে এগিয়ে বলে,–” এই ডিজাইন গুলো চেক করে আমাকে এনে দাও।”
তন্নি ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বলে,–” ওকে স্যার।”
তন্নি ফাইল গুলো নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আজকে রাদ একবারও তাকায়নি তন্নির দিকে। সে নিজের মনকে বুঝিয়ে নিয়েছে আর কাউকে সে এই মনে জায়গা দিবে না আর কোনো কষ্ট সে পেতে চায় না।
——————–
ফাইলগুলো চেক করে সে রাদের কেবিনে আসে। তখন রাদ আর রাইদা বসে খেলছিল। তন্নি নক নাহ করেই দরজা খুলে দেয়। বাবা-মেয়ের এক সুন্দর দৃশ্য দেখতে পায়। তন্নি আনমনে বলতে থাকে, –” এমন একটা দৃশ্য তোমার সাথে দেখতে চেয়েছিলাম নিরব যে আমাদের সন্তানের সাথে খেলবে আর আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবো। ”
তারপর সাথে সাথে নাড়িয়ে ভাবে কি ভাবছিল সে। আর ভাববে না সে ঐ বেইমানের কথা। তারপর আবার দরজায় নক করে তন্নি। রাদ দরজায় তাকিয়ে দেখে তন্নি। সে হালকা হেসে রাদের দিকে তাকিয়ে। রাদ গম্ভীর মুখ করে গিয়ে নিজের চেয়ার টেবিলে বসে। তন্নি এগিয়ে গিয়ে ফাইলটা সামনে রাখে। রাদ তন্নির দিকে ফাইলটা ঘুরিয়ে বলে,–” এক্সপ্লেইন মি কোথায় কোথায় ভুল পেয়েছেন। ”
তন্নি বলল,–” ওকে স্যার।”
তরপর তন্নি গিয়ে রাদকে বোঝাতে লাগলো কোথায় ভুল পেয়েছে আর সেটা কিরকম করেছে সে। রাদ তখনও তন্নির দিকে তাকায় না সে আর কোনো মেয়েতে আসক্ত হতে চায় না।
————–
অফিস শেষে বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে তন্নি। সন্ধ্যা ৭ টা বাজে চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। আশে পাশে মেয়ে বলতে সে একা। তন্নির মনে মনে ভয় কাজ করলেও মুখে সে তা প্রকাশ করছে নাহ। তখন সেদিক দিয়ে কিছু বখাটে যাচ্ছিল। তন্নিকে দেখিয়ে বলে, –” আহা দোস্ত মাল পেয়ে গেছি।”
তন্নি ভয়ে কুচকে যায় আশে পাশে তাকায় কিন্তু কেউ নাই একটু দূরে কয়েকজন দাড়িয়ে আছে কিন্তু তারা কিছু বলছে নাহ। ছেলে গুলো তন্নির দিকে এগিয়ে যায়। তাদের মাঝে একটা ছেলে বলে,–” আজকে জমে যাবে বস।”
তন্নি সেখান থেকে চলে যেতে নেই একটা ছেলে তর হাত ধরে নেয়। তখনই সেখানে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে রাদ বেরিয়ে এসে ঐ ছেলেগুলোকে ইচ্ছা মতো মারতে থাকে।
ছেলেগুলো যখন অবস্থা খারাপ তন্নি গিয়ে রাদকে ফেরায়। রাদ রাগি গলায় বলে,–” আর কোনোদিন যদি কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করতে দেখেছি তো মেরে ফেলবো।”
ছেলে গুলো দাড়িয়ে উল্টো পথে দৌড়। রাদ তন্নির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, –” গাড়িতে উঠুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি। ”
তন্নি কিছু বলে নাহ রাদের কথা মতো তার গাড়িতে উঠে পরে। এখানে দাড়িয়ে থাকার সাহস আর নেই তার। রাদও গাড়িতে উঠে সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে,–” সিট বেল্টটা লাগিয়ে নিন মিস তন্নি।”
তন্নি ভ্রু কুচকে সিট বেল্ট সামনে আনে কিন্তু লাগাতে পারছে না। রাদ বিরক্তির শ্বাস নিয়ে লাগিয়ে দেয়। তারপর গাড়ি চালাতে শুরু করে।
—————
রাতের অন্ধকারে ছাদে বসে আছে নিরব। এই কয়দিনে সে বুঝতে পেরেছে সে কি হারিয়েছে। কাচকে পেতে সে হিরা হারিয়েছে। ইদানিং সে বৃষ্টির আচরণে পরিবর্তন দেখছে সারাদিন ফোনে আসক্ত থাকে কে জানে কি করে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে নিরব।
তন্নিকে নিয়ে ভাবছিল নিরব তখন সেখানে বৃষ্টি আসে। বৃষ্টি এসে কাধে হাত রেখে বলে, –” কি করছো?”
নিরব তাকায় বৃষ্টির দিকে হালকা হেসে বলে, –” কিছু নাহ এমনি দাঁড়িয়ে আছি।”
বৃষ্টি নিরবের হাত ধরে বলে,–” এখানে থাকতে হবে না আর চলো রুমে যায়।”
নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও এখন তন্নি থাকলে তার মুখ দেখেই বলে দিতো নিরবের মন খারাপ। নিরব চলে যায় বৃষ্টির সাথে রুমে।
এদিকে রুনা নিজেকে অনেকটা ঘর বন্দি করে রাখেন। তার করা কাজের ভুলটা সে বুঝতে পারছেন। কিন্তু এখন বুঝে কি হবে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। রুনা নিজে নিজে বলতে থাকেন,–” ক্ষমা করে দিও তন্নি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চোখ তার দু এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তার হাতে সে নিজের ছেলের জীবনটাও নষ্ট করেছে। সে উষ্কানি দেওয়াতেই নিরব উৎসাহ পেয়েছে এই কাজ করতে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে তার। আশে পাশে তাকিয়ে একটা বড় ওড়না ফ্যানে ঝুলিয়ে গলায় লাগিয়ে নেন তিনি।
অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ৮
মৌমিতা_শবনাম
রাদ আজ অফিসে যেতে পারে নি কারণ সকাল থেকে রাইদার প্রচন্ড জ্বর। তন্নিকে একা সামলাতে হচ্ছে অফিসের সব কাজ। কাজের চাপে তন্নি সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সবার কাছ থেকে ডিজাইন কালেক্ট করতে হয়েছে। এতো এতো ডিজাইন কন্ট্রাক্ট করা তার মাঝে আরো অনেক ডিজাইন বাকি যেগুলো বেস্ট ডিজাইন সেগুলো সিলেক্ট করতে হবে ক্লাইন্ট এর সামনে দেখানোর জন্য।
রাদ থাকলে তন্নির কাজটা সুবিধা হতো। তন্নি বেশ কয়টা ডিজাইন সিলেক্ট করে রাদকে কল দেয়। রাদ কল ধরতেই তন্নি বলে,–” স্যার কয়েকটি ডিজাইন সিলেক্ট করেছি এখন আপনি দেখলে ভালো হতো।”
রাদ বলল,–” হুম ওকে তাহলে তুমি ডিজাইনগুলো নিয়ে এখানে চলে আসো।”
তন্নি সংকোচ বোধ করে বলে,–” আপনার বাসায়?”
রাদ ব্যাপারটা বুঝতে পারে বলে,–” আমার বোন আছে বাসায় এসে পড় সমস্যা নেই।”
তন্নি একটু লজ্জা পায়। আর কিছু না বলে রাদের দেওয়া ঠিকানায় সে চলে যায়।
——-
রুনা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ফাঁসি নেওয়াতে মাথায় রক্ত উঠে গেছে। জ্ঞান ফিরেছে ঠিকই কিন্তু একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। নিরব পাশে অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশেই বিরক্ত নিয়ে বৃষ্টি ফোন টিপছে। নিরব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে– ” আজকে অন্তত ফোনটা না টিপো।”
বৃষ্টি কেপে যায়। রাগে কটমট করতে করতে বলপ,–” মানে কি নিরব তোমার মা এমন একটা কাজ করছে তোমার এটেনশন পেতে সেখানে আমি ডিস্টার্ব না করে ফোন টিপছি।”
নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে– ” হুম টিপো ফোন। ”
বৃষ্টি ভেংচি কেটে আবারও নিজের মতো ফোন টিপতে থাকে। নিরব আবার তার মায়ের দিকে তাকায়। কাল রাতে মায়ের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জানালা দিয়ে দেখে তার মা ফাঁসি নিয়েছেন। সময় মতো হাসপাতালে আনতে পেরেছে নিরব। নয়তো মারা যেতেন রুনা। এগুলো ভাবতেই ভয় গা কেঁপে উঠে নিরবের।
————”
তন্নি রাদের বাসায় এসেছে ৩০ মিনিট হবে। তন্নি রাদকে ডিজাইনগুলো দেখাচ্ছে আর রাদ সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছে মাঝে মাঝে আড় চোখে তন্নিকেও দেখছে সে নিজেকে এটা থেকে আটকাতে পারছে না। রাইদাকে নিয়ে রিধি চলে গেছে টিভির রুমে অনেক আগেই। হঠাৎ দরজায় টুকা পড়তেই দুজন সেদিকে তাকিয়ে দেখে রিধি হাতে ৩ কাপ চায়ের ট্রে। রিধি হালকা হেসে বলে, –” আসবো?”
রাদ গম্ভীর গলায় বলে, –” আয়।”
রাদের গোমড়া মুখ দেখে মুখ বাকায় রিধি তা দেখে তন্নি হাসে মুখ টিপে। তন্নির হাসি দেখে রিধি বলে উঠে, –” তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর আপি।”
রাদ রিধির দিকে চোখ পাকায়। রিধি সেদিকে পাত্তা দেয় নাহ তন্নি লাজুক হেসে বলে,–” ধন্যবাদ।”
রাদ ভারী গলায় বলে, –” এখানে কাজ করছি আমরা তুই যা।”
তখন পা টিপে টিপে রাইদা রুমে প্রবেশ করে বলে, –” না যাবো না আমি আন্টি মার কাছে থাকবো।”
তখন রাদ আর তন্নি একসাথে বলে,–” আন্টি মা মানে?”
রিধি দাত কেলিয়ে বলে,–” ওহ কিছু নাহ রাইদা চল আমরা টিভি দেখি গিয়ে ওরা কাজ করুক। ”
রিধি রাইদাকে জোর করে নিয়ে যায়। ওরা চলে যেতেই রাদ বলে,–” ওদের কথায় কিছু মনে করবেন নাহ মিস তন্নি ওরা একটু দুষ্টু টাইপের।”
তন্নি হেসে বলে,–” নাহ স্যার ইট’স ওকে আপনি অস্থির হবেন নাহ আমি কিছু মনে করি নি।”
রাইদার জ্বরটা এখন একটু কম তাই তো সারা ঘরে দুষ্টুমি করে বেড়াচ্ছে আর রিধি তার পিছন পুছন ছুটছে। উপর থেকে দাড়িয়ে নিচের এই দৃশ্যটা দেখলো তন্নি। তখন পাশে এসে রাদ দাঁড়ালো মিন মিন করে বলে,–” কিছু বলতে চাই।”
তন্নি কৌতুহল দৃষ্টি নিয়ে রাদের দিকে তাকিয়ে বলে– ” বলুন কি বলবেন?”
রাদ সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে, –” কিছু মনে করবেন নাহ আপনাকে এই কথা জিজ্ঞেস করার অন্য কোনো রিজন নেই কৌতুহল থেকে জানতে চাইছি।”
তন্নি বলল,–” আচ্ছা সমস্যা নেই বলুন।”
রাদ বলল,–” ইয়ে মানে আপনার ডিভোর্সটা কেন হয়েছে? বলতে ইচ্ছে না করলে বলবেন না।”
তন্নি বলল,–” হুম ভালোবাসা রং বদলানোর কারণে। ”
রাদ বুঝতে না পেরে বলল,–” মানে?”
তন্নি বলল,–” কিছু নাহ আচ্ছা আমি আসি আর রাইদার খেয়াল রাখবেন জ্বরটা আবার উঠতে পারে। ”
তন্নি নিজের ব্যাগটা নিয়ে চলে যেতে থাকে। নিচে নামতেই রাইদা এসে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে বলে,–” মিষ্তি (মিষ্টি). আন্টি কই যাও?”
তন্নি রাইদাকে কোলে তুলে গালে চুমু খেয়ে বলে,–” বাসায় যাই।”
রাইদা কাদো কাদো মুখ করে বলে, –” যেও নাহ প্লিজ দেখো আমার কত জ্বর।”
তন্নি ভাবনায় পড়ে বলে,–” কিন্তু আমাকে তো বাসায় যেতে হবে।”
রাইদা তন্নির গাল জড়িয়ে ধরে বলে–” নাহ তুমি যাবে নাহ থাকবে। ”
তন্নি কিছু বলতে নিবে তখন রিধি এসে বলে–” থাকো নাহ পরে ভাইয়া গিয়ে দিয়ে আসবে নে।”
রাদ উপর থেকে সবটা দেখে কিন্তু কিছু বলে না সে ও চাইছে তন্নি থাকুক। রিধি ও রাইদার জোরাজুরিতে তন্নি রাজি হয় থাকতে। এতে সবচেয়ে বেশি রাদ খুশি হয় কিন্তু সে প্রকাশ করে নাহ। সে নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে চাইছে সে চাই না তন্নিতে আসক্ত হতে। এ কেমন টান অনুভব করছে তবে কি সে তন্নিকে ভালোবেসে ফেলেছে।
————–
রুনা অনেকক্ষণ হলো জ্ঞান হারান নি। ডাক্তার চেক করে গেছে এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ আছেন। বৃষ্টি বাসায় চলে গেছে অনেক আগে
রুনা অশ্রুভরা চোখ নিয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছেন। নিরব তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুনা নিরবতা ভেঙে বললেন, –” আজ আমার জন্য তোর জীবনে এই দুর্যোগ। আমি তন্নি মেয়েটার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি ওকে এনে দে আমি ক্ষমা চাইবো পারলে ওকে আবার ঘরে তুলে আন।”
নিরব তার মায়ের হাত ধরে বলে, –” সব ঠিক করে দিব আমি চিন্তা করো না। ”
তখন ই বৃষ্টি এসে পিছনে দাড়ায় সে সব কথা শুনে নেয়। চিৎকার করে বলে, –” কি ঠিক করে দিবা হ্যা? তুমি কি তন্নির কাছে ফিরে যেতে চাইছো তাহলে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছিলে কেন আমি তো নাহ করছিলাম সম্পর্কে যেতে তুমি জোর করে আমাকে সম্পর্কে নিলে তোমার প্রতি অনুভূতি জাগালে বিয়ে করে রাত কাটিয়ে এখন আমাকে আর প্রয়োজন নেই। ”
নিরব দাঁতে দাঁত চিপে বলে,–” বৃষ্টি এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করো নাহ বাসায় গিয়ে কথা বলছি এই ব্যাপারে।”
বৃষ্টি আরো ক্ষেপে যায় রাগে গজগজ করতে করতে বলে,–” ওহ এখন আমি সিনক্রিয়েট করছি তোমার মা সুইসাইডের নাটক করে যে সিনক্রিয়েট করেছে ডাইনি একটা প্রথম বউকে তো এই ডাইনিই তাড়িয়েছে এখন আমাকে তাড়াতে বলছে। আর তুই শোন তোর জন্য আমি তন্নির সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ করেছি ১০ বছরের বন্ধুত্বের সাথে বেইমানি করেছি তোকে তো এতো সহজে ছাড় দিব না।”
নিরব রাগ সহ্য করতে না পেরে রাগে জোরে থাপ্পড় মারে বৃষ্টিকে। হাসপাতালে সকলের দৃষ্টি তাদের উপর বৃষ্টি আশেপাশে তাকিয়ে কান্না করতে করতে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
—————-
তন্নি চলে গেছে অনেক আগেই। রিধি রাদের সামনে বসে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাদ বিরক্ত হচ্ছে কি বলবে বলে তাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে কিন্তু বলার নামই নিচ্ছে নাহ। রাদ বিরক্ত হয়ে বলে, –” কিছু বলবি নাকি দাতই দেখিয়ে যাবি।”
রিধি মুখ বাকায় কত ডং ছেলের। রাদ ফুস করে একটা শ্বাস নিয়ে উঠে যেতে নেয় তখনি রিধি হাত ধরে বলে,–” যাস না বস এখানে বলছি এখন।”
রাদ কপাল কুচকে বসে। গোমড়া মুখে বলে,–” বল।”
রিধি বলে,–” আমার নাহ তন্নি আপিকে অনেক পছন্দ হয়েছে আর আচরণও অনেক সুন্দর। চেহারাও মাশাল্লাহ কত মায়াবি।”
রাদ বলল,–” তো?”
রিধি বলল, –” ইয়ে মানে ওদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যায় তোর জন্য।”
রাদ বলে,–” নাহ একদম নাহ। পরে উনার আমার ব্যাপারে খারাপ ধারণা হবে। ”
রিধি আর রাইদা একসাথে বলল,–” প্লিজ। ”
দুজনের চেহারার দিকে তাকালো দুজনের চেহারায় আকুল আবেদন। রাদ ফুস করে একটা শ্বাস নিয়ে অনুমতি দিয়ে দেয় তাদের। রিধি আর রাইদা খুশি হয়ে যায়। রিধি আর দেরি করতে চায় নাহ তন্নিকে ভাবি হিসেবে ঘরে আনতে।
——————-
তন্ন বাসায় এসে দেখে বৃষ্টি বসে আছে। তন্নি অবাক হয়। বৃষ্টি তন্নিকে দেখা মত্রই তার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। তন্নি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অবাক হয়ে বলে,–” কি হয়েছে এখানে কেন তুই।”
বৃষ্টি কাদতে কাদতে তন্নির পা জড়িয়ে ধরে বলে– ” তোর পায়ে পড়ি আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য তবুও দয়া করে ক্ষমা করে দে আমার সংসারটা ভেঙে দিস নাহ।”
তন্নি ত্যাড়া ভাবে বলে,–” সংসার ভাঙ্গার অভ্যাস তোর আছে বৃষ্টি আমার নেই। কেন এসেছিস সেটা বল?”
বৃষ্টি সোজা হয়ে বসে তন্নিকে সব বলে। তন্নি সব শুনে হালকা হেসে বলে, –” পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যাক আমি তোর মতো নোংরা না যে সংসার ভাঙবো। বেরিয়ে যা আমার বাসা থেকে কখনও আসবি নাহ।”
বৃষ্টি কান্না করতে করতে বেরিয়ে যায়। বৃষ্টি চলে যেতেই তুষার সাহেব আর মিশমি সেখানে আসেন। তন্নিকে মিশমি জিজ্ঞেস করেন,–” কি হয়েছে বৃষ্টি কেন এসেছিল?”
তন্নি চোখের পানি মুছে বলে,–” পাপের ফল পেয়েছে তাই।”
তুষার সাহেব আর মিশমি বুঝতে পারেন ব্যাপারটা তাই আর কথা বাড়ালো না। মিশমি তন্নিকে ফ্রেশ হতে বলে খাবার আনতে চলে যায়।
তন্নি রুমে ঢুকে হাজারও চিন্তা করতে থাকে কি হতে চলছে তার জীবনে কেন মিরব নামের ঝড়টা আাবর তার জীবনে ফিরে আসতে চাইছে
চলবে
সবাই লাইক কমেন্ট করে আমাদের পেইজটিকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করুন🍁
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন। এখন থেকে রেগুলার গল্প দিতে চেষ্টা করবো