#অপেক্ষারা
৮.
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
নাজকে তার স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার একটি বই, বইয়ের নাম ‘লেখাপড়ায় সাফল্য অর্জনের ১০১টি টিপস’। এত সুন্দর একটা মুহূর্তে নিমিষেই পানি ঢেলে দিলো ছেলেটা। লেখাপড়া ছাড়া তার মাথায় আর কিছুই ঘোরে না না-কি? নাজ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল সায়েমের দিকে। এদিকে সায়েমের মিটিমিটি হাসি যেন থামছেই না।
নাজ কঠিন গলায় বলল, “আপনার গিফট আপনার কাছেই রাখুন!”
সায়েম কিছু একটা বলছে যাচ্ছিল, তবে সেই সুযোগ তাকে না দিয়ে নাজ উঠে চলে গেল তার ঘরে। ঘরে যেতেই বিস্ময়ে খাবি খেয়ে উঠল সে। বিছানার ওপরে বিশাল এক ঝুড়ি। ঝুড়িভর্তি কাচের চুড়ি। পৃথিবীতে যতগুলো রং আছে, সেই সব রঙের চুড়িই হয়তো সাজানো আছে ঝুড়িটায়। এতগুলো চুড়ি একসঙ্গে নাজ কোনো দোকানেও দেখেনি। ঝুড়ির পাশেই আবার কতগুলো রজনীগন্ধা ফুল। আচ্ছা, সায়েম জানলো কী করে, যে কাচের চুড়ি আর রজনীগন্ধা ফুলের মতো অন্য কিছুই নাজকে খুশি করতে পারে না।
আনন্দে আত্মহারা হয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো নাজ। চুরিভর্তি ঝুড়িটার ওপরে রঙিন চিরকুট। লেখাটা ইংরেজিতে – ‘ওয়েলকাম টু দ্য লিগ্যাল এইজ অফ ম্যারেজ’। আনমনেই হেসে উঠলো নাজ।
সায়েম নামের মানুষটাকে সে এখনো বুঝে উঠতে পারলো না। কখনো বুঝতে পারবে বলে মনেও হচ্ছে না। মাঝে মাঝে নাজের মনে হয় তার মতো গম্ভীর, রাগী, বিরক্তিকর মানুষ আর দ্বিতীয়টি নেই। সেই একই নাজ আবার মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে নিজেকে, “মানুষটা এত ভালো কেন?”। মানুষটাকে নিয়ে এত দ্বিধা কেন তার মাঝে?
দ্বিধার মধ্যেই কেটে গেল আরও কয়েকটা দিন। নতুন শহর, নতুন কলেজ, নতুন মানুষ – সবকিছুর সঙ্গে একটু একটু করে মানিয়ে উঠেছে নাজ। তবে একটা জিনিস এখনো অপরিবর্তনশীল। সেটা হলো সায়েমের সঙ্গে তার খুনসুটি-ঝগড়া।
আজ শুক্রবার। দরজার বাইরে থেকেই চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে থমকে গেল সায়েম। গতরাত থেকেই নানা বিষয়ে নাজের চেঁচামেচি লেগেই আছে। এই মেয়েটার আবার কী হলো কে জানে? চাবি দিয়ে দরজা খুলে সায়েম দেখতে পেল জরিনা বেচারির ওপর দিয়ে ক্রোধের প্রবল স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
নাজ হুংকার দিয়ে বলল, “ফ্যানগুলোর এই অবস্থা কেন জরিনা? তোমাকে না গত সপ্তাহে বলেছে ফ্যানগুলো পরিষ্কার করতে?”
জরিনা অসহায় বলল, “এহনি করতেছি আফা!”
“এটা তো সেই গত সপ্তাহ থেকেই শুনছি। আমি যদি ডাস্ট এলার্জিতে মরে যাই, তোমার খবর আছে!”
নাজ এবার সায়েমের দিকে তাকিয়ে বলল, “আর আপনি! এই ভরদুপুরে কোথায় গিয়েছিলেন?”
সায়েম বলল, “অফিসে।”
“শুক্রবারে আবার কীসের অফিস? কাজ ছাড়া কি কিছুই ঘোরে না মাথায়? আপনাকে না বলেছিলাম, আজকে বুকশেলফটা পরিষ্কার করবো, আপনি আমাকে হেল্প করবেন। তাও চলে গেলেন কেন?”
সায়েম শান্ত গলায় বলল, “আরে বাবা, আমার ল্যাপটপটা ফেলে এসেছিলাম। তোমার কী হলো বলো তো? স্বাভাবিকের থেকেও বেশি পাগলামি করছো কেন?”
“পাগলামি করছি কারণ আমি পাগল। সব দোষ আপনার! যাচাই-বাছাই করে পাগল একটা মেয়েকে বিয়ে করেছেন কেন আপনি?”
সায়েমকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নাজ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে রইল।
জরিনা আতঙ্কিত গলায় ফিসফিস করে বলল, “ভাইজান, কিছু মনে না করলে একটা কথা কইতাম।”
“কী?”
“আফারে মনে হয় জিনে ধরছে। ভালা একটা মানুষ, জিনে না ধরলে এইরকম বদলায়ে যায়?”
সায়েম মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মূর্খ মানুষদের এই এক সমস্যা। কিছু একটা হলেই সব দোষ চাপিয়ে দেবে জিনদের হাতে।
সায়েম চলে গেল নাজের ঘরে। বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মেয়েটা।
সায়েম বলল, “বুকশেলফ পরিষ্কার করবে না?”
নাজ ক্লান্ত গলায় বলল, “আজ আর ইচ্ছা করছে না। অন্য আরেকদিন করি?”
“আচ্ছা। এখন চলো টস শুরু হয়ে যাবে। পরে ডাকিনি বলে আমার ওপর চেঁচামেচি করতে পারবে না কিন্তু।”
নাজ উঠে সায়েমের পিছু পিছু চলে এল বসার ঘরে। মেয়েটার ক্রিকেটের প্রতি ভয়াবহ আগ্রহ। মেয়েরাও যে এতটা ক্রিকেটপ্রেমী পারে, তা নাজকে দেখেই প্রথম উপলব্ধি করেছিল সায়েম।
কিছুদিন আগের কথা। বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ চলছে। সেকেন্ড ইনিংসে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা, জিততে প্রয়োজন ছত্রিশ বলে বাষট্টি রান।
নাজ দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল, “এই সাকিবের মতো বাজে ক্যাপ্টেন পৃথিবীতে আরেকটা নেই। আজ ওর ক্যাপ্টেন্সির জন্যেই হারবো আমরা।”
সায়েম খানিকটা হেসে বলল, “সত্যি করে একটা বলো তো নাজ, এখানে যা হচ্ছে তুমি কি কিছুই বুঝতে পারছো? তখন থেকে তো শুধু সাকিব সাকিব করছো। সাকিব ছাড়া আর কোনো ক্রিকেটারকে চেনো তুমি? আচ্ছা সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের পাঁচজন ক্রিকেটারের নাম বলো তো!”
নাজ বিরক্ত গলায় বলল, “আপনার প্যাঁচাল বন্ধ করবেন। এদিকে ওরা দুই-এক রান নিয়ে নিয়ে ম্যাচ জিতে যাচ্ছে আর আপনি আছেন আপনার প্যাঁচাল নিয়ে। এখন দরকার হলো মিডঅনে একটা ফিল্ডার, লংঅনে তো ফিল্ডারের কোনো দরকার নেই। এগুলো সব ক্যাপ্টেনের দোষ। বুঝতে পারছেন আপনি?”
সায়েম সেদিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল নাজের দিকে। মেয়েরাও ফিল্ডিং পয়েন্টগুলোর নাম জানতে পারে, এ যেন নবম আশ্চর্য!
আজ বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা। বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছে। ব্যাটিংয়ে নেমে একের পর এক উইকেট পড়ে যাচ্ছে, অথচ নাজের কোনো বিকার নেই। কেমন অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে তাকিয়ে টিভির দিকে। অন্যান্য দিনে খেলার সময় চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় করে মেয়েটা। আজ হঠাৎ এতটা পরিবর্তন।
কাজ শেষে টেবিল গোছাতে গোছাতে জরিনা বলল, “আফা, টেবিলে খাবার দিয়া গেলাম। সময়মতো খায়া নিয়েন।”
জরিনা যেতেই সায়েম বলল, “চলো খেয়ে নিই। আমার ক্ষুধা লেগেছে।”
খাবার টেবিলেও অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বসে রইল নাজ। যার কথায় পুরো বাড়িটা মুখরিত হয়ে থাকে, তার এই নিশ্চুপ নিরবতা ঠিক সহ্য করতে পারছে সায়েম। কেন সহ্য করতে পারছে না? বিয়ের পর থেকে তার একটাই স্বপ্ন, নাজ নামের এফএম রেডিও যেন এক বেলার জন্যে কানের কাছে বাজা বন্ধ হয়। সেই এফএম রেডিও যখন সত্যিই আজ বন্ধ হয়েছে, তখন কেন এত খারাপ লাগছে সায়েমের?
সায়েম ভাত মাখতে মাখতে বলল, “আর ইউ ওকে?”
“হুঁ।”
“মায়ের জন্যে মন খারাপ? কয়েকটা দিন গিয়ে থেকে আসবে মায়ের কাছে?”
নাজ আক্ষেপজড়িত কণ্ঠে গলায় বলল, “মন খারাপ হবে কেন? এক ঘন্টার নোটিশে আমাকে বিয়ে দিতে যার খারাপ লাগেনি, তার জন্যে আমার খারাপ লাগা কীসের?”
“মায়ের ওপরে রাগ পুষে রাখতে হয় না নাজ, নিজেরই ক্ষতি হয়।”
“সব ব্যাপারে আপনাকে এত জ্ঞান দিতে কে বলেছে? আমার ব্যাপার আমাকেই বুঝতে দিন।”
নাজের ব্যাপারটা তাকেই বুঝতে দিয়ে চুপ করে রইলো সায়েম।
অনেকটা সময় চুপ করে থেকে নাজ ইতস্তত করে বলল, “শুনুন!”
“হুঁ?”
“না, কিছু না।”
“কী হলো, বলো!”
“কিছু হয়নি।”
খাওয়া-দাওয়া সেরে নাজ ঘরের দিকে পা বাড়ালো। কী আশ্চর্য! মেয়েটা আবার ম্যাচ দেখতে বসলো না? নাজের কর্মকাণ্ড মোটেও স্বাভাবিক ঠেকছে না সায়েমের কাছে। এই অস্বাভাবিকতাগুলো ভিন্ন একটা মানুষে পরিণত করেছে তাকে। সায়েমের কাছে মনে হচ্ছে হুট করে অন্য আরেকটা মেয়ে এসে পড়েছে বাড়িতে।
সায়েম আবারও গেল নাজের ঘরে। নাজ উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল বিছানায়, সায়েমকে ঢুকতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসল।
সায়েম বলল, “কী ব্যাপার? খেলা দেখবে না?”
“ইচ্ছা করছে না, আপনি দেখুন। রানের যে অবস্থা, মনে হচ্ছে আজও আমরা হারবো।”
“চলো বাইরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি। ঢাকায় আসার পর থেকে তো কোথাও ঘুরতে যাওনি।”
“আজ ইচ্ছা করছে না।”
“চলো, বাইরে কোথাও গেলে ভালো লাগবে।”
নাজ বিরক্ত গলায় বলল, “বললাম তো ইচ্ছা করছে না। শুধু শুধু বিরক্ত করছেন কেন?”
সায়েম ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “অলরাইট, আমি একাই ঘুরতে গেলাম। দরজাটা বন্ধ করে দাও।”
নাজ অবাক হয়ে লক্ষ করলো মানুষটা সত্যি সত্যি তাকে রেখে ঘুরতে বেরিয়ে গেল। একটা মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে কী সহজেই বেরিয়ে গেল সে। আর কয়েকবার সাধাসাধিও তো করতে পারতো নাজকে। কিছুই ভালো লাগছে না! প্রচন্ড অস্বস্তিতে গা কাঁপছে নাজের। ইচ্ছা হচ্ছে এই মুহূর্তে ছুটে অতীতে ফিরে যেতে।
সন্ধ্যা মিলিয়েছে কিছুক্ষণ হলো। সূর্যটা ডুবে যাওয়ার পর বাড়িতে একা একা থাকতে প্রচন্ড ভয় লাগে নাজের। সায়েমকে ব্যাপারটা কখনোই বলা হয়নি। বললেই সে ধরে নেবে নাজ একটা ভীতু মেয়ে। সায়েমের কাছে কিছুতেই সে নিজেকে ভীতু হিসেবে প্রমাণ করতে চায় না।
তবে নাজের কথা হলো, “সন্ধ্যার পর বাড়িতে একা একা থাকতে আমার ভয় লাগে।” জাতীয় কথা মুখ ফুটে বলতে হবে কেন? কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের তো এমনিতেই বুঝে যাওয়ার কথা। একটা মেয়েকে বাড়িতে একা ফেলে এতক্ষণ কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে? আজ সে ফিরলে একটা ঝগড়া বাঁধাতেই হচ্ছে!
কলিংবেলের আওয়াজে নাজের সাতপাঁচ ভাবনায় ছেদ পড়ল। উঠে গিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে দরজা খুলল। তার মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি দুয়েকটা কড়া কথা শোনাবে সায়েমকে।
নাজ কিছু বলে ওঠার আগেই একটা প্যাকেট তার হাতে ধরিয়ে দিলো সায়েম। প্যাকেট খুলতেই সমস্ত বিরক্তি আর রাগ ম্লান হয়ে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে। স্যানিটারি ন্যাপকিন! এই জিনিসটার প্রয়োজনেই তো সারাটাদিন অস্বস্তিতে কেটেছে নাজের।
নাজ হতবাক গলায় বলল, “আপনি বুঝলেন কীভাবে?”
“তোমার মতো বোকা মেয়ে কপালে জুটলে বুঝে নিতেই হয়। এবার তো বুঝে গেলাম, কিন্তু নেক্সট টাইম? তোমার প্রয়োজনগুলোর কথা মুখ ফুটে না বললে আমি বুঝবো কী করে?”
নাজের ভীষণ লজ্জা লাগছে। লজ্জায় তাকাতে পর্যন্ত পারছে না সায়েমের দিকে।
লজ্জিত গলায়ই বলল, “থ্যাংক ইউ।”
সায়েম ফ্রিজের দরজা খুলতে খুলতে বলল, “ইউর ওয়েলকাম। আর ফ্রিজে আইস্ক্রিম রেখে দিলাম, খেয়ে নিও। ভালো লাগবে।”
নাজ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। তাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা বিবাহিত দম্পতির মতো স্বাভাবিক না হলেও, এই অস্বাভাবিকতার মাঝেই ছড়িয়ে আছে অন্যরকম এক স্বাভাবিকতা। তার ছোট ছোট প্রয়োজনগুলোর প্রতি মানুষটার খেয়াল রাখা, অল্পতেই ধমক দিয়ে ওঠা – এসবই একটু একটু করে মুগ্ধ করে তুলছে নাজকে।
বাংলাদেশ জিতে যাচ্ছে, জিততে প্রয়োজন আর মাত্র সাত রান। নিশ্চিত পরাজয়কে হাতের মুঠোয় এনে কী করে জিতে দেখাতে হয়, সেই কৌশল শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই জানা। যে সাকিবকে সকালে বকাবকি করছিল, তারই সেঞ্চুরিতে দল আজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
সায়েম সারাটাদিন খেলা দেখলেও এখন আর দেখছে না। এলাকার ছোট-বড় অনেকে আনন্দ মিছিলে নেমেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই চমৎকার দৃশ্যের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সায়েম।
নাজ বারান্দায় এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “কী ব্যাপার? এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বাংলাদেশের জিতে যাওয়া দেখবেন না?”
সায়েম শান্ত গলায় বলল, “দেখছি তো। এই মানুষগুলোর আনন্দের মধ্যেই জিতে যাওয়া দেখছি।”
“আমরা বাঙলিরা কী অদ্ভুত তাই না? দল হেরে গেলে আমাদের হাহাকারের শেষ থাকে না, আর জিততে আনন্দের।”
“এক্সাম্পল হিসেবে নিজের দিকেই তাকিয়ে দেখো!”
নাজ খিলখিল করে হেসে উঠলো। বাংলাদেশ জেতার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটপাগল ভক্তদের উচ্ছ্বাস যেন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেল। আকাশে ফুটে উঠল অসংখ্য আতশবাজি। সায়েম মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। তার দুচোখে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে আতশবাজির প্রতিচ্ছবি।
আচমকাই এই মুহূর্তটা এত সুন্দর হয়ে উঠল কেন?
(চলবে)
[বাংলাদেশ জিতলে রাতে আরেক পর্ব পোস্ট করবো! 🤞]#অপেক্ষারা
৯.
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
সুবিশাল লাইব্রেরি, যতদূর পর্যন্ত চোখ যায় শুধু বই আর বই! এত বই এর আগে একসঙ্গে দেখেনি নাজ। লাইব্রেরিটা তার কলেজের। ক্লাসসুদ্ধ সবাইকে আনা হয়েছে এখানে। একটু পরেই ম্যাম এসে নতুন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আলোচনা করবেন। অ্যাসাইনমেন্টটা সম্ভবত লাইব্রেরি অথবা বইকেন্দ্রিক। ম্যাম আসার আগে সবাই চুপচাপ বসে বই পড়ছে।
লাইব্রেরিতে নিঃশব্দ নিরবতা পালন করতে হয়, এই নিয়ম সকলেরই জানা। তবে জেনেও একপ্রকার অবহেলা করে উচ্চস্বরে গল্প করেই যাচ্ছে তুষি।
“তারপর কী হলো শোন, ভাইয়ার বিয়েতে আমরা প্রায় সত্তরজন বরযাত্রী যাচ্ছি। দুইটা বাস ভাড়া করা হয়েছে। বাসে করে যশোরে যাচ্ছি, ওমা হঠাৎ আমার মাথার ওপরে ঝপ করে শব্দ হলো। আমি চিৎকার দিয়ে উঠতেই সবাই নেমে দেখলো ছাদের ওপর গাছ থেকে একটা কাঁঠাল ভেঙে পড়েছে। চিন্তা করে দেখ! চলন্ত বাসের ওপর কাঁঠাল! তাও আবার ঠিক আমার মাথার ওপরে।”
নাজ খেয়াল করলো, লাইব্রেরিয়ান ম্যাডাম অগ্নিমূর্তি ধারণ করে এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। চোখের ইশারায় চুপ করতে বলল তুষিকে। তবে কোনো ইশারাই যেন তার চোখে পড়ছে না। এক মনে কাঁঠালের গল্প করেই যাচ্ছে।
লাইব্রেরিয়ান ম্যাডাম হুংকার দিয়ে বললেন, “এই মেয়ে! লাইব্রেরিতে কথা বলা নিষেধ তুমি জানো না?”
তুষি হকচকিয়ে গিয়ে বলল, “সরি ম্যাম।”
“কীসের সরি? কলেজে উঠেছ অথচ এতটুকু আদবকায়দা শেখনি? বাবা-মা কিছু শিখিয়ে পাঠায়নি?”
“ম্যাম বললাম তো সরি। এরমধ্যে বাবা-মাকে টানছেন কেন?”
লাইব্রেরিয়ানের রাগের তেজ এবার যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল, “এত বড় সাহস! আবার মুখে মুখে তর্ক করছে? শোনো তোমার মুখে এত বড় বড় কথায় মানায় না। পরীক্ষায় যা রেজাল্ট করো, পুরো কলেজের জানা আছে।”
সঙ্গে সঙ্গে তুষির মুখটা ছাইবর্ণ হয়ে উঠলো। যতটুকু সময় তারা লাইব্রেরিতে ছিল, বেচারি মুখ গোমড়া করেই রইল। নাজের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। তুষির যতটা না অপরাধ তার থেকে বেশি অপমান করা হয়েছে তাকে। কোনো মানে হয়?
লাইব্রেরির কাজ শেষে নাজ ক্লাসে এসে বসলো। আজ একাউন্টিং স্যার আসেনি। তাই তার ক্লাসের সময়টুকু সকলে গল্পগুজব করেই কাটাচ্ছে। নাজ একা একা বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তার হাতের নখগুলোর দিকে। নখের দিকে তাকিয়ে থেকে যতটা সময় পার করা যায়! ক্লাসে তুষি ছাড়া নাজের তেমন কোনো বন্ধু নেই। সে থাকলে গল্পে গল্পে সময়টা কখন যে পার হয়ে যেত! তুষি নাজকে বসিয়ে রেখে কোথাও যেন একটা গেছে মিনিট বিশেক হলো। বিশ মিনিট তেমন দীর্ঘ সময় না হলেও নাজের কাছে মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নাজের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, ঠোঁটে চিরচেনা হাসির রেখা টেনে ক্লাসে ঢুকলো তুষি।
পাশে বসতেই নাজ বলে উঠলো, “কী ব্যাপার? খুব খুশি মনে হচ্ছে!”
তুষি বলল, “মনে হলেও আমার মনটা প্রচন্ড খারাপ। রাগে সমস্ত শরীর জ্বলছে।”
“তাহলে হাসছিস কেন?”
তুষি ঠোঁটের কোণে বিচিত্র হাসির আভা ফুটিয়ে তুলে বলল, “সেটা একটু পরেই টের পারি!”
“মানে?”
“আমি একা মানুষ একটু কথা বলায় ওই মহিলা এমন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। এবার যদি লাইব্রেরিতে সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে ওঠে, তখন কী করবো সে?”
নাজ উৎফুল্ল গলায় বলল, “তুষি? সত্যি করে বল তো কী চলছে তোর মাথায়?”
তুষি নিচু গলায় বলল, “সায়েন্সের পণ্ডিতগুলোর জন্যে আজ বিশেষ গিফট এসেছে।”
“কী গিফট?”
“চল দেখাই তোকে!”
তুষি নাজকে সঙ্গে নিয়ে চলে এলো বায়োলজি ল্যাবে। এই কলেজের সবগুলো ল্যাবই বিশাল ফুটবল মাঠের আকৃতির। তবে এই বায়োলজি ল্যাবটার বিশেষত্ব হলো এর সৌন্দর্য। খুব সুন্দর করে ছবি-টবি দিয়ে সাজানো হয়েছে জায়গাটাকে।
ল্যাবে কমার্সের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশ নিষেধ হলেও তুষি আর নাজ প্রায়ই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সকলের অগোচরে এখানে এসে ঘুরে বেড়ায়।
দুজনে পা টিপে টিপে চলে গেল ল্যাবটার একেবারে কোণায়।
যেতে যেতে তুষি ফিসফিস করে বলল, “একটা মজার জিনিস দেখবি?”
“কী?”
তুষি আঙুল উঁচিয়ে একটা টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওই দেখ!”
চোখদুটো একটু কুঁচকে নাজ যা দেখতে পেল, তাতে হার হীম হয়ে উঠল তার। রক্তবর্ণ ধারণ করলো তার চোখমুখ। দুটো ছোট ছোট স্বচ্ছ কাঁচের বাক্স। বাক্সদুটো জুড়ে আনাগোনা করছে কতগুলো নিরীহ প্রাণী। প্রাণীগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও, নাজের কাছে তারা ভয়ংকর। তেলাপোকা! একসঙ্গে এতগুলো তেলাপোকাকে একসঙ্গে চলাফেরা করতে দেখে শিউরে উঠলো নাজ।
আতঙ্কিত গলায় বলল, “এ কী? আমি গেলাম ভাই!”
তুষি নাজের চট করে নাজের হাতটা ধরে ফেলে বলল, “কোথায় যাচ্ছিস?”
“তেলাপোকা আমি প্রচন্ড ভয় পাই, তাও আবার এতগুলো একসঙ্গে! এখানে যদি আর এক সেকেন্ডও থাকি, আমি বোধ হয় মরেই যাবো।”
তুষি বিরক্ত গলায় বলল, “সামান্য তেলাপোকাকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে? ওরা তো আর তোকে খেয়ে ফেলতে পারবে না, বরং তুই ওদের খেতে পারবি।”
“ছি! তোর তেলাপোকা তুই-ই খা, আমি গেলাম।”
“যাবি মানে? মজা তো এখনো শুরুই হলো না।”
“আবার কীসের মজা?”
“একবার ভেবে দেখ নাজ, লাইব্রেরিতে সবাই চুপচাপ বসে থাকে। যাকে বলে পিন ড্রপ সাইলেন্স। কিন্তু এই সুন্দর তেলাপোকারা যদি একসঙ্গে লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়ে, তখন কি আর পিন ড্রপ সাইলেন্স বজায় থাকবে?”
নাজ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো। বুঝতে চেষ্টা করলো মেয়েটার মাথার প্যাঁচ। তুষির মাথায় সর্বক্ষণ কোনো না কোনো প্যাঁচ ঘুরতেই থাকে। এটা আবার কোন প্যাঁচ কে জানে?
নাজ বলল, “না, থাকবে না। তুই বরং তেলাপোকাদের লাইব্রেরিতে যাওয়ার রাস্তাটা দেখিয়ে দে। ওরা গিয়ে একসঙ্গে হামলা করুক।”
তুষি বিরক্ত গলায় বলল, “সেটা করতে পারলে কি আর আমি এতক্ষণ হাত গুটিয়ে বসে থাকি?”
“তোর মতলব কিন্তু আমার মোটেও ভালো ঠেকছে না।”
“ঠেকছে না, কারণ আমার মতলব ভালো নয়। আমার মতলব হলো এই বাক্সভর্তি তেলাপোকাগুলোকে লাইব্রেরিতে ছেড়ে দেওয়া।”
নাজ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো তুষির দিকে।
বিস্মিত গলায়ই বলল, “পাগল-টাগল হয়ে গেলি না-কি তুই?”
তুষি রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “পাগল হবো কেন? রাগে আমার সারা শরীর জ্বলছে। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ আমাকে অপমান করে যাচ্ছে। আজ পুরো কলেজ টের পাবে আমাকে অপমান করার পরিণাম। তুই কিন্তু আমাকে হেল্প করবি!”
“কোনো হেল্পের মধ্যে নাই আমি।”
তুষি অসহায় গলায় বলল, “হেল্প করবি না? তুই না আমার বেস্টি?”
“ওসব বেস্টি-ফেস্টি বুঝিনা।”
“এরকম করিস না দোস্ত, একটু পরেই তো পন্ডিতরা এসে এগুলো কাটাকাটি শুরু করে দেবে।”
“দেখ তুষি, তোর এসব পাগলামির মধ্যে আমি নেই। আমি আমার এই হাত দিয়ে কিছুতেই ওই তেলাপোকার বক্স ধরতে পারবো না, লাইব্রেরিতে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা।”
তুষি ধমক দিয়ে বললো, “আরে গাধা, তোকে বক্স ধরতে কে বলেছে? আমিই এটা নিয়ে যাবো, তুই শুধু দেখবি সামনে থেকে কেউ আসছে কিনা।”
নাজ সংবিৎ ফিরে পেয়ে কিছুটা শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “ওহ! আগে বলবি না?”
লাইব্রেরীটা দোতলায় আর বায়োলজি ল্যাব নিচতলায়। এখন থেকে লাইব্রেরিতে যেতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। পথে কারোর দেখা না পেলেই হলো। ছোট ছোট পা এগিয়ে গেল তুষি। তার সামনেই নাজ। নাজ দরজার বাইরে উঁকি পরিস্থিতিটা বুঝতে চেষ্টা করছে। নাহ্! আশেপাশে কেউ নেই। থাকার কথাও অবশ্য নয়। এই সময় ক্লাস চলে, সবাই তো আর তাদের মতো ঘুরে বেড়ায় না।
নাজ নিচু গলায় বলল, “কেউ নেই, আয়!”
দুজনে সিড়ির গোড়ায় পৌঁছালে নাজ আবার ভালো করে দেখে নিলো কেউ আসছে কিনা। কেউ আসছে না, এই আশ্বাসে যখন সিড়িতে পা রাখতে যাবে তখনই কোত্থেকে যেন চলে এল কলেজের এক আয়া। ভাগ্যিস সিড়ির গোড়ার ফাঁকা জায়গায় পুরনো কাগজের স্তূপ আছে। তুষি চট করে বাক্সটাকে সেই স্তূপের আড়ালে রেখে দিল।
আয়া পান চিবোতে চিবোতে বলল, “ক্লাসে যাও!”
নাজ ভ্রু কুঁচকে বলল, “ক্লাসেই তো যাচ্ছি!”
দুজনকে বাধ্য হয়েই সেই আয়ার পিছু পিছু তিন তলা পর্যন্ত উঠতে হয়। আয়া নিজের কাজে চলে গেলেই তারা পুনরায় নিচে নেমে বাক্সটা নিয়ে উপরে উঠতে থাকে।
কিছুদূর উঠে যাওয়ার পর তুষি ফিসফিস করে বলল, “তখন একটা পুরনো কাগজ সাথে আনলে ভালো হতো। কাগজ দিয়ে বাক্সটা ঢেকে রাখতাম।”
“চুপ কর তো! অর্ধেক পথ চলে এসেছি, এখন এই কথা বলছিস?”
“না মানে, বলছি যে হলে ভালো হতো।”
“ভালো হওয়ার দরকার নেই। কোনোমতে লাইব্রেরির কাছে যেতে পারলে বাঁচি।”
ওদের লাইব্রেরির দুটো দরজা। একটা সামনের দরজা আরেকটা পেছনের। পেছনের দরজা দিয়ে মানুষ খুব একটা যাতায়াত করে না বললেই চলে। দুজনে ওই দরজাটার পেছনে গিয়ে বসলো। তুষি একবার উঁকি দিয়ে দেখে নিল, বেশ অনেকগুলো ছেলেমেয়ে বইয়ে মুখ গুজে পড়ছে। আর লাইব্রেরিয়ান ম্যাডাম ওদিকে ফিরে সেলফে কী যেন খুঁজছেন। কারোর দৃষ্টিই এদিকে নেই।
তুষি আস্তে করে বাক্সটাকে লাইব্রেরি ঘরের ভেতরে রাখলো। ওদিকে নাজ বহুকষ্টে হাসি চেপে রেখেছে, তুষির মুখও হাসি হাসি। সাবধানে মুখটা খুলে দিতেই বেরিয়ে এল তেলাপোকাদের সেনা। বেশি নয়, প্রায় সাত-আটটা তেলাপোকা হবে। গুটি গুটি পায়ে ছড়িয়ে পড়লো পুরো লাইব্রেরিতে।
নাজ আর তুষি এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে দৌড়ে পালিয়ে কিছুদূর দিয়ে দাঁড়ালো। বইয়ে ডুবে থাকা পাঠক-পাঠিকাদের দৃষ্টি বোধ হয় তখনও আকর্ষণ করতে পারনি তেলাপোকা বাহিনী। কিছুটা সময় পরই, বিকট এক চিৎকার ভেসে এলো লাইব্রেরি থেকে। পুরো কলেজ যেন কেঁপে উঠলো সেই চিৎকার। মনোযোগী ছেলেমেয়েগুলো আর্তনাদ করতে করতে বেরিয়ে এল। তাদের পেছনে ছুটতে ছুটতে বের হলেন লাইব্রেরিয়ান। দেখার মতো একটা দৃশ্য।
ওরা দুজনে দেখেই আর অপেক্ষা করলো না। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে উপরে উঠে এল। তাদের হাসি যেন থামছেই না। হাসতে হাসতে সিড়িতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। নাজ কিছুটা একটা বলছে চেষ্টা করছে, তবে কথাগুলো তার খিলখিল হাসির আড়ালেই চাপা পড়ে গেল।
তুষি হাসতে হাসতে বলল, “উনার চেহারাটা দেখেছিলি?”
নাজ কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল, “মনে হয় যেন ভূত দেখেছে!”
দুজনে আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলো। কিছুটা সময় পর নিজেদের শান্ত করে ফিরে গেল ক্লাসে। স্যার বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংক দেখাচ্ছেন। দুজনেই মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু কীসের কী? হাসি যেন থামছেই না। মুখ চেপে হেসেই যাচ্ছে তারা।
স্যার রাগী কণ্ঠে বললেন, “এই তোমরা হাসছো কেন?”
তুষি বহুকষ্টে গলায় স্বর স্বাভাবিক রেখে বলল, “কিছু না স্যার।”
তুষির কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই নাজ ফিক করে হেসে ফেলল। নাজের দেখাদেখি সেও আর হাসিটা চেপে রাখতে পারলো না।
স্যার কঠিন গলায় বলল, “কী ফাজিল মেয়ে! বেরিয়ে যাও, তোমাদের মতো ছাত্রীর প্রয়োজন নেই ক্লাসে।”
নাজ মুখে হাত চেপে বলল, “সরি স্যার।”
আরও দুটো ক্লাস চলে গেল কিন্তু তাদের উচ্ছাস আর কমে না। দুজনের এই চাপা খিলখিল হাসির রহস্য ক্লাসের কেউই পারলো উদ্ধার করতে। অবশেষে সমস্ত উচ্ছাস শেষ হতেই হলো।
ক্লাসে একজন পিয়ন এসে বললেন, “তুষি আর নাজনীন! তোমাদের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ডাকে।”
সঙ্গে সঙ্গে রক্তবর্ণ ধারণ করলো নাজের চোখমুখ। কেউ কি তাহলে কিছু বুঝে গেল?
(চলবে)