অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব -০৬

অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ৬ ( রাদের অতীত স্পেশাল পর্ব)
মৌমিতা_শবনাম

সবার জীবনে কোনো না কোনো ঘটনা থাকে যা তার জীবনে অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলে যেমন তন্নির জীবনে নিরবের সাথে বিচ্ছেদ তেমনি রাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা আছে

৩ বছর আগে।
রাদ, রাদের মা নিধি আর বাবা অনিক সাহেব, ছোট বোন রিধি আর বড় ভাই রিদয় আর ভাবি নয়না এই নিয়ে ছিল রাদের পরিবার। রাদ তখন আর্ট কলেজে পড়ছিল। রাদের ভাবি নয়না ৯ মাসের প্র্যাগনেন্ট ছিল।

নিধি রান্নাঘরে দুপুরের রান্না বসিয়েছেন। তার হাতে হাত রিধি সাহায্য করছে। রাদ তখন কলেজে গেছে। নয়না সোফায় মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কারণ একটাই কাজ করতে যাওয়ায় নিধি তাকে বকা দিয়েছেন। অনিক সাহেব আর রিদয় তখন অফিসে মিটিংয়ে নিজেদের রুমে ব্যস্ত। নয়না প্র্যাগনেন্ট থাকায় তারা বাসায় মিটিং ডেকেছে যাতে যখন প্রয়োজন হয় যখন তখন যেন তারা থাকতে পারে।

নয়না বসে টিভি দেখছিল হঠাৎ তার পেটে ব্যাথা করতে থাকে অনেক কষ্টে সে নিধিকে ডাক দেয়। নিধি এসে বলেন,–” কি হয়েছে?”

নয়না পেট চেপে ধরে বলল,–” মা আমার পেটে ভীষণ ব্যথা করছে।”

নিধি চিন্তিত গলায় বলে, –” কি বলিস?”

নিধি গিয়ে তাড়াতাড়ি অনিক সাহেব আর রিদয়কে ডেকে আনে। রিধি নয়নাকে শক্তভাবে ধরে রাখে। নয়না ব্যথায় চটপট করছে।

অনিক সাহেব আর রিদয় দৌড়ে নিচে আসে। রিদয় এসে নয়নাকে কোলে তুলে নেয় আর অনিক সাহেব গাড়ি বের করতে চলে যান। নিধি এসে রিধিকে,–” তুই বাসায় থাক খাবার গুছিয়ে তারপর রাদের সাথে আসিস আমি রাদকে বলে দিব তোকে নিয়া যাইতে।”

রিধি কিছু বলে না শুধু মাথা নাড়ায়। নিধি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে চলে যান। রিধি বাড়ির সব কাজ শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে বসে।

—————–
রাদ কলেজের বাহিরে বসে বাহিরের এক প্রাকৃতিক দৃশ্য আার্ট করছে তখন সেখানে তার গার্লফ্রেন্ড মনি আসে। রাদ মনির দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে সাথে মনিও হেসে বলে, –” ওয়াও কি সুন্দর করেছো!”

রাদ হেসে বলে,–” থ্যাংকস।”

মনি বলে,–” শুধু থ্যাংকস এটা কিন্তু মানা যায় না চল না কোথাও ঘোরতে যাই।”

রাদ আবারও মুখের হাসি বজায় রেখে বলে, –” আজ না মনি আমার অনেক কাজ আছে এখন আমাকে অফিসে যেতে হবে আব্বু আর ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে অফিসে আজ মিটিং ছিল বাকি মিটিং টা আমাকে শেষ করতে হবে। ”

মনি মন খারাপ করে বলে,–” ওকে।”

রাদ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে মনির দুগালে হাত দিয়ে বলে,–” মন খারাপ কর না আমি কাল নিয়ে যাবো তোমায় ঘোরতে।”

মনি রাদের মন রাখতে হালকা হাসে। রাদও হেসে বিদায় নিয়ে চলে যায়। অফিসে যাওয়ার মাঝ পথ অব্দি যেতেই রাদের ফোনে কল আসে। দেখে তার বাবা। রাদ ফোন রিসিভ করে বলে, –” হ্যালো বাবা বলো।”

ঐপাশ থেকে অপরিচিত একজন বলে,–” এই ফোনের মালিক আপনার বাবা?”

রাদ চিন্তিত গলায় বলে,–” হ্যা কেন কি হয়েছে? ”

ঐ পাশের ব্যক্তিটা বলল,–” আপনার পরিবারের এক্সিডেন্ট হয়েছে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি আপনও তাড়াতাড়ি আসুন।”

লোকটা কল কেটে দেয়। রাদ গাড়ি বাসার দিকে ঘোরায় রিধিকে নিয়ে যাবে নয়তে মেয়েটা এতোক্ষণ একা থাকলে ভয় পাবে। কিন্তু রাদের মাথা কিছু কাজ করছে নাহ চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।

বাসা থেকে রিধিকে নিয়ে রাদ জলদি হাসপাতালে যায়। কিন্তু তাদের মা বাবাকে দেখা আর হলো নাহ। রাদ হাসপাতালে গিয়ে এক নর্সকে জিজ্ঞেস করল, –” একটু আ আগে এক্সিডেন্ট হওয়া পেশেন্ট আসছে তারা কোথায়? ”

রাদের কথা উল্টো পাল্টা হলেও নার্স বুঝতে পারলো জিজ্ঞেস করল, –“আপনারা কারা?”

রাদ বলল,–” ছেলে মেয়ে।”

নার্স মাথা নিচু করে বলে– ” যিনি প্র্যাগনেন্ট ছিল তিনি অপারেশন থিয়েটার এ আছে আর আমরা সরি বাকি তিনজনকে বাচানো সম্ভব হয় নি।”

রিধি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে,–” না।”

রাদ সেখানেই বসে পড়ে। কি বলবে সে কি করবে ও কোনদিকে যাবে? এক মুহূর্তে কি হয়ে গেল সে যেন মনে হচ্ছে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছে।

রাদ উঠে দাড়িয়ে রিধিকে বলে,–” চল আগে অপারেশন থিয়েটারের সামনে। ”

রিধি বলল,–” কিন্তু বাবা মা?”

রাদ বলল,–” ওদের হারিয়ে ফেলছি একজনকে ফিরে পাওয়ার আশা আছে আর ঐখানে আমাদেরকে সবচেয়ে দরকার। ”

রিধি কিছু বলে না রাদ রিধিকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে যায়। ওরা সেখানে যাওয়ার একটু পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে। ডাক্তারকে দেখে রাদ ভয়ে কুচকে যায়। রাদকে দেখে ডাক্তার এসে পর ওর কাছে বলে,–” আপনি কি পেশেন্টের বাড়ির লোক?”

রাদের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না সে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। ডাক্তার রাদকে এসে বলে,–” আপনি পেশেন্টের কি হন?”

রাদ বলল,–” দে দেবর।”

ডাক্তার এবার মাথা নিচু করে বলে,–” একটা সুন্দর মেয়ে হয়েছে কিন্তু পেশেন্টের অবস্থা ভালো নাহ। আর রাদ কে ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। ”

রাদ বলল,–” আমি রাদ।”

রাদ রিধিকে নিয়ে নয়নাকে যেই কেবিনে দেওয়া হয়েছে সেই কেবিনে গিয়ে ঢুকে। রাদ একটা চেয়ার টেনে নয়নার পাশে বসে।

পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে নয়না চোখ খোলে দেখে রাদ। রাদকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে–, ” রাদ ভাইয়া বাবা মা কোথায়? ”

রাদ মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বলে,–” ওরা বাসায় গেছে। ”

রাদের এই মিথ্যা শুনে একটু জোরেই হেসে দেয় নয়না। রাদ অবাক চোখে তাকায় নয়নার দিকে। হঠাৎ নয়না রাদের হাত ধরে বলে,–” আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো তুমি ছাড়া আর রিধি ছাড়া আর কেউ নেই দেখে রেখো ভাই।”

এতটুকু বলেই নিস্তেজ হয়ে যায় সে। রাদের হাত থেকে নয়নার হাতটা পড়ে যায়। রাদ আবারও শকড। একদিনে এতোগুলা প্রিয় মানুষ হারালো মানতে পারছে না সে।

চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here