-‘ কাবিননামায় সই করবার আগে তোর হবু বর নির্জনের সম্পর্কে সবটা না জেনেই বিয়ের মতন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবি? বিয়ের আগে জেনে তো নে তোর হবু বর ঠিক কি করেছে আমার সঙ্গে! সবটা জানার পর ভেবে দেখিস বিয়েটা আদৌ করবি তো?’
কাবিননামায় যখনই সই করতে যাবে বিয়ের কনে ঠিক তখুনি বিয়ের ভরা আসরে কনে মানে তানহাকে সেই জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে কনের বোন মিরা কতোগুলো কাগজ এনে মুখের উপর ছুঁ*ড়ে দিলো! বধূ বেশে থাকা তানহা সেগুলো মাটি থেকে সযত্নে কুড়িয়ে নিয়ে চোখ বোলাতে লাগলো ঠিক কি লেখা রয়েছে কাগজে?? নিজের ছোটো বোনকে এরকম আক্র*ম*নাত্নক আচরনে ততোটা অবাক হয়নি যতোটা না অবাক হয়েছে কাগজের লেখাগুলো পড়ে। কাগজগুলো কোনো সাধারন কাগজ নয় কাগজগুলো হলো প্রেগন্যান্সির রির্পোট যেটাতে মিরার নাম স্পষ্ট অক্ষরে বড়ো বড়ো করে লেখা রয়েছে! তানহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে কাগজগুলো হাতে নিয়ে। নিজেরই বোন কি করে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবার মতো ঘৃ*ন্য কাজ করতে পারে তাও আবার নিজের বোনের হবু স্বামীর সঙ্গে! সেটা ভাবতেই গা শিওরে ওঠছে তানহার! ঠিক একটু আগেই এই কথা গুলোই বলছিলো মিরা তানহাকে….
-‘ কি আপু অবাক হয়ে যাচ্ছিস তো এসব দেখে তাই না? অবাক হয়েছিস কিন্তু তার আগে এটাতো তোর ভালো করেই জানা দরকার নয়কি যে এই সন্তানের বাবা আর অন্য কেউ নয় তোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তোর হবু বর নির্জনের।’
উপস্থিত সবার চোখ এবার নির্জনের উপর গিয়ে পড়লো। নির্জনের বাবা আনোয়ার হোসেন নির্জনের সামনে গিয়ে সপাটে দু’টো থা*প্পড় মেরে দিলো নির্জনের গালে! নির্জন গালে হাত দিয়ে থ মেরে বসে আছে সেই আগের বরের জায়গাটায়!…..
-‘ নি*র্ল্জ্জ ছেলে! এই দিন দেখবার জন্য তোকে মানুষ করেছি আমি? তুই তো আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলি দেখছি! আমরা সবাই দেখেশুনে তানহাকে পছন্দ করেছিলাম তোর জন্য এমনকি তুই নিজেও তো এই বিয়েতে সায় দিয়েছিলিস তাহলে এখন এসব কেনো হচ্ছে? এতোই যদি তোর মিরার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে তাহলে তুই তানহার সঙ্গে বিয়েতে রাজি হয়েছিলি কেনো? তখন বলতে পারলিনা তুই মিরার সঙ্গে এরকম একটা কান্ড করেছিস? এই শিক্ষা দিয়েছিলাম আমি যে বিয়ের আগে একটি মেয়েকে প্রেগন্যন্ট করবার? এই এতো লোকের সামনে আমাদেন সবার নাক কে*টে দিলি তুই।’
-‘ শুধু আপনার ছেলে নয় আনোয়ার সাহেব আমার এই অ*স*ভ্য মেয়ের কথা একটিবার বলুন? এরকম খারাপ নি*কৃষ্ট মেয়ে পৃথিবীতে আর একটিও নেই বোধহয়! যে কিনা নিজের বড়ো বোনের এরকম ক্ষ’তি করে! শুধু নিজের বোনেরই নয় এই অ’সভ্য মেয়ে তো দেখছি নিজেরও ক্ষ’তি করেছে। তোরও কি নির্জনের মতন মুখে কুলু পেতেছিলিস যে তুই নির্জনের সন্তানের মা হতে চলেছিস এটা আমাদের কাউকে বলিস নি?’
উপরোক্ত কথাগুলো মিরার উদ্দেশ্য বললো মিরার বাবা। মিরা কোনো কথা না বলে চুপটি করে রয়েছে মাথা নিচু করে রেখে। নির্জন ও কিছু বলছে না।….
আমার বিয়ের দিনই এসব কিছু শুনতে হচ্ছে আমাকে! এতোক্ষণ ধরে সব কথা শুনে গেছি এবার আমার মুখ খোলার সময় এসেছে।…..
-‘ এসব কি সত্যি নির্জন? যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি আমার বোনের সঙ্গে অ*ন্যা’য় করে ওকে প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে কি করে ফিরে যাচ্ছো তুমি?’
নির্জন চুপটি করে রয়েছে কোনো কিছু না বলে। হঠাৎই নির্জনের গালে সপাটে দু’টো থা*প্প*ড় পড়লো! নির্জন এবার মাথা খানি উঁচু করে তাকিয়ে দেখলো এই চ*ড়টা এবার আমি মে’রেছি নির্জনকে। আমার কাছ থেকে থা*প্প’ড় খেয়ে নির্জনের মুখশ্রী রক্তি’ম বর্নের আকার ধারন করেছে! বোঝাই যাচ্ছে নির্জন বেশ রে’গে আছে কিন্তু যা হয়েছে এখন তার বিপরীতে যদি আমাকে কেউ কিছু বললে উল্টে সবাই তার দিকেই তে’ড়ে আসবে! সেই মোতাবেক নির্জন চুপ করে রয়েছে। কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম না। মিরা কাছে প্রশ্ন করলাম।….
-‘ মিরা তোর সঙ্গে নির্জনের সম্পর্ক কতো বছরের?’
নির্লিপ্ত কন্ঠে মিরার উত্তর,
-‘ আপু ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তিন বছরের ও বেশি।’
উপস্থিত সবাই কানাঘুষা করতে শুরু করে দিয়েছে বোন হয়ে বোনের সংসার এভাবে ন’ষ্ট করে দিলো! আবার কেউ কেউ বলছে নির্জনেরই সব দোষ সে কেনো সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ছোটো বোনকে রেখে বড়ো বোনকে বিয়ে করতে চলে এলো?….
মিরার বাবা প্রেশারের রোগী! উনি আশেপাশের মানুষের ক’টু কথা, অ’প’মা’ন, মিরার বলা কথা সবকিছু সহ্য করতে না পেরে অ’জ্ঞান হয়ে গেলেন!…
তৎক্ষনাৎ বিয়ে বাড়ির শোরগোল থেমে গিয়ে নিশ্চুপতা নেমে আসলো কোলাহল পূর্ন বিয়ে বাড়িটি! তানহা যেনো কোনো বলছে না যেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ধরাধরি করে আনোয়ার হোসেনকে যেখানে কাবিননামায় সই চলছিলো সেই সোফায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে ফোন দেওয়া হলো। কিছুক্ষণের ভিতরই ডাক্তার এসে দেখে গেলো ডাক্তার বলেছেন যে অতিরিক্ত টে*নশনে উনার প্রেশার বেড়ে গেছিলো যার জন্য অ*জ্ঞান হয়ে গেছে। ডাক্তার কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করে যায়। একটু পরেই আনোয়ার হোসেনের জ্ঞান ফিরে আসে। মিরা তার বাবার কাছে যেতেই মিরার মা তে’লে বেগুনে জ্ব*লে ওঠলো……
-‘ এই তুই তানহার বাবাকে একদম স্পর্শ করবি না! উনি ঠিকই বলেছিলেন তুই হলি একটা অ*স’ভ্য মেয়ে! তোর জন্যই তোর বাবার এসব পরিস্থিতি।’
তানহার বাবা ক্ষীন স্বরে বলে -‘ আহ! আর কথা বাড়িও না তো। যা হবার হয়ে গিয়েছে এখন আর এসব বলে তো কোনো লাভ নেই বলো? তার চেয়ে বরং যেসব অতিথিরা এসেছে তাদের খাওয়া দাওয়ার ভার পলাশকে দেখতে বলো। আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। বিয়েতো হলো না কিন্তু ওনারা যাতে পেট ভরে খেয়ে যায় সেটা দেখো।’
-‘ আপনারা সবাই চুপ করুন এখানে বিয়ে হবে এবং মিরার বাচ্চার দায়িত্বও নির্জনই নিবে। সাথে তানহা কোনো অসম্মান হতে দিবো না আমি।’
উপস্থিত সবাই এবার থমকে দাঁড়ালো নির্জনের বাবার কথায়! আবারো কানাঘুসা করতে লাগলো সবাই নির্জনতো আর মিরাকে বিয়ে করবে না যদি বিয়েই করতো তাহলে তানহাকে বিয়ে করতে আসতো না। তাহলে এই অ’বৈধ বাচ্চা সহ মিরাকে কার কাছে বিয়ে দিবেন? জট খুললো আনোয়ার সাহেবের কথায়,…..
-‘ মিজান সাহেব আপনি আমার উপর ভরসা করতে পারেন নিশ্চিন্তে! মিরার বাচ্চার বাবা যখন নির্জন তখন নির্জনই বিয়ে করবে মিরাকে! আর নির্জন আর মিরার জন্য তানহার এতোটা অপমান আর অ*সম্মান হলো এতে যেমন আপনার মেয়েও দায়ী তেমনি আমার ছেলেও আর ছেলের দায় তো আমি এড়াতে পারবো না তাই তানহার দায়িত্বও আমি নিচ্ছি।’
-‘ আপনি এসব কি বলছেন কি?’
-‘ অবাক হবেন না ভাবী। মিজান সাহেবকে আমি ভাই বলেছি আর ভাইয়ের অ*সম্মান তে হতে দিতে পারি না বলুন? তাই আপাততো মিরার সঙ্গেই বিয়ে হউক নির্জনের তারপর বাকিটা বলছি।’
বিয়েতে মিজান সাহেবও আর কোনো বাঁ*ধা দিলো না। কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানো হলো নির্জন আর মিরার! অপর দিকে তানহা চুপটি করে সবটা দেখে যাচ্ছে কি থেকে কি হয়ে গেলো? কিন্তু পরক্ষণেই নিজের বোনের সুখের কথা ভেবে আর মাথা ঘামালো না।…..
একটু আগে তানহার হাতের থা*প্প’ড় খেয়ে নির্জন রেগে গেছিলো এখন সে মিরার সঙ্গে বিয়ে করে উৎফুল্ল হয়ে বসে রয়েছে। এটাই তো সে চেয়েছিলো আর হলোও ঠিক সেটাই। খুশি মনে, নিজের মনে বুলি আওড়াচ্ছে……
-‘ এবার সবটা ঠিক হবে তানহা ভাবি। তুমি যেটা করেছিলে যার জন্য এতোকিছু হলো এবার সেই সবকিছু ঠিক হবে। এই সব অ*পমান, থা*প্প’ড় এবার সবকিছুর উসুল হবে। আমি তো আমার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছিই নিজের করে। এতোক্ষণ ধরে যা কিছু সবটাই প্ল্যানের একটা অংশ ছিলো মাত্র তোমার জন্য! সবচেয়ে বড়ো চমক অপেক্ষা করছে তোমার জন্য এই বিয়েটাতে। মাঝখান দিয়ে যেই অ*সম্মান, অপ*মানিতো হলাম আর আর মিরা মিলে সেইটার ফলও একটু পরই তুমি বুঝবে। অবশেষে আমার উদ্দেশ্য সফল হলো। যার জন্য এতোকিছু হলো তার নীড়ে শান্তি ফিরবে তোমাকে পেয়ে। এবার সব অগোছালো জিনিশ গুছিয়ে এক হবে। শান্তি আসবে এক অশান্ত মানবের জীবনে যার জন্য এতোকিছু হলো।’
-‘ ওদের বিয়ে তো হয়ে গেছে ভাবী! এবার তানহার জন্য ছেলে তৈরী কিছুক্ষণের ভিতরেই আসবে।’
কি থেকে কি হয়ে গেলো আমার জিবনে! স্মরনীয় একটা দিন ছিলো আজকে অথচ আমার বোনই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘা’ত’কা করলো! বাবার মান সম্মান রক্ষা করতে না জানি কার সঙ্গে বিয়ে করতে হবে! এই বিয়ে করা ছাড়াও হয়তো কোনো উপায় নেই! না জানি কি আছে কপা’লে!…….
#অপ্রিয়_প্রেয়সীর_ভালোবাসা –[১]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
#চলবে?